নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ক্রিষ্টান লেকের এই দিকটা আমার খুব ভাল লাগে । যদিও এখানে লেখা যে প্রবেশ নিষেধ তবুও আমার মত দেখলাম অনেকেই এখানে বসে আছে । দুরে দাড়িয়ে এক পুলিশ আপন মনে সিগারেট ফুঁকছে । আমাদের কে দেখেও যেন দেখছে না ।
আমিও আপন মনে লেকের টলটলা পানির দিকে তাকিয়ে রইলাম । এখান কার যে বাতাসটা আসে সেটা মন প্রান সব জুড়িয়ে দেয় ! সপ্তাহের এই ছুটির দিন গুলোতে এভাবে সময় কাটাতে নেহাত মন্দ লাগে না ।
-ভাই সাহেব ?
আমি ফিরে তাকালাম । আমারই মতই বয়স হবে লোকটার কিংবা একটু বেশি । আমার আমার পেছনে দাড়িয়ে । আমি বললাম
-জি ? আমাকে বলছেন ?
লোকটাকে একটু যেন বিব্রত মনে হল । বলল
-জি । আপনাকে একটা অনুরোধ করতে চাচ্ছি ? করবো ?
এতো বিনয়ী অনুরোধ ফেলা যায় না । আমি অনুরোধ করা অনুরোধে সম্মতি জানালাম । লোকটি বলল
-আপনি কি এই জায়গাটা ছেড়ে উঠবেন একটু ? আমি আর আমার বউ এখানে নিয়মিত বসি ।
একটু বিরক্ত হলাম মনে মনে । এটা কোন কথা হল ?
দেখতেছে একজন বসে রয়েছে কি বেকুবের মত এসে বলল আমি আর আমার বউ এখানে নিয়মিত বসি !!
কিন্তু মুখে বললাম
-এখানেই বসবেন ?
লোকটি আবার খানিকটা লজ্জিত কন্ঠে বলল
-আসলে আমার কোন সমস্যা নাই । এক জায়গায় বসলেই হল কিন্তু বৃষ্টির এই জায়গা ছাড়া চলেই না ।
-বৃষ্টি ?
লোকটা এবার একটু হাসলো । বলল
-বৃষ্টি আমার বউয়ের নাম ।
আমি কখন থেকে লক্ষ্য করছি লোকটি বারবার কথার সময় কেবল বউই বলছে । স্বাধারনত অপরিচিত কারো সাথে কথা বলার সময় কেউ বউ শব্দটা ব্যবহার করে না ।
এই লোকটা কেন করছে কে জানে ? আমি বললাম
-এখনই উঠবো ?
লোকটি বলল
-নাহ । এখনই উঠতে হবে না । বৃষ্টি এখনও আসে নি । ও আসলে উঠলে চলবে ।
-আচ্ছা ।
আমি আবার লেকের পানির দিকে মনোনিবেশ করার প্রস্তুতি নিলাম । দেখলাম লোকটি আমার পাশেই বসে পড়লো । আমাকে বলল
-ভাইজান যদি বিরক্ত না হন তাহলে একটু কথা বলি । বৃষ্টি না আসা পর্যন্ত ।
আপনার স্ত্রী কোথায় গেছে ?
-মনে হয় ওর বাবার বাসায় গেছে ।
-মনে হয় কেন বলছেন ? আপনি সিওরলি জানেন না ?
লোকটিকে একটু বিভ্রান্ত মনে হল । খানিকটা চিন্তিতো মনে হল । নিজের স্ত্রী কোথায় যেতে পারে সেটা নিয়ে খানিকটা চিন্তায় আছে । আমি বললাম
-ফোন দেন ।
আমার কথা শেষ হওয়ার সাথে সাথে লোকটা বলে উঠলো
-না না । এই কাজটা করা যাবে না । ও এখন আমার উপর রেগে আছে । এখন ফোন দিলে আরো রেগে যাবে । তখন ওর রাগ ভাঙ্গানো দুস্কর হয়ে যাবে । বুঝছেন বাচ্চা মেয়েতো কিচ্ছু বুঝতে চায় না । কি যে এক ঝামেলায় পরেছি ! বিশাল যন্ত্রনায় আছি ।
লোকটা যদিও বলল যে বড় যন্ত্রনায় আছে কিন্তু তার মুখ দেখে তো সেই রকম মনে হল না । কেমন একটা সুখি সুখি ভাব তার চেহারায় । আমি বললাম
-সে কি আপনার উপর প্রায়ই রাগ করে ?
-আর বলবেন না । বাচ্চা মেয়েগুলো নিয়ে এই হয়েছে সমস্যা । কথা নাই বার্তা নাই একটু উনিশ বিশ হলেই বাড়ি ছেড়ে চলে যাবে । আমার কি মনে হয় জানেন ভাইসাহেব ?
-কি ?
-মনেহয় আমার শ্বশুর বাড়ির লোকজনের পূর্ব পুরুষের সাথে কোন যাযাবর গোষ্ঠীর সম্পৃক্তা ছিল । হাহাহা ।
নিজের রসিকতায় নিজেই হেসে ফেলল । আমার কেন জানি এই কথাতেই লোকটাতে পছন্দ হয়ে গেল । মনে হল লোকটা বেশ রসিক । আমি বললাম
-তা এতো যখন যন্ত্রনা দেয় বিয়ে করার আগে ভাবেন নাই ?
লোকটা আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-আর বইলেন না । আগে জানবো কিভাবে ? আর এই মেয়ের সাথে আমার বিয়ে করার কোন ইচ্ছাই ছিল না । বলতে পারেন ফেসে গেছি ।
-মানে ? ঠিক বুঝলাম না ।
লোকটা একটু এদিক ওদিক তাকালো । দেখে নিল আশে পাশে কেউ আছে কি না । তারপর আমার দিকে তাকিয়ে গলা খানিকটা নামিয়ে বলল
-ভাই আপনার সাথে কথা বলে ভাল লাগছে । আপনাকে একটা গোপন কথা বলতে চাই । অনেক দিন ধরেই কাউকে বলবো বলবো ভাবতেছি । কিন্তু পরিচিত কাউকে বলতে সাহস হচ্ছে না । আপনাকে বলা যায় । বলব ?
-বলুন । সমস্যা নাই ।
লোকটা বলল
-আমার তারেক । তারেক আহমেদ ।
-আপনি ?
-আমি তানভীর ।
লোকটা তার গল্ছোপ শুরু করলো !
-ছোট বেলা থেকেই আমার মেয়েদের সাথে প্রেম করার একটা দারুন ঝোক ছিল । এমনও হয়েছে একসাথে চার-পাঁচ জনের সাথে এক সাথে প্রেম করেছি । আমার চেহারা দেখছেন মোটামুটি খারাপ না । আর তখন মেয়েরা কেমন যেন এই চেহারা দেখে পটে যেত ।
আমি লোকটার চেহারার দিকে ভাল করে তাকালাম । এখন বেশ সুদর্শন তিনি। তারেক আহমেদ বলল
-যাই হোক এমন একটা অবস্থা যে আসে পাশের কোন মেয়েই বাদ নাই । কারো কারো আগে থেকেই রিলেশন আছে তবুও তার পেছনে লেগেছি এবং সফলও হয়েছি । এমন যখন সময় তখন বৃষ্টিরা আমাদের এলাকায় আসলো । একটা এলাকায় কোন সুন্দর মেয়ে আসলে কি হয় ? এলাকার যত চ্যাংড়া পোলাপাইন আছে সব পেছনে লেগে যায় ! বৃষ্টির পেছনেও সবাই লেগে গেল ।
কিন্তু এই মেয়ে কারো দ্বারাই পটলো না । শেষে আমি প্রজেক্ট হাতে নিলাম ।
আমি খানিকটা কৌতুহল নিয়ে জিজ্ঞেস করলাম
-তারপর ।
তারেক আহমেদ বলল
-সত্য কথা বলতে কি বৃষ্টি আমার দ্বারাও ঠিক মত পটছিল না । সঠিক কারনটা বুঝতে পারলাম কয়েক দিন পরে । বৃষ্টির এক খালাতো ভাইয়ের সাথে তার বিয়ে ঠিক হয়ে আছে । সেই খালাতো ভাই এখন আমেরিকায় থাকে । খুব জলদি তাদের বিয়ে হয়ে যাবে । এই জন্য সে কারো সাথে রিলেশন করবে না ।
-তারপর ?
-আমি তবুও পিছু ছাড়লাম না । আমার সাথে রিলেশন করবে না বললেও ঠিকই আমার সাথে কথা বলত । মাঝে মাঝে দেখাও করতো । আমি ঠিক বুঝতে পারতাম যে বিয়ের ঐ ব্যাপারটা না থাকলে বৃষ্টি রাজি হয়ে যেত । এভাবেই চলতে লাগলো । দু তিন মাস পরে একদিন সন্ধ্যার দিকে বৃষ্টি আমাকে ফোন দিল । বলল
-কোথায় আপনি ?
-এই তো । কি ব্যাপার ?
-আপনি এখনই আমাদের ছাদে আসেন ।
-এখনই ?
-এখনই ।
আমার জন্য একটা ধাক্কা অপেক্ষা করছিল । আমি ছাদে পৌছেছি আর বৃষ্টি সোজাসুজি এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলো । আমি এতোটাই অবাক হলাম কিছুক্ষন কোন কথাই বলতে পারলাম না ।
-কি হয়েছে ?
কোন মতে বললাম । বৃষ্টি বলল
-আজকে সব বাঁধা দুর হয়ে গেছে ।
-মানে ?
তারপর বৃষ্টি যা বলল তার সারমর্ম হল তার খালাতো ভাই যার সাথে তার তার বিয়ে ঠিক ছিল সে এক বিদেশি মেম বিয়ে করে ফেলেছে । এই জন্য তার আর কোন বাঁধা নেই ।
এই টুকু বলেই তারেক আহমেদ থামলেন কিছুক্ষন । আমি একটু হেসে বললাম
-আরে তাহলে তো কেললা ফটে ! আপনি তো জিতে গেলেন ।
-তা গেলাম । কিন্তু আসল জিনিসটা আর কয়দিন পরে টের পেলাম ।
-কি রকম ?
-না দেখুন , আমি যেমন ছিলাম সবার সাথেই টাইম পাস করতাম । কোন সিরিয়াস কিছু ছিল না । কিন্তু বৃষ্টি খুব সিরিয়াস ছিল । কদিন পরেই আমি টের পেলাম ।
-কি রকম ?
-তারও মাস খানেক পরের কথা । সন্ধ্যার সময় আমার এক বন্ধু আমাকে ফোন করে বলল বৃষ্টি হাসপাতালে । যতই টাইমপাস করি সে তখন আমার রানিং গার্লফ্রেন্ড । হাসপাতালে ছুটে গেলাম । কিন্তু ওর কি হয়েছে কিছুই বুঝতে পারছিলাম না । বারান্দায় বিরস মুখে দাড়িয়ে আছি এমন সময় আমার সেই বন্ধুটি বৃষ্টির বাবাকে নিয়ে হাজির ।
-তুমিই তারেক ?
আমি খানিকটা ইতস্তত করে বললাম
-জি ।
এরপর তিনি আমাকে একটু আড়ালে নিয়ে গেলেন । বললেন
-বৃষ্টি হাতের রগ কেটে সুইসাইড করার চেষ্টা করেছিল ।
আমি যেন আকাশ থেকে পড়লাম এই কথা শুনে । আমি বললাম
-সেকি ! কেন !
তিনি আর কিছু বলতে পারলেন না । কাঁদতে লাগলেন । আমার বন্ধুটি এসে বলল যে বৃষ্টি নাকি আমার আগের রিলেশন গুলোর ব্যাপারে সব শুনেছে । সেটা শুনে কিছুতেই স্থির থাকতে পারে নি ।
কি বলবো তানভীর সাহেব, জীবনে অনেক প্রেম করেছি অনেক টাইম পাস করেছি কিন্তু কেউ যে আমার কারনে তার জীবন দিয়ে দিতে পারে এইটা কোন দিন ভাবতেই পারি নাই ।
দেখলাম তারেক সাহেবের চোখ ভিজে উঠেছে । তিনি সেটা লুকানোর চেষ্টা করলেন না । আমি বললাম
-তারপর ?
-তারপর আর কি ? বেশি দিন অপেক্ষা করি নি । বৃষ্টিকে বিয়ে ফেলি । আর তখন থেকেই এই এই যন্ত্রনা বয়ে বেড়াচ্ছি ।
আমি লক্ষ্য করলাম তারেক সাহেবের চোখটা ভেজা আর মুখে একটা অদ্ভুদ হাসি লেগে আছে সুখি মানুষের হাসি ।
-কি আমি তোমাকে যন্ত্রনা দেই ।
আমরা দুজনেই একসাথে পিছনে ঘুরে তাকালাম । বাইশ তেইশ বছরের এক তরুনী দাড়িয়ে । মুখে কপট রাগের তাব । দেখলাম তারেক সাহেব হই হই করতে করতে উঠে গেল । মেয়েটির কাছে গিয়ে বলল
-আরে কে বলে তুমি আমাকে যন্ত্রনা দেও ! তুমি তো আমাকে ...
-থাক আর ঢং করতে হবে না । তুমি আবার সেই পুরানো কথা মানুষকে শোনাচ্ছ ?
-আরে !! তুমি আসছিলা না তাই তানভীর ভাইয়ের সাথে একটু গল্প করছিলাম ।
-হয়েছে । মানুষ এক গল্প আর কতবার করতে পারে ।
তারপর মেয়েটি আমার দিকে তাকিয়ে খানিকটা লজ্জিত কন্ঠে বলল
-আপনাকে নিশ্চই অনেক বিরক্ত করেছে । তাই না ?
আমি বললাম
-না না ঠিক আছে । আমি একদম বিরক্ত হই নি । বরং আরো ভাল লেগেছে ।
-এতো কথা বলতে পারে ও । শুনুন ওর কথা আপনি একটুও বিশ্বাস করবেন না । মানুষকে এতো গল্প দিতে পারে ও ।
তারেক সাহেব বলে উঠল
-আমি গল্প দেই ? আমি ?
-শুনো কথা বলবা না ।......
আমি আর বসে থাকি না । ওরা দুজন এখন মনের সুখে ঝগরা করুক । আমি ওদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে এলাম ।
হাটতে হাটতেই হঠাৎ আমার মনটা কেন জানি বিষন্ন হয়ে গেল । মনে হল এমন এমন যন্ত্রনা দেওয়ালী থাকলে মন্দ হত না !
ফেবু লিংক
১৭ ই এপ্রিল, ২০১৩ রাত ১০:১২
অপু তানভীর বলেছেন: ধন্যবাদ !!
২| ১৭ ই এপ্রিল, ২০১৩ রাত ১০:০৩
আতিকুল০৭৮৪ বলেছেন: ahare..amar o temon keo nai
১৭ ই এপ্রিল, ২০১৩ রাত ১০:১২
অপু তানভীর বলেছেন: হুম !! আমার কিন্তু আছে
৩| ১৭ ই এপ্রিল, ২০১৩ রাত ১০:০৫
রাতুল_শাহ বলেছেন: সুন্দর
১৭ ই এপ্রিল, ২০১৩ রাত ১০:১৩
অপু তানভীর বলেছেন: ধন্যবাদ !
৪| ১৭ ই এপ্রিল, ২০১৩ রাত ১০:১৯
শীলা শিপা বলেছেন: sundor likhesen vaia.
১৭ ই এপ্রিল, ২০১৩ রাত ১০:৪০
অপু তানভীর বলেছেন: ধন্যবাদ আপু !!
৫| ১৭ ই এপ্রিল, ২০১৩ রাত ১০:৩০
শ্রাবণ জল বলেছেন: গত ৪/৫ টা পোস্টের সাথে তুলনা করলে, এটা সবচাইতে ভাল লেগেছে।
১৭ ই এপ্রিল, ২০১৩ রাত ১০:৪০
অপু তানভীর বলেছেন: ধন্যবাদ ! ভাল থাকবেন !
৬| ১৮ ই এপ্রিল, ২০১৩ রাত ১২:০৯
কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:
আরও একটি সুন্দর গল্প +++++++++
১৮ ই এপ্রিল, ২০১৩ রাত ১২:২৩
অপু তানভীর বলেছেন:
ধন্যবাদ !!
৭| ১৮ ই এপ্রিল, ২০১৩ রাত ১:৩৩
প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: আপনার লেখার হাত আছে। লেখার ফ্ল নেই বললেই চলে, আর লেখার ফ্লো অসাধারণ। মনে হচ্ছিল চা খেতে খেতে গল্প শুনছি।
চালিয়ে যান।
১৮ ই এপ্রিল, ২০১৩ রাত ১১:১৯
অপু তানভীর বলেছেন: ধন্যবাদ !
৮| ২১ শে এপ্রিল, ২০১৩ বিকাল ৩:৫০
নাজিম-উদ-দৌলা বলেছেন: দারুন লাগছে! আপনার এই লেখাটা অন্যান্য লেখার তুলনায় বেশ ভাল হয়েছে।
২১ শে এপ্রিল, ২০১৩ বিকাল ৪:০৩
অপু তানভীর বলেছেন: ধন্যবাদ !! অনেক ধন্যবাদ !
৯| ০৮ ই মে, ২০১৩ রাত ১:২৬
সানফ্লাওয়ার বলেছেন: সুন্দর বর্ণনা। মনে হল চোখের সামনে ঘটনা টা ঘটছে
২১ শে মে, ২০১৩ রাত ২:০৬
অপু তানভীর বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ !
©somewhere in net ltd.
১| ১৭ ই এপ্রিল, ২০১৩ রাত ৯:৪৮
শুকনোপাতা০০৭ বলেছেন: খুব সুন্দর লিখেছেন... মধুর যন্ত্রনাময় জীবন!