নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আরবান লেজেন্ড আসলে কি ? আরবান লেজেন্ড হচ্ছে পৃথিবীর নানান প্রান্ডে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা নানান ধরনের ভয় আর অতিপ্রাকৃত কিছু গল্প । আমাদের দেশে যেমন নানান ধরনে ভুত পেত্নী শাখচুন্নীর কথা আমরা ছোট বেলা থেকে শুনে আসছি ঠিক তেমনি ভাবে পৃথিবীর নানান দেশে এই রকম নানা ধরনের লেজেন্ড বা মিথ প্রচলিত আছে । যুগ যুগ ধরে এই সমস্ত গল্প সেই এলাকাতে মানুষের মুখে মুখে টিকে আছে । হয়তো টিকে থাকবে আজীবন । আগে গ্রাম গঞ্জে কতই না ভুতের গল্প প্রচলন ছিল । আমাদের দাদী নানীরা কত রকম গল্প করতেন । সময়ের সাথে সেগুলো আস্তে আস্তে হারিয়ে যাচ্ছে । এখনকার বাচ্চারা সেই গল্প গুলো আর কারো কাছ থেকে শুনতে পারে না ।
কয়েকটা বই আমার হাতে এসেছে । এছাড়াও ইন্টানেট তো আছে । কিছু কিছু লেজেন্ডের কথা তাই আপনাদের সাথে শেয়ার করি । আজকে প্রথম পর্ব । পরবর্তিতে আরও গল্প শেয়ার করা যাবে ।
ওয়াইল্ড রোজ
সময়টা পনেরো'শ শতক কিংবা তার কিছু আগে । আয়ারল্যান্ডে এলিসা ডে নামে এক অত্যন্ত সুন্দরী মেয়ে বাস করতো । এলিসাকে শহরের সব তরুনই পছন্দ করতো । বলা যায় সে ছিল আয়ারল্যান্ডের জাতীয় ক্রাশ । আশে পাশের দেশ থেকেও তরুণরা এসে হাজির হত তাকে বিয়ে করার জন্য । কিন্তু এলিসা ঠিক কাউকে পাত্তা দিতো না । তাকে সবাই ওয়াইল্ড রোজ বলে ডাকতো । লাল টুকটুকে ওয়াইল্ড রোজ নদীর ধারে জন্মাতো ।
একদিন দূর দেশ থেকে এক সম্ভ্রান্ত চেহারার যুবক এসে হাজির হল এলিসার শহরে । প্রথম দর্শনেই এলিসার তাকে পছন্দ হয়ে গেল । প্রথম দিনই তাকে নিয়ে এলিসা ঘুরে বেড়ালো । দ্বিতীয় দিনও যুবক এসে এলিসাকে ঘুরে বেড়ালো । তাকে নিয়ে গেল নদীর ধারে । এলিসাকে একটা লাল গোলাপ উপহার দিয়েছিল সেদিন । কিন্তু তৃতীয়দিন সেই যুবক তাকে আবারও নদীর ধারে নিয়ে গেল । তাকে চুমু খেয়ে হঠাৎ ই তার মাথায় আঘাত করতে শুরু করলো । এবং তাকে মেয়ে ফেলল । তাকে আঘাত করার সময় যুবকই বারবারই বলছিল যে "অল বিউটি মাস্ট ডাই" । তারপর সেই যুবককে আর দেখা যায় নি ।
এরপর থেকেই সেই শহরে শুরু হল নতুন আতংক । শহর থেকে যুবক ছেলে গুলো নিখোজ হয়ে যেতে থাকে । নদীতে তাদের লাশ খুজে পাওয়া যেতে শুরু করে । অনেকেই দাবী করতে শুরু করে যে এলিসাই ফিরে এসেছে এবং সে সকল যুবকের উপর প্রতিশোধ নিতে শুরু করেছে । অনেকেই দাবী করতে থাকে যে এলিসাকে দেখতে পেয়েছে । এইভাবেই আয়ারল্যান্ডে এই এলিসা ডের ওয়াইল্ড রোজের আরবান লেজেন্ডটা লোক মুখে এখনও টিকে আছে ।
লিংক
ফুটাকুচি অন্না
ফুটাকুচি অন্না'র লেজেন্ডটা জাপানের । প্রায় কয়েক হাজার বছর ধরে এটা চলে আসছে । ফুটাকুচি অন্না হচ্ছে একজন মাঝবয়সী মহিলা যার লম্বা ঘুনকালো চুল আছে । এই ঘনকালো চুলের ভেতরে আরেকটি চেহারা লুকিয়ে আছে । সেই চেহারার কোন নাক চোখ নেই । এটা আলাদা একটা সত্ত্বা । যখন সেটা কথা বলে তখন মাথাটা দুভাগ হয়ে যায় । চুল গুলোকে সাপের মত ব্যবহার করে সে খাবার খায় । কিন্তু এই খাবারের কোন শেষ নেই । ফুটাকুচি অন্না খিদে কোনদিন মিটে না ।
এই গল্পটা জাপানের একটা সাধারন পরিবারের । এক মধ্যবয়স্ক লোকের স্ত্রী মারা গেলে লোকটি আরেকটি বিয়ে করে । লোকটির আগের স্ত্রীর এক মেয়ে ছিল । পরের পক্ষেরও একটা মেয়ে হয় । কিছু সময় যাওয়ার পরে জাপানে দুর্ভিক্ষ দেখা যায় । অবস্থা এমনই হয় যে সেই লোকের পক্ষে তার পুরো পরিবারের জন্য খাবার যোগার করা সম্ভব হয় না । অল্প কিছু খাবার যা আসতো সবাই মিলে খেত । কিন্তু স্ত্রী লোকটি এখানে একটা খারাপ কাজ করে । নিজের স্বামীটির নিয়ে আসা অল্প খাবার সে নিজের সন্তান খাওয়াতো এবং আগের পক্ষের মেয়েটিকে অনাহারে রাখতো । এমন করে করে আগের পক্ষের মেয়েটি মারা যায় অনাহারে । স্বামীটি এই সব স্বাভাবিক ভাবেই নিয়েছিলো কারোন দুর্ভিক্ষে অনেকেই মারা গিয়েছিল ।
দুর্ভিক্ষের পরে একদিন লোকটি বাগানে কাঠ কাটছিলো । কাছেই তার স্ত্রী দাড়িয়ে ছিল । এমন সময় কুঠার টি ছুটে গিয়ে স্ত্রী লোকটির মাথার পেছনে আঘাত করে । লোকটি ভেবেছিলো যে তার স্ত্রী বুঝি মারাই গেছে কিন্তু স্ত্রী মারা যায় না । বেঁচে ওঠে । তবে তার মাথার আঘাতটা আর সুস্থ হয়ে ওঠে না বরং আরও খারাপ অবস্থা হতে শুরু করে । এক সময় সেই ক্ষতটি একটা মুখের আকৃতি ধারন করে এবং সেই মুখটিই তার স্বামীকে জানিয়ে দেয় যে এমন অবস্থা সেই মৃত মেয়ের অভিশাপের কারণে হয়েছে । এবং তার মেয়ে কিভাবে মারা গেছে সেটাও জানিয়ে দেয় লোকটিকে । এরপর সেই সেই স্ত্রী লোকটি বাড়ি থেকে গায়েব হয়ে যায় । কোথায় হারিয়ে যায় কেউ জানে না ।
এই লেজেন্ডের আরেকটি গল্প প্রচলিত আছে । জাপানে একটা কৃপন লোক বাস করতো । সে এতোই কৃপন লোক ছিল যে তার সম্পদ কেউ খাবে এটা সে সহ্যই করতে পারো না । এই জন্যই সে বিয়েও করে নি যাতে করে তার সম্পদ কেউ খেয়ে ফেলে । একদিন তার এলাকাতে এমজন নতুন মেয়ে এসে হাজির । মেয়েটির ছিল সুন্দর চেহারা আর লম্বা কালো চুল । লোকটি একটা জানতে পারে যে এই মেয়েটি কোন কিছুই খায় না । আর দেরি না করে লোকটি মেয়েটিকে বিয়ে করে ফেলে । এবং আনন্দের সাথে লক্ষ্য করে যে মেয়েটি সারাদিনে আসলেই কোন কিছু খায় না কিন্তু সারাদিন কঠোর পরিশ্রম করে । এটা জেনে সে খুবই খুশি হয় । কিন্তু কিছু দিন যাওয়ার পরে সে লক্ষ্য করে যে তার গোলা থেকে ধান কমে যাচ্ছে । ব্যাপারটা সে বুঝতে পারে না । সে নিজে দেখে যে তার স্ত্রী কিছু খায় না । তাহলে ধান কিভাবে শেষ হয়ে যায় । সে একদিন পরীক্ষা করার জন্য তার স্ত্রীর সামনে দিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে যায় তারপর গোলার কাছে লুকিয়ে থাকে । স্ত্রী যখন বুঝতে পারে যে তার স্বামী চলে গেছে তখন সে গোলার কাছে যায় । এবং নিজের চুলের খোপা খুলে দেয় । সেখান দিয়ে একটা মুখ বের হয়ে আসে । কৃপন লোকটি এটা দেখে খুবই ভয় পেয়ে যায় এবং তখনই সিদ্ধান্ত নেয় যে এই মেয়েকে যত দ্রুত সে তালাক দিয়ে দিবে। লোকটির এই মতলব বুঝতে পেরে মেয়েটি কৃপন লোকটিকে একটা বাক্সে বন্দী করে এবং পাহাড়ের দিকে নিয়ে যেতে শুরু করে । ভাগ্য ক্রমে লোকটি পালিয়ে যেতে সক্ষম হয় ।
জাপানে ফুটাকুচি অন্না লেজেন্ড কয়েক হাজার বছর ধরে চলে আসছে । এবং সামনেই টিকে থাকবে । কেউ কেউ মনে করে মৃত মেয়েটির অভিশাপ এই ফুটাকুচি অন্নাকে আজীবন বয়ে বেড়াতে হবে । মেয়েটি যেমন করে ক্ষধার কষ্টে মারা গেছে এই মহিলাকেও সারা জীবন ক্ষুধা নিয়েই কষ্ট করতে হবে তার ক্ষুধা মিটবে না । আবার অন্যেরা মনে করে যে কৃপন মানুষের সম্পদ ভক্ষণ করার জন্য এই ফুটাকুচি অন্না ডেমন আসতেই থাকবে । যতদিন না কৃপণেরা তাদের এই স্বভাব না বদলাবে ততদিন সে আসবেই । লিংক
স্লেন্ডারম্যান
স্লেন্ডার ম্যানের লেজেন্ডটা আমেরিকারতে । কথিত আছে আঠার'শ শতকের দিকে পেনসিলভেনিয়াতে একজন খুব রাগি স্কুল শিক্ষক বাস করতেন । তিনি লম্বার প্রায় আটফুটের কাছাকাছি ছিলেন এবং বলিষ্ঠ শরীর ছিল তার । তার ছাত্রছাত্রীরা তাকে খুবই ভয় পেত । তিনি খুবই কড়া ধরনের শিক্ষক ছিলেন । পড়া শুনে না করলে তিনি ছাত্র ছাত্রীদের নানান ধরনের শাস্তি দিতেন । এই রাগ থেকেই একদিন কয়েকজন ছাত্র তাকে খাদের কিনার থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় । তিনি মৃত্যু বরণ করেন । এই মারা যাওয়ার ঠিক এক সপ্তাহ পরে সেই ছেলে গুলো পাগল হয়ে যায় এবং তারও কিছুদিন পরে ছেলে গুলোর বিভৎস আর বিকৃত লাশ উদ্ধার করা হয় । লেজেন্ড বলে যে স্লেন্ডার ম্যন তার মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে এসেছে ।
এরপর থেকেই সে আরবান লেজেন্ডে পরিনত হয় ধীরে ধীরে । অনেকেই এই স্লেন্ডেরম্যান দেখার দাবী করেছে । স্লেন্ডারম্যান দেখার দাবী করেছে । স্লেন্ডারম্যান লম্বাতে প্রায় আট ফুট । পরনে কালো স্যুট । তার পিঠের মাঝ থেকে অনেক গুলো শুঁড় বের হয়ে আসে এবং এগুলো দিয়েই সে তার ভিক্টিমকে জড়িয়ে ধরতো । ভিক্টিমের পিছন পিছন আসার সময় সে এই শুঁড় গুলো দিয়েই হাটে। স্লেন্ডারম্যানের শিকার মূলত স্কুল পড়ুয়া বাচ্চারা !
লেজেন্ড বলে যে মধ্য দুপুরে কিংবা বিকেলবেলা কোন বাচ্চা যদি বন জঙ্গল কিংবা মাঠে একা একা যায় তাহলে সে স্লেন্ডারম্যানের দেখা পায় । তবে প্রথম দর্শনেই যে স্লেন্ডারম্যান তাকে মেরে ফেলে তেমনটা নয় । স্লেন্ডারম্যান কখনই তার ভিক্টিমকে প্রথম প্রথম দর্শনে মেরে ফেলে না । স্লেন্ডারম্যান তার ভিক্টিমের পেছন পেছন অনুসরন করে আসে । যখনই ভিক্টিম বাসায় ঢুকে পড়ে তখনই স্লেন্ডারম্যান গায়েব হয়ে যায় । তারপর সে সেই বাচ্চার স্বপ্নে দেখা দিতে থাকে । আস্তে আস্তে চারিদিকে দেখা দিতে থাকে । বাস স্টপে, ল্যাম্পপোস্টের নিচে গ্যারাজের সামনে এমন ভাবে যখন তখন দেখা দিতে থাকে । বাচ্চাটা এক সময়ে ভয়ে কাবু হয়ে যায় এবং বাসা থেকে বের হওয়া বন্ধ করে দেয় । বাচ্চাটা যখন পুরোপুরি বাইরে বের হওয়া বন্ধ করে দেয় ঠিক তার তিন দিন পরে স্লেন্ডারম্যান সেই বাচ্চার ঘরে প্রবেশ করে এবং তাকে তার পড়াশুনা থেকে প্রশ্ন করে । যদি বাচ্চাটা প্রশ্নের জবাব দিতে পারে তাহলে স্লেন্ডারম্যান বাচ্চাটার হাত কিংবা পা ভেঙ্গে দিয়ে চলে যায় আর যদি প্রশ্নের উত্তর না দিতে পারে তাহলে বাচ্চার হৃদপিন্ড বের করে নিয়ে যায় ।
এই আরবান লেজেন্ডটা সেই আঠারশ শতক থেকেই প্রচলিত ছিল আমেরিকাতে । ২০১৪ সালের মে মাসে একটা ঘটনাতে এই লেজেন্ডটা আবারও মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছিলো । সেই সময়ে আনিছা আর ম্যাগান নামের দুই টিনএজ মেয়ে তারই এক ঘনিষ্ঠ বান্ধবি বেলাকে বনের ভেতরে নিয়ে গিয়ে ছুড়ি দিয়ে বেশ কয়েকবার আঘাত করে এবং তাকে সেখানেই ফেলে চলে আসে । পরে যখন এই দুইজনকে ধরা হয় তখন তারা পুলিশের কাছে বলে যে স্লেন্ডারম্যান তাদেরকে এই কাজ করতে বলেছে । যদি তারা এই কাজ না করতো তাহলে স্লেন্ডার ম্যান তাদের মেরে ফেলতো । এটা নিয়ে একটা মুভিও বের হয়েছিলো দুই হাজার আঠারোর দিকে ।
ইউটিউবে এই ঘটনা নিয়ে একটা ভিডিও থাকার কথা !
ব্লাডিমেরি
আরবার লেজেন্ড গুলোর মধ্যে ব্লাডি মেরির মিথটা খুবই সুপরিচিত । বিভিন্ন গল্পে এই ব্লাডি মেরির কথা চলে আসে । ব্লাডি মেরির এই লেজেন্ডের উৎস নিয়ে নানা রকম মতভেদ রয়েছে । অনেকে মনে করে যে ব্লাডি মেরি হচ্ছে ইংল্যান্ডের রানী মেরি টিউডর তার পাঁচ বছরের রাজত্বকালে মেরী খুব বেশি অত্যাচার করে মানুষকে । শেষের দিকে সে কালো যাদুর দিকে ঝুকে পড়েছিলো । মৃত্যুর পরেও তার আত্মা মানুষকে নানান ভাবে জ্বালীয়ে মারছে । এই কাহিনীটাই সব থেকে বেশি প্রচলিত । আরও কয়েকটা উৎস আছে ।
অন্য একদলের মতে ব্লাডি মেরি হচ্ছে ৪০০ বছর আগেঝ হাইল্যান্ডে বসবাস কারী মেরি ওয়ার্থ নামের এক মহিলা ! সেই সময়ে গ্রাম বাসীরা মনে করতো মেরি ছিল আসলে একটা ডাইনি । তাই একদিন তাকে সবাই মিলে পুড়িয়ে মেরে ফেলে । মৃত্যুর পরেও সে এখন মানুষকে ভয় দেখাচ্ছে কিংবা নানান ক্ষতি করছে ।
আরেক দল মনে করে ব্লাডি মেরি নামটা এসেছে আঠারো শতকের ইংল্যান্ডে বসবাস কারি মেরি ওয়ার্থিংটন থেকে । এই মেরি ওয়ার্থিংটন মেয়েটি বয়সে ছিল তরুণী এবং সে দেখতে খুবই সুন্দরী ছিল । নিজের এই সুন্দরী চেহারা নিয়ে তার গর্বের শেষ ছিল না । একদিন রাতে মেরির গাড়িটি দুর্ঘটনায় পড়ে । এবং সে সেখানেই মারা যায় । মৃত্যুর আগে মেরির সুন্দর চেহারা খুবই বিকৃত হয়ে গিয়েছি দূর্ঘটনার কারনে । এই মেরির আত্মাই এখন ব্লাডি মেরি ।
ব্লাডি মেরির মিথটা হচ্ছে যদি গভীর রাতের বেলা, বিশেষ করে রাত বারোটার দিকে কেউ ঘরের সব আলো বন্ধ করে দিয়ে কেবল মাত্র একটা মোমবাতি হাতে নিয়ে আয়নার সামনে গিয়ে তিনবার পরপর ব্লাডি মেরি বলে ডাক দেয় তাহলে ব্লাডি মেরি এসে হাজির হয় আয়নার ভেতরে । এরপর অনেক কিছুই হতে পারে । ব্লাডি মেরি সেই মানুষটার চোখ উপড়ে নিতে পারে, মেরে ফেলতে পারে, তার আত্মাকে টেনে নিয়ে যেতে পারে আয়নার ভেতরে । অনেকেই দাবী করেছে যে ব্লাডি মেরিকে ডাকার ফলে তারা সত্যি সত্যিই একটা মুখ দেখতে পেয়েছে আয়নার ভেতরে ।
তবে বিজ্ঞানীরা এর পেছনের কারন ব্যাখ্যা করেছে । তাদের মতে যখন আলোর অবাক হয় তখন মস্তিস্ক কোন কিছুর পরিস্কার ছবি ফুটিয়ে তুলতে পারে না । তখনই নানান কিছু বিশেষ অস্বাভাবিক কিছু মস্তিস্ক কল্পনা করে নেয় । তখনই তারা ব্লাডি মেরিকে দেখতে পায় !
ইউটিউবে কিছু ভিডিও আছে । ঘুরে ফিরে একই কথা বার্তা । কয়েকটা লিংক দিলাম নিচে ।
ভিডিও এক ভিডিও দুই
কর্ণাটকের লেজেন্ড
ভারতের কর্নাটক অঙ্গরাজ্যে বেশ কিছু লেজেন্ড ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে । তার ভেতরে একটা হচ্ছে "নালে বা'' । নালে শব্দের অর্থ হচ্ছে ''কালকে আসুন''। নব্বয়ের দশকে এই রাজ্যে এক আতংঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে । প্রায়ই দেখা যেত এই রাজ্যের গ্রাম গুলো থেকে যুবক বয়সী ছেলেরা গায়েব হয়ে যাচ্ছে । আর তাদের জীবিত কেউ দেখতে পাচ্ছে না । পুলিশ অনেক চেষ্টা করেও কোন কুল কিনারা করতে পারছে না । যে বাড়ি থেকে কোন পুরুষ গায়েব হচ্ছিলো দেখা যাচ্ছিলো যে সেই বাড়ির দরজা কিংবা উঠানে কিছু অদ্ভুদ দাগ দেখা যাচ্ছে । শেষে এক দল তান্ত্রিক সেই সব দাগ দেখে বলল যে এসব ডাইনির কাজ । ডাইনিরা আসছে তার অদ্ভুদ সুরে ঘরের পুরুষদের নাম ধরে ডাকছে । যেই সেই ডাকে সাড়া দিয়ে বের হচ্ছে ডাইনি তাকে নিয়ে যাচ্ছে । আর সে ফিরে আসছে না । সেই ডাক কেউ উপেক্ষাও করতে পারে না ।
সেই তান্ত্রিকেরা সবাই মিলে পরামর্শ দিলে প্রত্যেক বাড়ির দরজার ''নালে বা'' লিখে রাখতে । নালে বা এর অর্থ হচ্ছে কালকে আসুন । ডাইনি যখন দরজার সামনে আসবে তখন দেখবে যে কালকে আসতে বলতে তাই সে তখন চলে যাবে । পরদিন আবার যখন আসবে দেখবে তখনও দেখবে লেখা রয়েছে কালকে আসুন । এই ভাবে ডাইনি প্রতিদিন এসে ফিরে যাবে । এভাবেই ডাইনি প্রতিদিন ধোঁকা খাবে । গ্রাম গুলোতে এই আতঙ্ক প্রায় বছর খানেক টিকে ছিল । একই ধরনের ঘটনা থাইল্যান্ডের কিছু গ্রামেও দেখা গিয়েছিলো এক সময় । যেখানে পুরুষেরা গায়েব হয়ে যেত রাতের বেলা । বলিউবে "স্ত্রী'' নামের মুভিটা অনেকে দেখেছেন । মুভির কাহিনীটা এই লেজেন্ডের উপরেই বেজ করে বানানো !
কর্ণাটকের আরেকটা লেজেন্ড শোনা যায় বাওয়াগড়ের নেকড়ে মানবের । সেই গ্রামে আশির দশকে এই আতঙ্কের আবির্ভাব হয় । প্রায় দিন রাতেই বাওয়াগড় গ্রাম থেকে ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা হারিয়ে যাচ্ছিলো । কিছুতেই তাদের আর খুজে পাওয়া যাচ্ছিলো না । গ্রামের চৌকিদারেরা পাহারার মাত্রা বাড়িয়ে দিল বটে কিন্তু খুব একটা কাজ হল না । শেষে গ্রামের অনেক যুবক ছেলেরাও পাহাড়ার কাজে লেগে গেল । এমনই একদিন পাহাড়ার সময়ে একটা গলি থেকে একটা বাচ্চার কান্না ভেসে এল । কয়েকজন সেদিকে গিয়ে হাজির হতেই একটা ভয়ানক দৃশ্য দেখতে পেল । একটা নেকড়ে একটা বাচ্চাকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে । কিন্তু ভয়ের কথা হচ্ছে নেকড়েটা দুই পায়ে দাড়িয়ে, মানুষের মত দাড়িয়ে আছে । তারপরই সেই নেকড়ে মানব বাচ্চাটাকে নিয়ে অন্ধকারের ভেতরে হারিয়ে গেল ।
নেকড়ে মানব কিংবা ওয়্যারউলফ পশ্চিমা বিশ্বের আরবান লেজেন্ড । এই এশিয়াতে বিশেষ করে দক্ষিন এশিয়াতে এদের কথা শোনা যায় না বললেই চলে । এই দৃশ্য দেখে পাহারাদারেরা খুবই ভয় পেয়ে গেল । কেউ আর সাহস করে পিছু নেয় নি । তবে সেই দিনের পর ঐ গ্রাম থেকে আর কোন বাচ্চা হারিয়ে যায় নি । ভারতে সেই প্রথম এবং সেই শেষ দেখা গিয়েছিলো নেকড়ে মানবকে ।
দুনিয়ার নানা প্রান্তে এই রকম নানা উপকথা মিথ ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে । অনেকে এই সমস্ত উপকথা গুলো কুসংস্কার হিসাবে মনে করে। হয়তো এগুলো সেই রকমই কিছু । কিন্তু তারপরেও বছরের পর বছর যুগের পর যুগ এই গল্প গুলো প্রচলিত রয়েছে । এগুলো বিশ্ব ফোকলোরের একটা অংশ! তাছাড়া নানা রকম গল্প উপন্যাস মুভিতেও এই সমস্ত কাহিনী ফিরে ফিরে আসে ! পরবর্তি পর্ব নিয়ে ফিরে আসবো খুব জলদি !
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ লুৎফুল কায়সারের আরবান লেজেন্ড বই । উইকিপিডিয়া এবং বিভিন্ন ওয়েবসাইট !
ছবি সমূহ গুগল থেকে সার্চ করে নেওয়া
২৩ শে মে, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:১১
অপু তানভীর বলেছেন: ধন্যবাদ
২| ১৮ ই মে, ২০২০ রাত ২:২২
পলাতক মুর্গ বলেছেন: আরবান লিজেন্ড গুলিতে একজন করে অপু তানভি.... থুক্কু, একজন করে রাফায়েল থাকলেই আর সমস্যা হত না।
++++++++++++++++++++++++++++
২৩ শে মে, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:১২
অপু তানভীর বলেছেন: বলা যায় ! দেখা যাবে যে কোন লেজেন্ডে রাফায়েলের নামও চলে এসেছে !
৩| ১৮ ই মে, ২০২০ ভোর ৪:২২
নেওয়াজ আলি বলেছেন: জানলাম । আস্তে আস্তে পড়বো
২৩ শে মে, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:১৫
অপু তানভীর বলেছেন: আস্তে আস্তে পড়ুন !
৪| ১৮ ই মে, ২০২০ সকাল ৯:৪১
ভুয়া মফিজ বলেছেন: চমৎকার একটা সিরিজ শুরু হতে যাচ্ছে। এসব লেজেন্ডারী মিথে আমার খুব আগ্রহ। চালিয়ে যান........আরো পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম।
আমাদের দেশের কোনা কান্চিতে এমন মিথ নাই? খুজে দেখেন, পান কিনা।
২৩ শে মে, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:১৬
অপু তানভীর বলেছেন: আমাদের দেশে বেশ কিছু মিথ আছে । সেগুলো আসবে আশা রাখি ।
সিরিজ তো শুরু করলাম তবে কতদুর শেষ করতে পারবো কি না কে জানে ! ইদানিং খালি ঘুম পায় ! কেবলই ঘুমাতে ইচ্ছে করে !
ধন্যবাদ !
৫| ১৮ ই মে, ২০২০ সকাল ৯:৫৩
জাফরুল মবীন বলেছেন: চমৎকার পোস্ট।প্রিয়তে রেখে দিলাম।
২৩ শে মে, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:১৭
অপু তানভীর বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ মবীন ভাই !
©somewhere in net ltd.
১| ১৮ ই মে, ২০২০ রাত ১২:২৬
রাজীব নুর বলেছেন: চমতকার পোষ্ট।