নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পাহাড়ে দুর্ঘটনা সাধারণ একটা ব্যাপার । আর সেই পাহাড়টা যদি হয় বরফে ঢাকা আর দুর্গম তাহলে কোন দিকে যে দুর্ঘটনা ঘটে যাবে সেটা কেউ বলতে পারে না । এমন কি দক্ষ হাইকারদের সকল প্রস্তুতি নেওয়ার পরেও এই দুর্ঘটনা ঘটতে পারে । এমন দুর্ঘটনা ঘটেছিল ১৯৫৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের ইউরাল মাউনটেইনে । নয়জন দক্ষ প্রশিক্ষিত হাইকার দুর্ঘটনার শিকার হন এবং প্রাণ হারান । কত মানুষই তো পাহাড়ে গিয়ে প্রাণ হারান । কেবল প্রাণ হারানোর ব্যাপারটা মাথায় নিলে এই ঘটনাটাকে সাধারণ মানুষজনের খুব বেশি দিন মনে রাখার কথা না । কিন্তু তারপরেও দুর্ঘটনাকে আজ পর্যন্ত মানুষ মনে রেখেছে । কেবল রাশিয়ার মানুষজনই নয়, পুরো বিশ্বের মানুষ এর পেছনের রহস্য জানতে জাগ্রহী ।
সেই সময়ে এই নয়জন হাইকারের মৃত দেহ ঠিক যেভাবে উদ্ধার করা হয়েছিলো, তাদের দেহের অবস্থা যেমন ছিল তাতে মানুষের মনে শত শত প্রশ্নের উদ্ভব করেছে । কিভাবে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে কিভাবে তাদের মৃত্যু হয়েছের তার পরিস্কার ব্যাখ্যা এখনও পর্যন্ত আমাদের কাছে নেই । আর মানুষের যা স্বভাব, যখন মানুষ কোন কিছুর ব্যাখ্যা করতে পারে না, সঠিক সত্য যখন বের হয়ে আসে না তখন তার পেছনে মানুষজন নানান কন্সপেরেসি থিউরী বের করে । ডায়াটলভ পাস ইন্সিডেন্ট নিয়েও এমন বেশ কিছু মুখোরোচক থিউরী বাজারে প্রচলিত আছে । আছে অনেক ব্যাখ্যা । কিন্তু সব ব্যাখ্যারই আসলে কোন না ফাঁক ফোঁকর রয়েই গেছে । সবাইকে সেই সব ব্যাখ্যা দিয়ে সন্তুষ্ট করা যায় নি । এখনও পর্যন্ত কৌতুহলী মানুষ সেসব ব্যাখ্যা খোজার চেষ্টা করেই যাচ্ছেন আর সামনেও হয়তো যাবেন । আমরা আসি মুল ঘটনা জানার চেষ্টা করি ।
১৯৫৯ সালের জানুয়ারি মাসে ইউরাল পলিটেকনিক্যাল ইন্সটিটিউটের একদল দক্ষ হাইকার উত্তর ইউরাল মাউন্টেইনে একটি স্কি এক্সপিডিশনের জন্য ইউপিআই স্পোটর্স ক্লাবের কাছে আবেদন করে । তাদের দলে মোট নয়জন সদস্য ছিল যাদের সকলের বয়স ২০ থেকে ২৪ এর ভেতরে । সকলের নাম দিলাম না কারণ রাশিয়ান নাম গুলো বড় বিদঘুটে উচ্চারণের জন্য । এদের দলনেতা ইগোর ডায়াটলভ, ২৩ বছর যুবক এবং হাইকিংয়ের দক্ষতা রয়েছে । এছাড়া দলের বাকি সকলেই পাহাড় চড়ায় বিশেষ পারদর্শীতা রয়েছে । এদের ভেতরে একজনের নাম নেওয়া দরকার । Georgy Krivonishchenko । উচ্চারন করা আমার পক্ষে সম্ভব না । এই নামটা কেন নিলাম পরে ব্যাখ্যা করবো । ক্লাব প্রেসিডেন্ট তাদের অনুমতি দিয়ে দিলেন হাইকিংয়ের জন্য । তবে একেবারে শেষ মুহুর্তে তাদের সাথে ৩৮ বছর বয়স্ক একজন Alekseevich Zolotaryov কে যুক্ত করে দিলেন । পুরো টিমের ভেতর থেকে এই ভদ্রলোকের বয়স সব থেকে বেশি । বলা যায় অন্য সকলের বয়সের দ্বিগুণ ।
(ছবিতে ইগোর ডায়াটলভ । টিম লিডার।)
টিম যাত্রা শুরু করলো । ট্রেন ট্রাক লরিতে চেপে তারা তাদের ট্রেকিংয়ের নির্ধারিত স্থানে এসে হাজির হয় । ২৭ জানুয়ারি তারা তাদের আসল ট্রেকিং শুরু করে দুর্গম পাহাড়ে । তবে তাদের একজন সদস্য শারীরিক অসুস্থতার কারণে সেখান থেকে ফেরৎ আসতে বাধ্য হয় । ২৮ জানুয়ারি তারা আবার তাদের যাত্রা শুরু করে ।
টিমের ট্রাক যাত্রার ছবি।
ছবিটা একটু এডিট করে কালার দেওয়া হয়েছে ।
তাদের ডায়েরি আর ক্যামেরা থেকে প্রাপ্ত থেকে ছবি থেকে জানা যায় পয়েলা ফেব্রুয়ারিতে তারা হোলাট সিয়াকোলে তাদের ক্যাম্প স্থাপন করেন ! স্থানীয় ভাষায় হোলাট সিয়াকোলে এর অর্থ হচ্ছে ডেড মাউনটেইন।
ছবিতে দেখা যাচ্ছে হোলাট সিয়াকোলের পাদদেশে তারা বরফ খুড়তেছিলো তাদের ক্যাম্প স্থাপনের জন্য । ধারণা করা হয় যে ক্যাম্প স্থাপন এবং তাদের মৃত্যু হয় সেই দিন রাতে কিংবা ভোরের আগেই ।
কথা ছিল তারা তাদের যাত্রা শেষ করে ১২ ফেব্রুয়ারি ক্লাবকে টেলিগ্রাম করে জানাবে । কিন্তু সেই টেলিগ্রাম আর কোন দিন আসে নি ।
১২ তারিখে হাইকারদের খবর আসার কথা থাকলেও যখন সেটা এল না ক্লাব প্রেসিডেন্ট সেটাকে খুব বেশি গুরুত্ব দিলেন না । এই রকম হাইকিংয়ে একটু আধটু দেরী হতে পারে কিন্তু যখন আরও একটা সপ্তাহ পার হয়ে গেল তখন পরিবার বন্ধু বান্ধবেরা খোজ খবর নিতে শুরু করলেন । পরিবারের লোকজন সোভিয়েট পার্টি অফিসে আবেদন জানালো টিমকে খুজে বের করার জন্য । প্রথমে ভলান্টিয়ার সার্চ টিম গঠন করে ডায়াটলভদের খোজা শুরু করে এবং এক পর্যায়ে মিলিটারি খোজে নামে !
২৬শে ফেব্রুয়ারি সার্চ টিম তাদের তাবু খুজে পায় । তাবুটা মোটামুটি অর্ধেক ছিল বরফের নিচে আর ভাঙ্গাচোরা অবস্থায় । তাবুর এক অংশে ছিল ছেড়া । প্রথম দর্শনে মনে হতে পারে যে কেউ হয়তো বাইরে থেকে তাবু ছিড়ে ভেতরে প্রবেশ করেছে কিন্তু পরে পরীক্ষা করে জানা যায় যে তাবুটা বাইরে থেকে নয়, বরং ভেতর থেকে ছেড়া হয়েছে। তাবুতে থাকা লোকজন ভেতরে থেকে তাবু ছিড়ে বের হয়ে এসেছে ।
সার্চ পার্টি যখন তাবুর ভেতরে প্রবেশ করে সেখানে তারা কোন হাইকারের দেহ খুজে পেল না । পুরো তাবুতে হইকারদের জিনিসপত্র যেমন ছিল তেমনই পড়ে রয়েছে । এমন কি খাবার এমন ভাবে সাজানো রয়েছে যাতে করে দেখলে মনে হবে যে তারা খাবার খেতে যাচ্ছিলো এমন সময় কোন কিছু হয়েছে যেটা তাদের বাধ্য করেছে তাবু থেকে যেভাবে ছিল সেভাবেই বের হয়ে যেতে । কেউ খালি পায়ে, কেউ মোজা পড়ে কিংবা একটা জুতো পরে হাইকাররা তাবু থেকে বের হয়ে গেছে ।
তাবু থেকে বের হওয়া নয়টা ফুটপ্রিন্ট চলে গেছে পাহাড়ের চুড়ার উল্টোদিকে । প্রায় ১৫শ মিটার নিচের দিকে । সেখানে গাছের ভেতরেই দুজন হাইকারের মৃত দেহ পাওয়া যায় । এদের শরীরে আগুনে পোড়ার চিহ্ন পাওয়া যায় ! তাদের পরনে কেবল মাত্র আন্ডারওয়্যার ছিল । তাদের পাশেই আগুন জ্বালানোর চিহ্ন পাওয়া গেছে । এবং গাছ ডাল ভাঙ্গার প্রমাণও পাওয়া গেছে । এর থেকে ধারণা করা হয় যে হাইকারদের ভেতরে কেউ গাছে উঠেছিলো এবং গাছ থেকে ডাল ভেঙ্গে আগুন ধরিয়েছিলো ঠান্ডা থেকে রক্ষা পেতে ।
তিনজন হাইকারের মৃতদেহ পাওয়া গেছে জঙ্গল এবং তাবুর মাঝের স্থানে । তাদের দেহের অবস্থা থেকে বোঝা যায় যে তারা তিনজন তাবুর দিকে ফেরৎ যাচ্ছিলো । কিন্তু সেখানে পৌছাতে পারে নি । বাকি চারজনের দেহ আবিস্কার করতে আরও দুই মাসের মত সময় লাগে । মে মাসে বাকি চার জনের দেহ পাওয়া যায় জঙ্গলের গাছের সারি থেকে আরও আড়াইশ ফুট দুরে এবং চার মিটার বরফের নিচে । ওটা ছিল একটা জমাতকৃত পাহাড়ী নদী । এখানে একটা চিত্র দেওয়ার চেষ্টা করলাম ।
এবার হচ্ছে আসল রহস্য এসে জমাট বাঁধা শুরু করলো । নয়টা মৃতদেহ পরীক্ষা করে দেখা যায় যে এদের ভেতরে ছয়জন মারা গেছেন হাইপোথার্মিয়ার । প্রবল ঠান্ডায় কোনপ্রকার জামা কাপড় ছাড়া বাইরে বের হলে এমন ভাবে মারা যাওয়াটাই স্বাভাবিক । কিন্তু বাকি তিন জনের বেলাতে দেখা যায় এদের শরীর আঘাতের চিহ্ন রয়েছে । বিশেষ করে যাদের দুইমাস পরে খুজে পাওয়া গেছে তাদের শরীর পরীক্ষা করে দেখে গেছে যে কারো মাথায় আঘাতের চিহ্ন কারো ইন্টারনাল আঘাতের চিহ্ন রয়েছে । প্রবল বেগে যদি কোন গাড়ির সাথে ধাক্কা লাগে তাহলে যেমন আঘাত পাওয়ার কথা, আঘাত গুলো তেমনই ছিল । একজনের জিহবা ছিল অন্য একজনের চোখ মিসিং ছিল ।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে তাদের এই রকম মৃত্যুর কারণ কী ?
ইনভেস্টিগেসনে যা যা বের হয়ে আসে তা হল, তাবু টি ভেতর থেকে ছুড়ি দিয়ে কাটা হয়েছে । হাইকারদের তাবুর আশে পাশে কোন মানুষজন ছিল না । আগের বলেছি তাদের নয়জনের ভেতরে ছয়জন মারা গেছে হাইপোথার্মিয়াতে আর তিনজনের শরীর সিভিয়ার আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে । কয়েকজনের শরীরে অন্যদের থেকে ভাল পরিমানের কাপড়চোপর ছিল । ধারণা করা হয় যে অন্যদের মৃত্যুর পরে তারা মৃতদেহ থেকে কাপড় খুলে নিয়েছে । হাইকারদের কাপড় থেকে রেডিয়েশনের চিহ্ন পাওয়া গেছে ।
সোভিয়েত সরকার আলাদা ভাবে এই ঘটনার পেছনে টিম নিয়োগ করে এবং সব থেকে আশ্চর্যয়ের ব্যাপার হচ্ছে স্বয়ং কেজিবি এসে হাজির হয় । এখানেই অনেকের মনে সন্দেহ জাগে যে এই সাধারণ একটা মাউন্টেইন ইণভেস্টিগেশনে কেজিবি কী করছে ? অফিসয়াল ভাবে কিছুদিন পরে ইণভেস্টিগেশন বন্ধ করে দেওয়া হয় এই বলে যে আননোন ফোর্সের কারণে নয়জনের মৃত্যু হয়েছে । পরিবার বর্গ এই রিপোর্টে সন্তষ প্রকাশ করেন না । তারা বারবার আবেদন জানান প্রকৃত ঘটনা উৎঘাটনের জন্য । ২০১৫ ও ২০১৯ সালে রাশিয়ান সরকার আবারও কেসটা রিওপেন করে এবং ব্যাখ্যা প্রদান করেন । তবে এখানেও কেবল এটাকে দু্ঘটনা হিসাবেই বলা হয় ।
এই ঘটনা নিয়ে মানুষের মাঝে কৌতুহলের শেষ ছিল না । অনেকে অনেক থিউরী নিয়ে হাজির হয় । এরকম কয়েকটা থিউরী নিয়ে অল্প আলোচনা করা যাক ।
প্রথম থিউরী হচ্ছে, আশেপাশের মানসি উপজাতির দ্বারা হামলা । হাইকাররা যে মাউন্টেইণ দিয়ে যাচ্ছিলো সেটা মানসি উপজাতিদের কাছে একটা পবিত্র পাহাড় হিসাবে পরিচিত । হতে পারে এই মানসি/মানসাই উপজাতির কয়েকজন এই গ্রুপটার উপরে হামলা করেছিলো সেদিন । ইনভেস্টিগেশন টিম কোন পক্ষে কোন প্রমান পায় নি । তারা স্পষ্ট ভাবে বলে যে তাবুর আশে পাশে আর কোন মানুষের চিহ্ন খুজে পাওয়া যায় নি । এছানা যে মানসি উপজাতি সম্পর্কে বলা হচ্ছে তারা কোন ভাবেই হিংস্র জাতি হিসাবে পরিচিত নয় ।
আরেকটা থিউরী হচ্ছে ইয়োতী থিউরী । হাইকারদের একদম ইয়োতীতে আক্রমন করেছিলো । এই থিউরির সাথেই যোগ হয় ইউএফও কিংবা এলিয়েন এটাক । অনেকে বলেন যে কোন ইউএফও এসে হাজির হয়েছিলো ওখানে ।
আরেকদল মনে করেন ডেড মাউনটেইনের এই স্থানটা আসলে সোভিয়েত সরকারের কোন গোপন পরীক্ষার স্থান কিংবা পরমানু পরীক্ষার স্থান । এই থিউরীর পেছনে তাদের যুক্ত হচ্ছে অভিযান শুরুর আগে মুহুর্তে ৩৮ বছর বয়স্ক জোলোটারয়েভের (Zolotaryov) টিমে অন্তর্ভুক্তি । জোলোকে মানুষ আসলে কেজিবির একজন এজেন্ট হিসাবেই মনে করে । মূলত তাকে টিমে যোগ করা হয়েছিল যাতে হাইকাররা সরকারের ঐ গোপন স্থান গুলোতে না যেতে পারে । গোপন কোন স্থানের খবর কিংবা কোন পরমানু পরীক্ষার খোজ হয়তো হাইকারদের টিম পেয়ে গিয়েছিলো, এই কারণেই তাদেরকে হত্যা করা হয়েছে । হাইকারদের শরীরে রেডিয়েশনের উপস্থিতি এই থিউরিকে সমর্থন করে । অথবা সিআইএসের কোন দলের সাথে হয়তো তাদের এনকাউন্টার হয়েছিলো । আবার ইনেভেস্টিগেসনের সময়ে কেজিবির আগমনও এই থিউরীর পেছনে একটা কারণ ।
এসব তো গেল থিউরী । কিন্তু আসলেই কী এমন হয়েছিলো ? বিশেষ করে কেন হাইকাররা তাড়াহুড়ো করে তাবু থেকে বের হয়েছিলো ? এর পেছনের সব থেকে যুক্তিযুক্ত ব্যাখ্যা হচ্ছে তুষারধস । যদিও ঐ পাহাড়টা তুষারধসের জন্য পরিচিত নয় তবে এখানে একটা বিশেষ ধরনের তুষার ধসের কথা বলা হচ্ছে । পাহাড়ে যেমন করে বিশাল আকারে তুষার ধস হয় এই ধসটা সেই রকম নয় । The Slab Avalanche Theory বোঝার জন্য নিচের ছবিটার দিকে তাকাই । তাহলেই অনেক কিছু পরিস্কার হবে !
এই ছবির দিকে তাকালে আসলে ব্যাপারটা একটু কল্পনা করা যায় । পাহাড়ের ঢালু স্থানে বরফ খুড়ে তাবু খাটানো হল । বাতাসে কারণ নিচের একটা স্লাব নড়ে তাবুর উপরে পড়তেই পাড়ে কিংবা বরফ খোড়ার কারণ বরফ নড়ে গিয়ে তাবুর উপরে এসে পড়তে পারে ।
ঘটনা এমন হতে পারে যে রাতের ঐ সময়ে যখন হাইকাররা নিজেদের তাবুর ভেতরে ছিল এবং খাবার খাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলো তখনই একটা স্লাব এসে তাদের তাবুর উপরে এসে পড়ে । এবং এতে হাইকারদের মনে হতে পারে যে তুষারধসের বড় অংশ এগিয়ে আসছে কিংবা আসবে । তুষারের নিচে চাপা পড়ার ভয়েই তারা তাবুকে বের হয়ে আসে । হয়তো তাবুর দরজা তুষারে ঢাকা পড়েছিলো যেখান দিয়ে বের হওয়ার কোন উপায় ছিল না । তাই তারা তাবু কেটেই বের হয়েছে । বের হয়ে সোজা নিরাপদে নিচের দিকে নেমে গেছে । গাছের কাছে এসে তারা আগুন জ্বালিয়েছে ঠান্ডা থেকে রক্ষা পেতে । গাছের ডালের জন্য গাড়ে চড়েছে একজন । গাছে এই কারণে ডিএনএ পাওয়া গেছে । কিন্তু ঐ তীব্র শীতে কাপড় ছাড়া রক্ষা পাওয়া কোন ভাবেই সম্ভব ছিল না । প্রচন্ড ঠান্ডায় দুইজন সেখানেই মারা যায় । এমন হতে পারে মৃত্যুর পরে তারা আগুনে পড়েছিলো কিংবা ঠান্ডা থেকে বাঁচতে আগুনের কাছে চলে গিয়েছিলো তারা । দুইজনের মৃত্যুর পরে বাকি সাতজন দুইদলে বিভক্ত হয়ে যায় । একদল ফিরে তাবুতে ফিরে যাওয়ার পথ বেঁছে নেয় অন্য দল আরও নিচে নিরাপদে যাওয়ার দিকে মত দেয় । তিনজন যায় তাবুর দিকে কিন্তু তারাও ঠান্ডার কাছে হার মানে । এবং পথের মাঝেই মারা পরে । অন্য চারজন আরও একটু নিচে নেমে আসে । তারা নিজেদের গরম রাখতে প্রাচীন পদ্ধতি অবলম্বন করে । বরফ খুড়ে ঘর বানিয়ে নিজেদের ঢাকার চেষ্টা করে । কিন্তু যা তাদের জানা ছিল না সেটা হচ্ছে তাদের নিচেই একটা নদী ছিল । খুজতে গিয়েই তারা সম্ভবত সেই নদীতে পড়ে যায় এবং আঘাত প্রাপ্ত হয় । সেখানেই তাদের মৃত্যু হয় । এছাড়া হারানো জিহবা কিংবা চোখের বেলাতে বলা যায় যে কোন পাহাড়ি পশু সেগুলো খেয়েছে ।
এবার আসি রেডিয়েশনের কথাতে । কিভাবে তাদের কাপড়ে রেডিয়েশন পাওয়া গেল ? একদম শুরুতে ইগোর ডায়টলভের এক বন্ধুর কথা বলেছিলাম আলাদা ভাবে । Georgy Krivonishchenko । এই ভদ্রলোক Chelyabinsk-40 এর একটি গোপন শহরে মায়াক নিউক্লিয়ার কমপ্লেক্সে ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে কাজ করতো । ধারণা করা হয় যে এর কাপড়ই রেডিয়েশনের উৎস।
নয়জন হাইকারের স্মৃতির কথা স্বরণ করতে উক্ত স্থানের নাম রাখা হয় ডায়াটলভ পাস । Yekaterinburg এ একটা স্মৃতি স্তম্ভও স্থাপন করা হয় ।
আমরা সত্যিই একেবারে শতভাগ নিশ্চিত করে বলতে পারি না যে আসলেই ঐ সময়ে ঐ দিন কী হয়েছিলো । কেউ কেউ এখনও বিশ্বাস করে যে সত্যিই ওখানে কোন ভিনগ্রহের প্রাণী এসেছিলো কিংবা সরকারের কোন গোপন পরীক্ষার বলি হয়েছে তারা । এটা নিয়ে কত যে ইউটিউব ভিডিও আছে, আর অনলাইন আর্টিকেল আছে তার কোন ঠিক নেই । আপনারা আরও বেশি পড়তে চাইলে কিংবা দেখতে চাইলে নিজেরা খোজ নিয়ে দেখতে পারেন । ডায়াটলভপাস নামে একটা ওয়েবসাইট রয়েছে যেখানে এই রিলেটের সব কিছু আপনারা পাবেন ।
কয়েকদিন আগে ব্লগার আরইউ আমার একটা পোস্টে ডায়াটলভ মিস্ট্রির লিংক দিয়েছিলেন । লিংকটা দেখতে গিয়ে মনে পড়লো যে এটা সম্পর্কে আমি আগেও পড়েছি । একটা মুভি দেখেছিলাম এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে । মুভিটার নাম ডেভিলস পাস । দুদিন ধরে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা নানান আর্কিকেল পড়লাম । বেশ কয়েকটা ইউটিউব ভিডিও দেখলাম । তারপর আজকে লেখাটা শেষ করলাম । আপনার নিচের লিংক গুলোতে গিয়ে আরও বিস্তারিত পড়তে পারেন ।
আরও পড়তে পারেন
Dyatlovpass.com
The Dyatlov Pass incident
HOW DID NINE RUSSIAN HIKERS LOSE THEIR LIVES IN THE DYATLOV PASS INCIDENT?
Dyatlov Pass incident
Russia blames avalanche for 1959 Urals mountain tragedy
এছাড়া ইউটিউব ভিডিও দেখতে পারেন
New Evidence In The Dyatlov Pass Mystery
The Dyatlov Pass Incident
Two theories for an unsolved Soviet mystery
ছবি সুত্র
The Mikhajlov Cemetry in Yekaterinburg. The tomb of the group who had died in mysterious circumstances in the northern Ural Mountains
pic source
pic source
pic source
pic source
pic source
০২ রা নভেম্বর, ২০২২ রাত ১২:০৫
অপু তানভীর বলেছেন: মাসুম অনেক আগেই ব্লগ ছেড়েছে । প্রায় বছর দেড়েক তো হবেই । যদিও তাকে লগিন দেখা যেত তবে ব্লগে সে থাকতো না । আর এখন মাসুম দেশে নিজের নতুন ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত । ব্লগে সময় দেওয়ার মত সময় কোথাও ওর !
২| ০১ লা নভেম্বর, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:৪৫
আরইউ বলেছেন:
লেখা এবং সাথে প্রাসংগিক ছবিগুলো চমৎকার হয়েছে, অপু।
এভালান্চির থিউরিটাই আমার কাছে সবচেয়ে সম্ভাব্য বলে মনে হয়।
০২ রা নভেম্বর, ২০২২ রাত ১২:০৬
অপু তানভীর বলেছেন: প্রথমে তুষারধসের ব্যাপারটা আমার নিজের কাছে বেশ অসম্ভব মনে হয়েছিলো কারণ তুষার ধস হলে তো অনেক আগেই সবার টের পাওয়ার কথা । কিন্তু পরে যখন বিশেষ ধরনের ধস সম্পর্কে জানা গেল তখন মনে হল এর থেকে ভাল ব্যাখ্যা আর হতেই পারে না ।
আপনাকেও ধন্যবাদ এমন একটা ব্যাপারের খোজ দেওয়ার জন্য ।
৩| ০১ লা নভেম্বর, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:৩৩
শেরজা তপন বলেছেন: বাহ চমৎকার লিখেছেন! বেশ সময় নিয়ে পড়লাম। ভাবছি আসল ঘটনাটা কি হতে পারে?
মিরোরডডল আপুর কথার সুত্র ধরে বলছি, আপনার বন্ধুর কি হল- একেবারে সব ছেড়েছুড়ে যাচ্ছে?
একটুখানি চেষ্টা করলাম নামের বানানগুলো ঠিকঠাক করে দিতে;
Georgy Krivonishchenko-'গিয়ের্গী ক্রিভোনিশ্চেঙ্কা'
'উরাল পর্বতমালা' (Уральские горы- উরালস্কি গোর)
Alekseevich Zolotaryov- আলেকসেভিচ জোলোতারভ
০২ রা নভেম্বর, ২০২২ রাত ১২:০৯
অপু তানভীর বলেছেন: সময় নিয়ে পড়ার জন্য ধন্যবাদ । রাশিয়া আমার আগ্রহ আসলে আপনার বাবনিক পড়ার পর থেকেই । দেখা যাক সামনে আর কত কি আছে যেটা নিয়ে লেখা যায়, নতুন কিছু পড়া যায় !
এবার থেকে এই নামের সমস্যা হলেই আপনাকে নক দিয়ে নাম ঠিক করে নিতে হবে । এই নাম আমার পক্ষে উচ্চারণ করা মোটেও সম্ভব না ।
মাসুম আসলে অনেক আগেই নিয়মিত ব্লগিং থেকে দুরে সরে গেছে । আজকের পর থেকে হয়তো একেবারে চলে যাবে । নিজের নতুন ব্যবসায় হাত দিয়েছে। ব্লগে এমনিতেও সময় দিবে কখন !
৪| ০১ লা নভেম্বর, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:৪২
মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন:
তাবু থেকে বের হওয়া নয়টা ফুটপ্রিন্ট চলে গেছে পাহাড়ের চুড়ার উল্টোদিকে ।
এইটা কি করে সম্ভব। ফুটপ্রিন্ট তো কিছুতেই থাকার কথা না।
০২ রা নভেম্বর, ২০২২ রাত ১২:১৬
অপু তানভীর বলেছেন: যদি প্রবল তুষার পাত হয় তাহলে হয়তো ফুটপ্রিন্ট মুছে যেতে পারে কিন্তু সামান্য কিংবা তুষারপাত না হলে তুষারের উপরে প্রিন্ট থাকবে । পায়ের ছাপের উপর তুষার পরবে কিন্তু সেটা বোঝা যাবে ।
৫| ০১ লা নভেম্বর, ২০২২ রাত ৮:২৭
জুল ভার্ন বলেছেন: চমৎকার পোস্ট! +
০২ রা নভেম্বর, ২০২২ রাত ১২:১৬
অপু তানভীর বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই
৬| ০২ রা নভেম্বর, ২০২২ রাত ১২:৪৫
মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: সেখানে কিন্তু প্রবল তুষারপাত ছিলো।
০২ রা নভেম্বর, ২০২২ রাত ১২:৫৪
অপু তানভীর বলেছেন: তুষারপাত সত্ত্বেও কিভাবে ফুটপ্রিন্ট পাওয়া যেতে পারে সেটা আপনি নিজেই পরীক্ষা করে দেখতে পারেন । একটা গামলাতে আটা নিন । তারপর আটা গুলো একটা শক্ত করে হাত দিয়ে চেপে দিন । এরপর আটার মাঝে হাত দিয়ে কয়েকটা ফুটো করে দি, এগুলো ধরুন পায়ের ছাপ । এবার আবারও আস্তে আস্তে গমলাতে আটার আস্তরন ফেলটে থাকুন । দেখবেন ফুটো গুলো ঢেকে গেলেও সেগুলো চিহ্নিত করা সম্ভব হবে । এখানেও অনেকটা সেই রকমই ব্যাপার । আরএই ফুট প্রিন্ট আমাদের কাছে চিহ্নিত করা অসম্ভব মনে হলেও যারা সারা জীবন বরফ ঢাকা পাহাড়ে থেকে তাদের কাছে অসম্ভব হবে না নিশ্চয়ই ।
৭| ০২ রা নভেম্বর, ২০২২ সকাল ৭:১৩
মিরোরডডল বলেছেন:
বুঝলাম, কিন্তু সাসুমের এপিক কমেন্টগুলো মিস করবো ।
পোষ্ট পরে পড়বো ।
০২ রা নভেম্বর, ২০২২ সকাল ১০:৩৪
অপু তানভীর বলেছেন: মাসুম সম্প্রতি একেবারে দেশে চলে এসেছে । থিতু হয় নি এখনও । নতুন ব্যবসা শুরু করবে । একটু সময় লাগবে থিতু হতে । ওটা হয়ে গেলে আশা করি আবারও ফিরে আসবে ।
©somewhere in net ltd.
১| ০১ লা নভেম্বর, ২০২২ বিকাল ৫:২০
মিরোরডডল বলেছেন:
এটা কি হলো !!!
সাসুম চলে গেলো কিন্তু কেনো ???
মনটাই খারাপ হয়ে গেলো