নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

www.oputanvir.com

অপু তানভীর

আমার চোখে ঠোঁটে মুখে তুমি লেগে আছো

অপু তানভীর › বিস্তারিত পোস্টঃ

অনু-গল্পঃ আমাদের কল্প কথা

২৫ শে এপ্রিল, ২০১৭ দুপুর ১২:১৪

বাঁশের লাঠিটাতে একটু ভর দিয়ে আমি পেছন ফিরে তাকালাম । তাকিয়ে দেখি মিতুও বাঁশের লাঠিতে ভয় দিয়ে দাড়িয়ে দম নিচ্ছে । এই বিকেলের নিরুত্তাপ রোদেও ওর নাকে বিন্দু বিন্দু ঘাম । আমি কিছুটা সময় দাড়িয়ে থেকেই ওর দিকে তাকিয়ে রইলাম । এই পরিশ্রমের ভেতরেও মিতুকে দেখতে অন্য রকম লাগছে । প্রতিবারের মতই নতুন !

অবশ্য মিতুর এই সাজটা আমি এর আগে কোন দিন দেখি নি । মিতু কখনই জিন্স পরে না । কিন্তু এই বান্দরবান ট্যাুরের জন্য আজকে ও জিন্স পরে এসেছে । পাহাড়ে ওঠার জন্য শাড়ি কিংবা সেলোয়ার কামিজ থেকে জিন্স ও মানান সই । ওকে এতো দিনের কখনই আমি লং কামিজ ছাড়া আর কিছু পরতে দেখ নি সেখানে আজকে শর্ট কামিজও পরেছে কেবলই এই ট্যুরের জন্য । লম্বা চুলটা ও খোঁপা করতেই বেশি পছন্দ করে কিন্তু আজকে ঝুটির মত করে শক্ত করে বেঁধে রেখেছে পিছনে । কাধে ব্যাগ প্যাক । যদিও ওকে ব্যাগ দিতে চাইছিলাম না, ও জোর করে নিয়েছে । বলেছে সে কঁচি খুকি না । নিজের জিনিস নিজে বহন করতে সে পারবে ।

আমাকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে মিতু কাছে এসে বলল
-কি ব্যাপার এই টুকুতেই হাফ লেগে গেল ?
আমি খানিকটা হেসে বললাম
-হুম ! অভ্যেস নেই তো !
আমার কথা শুনে মিতু হাসলো । তারপর বলল
-হয়েছে । আসো !

আমি ওর পেছন পেছন হাটতে লাগলাম । সবার সামনে আমাদের গাইড সাং চাকমা । তারপর আমরা । আমাদের পেছনে আর কেউ নেই । এখন বান্দরবানে অফ সিজন চলছে । ট্যুরিস্ট নেই বললেই চলে । যা আছে সবাই নীলগিরি কিংবা নীলাচলের দিকে । এই বগা লেকের দিকে আসার মানুষ নেই একদম ! আমি নিজেও ঠিক বুঝতে পারলাম না মিতু হঠাৎ করে এখানে আসতে চাইলো কেন । চাইলো মানে একেবারে আসবেই । অন্য কোন কথা শুনবে না ! এবং তাকে আনতেই হবে !

আমি ভেবেছিলাম মিতুর হয়তো এই পরিশ্রম সহ্য হবে না । পাহারে ওঠাটা মুখের কথা না । আমি ছাত্র থাকা অবস্থায় এখানে এসেছিলাম । সেবার যে পরিশ্রম হয়েছিলো সেই কথা আমার সারাজীবন মনে থাকবে । তাই মিতু যখন আসতে চাইলো আমি ওকে সাফ মানা করে দিলাম । বললাম অন্য যে কোন জায়গাতে নিয়ে যাচ্ছি কিন্তু বগালেকে না । কিন্তু মিতু আসবেই এবং এখানেই আসবে ।
বউ তো কি আর করা শেষ পর্যন্ত হার মানতেই হল । সংসারে বউয়ের উপরে কি কথা চলে ! কিন্তু আমি এখনও ঠিক পরিস্কার বুঝতে পারছি না এতো জায়গা রেখে ও হঠাৎ এই বগালেকেই কেন আসতে চাইলো !

ঘুরাঘুরি ব্যাপারে মিতুর খুব একটা বাছবিছা নেই । ও কেবল বাসা থেকে বের হতে পারলেই খুশি । ওর ঘুরতে খুব ভাল লাগে সেটা যেখানেই হোক না কেন । কিন্তু হঠাৎ এখানে কেন সেটা আমি জানতে চাইলেই বলল যে ওর নাকি পাহাড়ে খুব ভাল ছবি নেই । এবার এখানে এসে সে ভাল ভাল কিছু ছবি তুলবে । এটা যে কোন কারন হতে পারে আমি ভাবতেই পারলা না । তবে মহারানী যখন চাইছে তার কথার উপর কথা চলে না !

যখন বগা লেকের কাছে এসে পৌছালাম তখন বিকেল হয়ে এসেছে । তবে তখন সূর্য ডুবে যাই নি । সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে প্রায় ২৭০০ ফুট উঁচু পাহাড়ে প্রাকৃতিক ভাবে সৃষ্ট বগালেক। কেওকারাডাং এর কোল ঘেঁষে বান্দারবান শহর থেকে প্রায় ৭০ কিলোমিটার দূরে এবং রুমা উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে এর অবস্থান। আমরা রুমে থেকে চান্দের গাড়ি নাকম এক জিপে করে এতো দুর এসেছি । তবে একটু পথ আমাদের হাটতে হয়েছে । তাই পরিশ্রম খুব একটা হয়েছে সেটা বলবো না । তবে যাদের একেবারে অভ্যাস নেই তাদের অনেক কিছু । মিতুর চেহারা দেখে আমার তেমনই মনে হচ্ছিলো ।

মিতুর খানিকটা সময় দাড়িয়েই রইলো লেকের দিকে তাকিয়ে । ওর মুগ্ধতা । সুবিশাল পাহারের মাঝে এই সুপেয় পানির লেকটা দেখলে সবারই মন অন্য রকম হয়ে যায় ! ও সেদিকেই তাকিয়ে ছিল ।

আমি ওর ছবি তুলতে লাগলাম । এদিকে সাং চলে গেছে আমাদের জন্য ঘর ঠিক করতে । আমাদের এখান থেকে আর কোথাও যাওয়া ইচ্ছে নেই । কালকে পুরোটা দিন আমরা এইখানে থাকবো । আর আসে পাশে যেদিকে যাওয়া যায় যাবো । তবে এর বেশি না । মিতু কেওকারাডাংয়ের উপর উঠতে পারবে না । এতো পরিশ্রম ওর সহ্য হবে না ! অবশ্য মিতু সেদিকে যাওয়ার নামও নেয় নি ।


মিতু আমার দিকে তাকিয়ে হাসলো । ওর এই মায়াময় হাসি দেখলে এখনও আমার বুকের ভেতরে কেমন করে ওঠে । এই হাসি দেখলেই আমার কেবল ওকে আদর করতে ইচ্ছে করে । শক্ত করে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে হয় । মনে হয় হয়তো কোন দিন ও আমার কাছ থেকে হারিয়ে যাবে !

মিতু বলল
-চলে এলাম তাহলে !
-হুম ! কাজকে সারাদিন মনের মত ছবি তুলবো ঠিক আছে । যেন বলতে পারো তোমার অনেক ছবি আছে !

আমাদের নিয়ে টানা টানিই শুরু হয়ে গেল গ্রামের লোকেদের মাঝে । ট্যুরিস্টের সময় নয় এখন । তবে সাং সব আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছিলো । আমাদের ঘরটা একেবারে লেক ঘেষে । পেছন দিক দিয়ে ছোট একটা বারান্দা আছে সেটা দিয়ে লেকে নামা যায় । মিতু তো চিৎকার করে উঠলো সেটা দেখে । ওর আনন্দ আর দেখে কে !

বিকেলেই আমরা লেকে নেমে পড়লাম গোসলের জন্য । আমি একটু নাহু নাহু করছিলাম তবে মিতু কোন কথা শুনলো না । লেকের পানিতে ঝাপাঝাপিরত অবস্থাতেই ওর বেশ কিছু ছবি তুললাম । তারপর আমিও নেমে পড়লাম ওর সাথে ! দুজন মিলে অনেক টা সময় সাতার কাটলাম । সত্যি কথা বলতে কি আমারও বেশ লাগছিলো ওর সাথে এমন ভাবে সময় কাটাতে ।

গোসল শেষ করে ভেবেছিলাম মিতু শাড়ি পরবে । শাড়ি ওর সব থেকে পছন্দের একটা পোষাক । কিন্তু পরলো না । বলল যে এখন নাকি ভাল লাগছে না । কাল পরবে। মনে হল ও হয়তো ক্লান্ত এই জন্য পরছে না । কাল পরে ছবি তুললেই হবে ।

রাতে বেলা পাহাড়ে টুপ অন্ধকার নেমে এল । আমরা বেশ কিছুটা সময় বারান্দায় বসে লেকের দিকে তাকিয়ে রইলাম । মিতু আমার কোলে মাথা রেখেই হঠাৎ করে বলল, ভালবাসি !
ওর গলার স্বরটা অনেক বেশি গাঢ় ছিল । আমি অন্ধকারের ভেতরেও যেন ওর জ্বলজ্বল করতে থাকা চোখ দেখতে পাচ্ছিলাম । আমি ওর মত স হজেই বলতে পারি না ভালবাসি । তবে সেটা অবশ্য বলার দরকারও পড়ে না । ও ঠিক ঠিক বুঝতে পারে আমি জানি !


রাতে ওকে জড়িয়ে ককখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি বলতে পারবো না । খুব ভোরে ঘুম ভেঙ্গে গেল কাঠের ক্যাচকুচ আওয়াজে । আমাদের রুমটা কাঠ দিয়ে তৈরি । হাটাহাটি করলেই আওয়াজ হয় । আমি কোন মতে চোখ মেলে দেখি মিতু আমার থেকে একটু দুরে বসে আছে । ভোরের আবছায়া আলোতে দেখলাম ওর কপালে টিপ দিচ্ছে । শাড়িও পরেছে দেখা যাচ্ছে । হাত ভর্তি চুরির টুংটাং আওয়াজও আমি শুনতে পেলাম ।
আমাকে উঠতে দেখে মিতু বলল
-গুড মর্নিং !
-মর্নিং ! কখন উঠেছো ?
-অনেক ক্ষন আগে । এখন যাওয়া দেখি হাত মুখ ধুয়ে আসো !
-এখনই ?
-্হ্যা !

উঠতে হল । বাইরে বেরিয়ে দেরি লেকটা কুয়াসাতে ঢেকে আছে । অন্য রকম একটা সৌন্দর্য যেটা লিখে প্রকাশ করা যাবে না । কিন্তু আমি যখন রুমের দিকে ফিরলাম তাকিয়ে দেখি মিতু বারান্দায় দাড়িয়ে আছে আমার দিকে তাকিয়ে । নীল রংয়ের শাড়ি পরেছে । হাতে নীল চুড়িতে ভর্তি । কপালের ছোট্ট টিপ আর গোলাপী ঠোটের দিকে আমি কিছুটা সময় মন্ত্রমুগ্ধের মত চেয়ে রইলাম । মনে হল এই সৌন্দর্য্য এই পৃথিবীর নয় বরং অন্য কোন গ্রহের ।
মিতু আমার দিকে হাসলো । আমি ঘরের দিকে ছুটলাম ক্যামেরা আনার জন্য। তখনই ও আমার হাত ধরে আটকালো । আমাকে ধরে বারান্দার একদিকে রাখা চেয়ারের কাছে নিয়ে গেল । গাঢ় স্বরে বলল
-বস এখানে ।
আমি বসলাম । মিতু আমার সামনেই হাটু গেড়ে বসে বলল
-ইউ নো আই লাভ ইউ !
আমার কাছে মনে হল ও আমাকে অন্য কিছু বলবে । বরং আমাকে এই কথাটা বলার জন্যই ও এখানে নিয়ে এসেছে । আমি কোন কথা না বলে ওর দিকে তাকিয়ে রইলাম । আমার জবাব দেওয়ার দরকার ছিল না । মিতু বলল
-আমি এখানে তোমাকে কেন নিয়ে এসেছি জানো ?
-ছবি তোলার জন্য যে নয় তা তো বুঝতে পেরেছি !

মিতু হাসলো । বলল
-আমি আসলে তোমাকে এমন কিছু বলতে চাই যা ..... যা শোনার জন্য .....
মিতু লাইন শেষ করলো না । আমি বললাম
-বল ।
-আসলে কথাটা কিভাবে বলব আমি বুঝতে পারছি না । আর কথাটা আমি ঐ শহরের চার দেওয়ার মাঝে বলতে চাই নি । আমার কাছে মনে হয়েছে পাহাড় কিংবা সমুদ্রের সামনে বলতে পারলে সব থেকে ভাল হয় । সমুদ্রে যাওয়াটা সহজ ছিল কিন্তু আমার কেন জানি এখানে আসতে মন চাইলো !
আমি মনে খুজে পাচ্ছি না মিতু আমাকে কি বলবে । কি এমন কথা যে বলার জন্য এতো দুর আসতে হল । আমি বললাম
-আমি শোনার জন্য প্রস্তুত ! আমাকে ছেলে চলে যাওয়ার প্লান নেই তো !
মিতু কপট রাগ দেখালো । অবশ্য তারপরই হেসে ফেলল । আমি তাকিয়ে রইলাম মিতুর দিকে !

তারপর শাড়ির আঁচলটা সরিয়ে ওর পেটের উপর হাত দিয়ে আমার দিকে তাকালো । ওর চোখ দুটো যেন আরও জ্বলজ্বল করে উঠলো সাথে সাথে । এই ভোরের শুভ্র আলোতে আমি কেবল অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম ওর দিকে । আমার সামনে আমার দেবী, আমার পুরো পৃথিবী হাটু গেড়ে বসে আছে আর আমাকে বলার চেষ্টা করছে যে মা হতে চলেছে !

আমি অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম আমার চোখ দিয়ে পানি পরতে শুরু করেছে । এতো তীব্র আনন্দ আর এর আগে কোন দিন অনুভব করেছি বলে আমার মনে নেই । আমি ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম । বললাম
-মিতু তোমাকে কত যে ভালবাসি সেটা আমি কোনদিন তোমাকে বলে বোঝাতে পারবো না !
মিতু কেবল মৃদু স্বরে বলল
-আমি জানি !


আমি ওকে জড়িয়েই ধরে থাকলাম । আজকে ওকে জড়িয়েই ধরে থাকবো ! নিজের মনের ভেতরে যে তীব্র আনন্দ হচ্ছে সেটা অন্য কোন ভাবে প্রকাশ করা যাবে না আর !

মন্তব্য ৯ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৯) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে এপ্রিল, ২০১৭ দুপুর ১২:৫২

আরিয়ান রাকিব বলেছেন: খুব সাধারন একটা ঘটনাঅথচ এত সুন্দর প্রকাশ। খুব ভালো লাগলো।

২৬ শে এপ্রিল, ২০১৭ সকাল ৯:৩৫

অপু তানভীর বলেছেন: ধন্যবাদ :)

২| ২৭ শে এপ্রিল, ২০১৭ দুপুর ১২:২৪

চেনা পথের অচিন পথিক বলেছেন: গল্পের সব নাইকাই কি নীল শাড়ী আর নীলি চুডী পরে

২৭ শে এপ্রিল, ২০১৭ বিকাল ৩:১৩

অপু তানভীর বলেছেন: পরলে সমস্যা কি ?

৩| ২৭ শে এপ্রিল, ২০১৭ দুপুর ১:০০

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: দারুন! ফেসবুকে আগেই পড়েছি :)

++++

২৭ শে এপ্রিল, ২০১৭ বিকাল ৩:১৪

অপু তানভীর বলেছেন: ফেসবুক থেকে সরিয়ে নিয়েছি !

পড়ার জন্য ধন্যবাদ :)

৪| ২৭ শে এপ্রিল, ২০১৭ রাত ১০:২৮

শরিফুল সরকার বলেছেন: ভাই wordpress এ সব গল্পের লিংক দিয়ে দেন। somewhere এ লিংক কাজ করে না।

২৮ শে এপ্রিল, ২০১৭ বিকাল ৩:০০

অপু তানভীর বলেছেন: ওয়ার্ডপ্রেসে সব গল্প নাই ।

৫| ২৮ শে জুলাই, ২০১৮ সকাল ১১:২৩

খাঁজা বাবা বলেছেন: সহজ সাবলীল

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.