নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

www.oputanvir.com

অপু তানভীর

আমার চোখে ঠোঁটে মুখে তুমি লেগে আছো

অপু তানভীর › বিস্তারিত পোস্টঃ

রূপকথার গল্পঃ ইরার বিয়ে ...

২২ শে নভেম্বর, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৩৮

ইরাকে আমি একেবারে শুরু থেকেই বলেছিলাম কথাটা । একেবারে শতভাব নিশ্চিত না হয়ে আমাকে যেন কোন কথা না দেয় । মানুষ যখন প্রথমে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে তখন আবেগের কারণে এমন অনেক কথাই দিয়ে ফেলে যা পড়ে সে আর রাখতে পারে না। কিন্তু এই রাখতে না পারার কারণে অন্য পাশে থাকা মানুষটার জীবনে একটা বড় রকমের ধাক্কা খায় । অনেকে এই ধাক্কা আর সামলে উঠতে পারে না । তাই ওকে বলেছিলাম আমাকে এমন কোন কথা যাতে না দেয় যে কথা সে পরে গিয়ে রাখতে পারবে না ।

সম্পর্ক শুরু পরপরই একদিন ইরা আমাকে নিয়ে অনেক স্বপ্নের কথা বলতো । এমনটা সবাই বলে । প্রথম প্রথম কত কথা মনে হয় । কত কিছু করতে ইচ্ছে করে । ইরার চোখেও ঠিক একই স্বপ্ন ছিল । আমার এসব দেখে ভাল লাগতো । ওকে আরও বেশি করে পছন্দ করা শুরু করলাম ।

একদিন মনে হল ওর সাথে সম্পর্কটা আরও একটু গভীরে নিয়ে যাওয়া উচিৎ । এবং এই নিয়ে যাওয়ার আগে আমার নিশ্চিত হওয়া দরকার যে মেয়েটা সত্যিই আমাকে আমার হাত ধরে রাখতে পারবে কি না ! যখন কথাটা জানতে চাইলাম তখন প্রথম বাক্যেই বলল, অবশ্যই । আমি তোমার সাথেই আমার জীবনের বাকি সময়টা কাটাতে চাই ।
আমি বললাম, এখনই চট করে জবাব দিও না । একটু ভাবো ।
-মানে !
আমার কথা শুনে যেন একটু বেজার হল ও । ভাবলো হয়তো ওর কথা আমমি বিশ্বাস করছি না । ইরার হাত ধরলাম । তারপর বললাম, জীবনে অনেক সময় অনেক কিছু আমাকে করতে হয় । তাই আমি বলছি আমাকে কথা দেওয়ার আগে একটু চিন্তা কর ভাল করে । যেমন তোমাকে আমি বিয়ে করতে চাই । পড়াশুনা শেষ করে একটা চাকরি বাকরি জোগার করে বিয়ে করতে ইচ্ছুক আমি । এখন প্রশ্ন হচ্ছে মাঝে অনেক ঝামেলা হয়ে যেতে পারে । এমন হতে পারে যে তোমার বাবা রাজি হল না বিয়ে দিতে । তখন?
-কেন রাজি হবে না । তুমি যদি একটা ভাল চাকরি পাও । কেন রাজি হবে না।
-যদি না পাই । তাহলে?

এই কথাটা শুনে ইরা যেন একটু চমকালো । একটু যেন থমকে গেল । আমি ওকে বলল, দেখো সামনে কি হবে সেটা আমরা কেউ বলতে পারি না । এমন হতে পারে যে আমার চেষ্টা সত্ত্বেও একটা ভাল কিছু আমি করতে পারলাম না । কিংবা দেরি হল । কিন্তু তোমার বাবা রাজি হলেন না বিয়ে দিতে । তখন কি করবে? আমি তোমাকে জিজ্ঞেস করছি যে তোমার জীবনের সব থেকে গুরুত্ব কাকে দিবে ?


ইরা কেমন যেন চুপ করে রইলো । আমি ওকে আরও একটু সহজ করার জন্য বললাম, শুনো মন খারাপ করার কিছু নেই । তোমার জীবনে আমার থেকে তুমি তোমার বাবা মাকে গুরুত্ব দিতেই পারো এবং দেওয়া উচিৎও । সেটা কথা না । আমমি সব থেকে খারাপটা চিন্তা করছি । সেটাই যে হবে তা বলছি না । এখন মন দিয়ে শুনো আমি কি বলি । আমাদের একটা অপটিমিস্টিক চিন্তা যে পড়াশুনা শেষ করে চাকরি কিংবা ব্যবসা করে নিজের পায়ে দাড়াবো তারপর তোমাকে বিয়ে করবো । এখন ধর আমি নিজের পায়ে দাড়াতে পারলাম না ঠিক মত, ভাল চাকরি পেলাম এবং তোমার বাবা আমার সাথে বিয়ে দিতে রাজি হলেন না । তখন তুমি কি করবে? বল না বাবাকে রাজি করানোর চেষ্টা করবো । ধর তোমার বাবা কোন ভাবেই রাজি হলেন না । তখন কি করবে ? আমার কাছে চলে আসবে নাকি আসবে না ? ইরা খানিকটা দ্বিধায় পড়ে গেছে যেন ।

আমি বললাম, সময় করে সিদ্ধান্ত নাও । তারপর আমাকে জানাও । কথা দিচ্ছি যে তোমার সিদ্ধান্ত যা হোক না কেন, আমাদের বর্তমান সম্পর্কের উপরে সেটা কোন প্রভাব ফেলবে না ।
-তাহলে কেন জানতে চাইছো?
-নিজের মনকে আমি সেভাবে তৈরি করে নিবো। যখন জানবো পরিস্থিতি যতই খারাপ হোক, তুমি ছেড়ে যাবে না তখন মানসিক একটা অবস্থা আর পরিস্থির কারণে আমরা আলাদা হয়ে যেতে পারি এটা জানলে মানসিক ভাবে আগে থেকেই একটা প্রস্তুতি নেওয়া থাকবে ।

আমি আগে থেকেই জানতাম ইরা বলবে যে সে সব কিছু পারবে কিন্তু বাবার মনে কষ্ট দিতে পারবে না । ওর বাবা ওকে যদি আমার সাথে বিয়ে দিতে রাজি না হয় তাহলে সে বিয়ে করবে না । তবে সে সর্বাত্মক চেষ্টা করবে বাবাকে রাজি করানো । এটা অবশ্য সব মেয়েই বলে । বিয়ের ব্যাপারে যখন প্রেমিক থেকে ভাল ছেলে যোগার হয় তখন মেয়ে কোন ভাবেই বাবাকে রাজি করাতে পারে না ।

শেষ পর্যন্ত ইরাও পারলো না । পড়া শুনো শেষ করে কিছুতেই মন মত একটা চাকরি জোগার করতে পারলাম না । টাকা পয়সা টুকটাক আয় হতে লাগলো কিন্তু মেয়ের বাবারা পছন্দ করে এমন কোন কাজ যোগার হল না । দেখতে দেখতে ইরার বিয়ে ঠিক হয়ে গেল । ছেলে ইঞ্জিনিয়ার । একটা বেসরকারি ফার্মে উচ্চ বেতনে চাকরি করে ।

আমার মনে অবশ্য খুব একটা কষ্ট নেই । খারাপ যে লাগছে না সেটা বলব না । এই তিন বছর ইরার সাথে আমি চুটিয়ে প্রেম করেছি । একটা প্রেমিক হিসাবে যা যা করার সব কিছু করেছি । ইরাও প্রেমিকার সব দায়িত্ব পালন করেছে । এবং এমন কি আমরা লুকিয়ে বেশ কয়েকবার কক্সবাজার সেন্টমার্টিন পর্যন্ত বেড়াতে গিয়েছি । সেই সব উত্তাল রাতের কথা আমার মনে সব সময় দাগ কেটে থাকবে । আমি জানি ইরাও ভুলতে পারবে না কোন দিন ।

ইরার বিয়ের আগের দিন আমাদের শেষ দেখা হল । ধানমণ্ডি লেকের বসে ছিলাম দুজন অনেকটা সময় । ইচ্ছে করেই কোন রেস্টুরেন্টে বসি নি । পুরোটা সময় ওর হাত ধরে বসে ছিলাম আমি । যাওয়ার সময় হলে ইরা হঠাৎ আমার ঠোঁটে গভীর করে একটা চুমু খেল । এতো তীব্র ভাবে ওকে আগে চুমু খেতে দেখি নি আমি । যাওয়ার সময় যখন ওকে রিক্সাতে তুলে দিলাম ওর চোখের পানি দেখে আমার মনে হল আমাকে ছেড়ে যেতে মেয়েটার সত্যিই কষ্ট হচ্ছে । হয়তো সত্যিই মেয়েটা চেয়েছিলো আমার সাথে ঘর করতে কিন্তু পরিস্থির কারণে আমাদের এক সাথে থাকা হল না ।

রাতের বেলা ঘুম এল না । আসার কথাও না । যতই আগে থেকে জানা থাকুক আর মানসিক ভাবে প্রস্তুতি থাকুক না কেন নিজের ভালোবাসার মানুষের বিয়ে হয়ে যাচ্ছে সেটা মেনে নেওয়া খুব একটা সহজ না । সকালবেলা আরেকটা পাগলের মত কাজ করে ফেললাম । ঠিক করলাম যে শেষ বারের মত আরেকবার ইরাকে দেখতে যাবো । দেখি ওকে বিয়ের সাজে কেমন লাগে ! সেই হিসাব মত কমিউনিটি সেন্টারে হাজির হয়ে গেলাম । তাছাড়া কাচ্চি খাওয়ার একটা ব্যাপার আছে ।

বসে আছি কমিউনিটি সেন্টারে এমন সময় হঠাৎ লক্ষ্য করলাম কিছু মানুষের মাঝে কেমন যেন চাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে । এক কান দুকান করতে করতে আমার নিজের কানেও কথাটা এসে হাজির হল ।
কনে পালিয়েছে !
বরের ছোট ভাই নাকি গিয়েছিলো ইরাকে পার্লার থেকে নিয়ে আসতে । কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখে সে নাই । তার ফোনও নাকি বন্ধ । তারপর কয়েক স্থানে ফোন দেয় এবং নিশ্চিত হয় যে কনে আর নেই । সে পালিয়েছে।

সবার আগে আমার মনে যে কথাটা এল সেটা হচ্ছে আমি তো এখানে । ইরা কার সাথে পালালো !
এই কথা যখন ভাবছি তখন আমার ফোন বেজে উঠলো ।

ইরার ফোন !

আমি ফোন রিসিভ করলাম ।

-কোথায় তুমি ?
আমি কি বলবো বুঝতে পারলাম না । উত্তর না দিয়ে বললাম, তুমি কোথায় ?
-তোমার বাসার সামনে । তুমি কোথায়?
একটু দম নিয়ে বললাম, তোমার বিয়েতে !
ইরার মুখটা আমি কল্পনা করার চেষ্টা করলাম । বুঝতে পারছিলাম যে ও নিজের রাগ সামলানোর চেষ্টা করছ. তারপর ঠান্ডা গলাতে বলল, তুমি ওখানে কি কর?
-না মানে ভাবলাম শেষ বারের মত তোমাকে দেখি একটু । আর কাচ্চিটা ভাল শুনেছি ।
-তোমাকে আমি কাচ্চি খাওয়াচ্ছি । ১০ মিনিট সময় দিলাম । কিভাবে এখানে আসবা আমি জানি না । ১১ মিনিটের মাথায় আমি ফিরে যাবো । ঐ সায়েমের সাথে বিয়ে করে ফেলবো।

মানুষ জীবনে দ্বিতীয়বার সুযোগ খুব কমই পায় । আমি পেয়েছি । আমি টেক্সি সিএনজির ধার দিয়ে গেলাম না । দৌড় শুরু করলাম কেবল । যখন ইরার সামনে হাজির হলাম তখন ১৪ মিনিট পার হয়ে গেছে যদিও । তবে দেখলাম ইরা ফিরে যায় নি ।

আমাকে দেখে এগিয়ে এল । বউ সাজেই দাড়িয়ে রয়েছে । ইস কি সুন্দরই না লাগছে ওকে ! আমার কপালের ঘাম দেখে ও নিজের হাতে টিস্যুর দিয়ে ঘাম মুছিয়ে দিল । তারপর বলল, আগে চল মগবাজার কাজী অফিসে । আব্বা আমাকে খুজে বের করে ফেলতে পারে যে কোন সময়ে । আগে বিয়ে করে বিপদ মুক্ত হই ।

ওকে নিয়ে যখন কাজী অফিসে ঢুকছি তখনও ঠিক বিশ্বাস হচ্ছে না যে ইরার সাথে সত্যিই বিয়ে হতে চলেছে । কথা না দিলেও ইরা আমাকে ছেড়ে যাই নি ।



বাস্তবে এসব কিছুই হয় না । কেবল রূপকথাতেই হয় ।

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে নভেম্বর, ২০২০ রাত ৮:৪৪

চাঁদগাজী বলেছেন:



এই রকম গল্প কয়েকটা লিখেছেন, নাকি ১'টাকে কয়েকবার প্রকাশ করেছেন?

২| ২৩ শে নভেম্বর, ২০২০ রাত ৩:৪১

রাজীব নুর বলেছেন: গল্পটা নাটক সিনেমার মতোন মনে হলো।

২৩ শে নভেম্বর, ২০২০ সকাল ১১:৩৭

অপু তানভীর বলেছেন: সব গল্প দিয়েই নাটক সিনেমা বানানো যায় । জীবন মানেই সিনেমা !

৩| ২৩ শে নভেম্বর, ২০২০ সকাল ১০:৫২

বংগল কক বলেছেন: অপু তানভির স্ট্যান্ডার্ড হিসাবে নিম্নমানের গল্প, শুরুটা ভালই হয়েছিল কিন্তু দ্রুত শেষ হয়ে গেল। মাইনাস।

২৩ শে নভেম্বর, ২০২০ সকাল ১১:৩৮

অপু তানভীর বলেছেন: হয়তো আপনার কথা ঠিক । ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য !

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.