নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

www.oputanvir.com

অপু তানভীর

আমার চোখে ঠোঁটে মুখে তুমি লেগে আছো

অপু তানভীর › বিস্তারিত পোস্টঃ

বড় গল্পঃ মিশন কেওক্রাডং

০২ রা অক্টোবর, ২০১৯ সকাল ৯:১১



পাহাড়ের এই চুড়াটা মুহিবের কাছে সব সময়ই চমৎকার লাগে । ছোট বেলা থেকেই পাহাড় ওর কাছে সব সময়ই আকর্ষণের বিষয় ছিল । এখনও আছে । এই পাহাড়ে নাকি তাদেরকেই পাঠানো হয় যারা কোন অন্যায় করে । মুহিবের অবশ্য এটা জেনে হাসিই এসেছিল । ওর প্রথম পোস্টিংই এখানে । এখানে ওকে বছর দুয়েক থাকতে হবে । তারপর লোকালয়ে পাঠাবে । মুহিব তো ভেবে রেখেছে, বাকি জীবন ও এখানেই থাকবে ।

মুহিব আরেকবার নিচে তাকালো । একে বারে ঘুরঘুটে অন্ধকার । আজকে আকাশে চাঁদ নেই । একটু দুরে জেনারেটরের আওয়াজ ছাড়া আর কোন আওয়াজ শোনা যাচ্ছে না । সেটাও বন্ধ হয়ে যাবে কিছু সময় পরে । তখন প্রকৃতির আওয়াজ শোনা যাবে বেশ ভাল ভাবে । পাহাড়ের সব পোকা মাকড়ের ডাক গুলো এই জেনারেটরের কারনে শোনা যায় না । মাঝে মুহিবের এই কৃত্রিম যন্ত্রটা চালু করতে একদম ইচ্ছে করে না ।

প্রতিদিন এগারোটা পর্যন্ত এখানে জেনারেটর চলে । তারপর সব বন্ধ । প্রতিদিনের মত আজও সব শান্ত । মুহিবের তবুও কেন জানি ভাল লাগছে না । বারবার মনে হচ্ছে যেন কিছু একটা ঠিক নেই । আজকে কেওক্রাডাংয়ে মোট ছয়টা দল এসেছিলো ঘুরতে । এর ভেতরে পাঁচটা চলে গেছে । একটা অবশ্য এখনও আছে । ওরা সকালে যাবে । চারিদিকে শান্ত সব কিছু । তার পরেও মুহিবের কেন যেন মনে হচ্ছে কিছু একটা ঠিক নেই । কোন একটা ঝামেলা হতে চলেছে ।

অবশ্য এটার পেছনে একটা কারনও আছে । দুদিন পরেই এখানে আর্মির ডেপুটি চিফ অব স্টাফ আসবে । খুব গোপন একটা ব্যাপার তদারক করতে । বান্দারবানের পাহাড়ে খুব দামী কিছু একটার সন্ধান পাওয়া গেছে । ব্যাপারটা এখনও সরকারের কাউকেও জানানো হয় নি । কেবল মাত্র আর্মির কিছু লোকজন জানে । এমন কি মুহিব নিজেও ব্যাপারটা খুব ভাল করে জানে না । ওকে জানানো হয় নি পুরোটা ।

সেটাই দেখবে আসবে সে । যা সন্দেহ করা হয়েছে সেটাই যদি হয়ে থাকে তাহলে তো কথাই নেই । সম্ভবত এদের অন্য কোন পরিকল্পনা আছে । সেই জন্যই এতো গোপনীয়তা । এবং এই গোপনীয়তা বজায় রাখার জন্য ডেপুটি সাহেবের মেয়েকেও নিয়ে আসা হচ্ছে । অনেকটা ফ্যামিলি ট্যুরের মত দেখানো হবে ব্যাপারটা । এই জন্যই হয়তো মুহিব একটু বেশিই চিন্তা করছে ।

মুহিব আবারও অন্ধকারে নিচের দিকে তাকালো । তখনই জেনারেটর বন্ধ হয়ে গেল ।

মুবিব সেদিকে ফিরে তাকালো । সময় হিসাবে আরও পনের মিনিট পরে বন্ধ হওয়ার কথা ! ঘড়ির দিকে তাকিয়ে কি যেন ভাবলো । তারপর মনে হল, থাক কি হয়েছে । তার হাতে একটা টর্চ লাইট রয়েছে । সেটা ধরেই সে হাটতে লাগলো আরও একটু সামনের দিকে । সে লক্ষ্যও করলো না অন্ধকারে তার পেছনে একজন চলে এসেছে । মুহিব যখন বুঝতে পারলো তখন বেশ দেরি হয়ে গেছে । একটা রডের আঘাত নেমে এসেছে তার মাথায় । সাথে সাথেই বাংলাদেশের সর্বোচ্চ চুড়ায় জ্ঞান হারিয়ে পরে গেল ল্যান্স করপোরাল মুহিব আকরাম ।



পর্ব এক

নীতু চোখের পানি আটকানোর চেষ্টা করছে খুব । খুব চাচ্ছে যেন তার চোখ থেকে পানি গড়িয়ে না পড়ে । অবশ্য এখন আশে পাশে কেউ নেই । কেবল ওর সামনে বসে থাকা মানুষটা ছাড়া । সেও ওর পা থেকে জোঁক ছাড়াতে ব্যস্ত । ওর দিকে তাকাচ্ছে না । এই সময়ে যদি চোখ দিয়ে একটু পানি বের হয়েও যায় তাহলে খুব একটা সমস্যা হবে না । তবুও সে চায় না সামনের মানুষটির সামনে কান্না করতে ।

নীতু বলল, ওরা তো চলে গেল আমাদের ছেড়ে ?

সামনের ছেলেটা ওর দিকে না তাকিয়েই বলল, ছেড়ে যায় নি । এগিয়ে গেছে একটু । আমাদের খাওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে দার্জিলিং পাড়ায় । ওখানে খাবো আমরা ।

-আমি আর যেতে পারবো না ।

এই কথা শুনে ছেলেটা ওর দিকে চোখ তুলে তাকালো ।

নীতুর তখনই হঠাৎ বুকের ভেতরে কেমন করে উঠলো যেন । ছেলেটার চোখ এতো গভীর কেন ! কি মায়াময় চোখ দুটো! একটু হাসলো ছেলেটা ! তারপর বলল, অবশ্যই পারবে !

তখনই মনে হল ছেলেটা ওকে খুব স্বাভাবিক ভাবেই তুমি করে বলছে ! কি আশ্চর্য ! ছেলেটা ওকে তুমি করে কেন বলছে ! একটু সাহায্য করেছে বলে ফট করে তুমি করে বলবে !

কি যেন ছেলেটার নাম ! নামটা মনে করার চেষ্টা করলো কিন্তু মনে করতে পারলো না । গতকাল রাতেই ছেলেটাকে প্রথম দেখেছে ও ।

একটা ফেসবুক গ্রুপের সাথে ও এই ট্যুরে এসেছে । ইদানিং প্রায়ই ফেসবুক ট্যুর ইভেন্ট দেখা যায় ! এক দুইজন অর্গানাইজার থাকে । তারা একটা টিম নিয়ে বিভিন্ন জায়গাতে ঘুরে আসে । নীতু এই গ্রুপের কাউকে চিনে না । ওর জীবনে একটা ঘটনা ঘটেছে গত সপ্তাহে । সেটার থেকে নিজেকে বের করতেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে । চলে এসে এখানে। যা হবার হবে, এমন একটা মনভাব নিয়েই চলে এসেছে ।

কিন্তু বগালেক থেকে কেওক্রাডাং এর পথে হাটতে গিয়ে টের পাচ্ছে কি পরিশ্রমের কাজ ! এই কাজে অভ্যাস না থাকলে মারাত্বক কষ্টের কাজ হয়ে দাঁড়ায় । টিমের অন্যান্যদের অবস্থা বেশ খারাপ তবে তারা ঠিকই সামলে নিচ্ছে । কিন্তু নীতু কিছুতেই পারছে না । মনে হচ্ছে এখনই ওর দম শেষ হয়ে যাবে !

তার উপর এই জোঁক ।

ওর পায়ে মোট ৫টা জোঁক আটকেছে । চারটা বের করা হয়েছে । সেখান দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে । ছেলেটা বলল, প্যান্ট টা আরেকটু উঠাও দেখি ! জোঁকটা একটু উপরে উঠে গেছে !

নীতুর পুরো শরীর কেমন করে উঠলো । একটা বিচ্ছিরি প্রাণী ওর শরীর বেঁয়ে উপরে উঠছে এটা ভাবতেই একটা ঘিন্ন ঘিন্নে অনুভূতি হল ওর মনে । আর কিছু না ভেবে প্যান্ট টা আরও একটু উপরে তুলে ফেলল । হাটুর একটু উপরে ।

চাকু দিকে ছেটে সেই জোঁকটাও ছাড়িয়ে ফেলল । তারপর নিজের ব্যাগ থেকে একটা বোতল বের করলো । ছেলেটার যে আগেও এই পাহাড়ে এসেছে সেটা বোঝা যাচ্ছে । সব রকম প্রস্তুতি নিয়েই এসেছে সে । বোতল থেকে তরল ঢেলে ওর ক্ষত স্থানটাতে পরিস্কার করে দিল । তারপর ব্যান্ড এইড আটকে দিল ।

তারপর বলল, চল যাওয়া যাক ! আর কিছু সময় পরেই দার্জিলিং পাড়া !

নীতু উঠে দাড়ালো । তারপর বলল, ধন্যবাদ । তোমার নাম আমি জানি না ! আমি নীতু রায়হান !

ছেলেটা একটু হাসলো । তারপর বলল, আমি জানি তোমার নাম । আমি আসিফ । এখন চল হাটা যাক !

নীতু আর আসিফ মিলে আবারও হাটতে শুরু করলো । শহুরে মানুষদের যদি পাহাড়ে ওঠার অভ্যাস না থাকে তাহলে তারা বেশি সময় ধরে হাটতে পারে না । অল্প কিছু সময় হাটার পরেই ক্লান্ত হয়ে যায় । কিন্তু সমস্যা হচ্ছে বগা লেক থেকে এই কেওক্রাডং পর্যন্ত একবার হাটা শুরু করলে আর অন্য কোন উপায় নেই । তোমাকে হাটতেই হবে । কেউ তোমার হয়ে হেটে দিবে না । শীতকাল হলে বগালেক থেকে সরাসরি জিপ গাড়ি চলে কিন্তু এই বর্ষা কালে হাটা ছাড়া কোন উপায় নেই ।

যখন ওরা দার্জিলিং পাড়াতে পৌছালো তখন নীতুর অবস্থা সত্যিই খারাপ হয়ে গেছে । ওর কাছে মনে হল যে পুরো পৃথিবীটা কাঁপছে যেন । ও সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছে যে ওর পক্ষে আর হাটা সম্ভব না । ও এখানেই থাকবে । টিম চলে যাক ওকে রেখে । ফেরার পথে ওকে নিয়ে যাবে আবার ! ও কোন ভাবেই আর হেটে উঠতে পারবে না !

কিন্তু সেটা আর হল না । টিম ওকে রেখে চলে গেলেও একজন মানুষ গেল না । নীতু তাকিয়ে দেখলো আসিফ রয়ে গেছে। ওদের টিম লিডারের সাথে কিছু সময় ধরে কি যেন আলোচনা করছিলো সে । তারপর টিম লিডার চলে গেল ।

নীতু ঠিক বুঝতে পারছিলো না এই ছেলেটা না গিয়ে কেন রয়ে গেল । বলল, তুমি গেলে না ?

-উহু ! কাউকে পেছনে রেখে যাওয়ার নিয়ম নেই । সবাইকে সাথে নিয়ে যেতে হবে !

নীতু কি বলবে খুজে পেল না । ওর কারনে ছেলেটাও চুড়ায় উঠবে না এটা ভাবতেই খারাপ লাগা শুরু হল ওর । কিন্তু একটু পরে ছেলেটা যা বলল তাতে ওর চোখ কপালে উঠলো । আসিফ বলল, তোমার ব্যাগটা আমার কাধে দাও ।

-কেন ?

-কারন ব্যাগ কাধে থাকলে আমি তোমাকে কোলে নিতে পারবো না !

-কি ? না না না না !

এটা বলেও লাভ হল না । আসিফ ঠিকই ওকে কোলে নিয়ে হাটতে শুরু করলো । হাটতে হাটতেই বলল, তোমার ব্যাগ তো ভারি কেন ? কি আছে এতে ?

নীতুর তখনও অস্বস্তি যায় নি । আফিস বলল, এই জন্যই তোমার হাটতে এতো কষ্ট হচ্ছে । ব্যাগে কি আছে ?

নীতু কি বলবে খুজে পেল না । আসিফই বলল, মনে হচ্ছে কোন ইলেক্ট্রনিক জিনিস পত্র রয়েছে ।

নীতু এবার বলল, ল্যাপটপ !

আসিফ বলল, ল্যাপটপ ? পাহাড়ে ল্যাপটপ কে নিয়ে আসে ?

নীতু বলল, আমি আমার ল্যাপটপ ছাড়া কোথাও যাই না !

আসিফ কিছু সময় তাকিয়ে রইলো নীতুর দিকে । তারপর আর কিছু বলল না । হাটতে লাগলো । নীতু কেবল অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো মানুষটার দিকে । কি পরিমান পরিশ্রম হচ্ছে আসিফের সেটা নীতু ভাল করেই বুঝতে পারছিলো ।

নীতু ভাবছিলো অন্য কথা । ওর পুরো জীবন ভর ও কেবল একা একাই থেকে এসেছে । জীবনে এমন একটা মানুষ পায় নি ও যে ওর জন্য অপেক্ষা করেছে । এটা সে ছোট বেলা থেকেই দেখে এসেছে । খুব ছোট বেলায় ওর মা আর বাবার ডিভোর্স হয়ে যায় । অন্য ফ্যামিলির ডিভোর্সের সময় যে ব্যাপারটা দেখা যায় যে সন্তানকে কাছে নেওয়ার জন্য দুজনেই লড়াই করে । সেখানে নীতুর বেলাতে হল উল্টো । ওর বাবা মায়ের দুজনের একজনেরও এই ইচ্ছে ছিল না যে নীতু তাদের কাছে থাকুক । তারা দুজনেই তখন নিজেদের ক্যারিয়ার নিয়ে ব্যস্ত । তাদের বিয়েটা অনেকটা পারিবারিক চাপের কারনেই হয়েছিলো। কিন্তু নিজেদের মধ্য কোন বনিবনা ছিল না । হয় নি । সবাই ভেবেছিঅ যে একটা সন্তান হলেই বোধহয় সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে কিন্তু ঠিক হয় নি । বরং পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে গিয়েছিলো ।

তারপর থেকেই নীতু একা । প্রথমে সে কিছুদিন কয়েকজন আত্মীয়দের বাসায় বড় হল । অবশ্য তার খরচ ওর বাবা মাই দিতো । এখনও দেয় । তারপর একটু বড় হলেই সে হোস্টেলে থাকতে শুরু করলো । তারপর থেকেই সে একা একাই আছে ।

বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে সে একেজনের সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলো । প্রথমে মনে হয়েছিলো যাক, অন্তত একজন কাছের মানুষ পাওয়া গেল । কিন্তু হায় ! সপ্তাহ খানেক আগে সে জানতে পারলো তারই ভালবাসার মানুষটা তারই কাছের একবন্ধুর সাথে গোপনে প্রেম করছে । এটা জানার পরই নীতুর সব কিছু যেন অলটপালট হয়ে গিয়েছিলো । আর কিছু ভাবতেই পারছিলো না । তাই সব কিছু ছেড়ে ছুড়ে দিয়ে চলে এসেছে এই পাহাড়ে । চুড়ায় উঠে ঝাপ দিবে এই মনস্থির করে এসেছিলো । কিন্তু সেখানেও উঠতে পারছিলো না । আসিফ না থাকলে কি হত কে জানে !

ওরা যখন চুড়ায় উঠলো তখন বিকেল হয়ে গেছে । এইবার অবশ্য নীতুর খুব বেশি পরিশ্রম হয় নি । সে বিকেলের নাস্তা করেই সবার সাথে একেবারে চুড়ায় উঠে দাড়ালো । এতো উচু পাহাড়ে সে এই প্রথম উঠেছে । পাড়ে দাড়িয়ে নিচের দিকে তাকাতেই অদ্ভুত একটা বিষাদ এসে ঘিরে ধরলো তাকে। মানুষ কঠিন সৌন্দর্যের মুখোমুখি হলে এক অদ্ভুত বিষাদ তাকে ঘিরে ধরে । নীতুর বেলাও তাই হল । তারপর একটা সময়ে ওর মনে হল এই সৌন্দর্যকে সামনে রেখে মৃত্যুকে বরণ করা ওর পক্ষে সম্ভব না । ঢাকা গিয়ে নতুন ভাবে মরার প্লান করা যাবে । আপাতত এই মেঘের দিকে কিছু সময় তাকিয়ে থাকা যাক ।

সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত সে চুড়ার উপরেই বসে থাকলো । খাওয়া দাওয়ার পরে কটেজে না গিয়ে আবারও এসে হাজির হল চুড়ায় । চুপচাপ বসেই রইলো একা। কত সময় সে বসে ছিল বলতে পারবে না এমন সময় হঠাৎ ওর পেছনে একজন এসে হাজির হল । আওয়াজ পেতে চমকে ফিরে তাকালো ও । তাকিয়ে দেখে আর্মির পোশাক পরা একজন সিপাহী ওর দিকে তাকিয়ে আছে । তবে নীতুর এই দৃষ্টিটা মোটেই ভাল লাগলো না ।

এখানে আসার আগে কম করেও হলেই তিন চারবার ওর আর্মি চেকিংয়ের মুখোমুখি হয়েছে । তাদের সবার মুখ গম্ভীর হলেও একটা সভ্য আর মার্জিত ভাব ছিল । কিন্তু এই মানুষটার চোখে কেমন একটা লোলুপ দৃষ্টি দেখতে পাচ্ছে । নীতু চলে যাওয়ার জন্য উঠে দাড়ালো। সিপাহীটি বলল, এই মেয়ে এখানে কি কর?

নীতু নীচু কন্ঠে বলল, কিছু না । চলে যাচ্ছি ।

-এই দাড়াও কোথায় যাও ? আগে তোমাকে চেক করতে হবে !

এই বলে সিপাহীটি খ্যাকখ্যাক করে হাসলো । তারপর আস্তে আস্তে এগিয়ে আসতে লাগলো । নীতু কি করবে ঠিক বুঝতে পারছিলো না। পাশ দিয়ে একটা আলাদা রাস্তা আছে । ওদের কটেজের যাওয়ার সর্টকাট রাস্তা । সেদিকে দৌড় দিবে কি না ভাবছে । কিন্তু ততক্ষনে দেরি হয়ে গেছে । সিপাহীটি ওর হাত ধরে ফেলেছে । তারপর ওকে টেনে নিয়ে যেতে লাগলো । নীতু ভয়ে একেবারে সিটকে গেছে । মুখ দিয়ে একটা আওয়াজ পর্যন্ত বের করতে পারছে না । চুড়ার ঠিক পাশেই একটা কাঠের ঘর দেখা যাচ্ছে । ঘরটা এখন পরিত্যাক্ত । চাল নেই । সম্ভবত কোন ঝড়ে উড়ে গেছে । লোকটা নীতু সেদিকে টেনে নিয়ে যেতে লাগলো । নীতু খুব ভাল করেই বুঝতে পারছিলো যে ওর সাথে কি হতে চলেছে । এখন কি করবে ও !

ওকে ধাক্কা মেরে মাটিতে ফেলে দিলো । তারপর হাতের অস্ত্রটা এক পাশে সরিয়ে রাখলো । এবার নিজের প্যান্টের বেল্ট খুলতে শুরু করলো । কিন্তু সেটা মাঝ পথেই আটকে গেল । নীতু দেখতে পেল লোকটার ঠিক পেছনে কেউ এসে দাড়িয়েছে । কালো মূর্তিটা এতো দ্রুত এগিয়ে এল যে লোকটা কিছু করার সুযোই পেল না । মিতু কেবল মট করে ঘাড় ভাঙ্গার আওয়াজট্যাঁ শুনতে পেল । তারপর শান্ত হয়ে এল সব । সিপাহী লোকটাকে মাটিতে পড়ে যেতে দেখলো সে । তার পেছনেই পরিচিত মুখটা দেখতে পেল সে ।

আসিফ !



পর্ব দুই

নীতু কেবল কিছুটা সময় চুপ করে তাকিয়ে রইলো । একবার ওর চোখ আসিফের দিকে আরেকবার মাটিতে পড়ে থাকা সিপাহীটার দিকে নড়তে লাগলো । কি হয়ে গেল মুহুর্তের ভেতরে ! নিজেকে খানিকটা সমালে নিয়ে বলল, কি করলে তুমি ? আর্মি মেরে ফেললে ?

আসিফ একটা তীব্র ঘৃণা ভরা চোখে নিয়ে পরে থাকা সিপাহীর দিকে তাকালো । তারপর বলল, আর্মি ? বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এমন ঘৃন্য কাজ করে না ।

নীতু অবাক হয়ে বলল, মানে ?

সে প্রশ্নের জবাব না দিয়ে আসিফ ওকে উঠতে সাহায্য করলো । তারপর বলল, এখন এসব উত্তর দেওয়ার সময় নেই । চল আমার সাথে।

-কোথায় ?

-আসো ।

এই বলে ওর হাত ধরে নিয়ে যেতে লাগলো । ওদের কটেজের কাছে এসে দেখলো সেখানে ওদের টিমের সবাই ভীত মুখে দাড়িয়ে আছে । নীতু কিছু বুঝতে পারছে না । আসিফ সবার দিকে তাকিয়ে বলল, আপনারা এই পথ দিয়ে নেমে যাবেন । বেশি দুর যেতে হবে না । কিছু দুর যেতে দেখবেন যে আপনার জন্য আর্মির লোকজন অপেক্ষা করছে । ঠিক আছে ? সবাই নেমে যান । আপনাদের কোন ভয় নেই ।

নীতু তখন আসিফের দিকে তাকিয়ে বলল, আর তুমি ?

-আমাকে থাকতে হবে ।

নীতুর কি মনে হল কে জানে । ও বলল, তাহলে আমিও থাকবো ।

-পাগলামো করো না প্লিজ ।

-কোন পাগলামো না । আমি তো জানিই না । কেন যাবো আমরা ?

আসিফকে এবার একটু অধৈর্য দেখালো । তারপর বলল, শোন নীতু এই ক্যাম্পটা একটা সন্ত্রাসী গ্রুপের দখলে, আমাদের কয়েকজন সৈনিক আর একজন বড় অফিসার আটকা আছে ওদের হাতে । ওদেরকে রক্ষা করতেই আমি এখানে এসেছি । তুমি চলে যাও প্লিজ ।

-না না, আমি যাবো না ।

-পাগলামো করে না

নীতু কি বলবে ঠিক বুঝতে পারছে না । টিমের সবার দিকে তাকিয়ে দেখে সবাই ভয় পেয়ে গেছে । সবাই এখনই এখান থেকে বের হয়ে যেতে পারলে বাঁচে । বেড়াতে এসে এমন বিপদে পড়বে কেউ ভাবে নি । নীতুরও কো চলে যাওয়া উচিৎ। কিন্তু গিয়ে কি করবে সে ? কার কাছে যাবে ? ওর তো কোন পরিবারই নেই । যাকে ভালবাসতো সেও ওর সাথে বিশ্বাস ঘাতকতা করছে । আর ও তো এখানে মরতেই এসেছিলো । যদি এই সন্ত্রাসীদের গুলিতে মরে তাহলেই বা কি যায় আসে ! নীতু ঠিক করে নিল । সে যাবে না । কোন ভাবেই যাবে না এই মানুষটাকে ছেড়ে । একটু আগে এই মানুষটা যেমন ওকে ছেড়ে যায় নি ও যাবে না । আসিফ বলেছিলো কাউকে ফেলে রাখার নিয়ম নেই । ও কেন নিয়মের বাইরে যাবে? যাবে না । কোন ভাবেই না !

নীতু আরও বড় করে একটা দম নিল । তারপর দৃঢ় কন্ঠে বলল

-আমি যাবো না । ওরা সবাই চলে যাক । আর আই ক্যান হেল্প । আমি সাহায্য করতে পারবো তোমাকে !

ততক্ষনে ওরা সবাই খুব অধৈর্য হয়ে গেছে । টিম লিডার যাওয়ার জন্য তাড়া দিচ্ছে । তখনই নীতু আবারও একটা বোকার মত কাজ করলো । আসিফকে জড়িয়ে ধরলো শক্ত করে । জড়িয়ে ধরেই বলল, আমি তোমাকে ছেড়ে যাবো না ।

এতো জোড়েই জড়িয়ে ধরেছিলো যে আসিফ ওর বুকের ধরফরানী পর্যন্ত শুনতে পাচ্ছিলো । আসিফের চোখে ইশারা পেয়েই ওদের ট্রাভেল গ্রুপের টিম লিডার হাটা শুরু করলো । নীতু তখনও আসিফ কে জড়িয়ে ধরেই রেখেছে । আফিস একটা সময় বলল, ওরা চলে গেছে । তুমি আমাকে ছাড়লে আমি কাজ করতে পারি !

নীতু খানিকটা লজ্জা পেয়ে গেল । তারপর ছেড়ে দিলো ওকে । নীতু ভেবেছিল এখনই হয়তো আসিফ ওকে হাজারটা প্রশ্ন করবে । অনেক বোকাবকি করবে । কিন্তু সেসবের কিছুই করলো না । কেবল চারিদিক তাকিয়ে বলল, চল আগে কটেজে যাওয়া যাক ! ওখান থেকে ঠিক করতে হবে কি করবো । আমি যা বলবো সেই মোতাবেক চলতে হবে । ঠিক আছে তো ?

নীতু মাথা নাড়ালো কেবল ।

কটেজে বসে আসিফ চিন্তা করতে লাগলো কি করবে । নীতু চুপ করে আসিফকে দেখতে লাগলো । ছেলেটার শরীরে যে শক্তি আছে সেটা সে বুঝেছিলো যখন ওকে কোলে নিয়েছিলো । ভেবেছিলো হয়তো নিয়মিত জিম আর ট্রাকিং করে এই শরীর হয়েছে । নীতু বলল, তো তুমি একজন আর্মি অফিসার ?

আসিফ মাথা তুলে তাকালো । তারপর বলল, হ্যা ।

-তোমার র‌্যাং কি ?

-মেজর !

নীতু সত্যিই খানিকটা অবাক হয়ে গেল । আসিফ কে দেখলো খুব বেশি বয়স্ক মনে হয় না । ওর থেকে দুএক বছরের বড় মনে হয় । সেকন্ড ল্যাফটেন্যান্ট কমিশন পেলে হয়তো মানাতো । সেখানে মেজর ! আর এই ছেলেটাকেই কি না ও তুমি তুমি করছে ।

নীতু বলল, এখানে আসলে কি হচ্ছে ? আমরা তো কিছুই জানি না । কোন খবরেও জানা যায় নি । তাহলে আমরা হয়তো আসতামই না !

আসিফ কিছু সময় চুপ করে থেকে বলল, ব্যাপারটা এতো সহজ না । আর্মি কখনই সাধারণ মানুষকে বিপদে ফেলতে চায় না । কিন্তু পরিস্থিতি এমনই যে আমাদের কিছুই করার ছিল না । তারপরেও আমরা সব সময় প্রস্তুত ছিলাম ।

কিছু সময় চুপ থেকে আবার বলল, ব্লাক লিমো নামের একটা গ্রুপ এই কাজটা করেছে । এতো নিঘুত প্লানিং করে কাজটা করেছে যে আমরা বুঝতেও পারি নি ।

-কি করেছে ?

-সব কিছু শুরু হয় আসলে আরও মাস খানেক আগে । হঠাৎ করেই এই বেজ ক্যাম্পের কুক এসে জানালো যে তার মেয়েকে নিয়ে হাসপাতালে যেতে হবে । সে সামনের কদিন আসতে পারবে না । তাই সে অন্য একজন কুক এনে দেয় । আমরা খোজ নিয়ে জানতে পারি সে সেই কুক আসলেই মেয়েকে নিয়ে হাসপাতালে যাবে । তার মেয়ে অসুস্থ । আর্মি আর বেশি কিছু সন্দেহ করে নি । এরপর দুই সপ্তাহ এই নতুন কুক খুব চমৎকার ভাবে রান্না করে ক্যাম্প সামলেছে । সবার সাথে ভাল মিশে গেছে । ঠিক এক সপ্তাহ আগে একট্যাঁ ট্রাভেলার গ্রুপ আছসে এখানে । ওরাই ছিল ব্লাক লিমোর লোকজন । প্রতিদিনের মত রাতের বেলা খেয়ে সিপাহীরা ঘুমিয়ে পড়ে । কেবল দুজন পাহারাতে ছিল । কিন্তু ঐদিন ওদের খাবারের সাথে কড়া ঘুমের ঔষধ মিশানো ছিল যেটা নতুন কুক করেছে । তাই খুব সহজেই রাতে ওরা ক্যাম্প দখল নিয়ে নেয় ।

-তারপর ?

-ভাবছো এই মাথায় একটা ছোট ক্যাম্প দখল নিয়ে কি লাভ ওদের ?

-হ্যা তাই তো ! বিশেষ করে এখানে সাপ্লাইয়ের জন্য ওরা তোমাদের উপর নির্ভরশীল । তোমরা সাপ্লাই বন্ধ করে দিলেই ওরা তো কদিনের ভেতরেই নেমে আসবে ।

আসিফ হাসলো । এখানেই ওদের প্লানিং ! আমরা সাপ্লাই বন্ধ করতে পারি নি । সব কাজ চলছে আগের মত । এমন কি ওরা যে এই ক্যাম্প দখল নিয়েছে সেটা রুমা থানার পুলিশও জানে না । আর্মির খুব অল্প কিছু মানুষ জানে !

-কেন ?

-কারন ওদের হাতে আমার ডেপুটি চিফ অব স্টাফ আটকা রয়েছে !

নীতু কি বলবে ঠিক খুজে পেল না । এই পাহাড়ে ডেপুটি চিফ কি করছে ! কিভাবে আটকা পড়লো !

আসিফ বলল, আগে থেকেই ডেপুটি চিফের এইখানে আসার কথা ছিল । এখানকার পাহাড়ে কিছু একটা পাওয়া গেছে । কি পাওয়া গেছে সেটা অবশ্য আমি নিজেও জানি না । সেটা এতো গোপন ছিল । আর এই জন্যই সে আসছিলো । এই তথ্য ব্লাক লিমোর হাতে ছিল । কিভাবে তারা এই তথ্য পেয়েছে সেটা আমরা বের করার চেষ্টা করেছি কিন্তু পারি নি । মানে হচ্ছে ভেতরের কেউ আছে ওদের হারে । এই তথ্যকে বেজ করেই ওরা প্লান বানিয়েছে । ওরা কেবল আর্মির স্থান দখল করেছে । ডেপুটি চিফ অব স্টাফ যখন আসে, তখন ওরা ভেবেছে যে এরা আর্মির লোকই । তাই সাবধান হওয়ার প্রয়োজন মনে করে নি । সুযোগ মত তাদেরও আটক করেছে ।

নীতু বলল, তোমরা এতো কিছু জানতে পারলে ?

-ওরা নিজেরাই জানিয়েছে । সবাইকে আটক করে একটা ভিডিও পাঠিয়েছে বগালেক আর্মি বেজ ! সেখানে সব কিছু বলেছে । ওরা কি করেছে এবং সামনে আমাদের কি করতে হবে সেটাও । কাউকে জানানো যাবে না এবং স্বাভাবিক রাখতে হবে সব কিছু । এমন কি ট্যুরিস্টদের কেও আটকানো যাবে না । যদি ওরা বুঝতে পারে যে টুরিস্টদের আসতে দেওয়া হচ্ছে না তাহলে তখনই ডেপুটি চিফ কে তারা মেরে ফেলবে । তারা এও জানিয়েছে যে ওরা সুইসাইড মিশনেই এসেছে । মরার ভয় নেই ওদের । সো আমরা আটকাতে পারি নি । ওদের স্পাই থাকতে পারে যে কোন স্থানে ।

-ওরা কতজন ?

-১০/১২ হতে পারে । সঠিক সংখ্যা আমরা জানি না । তবে বারোজনের বেশি মোটেই না । এই চুড়ায় পাহারায় আছে ৪ জন । আর এর একটু দুরে আমাদের মুল ক্যাম্প । সেখানে খুব বেশি হলে আট জন থাকাবে ।

-সবাইকে কি ওখানেই আটকে রাখা হয়েছে ?

-হ্যা ।

-মাত্র ১২ জনের একটা দলকে তোমরা কাবু করতে পারবে না ? কমান্ড অভিযান চালিয়ে ?

আসিফ হাসলো । তারপর বলল, এতো বেশি বেশি হলিউড মুভি দেখা বাদ দাও । ব্যাপারটা এতো সহজ না ! এরা হাইট্যাক টেরোরিস্ট । টেকনোলজি ব্যবহার করে ।

এই বলে আসিফ নিজের মোবাইল বের করে একটা ছবি দেখালো । নীতু দেখলো সেখানে বেশ কয়েকজন সিপাহী চুপ করে বসে আছে । সবার হাতে কেবল হাত কড়া পরানো । আর কিছু নেই । আসিফ বলল, ওদের হাতের দিকে তাকাও । গোলাপী রঙয়ের একটা ঘড়ির মত দেখতে পাচ্ছো ?

নীতু দেখতে পাচ্ছে । সে মাথা নাড়ালো । আসিফ বলল, এটা সবার হাতে আছে । এটা একটা রিমোট বোম । রিমোর্টের এক বোতাম চাপে সব গুলো ফেটে যাবে । সাথে সাথেই মারা পড়বে সবাই । বারো জনের টিমকে কাবু করতে আমাদের সময় লাগবে না । কিন্তু একটা রিমোর্টের চাপ আমরা আটকাতে পারবো না কোন ভাবেই ।

নীতু বুঝতে পারলো কেন আর্মি টেরোরিস্টদের কথা শুনছে । শুনতে বাধ্য হচ্ছে । নীতু বলল, এখন তোমার কি প্লান ?

-আমার কাজ হচ্ছে এই রিমোট দখলে নেওয়া । যেকোন ভাবেই ! আমার সিগন্যাল দেওয়া মাত্রই আর্মি চলে আসবে । তারা পুরো পাহাড়কে ঘিরে রেখেছে ।

নীতু কি যেন ভাবলো । তারপর বলল, আই ক্যান ডেফিনেটলি হেল্প !

আসিফ বলল, কিভাবে ?

নীতু হাসলো । তারপর বলল, তুমি জানতে চেয়েছিলে না পাহাড়ে কে ল্যাপটপ নিয়ে আসে !

-হ্যা ।

-তোমার কি মনে হয় ? আমি কেন এই ল্যাপটপ নিয়ে এসেছি ? আর কে নিজের ল্যাপটপ কখনও হাত ছাড়া করে না !

আসিফকে খানিকটা কনফিউজ দেখালো ! সে ঠিক ধরতে পারছে না । নীতুর মুখের হাসিটা ওকে আরও বেশি কনফিউজড করে দিচ্ছে । পুরো রাস্তা জুড়ে এই মেয়েটাকে তার বোকাই মনে হয়েছে । যখন ওকে জড়িয়ে ধরে যেতে চাইলো না তখন আসিফের মনে হয়েছে এই মেয়ের মত বোকা পৃথিবীতে আর একটাও নেই । কিন্তু এখন এই মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে সে খানিকটা অবাক হচ্ছে !

কোন ধরনের মানুষ কখনও নিজের ল্যাপটপ হাত ছাড়া করে না ?

কে?



পর্ব তিন

নীতুর জীবনে এখনও পর্যন্ত একটা জিনিসই ওকে ছেড়ে যায় নি । এবং সেটা হচ্ছে ওর ল্যাপটপ । একা হয়ে যাওয়ার পর এই ল্যাপটপই ছিল তার একমাত্র সঙ্গী । এটার ভেতরেই সে ডুবে থাকতো সারা দিন । এটা দিয়ে কি করা যায় সেটাই খুজে বেড়াতো । তারপরই একটা সময় সে আবিস্কার করে যে বাইরের জগত ছাড়াও এই ইন্টারনেটও একটা জগত আছে । ভয়ংকর একটা জগত এবং এখানে চাইলে অনেক কিছু করা যায় ।

আস্তে আস্তে সেই জগতে প্রবেশ করতে শুরু করে । নানান কিছু শিখতে শুরু করে সে । কোডিং আর প্রোগ্রামিংয়ের প্রতি ওর আগ্রহটা দিন দিন এতোই বৃদ্ধি পেতে শুরু করলো যে সে যেন একেবারে এসবের ভেতরে ঢুকে গেল । কয়েক বছরের ভেতরের নীতু আবিস্কার করলো যে সে চাইলে অনেক কিছু করতে পারছে । যে কারো ব্যক্তিগত একাউন্টে সে প্রবেশ করতে পারছে খুব সহজেই । তা সেটা ফেসবুক একাউন্ট হোক আর কারো ব্যক্তিগত ব্যাংক একাউন্ট । একাউন্ট টা কোন সফটওয়্যার দিলে চালিত হয় তাহলে সে সকল নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভেঙ্গে ঠিকই তার ভেতরে প্রবেশ করতে পারছে। সে চাইলে যে কারো একাউন্ট এমন কি যে কোন ওয়েব সাইটের কর্তৃত্ব নিয়ে নিতে পারছে । এছাড়াও সফটওয়্যার চালিতো যে কোন যন্ত্রের নিয়ন্ত্রণ নিতে পারছে খুব সহজেই ।

যতই দিন যেতে লাগলো এই ব্যাপারে জ্ঞান আরও বৃদ্ধি পেতে শুরু করলো । কেবল যে সফটওয়্যার তাই নয় সে বিভিন্ন হার্ডওয়্যার সম্পর্কেও জ্ঞান অর্জন করতে থাকলো ।তবে তার এই দক্ষতা যে কখনই কোন খারাপ কাজ ব্যবহার করে নি। মাঝে মধ্য জীবনে আনন্দ উত্তেজনার জন্য এদিক ওদিক চলাচল করতো, যেকোন সাইটে ঢুকে পড়তো । মাঝে মধ্য কোন ব্যাংকের সিকিউরিটি এলার্ম সিস্টেম বন্ধ করে দিতো । ওর আসলে মজাই লাগতো এসব করতে ।

তবে একটা অন্যায় কাজ সে করতো প্রায়ই । মানুষের ইনবক্সে ঢুকে পড়তো ! কার কি গোপন কথা এটা জানতে বেশ আগ্রহ ছিল। নীতু ছোট বেলা থেকেই একটা ব্যাপার বিশ্বাস করে এসেছে যদি তার বাবা ও মায়ের পরিবারের লোকজন তার বাবা মায়ের মনের খবর জানতে পারতো, তারা কি চায় সেটা যদি সত্যিই টের পেত তাহলে ওর নিজের জীবন হয়তো এমন হত না । ওর জন্ম তখন সম্ভবত এমন কোন পরিবারে হত যেখানে ও বাবামায়ের ভালবাসা পেয়েই বড় হত। এই জন্য মানুষের সাথে পরিচিত হওয়ার আগে নীতু তাদের মনের ভাব জানার চেষ্টা করে । এই ভেতরে খবর জানতে পেরে অনেকের আসল চেহারাটা সে পরিস্কার বুঝতে পারে !

এই যেমন ওর সিইসি ডিপার্টমেন্টের ডিন শরীফ স্যার । বাইরে থেকে দেখলে মনে হবে তার মত মাটির মানুষ আর একজনও নেই কিন্তু তার ফেসবুক ইনবক্স দেখলে বমি চলে আসে । ডিপার্টমেন্টের নাজনীন ম্যামের পেছনে অনেক দিন যাবৎ লেগে আছে । নানান ভাবে তাকে প্রোয়চিত করার চেষ্টা করে যাচ্ছে । নাজনীন ম্যামের স্বামী মারা গেছে চার বছর আগে । তখন থেকেই সে একাই আছে । নতুন করে তার কোন কিছু করার ইচ্ছে নেই । অন্তত বিবাহিত মানুষের সাথে তো নয়ই । কিন্তু ডিন শরীফ সেটা বুঝতে চাইছে না । নীতু অনেক বার ভেবেছে এসব সে ফ্লাশ করে দিবে কিন্তু ভয়ে করতে পারে নি । হয়তো সেটা করলে অনেকের সমস্যা হবে । সব থেকে বেশি সমস্যায় পড়বে নাজনীন ম্যাম । এই সমাজে একা একটা মেয়ের টিকে থাকা কতখানি কঠিন সেটা নীতু সব থেকে ভাল করে জানে । তাই সে কেবল দেখেই গেছে । আর কিছু করে নি ।

বলতে গেলে তার পরিচিত সবার ভেতরটাই এমন । বাইরে এক রূপ আর ভেতরে অন্য রূপ । কিন্তু রাফি এমন ছিল না । ওদের ইউনিভার্সিটিতেই পড়ে রাফি । নীতুর প্রতি সেই আগে আগ্রহ দেখিয়েছিলো । প্রথম কিছুদিন নীতু এড়িয়ে গেলেও পরে মনে হল ছেলেটা বেশ চেষ্টা করছে ওর সাথে কথা বলার জন্য । সো একটা সুযোগ দেওয়াই যায় । সেদিনই রাফির ইনবক্স আর মোবাইলের উপর হানা দিল সে । এবং আবিস্কার করলো ছেলেটা একেবারে পরিস্কার ।

তারপরই রাফির প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠে ও । রাফি পরিপূর্ন ভাবেই বিশ্বাস করতো সে । তাই কোন দিন আর তার ইনবক্সে হানা দেয় নি সে । কিন্তু কদিন আগে অন্য একজনের ইনবক্সে হানা দিতে গিয়ে রাফির আসল পরিচয়টা পেয়ে গেল নীতু । নীতু দেখলো ওর সাথে প্রেম থাকা অবস্থাতেই ওর এক বান্ধবীর সাথে মেলামেশা করছে সে । এবং সেটা কেবল প্রেম নয়, তাদের সম্পর্ক শারীরিক দিকেও এগিয়ে গেছে । ইনবক্সে তারা এই ছবিও আদান প্রদান করছে । রাফি তার ইনবক্স পরিস্কার রাখলেও তার বান্ধবীটি সেই কাজ করে নি । প্রতারিত হয়ে নীতুর রাগ হওয়ার থেকে কষ্টই বেশি হয়েছিলো । মনে হয়েছিলো হয়তো ওর ভেতরেই কোন না কোন সমস্যা আছে । নয়তো সবাই কেন ওকে ছেড়েই চলে যাবে ! তাই ঠিক করেছিল আর তার এই জীবন রাখবে না । কিভাবে মরতে সেটা ভাবতে ভাবতেই এই ট্যুর গ্রপের এডটা দেখতে পায় । তখনই মাথায় চলে আসে এই ঝাপ দেওয়ার বুদ্ধিটা !

আসিফ ওর কথা গুলো চুপ করে শুনে যাচ্ছিলো । কিছু সময় নীতুর দিকে তাকিয়ে রইলো অবাক হয়ে । এই পিচকি মেয়েটা নিজেকে একজন দক্ষ হ্যাকার বলে পরিচয় দিচ্ছে ।

এটা কি সম্ভব ? আসলেই কি সম্ভব?

আসিফ বলল, তো তুমি এখানে মরতেই এসেছিলে ?

নীতু মাথা ঝাকালো ।

-তা সিদ্ধান্ত বদলালে কেন ?

-উহু বদলাই নি । কেবল একটু ডিলে করেছি ।

এই লাইনটা বলে নীতু কিছু সময় চুপ করে রইলো । কি যেন ভাবলো কিছু সময় । তারপর বলল, আসলে আমি কোন দিন এতো সৌন্দর্য্যের মুখোমুখি হই নি । পাহাড়ের উপর থেকে যখন নিচে তাকালাম মনে হল আরও কটাদিন বেঁচে থাকি ।

-ভাল সিদ্ধান্ত । কিন্তু এখন তো সেই আবার একই কারতে চলেছো ? যে কোন সময় আমরা উপরে চলে যেতে পারি ! তুমি ওদের সাথে চলে গেলেই পারতে না ? এমন বোকামীটা কেন করলে ?

নীতু চট করেই জবাব দিতে পারলো না । তারপর বলল, আমি জানি না । তবে ....

-তবে ?

-তবে তুমি আমাকে ছেড়ে যাও নি । আমার পুরো জীবনে সবাই কেবল আমাকে ছেড়েই চলে গেছে । কেউ কোন দিন আমার জন্য অপেক্ষা করে নি । তুমি করেছো । সবাই যখন চলে যাচ্ছিলো তোমাকে একা রেখে আমার কেন জানি মনে হল আমি তোমাকে রেখে একা যেতে পরবো না । যা হয় হবে, মরতেই তো এসেছিলাম এখানে, তোমার সাথেই না হয় মরি !

দুজন দুজনের দিকে কিছু সময় তাকিয়ে রইলো এক ভাবে । তারপর আসিফ চোখ সরিয়ে নিল । অন্য দিকে তাকিয়ে বলল, আমাদের এখন কাজ করা উচিৎ । আমার সিগনালের জন্য ওরা অপেক্ষা করছে । তুমি বলছিলে আমাকে সাহায্য করবে ! কিভাবে করবে শুনি !

-আমি জানি না । তুমি বল কি করতে হবে ! তোমার প্লান কি ?

আসিফ নিজের ব্যাগ প্যাক থেকে একটা ব্ল প্রিন্ট বের করলো । তারপর বলল, এই যে দেখছো এটা হচ্ছে আমাদের বেজ ক্যাম্প । এখানেই ওরা আছে । পাহাড়ের মাটি কেটে নিচে দুইটা রুম আছে । সেখানেই সম্ভবত ওদের রাখা হয়েছে । উপরে আরও তিনটা রুম আছে । আমার প্রধান কাজ হচ্ছে যেকোন ভাবেই ওদের কাছ থেকে রিমোর্ট টা দখলে নেওয়া । যাতে করে তাদেরকে বাঁচানো যায় । আমি কোন মতে সেটা দখলে নিতে পারলেই আমি সিগনাল দিয়ে দিবো । তারপর বাকি কাজটা সহজে হয়ে যাবে আশা করি ।

আসিফ আরও বলল, আমাদের প্রধান কাজ হবে এই ক্যাম্পে ঢোকা । কিন্তু সেটাই হচ্ছে সব চেয়ে বড় ঝামেলা । এইক্যাম্পের তিন দিকেই পাহাড়া থাকবে । যে কোন এক দিক দিয়ে আমাদের প্রবেশ করতে হবে । সুযোগের অপেক্ষাতে থাকতে হবে ।

নীতু বলল, কেন পাহাড়ের দিক দিয়ে প্রবেশ করলে কি সমস্যা ?

আসিফ বলল, এদিক দিয়ে ঢুকতে গেলেই ওরা টের পেয়ে যাবে । এখানে সেন্সর লাগানো আছে ! এলার্ম বেজে উঠবে ।

নিতু কি যেন ভাবলো । তারপর বলল, তোমার কাছে কি সিগন্যাল জ্যামার আছে ?

-কেন ?

-আরে বাবা আসে কি না বল ?

-হ্যা আছে । রেডিও সিগন্যাল জ্যাম করতে আমি সাথে নিয়ে এসেছি ।

-ওটা দাও জলদি ।

আসিফ সিগন্যাল জ্যামারটা বের করে হাতে দিল । নীতু নিজের ব্যাগ থেকে নিজের ল্যাপটপ আর কিছু জিনিস পত্র বের করলো । তারপর সেটা জ্যামারটা খুলে ফেলল স্ক্রু দিয়ে । আসিফ কেবল অবাক তাকিয়ে দেখলো মেয়েটা কি যেন করছে । একটা ছোট ডিভাইস সেট করে দিলো জ্যামারটা ভেতরে । তারপর আবারও স্ক্রি দিয়ে আটকে দিল । এরপর নিজের ল্যাপটপ চালু করলো । কিছু সময় সেখানে তার আঙ্গুল গুলো যেন ঝড়ের বেগে চলতে লাগলো ।

একটা সময় নীতু বলল, ডান !

-ডান মানে কি ডান ?

-তোমার ঝামেলা শেষ করে দিলাম । এখন সেন্সরে আর ধরা পড়বে না । আমাদের কেবল সেই সেই সেন্সর গুলোর কাছে যাওয়া যাবে গালবে । ওটা সেই গিগনাল পাঠাবে সেটা আমি আটকে দিবো । আর আমাকে যদি তুমি ঐ বোম গুলোর কাছে নিয়ে যেতে পারো তাহলে আশা করি আমি সেগুলো বিস্ফোরন থেকে রক্ষা করতে পারবো !

আসিফ তখন খানিকটা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে । বিশ্বাস করছে না ওর কথা ।

নীতু বলল, তোমার তো জানার কথা যে রিমোর্ট কিভাবে কাজ করে । ইনফার্ড কিংবা রেডিও ফ্রিকোয়েন্সীতে । এখানে ইনফার্ড রিমোর্ট ওরা ব্যবহার করবে না । রেডিও ফ্রিকোয়েন্সী ব্যবহার করবে । রিমোর্টে যখন চাপ দেওয়া হয় তখন কি হয় ? একটা নির্দিষ্ট কমান্ড প্রথমে বাইনারী কোডে কোনভার্ট হয় । তারপর সেটা রেডিও ফ্রিকোয়েন্সিতে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে । রিসিভার খোজে । বোম গুলোতে সেই রিসিভার আছে । বোমের রিসিভার সেই সিগনাল গ্রহন করে । তারপর সেটা বাইনারিতে কনভার্ট করে কাজ শুরু করে । আমি এই রিসিভার যন্ত্রের মাথার উপর ওয়াল তৈরি করতে পারবো ?

নীতু তখনও তাকিয়ে দেখে আসিফ ওর কথায় যেন বিশ্বাস করছে না । নীতু খানিকটা বিরক্ত হয়ে বলল, আরে বাবা বুঝলে না ? ধর তুমি একটা নির্দিষ্ট দিকে টর্চের আলো ফেললে । সেটা সরাসরি গিয়ে সেখানে লাগলো । এখন আমি যদি সেই জিনিসটা উপর একটা ছাতা ধরি তাহলে আলোটা কি সেই জিনিসটার উপর পড়বে ? পড়বে না । এখানেও তাই । আমি বোমের রিসিভারের উপর একটা ছাতা তৈরি করে দিবো । সুতরাং রিমোর্ট টিপ দিলেও কাজ হবে না । বুঝেছো ?

আসিফ এবার মুখ খুলল । তুমি কি বলতে চাইছো আমি বুঝেছি । কিন্তু বিশ্বাস হচ্ছে না যে তুমি আসলেই এটা পারবে কিনা ! আমাদের দেশে এমন দক্ষ হ্যাকার নেই আমি যতদুর জানি । এমন কি আমাদের নিজেদের হাতেও নেই । আর তুমি বলছো মাত্র এই একটা সিগনাল জ্যামার দিয়ে তুমি এতো সব কিছু করে ফেলবে ?

নীতু এবার হাসলো । তারপর বলল, ইউ হ্যাভ নো আইডিয়া !

-সত্যিই !

নীতু বুঝতে পারছে যে কেবল ওর মুখের কথা আসিফ ঠিক বিশ্বাস করছে না । নীতু নিজের ল্যাপটের দিকে আবার মনযোগ দিল । কিছু সময় কি যেন করলো । তখনই আসিফের মোবাইলটা বেজে উঠলো । মোবাইলটা পকেট থেকে বের করতেই অবাক হয়ে গেল । ওর মোবাইল একের পর এক এপস চালু হচ্ছে আবার বন্ধ হচ্ছে । আবার চালু হচ্ছে । হঠাৎ মেজেস অপশন চালু হয়ে গেল । সেখানে অটোমেটিক একটা লাইন লেখা উঠতে লাগলো ।

"কি এবার বিশ্বাস হল তো"

আসিফ এবার সত্যিই অবাক হয়ে গেল । তারপর তাকালো নীতুর দিকে । এই মেয়েটা মাত্র এক মিনিটের ভেতরে ওর ফোন হ্যাক করে ফেলেছে ! মনে হল এই মেয়ে সত্যিই অসাধারন । এই মেয়ে পারবে । একটু আগেও মনে হচ্ছিলো যে মেয়েটাকে থাকতে দিয়ে ও ভুল করেছে কিন্তু এখন মনে হচ্ছে এর থেকে সঠিক সিদ্ধান্ত ও জীবনে আর নেয়ই নি । তারপর বলল, গেট রেডি !

নীতু হাসলো । মানুষকে অবাক করে দিতে ওর খারাপ লাগে না ।



পর্ব চার

আসিফের পেছন পেছন চুপচাপ হামাগুড়ি দিয়ে নিচে নেমে যাচ্ছে নীতু । আসিফ ওকে বলেছে যথা সম্ভব আওয়াজ না করে এগিয়ে যেতে । টিভি সিনেমাতে পাহাড়কে যতটা নির্জন মনে হয়, বাস্তবে এতোটা নির্জন মনে হচ্ছে না । চারিদিক থেকে তীব্র পোকার ডাক শোনা যাচ্ছে । কটেজের ভেতরে যখন ছিল তখনও আওয়াজ গুলো শোনা যাচ্ছিলো কিন্তু এখন বাইরে এসে মনে হচ্ছে যেন কোন প্রাকৃতিক কনসার্টের ভেতরে চলে এসেছে । এই ডাকাডাকির যেন কোন শেষ নেই ।

নীতুর মনের ভেতরে একটা ভয় কাজ করছে । এই ভাবে যে এসবের ভেতরে চলে আসবে কোন দিন ভাবতেও পারে নি। একবার মনে হল হয়তো ওদের টিমের সাথে নিচে চলে গেলেই পারতো । কিন্তু তারপরই মনে হল যদি চলে যেত তাহলে বাকি জীবনে সে শান্তিতে থাকতে পারতো?

মনে হয় না । এখন যা করতে যাচ্ছে সেটাই তার জন্য সব থেকে উপযোগী কাজ । যদি এখন সে মারাও যায় তবুও ।

আসিফ ওকে দাড়াতে নির্দেশ করলো । তারপর ফিসফিস করে বলল, এখানেই কোথাও সেন্সর গুলো সেট করেছিলাম আমরা । ওরা কি সেগুলো বদলে ফেলেছে কি না বুঝতেছি না !

নীতু কোন কথা না বলে নিজের ল্যাপটপ টা চালু করলো । ওর ল্যাপটপের দুই দিকে দুইটা ইউএসবি পোর্টে দুইটা এন্টেনা টাইপের ডিভাইস সেট করা । এই ডিভাইস গুলোও ওকে ওর আওয়ায় ভেতরে যেকোন ইলেকট্রনিক ডিভাইস কে হ্যাক করতে সাহায্য করে । একটু আগে ঠিক যেভাবে সে আসিফের ফোন হ্যাক করেছিলো ।

নীতু ল্যাপটপে একটা প্রোগ্রাম চালু করলো । তারপর কিছু সময় অপেক্ষা করেই পেয়ে গেল যা খুজছিলো । আসিফ বলল, এই দেখো আমাদের থেকে দুই মিটার দুরে প্রথম সেন্সর টা রয়েছে ।

আসিফ তাকিয়ে দেখলো স্ক্রিনে সত্যিই কিছু একটা পয়েন্ট নির্দেশ করছে । ওর ল্যাপটপের স্ক্রিনটা অনেকটা রাডারের মত কাজ করছে । নির্দেশ করছে কোথায় কোথায় আছে সেন্সের !

আসিফ বলল, এগুলো ডিজেবল করা যাবে?

-কেন যাবে না ?

নীতু আর কোন কথা না বলে কাজ শুরু করে দিল । আফিস চারিদিক দেখতে শুরু করলো । আর কিছু দুর গেলেই ওদের বেজ ক্যাম্পটা দেখা যাবে । এই দিকে আশা করা যাচ্ছে কোন পাহারা থাকবে না । ওর লক্ষ্য থাকবে কেবল ভেতরে ঢুকে পরা । নীতুর উপর সে অনেকটা নির্ভর করতে বাধ্য হচ্ছে । নীতু না থাকলে প্লান ছিল অন্য রকম । যদিও সেটা খুব বেশি যুতসই ছিল না । তবে সেটা ছাড়া ওদের হাতে আর কোন উপায়ও ছিল না । ওর উপর নির্দেশ এসেছে যে আজকের ভেতরেই কিছু একটা করতে হবে । কালকেই সন্ত্রাসীদের বেঁধে দেওয়া সময় সীমা শেষ হচ্ছে । তারা কিছু একটা ডিমান্ড করেছে । কিন্তু কি ডিমান্ড করেছে সেটা আসিফ জানে না । তাকে জানানো হয় নি । এমন অনেক হাই ক্লাস ক্লাসিফাইড ব্যাপার আছে যেগুলো জানার ক্লিয়ারেন্স আসিফের নেই । তবে এই টুকু জানে যে তারা যা চেয়েছে সেটা কোন ভাবেই পূরণ করা সম্ভব না । সেই হিসাবে আজকের পরে বন্দীদের এমনিতেও মেরে ফেলবে ওরা । ওদের বাঁচানোর একটা শেষ সুযোগ আসিফ নিজ থেকে কাজে লাগাতে চায় ।

এর পেছনে অবশ্য কারনও আছে । ডেপুটি চিফের সাথে তার মেয়েকেও আটকে রেখেছে ওরা । ক্যাপ্টেন মৌমি আহমেদ । আর এর সাথেই আসিফের বিয়ে ঠিক হয়ে আছে । এঙ্গেইজমেন্ট হয়ে আছে । খুব জলদিই আসিফের আরেকটা র‌্যাঙ্ক বাড়ার গুজব শোনা যাচ্ছে । আসিফের বিশ্বাস যে সেটা গুজব না, সত্যি । তারপরই ওদের বিয়ে হওয়ার কথা ।

-ডান !

আসিফ বাস্তবে ফিরে এল । তারপর বলল, কি বললে ?

নীতু বলল, সেন্সর এখন আমার কথা মত চলবে । চল আমরা এগিয়ে যাই ।

-তুমি নিশ্চিত ?

নীতু কোন কথা বলল । তারপর হাটা দিল । আসিফের একটু দ্বিধা হচ্ছিলো । মনে হচ্ছিলো যেন এখনই বুঝি এলার্ম বেজে উঠলো । কিন্তু উঠলো না । ওরা আরো একটু নামতে থাকলো । কিন্তু যা আশা করেছিলো সেটা হল না । ভেবেছিলো যে এই দিকে কোন পাহাড়া থাকবে না । ওদের সেই ধারনা ভুল প্রমানিত হয়েছে । এখানে একটা নতুন চেকপোস্ট দেখা যাচ্ছে । সেখানে একজন সিপাহী পাহাড়া দিচ্ছে ।

এখন ?

আসিফ চিন্তিত মুখে তাকালো সামনের দিকে । আরেকটু কাছে গিয়ে হয়তো একে গুলি করে নামিয়ে দেওয়া যায় কিন্তু কোন নিশ্চয়তা নেই যে সেটা একেবারে নিশ্চুপে হবে । যদি লোকটার হাতে থাকা বন্দুক দিয়ে একটা গুলি হয়ে যায় তখন সব কিছু মাঠে মারা যাবে । আর এমনও অবস্থা নেই যে লুকিয়ে চেকপোস্টার কাছে গিয়ে হামলা করবে । বেশ কিছু স্থান পরিস্কার করা । আর লোকটা ওদের দিকেই তাকিয়ে আছে । বের হতে গেলেই দেখে ফেলবে !

একটা উপায় আছে কেবল ! লোকটা কখন ঘুমিয়ে পড়ে সেটার জন্য অপেক্ষা করা । কিংবা যদি লোকটা টয়লেটে যায় তবে । কিন্তু সেটা কি হবে ? সেটার জন্য কত সময় অপেক্ষা করতে হবে ?

আসিফ হঠাৎ দেখলো নীতু ওর ল্যাপটপের ব্যাগটা নামিয়ে রাখলো মাটিতে । তারপর ওড়নাটাও এক পাশে সরিয়ে রাখলো । তারপর ওর দিকে তাকিয়ে বলল, তুমি রেডি থাকো ।

-মানে ?

-মানে কিছু না । আমি লোকটাকে এদিকে আনার চেষ্টা করছি ।

আসিফ তীব্র বিস্ময় নিয়ে বলল, কিভাবে !

-মুভিতে দেখো নি !

-এটা মুভি ন......

কিন্তু ততক্ষনে দেরি হয়ে গেছে । নীতু বের হয়ে গেছে । চারিদিক খানিকটা অন্ধকারই বলা চলে গেল । কেবল চেকপোস্টের উপর একটা কম পাওয়ারের বাল্ব জ্বলছে । নীতু বের হওয়ার কিছু সময় পরেই ওকে লোকটা দেখতে পেল । সাথে সাথেই বন্দুক তাক করলো ওর দিকে । নীতু হাত উচু করলো । তবে হাটা থামালো না । আস্তে আস্তে এগিয়ে যেতে লাগলো । আসিফ পিস্তল বের করে রেডি হয়ে রইলো । ও আর কোন আশা দেখছে না । এইবার গুলি চালাতেই হবে । রিক্স না নেওয়া ছাড়া কোন উপায় নেই ।



নীতুর বুকের ভেতরটা কেমন যেন করছে । এতো সাহস ও কোথা থেকে পেল ও নিজেই বলতে পারে না । মুভিতে সব সময় দেখেছে এই বুদ্ধিতে কাজ হয় । কিন্তু এটা তো আর মুভি না । কাজ যে হবে সেটা সে জানে না ।

লোকটার চোখের দিকে তাকিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে ধীরে । নীতু জানে পুরুষ মানুস দুনিয়ার সব কিছু উপেক্ষা করতে পারলেও নারী দেহ উপেক্ষা করা তার পক্ষে প্রায় অসম্ভব । আর এই লোক গুলো দিনের পর দিন নারীদেহ থেকে দুরে থাকে । বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বউ কিংবা প্রেমিকা থাকে না এদের । থাকলেও তাদের কাছে থাকার সময় পায় না । সুযোগ পেলে যে এরা ঝাপিয়ে পড়বে সেটা স্বাভাবিক। একটু আগে চুড়ায় তারই প্রমান পেয়েছে ও ।

নীতুর নিজের দিকে একবার তাকালো । খুব সুন্দরী না হলেও ও যে একজন আকর্ষনী মেয়ে সেটা সে জানে । চেহারা আর দেহের গড়ন একেবারে ফেলে দেওয়ার মত না তার । আর এই পাহাড়েই সেটার আকর্ষন ফেলে দেওয়া অনেক কঠিন । তার উপর নীতুর পোশাক । একটু আগে যখন বের হচ্ছিলো আসিফ ওকে বলেছিলো কম আর টাইপ কাপড় পড়তে । নড়াচড়া সহজ হবে । বেশি ঢিল পোশাক পরলে যে কোন কিছুতে আটকে যেতে পারে । ব্ল্যাক লেগিংসের সাথে একটা ব্ল্যাক টিশর্ট পরেছিলো কেবল । এই পোশাকে ওকে সত্যিই বেশ আকর্ষনীয় মনে হচ্ছে ।

নীতু একেবারে এগিয়ে গেল লোকটার কাছে । তারপর ভীত কন্ঠে বলল, ভুল করে চলে এসেছি ভাইয়া ! আসলে আমি রাতে হাটতে বের হয়েছিলাম । কোন দিকে যাবে বুঝতে পারি নি । আমি এখনই চলে যাচ্ছি !

লোকটা হুংকার দিয়ে বলল, এই দাড়াও । তুমি জানো এটা রেস্টিক্টেড এরিয়া ! এখানে আসা নিষেধ । অপরাধ !

নীতু আরও ভীত কন্ঠে বলল, জানি না ভাইয়া । আর করবো ন । প্লিজ মাফ করে দিন । আপনি যা বলবেন করবো যা বলবেন তাই করবো !

লোকটার চোখ এবার একটু জ্বলে উঠলো । তারপর বলল, যা বলবো করবে ?

-হ্যা ভাইয়া যা বলবেন । প্লিজ আমাকে জেলে ভরবেন না !

লোকটা পেছন দিকে তাকালো । তারপর প্রথম ভুলটা করলো । নিজের হাতের অস্ত্রটা চেকপোস্টের মধ্যে রেখে বেরিয়ে এল । তারপর নীতুর হাত ধরলো । এসো তোমাকে রাস্তা দেখিয়ে দেই । তবে এই বদলে ....।

লোকটা একটা কুৎসিত হাসি দিল । নীতু এবার মনে মনে হাসলো । কাজ হবে না মানে কি ! মুভি কিংবা বাস্তবে সব স্থানেই এটাতে কাজ হবে ।

গাছ পালার ভেতরে ঢুকেই লোকটা নীতুতে পেছন থেকে চেপে ধরলো । তারপর মাটিতে ফেলে দিলো । তবে নীতু কোন আওয়াজ করলো না । কেবল অপেক্ষা করতে লাগলো । খুব বেশি সময় লাগলোওনা । একটু চাপা আওয়াজ শুনতে পেল কেবল । তার পরপরই কিছু একটা মাটিতে পরার আওয়াজ কানে এল ।

নীতু এবার ঘুরে উঠে দাড়ালো । মাটিতে পরে থাকা সিপাহীটির দিকে ফিরেও তাকালো না । আসিফের দিকে তাকিয়ে দেখে আসিফ ওর দিকে তাকিয়ে আছে । আবছায়া আলোতেই সেই চোখে একটা সমীহের দৃষ্টি !

পরে থাকা লোকটার কাছ থেকে একটা পিস্তল পাওয়া গেল । সেটা নিয়ে ও নীতুর হাতে দিল । ওকে শিখিয়ে দিল কিভাবে সেফটি লক খুলে ট্রিগার চাপতে হয় । এরপর ওকে নিয়ে আস্তে আস্তে এগিয়ে গেল ক্যাম্পের দিকে । ক্যাম্পটা নিশ্চুপ হয়ে আছে ।

কোন আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে না কারো !

সবাই গেল কোন দিকে ?

অবশ্য বাইরে খুব বেশি মানুষ থাকার কথা না । আসিফ নিজের কমিউনিকেশন মডিউল বের করে একটা সংকেত পাঠালো । ওর হাতে এখন আর মাত্র ১০ মিনিট সময় আছে । চুড়ায় এখনই আর্মি পৌছে যাবে । তারপর এখানে আসবে ।

দরজা দিয়ে ঢোকার আগে নীতুর দিকে তাকিয়ে বলল, তুমি এখানেই কাজ শুরু করে দাও ।

নীতু দেখলো ক্যাম্প হাউকের ঠিক পাশেই একটা পানির ড্রাম রয়েছে । ওটার আড়াল নেওয়া যাবে খুব স্বাভাবিক ভাবেই। আসিফের হাতে সিগনাল জ্যামারটা দিলো । তারপর বলল, এটা তোমাকে রাখতে হবে ঐ বোমগুলো খুব কাছে । মানে, যত কাছে কাছে পারা যায় ! আমি সিগনাল পাওয়া মাত্রই কাজ শুরু করবো ।

আসিফ যেতে ক্যাম্পের ভেতরে ঢুকতে গিয়েও ঢুকলো না । নীতুর দিকে তাকিয়ে রইলো কেবল কিছু সময় । তখনই নীতু আবারও আরেকটা বোকার মত কাজ করলো । আসিফের খুব কাছে এসে ওর ঠোঁটে চুমু খেল । ছেড়ে দিলো সাথে সাথেই । চোখ নামিয়ে নিয়ে বলল, বি সেইফ !

আসিফ বলল, তুমিও ....

আর কোন কথা না বলে ও ধীর পায়ে ক্যাম্পের দরজা দিয়ে আস্তে করে প্রবেশ করলো । নীতু নিজের ল্যাপটপ নিয়ে বসলো পানির ড্রামটার আড়ালে ! অপেক্ষা করতে লাগলো সিগনালের !



পর্ব পাঁচ

আসিফ খুব সাবধানে দরজা দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলো । লম্বা একটা করিডোর । সেখানে অল্প পাওয়ারের আলো জ্বলছে । আসিফ খুব সাবধানে সামনের ঘরের দরজা দিয়ে ভেতরে তাকালো । এই ঘরে কেউ নেই । আসিফ আবারও হিসাব করলো । কিছুটা সময় এখানে অপেক্ষা ভাবতে লাগলো । হিসাব মত এখনও সব কিছু ঠিকই আছে । এখানে কেউ থাকবে সেটা ও আশা করে নি । পাহাড়ের দিককার পাহাড়ার মানুষটাকে সে এখানে আশা করেছিলো । সে যেহেতু চেকপোস্টে ছিল সেই হিসাবে এখানে কারোও থাকার কথাও নয় ।

ওদের হিসাব মত গ্রুপে দশ থেকে বারো জন হবে । এর বেশি মানুষ থাকার কথা না । চুড়ায় পাহাড়া রয়েছে চারজন । আর এখানে থাকার কথা বাকি আট জন । তার ভেতরে চারজন রয়েছে বাইরে । তাদের একজন আবার মৃত । ঘরের ভেতরে খুব বেশি হলে থাকার কথা চার জনের ।

আসিফের হিসাব যদি ভুল না হয় তাহলে উপরের ঘরে দুইজন থাকবে । আর দুইজন নিচের ঘরে থাকবে । এমনটাই হওয়া যুক্তসংগত ! আসিফ আরও সাবধানে এগিয়ে যেতে লাগলো । করিডোর দিয়ে ধীর পায়ে এগিয়ে যেতে লাগলো সে । হাতে একটা উদ্ধত পিস্তল রয়েছে । সাইলেন্সসার লাগানো রয়েছে তাতে । গুলির আওয়াজ খুব জোরে হবে না । তবে ঘরের ভেতরে থাকলে সেটা শুনতে পাবেই । তাই ওকে চেষ্টা করতে হবে যেন শেষ পর্যন্ত যাতে পিস্তলের ব্যবহারটা না করতে হয় । হাতের সাথে আটকানো জাপানিজ চাকুর দিকে তাকালো সে । এটা দিয়ে কাজ চালাতে হবে ।

দ্বিতীয় ঘরে ঢুকতেই সাবধান হতে হল । দরজার কাছেই খাটে একজন শুয়ে আছে । তার থেকে কয়েক ফুট দুরে জানালার কাছে একজন চেয়ারে বসে আছে । তবে আশার কথা হচ্ছে দুজনেরই চোখ বন্ধ । একজন নাক ডাকছে মৃদু স্বরে । আসিফ জোরে করে দম নিল । একই সাথে দুজনকে কাবু করা মুশকিল । একজনকে কাবু করতে গেলে অন্য জন জেগে উঠবে । তখন একই সাথে দুজনের সাথে পেরে ওঠে মুশকিল । তখন শব্দ করতেই হবে । আর শব্দ করলেই বলতে গেলে সব শেষ হয়ে যাবে । আসিফ চুপ করে ভাবলে লাগলো এরপর কি করবে সে কিন্তু তখনই উপর থেকে একটা গুলির আওয়াজ ভেসে আসলো ।

আসিফের চিন্তা ক্ষনিকের জন্য সামনের দুই মানুষের জন্য ছুটে গেল । উপর থেকে গুলির আওয়াজ ভেসে এসে !

নীতু !



আসিফ ভেতরে গেছে কয়েক এক মিনিটও হয় নি । নীতু ড্রামটার পাশে চুপ করে বসে পড়লো । ল্যাপটপটা এখনই খুলল না। এখনই খুলে কোন লাভ নেই। ওর ভেতরে যেতে আরও কয়েক মিনিট লাগবে । কি মনে হল আসিফের দেওয়া পিস্তলটা হাতে নিল । খানিকট সময় নেড়ে চেড়ে দেখলো । সত্যিকারের একটা পিস্তল রয়েছে ওর হাতে । বিশ্বাস করতে পারছে না । আসিফ ওকে পিস্তলের সেফটি লক খুলতে শিখিয়েছিল । সেটাই খুলল । তারপর কি মনে হল সেটা রেখে দিল ল্যাপটপের উপর । তার উপর ব্যাগটা রাখলো ল্যাপটপের উপর !

তারপর চুপ করে ভাবতে লাগলো ওর সাথে কি হচ্ছে ! কালকেও কি ভেবেছিলো নিজেকে ও এমন একটা পরিস্থিতিতে নিয়ে এসে ফেলবে । অবশ্য যা হচ্ছে যদি ঘটনা অন্য দিকে যায়ও তবুও তার মনে কোন দুঃখ নেই ।

একটু আগে ও আসিফকে চুমু খেয়েছে ।

কেন খেল কে জানে ?

ও বলতে পারবে না । রাফিকে ও কোন দিন চুমু খেতে দেয় নি । রাফি অনেক অনুনয় বিনয় করতো। কেবল কি চুমু? রাফির চাহিদা ছিল আরও বেশি । তবে নীতু ওকে কেবল হাত ধরতে দিবো । এর বেশি কিছু নয় । ওর মনে হত যে যখনই ও সব কিছু পেয়ে যাবে তখন নীতুর উপর থেকে রাফির আগ্রহ হারিয়ে যাবে । কিন্তু এখন মনে হয় ও কিছু করতে দেয় নি বলেই হয়তো রাফি ওর সাথে এই রকম আচরন করেছে ।

মাথা থেকে চিন্তাটা দুর করে দিল ! আসিফকে চুমু খাওয়ার মুহুর্তটা আরেকবার চিন্তা করলো । ঐ সময়ে ওর পুরো শরীরে একটা বিদ্যুৎ খেলে গিয়েছিলো । কি তীব্র একটা অনুভূতি ছিল সেটা !

যদি বেঁচে থাকে তাহলে আরেকবার ঠিকই আসিফ কে চুমু খাবে সে !

কিন্তু সেটার জন্য ওদের দুজনকেই বেঁচে থাকতে হবে !

ঠিক তখনই ওর মাথায় শক্ত কিছু একটা এসে ঠেকলো ।

নীতুর বুকের ভেতরটা চমকে উঠলো । চাপা কন্ঠে কেউ বলে উঠলো, একদম নড়বে না । আস্তে আস্তে করে উঠে দাড়াও !

নীতু ভয়ে একেবারে কাঠ হয়ে গেল । একটু একটু করে ঘুরে দাড়ালো । তাকিয়ে দেখলো একজন দাড়িয়ে আছে রাইফেল তাক করে ওর দিকে !

লোকটা বলল, এখানে কি ? এখানে কিভাবে এলে ?

নীতুর বুকের ধাক্কাটা তখনও কমে নি । মাথার ভেতরে চিন্তার ঝড় চলছে তখনও । কি বলবে খুজে পাচ্ছে না । তখনই দুরের চেক পোস্টের দিকে চোখ গেল । মাথায় সাথে সাথেই একটা বুদ্ধু এসে হাজির হল । নীতু খানিকটা কাঁপা কাঁকা কন্ঠে বলল, আমি বেড়াতে এসেছিলাম । রাতে হাটতে বেড়িয়ে পথ হারিয়ে এদিকে চলে এসেছিলাম । তারপর ঐ চেকপোস্টের ভাইয়াটা আমাকে এখানে নিয়ে এসেছে । বসেছে এখানে অপেক্ষা করতে !

বন্দুক হাতে লোকটা কিছু সময় সরু চোখে তাকিয়ে রইলো নীতুর দিকে । ওর কথা ঠিক বিশ্বাস করছে না আবার অবিশ্বাসও করতে পারছে না । বিশেষ করে নীতুর চেহারায় একটা নিঃপাপ ভাব আছে । নীতু যে মিথ্যা বলছে সেটা বিশ্বাস করবে না কেউ ।

লোকটা বলল, সে কোথায় ?

-ভেতরে গেছে !

আরেকবার চেক পোস্টের দিকে তাকালো । এভাবে চেক পোস্ট ফাঁকা রেখে ভেতরে যাওয়াটা লোকটার মোটেই পছন্দ হল না । তবে নীতু একটা জিনিস দেখলো লোকটা বন্দুকটা নেমে এল । এবং সেটা নিজের কাধের সাথে ঝুলিয়ে দিল । নীতুর কাছ থেকে কোন প্রকার বিপদের আশংকা করছে সে । নীতুর চেহারায় এমন কিছু লেখা ছিল যেকেউ ভাববে এই মেয়ে কারো ক্ষতি করতে পারবে না ।

নীতুর বুকের ভেতরে তখনই ধুকধুক করছে । কারন লোকটা যদি এখ ভেতরে যায় তাহলে তার ধরা পড়তে সময় লাগবে না । আর যদি আসিফ কে দেখে ফেলে তাহলে তো কথাই নেই । ও এটা কোন ভাবেই হতে দিতে পারে না ।

ওর একবার নিচের দিকে তাকালো । ল্যাপটপ টা মাটিতে রাখা আছে । তার উপর ব্যাগটা রাখা । ল্যাপটপটা খুব ভাল করে দেখা যাচ্ছে না । লোকটার চোখ ল্যাপটপের দিকে যায় নি । ব্যাগ দিয়ে ঢেকে দিতে পেরেছিলো । সব থেকে বড় সমস্যা হচ্ছে ব্যাগের নিচে পিস্তলটা রাখা আছে ।

লোকটা বলল, তোমার ব্যাগের নিচে কি ?

নীতু বলল, কিছু না ।

-কিছু না মানে ? বের কর ! আমি দেখবো । সব বের করবে ! একেবারে মাটিতে ফেলে দিবে !

-আচ্ছা

নীতু আবার মাটিতে ফিরলো । ব্যাগটার ভেতরে হাত ঢুকাতেই হাতে পিস্তলটার অস্তিত্ব অনুভব করলো । পিস্তলের সেফটি লক ও খুলে রেখেছিলো । বাগ্যিস খুলে রেখেছিলো । জোরে করে একটা দম নিল । হাত দিয়ে পিস্তলটা চেপে ধরলো । তারপর চট করে ঘুরে দাড়ালো লোকটার দিকে । লোকটার মনযোগ সম্ভবত কয়েক মুহুর্তের জন্য সরে গিয়েছিলো । নীতুর কেবল এই কয়েক মুহুর্ত সময়টাই বাঁচিয়ে দিল । আর তাছাড়া লোকটা তার বন্দুক কাধে ঝুলিয়ে রেখেছিলো । কয়েক মুহুর্ত সময় সে সেখান থেকেও পেল । বন্দুকটা হাতে নিয়ে নীতুর দিকে তাক করার আগেই নীতু ট্রিগার চেপে দিল ।

রাতের বেলা এই আওয়াজটাই যেন বোমা ফাঁটার মত আওয়াজ হল ।

জীবনে এই প্রথমবার গুলি চালালো নীতু । ধাক্কাটা সামলাতে পারলো না ঠিক । খানিকটা ছিটকে গিয়ে পড়লো দুরে । তবে পিস্তলের গুলিটা ঠিক স্থানেই লাগলো ।

কিছু সময় পরে সে উঠে দাড়ালো । পিস্তলটা হাতে নিয়েই লোকটার কাছে এল । লোকটার গলার কাছে গুলিটা লেছে । সেখান থেকে গাঢ় রক্ত বের হয়ে আসছে । লোকটা আর উঠলো না সেখান থেকে !

নীতু উঠে দাড়ালো । আবারও পিস্তলটা হাতে নিল । আস্তে আস্তে কাণ্ণপছে ও । আসিফ বলেছিলো তিন দিকে তিনজন সিপাহী পাহাড়া থাকার কথা । যদি এই লোকটা একজন হয়, তাহলে আরও দুইজন এখনই এই দিকে চলে আসবে । তাদেরকে এতো সহজে শেষ করা যাবে না ।

গুলির আওয়াজ শুনে প্রথমে জেগে উঠলো চেয়ারে বসে থাকা লোকটা । উঠেই চোখ গেল আসিফের দিকে । খানিকটা সময় বিস্ময় বোধ করলো তবে সে প্রতিক্রিয়া দেখাতে দেরি করলো না । সরাসরি আসিফের দিকে ঝাপ দিতে গেল । তবে মাঝ পথেই তাকে আটকে যেতে হল । সাইলেন্সসার লাগানো পিস্তল থেকে গুলিটা লাগলো ঠিক লোকটা কপাল বরাবর । তবে বিছানায় শুয়ে থাকা মানুষটার দিকে পিস্তল ঘুরাতে গিয়ে একটু দেরি করে ফেলল ও। লোকটা ওর কোমর বরাবর ঝাঁপ দিয়ে ফেলেছে ততক্ষনে । ওকে নিয়ে পড়ে গেছে । হাত থেকে পিস্তলটা খসে পড়লো ।

মেঝেতে পড়তেই লোকটা ওর পেট বরাবার আলোপাতাড়ি ঘুশি মারতে শুরু করলো । দাঁতে দাঁত চেপে ব্যাথাটা সহ্য করলো কিছু সময় ! তারপর সর্ব শক্তি দিয়ে নিজের দুই হাতের কুনই মানিয়ে আনলো লোকটা মেরুদণ্ড বরাবর । কোৎ করে একটা আওয়াজ করলো লোকটা ! তবে ছাড়লো না ওকে । ওকে চেপে ধরে রাখলো । ওকে ছাড়তে চাইছে না । সাহায্যের জন্য চিৎকার করতে যাবে তার আগঐ আসিফ নিজের ডান পা উপর তুলে নিয়ে আসলো । আঘাতটা সরাসরি লোকটা মুখ লাগলো । এবার লোকটা আসিফকে ধরে রাখতে পারলো না । হাতের জোর করে এল লোকটার । এই সুযোগটাই দরকার ছিল আসিফের । হাতের কাছে গোজা চাকুটা চট করে নিয়ে দিল । তারপর লোকটার পিঠে বিধিয়ে দিলো সমূলে ।

আসিফ কিছু সময় দম নিয়েই উঠে পড়লো । মেঝেতে পড়ে থাকা পিস্তলটা তুলে নিল । লোকটার দিকে তার ফিরে তাকালো না । তাকানোর দরজার নেই ! এখন আসিফ কি করবে ?

বাইরে যাবে ?

মেয়েটার কি অবস্থা ?

নীতুর হয়তো সাহায্য দরকার অথবা নীতুর এর মধ্যেই মারা গিয়েছে ।

আসিফ জানে না । যদি মেয়েটা মারা গিয়ে থাকে তাহলে কিছু করার থাকবে না আর !

ওর ফিরে গিয়ে কোন লাভ হবে না ।

আবারও গুলির আওয়াজ হল !

আফিসের মনটা এবার কু ডেকে উঠলো !

নীতু ঠিক আছো তো ? মনে মনেই জানতে চাইলো ও ! পেছে গিয়ে আর কোন লাভ নেই । মিশন প্রায় ব্যর্থ হয়ে গেছে । আর অল্প একটু সময় হয়তো আছে । এখনও যেহেতু বোম ফাঁটার আওয়াজ হয় নি তার মানে হচ্ছে এখনও ওদের লোক গুলো বেঁচে আছে ! আর চিন্তা করলো না সে ! দ্রুত দরজা পেরিয়ে নিচের ব্যাজমেন্টে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো । নিচে আর খুব বেশি হলে দুইজন মানুষ থাকার কথা । দুজনের সাথে লড়াই করাটা খুব বেশি কষ্টের হবে না ।

করিডোরের ঢুকতেই গুলির আওয়াজ শুনতে পেল ও । একজন ওকে নিচে নামতে দিতে চাইছে না । মাথা একটু নিচের দিকে তাকাতেই আরেকবার গুলি চলে গেল ওর মুখের কাছ দিয়ে । আরেকটু হলেই হয়তো মারা মরতো ।

এখন ?

নামবে কিভাবে ?

কেবল হাতটা সিড়ির সামনে দিয়ে কয়েকটা গুলি করে বসলো সে ।

মনে মনে আরও একটা দম নিল । যা থাকে কপালে এভাবেই নামতে হবে । ওর শার্টের নিচে বুলেট প্রুফ ভেস্ট পরানো আছে । শরীরে লাগলে হয়তো কিছু হবে না কিন্তু গুলি যদি মাথায় লাগে তাহলে ওর খেলা এখানেই শেষ হয়ে যাবে । কিন্তু এতো কিছু ভেবে আর লাভ নেই ।

উপরওয়ালার নাম নিয়ে আবারও সামনের দিকে গুলি করা শুরু করলো । তারপর দ্রুত নামতে শুরু করলো । ও ভেবেছিলো হয়তো সামনে থেকে গুলো এসে লাগবে কিন্তু লাগলো না । সিড়ি দিয়ে নিচে নামতেই দেখতে পেল যে একটা লোক মেঝেতে পড়ে আছে ।

ভাগ্য আবারও ওর সহায় হয়েছে । কিন্তু বারবার কি হবে ?

প্রথম ঘরটাতে ওদের বেশ কয়েকজ সিপাহীকে দেখতে পেল । সবাই চুপ করে বসে আছে । গুলির শব্দ সবাই শুনেছে । আসিফকে ঘরে ঢুকতে দেখে সবার মুখ উজ্জল হয়ে এল । আসিফ কাছে গিয়ে বসলো ওদের । সবার হাতে শিকল দিয়ে আটকানো । সেই সাথে সবার হাতেই একটা বড় ঘড়ি টাইপের সিভাইস আটকানো আছে !

ওকে দেখেই একজন উঠে দাড়াতে গেল । কিন্তু পারলো না । আসিফ ওকে বসে থাকত ইশারা করলো কথা বলতে মানা করলো। তারপর হাতের ইশারায় জানতে চাইলো যে ঐ ঘরে কি ওদের ডেপুটি কে রাখা আছে ?

লোকটা কেবল মাথা নাড়ালো ।

ওদেরকে ইশারায় বলল যে ভয় না পেতে । সাহায্য চলে এসেছে ।

আসিফ পকেট থেকে সিগন্যাল জ্যামারটা বের করে দেওয়ার ঠিক কাছেই রাখলো । দুইটা ঘরই আশা রাখা যায় যে কাভার করবে ! যদিও এখনও সে জানে না যে নীতু ঠিক আছে কি না ! যদি সে মারা যায় তাহলে এটা রেখে কোন লাভ হবে না !



পাশের ঘরে দরজা খুলে যখন প্রবেশ করলো সব পরিবেশ একেবারে শান্ত । ঘরে আলো জ্বলছে। আসিফ জানে এই ঘরে যে লোকটা আছে জানে যে আসিফ চলে এসেছে । তার কাছে লুকোচুরির কিছু নেই । আসিফ কেবল বুঝতে পারছে না এখনও সে রিমোটের বাটন চেপে দেয় নি কেন !

আসিফ ঘরে ঢুকতেই মানুষটাকে দেখতে পেল । এই তাহলে ব্লাক লিমোর হেড । বয়স খুব বেশি মনে হল । ওর মতই হবে । এমন কি চেহারা দেখেও মনে হয় না এই মানুষটা কোন সন্ত্রাসী হতে পারে । আসিফের মনে হল ছেলেটা হয়তো কোন হলিউড মুভির নায়ক । আসিফের দিকে তাকিয়ে আছে শান্ত চোখে । চোখে মুখে কোন ভয় নেই । ওর হাতে রিমোর্ট কন্ট্রোলার টা দেখতে পেল ।

ডান পাশে ওদের ডেপুটি চিফ সাইদ আহমেদকে বসে আছে চেয়ারে । তার হাত চেয়ারের বাঁধা । মুখে টেপ মারা । তবে আশার কথা হচ্ছে ডেপুটির পায়ে কিংবা হাতে কোন ডিভাইস দেখতে পেল না যেমনটা সিপাহীদের শরীরে পরানো ছিল । ডেপুটি ওকে কিছু যেন বলার চেষ্টা করলো । চোখ দিয়ে বারবার কিছু বলতে চাইলো কিন্তু বলতে পারলো না । আসিফ কিছু তাকিয়ে রইলো ।

উনি কি ইশারা করছে ?

মৌমিকে বাঁচাতে বলছে ?

ঠিক তার পাশের চেয়ারে মৌমিকে দেখা যাচ্ছে । মৌমির হাত দুটো পেছন দিক দিয়ে রয়েছে । ওর হাত দুটো পেছন দিক দিয়ে বাঁধা রয়েছে । ওর মুখের একটা টেপ দিয়ে আটকানো রয়েছে । তবে আশার কথা হচ্ছে মৌমির শরীরেও কোন ডিভাইস নেই ।

মৌমির চোখের দিকে তাকিয়ে মনে হল মেয়েটা একদম ভয় পায় নি । অবশ্য ভয় পাওয়ার কথাও না । আর্মির ট্রেনিং নেওয়া মেয়েটা । সব পরিস্থিতিতে নিজেকে মানিয়ে নিতে শিখেছে । ওর হাত দুটো খোলা থাকলে সামবে বসা মানুষটার সাথে পেরে ওঠা সহজ হত । আসিফের সাথে মানুষটার যত খানি দূরত্ব ততখানি দুরত্ব পার করার আগেই সে রিমোর্ট চেপে দিবে । তাহলে সব শেষ হয়ে যাবে !

মানুষটা আসিফের দিকে তাকিয়ে বলল, অফিসার আমি এখনও কেন রিমোর্টে চাপ দেই নি কেন জানো ?

একটু থামলো । আসিফের চোখের দিকে তাকিয়ে আছে সরাসরি । আসিফের মনভাব বোঝার চেষ্টা করছে । তারপর আবার বলল, কারন আমি তোমার সামনে কাজটা করতে চাই । তোমাকে অনুভব করাতে চাই যে প্রিয় মানুষের আর্তনাথ কতটা ভয়ংকর মনে হয় !

আসিফ বলল, পাগলামো করবে না । তোমরা ধরা পরে গেছ । আর্মি ঘিরে রেখেছে পুরো ক্যাম্পটাকে । কোন ভাবেই বের হতে পারবে না এখান থেকে ।

সে হাসলো । তারপর বলল, তোমার কি মনে হয় আমি জানি না আর্মি ঘিরে রেখেছে ? আমি ঠিকই পার পেয়ে যাবো ।

তারপর চেয়ারে বসা দুজনকে দেখিয়ে বলল, এই দুইজন যত সময় আমার হাতে আছে তত সময় তোমরা আমাকে কিছু করবে না আমি জানি । তবে ঐ সিপাহীদের আর বাঁচিয়ে রাখার দরকার নেই । কি বল !

এই বলে লোকটা হাতের রিমোর্ট টা সামনে বাড়িয়ে ধরে চাপ দিল ।

আসিফ একটা চিৎকার দিল ।

কয়েক মুহুর্ত কেটে গেল । চারিদিক যেন থেমে গেছে একেবারে । আসিফ যেন পুরো সময় টুকু একেবারে উপলব্ধি করতে পারছে ।

কিন্তু একটা সময় মনে সময় বেশি পার হয়ে যাচ্ছে । এতো সময় তো লাগার কথা না । যে কোন সময় বোম ফাটার আওয়াজ ভেসে আসতে পারে !

কিন্তু কোন আওয়াজ ভেসে এল না !

তারপর আসিফ দেখলো, মানুষটা আবারও চাপ দিল ।

কিন্তু কোন কাজ হল না ।

তারপর আবার ...

আসিফের মুখে হাসি ফুটলো ।

নীতু !

মেয়েটা ঠিকই বেঁচে আছে আর তার কাজ করেছে ।

লোকটা বুঝতে পারলো কিছু একটা ঝামেলা হয়েছে । বোমা আর ফাঁটবে না ।

এবার চিৎকার দেওয়ার পালা তার । সন্ত্রাসী ছেলেটা এবার হাতের রিমোর্ট ফেলে দিয়ে, নিজের পকেট থেথে পিস্তল বের করতে গেল । কিন্তু আসিফ তৈরি ছিল । ওর পিস্তলটা হাতেই ছিল । সরাসরি গুলি করলো ছেলেটার হাত বরাবর ।

ছেলেটার হাত থেকে পিস্তলটা পড়ে গেল । আসিফ আবারও গুলি করলো ।

এবার লাগলো ছেলেটার কাধের কাছে । ছেলেটা পরে গেল এবার মাটিতে ।

ধীরের ধীরে এগিয়ে এল । পরে থাকা মানুষটার দিকে তাকিয়ে দেখলো । নাহ । মরবে না । গুলি ওভাবে লাগে নি । তবে যন্ত্রনা পাচ্ছে সেটা বুঝতে কষ্ট হল না ।

পরে থাকা পিস্তল টা হাতে নিয়ে এবার ফিরলো মৌমির দিকে । মেয়েটা ওদের দিকে তাকিয়ে আছে !

আগে ওর সাইদ আহমেদের দিকে যাওয়া দরকার ছিল কিন্তু কি মনে হল ও মৌমির দিকে এগিয়ে গেল । ওর খুব কাছে যেতে যাবে ঠিক তখনই তীব্র বিস্ময় নিয়ে মৌমির দিকে তাকালো সে । মৌমির হাত দুটো সামনে চলে এসেছে । ওর হাত বাঁধা ছিল না । ও কেবল এমনি হাত দুটো পেছনে রেখেছিলো । এখন ওর হাতে একটা পিস্তল দেখা যাচ্ছে । মৌমি কোন চিন্তা না করেই গুলি চালিয়ে দিল আসিফকে লক্ষ্য করে ! আসিফ কেবল তাকিয়েই রইলো । এখনও ওর বিস্ময় কাটছে না ! ও যেন বিশ্বাসই করতে পারছে না !

গুলির ধাক্কাতে ছিটকে পড়লো একটু দুরে ....



শেষ পর্ব

নীতু স্থির থাকতে পারছে না । একটু আগে সে একজন মানুষকে গুলি করেছে । এবং মানুষটা মারা গিয়েছে । স্বাভাবিক সময় হলে নীতুর মাথায় কি চলতো সে সেটা বলতে পারবে না । কিন্তু এখন কোন স্বাভাবিক সময় না । তার নিজের উপর অনেক কিছু নির্ভর করছে । যে কোন ভাবেই ওকে শান্ত হতে হবে । পিস্তলটা হাতে নিল আবার । অন্য হাতে ল্যাপটপ টা চালু করে দিল । সামনে পানির ড্রামটা এখনও আছে । সামনের দিকে সেটা কাভার দিতে পারবে আশা করবে । কিন্তু আবারো যদি পেছনের দিকে কেউ চলে আসে তাহলে কি করবে ?

এবার আর সেই ভুল করলো না ।

মোটামুটি ৫০০ গজের মত ফাঁকা স্থান রয়েছে । এই স্থান দিয়ে মানুষটা চলে এসেছিলো । ও অন্য চিন্তা করছিলো বলে ব্যাপারটা একদম ধরতে পারে নি । কি বোকামিই না করেছে । এবার আর সেই ভুল করা যাবে না ।

যে কোন মুহুর্তেই চলে আসবে ওরা ।

কিন্তু ও একা পারবে ওদের আটকাতে ?

যদি না পারে ?

তাহলে এতো গুলো মানুষ মারা যাবে !

নাহ! ওকে টিকে থাকতেই হবে । যে কোন ভাবেই টিকে থাকতে হবে ।

তখনই গুলির আঔয়াজ ভেসে এল । গুলিটা ঠিক ওর মাথার উপর দিয়ে চলে গেল । নীতু চমকে আবার সামনের দিকে তাকালো । গুলিটা এবার এসেছে সামনের দিকে ।

ও মাই গড! এখন কি করবে ও !

সামনে পিছনে দুই দিক দিয়ে যদি আসে তাহলে ও কিভাবে সামলাবে !

পেছনে আবার তাকালো । নাহ এখনও এদিক দিয়ে কেউ আসে নি । ড্রামের ফাঁক দিয়ে নীতু সামনের মানুষটার দিকে তাকানোর চেষ্টা করলো । লোকটা ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে ।

ঠিকই তখনই লোকটার পুরো শরীর কেঁপে উঠলো ! নীতুর মনে হল যেন কিছু একটা এসে লোকটার । নড়ে ঊঠেছে সে । হাত থেকে বন্দুকটা পড়ে গেল তার । তারপর নিজেও মাটিতে লুটিয়ে পড়লো ।

প্রথমেই যে কথাটা নীতুর মনে হল সেটা হচ্ছে "স্নাইপার" !




-সার্জেন্ট, পজিশন
-উই টুক কন্ট্রল ওভার সিসিজিরো ওয়ান, স্যার!
-হোয়াট এবাউট সিসি জিরো টু?
-উই আর অন ইট, স্যার।
-এনি নিউজ ফ্রম আলফা ওয়ান?
-নেগেটিভ স্যার !

সার্জেন আলিফ স্নাইপারটা আরও একটু ভাল ভাবে পজিশন মত নিয়ে নিল । মিনিট খানেক আগেই তারা বেজ ক্যাম্প এক এর দখল নিয়ে নিয়েছে । বলতে গেলে কোন ঝামেলা ছাড়াই । চুড়ার একেবারে মাথায় একজনকে আগে থেকে পরে থাকতে দেখেছে । নিশ্চয়ই মেজর আসিফের কাজ । তার কাছ থেকে সিগনাল পাওয়া মাত্রই ওরা এগোতে শুরু করে । ভেবেছিলো প্রবল বাঁধা চলে আসবে কিন্তু কোন বাঁধা আসে নি । ওরা ভাবতেই পারে নি যে এই রাতের বেলা ওদের উপর এভাবে আক্রমন হবে ।

অবশ্য এর জন্য ওদের দোষ দেওয়া চলে না । ওরা খুব ভাল করেই জানতো আর্মি ওদের আক্রমন করলে ওরা কোন ভাবেই সেটাকে আটকাতে পারবে না । সেই হিসাব মত ওরা এমন ব্যবস্থা করে রেখেছিলো যাতে আক্রমের আগেই ওরা জানতে পারে । দার্জিলিং পাড়ায় ওদের একজন চর লাগানো ছিল । ঠিক একই ভাবে চর লাগানো ছিল বকালেক বেইজের কাছেও । যেন হামলা পরিকল্পনা করার আগেই তাদের কাছে খবর চলে যায় । গত দিনই সেই দুই চরকে ধরা হয়েছে । তারপরই পরিকল্পনা সাজানো হয়েছে ।

পরিকল্পনা ছিল যে মেজর আসিফ ভেতরে ঢুকেই ওদের সংকেত দিবে । চুড়া ওরা দখল করেই এখানে একটা বড় বিস্ফোরন ঘটাবে । এমন একটা পরিস্থিতি দেখানোর চেষ্টা যে এখানে থাকা জেনারেটর বিস্ফোরিত হয়েছে । এই ডাইভার্শন ঘটানোর সুযোগে বেজ টুতে আসিফকে কাজ করতে হবে ।

কিন্তু হঠাৎ পরিকল্পনাকে একটু বদল এসেছে । আসিফ জানিয়েছে সে সাথে একজন সিভিলিয়ানকে নিয়েছে ।

আপাতত ডাইভারশনের দরকার নেই । কেবল চুড়া দখল নিয়ে যেন বেজ টুতে ওরা পজিশন নেয় । সেই কাজই করেছিলো । তখনই মেয়েটাকে দেখতে পেল।

সার্জেন আলিফ অবাক হয়ে গেল !

মেজর আসিফ এই মেয়েটাকে সাথে নিয়ে এসেছে ভাবতেই পারছে না ।

কি সর্বনাসের কথা !

তারপরই ওর হার্টবিট মিস করলো । একজন মেয়েটার দিকে এগিয়ে আসছে !

কয়েকবার চেষ্টা করলো গুলি করার জন্য কিন্তু ঠিক মত নিশানার ভেতরে এল না । মেয়েটাকে মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে ফেলল । এই তো এইভারই বোধহয় গুলি চালিয়ে দিবে !

নাহ ! মেয়েটা হাতের ইশারায় কি যেন দেখালো !

লোকটা রাইফেল নামিয়ে রাখলো ! তারপর কি যেন বলল ।

মেয়েটা বসলো । ড্রামের আড়ালে কি যেন করছে !

তারপরই গুলির আওয়াজ !

সার্জেল আলিফ অবাক হয়ে দেখলো মেয়েটা গুলি চালিয়ে দিয়েছে !

মুখ দিয়ে সত্যিই সত্যিই একটা হর্সধ্বনি বের হয়ে এল । এইটা কোন ভাবেই আশা করে নি । মেয়েটা উঠে দাড়ালো । তারপর জলদিন আবার ড্রামের আড়ালে চলে গেল ।

মেয়েটার মাথায় সত্যিই বুদ্ধি আছে ! বলতেই হবে !

তখনই সার্জেন্ট দেখতে পেল লোকটাকে । গুলির আওয়াজ শুনে সামনে থেকে বেরিয়ে এসেছে ! বেটা একবার দেখি আবার গুলিও চালিয়ে দিয়েছে ! সার্জেন্ট আলিফ হাসলো ।

একেবারে খোলা স্থানে দাড়িয়ে আছে লোকটা । সম্ভত ভাবতেই পারে নি তার মৃত্যুদূত তার থেকে উপরে অপেক্ষা করছে।




নিতুর ঘড়ির দিকে তাকালো । ওর বেঁধে দেওয়া ১০ মিনিট অনেক আগেই পার হয়ে গেছে । একটু আগে লোকটাকে পড়ে যেতে দেখেছে । নাহ আর অপেক্ষা করতে পারছে না ! সম্ভবত আর্মির স্নাইপার চলে এসেছে । নীতু জানে এখন এখান থেকে বের হওয়া মানে মৃত্যুর মুখোমুখি হওয়া কিন্তু কিছু করার নেই । একটু আগে ও নিজের ল্যাপটপ টা চালু করেছিলো কিন্তু কোন সিগনাল পাওয়া যাচ্ছে না । এমন হতে পারে যে হয়তো রেঞ্জের বাইরে রয়েছে ও ।

নীতু পিস্তলটা কোমরে গুজে নিলো । তারপর ল্যাপটপ টা হাতে নিয়ে উঠে দাড়ালো । দরজা লক্ষ্য করে দৌড় দিল । প্রতি নিয়ত ওর মনে ভয় হচ্ছে যে যেকোনো সময় ওর শরীরে এসে গুলি লাগবে । কিন্তু দরজার কাছে এসেও আঘাত লাগলো না কোন । দরজা দিয়ে সোজা সামনের দিকে এগিয়ে গেল । প্রথম ঘরের ভেতরে উকি দিল ।

নাহ কেউ নেই এখানে !

দ্বিতীয় ঘরে উকি দিতেই বুকটা কেঁপে উঠলো ।

দুইটা মানুষ পরে আছে !

একটু কাছে গিয়ে দেখতেই বুঝলো এদের কেউই আসিফ নয় ।

তাহলে আসিফ এখন টিকে আছে !

থাকার কথা !

ঘর থেকে বের হতেই সিড়ির দরজাটা দেখতে পেল । নীতু আবার ভাবলো একটু ।

এখানেই নিজের ল্যাপটপ চালু করলো !

এই তো পাওয়া গেছে সিগনাল !

পরের কয়েক টা মিনিট নীতু আঙ্গুল যেন ঝড় বইয়ে দিল ! মুখে হাসি ফুটলো ওর !

কাজ হয়ে গেছে !

ল্যাপটপটা সিড়ির কাছে রেখেই নীতু সিড়ি দিয়ে নামতে লাগলো । কোমর থেকে পিস্তল টা হাতে চলে এসেছে ।





আসিফের মনে হল ওর সামনে পুরো পৃথিবী অন্ধকার হয়ে আসছে । ওর শার্টের ভেতরে বুলেটপ্রুফ ভেস্ট পরা ছিল । তার পরেও এটো কাছ থেকে মৌমি গুলিটা করেছে যে সেটার ধাক্কা ওর পুরো শরীরটাকে অবশ করে দিয়েছে । হাত থেকে পিস্তলটা এখনও পরেনি অবশ্য । তবে পুরো শরীরে একটা ঝিমঝিম ভাব কাজ করছে।

একটু কষ্ট করে উঠে বসলো সে । তাকিয়ে দেখলো মৌমি ঐ মানুষটাকে তুলে নেওয়ার চেষ্টা করছে ! আসিফ উঠে বসতেই ওর দিকে আবার পিস্তল তাক করলো ! শান্ত কঠিন গলাতে বলল, কোন চালাকী না আসিফ ! হাতের পিস্তলটা মোটেই তোলার চেষ্টা করবে না । তোমাকে আমি মারতে চাই না তবে ওয়াহেদের জন্য আমি যে কাউকে মারতে পারি ! পিস্তলটা এদিকে বাড়িয়ে দাও ।

আসিফ মৌমির কথায় কান দিল না । পিস্তলটা সে বাড়িয়ে দিল না ওর দিকে । ও তখনও ঠিক বিশ্বাস করতে পারছে না । বিশ্বাস করতে পারছে না যে একটু আগে এই মেয়ে ওকে গুলি করেছে । কেবল বলল, হোয়াই ?

-হোয়াই ? আস্ক ইয়োর ডেপুটি স্যার ! হোয়াট হি ডিড টু হিজ ফ্যামিলি !

আসিফের চোখ চলে গেল ওদের ডেপুটি চিফের দিকে ।

মৌমি বলল, আমি এখান থেকে চলে যেতে চাই । ওয়াহেদকে নিয়ে । কেউ যদি বাঁধা দিতে যায় তাহলে সে মরবে !

আসিফ বলল, তুমি পারবে না । আমি আগেই বলেছি আর্মি পুরো ক্যাম্পটাকে ঘিরে রেখেছে !

মৌমি বলল, তোমাদের কি মনে হয় আমি এতো কাঁচা কাজ করবো ? পালানোর পথ না রেখে এতো বড় কাজটা করতে যাবো ?

মৌমির দিকে তাকিয়ে আসিফের মনে হল মেয়েটা ঠিক বলছে । নিশ্চয়ই ওর মাথায় কোন প্লান আছে । আসিফের কাছে এখন সব পরিস্কার হয়ে এল । কিভাবে ব্লাক লিমোর লোকেরা ভেতরের এই খবর পেল ! মৌমি নিজেই হচ্ছে সেই মানুষ! ওকে কেউ কোন দিন সন্দেহ করে নি । আসিফ এখনও বিশ্বাস করতে পারছে না !

মৌমি ওইয়াহেদকে নিয়ে দরজার দিকে এক পা বাড়িয়ে দিলো ।

ঠিক তখনই দরজা দিয়ে নীতুকে ঢুকতে দেখলো আসিফ ! ওর হাতে খোলা পিস্তল দেখেই সব কিছু মুহুর্তের ভেতরেই পাল্টে গেল । আসিফ দেখতে পেল মৌমির পিস্তলটা ওর দিক থেকে সরে গিয়ে নীতুর দিকে চলে যাচ্ছে । মৌমি ওকে গুলি করে দিবে, এই ভাবনাটা আফিসকে তীব্র ভাবে আন্দলিত করে তুলল । ও কোথা থেকে এই ক্ষিপ্ততা পেল ও জানে না । হাতের পিস্তলটা বিজলির বেগে উঠে এল । তারপর আর কিছু না ভেবে ট্রিগার চেপে দিল ও !




##
ডেপুটি চিফ সাইদ আহমেদ আসিফের দিকে তাকিয়ে বলল, থ্যাঙ্কিউ !

-থ্যাঙ্কিউ কেন স্যার এটা আমার ডিউটি ।

-ওটার জন্য নয় ! মৌমির ব্যাপারটা জন্য !



মৌমি যখন নীতুকে গুলি করতে যাচ্ছিলো তখনই আসিফ ওকে লক্ষ্য করে গুলি চালায় । সেটা মৌমির বুকের একটু উপরে লাগে । তারপরই বলতে গেলে মিশন শেষ হয়ে আসে । যখন আর্মির লোকজন এখানে এসে হাজির হয় তখন আসিফ তাদের বলে যে স্যুট আউটে মৌমি আহত হয়েছে । এখনই ওর মেডিক্যাল ট্রিটমেন্ট দরকার । মৌমি যে ব্লাক লিমোর সাথে জড়িতো এটা আসিফ চেপে যায় ! চেয়ে যায় সাইদ আহমেদও । যতই খারাপ কাজই করুক না কেন, মৌমি তো তার মেয়েই । একজন পিতাস সব সময়ই চায় মেয়েকে সাহায্য করতে !

সাইদ আহমেদ বলল, ও সুস্থ হলে আমি ওকে বাধ্য করবো আর্লি রিজাইন করার জন্য । ওকে একটা সুযোগ দেওয়ার জন্য তোমাকে ধন্যবাদ !

আসিফ বলল, কোন ব্যাপার না স্যার ! আমি কি একটা ব্যাপার জানতে পারি যদি কিছু মনে না করেন !

-হ্যা অবশ্যই । বল ।

-মৌমি কি বলছিলো তখন ওয়াহেদের ব্যাপারে !

সাইদ আহমেদ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। তারপর বলল, ওয়াহেদের মত মৌমিও মনে করে যে ওয়াহেদের বাবার মৃত্যুর জন্য আমি দায়ী । অথচ আমি কেবল আমার ডিউটি করছিলাম । ওয়াহেদের বাবা আমার কলিগ ছিল কয়েক বছর আগে । সেই সুবাদে মৌমি আর ওয়াহেদও এক সাথে বড় হয়েছে । মাঝে একবার আমাদের হাতে রিপোর্ট আসে যে একজন অফিসার নাকি আমাদের দেশের কিছু গোপন তথ্য বিক্রি করেছে ইজরায়েলের কাছে । সেই মানুষটাকে আমি খুজে বের করি । এবং সেটা ওয়াহেদের বাবা ছিল । আমি আমার রিপোর্ট দেওয়ার আগে ওয়াহেদের বাবা আমার কাছে এসে সেটা চেপে যেতে অনুরোধ করে । আমি সেতা শুনি নি । সেই দিন রাতেই শাস্তির হাত থেকে বাঁচতে সে আত্মহত্যা করে । ওয়াহেদের বক্তব্য হচ্ছে আমি যদি চেপে যেতাম সেদিন তাহলে তার বাবা বেঁচে থাকতো । দুঃখের ব্যাপার হচ্ছে মৌমিরও এই ধারনা !

দুজনের কেউ আর কথা বলল না । সামনের দিকে সৈনিকদের কাজ দেখতে লাগলো । মৌমিকে চপারে তোলা হচ্ছে । ওর এখনও জ্ঞান নেই । তবে সে বেঁচে যাবে এটা নিশ্চিত !



পরিশিষ্টঃ

আসিফ সব ঝামেলা শেষ করে নীতুকে খুজতে লাগলো । মেয়েটা কোথায় গেল কে জানে !

এদিক ওদিক খুজতে খুজতে সার্জেন্ট আলিফের সাথে দেখা হয়ে গেল । কিছু বলতে হল না । সার্জেন্ট আলিফ বলল, স্যার আপনার হিরোইন চুড়ায় আছে !

-আমার হিরোইন মানে কি ?

সার্জেন্ট হো হো করে হেসে উঠলো । তারপর বলল, আপনি যদি এই মিশনের হিরো হয়ে থাকেন, কোণ সন্দেহ নেই সে আপনার হিরো । আপনি যদি দেখতেন তাকে কি ক্ষিপ্ততার সাথে গুলি চালিয়েছে ! আমার মত সন্দেহ হচ্ছে এই মেয়ে নির্ঘাত স্পাই !

আসিফ কিছু বলতে গিয়েও বলল না । নীতু মেয়েটা সত্যিই ওকে বারবার অবাকই করে দিয়েছে । সে চুড়ার দিকে পা বাড়ালো । সেখানে গিয়েই দেখলো নীতু সামনের দিকে তাকিয়ে আছে । ওর পায়ের আওয়াজ পেয়ে ফিরে তাকালো । আসিফ ওর পাশে গিয়ে দাড়ালো । তারপর বলল, যাবে না নিচে ?

-এখনই ?

-চাইলে আরও কিছু সময় থাকতে পারো ! একটা চপার এসেছে । ওটাকে আহতদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছে । আমাদের নিতে আরেকটা আসবে !

নীতু বলল ঐদিকে নাকি আরও বড় একটা ঝর্ণা আছে । আমি ওটা দেখতে চাই ।

আসিফ বলল, হাটতে পারবে ?

-কেন ? তুমি কোলে করে নিয়ে যাবে । যাবে না ?

আসিফ হাসলো । কিছু বলল না ।

নীতু তখন বলল, রাতে যখন তুমি আমাকে রেখে ভেতরে ঢুকলো তখন আমি কি ভেবেছিলাম জানো ?

-কি ?

-ভেবেছিলাম যদি দুজনেই বেঁচে থাকি তাহলে এই চুড়ায় দাঁড়িয়ে তোমাকে চুমু খাবো !

আসিফ কি বলবে খুজে পেল না । এই মেয়েটা কে সে সত্যি বুঝতে পারছে না । তবে এখন সেই সব অবশ্য ভাবার সময় নেই । চুড়াটা এখন ফাঁকাই আছে । তবে যে কোন সময় চলে আসতে পারে কেউ । তার আগেই নীতুর ইচ্ছেটা পূরণ করা যাক !

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা অক্টোবর, ২০১৯ সকাল ৯:৩৯

স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন: দারুন মিশন। দারুন গল্প। ++

০২ রা অক্টোবর, ২০১৯ সকাল ৯:৫৩

অপু তানভীর বলেছেন: ধন্যবাদ গল্প পড়ার জন্য :)

২| ০২ রা অক্টোবর, ২০১৯ দুপুর ১২:৫৫

রাজীব নুর বলেছেন: বড় গল্প পড়লাম। তবে আমি এই গল্প লিখলে অনেক ছোট হতো।
গল্প লেখার প্রথম শর্ত হচ্ছে- সুন্দরভাবে গল্প বলতে হয়। যেন আরেকজনের পড়ে বিরক্ত না লাগে।

০৩ রা অক্টোবর, ২০১৯ সকাল ১০:৪১

অপু তানভীর বলেছেন: আপনার চমৎকার এবং গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্যের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ !

৩| ০২ রা অক্টোবর, ২০১৯ বিকাল ৫:১২

মাহের ইসলাম বলেছেন: খুব ভালো লেগেছে।
তবে, একটার বেশি লাইক দিতে পারলাম না বলে মন খারাপ হলো।

চালিয়ে যান, চমৎকার চমৎকার গল্প আশা করছি আপনার কাছ থেকে।

ছোট একটা কথা, জোক জোর করে ছাড়াবেন না, ব্লিডিং বেশি হবে। আর, হিরো ক্যাপ্টেন হলে ভালো হতো। নাহলে আবার যদি ব্যাজ বাড়ে, তাহলে বেশি বুড়া মনে হবে। নিতুকে আরেকটু সুন্দরী করলে সমস্যা ছিল না।

০৩ রা অক্টোবর, ২০১৯ সকাল ১০:৪৪

অপু তানভীর বলেছেন: জোঁক ছাড়াতে গিয়ে লবন দিতে হয় । কিন্তু আমি এসবের ধার ধারি নি । দুইবার কেওক্রাডং এ উঠেছি । শরীরে জোক লাগার খোজ পেলেই আমি টেনে টুনে সেটা ছাড়িয়ে দেই ।

নীতু তো সুন্দরীই । কম সন্দুরী কে বলল ?

ধন্যবাদ গল্প পড়ার জন্য !

৪| ০২ রা অক্টোবর, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:০৮

তানজীর আহমেদ সিয়াম বলেছেন: অন্নেক দিন পর ভিন্ন ধর্মী একটা গল্পপ পড়লাম :)

০৩ রা অক্টোবর, ২০১৯ সকাল ১০:৪৫

অপু তানভীর বলেছেন: পড়ার জন্য ধন্যবাদ :)

৫| ০২ রা অক্টোবর, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:৪৯

সাঈদ_মাহমুদ বলেছেন: চমৎকার একটি মিশনের গল্প

০৩ রা অক্টোবর, ২০১৯ সকাল ১০:৪৫

অপু তানভীর বলেছেন: ধন্যবাদ পড়ার জন্য :)

৬| ০৩ রা অক্টোবর, ২০১৯ রাত ১:৩৮

রাকিবুল ইয়াসিন বলেছেন: আপনি সাধারণত প্রায় সাতদিন পরপর একটা করে পোষ্ট করেন। এবার বেশি সময় নিলেন।

০৩ রা অক্টোবর, ২০১৯ সকাল ১০:৪৬

অপু তানভীর বলেছেন: গতমাসে আমি একটু ব্যস্ত ছিলাম তাই গল্প লেখা হয় নি । আর শেষের দিকে এই গল্পটা লিখছিলাম ফেসবুকে । এখানে এক বারে পোস্ট দিতে চেয়েছিলাম । তাই আর পোস্ট করা হয় নি !

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.