নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
তৃষার সাথে শেষ কবে আমি বেড়াতে গিয়েছিলাম সেটা আমার মনে নেই । আমাদের বিয়ের সময় হানিমুনে গিয়েছিলাম দিন কয়েকের জন্য । তবে সেটা মাঝ পথেই ছেড়ে চলে আসতে হয়েছে ওর কাজের জন্য । অন্য দিকে হানিমুনে থাকলেও দিনের বেশ কিছু সময় সে ফোনে ব্যস্ত থাকতো তার অফিসের কাজে । কাজ ছাড়া মেয়েটা যেন কিছুই বোঝে না । সেই মেয়েই যখন আমাকে বলল চল কোথাও থেকে ঘুরে আসি তখন মনে হল তৃষার শরীর ভাল আছে তো ! আমি দ্রুত ওর কপাল পরীক্ষা করে দেখলাম তাপমাত্রা ঠিক আছে কিনা ।
তৃষা খানিকটা বিরক্ত হয়ে বলল, ঢং কর না তো । যাবা কি যাবা না বল । নয়তো আমি একাই যাই ।
আমি দ্রুত বললাম, আরে আরে অবশ্যই যাবো ।
ঠিক হল কক্সবাজারেই যাবো । আমি দ্রুত প্লেনের টিকিট কাটতে যাবো তখন তৃষা আমাকে অবাক করে দিয়ে বলল, প্লেনে না, গাড়ি নিয়ে যাবো!
-মানে কি? এতো পথ গাড়ি চালিয়ে যাবা?
-তুমি সাথে আছো না?
-হঠাৎ এতো রোমান্টিক হচ্ছো? কাহিনী কী শুনি?
-কোন কাহিনী নেই । কেবল মনে হল বিয়ের পরে তোমাকে একদম সময় দেওয়া হয় না । এতো কাজ কর্ম করে কী হবে যদি ভালোবাসার মানুষটাকে সুখী না করা গেল । চল চল আর দেরি করে লাভ নেই ।
প্লান খুব সিম্পল । আমরা গাড়িতে করে বের হব । কক্সবাজার পৌছাবো তারপর সেখানে দু একদিন থেকে আবার গাড়িতে ফেরৎ আসবো । পথে থেমে খাওয়া হবে যেখানে পছন্দ হয় । যদিও তৃৃষা বাইরের খাবার একদম পছন্দ করে না তবে মাঝে মাঝে ব্যতিক্রম করাই যায় !
রাতের বের হয়ে গেলাম । কুমিল্লা পার হতে হতে রাত একটা বেজে গেল । এরপরই রাস্তা ঘাত একটু নির্জন হল । যেহেতু বৃহস্পতিবার না তাই গাড়ির ভীড় একটু কম । আমাদের গাড়ি দ্রুত এগিয়ে যেতে শুরু করলো । গাড়িতে মৃদ্যু স্বরে গান বাজছে আমরা একে অন্যের সাথে কথা বলছি । কতদিন পরে এমন একটা সময় এল আমি নিজেও জানি না । দুজনেই কাজে কর্ম ব্যস্ত । আমার থেকে তৃষা যেন একটু বেশি ব্যস্ত । এমন সময় পেয়ে আমার খুবই ভাল লাগছিলো ।
সীতাকুন্ড পার হতেই তৃষা হঠাৎ বলল, এই চল আগে রাঙ্গামাটি যাই।
-মানে কী?
-বললাম আগে চল রাঙ্গামাটি যাই । ওখানে একদিন থেকে তারপর কক্সবাজারে যাবো।
-বুকিং !
-আরে রাখো বুকিং ! একদিনের জন্য কিছু হবে না । চল তো !
একবার তৃষার মনে যা এসেছে তা কোন ভাবেই দুর করা যাবে না । আর আমার কাছে তৃষার সাথে সময় কাটানোই ছিল মূখ্য ব্যাপার । কক্সবাজার গেলাম নাকি রাঙ্গামাটি সেটা কোন ব্যাপার না । গাড়ি একটু ঘুড়িয়ে আমরা চললাম রাঙ্গামাটির দিকে । যদিও এই রাস্তা আমার কিংবা তৃষার কারোই ঠিক চেনা না । তবে খুব বেশি চিন্তার কোন কারণ নেই, আজকের এমন দিনে রাস্তা চেনা খুব একটা সমস্যা না । গুগল ম্যাপে গন্তব্য নির্ধারণ করলাম । তারপর আবারও যাত্রা শুরু করলাম । প্রথম প্রথম সব ঠিকই ছিল । আমরা একই ভাবে কথা বলতে বলতে, গল্প করতে করতে থাকলাম । আমাদের গাড়ি এগিয়ে যেতে থাকলো । বেশ কিছুটা সময় পার হওয়ার পরে মনে হল যেন কিছু একটা সমস্যা হয়েছে ।
ম্যাপের দিকে তাকিয়ে দেখি সেটা আর এগোচ্ছে না । এক স্থানে স্থির হয়ে আছে । একটু পরেই বুঝতে পারলাম না আমাদের ম্যাপটা আর কাজ করছে না । কী কারণে কাজ করছে সেটা আমরা কেউই ধরতে পারছি না । ফোনের ম্যাপটা বের করলাম এবার । দেখলাম ফোনে একদমই নেটওয়ার্ক নেই । গাড়ি আস্তে আস্তে এগিয়ে নিতে থাকলাম । আশার কথা যে সামনে নিশ্চয়ই কোন না কোন মানুষজন, দোকানপাট পাওয়া যাবে, তাদের কাছ পথ জিজ্ঞেস করে নেওয়া যাবে ।
কিন্তু যখন পাঁকা রাস্তা শেষ হয়ে গেল তখন একটু চিন্তায় পড়লাম । মেইন রোডে এখন কিভাব যাবো ? পেছনে ঘুরে যাবো ? পেছনে ঘুরে কোথায় যাবো সেটাও খানিকটা নিশ্চিত হতে পারছি না । যেহেতু নেটওয়ার্ক নেই তাই কোন দিকে যাবো সেটা নিশ্চিত করে বলতে পারছি না । পথ যে হারিয়েছি সেটা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই ।
আমি কাঁচা মাটির রাস্তায় গাড়ি নামিয়ে দিলাম । তৃষা বলল যে কিছু সময়ে আমি কাঁচা রাস্তা ধরে এগিয়ে যাবো । যদি পাকা রাস্তা পাই তাহলে তো ভাল কিন্তু যদি না পাই তাহলে আবার গাড়ি ঘুরিয়ে পেছনে ফিরে আসবো । মিনিট পনের চলার পরেই একটা দোকান দেখতে পেলাম । ঠিক দোকান বললে ভুল হবে একটা ঝাপড়ার মত ঘর । সম্ভবত দোকান আর তার ঘর এক সাথেই রয়েছে । একটা হ্যারিক্যান জ্বলছে ।
আমি গাড়িটা থামালাম দোকানের সামনে । দেখলাম দোকানী আগ্রহ নিয়ে আমাদের দিকে তাকিয়ে তাকালো আমাদের দিকে । তৃষা বলল, মামা সামনে কি পাঁকা রাস্তা আছে ?
দোকানি বলল, জ্বী আপা আছে । সামনে গেইলেই দেখবেন দুইটা রাস্তা আছে । ডাইন দিকের রাস্তাটা গেছে কাগল কলের দিকে আর বাম দিকের রাস্তায় কিছু দুর গেলেই মেনরুড !
পেপার মিল মানে হচ্চে কর্ণফুলি কাগজ কল । যাক তাহলে পথ হারাই নি । সম্ভবত কোন সর্টকাট পথে ঢুকে পড়েছিলাম । তৃষাকে দেখলাম দোকানির দিকে একটা একশ টাকার নোট বের করে দিল । লোকটা একটু খুশিই হল সেই টাকা নিয়ে ।
গাড়ি নিয়ে মিনিট পনের চলার পরেই আমরা সেই মোড়ে এসে হাজির হলাম । দোকানি বলেছিলো মোট দুইটা রাস্তা থাকবে । ডানের দিকের টা গেলে পেপার মিল বাঁয়ের দিকটায় গেলে পাওয়া যাবে মেইন রোড । কিন্তু গাড়ির হেড লাইটে আমরা দুইজনেই দেখতে পেলাম যে রাস্তা আসলে দুইটা না, রাস্তা আসলে তিনটা ! তিনটা রাস্তা মোটামুটি দেখতে একই রকম ।
আমি তৃষার দিকে তাকিয়ে বললাম, কোন দিকে যাবো? ঐ বেটা না বলেছিলো দুইটা রাস্তা এখানে তো তিনটা?
তৃষা কিছু সময় ভাবলো । তারপর বলল, ডান দিকের টা মিলের দিকে যায় । ওটা বাদ । এখন মাঝেরটা নাকি বাঁ দিকের টা?
কিছু সময় চুপ করে থেকে তৃষা বলল, আচ্ছা আমরা আগে বাঁ দিকের টার দিকে যাই । ঐ লোক বলেছিলো যে অল্প কিছু সময়ের ভেতরেই মেইন রোড পাওয়া যাবে । যদি আধা ঘন্টার ভেতরে না পাওয়া যায় তাহলে আমরা আবার ফেরৎ চলে আসবো । মাঝেরটা দিয়ে যাবো । ঠিক আছে ?
-জো হুকুম, মহারানী ।
গাড়ি একেবারে বাঁ দিকের রাস্তায় চালিয়ে দিলাম । রাস্তাটা যদিও পাকা নয় তবে বেশ চমৎকার, মসৃন । দশ পনের মিনিট চলার পরে মনে হল যে চারিদিকের পরিবেশ কেমন যে বদলে গেল। যতই এগিয়ে যেতে লাগলাম ততই যেন মনে হতে লাগলো যেন আমরা যেন এক অপরিচিত জায়গাতে প্রবেশ করছি । হেড লাইটের আলোতে আমাদের চোখের সামনে যা ভেসে আসতে লাগলো তাতে কেবল মনে হল যেন আমি অনেক পুরানো কোন জায়গাতে প্রবেশ করেছি । এমনটা মনে হওয়ার কারণটা হচ্ছে এতো সময়ে রাস্তার আশে পাশে পরিবেশটা আমাদের পরিচিত ছিল কিন্তু একটু আগে শেষ একটা মাইলপোস্ট দেখতে পেলাম সেখানে ইংরেজিতে কিছু লেখা ছিল কিন্তু সেটা আমরা পড়তে পারি নি । কিন্তু মাইলপোস্টার ধরন ছিল একেবারে অন্য রকম । বর্তমান সময়ে এমন কিছু দেখা যায় না ।
তৃষার দিকে তাকিয়ে আমি বুঝতে পারছিলাম যে ও নিজেও এই পরিবর্তনটা ধরতে পেরেছে । সামনের দিকে তাকাচ্ছে, আশে পাশে তাকিয়েও দেখার চেষ্টা করছে, কিছু বুঝতে চেষ্টা করছে । বলতে বলতেই একটা আলো চোখে পড়লো আমাদের । আলোটার কাছে আসতেই দেখতে পেলাম একটা ঘর জাতীয় কিছু । একটা আলো জ্বলছে বাড়ির একদম সামনে । রাস্তার কাছে । আরেকটা আলো জ্বলছে বাড়ির সদর দরজার উপরে ।
আমি গাড়ি থামালাম । আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে যদি কেউ এখন জেগে থাকে তাহলে তার কাছ থেকে সামনের রাস্তার খবর শোনা গাড়িতে বসে রইলাম কিছু সময় । কেন জানি একটা অচেনা অনুভূতি কাজ করছে মনে । বারবার কেউ যেন মনের ভেতরেই বলে উঠছে যে গাড়ি ঘুরিয়ে এখনই এখান থেকে চলে যেতে । কোন ভাবেই বাড়ির গেটে যেন না ঢুকি ।
তৃষার দিকে তাকিয়ে দেখলাম তৃষা একভাবে তাকিয়ে রয়েছে সামনের দিকে । কী যেন ওর চোখে আটকে গেছে । আমি বললাম আমি নেমে দেখে আসি কেউ জেগে আছে কিনা । তার কাছ থেকে সামনের পথের ব্যাপারে জানা যাবে ।
গেট খুলে নামতে যাবো তখনই দেখলাম তৃষা আমার হাত চেপে ধরলো । তারপর বলল, নামতে হবে না ।
-কেন ?
-বিল্ডিংয়ের দিকে তাকিয়ে দেখো ।
আমি ভাল করে তাকালাম আবার । কিছু সময় তাকিয়ে থাকার পরেই ব্যাপারটা ধরতে পারলাম ।
বিল্ডিংটা মোটেই এখনকার মত নয় । এতো দুর থেকেও দেখতে পাচ্ছি । আগে ব্রিটিশ আমলে যেমন বাড়িঘর তৈরি হত বাড়িটা একেবারে সেই আদলে তৈরি । এই সময়ে এমন বাড়ি মোটেও দেখা যায় না । একটা আগে দেখা সেই মাইলস্টোনের কথা মনে পড়লো । সেটাতেও ইংরেজ আমলের একটা ছাপ দেখতে পেয়েছিলাম ।
তৃষা বলল, আরেকটা ব্যাপার খেয়াল করে দেখো।
-কী?
-আলো জ্বলছে কিন্তু কোথাও তার দেখতে পাচ্ছি না । বাতি গুলো ইলেক্ট্রিক বাতি । কিন্তু আশে পাশে কোন বিদ্যুতের খুটি নেই ।
কোন মতে বললাম, হয়তো জেনারেটর কিংবা সৌলার !
তৃষা বলল, ঘরের চেহারা দেখেছো ? তোমার মনে হয় এই বাড়িতে জেনারেটর আছে?
তাও ঠিক । এতো দূর্দশা গ্রস্থ বাড়ির ভেতরে কোন স্বচ্ছল লোকের বাস হতে পারে না । তৃষা বলল, গাড়ি পেছনের দিকে নাও । যে পথে এসেছিলাম সেই পথে ফিরে চল ।
আমি তৃষার মোতাবেক কাজ করলাম । গাড়ি ঘুরিয়ে যে পথে এসেছিলাম সেই পথে রওয়ানা দিলাম । মিনিট পনের পার করার পরেই ব্যাপারটা খেয়াল করলাম । গাড়ি নিয়ে আমি আবারও সেই বাড়ির সামনে চলে এসেছি । তৃষার দিকে তাকিয়ে দেখি ওর মুখে একটা ভয়ের ছাপ পরেছে । আমার নিজের মনের ভেতরেও একটা ভয় কাজ করছে । আমি আবার এখানে কিভাবে এলাম ? আমাদের তো সেই চার রাস্তার মোড়ে যাওয়ার কথা । এই বাড়ির সামনে তো মোটেই আসার কথা না !
আমি এবার গাড়ির গতি বাড়িয়ে দিলাম আরও । কিন্তু অবাক হয়ে খেয়াল করলাম যে আমাদের গাড়ি ঠিক আগের অবস্থানেই এসে পড়েছে । একই ভাবে সেই বাড়িটার সামনে । এভাবে আমরা যে কয়বার সেই বাড়ির সামনে এসে থামলাম সেটা আমরা নিজেও জানি না ।
তৃষার দিকে তাকিয়ে বললাম, আমাদের মনে হয় থামা উচিৎ । ভোর হোক তারপর যাওয়া যাবে । ভুলভুলাইয়ার ভেতরে আটকে গেছি মনে হচ্ছে । সকাল হওয়া ছাড়া উপায় নেই ।
তৃষা আমার দিকে তাকিয়ে বলল, সকাল হবে বলে মনে হচ্ছে না ।
-মানে কি?
-ঘড়ির দিকে তাকাও । আমরা যখন ঐ মোড়ে এসেছিলাম তখন ঘড়িতে সাড়ে তিনটার মত বেজেছিলো । আমি ঘড়ি দেখেছিলাম । এখানে আসতে মিনিট দশ-পনের লাগার কথা । পনে চারটা । আর আমরা অন্তত ঘন্টা খানেকের বেশি গাড়ি চালিয়েছি । সময় হওয়ার দরজার পাঁচটা। কিন্তু ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখো, এখনও সেই পনে চারটাতে আটকে আছে ।
আমি গাড়িটা থামালাম আবারও সেই বাড়ির সামনেই । ঘড়ির দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেলাম । তৃষা যা বলছে সেটা সত্য । সময় আটকে গেছে ।
তৃষা বলল, সময় আটকে গেছে । সাথে আমরা । আমার মনে হচ্ছে আমরা কোন টাইম লুপের ভেতরে ঢুকে পড়েছি ।
ঠিক তখনই দেখতে পেলাম তাকে । দেখলাম বাড়ির দরজা খুলে গেল । সেই দরজা দিয়ে এক লোক বের হয়ে এল । এবং আমাদের গাড়ির দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো ধীরে ধীরে ।
গাড়ির গেড লাইটের আলোতে তাকে দেখা যাচ্ছে পরিস্কার । দেখতে খুব সাধারণ একজন মানুষ মনে হচ্ছে । গ্রামের কোন মাঝ বয়সী লোক । তার হাতে একটা লাঠি । লাঠিতে উর্দী টাইপেরএকটা পোশাক । সে এসে থামলো আমাদের গাড়ির সামনে । তারপর আমাদের হাতের ইশারাতে নামতে বলল । তৃষা আমার হাত চেপে ধরেছে । আমাকে নামতে দিবে না । আমি ওকে বললাম, আমরা এখানে আটকে গেছি । না নেমে তো কোন উপায় নেই ।
-না তুমি নামবে না । তুমি মোটেই নামবে না ।
তখনই লোকটার ভাঙ্গা ভাঙ্গা গলার আওয়াজ শুনতে পেলাম । আমাদের দিকে তাকিয়ে বলল, মেমসাব, বাবু মিয়ার সরাইখানাই একটু না নেমে আপনেরা তো যাইতে পারবেন না !
লোকটার কন্ঠে যে কী ছিল সেটা আমার নিজেরও জানা যেন কিন্তু আমার বুকের ভেতর পর্যন্ত কেঁপে উঠলো সেটা শুনে । খুব অপার্থিব কিছু একটা রয়েছে সেই আওয়াজে সেটা বুঝতে কষ্ট হল না । আর সেই সাথে সাথে আমি এও বুঝতে পারলাম যে আমাদের আসলে এই বাবুল মিয়ার সরাইখানাতে নামতেই হবে । আমি তৃষার হাত থেকে হাত সরিয়ে গাড়ির দরজা খুলে নেমে পড়লাম । তারপর লোকটার উদ্দেশ্য করে বললাম, আমি যাচ্ছি আপনার সাথে। আমার স্ত্রীকে যেতে দিন ! ওকে যেতে দিন !
দেখলাম তৃষাও দরজা খুলে নেমে এসেছে । আমার দিকে তাকিয়ে বলল, না আমি তোমাকে ছেড়ে যাবো না । চল দুজন এক সাথেই যাবো ।
-না তুমি এখানে থাকো । গাড়ির ভেতরে ! আমি যাচ্ছি !
-শোন বেশি বুঝবা না । আমি তোমাকে ছেড়ে যাবো না ।
-প্লিজ বোঝার চেষ্টা কর ।
-কোন বোঝাবুঝি নাই । ইফ ইউ আর গোয়িং, আই এম গোয়িং !
লোকটাকে দেখলাম আমাদের কথার মাঝেই ঘুরে আবার বাড়ির দিকে হাটা দিল । আমরা তখনও একই স্থানে দাড়িয়ে রয়েছে । লোকটা হাটতে হাটতে এক পর্যায়ে থামলো । আমাদের দিকে না তাকিয়েই একটা হাত উচু করলো । আমার কেন জানি মনে হল সে আমাদেরকে চলে যাওয়ার নির্দেশ দিচ্ছে । আমি একবার সেদিকে তাকিয়ে থাকলাম তারপর তাকালাম তৃষার দিকে । তৃষাও বুঝতে পেরেছে লোকটার ইশারা ! আমাদের চলে যেতে বলছে সে !
আমাদের কে ছেড়ে দিচ্ছে কি?
আমরা আর দেরি করলাম না মোটেই । গাড়িতে উঠেই দরজা বন্ধ করলাম । গাড়ির ইঞ্জিন চালুই ছিল । গাড়িটা আবার ঘুরিয়ে ফিরতি পথ ধরলাম । তৃষার দিকে তাকিয়ে দেখি ও একভাবে সামনের দিকে তাকিয়ে রয়েছে । ওর ঠোঁটের পাতা দুটো কাঁপতে। ওর মনে একটা সংশয় দেখা যাচ্ছে । আমি ওর মনের ভাবটা বুঝতে পারছি বেশ পরিস্কার । ওর মনে ভয় দেখা দিয়েছে যে আমরা এবার যেতে পারবো কিনা না সেই মোড়ে নাকি আবারও আমরা ট্রাপে আটকে থাকবো । একটু পরে আবারও সেই সরাইখানার সামনে এসে হাজির হব !
তবে এবার সেই আশংঙ্কা সত্যি হল না । কিছু সময় পরেই আমরা সেই মোড়ের মাথায় চলে এলাম । দ্রুত গাড়ি চালিয়ে এগিয়ে চললাম যেই পথে এসেছিলাম । আর পেছনে যাওয়ার কোন ইচ্ছে নেই । কিছু সময়ে গাড়ি চলার পরেই সেই দোকানটা দেখতে পেলাম । আবারও গাড়িটা থামালাম আমরা সেই দোকানের সামনে । দেখলাম লোকটা ঘুমাই নি । আমরা গাড়ি থামাতেই লোকটা বের হয়ে এল । আমরাও গাড়ি থেকে বের হয়ে এলাম । তৃষা বেরিয়ে সেই দোকানের সামনে বেঞ্চের উপরে বসলো । এতো সময়ে গাড়ির বদ্ধ পরিবেশে ছিলাম । এমন কি ঐ এলাকাতে যখন ছিলাম তখনও একটা বদ্ধ পরিবেশ অনুভব করছিলাম । এখানে এসে একটু শান্তি শান্তি লাগছিলো ।
-আফা পানি খাইবেন ?
লোকটা তৃষার মুখের ভাবটা দেখেই বুঝতে পেরেছে যে কিছু একটা অস্বাভাবিক ব্যাপার ঘটেছে আমাদের সাথে । আমি বললাম মিনারেল ওয়াটার আছে? বোতলের পানি?
আমি ভেবেছিলাম এই দোকানে মিনারেল ওয়াটার থাকার কোন সম্ভবনা নেই । আমাদের সাথে যে পানি ছিল সেটা আগেই শেষ হয়ে গেছে । লোকটা দোকানের ভেতরে চলে গেল এবং একটা মাম পানির বোতল নিয়ে ফেরৎ এল । তৃষার হাতে দিল সেটা । তৃষা কয়েক ঢোক পানি খেয়ে আমার দিকে বাড়িয়ে দিল সেটা । আমিও একটু পানি খেয়ে তৃষার পাশেই বসলাম ।
লোকটা এতো সময়ে আমাদের দিকেই তাকিয়ে ছিল । আমরা একটু ধীর স্থির হলে সে আমাদের সামনে এসে বলল, আপনাদের কী হইছিলো ?
তৃষা বলল, আপনি না বললেন দুইটা রাস্তা কিন্তু ওখানে তো তিনটা রাস্তা ছিল !
তিনটা রাস্তার কথা বলতেই লোকটার মুখে একটা ভয়ের ভাব দেখতে পেলাম । তারপর লোকটা আমাদের পাশেই বসে পড়লো । বলল, আপনেরা কেমনে বাইরে আইলেন ! যারা যারা ঐ রাস্তা দেখতে পায় আর ভেতরে ঢুকে তারা আর কোন দিন বাহির হইতে পারে না !
তৃষা বলল, ঐ রাস্তা বলতে ?
লোকটা বলল, ঐটা বাবু মিয়ার সরাইখানার রাস্তা । অনেক কয় বছর আগে ঐখানে একটা রাস্তা ছিল । সেই বিটিশ আমলের কথা । আমরা শুনছি আমাদের দাদার মুখে । তারাও শুনতে তার বাবা দাদাদের মুখে ।
-কি শুনেছে?
-ঐ রাস্তায় নাকি একটা সরাইখানা ছিল । মানুষ সেইখানে খাইতে চাইতো । লোকটা নাকি খুবই ভাল ছিল । মানুষকে খাওয়াইতে পছন্দ করতো । কেউ তার সরাইখানা থেকে না খাইয়া যাইতো না । একবার এক ইংরেজ তার বউ নিয়ে সেখানে যায় কিন্তু কি এক কারণে মালিকের সাথে ঝগড়া হয় আর সেই ইংরেজ আর তার বউ ঐখানেই খুন হয় !
-এরপর?
-এরপর ইংরেজিদের একটা দল আসে ঐখানে । সরাইখানার দরজা বন্ধ করে দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয় ! বাবু মিয়া সহ আরও বেশ কয়েকজন সেখানেই পুড়ে মারা যায় ! এরপর থেইকাই সেইটা বন্ধ । আস্তে আস্তে সেই রাস্তাটাও বনজঙ্গলে ভরে যায় । এক বৃষ্টির আমলে ভুমি ধরে সব কিছু হারিয়ে যায় । এরপর নতুন রাস্তা তৈরি হয় পাশে । তবে তার প্রায় ৫০/৬০ বছর পরে মানুষ জন নাকি সেইনতুন রাস্তার পাশে সেই পুরান রাস্তাটা দেখতে পাইতো । যারা সেই রাস্তায় ঢুকতো তারা কোন দিন বের হইতে পারতো না ! আপনেরা কেমনে বের হইলেন ?
আমি তৃষার দিকে তাকালাম । কিভাবে বের হলাম সেটা আমরা নিজেরাও জানি না । কেবল বের হয়ে এসেছি সেটাই জানি ।
ভোর পর্যন্ত আমরা সেই দোকানেই বসে রইলাম । লোকটা আমাদের চা বানিয়ে খাওয়া । তৃষাকে দেখলাম লোকটার সাথে বেশ গল্প জুড়ে দিয়েছে । আসার সময়ে এবার লোকটাকে ৫০০ টাকার একটা নোট দিয়ে দিল । লোকটার বিস্তৃত হাসি মুখ দেখে আমাদের দুজনের ভাল লাগলো ।
ভোরের আলো ফুটলে আমরা আবারও গাড়ি নিয়ে বের হলাম । আবারও সেই একই পথে । যদিও তৃষা একটু ভয় পাচ্ছিলো ঐ একই পথে যেতে । তবে লোকটা আমাদেরকে আস্তত্ব করে বলল যে ভোরের আলোতে কোন সমস্যা নেই । সেি পথ আর দেখা যাবে না ।
সত্যিই যখন মোড়ের মাথায় এলাম দেখলাম সেখানে তিনটা নয়, দুইটা পথই রয়েছে । এই ভোরেরও সেখানে মানুষজন দেখতে পেলাম । সম্ভবত কারখানার শ্রমিক হবে । বাঁ দিকের রাস্তার ১৫ মিনিটের মাথায় মেইন রোড পেয়ে গেলাম ।
আমি জানি না আমাদে সাথে রাতের বেলা কী হয়েছিলো । যা হয়েছে তারকোন ব্যাখ্যা আমাদের দুজনের কারো কাছেই নেই । তবে সেটা নিয়ে এখন আমরা আর চিন্তিত নই । দুজনেই সুস্থ আছি আর এক সাথে আছি, এটাই হচ্ছে সব চেয়ে বড় কথা ।
গল্পটি একটি একটি হিন্দী হরর স্টোরী থেকে অনুপ্রাণীত
০৮ ই মে, ২০২১ রাত ৯:১১
অপু তানভীর বলেছেন: ধন্যবাদ
২| ০৮ ই মে, ২০২১ রাত ১০:৫০
জটিল ভাই বলেছেন: অসাধারণ.......
০৮ ই মে, ২০২১ রাত ১১:৪৪
অপু তানভীর বলেছেন: ধন্যবাদ
৩| ০৮ ই মে, ২০২১ রাত ১০:৫৪
এম এ হানিফ বলেছেন: সুন্দর
০৮ ই মে, ২০২১ রাত ১১:৪৯
অপু তানভীর বলেছেন: ধন্যবাদ
৪| ০৮ ই মে, ২০২১ রাত ১১:৩৯
মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: শেষ পর্যন্ত আকর্ষণ ধরে রাখা গল্প। ভালো লিখেছেন।
০৮ ই মে, ২০২১ রাত ১১:৫০
অপু তানভীর বলেছেন: যদিও গল্পটা একেবারে মৌলিক না । থিমটা অন্য একটা অডিও স্টোরী থেকে নেওয়া ।
পড়ার জন্য ধন্যবাদ
৫| ০৯ ই মে, ২০২১ রাত ১২:৪২
রাজীব নুর বলেছেন: দশে ছয় দিলাম।
০৯ ই মে, ২০২১ রাত ১:২১
অপু তানভীর বলেছেন: আচ্ছা !
৬| ০৯ ই মে, ২০২১ রাত ৩:৩৩
নেওয়াজ আলি বলেছেন: খুব সুন্দর উপস্থাপন,
০৯ ই মে, ২০২১ বিকাল ৩:০১
অপু তানভীর বলেছেন: ধন্যবাদ
৭| ০৯ ই মে, ২০২১ রাত ৩:৫৩
ডঃ এম এ আলী বলেছেন:
গল্পের গাথুনীটা সুন্দর হয়েছে । কক্সবাজার যাওয়ার আগে রাঙ্গামাটি
যাওয়ায় একটি অতিপাকৃত গল্পের কাহিনী কথা জানতে পারলাম ।
রাঙ্গামাটি জায়গাটি বড়ো রমণীয়। নির্জন অতুচ্চ পাহাড়ের নীচে বনের
ভিতর দিয়ে আকাবাঁকা রাস্তা । নির্দেশিত পথের বাইরে তৃতীয় পথ ধরে
একেবারে একটি নির্জন অচেনা বাড়ীর সস্মুখে গিয়ে হাজির । নিকটে
কোথাও লোকালয় নাই। সেই দোকানীর গ্রাম সেখান হতে দূরে। তার
পরের ঘটনা সবি অতি পাকৃত , সুন্দরভাবে উঠে এসেছে গল্পটিতে ।
পাঠে ভাল লাগল ।
শুভেচ্ছা রইল
০৯ ই মে, ২০২১ বিকাল ৩:০৪
অপু তানভীর বলেছেন: আসলে কক্সবাজার যাওয়া হলেও রাঙ্গামাটি কোন দিন যাওয়া হয় নি । এই যে পথের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে সেটা গুগল ম্যাপ দেখে ধারণা নিয়ে । হয়তো বাস্তবে দেখা যাবে আমি যেমন পথের বর্ণনা দিয়েছি তার কিছুই সেখানে নেই ।
গল্প পড়ার জন্য ধন্যবাদ
৮| ০৯ ই মে, ২০২১ ভোর ৪:৫০
চাঁদগাজী বলেছেন:
এগুলো আর মৌলিক বলে মনে হয় না; অনেকটা আলুর তরকারীর মতো।
০৯ ই মে, ২০২১ বিকাল ৩:০৪
অপু তানভীর বলেছেন: আলুর তরকারী ভাল । নিয়মিত খাবেন ।
৯| ০৯ ই মে, ২০২১ দুপুর ১২:১২
দেশ প্রেমিক বাঙালী বলেছেন: সময় অভাবে পড়তে পারলামনা।
০৯ ই মে, ২০২১ বিকাল ৩:০৫
অপু তানভীর বলেছেন: লকডাউনে তো সময়ের অভাব হওয়ার কথা না । সময় ধার লাগলে কইয়েন !
১০| ০৯ ই মে, ২০২১ দুপুর ১২:১৩
রানার ব্লগ বলেছেন: তাইতো বলি গল্পটা চেনা গন্ধ ছড়াচ্ছে কেনো !!!
০৯ ই মে, ২০২১ বিকাল ৩:০৫
অপু তানভীর বলেছেন: অনুপ্রাণীত গল্প । চেনা হওয়ার কথা ।
১১| ০৯ ই মে, ২০২১ দুপুর ২:১৮
রাজীব নুর বলেছেন: পোষ্টে আবার এলাম কে কি মন্তব্য করেছেন সেটা জানতে।
০৯ ই মে, ২০২১ বিকাল ৩:০৬
অপু তানভীর বলেছেন: আবারও আইসেন !
১২| ০৯ ই মে, ২০২১ বিকাল ৩:১২
নীল আকাশ বলেছেন: ভালো লেগেছে।
০৯ ই মে, ২০২১ বিকাল ৩:৩৮
অপু তানভীর বলেছেন: ধন্যবাদ
১৩| ০৯ ই মে, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:৫১
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
চমৎকার শিহরণ জাগানিয়া
গল্প !!!
০৯ ই মে, ২০২১ রাত ৮:২১
অপু তানভীর বলেছেন: পড়ার জন্য ধন্যবাদ
১৪| ১১ ই মে, ২০২১ রাত ৮:০০
মিরোরডডল বলেছেন:
ওরে বাবা ! গা ছমছম ভয়ের গল্প, ভয় পেয়েছি তানভী
অনেকটা সিমিলার গল্প লাস্ট ইয়ার একজন পোষ্ট করেছিলো,
একই রাস্তায় বার বার ঘুরে ঘুরে আসে, একটা হন্টেড হাউজ,
একজন মানুষ ছিলো কিন্তু ওটা ফিমেইল । ডিটেলস মনে নেই ।
এই বাবুল মিয়ার সরাইখানাতে নামতেই হবে
এখানে বাবুমিয়া হবে, বাবুল হয়ে গেছে ।
এরকম রহস্য লেখা ভালোই লাগে ।
১২ ই মে, ২০২১ রাত ১১:০৩
অপু তানভীর বলেছেন: গল্পের থিমটা আমাদের দেশের কমন ভুতের গল্পের মত । এক স্থানে আটকে যাওয়া, যতই হাটা যাক ঘুরে ফিরে সেই একই স্থানে ফিরে আসা । ভুলভুলাইয়াতে ধরা কিংবা আলেয়াতে ধরা । নানী দাদীদের মুখে শোনা ভুতের গল্পে এমন গল্প চিরো পরিচিত ।
আমার গল্পে বানান ভুল থাকবেই যতই চেষ্টা করি না কেন ! ধরিয়ে দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ !
১৫| ১২ ই মে, ২০২১ রাত ১১:০৪
কল্পদ্রুম বলেছেন: কয়েক পর্বে হলেও খারাপ হতো না।
১৫ ই মে, ২০২১ রাত ১০:৪৪
অপু তানভীর বলেছেন: আরও পর্ব লেখা যায় কিন্তু এই গল্পের উপর থেকে আগ্রহ চলে গেছে তাই আর লেখা হবে না । যদি আবার আগ্রহ আসে তখন হয়তো হবে !
১৬| ১২ ই মে, ২০২১ রাত ১১:৩১
সোহানী বলেছেন: ভালো লাগলো। যদিও আমি ভুত প্রেতের গল্প কম পড়ি। আমি ভুতকে ভয় পাই
১৫ ই মে, ২০২১ রাত ১০:৪৫
অপু তানভীর বলেছেন: ভুত বলতে কিছু নাই । তবে ভুতের ভয় আছে অনেক ! ভয় পাওয়া খারাপ কিছু না !
১৭| ৩০ শে মে, ২০২১ রাত ১২:৫৫
বিবাগী শাকিল বলেছেন: অনুপ্রাণিত হোক বা যাইহোক, আপনি গল্পটা সাজিয়েছেন সিদ্ধহস্তে। দু'বছর বিরতি নিয়ে ব্লগে এসে প্রথম আপনার গল্পটি পড়লাম। যদিও আপনাকে আমি ফেসবুক থেকে চিনি।
গল্পটা ভালো ছিল। সাথে আকর্ষণও ছিল।
একটু যদি সংশোধনের কথা বলি, ‘বানান কিছু ভুল ছিল’।
ভালোবাসা ও শুভেচ্ছা।
৩০ শে মে, ২০২১ রাত ৯:৩৯
অপু তানভীর বলেছেন: গল্প সময় করে পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ । আসলে আমার বানানে তো সেই শুরু থেকেই সমস্যা । যতই ঠিক করি না কেন কিছু না কিছু ভুল রয়েই যাবে।
©somewhere in net ltd.
১| ০৮ ই মে, ২০২১ রাত ৮:২৬
মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:
সুন্দর।