নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পানের পিক ফেলে চেয়ারম্যান জলিল মোল্লা সামনে দাড়ালো ইদ্রিস আলীর দিকে তাকালো । ইদ্রিস আলীর ছেলের ফোন ছিনতাই হয়েছে গতকাল রাতের বেলা । ইদানীং রতনপুরের অপরাধের পরিমানটা একটু বেড়ে গিয়েছে । প্রায়ই দেখা যায় সেখানে নানান রকমের অপরাধ সংগঠিত হচ্ছে । গ্রামের মাতব্বর হওয়ার কারণে মানুষজন জলিল মোল্লার কাছে সব কিছুর নালিশ নিয়ে হাজির হয় । জলিল মোল্লা একাধারে গ্রামের মোড়ল এবং চেয়ারম্যান । সেই হিসাবে গ্রামে সবাই তার কথা শুনে । তার দেওয়া বিভিন্ন ফতেয়া অনুযায়ী গ্রামের নানান সমস্যার সমাধান করা হয় !
গ্রামে কোন অপরাধ কিংবা অন্য কোন ঝামেলা হলে আগে তার কাছে খবর আসা চাই । সে বলতে গেলে নিজেই সব কিছু বিচার করে । থানা পুলিশ করতে দেয় না । তার কথ হচ্ছে সে থাকতে থানা পুলিশ কেন । সে কি মরে গেছে নাকি । তার কাছে সব সময় ন্যায় নিচার পাওয়া যায়।
ইদ্রিস আলী গ্রামের টাকা পয়সাওয়ালাদের একজন । তার দুই ছেলে শহরে থাকে । ভাল চাকরি করে । ইদ্রিস আলী নিজের পাটের আড়ত আছে । সেখান থেকেও ভাল টাকা পয়সা আয় হয় । তার ছোট ছেলে এখনও কলেজে পড়ে । সেই ছেলেকে ইদ্রিস আলী একটা একটা দামী ফোন কিনে দিয়েছিলো । সেই ফোনটাই গতকাল ছিনতাই হয়ে গেছে ।
জলিল মোল্লা অনেকটা সময় মন দিয়ে শুনলেন ইদ্রিস আলীর কথা । ইদ্রিস আলী এও জানালো যে কে ছিনতাই করে সেই বিষয়ে সে জানে । সম্পর্কে সে জলিল মোল্লার শ্যালক, নাম ইয়াকুব । যদিও মুখ ঢেকে ছিনতাই করেছে তবে ইদ্রিস আলীর ছেলে তাকে চিনতে পেরেছে । তবে সেই কথা সরাসরি বলতে পারলো না ইদ্রিস আলী । জলিল মোল্লা বলল, রাত বিরাইতে এতো দামী ফোন নিয়ে তোমার পোলা বাইর হইছে কেন ? তুমি জানো না এতো দামী ফোন যদি কেউ দেখে তাহলে যে কারো লোভ জন্মাবে ।
ইদ্রিস আলী বলতে গেল, কিন্তু .....
-তাকে মাঝ পথেই থামিয়ে দিয়ে মোল্লা জলিল বলল, শুনো এইবার থেকে সাবধানে থাকবা । বাইরে বের হওয়ার ফোন নিয়ে বের হবা না । ঠিক আছে?
আশে পাশে যারা ছিল সবাই মাথা নাড়াতে নাড়াতে বলল, ঠিক ঠিক, দোষ তোমার পোলারই । এতো দামী ফোন নিয়ে বের হওয়া ঠিক হয় নাই । যদি ফোন না নিয়ে বের হইতো তাহলে আজকে চুরি হইতো না । এইবার থেকে ফোন নিয়া বাইর হইবা না।
জলিল মোল্লা বলল, আর শুনো থানা পুলিশের দরকার নেই । গ্রামের একটা সম্মান আসে । এই গ্রামে পুলিশ আইলে গ্রামের মান সম্মান নষ্ট হইবো ।
সাথে সাথে সবাই বললল, হ, একদিন ঠিক, একদম ঠিক ।
তার কদিন পরে জলিল মোল্লার কাছে আবারও নালিশ এসে হাজির । এবার নালিশ নিয়ে হাজির হয়েছে গ্রামের একজন গরীব কৃষক, নাম তার রিপন মিয়া । আজকে সে জানালো যে রাতে আসতে গিয়ে তার মোবাইল ছিনতাই হয়েছে ।
জলিল মোল্লা আবারও বলল, রাতে দামী ফোন নিয়ে বাইরে বের হইছো কেন?
রিপন মিয়া বলল, হুজুর আমি গরীব মানুষ । দামী ফোন কোথায় পাবো ? আমার নোকিয়া এগারোশ মডেল । কিন্তু আমার জন্য এটাই অনেক বড় কিছু ।
জলিল মোল্লা কিছু সময় গম্ভীর মুখে তাকিয়ে রইলো । সভায় আরও অনেকেই উপস্থিত রয়েছে । তারা জলিল মোল্লার দিকে তাকিয়ে আছে । সে কী বলে সেটা শুনতে চায় তারা । দামী ফোন দেখলে চোরের লোভ লাগে বুঝলাম কিন্তু কম দামী ফোন ছিনতাইয়ের পেছনে যুক্তি কি! এটা তারা শুনতে চায় !
জলিল মোল্লা বলল, আসলে কি হয়েছে, এই দেখো গ্রামে এখন কত মানুষ টাকা পয়স আয় করতেছে । সবাই দামী দামি ফোন নিয়ে তারা ঘুরে বেড়াচ্ছে । এই দামী ফোন দেখেই ছিনতাইকারী মনে একটা তীব্র আকাঙ্খা জাগতেছে । কিন্তু তারা এখন আর সেই সুযোগ পাচ্ছে না সেই দামী ফোন নেওয়ার। কারণ এখন তারা সবাই সাবধান হয়ে গেছে । কিন্তু তাদের তো সেই দামী ফোনের লোভে পেয়ে বসেছে। তাই রাতের বেলা একা পেয়ে এই কমদামী ফোন নিয়েই তারা চলে যাচ্ছে । বুঝেছো এইবার ?
উপস্থিত সবাই বলল, ঠিক ঠিক একদম ঠিক । আপনি একদম ঠিক বলেছেন । সবাইকে এখন থেকে যে যার দামী ফোন আছে সেগুলো নিয়ে বাইরে বের হবে না । কেউ কোন ফোন নিয়েই আর বের হবে না । ছিনতাইকারী যেন দেখতেই না পারে। তাহলেই এই ফোন ছিনতাই দুর করা যাবে ।
গ্রামের সবাই তাই করা শুরু করলো । যে যে দামী ফোন বের করতো সবাই ফোন লুকিয়ে ফেলল । কম দামী ফোন নিয়েই বাইরে বের হত । কিন্তু দেখা গেল তাতেও ফোন ছিনতাই দুর হল না । ঠিকই একই ভাবে এরওর কাছ থেকে ফোন ছিনতাই হতে শুরু করলো । এরপর সবাই আবারও মোল্লা জলিলের কাছে এসে হাজির হল । সব কিছু শুনে মোল্লা জলিল বলল, এটার পেছনেও কারণ আছে । মানুষজন দামী ফোন ব্যবহার করা বন্ধ করেছে তো কী হয়েছে, ছিনকারীরা এখন টিভি দেখছে সিনেমা দেখছে ইন্টারনেটে দামী দামী ফোনের ছবি দেখছে । এই যে কদিন আগে আইফোন বারো বের হল । ছবি দেখে তো আমারই লোভ লাগে । বুঝো তাইলে অবস্থা ! এই গুলোর ছবি দেখে ছিনতাই কারীরা মনকে বুঝাতে পারে না । তাই তারা ছিনতাই করে । যতদিন নান টিভি মুভি আর ইন্টানেটে এই সবদামী দামী মোবাইলের ছবি ভিডিও দেখা বন্ধ হবে ততদিন এই ফোন ছিনতাই বন্ধ হবে না । বুঝেছো সবাই !
সবাই মাথা নাড়লো । তারা খুব বুঝতে পেরেছে ।
তারপর কেটে গেছে কয়েকদিন । নিজের একটা কাজে জলিল মোল্লা শহরে গিয়ে হাজির হল । কাজ শেষ করতে করতে বেশ রাত হয়ে গেল । শহর থেকে সরাসরি বাস রতনপুর পর্যন্ত আসে না । দুই গ্রাম আগেই থেমে যায় । সেখান থেকে আবার ভ্যান কিংবা অটো রিক্সাতে করে আসতে হয় । সেদিন একটু বেশি দেরি হয়ে যাওয়ার কারণে কোন কিছুই ছিল না । জলিল মোল্লা হেটে বাসার দিকে আসছিলো । তখনই তিনজন কালো কাপড় পরা যুবক মোল্লাকে ঘিরে ধরলো । তারপর তার কাছ থেকে সব কিছু ছিনিয়ে নিল । বাঁধা দিতে চেষ্টা করাতে তিন মিলে তাকে বেদম মাইর দিল । এমনই মাইর দিলো ঠিকঠাক মত সে হাটতেও পারছিলো না ।
কোন মতে সে নিজের গ্রামে পৌছালো । চিকিৎসা নিয়ে বসার মত উপযোগী হলে সে জরূরী ভিত্তিতে গ্রামে মিটিং ডাক দিল । সবাই তার দুঃখের কথা শুনে খুব মর্মাহত হল । মুখ দিয়ে চুকচুক করতে লাগলো । সবাই খুব কষ্ট পেয়েছে ।
জলিল মোল্লা বলল, এবার কিছু একটা করতেই হবে । পুলিশে খবর দিতে হবে ।
সবাই হায়হায় করে উঠলো । করেন কী করেন কী ! গ্রামের একটা মান সম্মান আছে না !!
ইদ্রীস আলী উঠে দাড়িয়ে বলল, কী আর করবেন মোল্লা সাহেব, ছিনতাইকারী এই যে দামী ফোন, অন্যের ধনসম্পদ দেখে লোভী হয়ে যায় । তখন তারা আর কী করবে যাকে সামনে পাবে তারটাই তো কেড়ে নেবে । আপনি ওভাবে সামনে গেলেন কেন এতো রাতের বেলা । এতো রাতের বেলা যাওয়া মোটেই উচিৎ হয় নাই । তারপর উপর আবার বাঁধা দিতে গেছেন, একটু মারবেই । মারবে না বলেন !
জলীল মোল্লা আর কী বলবে । তার যুক্তি তো ঠিকই ছিল এতোদিন কিন্তু নিজের উপরেই যখন যুক্তি চলে এল তখন বুঝতে পারলো যে কতখানি সঠিক না বেঠিক ছিল সে !
২০ শে অক্টোবর, ২০২০ রাত ১২:৪৬
অপু তানভীর বলেছেন: আরেকটু চেষ্টা করেন । মনে পড়বে।
২| ১৮ ই অক্টোবর, ২০২০ রাত ১২:২৮
জনৈক অপদার্থ বলেছেন: পর্দা, ধর্ষন, ওয়াজে হুযুরদের ফতোয়া...... ঠিক ঠিক এগোচ্ছি কি?
২০ শে অক্টোবর, ২০২০ রাত ১২:৪৬
অপু তানভীর বলেছেন: অনেকটাই....
৩| ১৮ ই অক্টোবর, ২০২০ রাত ১:০৩
রাজীব নুর বলেছেন: মোল্লারা তাদের নিচু বুদ্ধি দিয়ে দেশটাকে শেষ করে দিবে নাকি!!!
২০ শে অক্টোবর, ২০২০ রাত ১২:৪৭
অপু তানভীর বলেছেন: তারা অতি বুদ্ধিমান
৪| ১৮ ই অক্টোবর, ২০২০ দুপুর ১:১৩
রাশিয়া বলেছেন: @রাজীব নুর, এটা কোন সত্য ঘটনা না। লেখক জলিল মোল্লাকে এখানে মেটাফোর হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। যার যা ভালো লাগেনা, তাঁকে গল্প আকারে একটা ফালতু চরিত্র হিসেবে উপস্থাপন করে। তাছাড়া মোল্লা হচ্ছে জলিলের নাম, টাইটেল না। আমাদের দেশের মোল্লারা এখন আর 'লালসালু'র মজিদ মিয়া টাইপ মোল্লা নেই। জ্ঞান বিজ্ঞানের উতকর্ষতার সাথে পাল্লা দিয়ে তারাও এগিয়ে গেছে। ইসলামী জ্ঞানের সামান্যতম অধিকারীও জলিল মোল্লার এত ফালতু যুক্তি মেনে নেবেনা।
ইসলাম যুক্তির ধর্ম। এর পরতে পরতে যুক্তির উপস্থাপনা আছে। কাজেই, ইসলামী জ্ঞানে জ্ঞানী কোন মোল্লাকে কাঠমোল্লা বলার সুযোগ নেই।
৫| ২০ শে অক্টোবর, ২০২০ রাত ৯:৩৬
শায়মা বলেছেন: হা হা নিজের ঘাড়েই তাল পড়েছে। হা হা
২১ শে অক্টোবর, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৪৫
অপু তানভীর বলেছেন: আরও জোরে পড়া দরকার ছিল । বাস্তবে আরও জোরে পড়লে ভাল হবে ।
৬| ২০ শে অক্টোবর, ২০২০ রাত ৯:৪৭
সেলিম আনোয়ার বলেছেন: সময় উপযোগী।
২১ শে অক্টোবর, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৪৭
অপু তানভীর বলেছেন: যদি একজনেরও মাথায় ঢুকে...।
৭| ২১ শে অক্টোবর, ২০২০ রাত ৮:০৩
এইচ তালুকদার বলেছেন: জ্বলন্ত খলিল থুক্কু জলিল মোল্লা ভালো লোক,তাকে এভাবে গনধোলাই দেয়া কি ঠিক হল?
©somewhere in net ltd.
১| ১৭ ই অক্টোবর, ২০২০ রাত ৯:৫৫
আমিন রবিন বলেছেন: ঘটনাটা শুনে কি একটা মনে পড়ি পড়ি করেও পরছেনা!