নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কাঠাল তলার আমাদের বিচার বসেছে । আমাদের হলের ছাত্র নেতা কামাল ভাই আমাদের সামনে বসে আছে। সাথে আরো দশ বারো জন সাগরেদ দাড়িয়ে আছে আশে পাশে । আমি সহ আরও দুইজন দন্ডায়মান তাদের সামনে। আমাদের অপরাধ হচ্ছে গতকাল আমরা তাদের কথা মত তাদের দলীয় মিছিলে অংশ গ্রহন করি নি। দুইদিন আগে খাবার রুমে সবাইকে কামাল ভাই বলে গিয়েছিইল যে তার দলের এক মিছিলে এই হল থেকে সবাইকে যেতে হবে।
আমার টিউশনি ছিল । তাই আমি যেতে পারি নি । অবশ্য আমার যাওয়ার ইচ্ছেও ছিল না খুব একটা । কিন্তু এই কথা কামাল ভাইয়ের কানে চলে গেছে । সন্ধ্যার সময়ে আমাকে সহ আরও দুইজন কে এখানে আসতে বলেছে ।
কামাল ভাই আমাদের দিকে গম্ভীর চোখে তাকিয়ে বলল, আমি এতো করে বললাম যে মিছিলে যাওয়ার জন্য তারপরেও তোমরা গেলে না! এতে কি প্রমাণিত হল? আমার কথার মূল্য নাই তোমাদের কাছে?
আমি বলবো বুঝতে পারছিলাম না । আমি সারা জীবন ঝামেলা এড়িয়ে চলা মানুষ । এই রকম পরিস্থিতিতে আগে পরি নি! আমার পাশের ছেলেটা হঠাৎ বলে উঠলো, ভাইয়া শরীর খুব খারাপ ছিল আমার । উঠতে পারি নাই বিছানা থেকে । এই দেখে এখনও জ্বর আছে শরীরে । আমার মনে হল আমারও কিছু বলা দরকার । বললাম, ভাইয়া টিউশনি ছিল ।
কামাল ভাই টিউশনী শুনে আমার দিকে চোখে তুলে তাকালো । তারপর আমাকে কাছে যেতে ইশারা করলো । তার কাছে যেতে একটা রাম চড় খেলাম । এতোই জোড়ে যে মাথা ঘুরে উঠলো । আমার দিকে তাকিয়ে আরেকটা চড় মারতে যাবে তখনই আমি বললাম, ভাইয়া মারবেন না ।
কামাল ভাই থেমে গেল । আমার দিকে তাকিয়ে রইলো অদ্ভুত ভাবে । কোন রাজনৈতিক দলের নেতা কিংবা কর্মী যখন কোন সাধারণ ছাত্রের গায়ে হাত দেয় তখন ছাত্রেরা সাধারনত অনুনত বিনয় করে মারতে মানা করে । কান্নাকাটি করে। সেখানে আমি ঠান্ডা কন্ঠে বললাম না মারতে । আমি বললাম, আমাকে কষ্ট দিলে কিন্তু ভাইয়া এর ফল আপনাকে ভোগ করতে হবে ।
কামাম ভাই আরও কিছু সময় আমার দিকে তাকিয়ে রইলো । চারিদিকে কেউ কোন কথা বলছে না । সবাই কেমন চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে । কামাল ভাই এবার উঠে দাড়ালো । আমাকে আরও দুইটা চড় মাড়ল । এতোই জোড়ে যে শেষ চড়টা খেয়ে আমি তাল সামলাতে না পেরে মাটিতে পড়ে গেলাম ।
আমার দিকে একটা লাথি মারতে আসছিল কিন্তু থেমে গেল । ডান দিকে তাকিয়ে দেখলাম আমাদের হলের সুপার আসতেছে । আমার দিকে তাকিয়ে কামাল ভাই বলল, কালকের ভেতরে হল ছেলে চলে যাবি । নয়তো একেবারে মাটির সাথে পুতে ফেলবো তোকে!
ওরা আর দাড়ালো না । আমাদের তিনজনকে রেখে চলে গেল । আমাকে পাশের ছেলেটা উঠতে সাহায্য করলো । ছেলেটার শরীরে হাত দিয়ে বুঝলাম যে ছেলেটা মিথ্যা বলছে না । আসলেই তার শরীরে এখনও জ্বর আছে । অন্য ছেলেটা পুরো সময় চুপ করেই দাঁড়িয়ে ছিল । সে চুপ করে চলে গেল। ছেলেটা আমার দিকে তাকিয়ে বলল, তোমার কি মাথা হয়েছে নাকি? এদের সাথে লাগতে যাচ্ছো কেন?
আমি শার্ট আর প্যান্ট থেকে ধুলো ঝাড়তে ঝাড়তে বললাম, লাগতে গেলাম কই?
ছেলেটা অবাক হয়ে বলল, বারে ঐ স্বরে কামাল ভাইয়ের সাথে কেউ কথা বলে? তার দলের প্রেসিডেন্ট পর্যন্ত তাকে সমীহ করে চলে আর তুমি কিনা হুমকি দিচ্ছিলে?
আমি বললাম, আমি মিথ্যা বলি নি । এর ফল সে ভোগ করবে?
ছেলেটা এবার সরু চোখে তাকালো আমার দিকে । তারপর বলল, তুমি কে বল তো? তোমার কি ব্যকআপ ভাল? মানে বাবা চাচারা কি রাজনীতি করে? কিংবা আমলা?
গালে একটু হাত দিলাম । দেখলাম গালটা একটু ব্যাথা করছে । বেশ জোড়েই মেরেছে । আমি নিশ্চিত গালটা লাল হয়ে গেছে । আমি ছেলেটার দিকে তাকিয়ে বললাম, আমার কেউ নেই । আমি এতিমখানায় মানুষ হয়েছি ।
ছেলেটা আর কোন কথা জানতে চাইলো না । সম্ভবত আমাকে পাগল ভাবছে । আমার কোন ব্যকআপ ছাড়া আমি ক্যাম্পাসের এই রকম একজন ক্ষমতাবান নেতাকে হুমকি দিলাম যে এর ফল ভোগ করতে হবে! আমার মাথা নিশ্চয়ই খারাপ হয়ে গেছে । নয়তো আমি এমন কেন করবো । আমার সাথে থাকাটা আর সে খুব একটা সমীচীন মনে করলো না । আমাকে রেখে হাটা দিলো হলের দিকে । আমার কেন জানি হলের দিকে যেতে ইচ্ছে করলো না । আমি কাঠাল তলার বেঞ্চের উপর কিছু সময় বসে পড়লাম । নিজের রুমে যেতে ইচ্ছে হল না । কামাল ভাইয়ের সাথে আসলে কি ঘটতে পারে সেটাই আমি ভাবতে থাকলাম । যেহেতু হাত দিয়ে মেয়েছে, বিপদটা হাতের উপরেই নেমে আসবে ।
আমার ছোট বেলার ঘটনা আমার কিছু মনে নেই । আমাকে কে কিংবা কারা এতিন খানাতে রেখে গিয়েছে সেটা কেউ বলতে পারে না । কেবল এই টুকু শুনতে পেরেছিলাম যে আমাকে একটা ডাস্টবিনের ভেতরে পাওয়া গিয়েছিলো । আজিমপুর বাসস্ট্যান্ডের কাছে একটা বড় ডাস্টবিনের ভেতরে আমাকে কেউ ফেলে গিয়েছিল । সম্ভবত আমার মা আমাকে বড় করার মত সামর্থ্য রাখতেন না । অথবা কোন অবৈধ কাজের ফসল ছিলাম আমি । আমি এসব নিয়ে খুব একটা চিন্তা করতাম না । আমি বেঁচে আছি এটাই সব থেকে বড় কথা!
এতিমখানার জীবনে একটা ব্যাপার আমি আস্তে আস্তে লক্ষ্য করতে শুরু করলাম যে অন্য সবাই কেমন যেন আমাকে একটু এড়িয়ে চলে । আমার সাথে খুব ভাল ব্যবহার করে । আমাদের এতিম খানাতে রুবেল নামে একটা ছেলে ছিল । বেশ স্বাস্থবান। স্বাস্থ্য ভাল ছিল বলেই সম্ভবত সবার সাথে সে মারামারি করে বেড়াতো । শক্তিতে কেউ তার সাথে ঠিক পেরে উঠতো না । সবার সাথে সে পায়ে পাড়া দিয়ে ঝগড়া বাঁধাত তারপর মারামারি করতো । কিন্তু এই ছেলে আমার সাথে কোন দিন খারাপ আচরন করতো না । আমার সাথে তার ব্যবহার ছিল খুব মধুর । এর কারণ আমি তখনও বুঝতে পারতাম না । রুবেলের সাথে মারামারি লাগলে আমি নিশ্চিত মার খেয়ে ভুত হয়ে যেতাম কিন্তু তারপরেও সে আমার সাথে কোন দিন মারামারি করার চেষ্টা করতো না । বরং অন্য ছেলে মেয়ের মত আমার সাথে ভাল ব্যবহার করতো ।
অন্য ছেলে মেয়েরা আমার সাথে ভাল ব্যবহার করলেও আমি একটা ব্যাপার খুব ভাল করেই বুঝতে পারতাম যে তারা আমাকে কেমন যেন ভয় পায়! কেন ভয় পায় সেটা আমি তখনও বুঝতে পারি নি । আমার চেহারাও রাজপুত্রের মত সুন্দর না হলেও আমি দেখতে শুনতে বেশ ভাল ছিলাম সেই ছোট বেলা থেকেই । তাহলে আমাকে ভয় পাওয়ার কারণ কি ছিল?
এর কারণ টা আমি জানতে পারলাম যখন আমি ক্লাস ফাইভে পতি । তখন আমি বেশ ভাল বুঝতে শিখেছি । পাশের একটা সরকারি প্রাথমিক স্কুলে আমরা সবাই পড়তে যেতাম । সেখানেই একদিন এক ছেলের সাথে আমার একটু মারামারি বেঁধে গেল । ঠিক মারামারি না, বেঞ্চে বসা নিয়ে ছেলেটাই আমার গালে একটা চড় বসিয়ে দিল । কেবল চড়ই নয়, আমাকে ভয়ানক কিছু খারাপ কথা বলল। আমি এতিম ছেলে আর আমাকে কেউ ডাস্টবিনে ফেলে গিয়েছিল এই তথ্য এই ছেলে কোন ভাবে জেনে গিয়েছিল সম্ভবত। আমার মনটা ভয়ানক খারাপ হয়ে গেল । আমি ছল ছল চোখ নিয়ে সবার দিকে তাকাতে লাগলাম । তারপর এক পর্যায়ে ক্লাস থেকে দৌড়ে বের হয়ে এলাম । সেদিন আমার মত খুব খারাপ হয়েছিল আর নিজের মা বাবার উপর খুব বেশি রাগ হয়েছিল ।
দুইদিন স্কুলে গেলাম না আমি । আমাদের এতিমখানার সুপার ছিলেন এক মাঝ বয়সী মহিলা। আমরা তাকে সুরমা দি বলে ডাকতাম । এতো মানুষ গুলোর মাঝে এই একটা মানুষই আমাকে অনেক আদর করতেন । এবং সেই আদরের ভেতরে আমি কোন খাঁদ খুজে পাই নি কোন দিন । রাতে আমাকে তিনি এতিমখানার ছাদে নিয়ে গেলেন । মাঝে মধ্যেই তিনি সবাইকে এই ছাদে নিয়ে এসে গল্প শোনাতেন । সেদিন আমাকে একলা নিয়ে এলেন ছাদে । এটা ওটা জিজ্ঞেস করলেন । তারপর জানতে চাইলেন গতদিন স্কুলে কি হয়েছিল?
আমি বললাম যা যা হয়েছে । তারপর বললাম আমার কোণ দোষ নেই আমি ঐ ছেলের সাথে কোন কথাই বলি নি ।
সুরমা দি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন । তারপর বললেন, আমি জানি তুমি সাথে কোন খারাপ আচরন কর নি । তুমি সে রকম ছেলে নও । কিন্তু যা হওয়ার হয়ে গেছে ।
আমি কিছু বলতে না পেরে বললাম, মানে?
তিনি আরেকটা জোরে নিশ্বাস ফেলে বললেন, শোন দিপু, আমার কথা মন দিয়ে শুনবে । কারণ এই ব্যাপারটা বোঝার মত যথেষ্ট বড় তুমি হয়েছে । তাই আশা করি বুঝতে পারবে ।
আমি চুপ করে তাকিয়ে রইলাম তার দিকে । বুঝতে পারছিলাম যে তিনি এখনই আমাকে কোন ভয়ংকর কোন কথা বলবে । তিনি বলতে শুরু করলেন, তুমি নিশ্চয়ই খেয়াল করেছো যে এখানে সবাই তোমার সাথে খুব ভাল ব্যবহার করে! তাই না?
আমি মাথা ঝাকালাম ।
-কারণ টা কি জান? কারণ টা হচ্ছে কেউ যদি তোমার সাথে কোন খারাপ আচরন করে এবং সেটার কারনে যদি তোমার মন খারাপ হয়, তুমি কষ্ট পাওয়া, সেটা শারীরিক কিংবা মানুসিক যাই হোক না কেন তাহলে যে মানুষ টা এই কষ্টের কারণ সে ফল ভোগ করে । কিভাবে করে সেটার কোন ব্যাখ্যা আমাদের কাছে নেই কিন্তু করে । যখন তুমি অনেক ছোট ছিলে তখন থেকেই এই ব্যাপারটা আমরা দেখে আসছি । খেলার ছলে কেউ তোমাকে একটু আঘাত দিলেও তারা এর ফল ভোগ করতো । তুমি তো আর বুঝতে না, আমি তোমাকে কাছ থেকে দেখেছি । প্রথমে বুঝতে পারি নি, বিশ্বাস করি নি কিন্তু নিজের চোখে যা দেখেছি তাতে আর অবিশ্বাস করতে পারিনি ।
আমি বললাম, তাহলে কি ঐ ছেলেটা কষ্ট পাবে মানে ফল ভোগ করবে?
-হ্যা করবে।
-কী রকম?
-সেটা নির্ভর করে তুমি কত টুকু কষ্ট পেয়েছো তার উপর ।
আমি কিছু সময় ভাবার চেষ্টা করলাম যে ছেলেটার ঐ আচরনে আমি আসলে কত টুকু কষ্ট পেয়েছি!
সুরমা দি বললেন, দেখো তোমাকে কি একটা অনুরোধ করতে পারি?
-জি করুন।
-জীবনে চলার পথে মানুষ তোমাকে কষ্ট দিবেই । এটা স্বাভাবিক । তার মানে এই না তোমাকেও তাদের কষ্ট দিতে হবে । কেউ যখন তোমাকে কষ্ট দিবে তখন মনে কষ্ট নিবে না । তাহলে হয় সামনের মানুষটা বড় কোন ক্ষতি হওয়া থেকে বেঁচে যাবে । ঠিক আছে?
পরদিন স্কুলে গিয়ে সুরমা দির কথার সত্যতা জানতে পারলাম । যে ছেলেটা আমাকে মেরেছিল, স্কুল থেকে যাওয়ার পথে ছেলেটার রিক্সা এক্সিডেন্ট করেছে । ছেলেটার ডান হাত নাকি ভেঙ্গে প্রায় আলাদা হয়ে গিয়েছে । ডাক্তার বলেছে সে বেঁচে যাবে কিন্তু এই ডান হাত দিয়ে আর কোন দিন কিছু করতে পারবে না । আমার কেন জানি খুব খারাপ লাগা শুরু করলো । আমার মনে হল যে এই ছেলেটার এই অবস্থার জন্য আমি নিজেই দায়ী । ঐ ছোট বেলা থেকেই আমি নিজেকে অপরাধী ভাবা শুরু করলাম । তারপর থেকেই আমি খুব সাবধান হয়ে গেলাম । আমি সব সময় চেষ্টা করতাম মানুষের সাথে ঝামেলা এড়িয়ে চলতে । বিশেষ এমন সব কাজ থেকে বিরত থাকতে চেষ্টা করতাম যাতে আমি কষ্ট পেতে পারি । কিন্তু তার পরেও মাঝে মাঝে ঝামেলা বেঁধে যেত । প্রতিবারই দেখতাম আমার মন খারাপের থেকেও আঘাতকারী অনেক বেশি ফল ভোগ করছে ।
আমি আরও কিছু সময় ক্যাম্পাসের এদিক ওদিক ঘুরতে লাগলাম । নিজের মন খারাপের ভাবটা কমাতে শুরু করা দরকার । তবে জানি এতে খুব বেশি লাভ হবে না । কামাল ভাই ঠিকই ফল ভোগ করবে । কিভাবে ফল ভোগ করবে সেটাই হচ্ছে ব্যাপার!
আমার পরদিন হল ছেড়ে বের হয়ে যাওয়ার কথা থাকলেও আমি গেলাম না । আমি জানি আমার কিছু হবে না । কামাল ভাইয়ের এরই মাঝে কোন মহা বিপদ এসে হাজির হবে । সেটা আমার কানে এল দুপুর বেলাতেই । দুপুর বেলা খাবার খেতে গিয়েই কানে এল যে কামাল ভাই নাক হাসপাতালে ভর্তি । হঠাৎ করেই নাকি তার ডান হারটা অবশ হয়ে গেছে । রাতে ঘুমিয়েছিল । সকালে উঠে দেখে আর হাত নাড়াতে পারে না । তাকে ধরাধরি করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে । কিন্তু সেখানেও নাকি ডাক্তারেরা কিছু করতে পারছে না ।
পরদিন রাতে টিউশনি করে হলে আসার পথেই দেখি কামাল ভাইয়ের সেই কয়েকজন সাগরেদ আমার রুমের সামনে দাঁড়িয়ে আছে । আমাকে আসতে দেখেই একজন আমার দিকে এগিয়ে এল । তারপর বলল, দিপু তোমাকে কামাল ভাই একটু হাসপাতালে যেতে বলেছে ।
হাসপাতালে কামাল ভাইয়ের রুমে ঢুকে দেখি সে বিছানার উপরে বসে দেওয়ালের সাথে পিঠ হেলান দিয়ে আছে । আমাকে দেখেই তার চোখ খানিকটা উজ্জ্বল হয়ে এল । এই দুই দিনেই তার বয়স যেন দশ বছর বেড়ে গেছে । আমি ঢুকতেই সে সবাইকে বেরিয়ে যেতে বলল । আমাকে তার বিছানাতেই বসতে বলল, একজন কি যেন ইশারা করতেই সে দৌড়ে বেরিয়ে গেল । ফিরে এল একটু পরেই । দেখতে পেলাম তার হাতে দুইটা কোকের বোতল আর একটা কেক । আমার সামনে রেখে সে আবারও দৌড় দিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে গেল । কামাল ভাই আমার দিকে তাকিয়ে বলল, দেখ কাল আসলে যা হয়েছে তা ভুলে যাও ছোট ভাই । মনে রাগ রেখো না প্লিজ । কি করতে কি করেছি তুমি রাগ রেখো না ছোট ভাই !
আমি একটু হাসলাম । তারপর বললাম, আমার রাগ নেই আপনার উপর । আমি রাগ করি না ।
-তাহলে আমার কেন এই অবস্থা হল?
-আপনি কেন ভাবছেন যে আমার কারনে এমন টা হয়েছে? আমি কি করেছি বলুন?
কামাল ভাই বলল, আমি তোমার ব্যাপারে খোজ নিয়েছি । তুমি হয়তো জানো রুবেল তোমার এতিম খানায় থাকতো । তোমাকে চেনে ভাল করে!
রুবেল এই বিশ্ববিদ্যালয়েই পড়ে । শুনেছিলাম সে পড়াশুনাতে বেশ ভাল । আর রাজনীতিতে বেশ সক্রিয়! আমিই মাথা নিচু করে রইলাম কিছু টা সময় । তারপর বললাম, আমার আসলে এখানে কিছুই করার নেই । আমি যখন থেকে বুঝতে শিখেছি যখন থেকে এই ব্যাপারটা জানি তখন থেকে চেষ্টা করেছি খুব সাবধান থাকতে । আমি কারো উপরে রাগ রাখি না । কিন্তু আপনাদের সাথে দুইটা ফেরেস্তা থাকলেও আমার সাথে আছে তিনটা । দ্য থার্ড এঞ্জেল । তার কাজই হচ্ছে আমার উপর আসা বিপদের প্রতিশোধ নেওয়া । আমি চাই কিংবা না চাই । আমাকে কেউ কষ্ট দিলে সে এর ফল ভোগ করবেই । এই জন্যই আপনাকে আমি বলেছিলাম তখন!
আমি তাকিয়ে দেখলাম কামাল ভাইয়ের মুখের ভাবটা একেবারে করুণ হয়ে গেছে । কেন জানি আমার মনের ভেতরে একটা দুষ্ট বুদ্ধি কাজ করলো । আমি কামাল ভাইকে ভয় দেখানোর জন্য বললাম, তবে ভাই একটা উপায় আছে সম্ভবত!
কামাল ভাই সাথে সাথে বলল, কি উপায় কি উপায়?
মানে আমাকে যেভাবে কষ্ট দেওয়া হয়েছে আমিও যদি সেই উপায়ে তাকে কষ্ট দেই তাহলে তার রাগ খানিক টা প্রশমিত হয় ।
-মানে?
কামাল ভাই কিছু বুঝতে পারছিলো না । পাশ থেকে তার সাগরেত বলল, ভাই দিপু যদি আপনাকে চড় মাড়ে তাহলে হয়তো কাজ হতে পারে!
লাইনটা শুনে কামাল ভাই একটু যেন দমে গেল । তবে পর মুহুর্তে আবার বলল, কাজ হবে?
-হতে পারে!
কামাল ভাই খানিকটা দ্বিধায় পরে গেল । অনেকটা অনেক সময় নিজের সাথে যুদ্ধে করে বলল, আচ্ছা চেষ্টা করে দেখি ।
আমি কোন দিন কাউকে চড় থাপ্পড় মারি নি । মারার দরকারই হয় নি । কিন্তু আজকে কেন জানি খুব ইচ্ছে করলো । তাকিয়ে দেখলাম যে কামাল ভাই তার ডান গালটা এগিয়ে দিয়েছে । ক্যাম্পাসের এতো ক্ষমতাবান নেতা আমার হাতে চড় খাওয়ার জন্য গাল এগিয়ে দিয়েছে ।
নিজের শরীরের সব শক্তি দিয়েই একটা চড় বসিয়ে দিলাম । এতো জোটে আওয়াজ হল যে আমি নিজেই চমকে উঠলাম। আমার চড়টা খেয়ে কামাল ভাই বিছানাতে মুখ থুবড়ে পড়ল । কিছু সময় সে আর উঠতেই পারলো না । আমি লক্ষ্য করলাম আমার হাত জ্বলতে শুরু করেছে । তবে মনের ভেতরে বেশ আনন্দ অনুভব হচ্ছিলো । তার সাগরেত দের দিকে তাকিয়ে মনে তারা হাসি ঠেকানোওর চেষ্টা করছে । কামাল ভাই এক হাতে ভর দিয়ে ঊঠে বসলো । তার মুখের ভাব দেখে আমার নিজেরই মায়া লাগতে শুরু করলো । কামাল ভাই বলল, ছোট ভাই এবার কি কাজ হবে?
-হবে আশা করি । আমি চিন্তা করবেন না । আমি তাহলে আসি!
-আরেকটা কথা ।
-জি বলেন?
-এই কথাটা যেন এই ঘরের বাইরে না যায় । ঠিক আছে?
কামাল ভাইয়ের কন্ঠে হুমকি ছিল না । একটা অনুনয় মূলক অনুরোধ ছিল কেবল । আমি বললাম যাবে না । আমি অন্তত বলবো না । আর আমার কথা কেউ বিশ্বাস করবে বলেন! আপনি এতো বড় নেতা আর আমি কে বলুন! মানুষ এই কথা বিশ্বাস করবে কেন?
-তাও ঠিক! আচ্ছা সাবধানে যাও । আর মনে কষ্ট রেখ না কেমন!
সপ্তাহ খানেক পরে কামাল ভাইয়ের হাত ভাল হয়ে গেল । যেমন হঠাৎ করে অবশ হয়েছিল ঠিক তেমন ভাবেই ঠিক হয়ে গেল । কাজটা কিভাবে হল সেটা অবশ্য আমি জানি না । তবে মনে হল যে থার্ড এঞ্জেল কেবল আমার কষ্টটাকেই দেখে না, আমার আনন্দটাকেও সে দেখে!
তবে কামাল ভাইয়ের একটা ক্ষতি তার হয়েই গেল । আমি যে তাএ কষে চড় মেরেছি এই কথা ক্যাম্পাসে ফলাও করে প্রচার হয়ে গেল । কে প্রচার করলো সেটা আমি জানি না তবে কামাল ভাই আমাকে কিছু বলতেও সাহস পেল না । যদি আবারো কিছু হয়ে যায়!
Story Idea:
If someone hurts your main character, something bad happens to that person.
১০ ই মে, ২০২০ বিকাল ৩:২০
অপু তানভীর বলেছেন: ধন্যবাদ
২| ০৬ ই মে, ২০২০ দুপুর ২:২৬
নীল আকাশ বলেছেন: প্রত্যকেরকেই তার পাপের শাস্তি পেতেই হবে। এটাই নিয়ম। এই দুনিয়ায় না হয় পরের দুনিয়ায়।
১০ ই মে, ২০২০ বিকাল ৩:২১
অপু তানভীর বলেছেন: এটাই চিরসত্য নিয়ম!
৩| ০৬ ই মে, ২০২০ বিকাল ৫:২২
রাজীব নুর বলেছেন: ভালো গল্প।
তবে শিরোনাম টা পছন্দ হয় নি।
১০ ই মে, ২০২০ বিকাল ৩:২১
অপু তানভীর বলেছেন: বৃক্ষ তোমার নাম কি, ফলে পরিচয় ! নামে কি যায় আসে !
৪| ১১ ই মে, ২০২০ দুপুর ১:৩০
বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: হা হা হা
দারুনতো!
আমাদের সকল আমজনতার যদি একজন করে থার্ড এঞ্জেল থাকতো!! খুব ভাল হতো।
+++
১১ ই মে, ২০২০ বিকাল ৫:২৫
অপু তানভীর বলেছেন: যদি থাকতো তাইলে কিছু মানুষ বিশেষ করে নির্দিষ্ট একটি দলের মানুষের যে কি অবস্থা হইতো তা আর বলে বোঝানো যাবে না !
©somewhere in net ltd.
১| ০৬ ই মে, ২০২০ দুপুর ২:১২
নেওয়াজ আলি বলেছেন: চমৎকার ।