নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

www.oputanvir.com

অপু তানভীর

আমার চোখে ঠোঁটে মুখে তুমি লেগে আছো

অপু তানভীর › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পঃ মিতু এবং একটি ডাহুক পাখি

১০ ই জুন, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:২৫

গেট দিয়ে বের হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম কিছু সময়। কোন দিকে যাবো ভাবছি এমন সময় মিতুর দিকে চোখ পড়লো। বড় গাছের গুড়ির উপর বসে মোবাইল টিপছে। মুখটা একটু মলিন ঠেকছে। আমি ওকে বাড়ি চলে যেতে বলেছিলাম। সেটা না করে ও বসেই আছে।

আজকে একটা চাকরির পরীক্ষা ছিল। এমন পরীক্ষা গুলো আমি একা একাই দিতে যাই। তখন দেখি পরীক্ষার হলের পরীক্ষার্থীদের সাথে আরও অনেকে আসে। বাবা আসে, মা আসে স্বামীরাও আসে বউদের পৌছে দিতে৷ স্ত্রী কিংবা প্রেমিকারাও মাঝে মাঝে আসে সাথে। আমার সাথে এরকম কোনদিন হয় নি। জীবনে যত পরীক্ষা দিতে গিয়েছি সব একা একা গিয়ে হাজির হয়েছি। মাঝে মাঝে ইচ্ছে হত কেউ যদি এমন আসতো সাথে, হয়তো ভাল লাগতো মনে।

গতদিন পরীক্ষার কেন্দ্রের কথা শুনতেই মিতু বলল ও আসতে চায়। কেন্দ্রটা ওদের বাসার কাছেই। বেশি সময় লাগবে না ওর আসতে৷ সকালবেলা ঠিক সময়ে হাজির হয়। তারপর কেন্দ্রে প্রশের আগ পর্যন্ত আমরা এক সাথে গল্প করি, গেট দিয়ে প্রবেশের সময় ওকে বলি এতো সময় অপেক্ষা করতে হবে না। ও যেন বাড়ি চলে যায়। আমি বিকেলবেলা দেখা করবো ওর সাথে৷ কিন্তু এই মেয়ে আর বাসায় যায় নি। এখানেই বসে রয়েছে আমার জন্য।

আমি সামনে গিয়ে দাড়াতেই মিতু মুখ তুলে তাকালো। তারপর হাসলো মিষ্টি করে। বলল, পরীক্ষা কেমন হল?
-হয়েছে এক রকম। আর চাকরি হলেই কি বা না হলেই কি!
মিতু কিছু বলতে গিয়েও বলল না। আমি বললাম, তুমি বাসায় যাও নি?
মিতু বলল, বাসায় চলে যাচ্ছিলাম তখন হঠাৎ আকাশেত দিকে চোখ গেল৷ কেন জানি মনে হল আজকে বৃষ্টি আসবে। তাই আর যাই নি।
আকাশের দিকে তাকিয়ে মনে হল সত্যিই আজ বৃষ্টি আসবে। মিতু বলল, চল হাটি। আজকে তোমার সাথে বৃষ্টিতে ভিজবো।
আমি বললাম, হাত ধরে?
মিতু খানিকটা হেসে বলল, হাত ধরতে চাও?
আমি উত্তর দিলাম না। পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে ডান দিকে হাটতে লাগলাম এক সাথে।

সঠিক ভাবে বলতে গেলে মিতু আমার প্রেমিকা না। আমি ওকে অসম্ভব পছন্দ করি, হয়তো মিতুও তাই। কিন্তু প্রেমিক প্রেমিকা বলতে যা বোঝায় আসলে সেই সম্পর্ক আমাদের মাঝে নেই৷
আমাদের একে অন্যের সাথে কথা বলতে ভাল লাগে, এক সাথে ঘুরাঘুরি করি, নিজেদের কথা একে অন্যের সাথে বলতে পারি, এই টুকুই৷

হাটতে হাটতে আমি হঠাৎ মিতুর হাত ধরলাম৷ কেন ধরলাম সেটা অবশ্য জানি না। কেবল ইচ্ছে হল তাই ধরলাম। আর সাথে সাথেই আকাশ ভেঙ্গে বৃষ্টি শুরু হল। পাকা রাস্তার উপর আমরা হাটতে লাগলাম। আমাদের দুইজনের মাঝে কোন তাড়াহুড়ো ছিল না। মিতু আস্তে আস্তে কথা বলছিল আর হাটছিল। আর আমি যেমন ওর হাত ধরে ছিলাম মিতুও ঠিক এমনই ভাবে আমার হাতটা ধরেছিল নিজের মত করে৷

আমার হঠাৎ করেই মন খারাপ হয়ে গেল। মনে হল এই মেয়েটি যদি আমার প্রেমিকা হতে তাহলে নিশ্চিত ওকে বিয়ে করে ফেলতাম। মিতু মেয়েটাই সম্ভবত এই রকম। কিছু কিছু মেয়ে থাকেই বউ ম্যাটেরিয়াল। মায়াময় মায়াবতী। এদের সাথে জীবনে একবার পরিচয় হলে সারাজীবন আফসোস রয়ে যায় যে এই মেয়েটি কেন তার জীবনে আসে নি!

ফুটপাতে বসে অনেকটা সময় আমরা গল্প করলাম। যখন পাশ দিয়ে কোন বাদ কিংবা কার গাড়ি চলে যাচ্ছিলো তারা অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখছিলো আমাদের। নিশ্চিত ভাবেই আমাদের প্রেমিক প্রেমিকা ভাবছিল৷ ঢাকা শহরে প্রেমিক প্রেমিকাদের এই রকম এক সাথে বৃষ্টিতে ভিজতে দেখা যায় মাঝে মাঝে।

আমি যখন প্রথম ঢাকায় আসি তখন এমন কিছু প্রথম চোখে পড়েছিল আমার। আমি আসাদ গেটের আড়ংয়ের সামনে দাড়িয়েছিলাম ছাতা হাতে৷ তখনই চোখ গেল এক কাপলের উপর। ছেলে আর মেয়ে দুজনেরই এক হাতে জুতা অন্য হাতে ছাতা। প্যান্ট খানিকটা গোটানো। রাস্তার সদ্য জমা পানির ভেতর দিয়ে দুজন হাটছে এক সাথে। কি চমৎকার একটা দৃশ্য। আমার চোখ আটকে গেল। অনেক দিন সেই দৃশ্য আমার চোখে লেগে ছিল।
আর আজকে আমি মিতুর সাথে বৃষ্টিতে ভিজছি এই স্থানে। মাঝে মিতু উঠে দাড়াচ্ছে দুইহাত দুই দিকে দিকে মুখটা আকাসের দিকে আর তারপর চোখ বন্ধ করে বৃষ্টিতে ভিজছে। আমি অবাক হয়ে সেদিকে তাকিয়ে থাকি। শাড়ি পরা মিতুকে আমার অদ্ভুদ সুন্দর লাগে। নিজের ফোন বের করে মিতুর বেশ কয়েকটা ছবি তুলি৷ ফোনটা ওয়াটার প্রুফ হওয়াই রক্ষা।

হঠাৎ কোথা থেকে একদল পিচ্চি এসে হাজির হল। মিতুকে দেখলাম ওদের সাথে কিছু সময় লাফালাফি করতে। হঠাৎ কি মনে হল এক পিচ্চির হাতে ফোন দিয়ে আমাদের কয়েকটা ছবি তুলে দিতে বললাম। মিতু আমার একদম গাঁ ঘেসে দাড়ালো। এর আগে মিতুর এতো কাছাকাছি আমি এসে দাঁড়ায় নি।
মিতুকে বললাম, যখন তুমি থাকবে না তখন এই ছবি গুলো আমাকে পীড়া দিবে।
মিতু বলল, আমাকেও।

একটা সময়ে মিতু আর আমি রিক্সায় চড়লাম। অনেকটা সময় বৃষ্টিতে ভেজা হয়েছে। রিক্সা ঠিক করে ওকে বাসায় পৌছে দিলাম৷ নিজে বাসায় পৌছানোর পথে মনে হতে লাগলো মিতুর সাথে কেমন করে পরিচয় হয়েছিল আমার। অন্তত এই ভাবে পরিচয় হবে কোনদিন আমি ভাবি নি।



মিতুর সাথে আমার কোনদিন কথা হবে এটা আমি ভাবি নি। সেখানে মিতু নিজ থেকে আমার সাথে কথা বলবে সেটা ভাবা তো অনেক পরের ব্যাপার। কথা কিন্তু এমনটাই হয়েছিল।

মিতুকে প্রথম দেখেছিলাম আমি অনলাইনেই। মিতু নাম নিয়ে আমি অনেক গল্প লিখেছি। কিন্তু বাস্তবে সেই গল্পের মিতুকে আমি কোনদিন দেখি নি। ভেবেছিলাম হয়তো এমন কোন মেয়ে নেই বাস্তবে। ঠিক সেই সময়ে মিতুকে দেখলাম। ছবিটার দিকে তাকিয়ে রইলাম কিছুটা সময় দুরুদুরু বুক নিয়ে। বুকের মাঝে একটা ছোটখাটো ধাক্কা খেয়েছি মিতুকে দেখে। আমার কেবল মনে হল আমার গল্পের মেয়েটাই যেন আমার চোখের সামনে এসে হাজির হয়েছে।

ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়ে দিলাম। মনে এও আশংঙ্কা ছিল হয়তো মিতু সেটা গ্রহন করবে না। তবে অবাক করে দিয়ে মিতু সেটা গ্রহন করলো।

তারপর প্রতিদিন ওর প্রোফাইলে ঘুরে বেড়াতে থাকলাম কিন্তু আগে নক দিতে সাহস হল না। এভাবে কত গুলো দিন পার হয়ে গেল। তারপর মিতু নিজ থেকে ইনবক্সে নক দিলো। সেদিন কি পরিমান আনন্দিত হয়েছিলাম। ভাগ্য ভাল যে তখন আমরা চ্যাটিং করছিলাম। যদি ফোনে কথা বলতাম তাহলে নিশ্চয়ই টের পেয়ে যেত আমার উত্তেজনা।

তারপর আমাদের কথা হতে থাকে টুকটাক। প্রায় দিনেই কথা হত আমাদের৷ মিতুর যাকে পছন্দ করতো তার নাম আর আমার নাম নাকি একই। এটাই ছিল ওর আমার সাথ্র কথা বলার কারন। যাক যেটা তবে ধীরে আমার কেন জানি মনে হল আমার যেমন মিতুর সাথে কথা বলতে ভাল লাগছে মিতুরও তাই।

তারপর সাহস করে একদিন বলেই ফেললাম দেখা করার কথা। বই মেলা চলছিল। মিতুকে বললাম মেলায় দেখা করতে৷ কিছু মাত্র দেরিনা করে ও দেখা করতে রাজিব হয়ে গেল।

বুকে অচেনা ভাল লাগা আর উত্তেজনা নিয়ে আমি মেলাতে হাজির হলাম। মেলাতে মিতু সেদিন নীল রংয়ের শাড়ি পরে এসেছিল। নীলের উপর কালো কাজ করা শাড়ি আর হাত ভর্তি কাঁচের চুরি। হাতে দেখলাম আবার মেহেদী দিয়েছে। আমার বুকের ধরফরানি বেড়ে গেল কয়েক গুণ। ঠিক মত কথা বলতে পারছিলাম না। মনের ভেতর টা আনন্দে লাফাচ্ছিল। এর আগে আমার এই রকম ভাবে কারো সাথে দেখা হয় নি।

সারা বই মেলা ঘুরে বেড়ালাম। ওকে কয়েকটা বই কিনে দিলাম। প্রথমে নিতে না চাইলেও পরে নিল। আমাকে বই কিনে দিলো।

ঐ মেলাতে দেখা হওয়ার পর থেকেই আমাদের নিয়মিত দেখা হতে লাগলো। আমরা কত বিষয় নিয়ে যে কথা বলতাম। একটা সময় মিতু ওর পছন্দের মানুষটাকে নিয়ে কথা বলা একেবারে বন্ধ করে দেয়। এমন একটা ভাব যেন কোন দিন সে ছিলই না তার জীবনে। কিভাবে আমরা এতো কাছাকাছি চলে আসলাম সেটা আমরা কেউ ই জানি না। পরীক্ষা দিয়ে এই বৃষ্টিতে এক সাথে ভেজার পর মিতুর প্রতি আমার অনুভূতি টা আরও তীব্র হতে লাগলো।
কিন্তু সেটা যে এইভাবে হোচট খেয়ে পড়বে সেটা বুঝতে পারিনি৷ সপ্তাহ দুয়েক পরেই মিতু জানালো পাত্র পক্ষ ওকে দেখতে এসেছে, পছন্দও করে ফেলেছে। এখন সব কিছু ঠিক থাকলে হয়তো জলদি বিয়ে হয়ে যাবে। আমি যেন আকাশ থেকে পড়লাম৷
অবশ্য কিছু বলতেও পারলাম না। মিতু কোনদিন বলে নি আমাকে ভালবাসে, আমিও বলতে পারি নি।



মিতু সব সময় শাড়ি পড়তে পছন্দ করতো। আমার সাথে দেখা হওয়ার প্রায় সব দিনই ও শাড়ি পরেই আসতো৷ ও শাড়িতে যেমন স্বাচ্ছন্দ বোধ করতো, আমিও ওকে ঐ শাড়িতে দেখেই অভস্ত্য ছিল৷ তবে মাঝে মাঝে ওকে আমার পছন্দের চুড়িদার সেলোয়ার কামিজ পরতে বলতাম। ও মুখ বাঁকা করে বলতো, শুনো এই সব আমি পরবো না। কেন শাড়িতে আমাকে ভাল লাগে না?
আমি হেসে বলতাম ভাল লাগে না আবার!

আজকে যখন মিতু শেষ বারের মত দেখা করতে এল, আমি ওকে দেখে খানিকটা চমকেই গেলাম৷ বুকের ভেতরে আবারও ওকে না পাওয়ার সেই হাহাকারটার জেগে উঠলো।

কাল রাতেই বলেছিল যে ওর বিয়ে প্রায় ঠিক হয়ে গেছে। পাত্র পক্ষ রাজি। ওর পরিবারও রাজি। আমি একবার জিজ্ঞেস করতে গেলাম তুমি রাজি কিনা কিন্তু সেটা করলাম না। কি দরকার এই সব প্রশ্নের!
মিতু বলল হয়তো আগের মত আর দেখা হবেনা আমাদের৷ ও চাইছিল বিয়ের আগে আরেকবার দেখা হোক আমাদের৷

আমি সেই দেখা করার জন্য বসেছিলাম ওর জন্য। মিতুকে হেটে আসতে দেখলাম আর বুকের ভেতরে ওকে না পাওয়ার কষ্ট টা কেমন করে বেড়ে গেল হুহু করে।

মিতু আজকে আমার পছন্দের পোশাক পরেই এসেছে৷ ধবধবে সাদা কামিজের সাথে সাদা লেগিংস পরেছে। ওড়নাটা লাল রংয়ের৷ মনে হচ্ছে সাদা পরীর লাল ডানা। চোখে কাজল দেওয়া আর হাতে গাঢ় করে মেহেদি দিয়েছে৷ চুল গুলো বাঁধেনি। এক পাশে ছাড়া রয়েছে। আমি কিছুটা সময় কেবল মন্ত্রমুগ্ধের মত ওর দিকে তাকিয়ে রইলাম। মুখ দিয়ে একটা কথা বের হল না।

মিতু আমার সামনে এসে বসলো৷ তারপর বলল, কি দেখো এমন করে?
আমি সেই প্রশ্নের জবাব দিলাম না। আজকে আসলে ওকে আমার কিছু বলার নেই। আজকে চুপচাপ ওকে দেখবো কেবল। আমি সাহস করে ওর মেহেদী রাঙা হাতটা নিজেত হাতের মাঝে নিলাম। নরম হাতটা এখনও ধরলে সেই আগের শিহরণ অনুভব করি আমি। জানি না মিতু করে কিনা!
বললাম, আজকেই কি তাহলে শেষ দেখা?
মিতু বলল, না ঠিক শেষ না। তবে তোমার সাথে যেভাবে মিশেছি, সেই ভাবে আর দেখা হবে না।

কিছু সময় চুপ করে থেকে মিতু বলল, অপু আমি জানি না তোমার সাথে আমি সম্পর্ক টা কেমন ছিল। আমি এটাকে কোন সংজ্ঞাতে ফেলতে পারি নি। তোমার সাথে মিশতে ভাল লেগেছে, তাই মিশছি। কথা বলে হালকা লাগতো, তাই কথা বলেছি। আমি জানি না তুমি কি ছিলে আমার৷ সত্যিই জানি না।
আমি হাসলাম। তারপর বললাম, আচ্ছা জানতে হবে না। চল আজকে রিক্সা করে ঘুরাঘুরি করা যাক। পরে হয়তো আর সুযোগ হবে না।
সন্ধ্যা পর্যন্ত আমরা ঘুরলাম রিক্সা করে। কখনও নির্জন রাস্তা দিয়ে অথবা কখনো তীব্র জ্যামের ভেতরে দিয়ে যাচ্ছিলো আমাদের রিক্সা।
একটু রাতই হয়ে গেল। ওকে বাসায় পৌছে দিলাম। রিক্সা থেকে ও যখন নামতে যাবে তখনই আরেকটা কাজ করে ফেললাম সাহস করে। মনে হল আর হয়তো কোন দিন এই সুযোগ আসবে না৷ ওর গালে একটা চুমু খেতে যাবো তখনই ও আমার দিকে মুখ ঘুরিয়ে ফেলল। ফলাফল হল চুমুটা ওর ঠোঁটে উপর পড়লো। ভেবেছিলাম ও দ্রুতই সরিয়ে নিবে নিজেকে কিন্তু নিলো না বরং নিজে আরও খানিকটা যুক্ত হল।

মিতু তারপর রিক্সা থেকে নেমে গিয়ে আমাকে বলল, ভাল থেকো। কেমন!

তারপর হাটতে হাটতে বাড়ির ভেতরে চলে গেল। আমি আরও কিছু সময় বসে রইলাম রিক্সার উপরে। তারপর রিক্সা ঘুরাতে বললাম।

সপ্তাহ পার হয়ে গেল। বাসা থেকে একদমই বের হলাম না। নিঃসঙ্গ ডাহুক পাখির মত একা একা কেটে যেতে লাগলো সময়৷
লতারপর মনে হল এবার একটু বাইরে বের হওয়া দরকার৷ সন্ধ্যার সময় আগে মোবাইল বের করে ফেসবুকে ঢুকলাম।

শত চেষ্টা করেও মিতুর ফেসবুক টাইম লাইনে যাওয়া থেকে নিজেকে দূরে রাখতে পারলাম না। কিন্তু সেখানে গিয়ে একটা বড় রকমেত ধাক্কা খেলাম।
মিতু ঘন্টা খানেক আগে ও নিজেত ফেসবুক প্রোফাইল পিকচার বদলেছে। ছবিটা একটা যুগল ছবি। পরীক্ষার দিন বৃষ্টির ভেতরে ওর সাথে যে ছবি গুলো তুলেছিলাম ছবিটা সেগুলোর একটা।
আমরা বৃষ্টির ভেতরে দাঁড়িয়ে আছি একে অন্যের দিকে তাকিয়ে। হাতেহাত ধরা।

আমার মাথার ভেতরে কিছুই ঢুকছে না। কদিনের ভেতরে ওর বিয়ে হওয়ার কথা। এই সময়ে এমন ছবি পোস্ট করার কথা না। তবুও কেন করলো।
তবে কি....
সম্ভাবনা টা মনে আসতেই লক্ষ্য করলাম বুকের ভেতরে হার্টবিট বেড়ে গেছে। কাঁপা হাতে মিতুর নাম্বারে ডায়াল করলাম।

রিসিভ হল প্রায় সাথে সাথেই। ওপাশ থেকে মিতু বলল, তো মিস্টার দেবদাশের ঘুম ভাঙ্গলো তাহলে?
বললাম, মানে কি বলছো?
মিতু বলল, এক ঘন্টা সময় দিচ্ছি বাসার সামনে আসো। আর শুনো ঐ নীল পাঞ্জাবি টা পরে আসবা।

পরিশিষ্টঃ
মিতুর সাথে যদিও বিয়ে হয়নি এখনো তবে হয়ে যাবে খুব জলদি। মিতুর বাবা এখনও আমাকে ঠিক পছন্দ করে নি। তিনি রাজি হলেই হবে।

সেদিন মিতু যখন চুমু খেয়েছিলাম সেই সময়ে নামি মিতুর হবু স্বামী ওদের বাসায় এসেছিল। বারান্দা থেকে আমাদের দেখে ফেলে। মিতুর সাথে রাগারাগি করার চেষ্টা করলে মিতু তাকে বাসা থেকে বের করে দেয়৷
তারপর মিতুর বাবাও যখন মিতুর উপর রাগ করতে থাকে মিতু তখন পরিস্কার বলে যে আমাকেই বিয়ে করবে সে আর কাউকে না।

কদিন নাকি ওদের বাসায় এই চলছিল।

আমি অবশ্য সে সব নিয়ে খুব একটা চিন্তিত হলাম না। মিতুর সাথে আগের থেকেও মেলামেশা আরও বেড়ে গেল৷ এখন সে আমার অফিশিয়াল প্রেমিকা, কদিন পরে বউ হয়ে যাবে৷

আমি যে ভেবেছিলাম ওকে হারানোর পর নিঃসঙ্গ ডাহুক পাখির মত একা একা চলতে হবে সেটা আর হয়নি। জীবন কখন কোন পথে মানুষ কে নিয়ে যায়, সত্যিই বুঝা মুস্কিল।



মন্তব্য ৬ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই জুন, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:৪৩

রাজীব নুর বলেছেন: প্রথম লাইনে গন্ডোগোল আছে।

মিতু নামের মেয়েদের জীবনে ঝামেলা আছে।

১০ ই জুন, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:৫২

অপু তানভীর বলেছেন: ধন্যবাদ পড়ার জন্য

২| ১০ ই জুন, ২০১৯ রাত ৮:১৪

মা.হাসান বলেছেন: আপনার পোস্টে আসলেই আফসোস হয়। ফেসবুকে অ্যাকাউন্ট কিভাবে খুলতে হয়? যৌবনে ইয়াহু মেসেঞ্জার আইসিকিউতে বহুত ঘুরাঘুরি করেছি। এসএমএস.এসি নামের একটা সাইটও, তখন ছিল ফ্রি এসএমএস পাঠানো যেত। যৌবন ভাসিয়া গেলো জলে। এখন ঘরওয়ালি ও পাশে বসতে চায় না, রিকশায় উঠলে বলে আর একটা রিক্সা ডাকো।
সাদা জামায় লাল ওড়না যেন লাল ডানা আলা পরি। কেয়া বাত কেয়া বাত। তবে এখন নাকি ডানা কাটা পরি দেরই রাজত্ব। বরাবরের মতই খুব ভালো লিখেছেন।

১২ ই জুন, ২০১৯ সকাল ৯:১৯

অপু তানভীর বলেছেন: এসব আসলে গল্পেই সম্ভব । বাস্তবে আসলে সম্ভব না । বাস্তবে মিতুরা আসে না । তাদের দেখাও পাওয়া যায় না ।

৩| ১১ ই জুন, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:৩১

মেঘ প্রিয় বালক বলেছেন: পড়লাম মিতু নামের মেয়ের গল্পটা,অনেক আর্কষন ছিলো গল্পে। ভালো লাগলো।

১২ ই জুন, ২০১৯ সকাল ৯:৪২

অপু তানভীর বলেছেন: ধন্যবাদ :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.