নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

www.oputanvir.com

অপু তানভীর

আমার চোখে ঠোঁটে মুখে তুমি লেগে আছো

অপু তানভীর › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পঃ কোয়ারেন্টাইনের দিন গুলোতে প্রেম

২০ শে মার্চ, ২০২০ রাত ৮:৩২

দরজাতে কত সময় ধরে বেল বাজছে কে জানে ? আমি কোন মতে চোখ খুলে তাকালাম । বালিশের পাশে মোবাইলটার দিকে তাকিয়ে দেখি সবা মত্র ৭টা বাজে !
মেজাজটা খারাপ হল । এই সকাল বেলা কে এল এখানে ?

পুরো শহরে লক ডাউন করা হয়েছে । করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতেই মূলত এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে । সবার বাইরে বের হওয়ার উপর এক প্রকার নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে । বলা হয়েছে যে দরকার ছাড়া কেউ যেন বাইরে বের হয় । আর আমার কাছে কারো দরকার থাকতে পারে না । তাও আবার এই সকাল বেলা । সরকারের আদেশ অমান্য করে কে বাসায় ?

এই আইন অমান্যকারীকে আজই জেলে দেওয়া উচিৎ ।
আরও দুবার বেল বাজলো ! বিরক্ত হয়ে উঠলাম । এই লোক আমার দেখা না পেয়ে যাবে না বুঝ যাচ্ছে । কি আর করা !
হাই তুলতে তুলতে উঠলাম । দরজা খুলে খানিকটা চমকাতে হল । কারন কোন লোক আসে নি আমার সাথে দেখা করতে । এসেছে একটা মেয়ে !

মেয়েটাকে এর আগে সম্ভবত দেখেছি আমি !
কোথায় দেখেছি ?

আমি খানিকটা জিজ্ঞসু চোখে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে রইলাম । এই মেয়ে আমার কাছে কি চায় ?
মেয়েটি বলল, একটু হেল্প দরকার !
-বলুন !
-আমাকে একট কফি ধার দেওয়া যায় !

আমি তখনই মেয়েটাকে চিনতে পারলাম । আরে এই মেয়ে তো আমার নিচের ফ্লোরে থাকে । আমার আগেই বুঝা উচিৎ ছিল পোশাক দেখে । মেয়েটার পরনে একটা টিশার্ট রয়েছে । সেই একটা টাইট থ্রিকোয়াটার প্যান্ট । মুখে কোন মেকাপ নেই । চুল গুলো একটু অগোছালো । কোন মেয়ে যখন এই অবস্থায় অন্যের বাসায় যাবে না । সম্ভবত আমার মতই মেয়েটাও ঘুমিয়ে ছিল এতো সময় ।

কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে এতো বাসা থাকতে এই মেয়ে আমার কাছে কফি ধার চাইতে কেন আসলো ? এই এপার্টমেন্টে মোট ৪০টা ফ্লাট আছে । প্রতি ফ্লোরে পাঁচটা । মেয়েটার ফ্লোরে আরও চারটা ফ্লাট থাকার কথা । সে সেখানে না গিয়ে সরাসরি আমার কাছে কেন এল ? তার উপর এই মেয়ের সাথে আমি এর আগে কথাও বলি নি ।

আমি এক ভাবে দাড়িয়ে আছি দেখে মেয়েটা বলল, অবাক হচ্ছেন ?
-জি একটু হচ্ছি ?
-অবাক হচ্ছেন যে এই মেয়েকে হঠাৎ আমার কাছেই কেন কফি চাইতে এল। তাই না ?
-তা ঠিক !
মেয়েটা এবার মিষ্টি করে হাসলো । তারপর বলল, পুরো এলাকার কফি তো আপনি কিনে এনেছেন । পুরো এলাকাতে তো আর কাউকে কফি খেতে দিবেন না । সব কফির মজুদ আপনার কাছে ।

কথা খানিকটা সত্য আসলে । আমার কাছে ব্যাপারটা হচ্ছে আমি একদিন ভাত না খেয়ে থাকতে পারি কিন্তু একদিন কফি না খেয়ে থাকতে পারি না । আমাকে সময় মত কফি খেতেই হবে । যখনই শুনলাম শহর লকডাউন করা হচ্ছে সবার আগে আমি এই কফি কিনতে গেলাম । নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস হয়তো সাপ্লাই অব্যহত থাকবে কিন্তু এই সব চা কফির সরবারহ নাও থাকতে পারে । তাই এলাকাতে মোটামুটি যত কফি ছিল সবই আমি কিনে এনেছি । এবং যখন কফি কিনে আমি উপরে উঠছিলাম তখন এই মেয়ে আমার সাথে লিফটে ছিল । সে আমাকে দেখেছে ।

আমি বললাম, না না কফি দেওয়া যাবে না ।
মেয়েটা এবার চোখ কপালে তুলে বলল, দেওয়া যাবে না মানে । ফাইজলামি পাইছেন ? দেখুন খুব ভাল করে বলতেছি কফি নিতে এসেছি । দিয়ে দিন । টাকা দিয়েই কিনে নিবো দরকার হলে । কিন্তু কফি ছাড়া আমার চলবে না । সকালবেলা খালি পেটে কফি না খেলে আমার পুরো দিন কোন কাজ করতে পারবো না । অফিস ছুটি দিয়েছে কিন্তু একগাছা কাজ ধরিয়ে দিয়েছে । এই কাজ আজ থেকেই শুরু করতে হবে !

আমি কি করবো বুঝতেই পারলাম না । এই মেয়ে যে এই ভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাবে সেটা আমি বুঝতে পারি নি । অবশ্য দোষ যে আমার খানিকটা নাই সেটা বলবো না । আমার যেমন কফি খাওয়ার অভ্যাস আছে ঠিক তেমনি ভাবে অন্য কারো এই অভ্যাস থাকতে পারে । আমার যেমন কফি ছাড়া চলে না, অন্য কারোও ঠিক এমনটা হতে পারে ।

মেয়েটা সম্ভবত অধৈর্য্য হয়ে গেল । অবাক করে আমাকে খানিকটা ধাক্কা দিয়ে ঘরের ভেতরে ঢুকে পড়লো । ছেলে মানুষ হলে না হয় তার সাথে ধস্তাধস্তি করে বের করা যেত । কিন্তু এই মেয়েকে তো কোন ঘর থেকে আমি বের করতে পারবো না যদি না সে ইচ্ছে করে বের হতে চায় ।
আমি বললাম, আপনি কোথায় যাচ্ছেন ? আরে আজিব আপনি এভাবে অন্যের ঘরে ঢুকে পড়তে পারেন না ।
মেয়েটা আমার দিকে না তাকিয়েই বলল, বাহ ! আপনি অন্যের কফি সব একা কেড়ে নিতে পারেন আর আমি পারবো না ঘরে ঢুকতে ?

কেড়ে ! রিয়্যালি ! মেয়েটার কথা শুনে মনে হচ্ছে যেন আমি টাকা দিয়ে কিনি নাই । জোর করে নিয়ে এসেছি !
মেয়েটা সম্ভবত রান্না ঘর খুজছে । কফির বাক্স হাতে পেলে সেটা নিয়ে চলে যাবে । হয়তো টাকা দিয়ে যাবে কিন্তু সেটা তো হতে দিতে পারি না । মেয়েটাকে এক কাপ কফি খাইয়ে বিদায় করি আপাতত । বললাম, আচ্ছা আপনি বসুন বসার ঘরে । আমি আপনার জন্য কফি বানিয়ে আনছি !

এইবার দেখলাম মেয়েটা একটু থামলো । তারপর আমার দিকে ফিরে তাকালো ! বলল, দ্যাটস বেটার ! আমি কফিতে চিনি কম খাই । একেবারে ব্লাক কফি । আধা চামচ চিনি দিবেন !



কফি বানাতে বেশি সময় লাগলো না । আমি এখনও মুখ ধুই নি তারপরেও মেয়েটার সাথে বসে এক কাফ কফি খেলাম । সকাল বেলাটা কফি দিয়ে শুরু না হলে আসলে কাজ ঠিক মত হয় না । মেয়েটার মত আমারও এই অভ্যাস !

খেতেই মেয়েটার নাম জানলাম । মেয়েটার নাম আদ্রিতা হাসান । একটা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে চাকরি করে । এই সময়ে তার অফিস থেকে বলা হয়েছে যেন বাসা অফিস থেকে ।

মেয়েটা কফি খেয়ে বিদায় নিল । আমি ভাবলাম যে যাক এবার মত ঝামেলা শেষ হল । মেয়েটা নিশ্চয়ই আর আসবে না । কিন্তু আমি তখনও বুঝি নি যে ঝামেলা এখনও শেষ হয় নি । ঠিক ঠিক বারোটার দিকে মেয়েটা আবারও এসে হাজির । এবার দেখলাম মেয়েটা বেশ সেজে গুজেই এসেছে । সেজে গুজে বলতে বিয়েবাড়ির সাজাগোজ না । স্বাভাবিক ভাবে মেয়েটা যেমন করে ফিটফাট থাকে, সেই ভাবেই এসেছে । মেয়েটা একটা এইবার একটা টিশার্ট পরে আছে । তবে সেটা সাদা রংয়ের । সাথে একটা সাদা জিন্সের প্যান্ট পরে আছে । গলায় একটা সাদা স্কার্ফ । ঠোটে হালকা লিপস্টিপ দেওয়া ! মেয়েটার হাতে একটা ল্যাপটপ !

আদ্রিতা আমার দিকে তাকিয়ে বলল, হাই !
-আপনি ?
-হ্যা আমি !
-আবার !!
-আরে বাবা আজকে বাসার বইরে যাওয়ার সময় পেলাম কোথায়? আমি দিনে চার কাপ কফি । আজকে পুরোটাই আপনার বাসায় !
আমি বললাম, এসবের মানে কি ! আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না । দেখুন এসব ...
আদ্রিতা আমার কথা শেষ করতে দিল না । সে ল্যাপটপ নিয়ে আমার ঘরে ঘুরে পড়লো । এমনি কি আমার বসার ঘরেও বসলো না । আমার বেড রুম ছাড়াও আরও একটা ঘর আছে । আমার স্টাডি রুম । আমি এখানে বসেই কাজ কর্ম করি । টেবিলের পাশে একটা খাট রাখা আর একটা বুকসেলফ আছে এখানে। আদ্রিতা চলে এলে গেল সেখানে । বিছানার উপরে বসে পড়লো । তারপর ল্যাপটপ কাজ শুরু করলো । এমন একটা ভাব যেন এটা আসলে ওর নিজেরই ঘর । আমি সত্যিই অবাক না হয়ে পারলাম না । আদ্রিতা আমার দিকে কোন ভ্রুক্ষেপ না করে নিজের মনে কাজ করতে শুরু করলো ।

দুপুর দুইটার দিকে আমার বাসায় কলিংবেল বেজে উঠলো । আমি উঠে গিয়ে দরজা খুলতেই দেখলাম এক মাঝ বয়সী মহিলা আমার বাসার সামনে দাড়িয়ে । তার হাতে একটা বড় ট্রে। সেখানে বেশ কিছু খাবার দাবার রয়েছে । দুপুরের খাবার । আমি মহিলাকে ঠিক চিনতে পারলাম না । আমার জন্য সে রান্না করে নিয়ে এসেছে ভাবতেই মনটা ভাল হয়ে গেল ।
কিন্তু সেই মন ভাল বেশি সময় থাকলো না । আমার পেছনে আদ্রিতা এসে দাড়িয়েছে । আমাকে খানিকটা উপেক্ষা করে সামনের মহিলাকে বলল, আরে দিন দিন ।
সম্ভবত মহিলা আদ্রিতার বাসায় কাজ করে । আদ্রিতা আমার সামনেই ট্রেনে নিয়ে ঘরের ভেতরে ঢুকে গেল । মহিলা কিছু সময় আমার দিকে কঠিন চোখে তাকিয়ে রইলো । আমি যদিও কিছুই বুঝতে পারছি না আসলে এখানে কি চলছে !

আমি দরজা বন্ধ করে যখন ঘরে ঢুকলাম দেখি আদ্রিতা খাবার সাজাতে শুরু করেছে টেবিলে । বেশ ভাল পরিমান খাবারই নিয়ে এসেছে । আমার দিকে তাকিয়ে বলল, কই বসুন । আসুন খাওয়া শুরু করা যাক !
আমি আদ্রিতার দিকে তাকিয়ে বললাম, আচ্ছা এসবের কি মানে আছে । আপনি কফি খাবেন ভাল কথা ! কিন্তু এভাবে ?
-হ্যা এভাবেই ! শুনুন আপনি যে কাজটা করেছেন সেটা অন্যায় করেছেন ।
-আমি কি চুরি ডাকাতি করেছি ?
-না । চুরি ডাকাতি করেন নি তবে অন্যায় করেছেন ঠিকই । কেবল একবার চিন্তা করেন আপনার টাকা আছে বলে আপনি দোকানের সব চাল কিনে বাসায় মজুত করে রাখলেন কেবল নিজের ভালর জন্য । যে সামনে আপনি আর আপনার পরিবার খাবেন । এখন এলাকাতে আর কেউ চাল কিনতে পারলো না । এখন এটা কি আপনার অন্যায় নয় ? দেখুন ক্রাইসিসের সময় কেবল নিজের কথা ভাবাটা অন্যায় ।

আমি কিছু বলতে পারলাম না । কারন কথাটা মিথ্যা না । কফি একটা বিলাশ দ্রুব্য তাই কোন সমস্যা হয় নি হয়তো । কিন্তু আমি যদি সত্যই নিত্য দরকারী কোন খাদ্য এই রকম নিজের জন্য কেবল মজুত করে রাখতাম তাহলে ব্যাপারটা মোটেই ভাল হত না । আমি বললাম, আচ্ছা আমি বুঝতে পারছি যে আামর উচিৎ হয় নি । আই এম সরি । আমি আপনাকে একটা প্যাকেট দিয়ে দিই । আপনি নিজে যান । এবং অন্য কারো যদি এই রকম কফির অভ্যাস থাকে আমি তাকেো দিয়ে দিবো ।
আদ্রিতা বলল, ভাল সিদ্ধান্ত । তবে এই শাস্তি আপনাকে পেতেই হবে ।
-কি শাস্তি?
-এই যে এই কয়দিন আমি আপনাকে এসে জ্বালাবো । আপনার বাসায় এসে কাজ করবো আর আপনি কফি বানিয়ে খাওয়াবেন ।
-মানে কি !
-এটাই মানে । তবে আপনার সুবিধা হচ্ছে দুপুরের খাবার আমার বাসা থেকে আসবে । বুঝেছেন ?

আমি কি বলবো খুজে পেলাম না । কিছু বলে সম্ভবত লাভও হবে না । এই মেয়ে সহজে যাবে না । আদ্রিতা বলল, আসলে নিজের বাসায় বসে অফিস অফিস ফিল আসে না । আপনার বাসায় এসে কাজ করা যাবে । এখন আসুন খাওয়া দাওয়া করা যাক !

এভাবে সাত দিন পার হলে গেল । আমার দুইজনের রুটিন এই ভাবেই চলতে লাগলো । আমি মিথ্যা বলবো না যে আমার সময় খারাপ গিয়েছে । সত্যি বলতে প্রথমদিন আমার একটু বিরক্ত লাগলেও পরের দিন গুলো কেমন যেন আমি আদ্রিতার জন্য অপেক্ষাই করতাম । মানুষ তো এখন মাত্র কোয়ারেন্টাইনে গেল ভাইরাসের ভয়ে তবে আমি আমার সারা জীবনেই কোয়ারেন্টাইনে ছিলাম । মানুষ থেকে দুরে থেকে সব সময় । একা একা সময় কাটাতে আমার ভাল লাগলো । আসলে এই ভাবে আগে কোন মেয়ে আমার সাথে এই রকম করে কোন আচরন করে নি । আমি যেমন সবার থেকে দুরে থেকেছি তেমনি সবাই আমার থেকে দুরে থেকেছে । এই কারণেই হয়তো মেয়েটাকে আমার ভাল লেগে গেল ।

কিন্তু আট নম্বর দিনে আদ্রিতা আর এল না । আমি সকাল বেলা কফি বানিয়ে অপেক্ষা করতে লাগলাম কিন্তু সে আর এল না । প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই মেয়েটা আমার বাসায় আসতো কফি খেতে । কিন্তু আজকে আর এল না । এমন কি যখন এগারোটা বেজে গেল তখনও আদ্রিতা এল না । খানিকটা কৌতুহল নিয়ে আমি হাজির হলাম ওর বাসায় । দরজা নাড়াতে যাবো দেখি দরজা খোলা । ঢুকবো কি না ভাবছি এভাবে ঘরের ভেতরে ঢোকা উচিৎ হবে কি না সেটা ভাবছি এমন সময় মনে হল ভেতর থেকে কেমন একটা গোঙ্গানীর মত আওয়াজ হল ।

আমি আর চিন্তা না করে ঘুরে পড়লাম ভেতরে । আমার মতই ফ্ল্যাট । আমি মাস্টার বেড রুমে ঢুকে পড়লাম । দেখি আদ্রিতা বিছানায় পড়ে আছে । ওর চেহারার দেখেই মনে হচ্ছে ওর শরীর খারাপ । আমি কাছে যেতেই ও চিৎকার করে উঠলো, কাছে আসবেন না । সম্ভবত আমার করোনাতে ধরেছে ।
বুকটা হঠাৎ কেঁপে উঠলো ।
আদ্রিতা বলল, আপনি চলে যান । বুয়াকে চলে যেতে বলেছি । সে সম্ভবত চলে গেছে ।
আমি একভাবে দাড়িয়েই রইলাম । তারপর বসলাম ওর বিছানায় । বললাম, গত সাতদিন আপনি আমার বাসায় নিয়মিত গেছেন করোনা হলে আর লাভ নেই । আমি নিজেও ইনফেক্টেড !
এই বলে আমি ওর কপালে হাত দিলাম । সত্যিই জৃে পুড়ে যাচ্ছে শরীর । আমার মনে হল যে সবার আগে ওর মাথায় পানি ঢালা উচিৎ । ওকে খানিকটা জোর করেই শুইয়ে দিলাম । তারপর ওয়াশরুম থেকে বালতিতে করে পানি নিয়ে এসে মাথায় পানি ঢালতে শুরু করলাম ।

বেশ কিছু সময় পানি দেওয়ার পরে মনে হল ওর জ্বর সম্ভবত একটু কমেছে । তোয়ালে দিয়ে ওর মাথা মুছিয়ে দিলাম যত্ন করে । কেন এতো কিছু করছি আমি নিজেই জানি না । আমি কোন দিনই এমন ছিলাম না । মানুষের ঝামেলা নিতে আমার মোটেও ভাল লাগে না । সব সময় এগুলো থেকে আমি দুরে দুরে থেকেছি । আর আজ আমি নিজেই এই কাজ করছি । কেন করছি ?

আরও কিছু সময় পরে দেখলাম দরজা কলিংবেল বাজছে । দরজা খুলে অবাক হলাম । বুয়া ফিরে এসেছে । এবং সে একা আসে নি । একজন ডাক্তার নিয়ে ফিরেছে ।
ডাক্তার প্রথমে একটু ভয়ে ভয়ে আদ্রিতার সাথে কথা বলছিলো । তবে সব কিছু শুনে একটু আশ্বস্ত হল । বলল, মনে হচ্ছে না যে করোনা হচ্ছে । কেবল জ্বর ছাড়া আর কোন লক্ষণ নেই । তারপরেও বলবো একবার পরীক্ষা করিয়ে নিন । আপাতত এই ঔষধ গুলো খেয়ে নিন

আমি রাতে আদ্রিতার অবস্থা বেশ ভাল হয়ে উঠলো । আমার দিকে তাকিয়ে বলল, আপনার ভয় করলো না ? সত্যিই যদি করোনা হত?
-হলে হত ! আগেই বলেছি ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে । সো এভাবে ছেড়ে যাওয়াটা মোটেও যুক্তি সঙ্গত হত না । আর একা থাকার কষ্ট অনেক । যখন মনে হয় আপনি সত্যিই একা এই জগতে । আপনার পাশে দাড়ানোর মত কেউ নেই তখন যে অনুভুতি হয় সেটা অনেক বেশি কষ্টের ।

আদ্রিতা আমার দিকে অনেক টা সময় তাকিয়ে রইলো । ঐ চোখের ভাষায় অন্য কিছু ছিল ।

কয়েক দিনের ভেতরে আদ্রিতা একেবারে সু্স্থ হয়ে ঊঠলো । এবং তবে সকাল বেলা আর আমার বাসায় এসে হাজির হল না কফি খাওয়ার জন্য । আবারও শরীর খারাপ করলো কি না দেখতে যখন ওর বাসায় সামনে হাজির হলাম । এবারও দেখলাম দরজাটা হাট করে খোলা । এবং ভেতর থেকে চিৎকার চেঁচামিচির আওয়াজ আসছে । আদ্রিতা কারো সাথে চিৎকার করে কথা বলছে । আমার মনে হল এখনই চলে যাওয়া উচিৎ । কিন্তু হঠাৎই আমি দরজাতে আদ্রিতাকে দেখতে পেলাম । সে কোন কিছু না বলে আমার কাছে এসে আমার হাত ধরলো । তারপর এক প্রকার জোর করেই আমাকে ঘরের ভেতরে নিয়ে গেল । ভেতরে বুয়াকে দেখতে পেলাম এক পাশে দাড়িয়ে আছে । সোফার উপরে এক মাঝ বয়সী মানুষ বসে আছে । তার মুখ খানিকটা গম্ভীর । আদ্রিতা ভদ্রলোকের দিকে তাকিয়ে বলল, জানতে চেয়েছিলেন না ? এই যে সেই ছেলে । এই ছেলেকেই আমি বিয়ে করবো ।

ভদ্রলোক কিছু সময় আমার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো । আমি নিজেও খানিকটা অবাক চোখে আদ্রিতার দিকে তাকালাম । কি বলে এই মেয়ে ! আমি তো এই সবের কিছুই জানি না ।

ভদ্রলোক বলল, দেখো আদ্রি আমার অমতে বিয়ে করলে কিন্তু সম্পত্তি থেকে একটা পয়সাও তুমি পাবে না !
-লাগবে না । তুমি এখনই চলে যাও এখান থেকে । তোমার এই জেদের জন্য বড় আপুর জীবনটা নষ্ট করেছ । আমার জীবনটা তোমাকে নষ্ট করতে দিবো না । আমি যদি জীবনে বিয়ে করে পস্তাই তো নিজের বুদ্ধি আর ইচ্ছেতে পস্তাবো । তুমি এখনই চলে যাও নয়তো কিন্তু দারোয়ান ডেকে বের করে দিব ।

ভদ্রলোক তাহলে আদ্রিতার বাবা । আমার এখনে কোন ভূমিকা নেই । বুঝলাম চুপ থাকাই শ্রেয় ! আদ্রিতার বাবা আমার আর আদ্রিতার দিকে অগ্নি চোখে তাকিয়ে চলে গেল আমাদের সামনে দিয়ে । সে চলে যেতেই দেখলাম আদ্রিতা সোফাতে বসে পড়লো । আমার কি হল আমি জানি না আমিও ওর ঠিক পাশে গিয়ে বসলাম । তারপর বললাম এতো কি হল?
-বাদ দিন । অনেক লম্বা কথা ।
-আচ্ছা বাদ থাকুক । আজকে অফিস যাবেন না ?

আদ্রিতা আমার দিকে তাকিয়ে বলল, না । অফিসে বসে বসে নাকি আমি প্রেম করছি এই অভিযোগে বস আমাকে অফিস থেকে ছুটি দিয়েছে ।

লাইনটা বলেই ও হেসে ফেলল । আমি কি বলবো খুজে পেলাম না । আদ্রিতা বলল, বাবা এসে ভালই করেছে । যদি সে না আসতো তাহলে হয়তো আপনাকে এভাবে বলাই হত না । তবে রাগের মাথায় যাই বলি না কেন এটা আমার মনের কথাই ছিল । এখন অবশ্য আপনার ইচ্ছের ব্যাপার । আপনি না চাইলে ....

আমি হাসলাম কেবল । এই কটা দিনেই মেয়েটার সাথে আমার কোথায় যেন একটা বন্ধন সৃষ্টি হয়েছে । নয়তো এখন কেবল সারাটা সময় কেবল মেয়েটার কথাই ভাবি কেন আমি । আমি আদ্রিতার হাত ধরলাম । ঠিক করলাম যে এই হাত আর ছাড়বো না । এই কোয়ারেন্টাইনের দিনে কিছু তো কাজের কাজ হল ।

মন্তব্য ৭ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে মার্চ, ২০২০ রাত ৯:১৩

রাজীব নুর বলেছেন: সহজ সরল সুন্দর গল্প।

২১ শে মার্চ, ২০২০ সকাল ১০:০৪

অপু তানভীর বলেছেন: ধন্যবাদ ।

২| ২০ শে মার্চ, ২০২০ রাত ৯:৫০

সন্ধ্যা প্রদীপ বলেছেন: বাহ! বেশ লাগলো গল্পটি!

২১ শে মার্চ, ২০২০ সকাল ১০:০৪

অপু তানভীর বলেছেন: ধন্যবাদ :)

৩| ২১ শে মার্চ, ২০২০ রাত ১:১০

নেওয়াজ আলি বলেছেন: সাবলীল সুন্দর উপস্থাপন । 

২১ শে মার্চ, ২০২০ সকাল ১০:০৫

অপু তানভীর বলেছেন: ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.