![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমার ছোটবোন "অনিকা" এভার JSC-পরীক্ষার্থী । তার পরীক্ষার কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া ঐখান থেকে আনা এগুলো রীতিমত আম্মার দায়িত্ব । আমরা দুই ভাই কেউ এই ব্যাপারে আগ্রহ দেখাইনা । আজকে আম্মার ব্যাংককে নাকি কাজ ছিল,তাই অনিকাকে পরীক্ষার হলে দিয়ে আম্মার কাজে চলে গেছেন । আমার ছোট ভাইয়ের নাকি ক্লাস আছে, তাই ছোটবোনকে আনার গুরুদায়িত্ব পড়েছে আমার কাঁধে । বাধ্য হয়ে বোনকে আনতে গেলাম ।
কেন্দ্রের সামনে ১৫ মিনিট আগে পৌঁছে গেলাম । আমি আবার একটু পাঞ্ছুয়াল কিনা । স্কুলের সামনে কয়েকশত আভিভাবক দাড়িয়ে আছে, মেইন গেটের পাশে একটা ছোট গেট ছিল, ওইটা দিয়ে একজন- দুইজন করে বাহির হচ্ছিলো, আমি দূরের থেকে দেখছিলাম, এদের মাঝে আমার বোনকে খুঁজছিলাম । পরে ভাবলাম ভালো স্টুডেন্ট আবার সময় শেষ না হলে বাহির হয়না, আমার বোন আবার তাদের দলে ।
কিছুক্ষণ এর মাঝে বাজলো...... ডং...... ডং......ডং...... ঘণ্টা, পাখির মত কিচিরমিচির আওয়াজের সাথে হুড়মুড় করে ছোট গেট দিয়ে কতগুলা মেয়েরা দল বাহির হচ্ছিলো ।
তখনি আমার মাথায় বাঁশ পরল । একি, আমার কাছে দেখি সব মেয়ে একি রকম লাগে, সবার ড্রেস একি রকম, চেহারাও একি লাগছে, সবাইকে আমার কাছে অনিকা মনে হচ্ছে । দুইটারে অনিকা মনে করে সামনে গিয়ে দেখি অন্য মেয়ে । কিছু বোরকা পড়া মেয়েও দেখা যাচ্ছে, মনের মাঝে খটকা লাগলো, অনিকা কি বোরকা পরে, পকেট থেকে মোবাইল বাহির করে দিলাম আম্মাকে ফোন......
আমিঃ- আম্মা অনিকা কি বোরকা পড়ে???
আম্মাঃ- না, কেন কি হইচ্ছে?? অনিকা কই??
আমিঃ- অনিকারে চেহারা মনে পরতাচ্ছেনা, তুমি চিন্তা কইরনা ।
আম্মাঃ- গরুর কাজ কি ছাগল দিয়া হয় ।
আম্মার সাথে কথা শেষ না করতেই দেখি স্কুলের মেইন গেট খুলে দেওয়া হল, এক ঝাঁক ছেলেমেয়ের ঢল দেখে আমি ঘাবড়ে গেলাম, আর বুঝি আমি আমার ছোটবোনকে পাবোনা,আম্মাকে কি বলবো,সমাজকে কি জবার দিবো......এই কথাগুলা চিন্তা করতে করতে বাংলা ছবির কথা মনে পড়ে গেলো । বাংলা ছবিতে দেখছিলাম বোন হারিয়ে গেলে একটা গানের মাধ্যমে আবার ফিরে পায়, কিন্তু আমাদের ফ্যামিলির এমন কোন সংগীত নাই । না বড ভুল হয়ে গেলো, একটা পারিবাবিক সংগীত করার দরকার ছিল।
"আলম পরিবাবের এই অটুট বন্ধন
করবোনা কেউ কোনদিন কর্তন
হোক যত কষ্ট তারপর দিবোনা হতে স্বপ্ন নষ্ট
এক বোন,দুই ভাই আর আমাদের আম্মা...
লালা লা লা তুরু তুরু তুতুতুরতু"
পারিবারিক সংগীত যেহেতু নাই তাইলে বাংলা ছবির মত আরেকটা কাজ করা যায়, গলার যত জোর আছে সেটা দিয়া......অনিকা........অনিকাকাকা.....অনিকাকাকাকাকাকাকাক চিৎকার করলে খারাপ হয়না । আমি চিৎকার করার আগে দেখি আমার পিছনে কে জানি ভাইয়া ভাইয়া কইয়া চিৎকার করছে । পিছনে তাকাইয়া দেখি এইটা আমার ছোটবোন, এইতো এইতো এইটাই আমার বোন । এইপর আর কি দুই ভাইবোন আনন্দে আত্মহারা ।
কাহিনী এইখানে শেষ না ,মজার ব্যাপার আরো আছে । আমি আমার বোনের ফাইল,প্রশ্ন ও ইস্কেল আমার হাঁতে নিয়া রিক্সার জন্য দাঁড়িয়ে আছি । একলোক আমারে বলল, কেমন হইছে পরীক্ষা ??? আমি জবাব দিলাম, জি ভালো হইছে । আমার বোন পিছনে থেকে মুচকি মুচকি শব্দ করছে,আমি কইলাম এখানে হাসির কি পাইলি????
বোন বললঃ এই লোক মনে করছে তুমি পরীক্ষা দিচ্ছ।
আয়হায় কয়কি!!!! আমি ইউনিভার্সিটিতে স্নাতক ডিগ্রি জন্য পড়াশোনা করি আর এই লোক নাকি মনে করছে আমি JSC-পরীক্ষার্থী । আমি দেখতে একটু না মানে খানিকটা ছোট, তাই বলে এত ছোট না । নিজের দিকে তাকিয়ে দেখি আমি সাদা শার্ট আর কালো প্যান্ট পড়ে আছি,গতকাল আবার শেভ করছি তাই চেহারা চকচক করছে, ওভার অল একটা ছোট বাবু লাগছে, পরীক্ষার্থী না মনে করার কিছু নাই । তারপর রিক্সাতে উঠতে উঠতে আরো দুইজন জিজ্ঞাস করলো "বেটা পরীক্ষা কেমন হইছে??" আমিও ব্যাপারটা ইনজয় কলাম "না আঙ্কেল ভালোই হইছে, খালি কয়েকটা অবজেক্টিব কমন পড়ে নাই, দোয়া কইরেন"
অবশেষে দুই ভাইবোন মিলে রিক্সাতে করে আমাদের এইখানের বিখ্যাত "টেনশন ভাইয়ের আইসক্রিম"খেতে খেতে বাসার চলে এলাম ।
**রিক্সাতে অনেক মনোযোগ দিয়ে আমি আমার বোনের আইসক্রিম খাওয়াটা দেখছিলাম......। কি সুন্দর করে খাচ্ছিলো আইসক্রিম!!!যেন এইটা তার জীবনের শেষ আইসক্রিম, আর হয়তো কেউ তাকে এইভাবে আদর করে আইসক্রিমটা খাওয়াবেনা,এত মায়া হয়তো কেউ তার জন্য দেখাবেনা ।
বোনটা সতিই বড় হয়ে যাচ্ছে সাথে সাথে সুন্দরও হচ্ছে, কিন্তু এই বড় হয়ে উঠটা তার জন্য পাপ হয়ে দাঁড়াবে, তার অবুঝ মনটা হয়তো এত কিছু বুঝেনা,তার সুন্দর মনটা এখনও সমাজের রুগ্ন চেহারা দেখেনি , তার এই বড় হয়ে উঠা কিছুদিন পর তার কাছে অসহ্য মনে হবে ,যখন তার কাছে সামাজের আসল পরিচয় ফুটে উঠবে, তাকে প্রতিনিয়ত বলে বেড়াবে......
তুমি আগের মত ছোট নাই, তুমি বড় হয়ে গেছ, তোমার বিয়ের বয়স হয়েছে, চাইলে ঘর থেকে যখন তখন বাহির হতে পারবেনা,তোমার ইচ্ছা করলেই তুমি আইসক্রিম খেতে পারবেনা, মূলত তোমার ইচ্ছা বলতে কিছু নাই, তোমার মন বলতে কিছু নাই, তুমি আসলে একটা নারী, তুমি মানুষ না ।
২| ০৯ ই নভেম্বর, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:৩১
পথই বলেছেন: সমাজকে বদলানোর দায়িত্ব আমাদের মত বড় ভাইদের, আপনি আমি মিলে একটু একটু করে এই সমাজের নগ্ন চেহারাটা পরিবর্তন করতে হবে। আর আমরা একদিন পারবই
৩| ০৯ ই নভেম্বর, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:৩৬
লিন্কিন পার্ক বলেছেন:
চমৎকার !!
আপনার বোনের জন্য শুভকামনা
৪| ০৯ ই নভেম্বর, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:৪১
পথই বলেছেন: ধন্যবাদ
৫| ০৯ ই নভেম্বর, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:০২
সুদীপ্ত কর বলেছেন: ছোটবোনের চেহারা ভুলেন কেমনে?
নীচের কথাগুলো সত্য। কিন্তু পরিবর্তন তো আমাদেরই করতে হবে। চেষ্টা করে দেখা যাক...
পিচ্চি বোনটার জন্য শুভকামনা। গোল্ডেন এ+ যাতে পায়।
৬| ০৯ ই নভেম্বর, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:০৯
নুসরাত জাহান আজমি বলেছেন: পুরুষতান্ত্রিক সমাজে মেয়েদের জন্য এই কথাগুলো যেন অঘোষিত বরাদ্দ। যাই হোক, আপনার ছোট বোনের জন্য শুভ কামনা।অন্য কেউ না হোক, আপনারা ভাইয়েরা অন্তত ওর মনের কথা গুলো বুঝবেন আশা করি.
ভালো থাকবেন।
৭| ০৯ ই নভেম্বর, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:১২
মাক্স বলেছেন: আপনার পিচ্চি বোনটার জন্য শুভকামনা।
৮| ০৯ ই নভেম্বর, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:১২
চেয়ারম্যান০০৭ বলেছেন: আমাদের বোনটার জন্য অনেক অনেক আদর আর দোয়া রইলো।
পরীক্ষার জনয় রইলো শুভাকামনা।আপনাদের পরিবার এভাবে হাসি খুশিতে ভরে থাকুক।
সমাজ টা আমাদের দ্বারাই সৃষ্ঠ।তাই এর পরিবর্তনের ক্ষমতা ও আমাদের হাতেই।
৯| ০৯ ই নভেম্বর, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:১৮
মাহমুদুল হাসান অনিক বলেছেন: আমারও এই ভয়টাই হয় ছোটো বোনের জন্য কিন্তু বেশির ভাগই ভক্ষক হতে চায় এবং তাদের ক্ষমতাও বেশি আর রক্ষকদের ক্ষমতা সীমিত
১০| ০৯ ই নভেম্বর, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:১৯
পথই বলেছেন: সুদীপ্ত কর, ভাই এত মেয়ের ভিড়ে সতিই ভুলে গেছি । পরিবর্তন করতে হবেই এবং ধন্যবাদ ভাই
১১| ০৯ ই নভেম্বর, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:২০
পথই বলেছেন: নুসরাত জাহান আজমি, সর্বদা চেষ্টা করবো এবং ধন্যবাদ
১২| ০৯ ই নভেম্বর, ২০১২ রাত ৮:৫৩
তূর্য হাসান বলেছেন: আনিকা আপুর জন্য শুভকামনা রইল।
১০ ই নভেম্বর, ২০১২ দুপুর ১:৩৪
পথই বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ
১৩| ০৯ ই নভেম্বর, ২০১২ রাত ৯:১৯
রয়েল বেঙ্গল টাইগার বলেছেন: ছোট বোনটা এবার এইচএসসি পাস করেছে, এ প্লাস পেয়ে। আমি তাকে পরীক্ষার হলে নিয়ে যেতে পারিনি, এই দু:খ আমার সারাজীবন থাকবে। বোনটা একা তার এক বান্ধবীর সাথে পরীক্ষা হলে গেছে।
ঈদের ছুটিতেও আমাকে বলল, ভাই আমাকে পরীক্ষা হলে নিয়ে যাওয়ার মতো কেউ ছিলো না.....
আমি কি করে বলি, আমার বুকটা ভেঙ্গে যাচ্ছে তোর আক্ষেপের কথা শুনে। চোখ জুড়ে পানি আসছে।
আপনার ছোট বোনটির জন্য অনেক শুভকামনা থাকলো। কারো বোনেরই যেন সমাজের কদর্য রূপ দেখতে না হয়।
১০ ই নভেম্বর, ২০১২ দুপুর ১:৩৩
পথই বলেছেন: কথাগুলা শুনে কষ্ট লাগলো, ধন্যবাদ ভাই
১৪| ০৯ ই নভেম্বর, ২০১২ রাত ৯:২১
ধূসর পান্ডুলিপি বলেছেন: বোনের জন্য শুভকামনা রইল
১০ ই নভেম্বর, ২০১২ দুপুর ১:৩৩
পথই বলেছেন: ধন্যবাদ
©somewhere in net ltd.
১|
০৯ ই নভেম্বর, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:২২
নিশি কথক বলেছেন: আমার দুইটা বোন। একটা এবার এসএসসি পরিক্ষার্থী আরেকটা ক্লাস ফাইভের সমাপনী পরীক্ষার্থী। হয়তো এএদর ও এই কথাটাই আমার মনে মনে বলা উচিত
বোনটা সতিই বড় হয়ে যাচ্ছে সাথে সাথে সুন্দরও হচ্ছে, কিন্তু এই বড় হয়ে উঠটা তার জন্য পাপ হয়ে দাঁড়াবে, তার অবুঝ মনটা হয়তো এত কিছু বুঝেনা,তার সুন্দর মনটা এখনও সমাজের রুগ্ন চেহারা দেখেনি , তার এই বড় হয়ে উঠা কিছুদিন পর তার কাছে অসহ্য মনে হবে ,যখন তার কাছে সামাজের আসল পরিচয় ফুটে উঠবে, তাকে প্রতিনিয়ত বলে বেড়াবে......
তুমি আগের মত ছোট নাই, তুমি বড় হয়ে গেছ, তোমার বিয়ের বয়স হয়েছে, চাইলে ঘর থেকে যখন তখন বাহির হতে পারবেনা,তোমার ইচ্ছা করলেই তুমি আইসক্রিম খেতে পারবেনা, মূলত তোমার ইচ্ছা বলতে কিছু নাই, তোমার মন বলতে কিছু নাই, তুমি আসলে একটা নারী, তুমি মানুষ না ।