নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

www.oputanvir.com

অপু তানভীর

আমার চোখে ঠোঁটে মুখে তুমি লেগে আছো

অপু তানভীর › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পঃ সমাপ্তির পরে

০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ৮:৩৪

রিসিপশন থেকে ফোন করে জানালো আমার বউ এসেছে ।
নীতু এসেছে !
খানিকটা চমকালাম । অবাক হলাম । সেই সাথে খুশিও হলাম । মনের ভেতরে একটা আলাদা শংঙ্কা জাগলো । কেন জাগলো সেটা আমি জানি না । কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে নীতু কেন এসেছে?

নীতুর সাথে আমার ডিভোর্স হয়েছে মাত্র আট দিন । অফিসের লোকজনকে এখনও আমি কিছু বলি নি । পরিবারের লোকজন জানে। আর কাছের কয়েকজন বন্ধুবান্ধব ছাড়া কাউকেই বলি নি । আমরা বিয়ের কথা যতটা ঢাকঢোল পিটিয়ে বলি ডিভোর্সের কথা ততটা বলতে পারি না । ডিভোর্সকে আসলে কেউ ভাল চোখে দেখে না । বিশেষ করে মেয়েদের ব্যাপারে । ডিভোর্স হয়েছে মানে হচ্ছে মেয়ের মাঝে কোন না কোন সমস্যা আছে । সবার প্রথম চিন্তা এটাই আসে ।

তবে নীতু এখানে কেন এলো আমি ঠিক বুঝতে পারছি না। যখন ও আমার বউ ছিল তখন প্রায়ই আসতো লাঞ্চ আওয়ারে । ওর অফিস আর আমার অফিসটা কাছাকাছি । রিক্সাতে ২০/২৫ মিনিট লাগে । বিয়ের প্রথম প্রথম প্রায় প্রতিদিনই আমরা এক সাথে লাঞ্চ করতাম । হয় সে আসতো নয়তো আমি যেতাম। তবে সময় যাওয়ার পরে সেটা কমে গিয়েছে । এক সময়ে একেবারেই বন্ধ হয়ে গেল । তারপর তো আলাদাই হয়ে গেলাম আমরা ।

আমি ধীর পায়ে হেটে এগিয়ে গেলাম গেস্ট রুমের দিকে । দরজা খুলতে গিয়েও কেমন যেন কেঁপে উঠলো হাতটা । এমন কেন হচ্ছে ঠিক বুঝতে পারছি না । মাস দুয়েক আগেও দুজন কেউ কারো মুখ দেখতে চাইতাম না । আজকে এমন কেন হচ্ছে !

আমার দরজা খোলার আগেই দেখলাম নীতুই দরজা খুলে ফেলল । আমার দিকে তাকিয়ে হাসলো একটু । নীতুকে দেখে একটু অবাক না হয়ে পারলাম না । সাদা রংয়ের কামিজ পরেছে । সাদা লেগিংসের সাথে সাদা ওড়ণা । চোখে গাঢ় করে কাজল দিয়েছে । হাতের দিকে না তাকিয়েও আমি বলতে পারলাম যে ও আজকে হাতে মেহেদিও দিয়েছে ।
কেন !
আমার পছন্দের সাজ ! এটা ও খুব ভাল করেই জানে । শেষ কবে ওকে এই সাজে দেখেছি আমার মনেও নেই । তাহলে আজকে কেন এসব করছে ও ।

আমার দিকে তাকিয়ে আবারও হাসলো । তারপর বলল, চল লাঞ্চ করি এক সাথে !
বললাম, এখন?
-হ্যা । এখন তো লাঞ্চ আওয়ারই । তাই না । চল চল !
-না মানে?
-কেন এখন বউ নেই বলে আমার সাথে আর বসা যাবে না ?
-না আমি সে কথা বলি নি । মানে তুমি .....
-আচ্ছা চল চল । অন্য কিছু ভাবতে হবে না । এক সাথে দুপুরের খাবার খাই । তারপর তুমি তোমার দিকে আমি আমার দিকে ।

আমি কোন ভাবেই মানা করতে পারলাম না । আমি কিছুই বুঝতে পারছিলাম না । আলাদা হওয়ার আগে আমরা মোটামুটি ছয়মাস আলাদা ছিলাম । কেউ কারো সাথে কোন কথা বার্তা বলি নি । ফ্যামিলির ভেতর থেকে চেষ্টা চলেছে ঝামেলা দুর করার কিন্তু সম্ভব হয় নি । শেষ পর্যন্ত বিয়েটা ডিভোর্সের দিকে গড়ায় । পারিবারিক ভাবেই আমরা আলাদা হয়েছি । আট দিন আগেই কাগজ পত্র সব হাতে এসেছে আমাদের ।

আমরা আমাদের পরিচিত রেস্টুরেন্টেই লাঞ্চ করতে এলাম । কোনার দিকের একটা টেবিল নিয়ে বসলাম । নীতুকে কেমন যেন একটু অস্বাভাবিক মনে হচ্ছে । একটু যেন বেশি কথা বলছে । অফিসে কি হল না হল এই সব একের পর এক বলেই যাচ্ছে । তারপরই মনে হল নীতু এমন করেই কথা বলতো । লাঞ্চ করার সময় দুনিয়ার যত গসিপ হত সব আমাকে বলতো । এতোদিন ওর সাথে কথা বার্তা নেই বলেই হয়তো আমার কাছে এসব অস্বাভাবিক লাগছে । তবে আমার কেন জানি ভাল লাগছিলো । এতো দিন পরে ওর সাথে এভাবে কথা বলতে পেরে, ওখানে এভাবে দেখতে পেয়ে, ওর সাথে এভাবে সময় কাটাতে পেরে আমার সত্যিই ভাল লাগছিলো অনেক ।
আমার একদম বিয়ের প্রথম দিন গুলোর কথা মনে পরে গেল । আমাদের বিয়েটা ঠিক প্রেমের বিয়ে ছিল না । পারিবারিক ভাবে আমাদের পরিচয় হয়েছিলো । তবে বিয়ের আগে আমি মাস ছয়েক মিশেছিলাম একে অন্যের সাথে । দুজন দুজনকে পছন্দ করেছিলাম । বিয়ের পরেও চমৎকার সব সময় কেটেছিলো । ও গান শুনতে পছন্দ করে, বই পড়তে ভালবাসে । আমার এতো বইয়ের কালেকশন দেখে ও খুব ইম্প্রেড হয়েছিলো । নিজের বই গুলো এনে রেখেছিলো আমার সেলফে । আমাদের ফ্লাটে একটা ঘরই ছিল কেবল বইয়ের জন্য ।

কিন্তু তারপর হঠাৎ কেন জানি সব ফিকে হয়ে গেল । কোথায় যেন সুর কেটে গেল । প্রায় প্রতিদিন ঝগড়া হতে লাগলো । সিম্পল সব বিষয় নিয়ে ঝগতা । আমিও ধৈর্য্য ধরতে পারলাম না, নীতুও কেমন আচরন করতে শুরু করলো ।

কিন্তু আজকে নীতুর কথা বার্তা গুলো একদম অন্য রকম লাগছে । একেবারে অন্য রকম ।

খাওয়ার পরে আমরা আমরা বের রাস্তায় হাটতে লাগলাম এক সাথে । অফিস পাড়ায় এই সময়টা একটা ফাঁকায় থাকে । হাটতে হাটতে ওর অফিসের কাছে কখন চলে এসেছি টেরই পেলাম না । আসলে গল্প করছিলাম বলে টের পায় নি । ওর অফিসের ঠিক পেছনে ছোট একটা বসায় জায়গা আছে । কয়েকটা সিমেন্টের বেঞ্চ আর গাছ গাছালিতে ভর্তি । এখানেও আমরা এসে বসে গল্প করতাম কিছু সময় । তারপর ও অফিসে ঢুকে পড়তো আমি নিজের অফিসের দিকে রওয়ানা দিতাম ।

আজকেও তেমন করে বসলাম । তারপর বলল, তোমার শরীর ঠিক আছে ? আজকে অফিসে আসো নি সকালে ! নীতু এবার আমার দিকে তাকালো । তারপর বলল, আমি যে অফিসে আসি নি এটা তুমি কিভাবে জানো?
একটু থতমত খেলাম ! কি বলব খুজে পেলাম না । ওকে কেন জানি মিথ্যা বলতেও ইচ্ছে হল না । নীতু বলল, তুমি অফিসের সামনে দাড়িয়েছিলে ? অপেক্ষা করছিলে ?
-আসলে আমি ....
-গত আটদিন প্রতিদিন অপেক্ষা করছিলে আমার জন্য ? তাই না ?
আমি একটা কথা বলতে পারলাম না । সত্যিই আমি নীতুর জন্য অপেক্ষা করছিলাম । ওকে একটা বার দেখার জন্য ।
কেন এই কাজটা করছি আমি নিজেই জানি না । কেবলই মনে হচ্ছিলো যে আমি খুব মূল্যবার কিছু হারিয়ে ফেলেছি । ওকে একবার দেখার জন্য বুকের ভেতরটা কেমন করতে লাগলো ।
অথচ আমি কি চাইলে ডিভোর্সটা আটকাতে পারতাম না ?
একটু নমনীয় হলে তো এমনটা ঘটতো না !

আমি নীতুকে বললাম, তুমি কবে জানলে?
-আমি জেনেছি চার দিন আগে । আমার ম্যানেজার সাহেব হঠাৎ আমাকে বলল যে সে নাকি তোমাকে দাড়িয়ে থাকতে দেখেছে অফিসের সামনে । খানিকটা লুকিয়ে ছিলে নাকি ! আমার ঠিক বিশ্বাস হল না । পরের দিন যখন আসি কালো সানগ্লাস পরেছিলাম । আড়চোখ তোমাকে দেখতেও পেয়েছিলাম । যদিও তুমি সার্জিক্যাল মাস্ক পরেছিলে, তোমাকে চিনতে অসুবিধা হয় নি ।
নীতু চুপ করলো । আমি কি বলবো খুজে পেলাম না । ও কি বিরক্ত হয়েছে? আমাকে ঝাড়ি দেওয়ার জন্য এখানে ডেকেছে নাকি বুঝিয়ে বলার জন্য যে আমাদের মাঝে এখন আর কিছু নেই । তাই এসব করা বন্ধ করতে হবে ।
নীতু বলল, বাসায় গিয়ে আমি এক ফোটা ঘুমাতে পারি নি । পরদিন আমি অফিসে ঢোকার সময় আবারও তোমাকে দেখলাম । অফিসে ঢুকে আবার বের হয়ে এলাম । এবার তোমার পিছু নিলাম । তুমি ঠিক এখানে এসেই বসলে ! তারপর ....
নীতু কিছু বলতে গিয়ে থেমে গেল । আমি অনুভব করলাম ওর গলা ধরে এসেছে । চোখ দিয়ে একটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো । তারপর গাঢ় কন্ঠে বলল, তুমি কাঁদছিলে ! আমার জন্য কাঁদছিলে ?

নীতু সব দেখেছে । আমি ওর চোখের দিকে তাকিয়ে রইলাম কেবল । তারপর আস্তে করে বললাম, আমাদের মাঝে যখন ঝামেলা চলছিলো তখন একটা অনুভূতি ছিল যে তুমি আমার ! আমারই আছো কিন্তু যখন আলাদা হয়ে গেলাম তখন কি যে মনে হয়েছিলো আমি বোঝাতে পারবো না । বারবার কেবল মনে হচ্ছিলো যে আমি আমার জীবনের সব থেকে মূল্যবান সম্পদটা হারিয়ে ফেলেছি ।
নীতুর দিকে তাকিয়ে দেখি সে ওর চোখ দিয়ে আবারও ভাল করে পানি গড়িয়ে পড়ছে । তবে কাজল গলে পড়ছে না । সম্ভবত ওয়াটারপ্রুফ কাজল দেওয়া । নীতু বলল, কাল তোমাকে ওভাবে দেখার পরে কি যে হল আমার মনে আমি জানি না । আমার কেবল মনে হল যে তোমাকে আমার আবারও চাই । যে মানুষটা আমার জন্য এভাবে কাঁদতে পারে তাকে ফেলে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব না ।

এই কথা বলতে বলতেই নীতু আমার ঠোঁটে চুমু খেলো । এতো গাঢ় ভাবে আর এতো আবেগ মাখা চুম্বন ওকে আমাকে করেছে কিনা আমার মনে নেই । কিছু সময় যেন আমরা এই জগতেই ছিলাম না ।


আমি আর অফিসে গেলাম না । আরও ঘন্টা খানেক বসেই রইলাম সেই পার্কের । এই ছয় মাসে আমাদের মাঝে তেমন কোন কথা হয় নি । দুজনই দুজনের ঈগো নিয়ে বসে ছিলাম কেবল । একবার যদি কেউ ঈগো সরিয়ে রেখে এগিয়ে আসতাম তাহলে হয়তো আলাদা হওয়ার প্রশ্নই আসতো না ।
সামনে কি হবে আমি জানি না । আমরা আমাদের বাসায় কিভাবে আমার সব কিছু বলবো সেটাও বলতে পারি না । সব আস্তে ধীরে ভাবা যাবে । তবে একটা প্রতিজ্ঞা আমরা একে অন্যের কাছে করলাম যে দ্বিতীয়বার আর আমরা এই ভুল করবো না । ভালোবাসার সামনে আর ইগো আসবে না । যদি সমস্যা হয় তাহলে দুজন মন খুলে কথা বলবো আলোচনা করবো । যেন একে অন্যের কাছ থেকে দুরে চলে যেতে না হয় আর ! ভালোবাসার মানুষের কাছ থেকে দুরে থাকাটা কতটা কষ্টের সেটা আমি আর নীতু দুজনেই খুব ভাল করেই বুঝতে পেরেছি ।এই কষ্ট আর দ্বিতীয়বার পেতে চাই না ।

মন্তব্য ১৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ৮:৩৯

বিএম বরকতউল্লাহ বলেছেন: ভাল লেগেছে। শুভ কামনা।

০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ৮:৫৯

অপু তানভীর বলেছেন: ধন্যবাদ :)

২| ০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ৮:৪৭

নিয়ামুল বলেছেন: ভালোবাসার মাঝে যখন ইগো আসে ভালো সম্পর্ক তখন নষ্ট হয়ে যায়।

০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ৯:০০

অপু তানভীর বলেছেন: সত্য !

৩| ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১:৪৩

রাজীব নুর বলেছেন: নীতু সুন্দর নাম।

ভালো লিখেছেন। পড়ে বিরক্ত লাগে নি।

০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০২০ দুপুর ১:৪৯

অপু তানভীর বলেছেন: ধন্যবাদ

৪| ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০২০ দুপুর ১:৩০

নেওয়াজ আলি বলেছেন: সুন্দর । ভাল লাগল।

০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০২০ দুপুর ১:৪৯

অপু তানভীর বলেছেন: ধন্যবাদ

৫| ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ৯:৪২

মা.হাসান বলেছেন: মিস কল বা ফেস বুক থেকে প্রেম, যত দ্রুত প্রেক তার চেয়ে দ্রুত বিয়ে, আরো দ্রুত ছাড়াছাড়ি।
বিয়ে আর বিচ্ছেদ কি ছেলে খেলা? সব গুলারে ধরে মাইর দেয়া দরকার।
তবে মাইর দেয়ার পরে মিলমিশ করা দেয়া যায়, এক বার মাইর খাইলে আর বিচ্ছেদের কথা বলবে না।

০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ৮:৩১

অপু তানভীর বলেছেন: নিয়ম করে মাইর দেওয়ার উপর আর ঔষধ নাই এটা আসলেই সত্য !

মানুষ কিছু হারিয়েই সেটার প্রকৃত মূল্য বুঝতে পারে । কাছে থাকলে সেটার ভ্যালু বুঝতে পারে না ।

৬| ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১০:৩০

সন্ধ্যা প্রদীপ বলেছেন: হ্যা ভালবাসার মাঝে ইগো একটা বড় সমস্যা।

গল্প দারুন লেগেছে।শুভকামনা

০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ৮:৩৩

অপু তানভীর বলেছেন: ভালোবাসার ভেতরে ঈগো বড় সমস্যা । এটা চলে এলে সম্পর্কে ফাটল ধরবেই !

ধন্যবাদ

৭| ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ দুপুর ১:৪৪

খাঁজা বাবা বলেছেন: ইগো ই যত সমস্যা

২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৫৬

অপু তানভীর বলেছেন: আমি অবশ্য ইগোর পক্ষে ..... :D

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.