নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

www.oputanvir.com

অপু তানভীর

আমার চোখে ঠোঁটে মুখে তুমি লেগে আছো

অপু তানভীর › বিস্তারিত পোস্টঃ

বড় গল্পঃ দ্য গডফাদার (শেষ পর্ব)

০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৯ দুপুর ১২:৫৪


ছবি গুগল

আগের পর্ব


আট

অপুর খানিকটা অস্বস্তি লাগছে । ওদের বাসার পুরো লনটা মানুষে ভর্তি হয়ে গেছে । শহরের সব থেকে গন্য মান্য ব্যক্তিরা এসে হাজির হয়েছে এখানে । আজকে ওদের বাসায় একটা পার্টির আয়োজন করা হয়েছে । অপুর ফিরে আসার উপলক্ষ্যে । ওর এর সব ব্যাপার মোটেই ভাল লাগে না । ছোট বেলা থেকেই ও সব সময় মানুষের চোখের আড়ালে থাকতে পছন্দ করে । মানুষ জনের সামনে যেতে তার ভাল লাগতো না মোটেই । কিন্তু আজকে সে একেবারে প্রাণ কেন্দ্রে ! সবাই তার সাথেই যেন কথা বলতে চাইছে ।

নিজের বাড়িটা ওর কাছে কেমন যেন অচেনা লাগছে । সেই কবে এই বাসা ছেড়ে চলে গিয়েছিলো । মা বেঁচে থাকতে মাঝে মধ্যে তবুও আসতো এই বাসাতে কিন্তু তারপর আর আসাই হয় নি । আজকে কতদিন পরে সে এখানে এসছে ।

অপুর চোখটা নিকিতাকে খোজ করতে লাগলো । মেয়েটার মাথার ভেতরে আসলে কি চলছে সেটা অপু জানে না । গত দিন সে ওকে অনুরোধ করে নিজের বাসায় ফেরৎ আসতে । কেন আসতে বলল সেটা অপু কেন জানি জানতে চায় নি । আগের দিন নিকিতার মেজাজ খুব খারাপ ছিল । তার বস নাকি তাকে যাচ্ছে তাই বলেছে । এটার পেছনের একটা কারন যে ও নিজে সেটা অপু নিজেও জানে ।
এই ভয়টা অপুর মনে সব সময় ছিল । নিকিতাকে কেবল ওর সাথে থাকার জন্য অনেক কিছু শুনতে হবে । হয়েছেও তাই । ওর মনে একটা অপরাধবোধ তাই আপনা থেকেই সৃষ্টি হয়েছে । তাই নিকিতা নিজ থেকে ওকে বাসায় ফিরে আসতে বলল অপু আর কিছু জানতে চাইলো না !

একটা কারন অবশ্য অপুর কাছে বেশ পরিস্কারই হয়েছে । অপুর এই বাসায় ফিরে আসার ফলে নিকিতা এই বাসার ভেতরে প্রবেশ করতে পারছে নিশ্চিন্তে । কোন ঝামেলা ছাড়াই ! সম্ভবত নিকিতাই প্রথম পুলিশ অফিসার যে কি না কোন আমন্ত্রন ছাড়া এই বাড়িতে প্রবেশ করতে পারছে । যদিও বড় বড় কিছু অফিসার তাদের বাসাতে আসে । তবে তারা আসে রাতের আধারে । কেউ তাদের দেখতে পায় না । তারা আসে ওর বাবার আমন্ত্রনে । কাজের কারনে । পুলিশ বেসে নয় !
কিন্তু নিকিতা এসবের ধার ধারে না । অপু ফিরে আসার দ্বিতীয় দিনে সে একেবারে পুলিশের গাড়ি নিয়েই বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করেছে । বাড়ির সিকিউরিটি গার্ড কেবল অবাক চোখে তাকিয়ে ছিল যখন অপু নিজে গাড়িটা ভেতরে ঢুকতে বলল । পুলিশের গাড়িটা রাখা হয়েছিলো একেবারে লনের সামনেই । যেন কবীর চৌধুরীর ঘর থেকেই সেটা দেখা যায় পরিস্কার । তা ছাড়া যেই বাড়ির সামনে আসছে সেই নিকিতার গাড়িটা দেখতে পাচ্ছিলো । সবাই কেবল অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলো গাড়িটার দিকে । এই বাড়িতে পুলিশের গাড়ি !

কিন্তু কেউ কিছু বলতে সাহস পাচ্ছিলো না । অপুর পুরানো দিনের একটা ঘটনা মনে পরে গেল । তখন অপু এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে । কলেজে উঠবে । সেই সময়েই সে তার বাবার কাজ সম্পর্কে একটা ধারনা পেতে শুরু করে । ধারনা পেতে শুরু করে যে তার বাবা আসলে স্বাভাবিক কোন কাজ করে না । আর যে কাজটা যে করে সেটা মোটেই ভাল নয় ।

কলেজে উঠার পর রাতিন নামের একটা ছেলে ওকে অকারনেই গালিগালাজ শুরু করে, ওর সাথে চরম খারাপ ব্যবহার করতে থাকে । ও ব্যাপার টাতে এতোই অবাক হয়ে যায় যে কোন কথাই বলতে পারে না । এমন কি ছেলেটা এমন কেন শুরু করেছে সেটাও না । পরে এক দিন জানতে পারে যে রাতিনের বাবা মারা নেই । তার বাবার মারা যাওয়ার কারন হচ্ছে কবীর চৌধুরী । যদিও প্রমান করা যায় নি তবুও এটা সবাই জানে যে রাতিনের বাবা মারা যাওয়ার পেছনে কেবল মাত্র কবীর চৌধুরীর হাত আছে !

তারপর থেকে অপু বুঝতে হঠাৎ করেই বুঝতে শুরু করে যে ওর সাথে মানুষের সম্পর্ক গুলো ঠিক স্বাভাবিক না । ও আগে যাদের কে বন্ধু মনে করতো তারা ওর সাথে মেশে ঠিকই কিন্তু একটা অদৃশ্য দেয়াল ঠিকই আছে ওদের মধ্যে ।

কবীর চৌধুরীর সাথে এটা নিয়ে তখন বেশ কয়েকবার কথা বলেছে কিন্তু কবীর চৌধুরী প্রতিবারই সেই কথা গুলোকে উড়িয়ে দিয়েছে । হায়েই মাখে নি । অপুর মনের ক্ষোভ তখন দিন দিন বাড়তেই শুরু করে । ইউনিভার্সিটিতে উঠার আগে সেটা একেবারে তীব্র হয়ে ওঠে । ওদের ক্লাসের অরিন নামের একটা মেয়েকে সে পছন্দ করতো । মেয়েটা শান্ত স্বভাবের ছিল । অপু একদিন অরিন মনের কথা বলেই দিল। অরিন কিছু সময় চুপ থেকে ওর প্রস্তাব মানা করে দিল । মানা করার কারনটাও বলে দিয়েছিলো পরিস্কার ভাবেই ।


অপু জানে নিকিতার এই ভাবে ওদের বাসায় আসাটা কবীর চৌধুরী কিছুতেই পছন্দ করছে না । কিন্তু সে কিছু বলবেও না অপু কে । কিংবা নিকিতাকেও বাসাতে আসতে মানা করবে না । অপুকে সে আবার হারাতে চাইবে না । সে কোন ভাবেই চাইবে না যে অপু আবার চলে যাক বাসা ছেড়ে ।


অপুর একা একা দাড়িয়ে থাকতে ভাল লাগছে না । এদিক ওদিক খুজতে শুরু করলো নিকিতাকে । নিকিতা সন্ধ্যা বেলাতেই চলে এসেছে । পার্টি শুরুর আগেই । ওরা কিছু সময় ছাদে বসে গল্প করছিলো । তারপর ওর বাবার একজন কর্মী এসে অপুকে নিচে যেতে বলে । পার্টি শুরু হয়েছে । কবীর চৌধুরী ওকে ডাকছে ।
নিকিতা তখন ওকে বলল, তুমি নিচে যাও ।
-আর তুমি ?
-আমাকে দেখলে তোমার বাবা হয়তো খুশি হবে না ।
-না হোক । তবুও চল ।
-তুমি যাও । আম আসছি একটু পরে !

অপু কিছু সময় নিকিতার দিকে তাকিয়ে নিচে চলে এল । তারপর থেকে নানান মানুষের সাথে দেখা হচ্ছে । ওর ব্যাপারে জানতে চাচ্ছে । সে এখন কি করে সামনে কি করবে এই সব ! অপু খানিকটা বিরক্ত হয়েই সে সব প্রশ্নের উত্তর দিয়ে যাচ্ছে । একটা সময় আর ধৈর্য্য রাখতে পারলো না । ঘুরে চলে যেতে যাবে তখনই নাদিয়াকে দেখতে পেল ।

একটু অবাকই হল বলতে হবে । নাদিয়াও যে আজকে পার্টিতে আসবে সেটা অপুর জানা ছিল না । ঐদিন অপুর বাসাতে নাদিয়া আবারও হাজির হয়েছিলো । সেদিন সে কেন এসেছিলো সেটা পরিস্কার কন্ঠে কিছুই বলে নি । কেবল বলেছে সে অপুর সাথে যোগাযোগ রাখতে ইচ্ছুক । এতোদিনের পরিচয় ওদের । এভাবে হুট করে অচেনা হতে চায় না । ও যে ভুল করেছে সেটার জন্য সে লজ্জিত ।

অপু হ্যা না কিছুই বলে নি । তবে এই বাসাতে নাদিয়াকে আশা করে নি । নাদিয়া ওর দিকে তাকিয়ে হাসলো । তারপর বলল, তো প্রিন্স রাজপ্রসাদে ফিরেই এলো ?
অপু বলল, আমি কোন প্রিন্স না !
নাদিয়া এই কথার জবাব না দিয়ে হাসলো কেবল । অপু বলল, তুমি এই বাসায় আসবে জানতাম না ।
-আমিও জানতাম না । দিপু ভাইয়া বলল যে আসতে !

অপু আরও খানিকটা অবাক হল । ওর বড় ভাই দিপুর সাথে ওর বেশ ভালই সম্পর্ক ছিল । যদিও বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ার পর সেটা একেবারে কমে যায় । দিপুর মনভাব একেবারে কবীর চৌধুরীর দিকে । দিপু তার বাবা বলতে অজ্ঞান । বাবার বিরুদ্ধে একটা কথা শুনতে সে প্রস্তুত ছিল না । তার বাবা যে একজন ক্ষমতাধর মানুষ, মানুষ যে তাকে ভয় পায় এটার সুবিধা সে সব স্থানেই নিত !
অপু খুজে পেল না যে নাদিয়ার সাথে দিপুর পরিচয় হল কিভাবে ?

নাদিয়া বলল, তো তোমার গার্লফ্রেন্ড কোথায় ? আসে নি ?
-এসেছে ! ভেতরে আছে ।
নাদিয়া খানকটা সময় চুপ করে থেকে বলল, একটা কথা জিজ্ঞেস করি ?
-হ্যা কর !
-তুমি কি সত্যিই আমাকে ভুলে গেছো ?
অপু এবার নাদিয়ার দিকে তাকালো । সে নাদিয়ার প্রশ্নের জবাব না দিয়ে জানতে চাইলো, তুমি কি সত্যিই কোন দিন আমার ব্যাপারে সিরিয়াস ছিলে ?
নাদিয়া খানিকটা সময় অন্য দিকে তাকিয়ে রইলো । অপু আবার বলল, তোমাকে আমি যতদুর চিনি, চিনেছি তাতে আমি কোন দিনই তোমার ড্রিমবয় ছিলাম না । মানে আমাকে তুমি তখন যেভাবে চিনতে । তবুও কেন আমার সাথে মিশতে ? এক সময় আমি ভাবতাম সত্যিই বুঝি তুমি আমাকে ভালবাসো তারপর বুঝতে পেরেছি যে তুমি আসলে তোমার ড্রিমবয় মানে যেমন ছেলেদেরকে তুমি মিশতে পছন্দ করতে তাদের সাথে মিশতে মিশতে বোর হয়ে গিয়েছিলো । হয় না যে সব সময় পার্ফেক্ট ভাবে দিন শুরু করতে করতে মানুষ ক্লান্ত হয়ে যায় । তারপর নিয়ম ভাঙ্গতে চায় । আমি ছিলাম তোমার নিয়ম ভাঙ্গা ! তাই না ?

নাদিয়া বলল, তাহলে তোমার সাথে নিকিতাকে দেখে আমার সহ্য হচ্ছে না কেন ?
অপু হাসলো । তারপর বলল, এই একজন তোমাকে ছেড়ে চলে গেছে, তোমার সামনে হাত জোর করে দাড়ায় নি, এটার জন্যই! এটা সহ্য হচ্ছে না ।
নাদিয়া বলল, হয়তো ! হয়তো না । তবে নিকিতা তোমার জন্য ঠিক না । তোমার ফ্যামিলির জন্য ঠিক না ।
-হয়তো !

অপু আরও কিছু বলতে যাবে তার আগেই ওর বড় ভাই দিপুকে আসতে দেখলো । নাদিয়ার সামনে এসে বলল, আরে তুমি চলে এসেছো ।
নাদিয়া হাসলো একটু । অপুর দিকে তাকিয়ে বলল, তুই এভাবে বসে আসিস কেন মনমরা হয়ে ! তোর পুলিশ ফ্রেন্ড কোথায় ? ওর দিকে খেয়াল রাখ ! আর নাদিয়া তুমি আমার সাথে এসো তো । একটা জিনিস দেখাই তোমাকে !

নাদিয়া একবার অপুর দিকে তাকালো । তারপর দিপুর দিকে তাকিয়ে বলল, চলুন ! কি দেখাবেন ?

অপু দেখলো নাদিয়া খুব স্বাভাবিক ভাবে ওর বড় ভাইয়ের সাথে কথা বলতে বলতে এগিয়ে চলল । দৃশ্যটা দেখে অপুর মনে একটা অদ্ভুত অনুভূতি হল । নিজের প্রাক্তন প্রেমিকাকে নিজের বড় সাথে হাসিখুশি ভাবে কথা বলতে দেখলে কারোই খুশি হওয়ার কথা না । নাদিয়াকে সে কোন দিনই ঠিকমত বুঝতে পারে নি । ওর এখনকার আচরনও বুঝতে পারছে না ।
সে কি দিপুর সাথে ভাব জমানোর চেষ্টা করছে ?
নাকি ওকে ঈর্ষান্বিত করার চেষ্টা করছে ?

অপু নিকিতাকে খুজতে লাগলো । মেয়েটা গেল কোথায় ?


####
নিকিতার মনে হল ও যেন হারিয়ে গেছে । অপুদের বাসাটা তিন তলা । ঢাকা শহরে একটা তিন তলা বাসার ভেতরে যে এতো গুলো রুম থাকতে পারে সেটা নিকিতা এই বাসায় না আসলে কিছুতেই বুঝতে পারতো না । বাসাটা দুই অংশে বিভক্ত ! এক দিনে অপুদের থাকার জন্য অনেক গুলো ঘর । যদিও ওদের থাকার সব ঘর গুলো দুই তলাতে । নিচ তলার সব চাকরবাকর থাকার ঘর । অন্য পাশে খাবার ঘর আর কিচেন । তিন তলাতে ওর বাবার অফিস আছে সেই সাথে স্টাডি রুম, লাইব্রেরি আরও কত কি !

কিন্তু নিকিতা খুজছে অন্য কিছু । ওর নিশ্চিত ধারনা যে এই বাড়ির নিচে কিছু আছে । সেই রাস্তা সে খুজছে ।

নিকিতা তিন তলায় কবীর চৌধুরীর অফিসে এসে হাজির হল । প্রথমে ভেবেছিলো যে ঘরটা হয়তো তালা মারা থাকবে কিন্তু অফিসটা সে খোলাই ছিল । ঘরের ভেতরে ঢুকে আস্তে আস্তে খুজতে শুরু করলো । কি খুজছে সেটা সে নিজেও জানে না । এমন যে কোন কিছু যেটা তার কাজে লাগে !

বড় সেক্রেটারিয়েট টেবিলের উপরে একটা বড় পিসি রয়েছে । সেটা খুলতে গেল না । আগে ড্রয়ার গুলো দেখা দরকার ! ড্রয়ার গুলো একের পর এক চেক করতে শুরু করলো । দ্বিতীয় ড্রয়ারটা খুলতেই একটা লাল রংয়ের ফাইল দেখতে পেল । সেটা খুলতেই মুখ দিয়ে একটা অসফুট আওয়াজ বের হয়ে এল । একটা কাজের জিনিস হাতে এসেছে তার । এটা দিয়ে কাজ হবে খুব !

ফাইলে থাকা প্রতিটা পাতার ছবি তুলতে শুরু করলো । এই জিনিস হাতে পাওয়া মানে আকাশের চাঁদ হাতে পাওয়া !

যখন শেষ পাতার ছবি তুলে শেষ করেছে তখনই করিডোরে পায়ের আওয়াজ পাওয়া গেল । কেউ এদিকে আসছে !
এখন ?
নিকিতা কি করবে এখন ?
এই অফিসের দিকে কবীর চৌধুরী ছাড়া আর কারো আসার কথা না । আসার আগে সে একবার নিচে দেখে এসেছিলো । বেশ কিছু গন্যমান্য মানুষের সাথে কবীর চৌধুরী তখন কথা বলছিলো । তাদের রেখে চলে আসবে !

নিকিতা পালানোর পথ খুজতে লাগলো কিন্তু পেল না । এদিকে পায়ের আওয়াজ আরও কাছে চলে আসছে । নিকিতা ড্রয়ারটা বন্ধ করেই টেবিলের নিচে লুকিয়ে পড়লো । আর কোন পথ সামনে নেই । তবে ওর ধরা পরে যাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে শতভাগ । যে মানুষটা আসছে সে যদি টেবিলের এই পাশে আসে তাহলেই দেখে ফেলবে ওকে !
তখন কি হবে !

নিকিতার বুকের ভেতরে ঢিপঢিপ করতে লাগলো ! টেবিলের নিচ দিয়েই দেখতে পেল দরজাটা আস্তে আস্তে খুলে যাচ্ছে !


নয়
কবীর চৌধুরী নিজের অফিসের দরজার কাছে গিয়ে থেমে গেলেন । তার পকেটের ফোন বাজছে ! ফোনটা হাতে নিয়ে স্ক্রিনের দিকে তাকালেন ! হাসানের ফোন ! একটু আগেই না হাসানের সাথে দেখা হল ! এখন আবার ফোন কেন ?
নিচে পার্টি চলছে । কবীর চৌধুরী সেখানেই ছিলেন । কিছু গন্যমান্য গেস্ট এসেছে তাদের সাথে কথা বলছিলেন । হঠাৎ কি মনে হল নিজের অফিসের দিকে হাটা দিলেন । একটা কাজ হঠাৎ করেই মনে পড়ে গিয়েছিলো । যদিও খুব একটা জরূরী ছিল না ।
দরজার কাছে এসে আবার হাসানের ফোন পেল !


-হ্যা বল !
-স্যার আপনি কোথায় ?
-কেন ?
-স্যার রহমতুল্লাহ বশির এসেছে !

নাম টা শুনেই খানিকটা সময় চুপ করে গেলেন । এই পৃথিবীতে যদি তিনি সব থেকে কাউকে বেশি অপছন্দ করেন তাহলে সেই মানুষটা হচ্ছে এই রহমতুল্লাহ বশির ! একটা সময় ছিল যখন সকালে ঘুম থেকে উঠেই তিনি এই লোকটা কে কিভাবে দুনিয়া থেকে উঠিয়ে দেওয়া যায় সেই চিন্তা দিয়ে দিন শুরু করতেন । এখনও করেন কিন্তু এখন নিজেকে সংযত করে নিয়েছেন ! সার্বিক চিন্তা করে তিনি এই মানুষটাকে সহ্য করে নিয়েছেন কিংবা নেওয়ার চেষ্টা করছেন !

কবীর চৌধুরী বলল, তাকে কে দাওয়াত দিয়েছে ?
-কেউ দেয় নি স্যার । সে চলে এসেছে ! আপনি কি আসবেন ? দিপু স্যার যদি তাকে দেখে তখন .....

হাসানের উদ্দিগ্ন হওয়ার কারনটা কবীর চৌধুরী ঠিকই বুঝতে পারলেন । তিনি আর অফিসের দিকে পা বাড়ালেন না । আবারও ঘুরে লনের দিকে এগিয়ে গেলেন । রহমতুল্লাহ বশিরকে লন থেকে ভেতরে নিয়ে আসতে হবে । দিপুর সামনে পড়তে দেওয়া যাবে না । এমন কি অপুর সামনেও না । তারা দুজনেই খুব ভাল করেই রহমতুল্লাহ বশিরকে চিনে !

কবীর চৌধুরী বেরিয়ে যেতেই নিকিতার মুখ দিয়ে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস বের হয়ে এল ! সেই সাথে বুঝতে অসুবিধা হল না যে জরূরী কেউ এসেছে ।
কে আসতে পারে ?
এমন কে আছে যার জন্য কবীর চৌধুরী এমন তাড়াহুড়া করে বের হয়ে গেল । অবশ্য না বের হলে ওকে ঠিকই দেখে ফেলতো । তখন পরিস্থিতি কেমন হত কে জানে ?

নিকিতা আরও কিছু সময় অপেক্ষা করলো । আর কেউ এদিকে চলে আসে কি না সেটার জন্য অপেক্ষা করলো কিছু সময় । তারপর ঘরটা আরও কিছু সময় খোজাখুজি করলো । নিজের দরকারী আরও কিছু পায় কি না সেটা দেখে নিল । টেবিলের উপরে থাকা পিসিটার উপর বেশ লোভ হল । তবে নিজের লোভটাকে সামলে নিল । আজকে যা পেয়েছে সেটা এক দিনের জন্য অনেক । সামনে আরও সুযোগ পাওয়া যাবে । তখন এই পিসিটার উপর হামলে পড়া যাবে !

সে দরজা দিয়ে দ্রুত বের হয়ে গেল । লনের সামনে আসতেই দেখতে পেল বেশ কিছু মানুষের একটা দল বাড়ির ডান দিকে এগিয়ে যাচ্ছে । তাদের সামনে দুজন মানুষ রয়েছে । একজন কে সে এখান থেকে চিনতে পারলো । অন্য জনকে ঠিক দেখতে পেল না ভাল করে !


-তুমি কোথায় ছিল ?
ওর পাশে কখন অপু এসে দাড়িয়েছে সেটা নিকিতা লক্ষ্য করে নি । অপুর দিকে তাকিয়ে বলল, আমি একটু ভেতরে ছিলাম । কে এসেছে বল তো ?
অপু খানিকটা গম্ভীর হয়ে বলল, রহমতুল্লাহ বশির !

নামটা শুনেই নিকিতা খানিকটা চমকে গেল । এই নামটার সাথে ভাল করেই পরিচিত । যতবার সে কবীর চৌধুরীর পেছনে ছুটেছে ততবারই এই নামটা তার সামনে এসেছে । কিছু একটা হিসাব সে মিলাতে পারছে না । রহমতুল্লাহ বশিরের তো এখানে আসার কথা না ।
নিকিতা আরও কিছু বলতে যাবে তখনই নাদিয়াকে দেখতে পেল । অপুর বড় ভাইকে কিছু একটা বোঝানোর চেষ্টা করছে । তাকে শান্ত করার চেষ্টা করছে । কোন কারনে দিপু কোন কারনে রেগে গেছে ! কি এমন হল যে রেগে গেল !

অপু পাশ থেকে বলল, বশিরকে দেখে ভাইয়া রেগে গেছে ?
নিকিতা বলল, এই লোকটা তোমার বাবার রাইভাল ! এখানে কেন এসেছে ?
অপু কিছু সময় চুপ করে থেকে বলল, কেবল রাইভালই নয়, চার বছর আগে যে গ্যাংওয়্যার হয়েছিলো তা মুলত বাবা আর এই রহমতুল্লাহ বশিরের মধ্যেই ছিল ।

নিকিতা কিছু বলতে গিয়েও বলল না । এই ইতিহাস সে জানে । ঐ গ্যাংওয়্যারটা শুরুই হয়েছিলো যখন রহমতুল্লাহ বশির কবীর চৌধুরীর গাড়ির উপর হামলা করে । সেই হামলাতে কবীর চৌধুরী মারা না গেলেও অপুর মা মারা যায় । এরপর প্রতিক্রিয়া স্বরূপ কবীর চৌধুরীর হামলায় মারা পরে বশিরের বড় ছেলে । তারপর একের পর এক হামলা চলতেই থাকে ।

শেষে এক সময়ে যখন দেখা গেল ক্ষয়ক্ষতির পরিমান দিন দিন বাড়ছেই তখন অন্যন্য ডনদের মধ্যস্থতায় তাদের ভেতরে একটা শান্তি চুক্তি হয় । নিজেকেদের ভেতরে একটা বোঝাপোড়া করে নেয় তারা । তারপর থেকে দেশে বেশ শান্তি বিরাজ করছে । আগের মত আর গ্যাংওয়্যার হয় না । কবীর চৌধুরী নিজের অবস্থান আরও শক্ত করেছেন এই চার বছরে অন্য দিকে রহমতুল্লাহ বশিরের অবস্থা দিন দিন নিচের দিকে নামছে ।

নিকিতা অপুর দিকে তাকিয়ে দেখলো অপু মুখ শক্ত করে অন্য দিকে তাকিয়ে আছে । নিকিতা অপুর হাত ধরলো । তারপর বলল, চল একটু রাস্তা দিয়ে হেটে আসি ! এখানে অনেক মানুষ !
অপু নিকিতার দিকে তাকালো । তারপর বলল, আমি জানি না আমি কতদিন এখানে থাকতে পারবো ?

অপুর কন্ঠস্বর শুনে নিকিতার নিজেকে খানিকটা অপরাধী মনে হল । কেবল মাত্র ওর কারনে অপু এখানে এসেছে । কাজ টা কি সে ঠিক করেছে ?
নিকিতা বলল, তুমি চাইলে কালই চলে যেতে পারো এখান থেকে ! আমার জন্য থাকতে হবে না !
-নাহ ! সমস্যা নেই । এখানে থাকি ওখানে একই ব্যাপার আসলে ! যা গেছে তা গেছেই !

নিকিতা আরও একটু শক্ত করে অপুর হাত ধরলো ! এ হাত সে কোন ভাবেই ছেড়ে দেবে না !



পরদিন সকালে নাস্তার টেবিলে এসেই বেশ অবাক হয়ে গেল । গত রাতে বেশ রাত পর্যন্তই পার্টি চলেছে । পরের বাকিটা সময় অপুর সাথে ছাদে বসে ছিল । অনেক রাত পর্যন্ত গল্প করেছে তারা । রাতে আর অপু ওকে বাসায় যেতে দেয় নি ।
সকাল বেলা যখন নাস্তার টেবিলে এসে হাজির হল তখন অবাক হয়ে দেখলো সেখানে সবাই এসে হাজির !

এর আগে আরও একদিন সে এই বাসায় ছিল । এই বাসায় সকালের নাস্তা যে যার মত খেয়ে বের হয়ে যায় । দিপুর ঘুম থেকে উঠতে বেশ সকাল হয় । অন্য দিকে কবীর চৌধুরী ঠিক নটার মধ্যে নাস্তা খেয়ে অফিসের জন্য বের হয়ে যান । আগে অপু ছিল না । অপু আসার পর থেকে সেও নাস্তা খায় একা একা । কবীর চৌধুরী কিংবা দিপুর সাথে তার সময় মেলে না । কিন্তু আজকে সবাই এক সাথে নাস্তার টেবিলে হাজির হয়েছে । নিকিতা অবাক হয়ে লক্ষ্য করলো নাদিয়াও নাস্তার টেবিলে রয়েছে।
এই মেয়ে এখানে কি করছে !

নিকিতা দেখলো দিপুর মুখ তখনও গম্ভীর হয়েই আছে । সে মাথা নিচু করে খাবার প্লেটের দিকে তাকিয়ে আছে ! কবীর চৌধুরী নিকিতার দিকে তাকালো । তারপর বলল, বস ! আজকে অনেক পর সবাই এক সাথে নাস্তার টেবিলে বসেছি । ওদের মা যখন বেঁচে ছিল তখন সবাই কে এক সাথেই নাস্তা করতে হত ।
দিপু মুখ না তুলেই বলল, সবাই আর কোথায় ? দিপা তো নেই আমাদের সাথে !
নিকিতা প্রথমে ধরতে না পারলেও পরে বুঝতে পারলো দিপু কার কথা বলছে । দিপা হচ্ছে ওদের বড়বোন । স্বামীর সাথে লন্ডন থাকে ।
কবীর চৌধুরী বলল, দিবাও আসতো ! ওর বেবি হবে তাই আসতে পারে নি । যাই হোক ওর বেবি হলে আমরা আবার এক সাথে একটা গেট টুগেদার করবো !
দিপু এবার মাথা তুলে তাকালো কবীর চৌধুরীর দিকে । তারপর বলল, সেখানেও রহমতুল্লাহ বশিরকে দাওয়াত দিবে ?

নিকিতা দেখলো কবীর চৌধুরীর মুখ মুহুর্তেই শক্ত হয়ে গেল । তিনি ঠান্ডা চোখে তাকিয়ে রইলো নিজের বড় ছেলের দিকে । তবে সেই দৃষ্টি আস্তে আস্তে শান্ত হয়ে উঠলো । তারপর সে বলল, দিপু সকাল বেলা আমি এটা নিয়ে কথা বলতে চাই না ।
-না তা চাইবে কেন ! বলার দরকার নেই তো !
নিকিতা এবার খানিকটা অবাক হয়ে দেখলো কবীর চৌধুরীর কন্ঠ বেশ নরম হয়ে এল । সে বলল, আমি আরেকটা যুদ্ধ শুরু করতে চাই না । যা হারিয়েছে তা হারিয়েছেই । যুদ্ধ শুরু করলে সেটা ফিরে আসবে না ।

দিপু কিছু বলতে গিয়েও বলল না । অপুর চুপচাপ খেতে থাকলো । এই কথোপকথনে সে যুক্ত হতে চায় না ।
কবীর চৌধুরী অপুর দিকে তাকিয়ে বলল, তুমি কি তোমার বড় ভাইয়ের মত মনে কর ? আমার আরেকটা যুদ্ধ শুরু করা উচিৎ ?
অপু আরেকটু পরোটার টুকরোর মুখে দিতে দিতে বলল, আমি কিছু চাই না । কিছু মনে করিও না ।
দিপু এবার অপুর দিকে তাকিয়ে তীব্র কন্ঠে বলল, হাউ কুড ইউ নট রিএক্ট ?
অপু এবার খাওয়া বন্ধ করলো । তারপর একবার নিজের বাবা তারপর বড় ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বলল, লাভ কি ? রিএক্ট করে কি লাভ? যা ঘটেছে তার জন্য তো রহমতুল্লাহ বশির একা দায়ী না । হোয়াট গোউজ এরাউন্ড কামস এরাউন্ড !

মুহুর্তের ভেতরে খাবার টেবিলের পরিবেশ ভারী হয়ে উঠলো । কেউ কিছু সময় কোন কথা বলল না । নিকিতার এখানে কিছু বলার নেই ! দিপু নাস্তা শেষ না করেই টেবিল ছেড়ে উঠে গেল । সেই সাথে সাথে নাদিয়াও দিপুর পেছন পেছন চলে গেল !


####

রফিক আরমান নিকিতার দিকে কিছু সময় অবিশ্বাস নিয়ে তাকিয়ে রইলো । তারপর বলল, তুমি কি ঠিক বুঝতে পারছো আসলে তুমি কি বলছো ?
নিকিতা বলল, জি স্যার । খুব পরিস্কার ভাবে বুঝতে পারছি ।
-তুমি কি ভাবে নিশ্চিত হচ্ছো যে এই সব তথ্য সঠিক ?
-হতে বাধ্য ! আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন । এখন আমাদের এক সাথে রেইড চালাতে হবে !
রফিক আরমান বলল, এতো গুলোতে এক সাথে ?
-হ্যা একসাথে ! কারন এক টা একটা করে গেলে ওরা সব কিছু সরিয়ে ফেলবে । তখন লাভ হবে না । একই সাথে । আপনার পরিচিত আর বিশ্বের অফিসার দের নিয়ে কাজ গুলো করতে হবে । যদি সম্ভব হয় তাহলেই ওদের ধরা যাবে ?

রফিক আরমান কিছু সময় চুপ করে রইলেন । ঠিক যেন সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না । নিকিতা একেবারে কবীর চৌধুরীর বাসার ভেতরে ঢুকেছে তার অফিসের ড্রায়ার থেকে এই তথ্য নিয়ে এসেছে ।

মোট ১৩২টা ব্যাংক একাউন্ট নাম্বার আর ৩৭টা ঠিকানা । ঠিকানা গুলোতে কি কি আছে, সেটারও একটা লিস্ট ! কবীর চৌধুরী এমনি এমনি তো এইলিস্ট লিখে রাখবে না !
রফিক আরমান বলল, যদি কি না পাওয়া যায় তখন কি হবে বুঝতে পারছো ?
-জি স্যার ! আমি এর দায়ভার নিতে প্রস্তুত ! আপনি না হয় আমাকে সাপপেন্ড করে দিবেন !
অনেক সময় চুপ থেকে রফিক আরমান বলল, আচ্ছা ঠিক আছে । চল পরিকল্পনা করা যাক !



দশ

কবীর চৌধুরী পত্রিকার দিকে বেশ কিছু সময় ধরে তাকিয়ে আছেন । বড় বড় একটা সংবাদ ছাপা হয়েছে । গতকাল রাতে পুলিশ আর র‌্যাব মিলে বেশ বড় ধরনের একটা অভিযান পরিচালনা করেছে । মোট ৩৭টা স্থানে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে । এর ভেতরে থেকে ৩৫টা স্থান থেকে বিপুল পরিমান অবৈধ জিনিস পত্র উদ্ধার করা হয়েছে । সেই অবৈধ জিনিসপত্রের ভেতরে দেশী বিদেশী অস্ত্র থেকে শুরু করে ইয়াবা পর্যন্ত আছে । দেশের বেশ কিছু বড় বড় মানুষের সাথে সেই সমস্ত ঠিকানার সংযোগ পাওয়া গেছে । কঠোর নজরদারী রাখা শুরু হয়েছে । পত্রিকা থেকে আরও জানা যাচ্ছে যে সামনে আরও অভিযান পরিচালনা করার মত তথ্য তাদের হাতে আছে !

নিচে আরও একটু পড়তে যাবে তখনই হাসান খানিকটা তাড়াহুড়ো করে ঘরের ভেতরে প্রবেশ করলো । তার দিকে তাকিয়ে বলল, স্যার খবর তো ভাল না !
কবীর চৌধুরী হাসানের দিকে না তাকিয়ে বলল, কোন খবর ভাল না ?
-স্যার আপনি আজকে পত্রিকা পড়েন নি ? আমি গত রাতেই জানতে পেরেছি কিন্তু আপনাকে জানাতে সাহস হয় নি । আমাদের বেশ কয়েকটা গুডামে পুলিশের রেড পড়েছে !
-কেবল আমাদের ?
-জি না স্যার ! সবার ! সবার ক্ষতি হয়েছে । সব থেকে বেশি ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছে রহমতুল্লাহ ! তার বলতে গেলে সব মজুত মাল পত্র পুলিশ জব্দ করে ফেলেছে । সব থেকে বড় ভয়ের কথা হচ্ছে ব্যাংক একাউণ্টের খোজ পেয়ে গেছে ওরা । দেশের ভেতরে যত গুলো ব্যাংক একাউন্ট ছিব গুলোর অডিট এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে !
-আমাদের কত গুলো ?
-আমাদের বেশি না ! টাকার হিসাবে কোটি খানেক হবে !
কবীর চৌধুরী বলল, যা ধরা পড়েছে তা দিয়ে আমাদের কাছে পৌছাতে পারবে ?
হাসান কিছু সময় চিন্তা করলো । তারপর বলল, মনে হয় পারবে না । যাদের নামে ছিল তারা আপনার নাম কোন দিন নিবে না । আর নিলেও উকিল সাহেব সেটা সামলে নেবে ! তবে অন্যান্যদের অবশ্য বেশ খারাপ । ওরা স্যার আপনার সাথে দেখা করতে চাচ্ছে !
-আচ্ছা মিটিংয়ের ব্যবস্থা কর ! আর সেই সাথে নিকিতার উপর নরজ রাখার ব্যবস্থা কর । তার উপর হামলার একটা আংঙ্কা করছি আমি । সেটা থেকে তাকে রক্ষা করা যেন হয় !

হাসান খানিকটা অবাক হয়ে তাকালো কবীর চৌধুরী দিকে । তবে কোন কথা বলল না । সে জানে এখানে কোন কথা বলা যাবে না । কবীর চৌধুরী যাই করুক না কেন নিজের পরিবার সম্পর্কে সে সব সময় খুব সচেতন । এমন কি যখন অপু তার থেকে দুরে ছিল সে সব সময় অপুর নিরাপত্তার দিকে কঠিন নজর রেখেছিলেন । নিকিতা যতই তার ক্ষতি করুক, সে অপু বন্ধু, কাছের মানুষ ।
এই ব্যাপারটা অন্যেরা কিভাবে নেমে সেটা হাসান জানে না । যদিও তাদের ভেতরে একটা চুক্তি ছিল যে যত বড় ক্ষতিই হোক না কেন যুদ্ধ সব সময় রাজায় রাজায় হবে । কোন ভাবেই রাজার পরিবার পরিজনের উপরে কোন হামলা হবে না ।

হাসান দাড়িয়ে আছে দেখে কবীর চৌধুরী বলল, আরও কিছু বলবে ?
-জি স্যার !
কিন্তু কথাটা সে কিভাবে বলবে সেটা বুঝতে পারলো না । একটু ইতস্তত করতে লাগলো । তারপর বলল, স্যার দিপু স্যার গতকাল রাতে দেশের বাইরে গেছে । এই সব কিছু শুরুর আগেই !
কবীর চৌধুরী বলল, এটা আমি জানি ।
দিপু ওর বড় আপুর কাছে গেছে । পার্টির ঐ দিনকার পর থেকে দিপুর মনমেজাজ বেশ খারাপ ছিল । সেটার জন্যই কবীর চৌধুরী নিজেই ওকে ওর বড় আপার কাছ থেকে বেরিয়ে আসছে বলেছে ।
-এতে কি সমস্যা ?
হাসান একটু থেমে বলল, নাদিয়া ম্যাডামও তার সাথে গেছে !

কবীর চৌধুরী এবার একটু চমকে গেলেন । এটা তিনি কোন ভাবেই আশা করেন নি । নাদিয়াকে সেদিন ডেকে তিনি বলেছিলেন যে অপুর কথা । নাদিয়াকে তার পছন্দ এটাও সে বলেছিলো । আর বলেছিলো যে ঐ পুলিশ অফিসারকে যেন অপুর কাছ থেকে দুরে নিয়ে যায় । তাহলে আর কোন সমস্যা থাকবে না । তিনি বলেছিলেন যে অপুর আশে পাশে থাকার চেষ্টা করতে । কিন্তু বদ মেয়ে যে এই কাজ করে ফেেলবে সেটা তো তিনি ভাবেননি । আর দিপু বেকুকটা কি একবারও অন্য চিন্তা করেন নি । এই মেয়ে তার ছোট ভাইয়ের প্রেমিকা ছিল এক সময় । সেই মেয়ের সাথে ঘোরাঘুরি করছে !
হাসান বলল, আপনি জানেন দিপু স্যার মেয়েদের ব্যাপারে কতটা রক্ষনশীল । তাদের ধাকে কাছে আসতে দেয় না !

এটা কবীর চৌধুরী খুব ভাল করেই জানে । বলতে গেলে এই দিকটা তার খুব বেশি পছন্দ । পুরুষ মানুষের টাকা আর ক্ষমতা থাকলেই যে ব্যাপারটার দোষ থাকে সেটা হচ্ছে মেয়ে মানুষের দোষ ! প্রচুর টাকা আর ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও তিনি সারা জীবন একজন নারীর প্রতি বিশ্বত্ব থেকেছে । অন্য কোন মেয়ের দিকে কোন দিন ফিরেও তাকায় নি । দিপুও ব্যাপারটাও ঠিক সেই রকম । সে তার মনের মত মানুষ খুজছিলো । তার আগে সে কোন মেয়ের সাথে বিন্দু মাত্র অনৈতিক কাজ কর্ম করে নি । তাই বলে নিজের ছোট ভাইয়ের প্রেমিকাকে সে তার মনের মানুষ নির্বাচন করবে ?
হাসান বলল, দিপু স্যার মনে হচ্ছে নাদিয়ার ব্যাপারে খুব বেশি সিরিয়াস ! ঐদিন রাতে আপনি তো ছিলেন না দিপু স্যার সামনে ! তাকে কেউ সামলাতে পারছিলো না । শেষে নাদিয়া ম্যাডাম তাকে সামলেছে ।
কবীর চৌধুরী আর কিছু ভাবলেন না । এখন অবশ্য এটা নিয়ে চিন্তা করার সময় নয় । আগে বর্তমান সমস্যা নিয়ে ভাবতে হবে । সে আবারও হাসানের দিকে তাকিয়ে বলল, আচ্ছা মিটিংয়ের ব্যাবস্থা কর ! এসব নিয়ে পরে ভাবা যাবে !

বিকেল বেলা কবীর চৌধুরী নিজেই অপুর রুমে গিয়ে হাজির হলেন । অপু তখন বাইরে যাওয়ার পরিকল্লনা করছিলো । এখানে সে থাকে ঠিকই তবে এখনও সে আগের কাজ গুলোই করে । কবীর চৌধুরীকে কে ঘরে ঢুকতে দেখে সে খানিকটা অবাক হল । এই বাসায় ফিরে আসার পর কবীর চৌধুরীর সাথে তার খুব একটা কথা হয় নি ।

কয়েকটা মুহুর্ত চুপচাপ কেটে গেল । ঘরের ভেতরে অস্বস্তিকর পরিবেশ বিরাজ করলো কিছু সময় । তারপর কবীর চৌধুরী বলল, নিকিতাকে আমার কথা শুনবে না । তোমার কথা হয়তো শুনবে !
অপুকে কিছু জিজ্ঞেস করা হয় নি । অপু চুপ করে রইলো । কবীর চৌধুরী বলল, ও যা শুরু করেছে সেটা তো জানোই । দেখতেই পাচ্ছো ? তোমাকে কিছু বলেছে ?
অপু বলল, আমি ওকে ওর কাজে বাঁধা দিতে পারবো না । বন্ধ করতেও বলবো না ।
-আমি সেটা করতে বলছি না । ওকে সাবধান থাকতে বল । আমার কাছে ব্যবসার থেকে আমার পরিবার বড় ! কিন্তু অন্যেরা এমনটা নাও ভাবতে পারে । তাকে সাবধান থাকতে বল । আমি বললে ব্যাপারটা অন্য রকম হবে ! তুমি বললেই বরং ভাল হবে !

কবীর চৌধুরী আর কিছু না বলে রুম থেকে চলে গেছে । তার মুখ একটু চিন্তিড় । আজকে দুপুরে অন্য সব বড় বড় ডনদের সাথে একটা জরুরী মিটিং করে সে এসেছে । মিটিং এ সবাই বেশ অসন্তুষ্ট ছিল। বিশেষ করে রহমতুল্লাহ তো পাগল প্রায় হয়ে গেছে । পালকা কুকুরের মত আচরন করছিলো । এইবারের অভিযানে তার সব থেকে বড় ক্ষতি হয়েছে । আর বাকি সবারই কম বেশি ক্ষতি হয়েছে ।

পুলিশ কিভাবে এতো কিছু জেনে গেল ! এই প্রশ্নটা সবার মনে ! কবীর চৌধুরীর বাসায় নিকিতা আসার পর থেকে এমনটা ঘটেছে । সবার মনে এই সন্দেহটা ঠিকই আছে তবে কেউ সেটা বলতে সাহস পাচ্ছে না । কারন অভিযানে কবীর চৌধুরীরও বেশ বড় পরিমান অর্থ আর মালামাল ধরা পড়েছে ।
একজন বলল, ঐ পুলিশ অফিসারকে থামাতে হবে !
রহমতুল্লহ বলল, কবীর তুমি থামাও নয়তো আমি থামাবো ! আর আমার থামানোর পদ্ধতি তোমার পছন্দ নাও হতে পারে !
কবীর চৌধুরী ঠান্ডা চোখে কিছু সময় তার দিকে তাকিয়ে থেকে বলল, আপনারা নিজেদের মত চেষ্টা করুন আমি আমার মত করছি । কিন্তু সে শুনবে বলে মনে হয় না । আমার পেছনে সে যেভাবে লেগেছে আমার শেষ না দেখে সে থামবে না !
-তাকে তাকে চিরোতরে থামিয়ে দিন !

কবীর চৌধুরী বলল, আমাদের ডিলের কথা ভুলে যেও না । নো ফ্যামিলি ইনভল্ভড ! নিকিতা আমার যত বড় ক্ষতি করুক মনে রাখবে যে সে আমার ছেলের বউ হতে চলেছে । তাকে ঢাকা থেকে বদলি করার ব্যবস্থা করে দাও, তার চাকরি খেয়ে দাও কিংবা অন্য যা কর কিন্তু অন্য কোন ক্ষতি না । নয়তো তার সাথে আমার সরাসরি যুদ্ধ শুরু হবে । আর একবার আমি যুদ্ধ শুরু করলে কি হবে সেটা তোমরা সবাই জানো !
শেষ কথাটা যে রহমতুল্লাহ বশিরকে উদ্দেশ্য করে বলা হল সেটা বুঝতে কারো বাকি রইলো না !

তার পরেও কবীর চৌধুরী কেন জানি ঠিক নিশ্চিত হতে পারছেন না । তার মনে হচ্ছে যে রহমতুল্লাহ ঠিকই কিছু করবে ! হাসানকে আরও ভাল ভাবে নির্দেশ দিলেন যে নিকিতার দিকে খেয়াল রাখা হয় !



নিকিতা অফিসে ঢুকতেই রফিক আরমানকে দেখে খানিকটা অবাক হলেন । অপুর সাথে দেখা করতে গিয়েছিল সে । রাতের ফেরার সময় অফিসে একবার ঢু মেরে যেতে ইচ্ছে ছিল । সেটা করতে গিয়েই রফিক আরমানকে দেখতে পেল অফিসে ! সে কত সময় থেকে তার অফিস রুমে বসে আছে কে জানে !
-স্যার আপনি ? আমাকে বলতেন আমি চলে যেতাম !
রফিক আরমান হাসলেন ! তারপর বললেন, না এটা অফিশিয়াল ভিজিট নয় !
-ও আচ্ছা ! চা দিতে বলি ?
-না ! আমি এখনই বের হয়ে যাবে ! যা বলতে এসেছি ! তোমার সোর্স খুবই হইচই ফেলে দিয়েছে দেখতেই পাচ্ছো !
নিকিতা হাসলো । রফিক আরমান বললাম, আমি আসলে তোমাকে ভুল বুঝেছিলাম । এই জন্য আমার সরি বলার আছে । যাই হোক দুঃসংবাদ হচ্ছে তোমার বদলি হতে যাচ্ছে !
-কি !
-হ্যা ! খবর পেয়েছি তোমাকে ট্রাফিকে বদলি করা হবে ! তার মানে বুঝতেই পারছো যে কি ঝড় তুমি তুলেছো !
নিকিতার মন একটু খারাপ হল । আরও কিছু দিন সময় পেলে কাজটা হয়েই যেত । ও ভেবেছিলো কবীর চৌধুরী তাকে আর যাই করুক বদলি করবে না । বদলি করা মানেই হচ্ছে ওর সাথে না পেরে উঠে তাকে মাঠ থেকে সরিয়ে দিচ্ছে । এটা ঠিক তার চরিত্রের সাথে যায় না !

নিকিতা বলল, তাহলে কবে দায়িত্ব ছাড়তে হবে !
রফিক আরমান বলল, এখানেই তো মজার ঘটনা !
-মানে ! উপর মহল থেকে তোমার বদলির আদেশ চলেই এসেছিলো । কিন্তু মাঝ পথে সেটা আবার থেমে গেছে !
নিকিতা কিছু বুঝতে পারলো না ।
-আমি স্যার কিছুই বুঝতে পারছি না ।
-মানে হচ্ছে একটা দল চাচ্ছে তুমি এখান থেকে চলে যাও আরেকটা দল চাচ্ছে তুমি না যাও । এখন আসলে কে কোনটা করছে সেটাই বুঝতে পারছি না । তবে তোমার বদলির অর্ডার যদি চলেই আসে সেটা আমার হাতে আসবে সবার আগে । আমি সেটাকে আরও দিন পনের ঠেকিয়ে রাখতে পারবো আশা করি ! এই সময় পারবে না সব কাজ শেষ করতে !

নিকিতা হাসলো । খুব পারবো স্যার ।



শেষ পর্ব
মাত্র এক সপ্তাহের ভেতরে নিকিতা এবং টিমকে পুরো দেশের মানুষ চিনে ফেলল তাদের কাজের জন্য । এই এক সপ্তাহের ভেতরে সত্যিই নিকিতার তার কাজ সমাধান করে ফেলল । যদিও সে যেমনটা চেয়েছিলো তার পুরোটুকু করতে পারে নি । কবীর চৌধুরী বাদ দিয়ে মোটামুটি অন্য সব ডনদের কে একেবারে গোড়া থেকে তুলে ফেলতে সক্ষম হল । ঐদিনের পর আবারও সে অপুদের বাসায় গিয়ে হাজির হয়েছিলো । সেদিন রাতের বেলা কবীর চৌধুরী বাসায় ছিলেন না । রাতের বেলা কবীর চৌধুরী কম্পিউটারে হামলা করে সে । একটা হ্যাকিং সফটওয়্যার ঢুকিয়ে দেয় । তারপর নিজের ল্যাপটপ থেকে কবীর চৌধুরীর পুরো কম্পিউটারটা পুরো চষে বেড়াতে থাকে । পেয়েও যায় যা সে খুজছিলো । বেশ কিছু ইমেল ব্যাংক হিসাব আর গুদামের খবর !

কিন্তু সমস্যা হচ্ছে কবীর চৌধুরী খুবই ধুরন্ধার মানুষ । তার অবৈধ সব কিছুর সাথে তার লিংক খুজে বের করা একটু কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে ওর জন্য । মালামাল গুলো সব টাকা পয়সা ঠিকই ধরতে পারছে কিন্তু কবীর চৌধুরীর সাথে সেগুলোর সংযোগ স্থাপন করতে পারছে না । বাকিদের বেলায় এটা হচ্ছে না ।অন্যান্য সবার ক্ষেত্রেই সে কঠিন প্রমান সহই সব কিছু ধরতে পারছে !

প্রতিদিন খবরে আর পত্রিকাতে এসব সংবাদ ছাপা হতে থাকলো । প্রতিদিনই নতুন নতুন মানুষ ধরা পড়তে শুরু করলো । মানুষজন নিকিতার কাজ কর্ম সম্পর্কে জানতে শুরু করলো ।


তবে প্রতিদিন নিকিতা যত ব্যস্তই থাকুক না কেন একটা কাজ সে নিয়মিত করতো । সেটা হচ্ছে অপুর সাথে সে দেখা করতো । দুজন মিলে কিছু সময় গল্প করতো । নিকিতার সাথে অপুর সম্পর্কটাই এখন এমন হয়ে গেছে । নিকিতা এবার ঠিকই করে রেখেছে যে এই ঝামেলা শেষ হলেই অপুকে বিয়ের কথা বলবে । যদিও ততদিনে ও আশা করছে যে কবীর চৌধুরীকে সে ১৪ শিকের পেছনে পাঠাতে পারবে ।

আজকেও সন্ধ্যার সময় নিকিতা অপুর সাথে বসে গল্প করছিলো ধানমন্ডির একটা রেস্টুরেন্টে । এক কোনায় বসে দুজন অনেকটা সময় গল্প করছিলো । রাত তখন প্রায় বারোটা বাজতে চলেছে । আরেকটু পরেই রেস্টুরেন্ট টা বন্ধ হয়ে যাবে ।

অপু বলল, চল ওঠা যাক । তোমাকে বাসায় দিয়ে আসি !
নিকিতা অপুর দিকে তাকিয়ে বলল, শুনো আমি পুলিশ অফিসার ! আমারই বরং তোমার বাসায় পৌছে দেওয়া উচিৎ, তোমার না !
অপু বলল, অন্য সময় হলে তাই হত । কিন্তু এখন ব্যাপারটা অন্য রকম ! তুমি যত সময় আমার সাথে আছো ততক্ষন তোমার উপরে কিছু হবে না ! বুঝতে পেরেছো !




রহমতুল্লাহ বেশ কিছু সময় ধরে ফোনের সামনে বসে আছে । একটা খবরের জন্য অপেক্ষা করছে । একটু চিন্তিতবোধ করছে সে ।
আজকে আরেকবার চেষ্টা চালানো হবে । মোট তিন স্থানে লোক ঠিক করা হয়েছে । রেস্টুরেন্টের ভেতরে । পার্কিং এ আর আর ঠিক গেটের বাইরে ।

সমস্যা হচ্ছে পার্কিং আর গেটের কাছে ঠিক মত সুবিধা করতে পারবে না ওরা । পার্কিংএ সম্ভবত নিকিতা আহমেদ যাবেই না । ড্রাইভারকে বলবে গাড়ি নিয়ে আসতে । আর গেটের কাছে আক্রমনটা নির্ভর করছে ওরা কত সময় গেটে অপেক্ষা করে সেটার উপর । যদি বের হওয়ার আগেই গাড়ি সামনে এসে হাজির হয় তাহলে কোন কাজই হবে না । নিকিতা আহমেদকে খোলা অবস্থায় আর পাওয়া যাবে না ।
কেবল বাকি থাকলো রেস্টুরেন্টের ভেতরে । সেখানেও একটা বড় সমস্যা রয়েছে ।
অপু !
কবীর চৌধুরীর ছেলে ।

এই ছেলেটার কারনে এতো দিনে নিকিতাকে কিছু করা সম্ভব হয় নি । ছেলেটা যেন আঠার মত নিকিতার সাথে লেগে থাকছে । নিকিতা আহমেদ হয় তাদের অফিসারদের সাথে থাকছে নয়তো এই ছেলের সাথে । কোন ভাবেই নিকিতাকে একা পাওয়া যাচ্ছে না । আজকে অবশ্য স্যুটারদের কঠিন নির্দেশ দেওয়া হয়েছে । অপু থাকলেও হিট করতে হবে । যথা সম্ভব সাবধানে । অপুর যেন কোন ক্ষতি না হয় ।

ফোনের দিকে তাকিয়েই আছে সে । একটু চিন্তিত বোধ করছে ! রহমতুল্লাহ বশিরের আসলে আর কোন পথ খোলা নেই সামনে । সে খুব বেশি চেষ্টা করেছে নিকিতাকে থামানোর । কিন্তু সেটা সম্ভব নি । ওর জানা মতে ওকে ট্রাফিকে ট্রান্সফার করা হয়ে গেছে । কিন্তু সেই ফাইল কোথাও আটকে গেছে । কোথায় আটকে আছে সেটা কেউ বের করতে পারছে না । নিকিতা যেভাবে এগোচ্ছে কাল পরশুর ভেতরেই রহমতুল্লাহর দরজাতে সে পুলিশ নিয়ে পৌছে যাবে । কোন ভাবেই তাকে ঠেকানো যাবে না । এটা সে জানে । এখন এক মাত্র পথ হচ্ছে নিকিতাকে সরিয়ে দেওয়া ।

নিজে বাঁচতে সব কিছু করা যায় । এখনও নিকিতার সাথে অপুর বিয়ে হয় নি । রহমতুল্লাহ মনে করে কবীর চৌধুরীর সাথে তার কোন সম্পর্ক এখনও তৈরি হয় নি । সে যতই হুমকি দিক, নিকিতাকে সরিয়ে দিলেও ডিল ভাঙ্গা হবে না । সে মোটেও ডিল ভাঙ্গতে চায় না । শক্তিতে এখন কবীর চৌধুরীর সাথে সে কোন ভাবেই পারবে না । তবে আলোচনা করে আর বুদ্ধিতে এই হত্যাকে সে জায়েজ করতে পারবে বলে আশা রাখে । সেটার জন্যই সে এই পদক্ষেপ নিয়েছে ! তিনি আজকেই কিছু একটা সংবাদের আশা করছেন !


অপু আবারও বলল, এবার যাওয়া দরজার ! রাত হয়ে যাচ্ছে ।

এই বসে সে শেষ বারের মত পানির গ্লাসটা তুলে ধরলো পানি খাওয়ার জন্য । গ্লাসে রিফ্লেক্সশন দেখেই তার চোখ বড় বড় হয়ে গেল । রেস্টুরেন্ট এমনিতেই বেশ নিরব হয়ে গেছে । মোটামুটি সাড় দশটার পর থেকে এখানে মানুষ আসা বন্ধ করে দেয় । তারপর যারা আগে এসেছে তারাও আস্তে আস্তে চলে যেতে থাকে । মানুষজন ছিল না বলতে গেলে চলে । ওরা ডান দিকের কোনার দিকে একটা টেবিলে বসেছিলো । বা দিকে ওদের তিন টেবিল পেছনে এক কাপল বসে ছিল অনেক সময় ধরে । নিজেদের ভেতরেই গল্প করছিলো । অপুর অপুর সেদিকে তাকিয়ে এমন কিছু মনে হয় নি । কাপল বলেই সম্ভবত দ্বিতীয়বার তাকানোর প্রয়োজন মনে করে নি । কিন্তু মেয়েটির কোমর থেকে যখন পিস্তল বের করতে দেখলো তখন ওর চোখ কেবল বড় বড় হয়ে গেল । ও পরিস্কার বুঝতে পারছিলো মেয়েটি কি করতে যাচ্ছে !
প্রতিক্রিয়া দেখাতে ওর মাত্র কয়েক মুহুর্ত লাগলো । ও আর কিছু চিন্তাই করলো না । ঠিক গুলোর আওয়াজ হওয়ার আগ মুহুর্তে টেবিলের উপর দিয়েই নিকিতার দিকে লাফ দিলো । ওকে পুরো পুরি আড়াল করে দেওয়ার চেষ্টা করলো !

নিকিতা নিজের ফোনের দিকে তাকিয়ে নিচ্ছিলো শেষ বারের মত । এখনই উঠবে ওরা । ফোনটা পকেটে ভরতে যাবে তার আগেই দেখতে পেল অপু টেবিলের উপর দিয়েই ওর দিকে ছুটে আসছে । প্রথমে ও কিছুই বুঝতে পারলো না । কিন্তু তার পরপরই গুলির আওয়াজটা হল !

একবার দুইবার তিনবার !

নিকিতা অপুকে নিজের শরীরের উপরে অনুভব করতে পারলো । ততক্ষনে ওর হাতে পিস্তল চলে এসেছে । পিস্তলটা তুলে ও উপরেই গুলি চালালো স্যুটারদের ভয় দেখানোর জন্য । ও সিটের আড়ালে চলে এগেছে । তাদের দেকতে পাচ্ছে না । কেবল জানান দেওয়ার চেষ্টা যে ওর কাছে পিস্তল আছে । এদিকে এলে গুলি খেতে হবে !

তখনই অনুভব করলো ওর কাধের কাছে একটু ভেজাভেজা ঠেকছে !
উষ্ণ রক্তের ছোয়ায় ভিজে গেছে গেছে ওর কাধটা !

বুকের মাঝে একটা তীব্র একটা তীব্র অনুভূতির সৃষ্টি হল । ওর গুলি গালে নি । তার মানে অপুর শরীরে গুলি গেলেছে !

আর দেরি করতে করতে চাইলো না । অপুকে খানিকটা সরিয়ে দিল নিজের উপর থেকে। তারপর তাকালো ওর চেহারার দিকে । তীব্র বেধায় ওর মুখটা কুঁচকে গেছে ! তারপর মাথা তুলে একটু দেখার চেষ্টা করলো ।
রেস্টুরেন্টের ভেতরে কেউ আছে কি না !

নাহ ! কেউ নেই ! যারা ছিল তারা মাটিতে শুয়ে আছে !

নিকিতা অপুর দিকে তাকিয়ে বলল, অপু !
অপু কোন আওয়াজ বের করতে পারলো না মুখ দিয়ে !
নিকিতা আবারও চিৎকার করে ডাক দিলো ! অপু ! নো নো আমাকে ছেড়ে যাবে না তুমি ! অপু !

নিকিতার কেবল মনে হল অপুকে এখনই হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে ! এখনই ওর ভেতনে কিসের শক্তি ভর করলো নিকিতা সেটা নিজেও বলতে পারবে না ! অপুকে কাধে তুলে নিল ! অপুকে এখন হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে সবার আগে !



রহমতুল্লাহ ভেবেছিলো যে রাত টুকু সময় পাবে সে । কবীর চৌধুরীর কাছে খবর পৌছালেও সকালের আগে সে কিছু করবে না । এভাবে ঝামেলা হয়ে যাবে সেটা সে ভাবে নি । লক্ষ্য ছিল কেবল মাত্র নিকিতা আহমেদ কিন্তু অপু যে মাঝে খান দিয়ে এভাবে চলে আসবে সেটা ভাবতেও পারে নি । কিন্তু এখন এসব ভেবে লাভ নেই । আপাতত গা ঢাকা দিতে হবে । নয়তো কবীর চৌধুরীর হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে না । সে ভোর বেলাতেই বর্ডার ক্রস করার জন্য বের হতে যাচ্ছিলো কিন্তু সেই সুযোগ সে পেল না । রাত চারটার সময় কবীর চৌধুরী নিজে তার বাসায় এসে হাজির হল । রহমতুল্লাহর ঠিক কপাল বরাবর একটা গুলি ঢুকিয়ে দিল ।

কবীর চৌধুরী যখন দ্বিতীয়বার হাসপাতালে পৌছায় তখন ভোর হয়ে গেছে । প্রথম এসে হাজির হয়েছিলো খবর পাওয়ার সাথে সাথেই । নিকিতা কিছু সময় আগেই অপুকে নিয়ে হাসপাতালে এসেছে । কবীর চৌধুরী খানিকটা অবাকই হয়েছে এটা দেখে যে মেয়েটা মোটেও গাড়ির জন্য অপেক্ষা করে নি । অপুর সাথে যে গার্ড থাকতো ওদের কাছ থেকে জানতে পেরেছে যে মেয়েটা ওকে কাধে করে নিয়েই হাসপাতালে পৌছেছে । রেস্টুরের কাছেই একটা হাসপাতাল ছিল । নিকিতা নাকি কেবল উদভ্রান্তের মত দৌড়াচ্ছিলো অপুকে কাধে নিয়ে ! একটা মেয়ে যে এই ভাবে দৌড়াতে পারে সেটা নিজের চোখে না দেখলে ওরা বিশ্বাস করতে পারতো না ! হাসপাতালে পৌছে দিয়েই নিকিতা তার জ্ঞান হারিয়ে ফেলে । এতো তীব্র পরিশ্রম তার সহ্য হয় নি ! ছতনা হারানোর আগে নিকিতা পাগলের মত চিৎকারে বলছিলো যে ওর অপুকে বাঁচাও !
তারপর অল্প কিছু সময় পরেই কবীর চৌধুরী পৌছায় হাসপাতালে । বাকি ব্যবস্থা সেই করে । হাসপাতাল থেকে বের হওয়ার আগে নিকিতার বেডের সামনে একটু গিয়ে হাজির হয় ! এই প্রথমবারের মত মেয়েটার জন্য তিনি মায়া অনুভব করেন !

কবীর চৌধুরী যখন দ্বিতীয়বার হাসপাতালে পৌছালেন নিকিতা রক্তমাখা শার্ট পরেই অপারেশ থিয়েটারের সামনে বসে আছে । চোখে শান্ত দৃষ্টি । কবীর চৌধুরীর দিকে একবার আবারও নিচের দিকে তাকালো । কবীর চৌধুরী নিকিতার পাশে গিয়ে সবলো । তারপর তার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল, ভয় পেয়েয়ো না । তোমার অপুর কিছু হবে না !

নিকিতা আবারও কবীর চৌধুরীর দিকে তাকালো । নিকিতাও এই প্রথমবারের মত কবীর চৌধুরীকে ঘৃণা করতে পারলো না ।


পরিশিষ্টঃ

-তুমি কি মনে কর আমি এতোই বোকা ?
নিকিতা কোন কথা না বলে কেবল হাসলো । সে জানে কবীর চৌধুরীর মত চালাম মানুষ আর নেই । কবীর চৌধুরী বলল। ঐদিন যে তুমি কেবিনে ঢুকেছিলে সেটা আমি জানি না ভেবেছো ?
অপু তখন ওর বড় ভাইয়ের প্রথম ছেলেকে কোলে নিয়েছে !
না, দিপুর বিয়ে নাদিয়ার সাথে হয় নি । লন্ডনে গিয়ে নাদিয়া আর ফেরৎ আসে নি । ওখানে আরেকজনকে খুজে পেয়েছে সে। দেশে আর আসে নি সে । দিপুর বিয়ে পারিবারিক ভাবেই হয়েছে ।
অপু বলল, ড্যাড তুমি কি ভেবেছো নিকিতা এটা জানে না ? ও আগে থেকেই জানে ! কিন্তু লাভ যেহেতু হচ্ছিলো তাই কোন কথা বলে নি । কাজের কাজ তো হচ্ছে !
নিকিতা বলল, তবে আমি কিন্তু আপনার পিছু ছাড়ছি না কোন ভাবেই !
কবীর চৌধুরী হাসতে হাসতে বলল, ছেড়ো না ! আমি চাই ও না তুমি ছাড়ো ! যেদিন প্রমানসহ হাজির হবে সেদিন তোমার গাড়িতেই হাজতে যাবো আমি !

নিকিতা এগিয়ে গেল দিপুর ছেলের দিকে । দিপু তার বউকে নিয়ে এখনও ঘর থেকে বের হয় নি । দিপুও ঠিক কবীর চৌধুরীর মতই বউ পাগল হয়েছে । ওদের বিয়ে হয়েছে প্রায় দুই বছর পার হয়ে গেল । এখনও বউয়ের আচল ছাড়া চলে না । অবস্য দিপুকে দোষ দিয়ে লাভ নেই । অপুটাও ঠিক একই রকম । যদিও ওদের এখনও বিয়ে হয় নি তবে নিকিতা জানে যে বিয়ের পরে অপুও ঠিক একই রকম হবে !

নিকিতার এখনও ভাবলে কেমন অবাক লাগে ! সামনে বসে এই গ্যাংস্টার মানুষটার সাথে তার চমৎকার সম্পর্ক হয়ে ওঠেছে । কবীর চৌধুরী তাকে পরিপূর্ন স্বাধানতা দিয়েছে তার ব্যাপারে সব খোজ খবর চালাতে । কোন প্রকার বাধা সে দিবে না । এও বলেছে যে নিকিতা কোন দিন কিছু খুজে পাবে না ! নিকিতা সেই চ্যালেঞ্জ গ্রহন করেছে । দুই বছর হতে চলল এখনও কিছুই খুজে পায় নি যেটা দিয়ে সে কবীর চৌধুরীকে আটকাতে পারে ! অবশ্য ঐ ঘটনার পরে দেশে আশ্চর্যজনক ভাবে ক্রাইমরেট কমে এসেছে । তবে বন্ধ হয়ে যায় নি । খুব গোপনে চলছে । নিকিতা আশা একদিন সেটা সে বন্ধ করবেই ।

মন্তব্য ১৬ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৯ দুপুর ১:৪০

রাজীব নুর বলেছেন: কবির চৌধুরী আসলেই হিরো।
নিকিতা তার সমস্ত বুদ্ধি দিয়ে চৌধুরী সাহেবের সাথে পারলো না।
নিকিতাসহ তার পুরো টিমকে দেশের মানুষ তাদের কাজ দিয়েই চিনতে পেরেছে।

০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ৯:৩১

অপু তানভীর বলেছেন: আপনার ধারনাই সঠিক । কবীর চৌধুরী লোকটা খারাপ না !

২| ০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৩:১৭

খাঁজা বাবা বলেছেন: ভাল লেগেছে :)

০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ৯:৩২

অপু তানভীর বলেছেন: ধন্যবাদ

৩| ০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৪:২৪

জুল ভার্ন বলেছেন: ভালো লেগে। তবে এতো দীর্ঘ লেখা না দিয়ে আরো দুই পর্ব বাড়ানো হলে পড়ায় ধৈর্য হারাতো না
শুভ কামনা।

০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ৯:৩৩

অপু তানভীর বলেছেন: আমার কাছেও তাই মনে হয়েছিলো যে একবারে না দিয়ে আরেকটা পর্ব বেশি বানালে ভাল হত !

ধন্যবাদ ভাই ।

৪| ০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৫:১২

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন:
কবির চৌধুরী, সুপারস্টার নায়ক ।
নিকিতা, একটি পরিবারের পারস্পরিক মিলনের সেতুবন্ধন।

কবির চৌধুরীর ভালবাসা এবং তার পরিবারের সদস্যের প্রতি আনুগত্যের জন্য তিনি প্রশংসনীয় ।
বরাবরের মতই দুর্দান্ত ।

০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ৯:৩৪

অপু তানভীর বলেছেন: ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য :)

৫| ০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:৩৫

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: বাহ!

যেন একটা সিনেমা দেখে উঠলাম ;)

+++

০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ৯:৩৪

অপু তানভীর বলেছেন: কঠিন ব্লগীয় সিনেমা !! ;)

৬| ০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ১০:৩১

রাজীব নুর বলেছেন: আমি পরিচালক হলে দারুন একটা মুভি বানিয়ে ফেলতাম আপনার গল্প দিয়ে।

০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ১০:৩৭

অপু তানভীর বলেছেন: হয়ে উঠুন । মানুষ চাইলে কি না পারে !

৭| ০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৯ সকাল ৯:৩৩

রাজীব নুর বলেছেন: লেখক বলেছেন: হয়ে উঠুন । মানুষ চাইলে কি না পারে !

দোয়া করবেন।
আসলে শেষমেষ দরিদ্র মানুষদের কোনো ইচ্ছাই পূর্ন হয় না।

০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৯ সকাল ১০:৪২

অপু তানভীর বলেছেন: দোয়া রইলো !

৮| ০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৯ সকাল ৯:৪৯

নীল আকাশ বলেছেন: শেষ পর্ব ভালো লেগেছে।

০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৯ সকাল ১০:৪৩

অপু তানভীর বলেছেন: ধন্যবাদ পড়ার জন্য

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.