নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
অনেক মানুষের মাঝে একটা বিশ্বাস থাকে যে বছরের প্রথমদিন যেমন কাটবে সারা বছর বুঝি তেমনই যাবে । যদিও এই বিশ্বাসের কোন ভিত্তি নেই তবে মানুষ কত কিছুই না ভাবে । বছরের প্রথমদিন অনেকের বাসায় এই জন্য ভাল মন্দ রান্না হয় যাতে পুরো বছর ভাল যায়। বছরের প্রথমদিনই ঢাকায় ফেরার পরিকল্পনা ছিল । বেনাপোল এক্সপ্রেস আমাদের জেলার স্টেশনে আসার কথা ছিল দুপুর তিনটা বিশ মিনিটে । বাসা থেকে খাওয়া শেষ করে ২০ মিনিট আগেই পৌছে গেলাম স্টেশনে । সবে মাত্র ব্যাগ টা রেখে চেয়ারে বসতে যাবো তখনই শুনতে পেলাম যে ট্রেন নাকি লেট হবে । অনুসন্ধান থেকে খোজ খবর নিতে গিয়ে জানলাম যে ট্রেন তখনও বেনাপোল থেকে ছেড়ে আসে নি । অথচ সময় অনুযায়ী আরও ঘন্টা দুয়েক আগেই ট্রেন ছাড়ার কথা তবেই তা সঠিক সময়ে আমাদের স্টেশনে এসে পৌছাবে ।
একবার মনে হল তখনই বাসায় চলে যাই । স্টেশন থেকে বাসায় যেতে খুব বেশি সময় লাগবে না । সেখানে গিয়ে বরং অপেক্ষা করি । কিন্তু তখনই মনে হল যে বাসায় গেলে বাসায় মানুষজনদের আলাদা প্যারায় ফেলা হবে । আমার মা হয়তো নতুন করে আবার রান্না বসাবে এবং আমাকে আরও একবার খাওয়া দাওয়া করাবে । বাসায় আসলে আমার মা এবং ভাবীর জীবনের প্রধান লক্ষ্য হয়ে দাড়ায় যে আমি যেন যত পরিমান সম্ভব খাওয়া দাওয়া করি । আর সেই সাথে আরও একটা সম্ভবনা আছে যে একবার বাসায় গেলে আমাকে আর তারা স্টেশনে আসতেই দেবে না । কারণ ট্রেন যতখানি দেরি হবে তাতে আমার ঢাকা পৌছাতে বেশ রাত হয়ে যাবে । এই রাত করে আমি কিভাবে ঢাকা স্টেশন থেকে আমার বাসায় যাবো এই চিন্তায় তারা আমাকে আজকে আর যেতে দিবে না ।
স্টেশনেই বসে বই পড়তে শুরু করলাম । আরও ঘন্টা খানেক পরে স্টেশন থেকে মাইকে জানালো যে ট্রেন সবে মাত্র বেলাপোল থেকে ছেড়ে এসেছে ।
ট্রেন পৌছালো মোটামুটি সাড়ে তিনঘন্টা দেরি করে । বছরের শুরুতেই কোন কাজে সাড়ে তিন ঘন্টা লেট । যাক অবশেষে ট্রেনে তো এল । এরই মাঝে কতবার যে মনে চেয়েছে বাসায় ফিরে যাই । আরও দুটো দিন বাসায় আরাম করে কারিয়ে দিই । এই হচ্ছে বাসায় যাওয়ার সব থেকে বড় সমস্যা । একবার কয়েকদিন থাকলে কেবল থাকতেই ইচ্ছে করে । মনে হয় যেন ওখানেই কাটিয়ে দিই ।
ট্রেনে উঠে বসলাম । ট্রেন চলতে শুরু করলো । ব্যাগ জায়গা মত বসিয়ে নিজেও আরাম করে বসলাম । পরের স্টেশনে এক পরিবার উঠলো । সাথে উঠলো তাদের মাল পত্র । কেউ যে এতো পরিমান মাল পত্র নিয়ে যাত্রা করতে পারে আমার ধারণার বাইরে ছিল । চালের বস্তা থেকে শুরু করে বড় বড় বোয়াম ভর্তি গুড় সরিষার তেল আরও যে কত কিছু । মনে হচ্ছে যেন দুনিয়ার সব কিছু নিয়ে এরা ঢাকায় যাচ্ছে । এতো জিনিস পত্র নিয়ে কেউ ঢাকা যায় কিভাবে?
তবে আমার ধারণা ভুল প্রমাণিত হল ঈশ্বর্দী স্টেশনে এসে আমার ধারণা ভুল প্রমাণিত হল । আরও একটা পরিবার উঠলো । এরা মনে হল যে দুনিয়ার সবার মালপত্র নিয়ে এরা ট্রেনে উঠেছে । গ্রামের বাসায় যা ছিল সব কিছুই এরা নিয়ে ঢাকা চলে যাচ্ছে । মালপত্র রাখার গায়গায় তো জায়গা হলই না, পুরো বগির ভেতরে চলাচল করার রাস্তায় সেগুলো পড়ে রইলো পুরো যাত্রার সময় ।
ঘড়িতে সময় দেখলাম । যেহারে ট্রেন যাচ্ছে সেই হিসাব মত ঢাকায় পৌছাতে মোটামুটি বাঅটা বাজবে । বারোটা বাজলেও সমস্যা নেই । কিন্তু কপাল যখন খারাপ হয় তখন সব দিক দিয়ে খারাপ হয় । ট্রেন যে কতবার ক্রসিংয়ে পড়লো তার কোন ঠিক নেই । সব সময় দেখতে পেলাম যে আমাদের ট্রেন থেকে অন্য সব ট্রেনকে যেতে দিচ্ছে । যখন ঢাকা স্টেশনে পৌছালাম তখন দেখি ঘড়িতে বেজে গেছে দুইটা বিশ ।
চুয়াডাঙ্গা স্টেশন থেকে ঢাকা স্টেশনে আসতে সময় দেওয়া ছিল সাড়ে পাঁচ ঘন্টা । সেই ট্রেন পৌছাতে সময় লাগলো মোটামুটি আট ঘন্টা । আমি যখন ট্রেশন বের হচ্ছি তখন আমার মনে এই ভয় কাজ করছে যে রাতেই এই সময়ে এখান ঢাকায় বের হওয়াটা কতখানি নিরাপদ হবে । আমার ব্যাগে বেশ কিছু টাকা রয়েছে । সেই সাথে আমার ল্যাপটপ রয়েছে । এই জিনিস যদি ছিনতাই কারি নিয়ে যায় আমি তো দুঃখেই মরে যাবো ।
সিএনজি কিংবা বাইকে ওঠার সাহস করলাম না । একদম একা এই রাতে এসবে ওঠা ঠিক হবে না । আমার ধারণা ছিল যে রাতের বেলা উবার চলে না । তবে এক বন্ধু জানালো যে উবার সব সময় চলে । স্টেশন থেকেই এপসটা ইনস্টল করলাম । তারপর রাইড কল করতেই সেটা একদম প্রায় সাথে সাথেই চলে এল । মনের ভেতরে তবুও খানিকটা ভয় কাজ করছিলো যে হয়তো কোন দুর্ঘটনা ঘটতে পারে । তবে উবারে নিরাপত্তা বেশি । একটা রেকর্ড থাকে সব সময় ।
ঢাকার রাতের রাস্তায় আমার ঘুরে বেরানো হয়েছে খুবই কম । গভীর রাতে যখন আপনি যখন ঢাকার রাস্তায় ঘুরবেন তখন ঢাকা শহরটা আপনার কাছে একদম অপরিচিত মনে হবে । সত্যিই তাই । একদম যেন অপরিচিত একটা শহর মনে হবে তখন । তবে মানুষজন যে একেবারে ছিল না তেমন না । আশে পাশে মানুষ ছিল । বিশেষ করে যারা শহর পরিস্কার করে । সিটি কর্পোরশনের লোকজন রাস্তায় দেখা যাচ্ছিলো । স্টেশন থেকে বাসায় পৌছাতে সময় লাগলো মাত্র বিশ মিনিট ।
বছরের শুরুটা মোটেই আনন্দদায়ক হল না । অপেক্ষা করতে করতে বিরক্ত হয়ে গিয়েছিলাম স্টেশনে । বছরের শুরুতে এতো অপেক্ষা দিয়ে শুরু হওয়াটা মোটেই ভাল লাগলো না । তবে শেষমেষ নিরাপদে বাসায় পৌছে গেলাম সেটাই সব থেকে আনন্দের ব্যাপার ।
০৬ ই জানুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ১২:৪৪
অপু তানভীর বলেছেন: আমার মাঝে মাঝে রাতে বাসায় ফিরতে একটু দেরি হয় । তবে সেটা সর্বোচ্চ সাড়ে এগারোটা । তখনও চিত্র অনেকটা বদলে যায় । রাস্তাঘাট কেমন ফাঁকা থাকে । ঢাকার রাস্তায় আসলে লোকজন না থাকলে একদম অচেনা মনে হয় । মাঝে মাঝে যখন ট্যুর থেকে ফিরি তখনও রাতে ফিরতে হয় । এই অচেনা রাস্তার দেখা পাওয়া যায় !
২| ০৫ ই জানুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৪:০৯
মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন:
- বেশ কিছু আতশ বাজি আর নানান ধরনের বাজি, তারাবাতি কিনে ছিলাম। ১০ টা থেকে ১টা পর্যন্ত ফটিয়েছি বাচ্চাদের নিয়ে। তাতেও শেষ হয়নি।
০৬ ই জানুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ১২:৪৬
অপু তানভীর বলেছেন: একটু আনন্দ করার পক্ষে যদিও আমি সব সময় এটা চাই যেন আমার আনন্দে অন্য মানুষের অসুবিধা না হয় । বোম বাজি এই ঢাকার মত জনবহুল শহরে ফোটানো উচিৎ না । যদি একান্তই ইচ্ছে করে তবে মাঠে ফোটানোর পক্ষে ।
৩| ০৫ ই জানুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৫:০৭
শেরজা তপন বলেছেন: বাচ্চাদের নিয়ে ভ্রমনে আমার বেশ কেটেছে! তবে ৩১ তারিখ রাতের জার্নিটা আমারও ভাল হয়নি
বাড়িতে মায়ের সান্নিধ্যে আরো কিছু সময় থেকে আসতেন
০৬ ই জানুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ১২:৪৯
অপু তানভীর বলেছেন: বাড়িতে থাকার সব থেকে বড় সমস্যা হচ্ছে একবার থিতু হয়ে গেলে আর আসতেই ইচ্ছে করে না । এই যে আরো কয়েকটা দিন যদি থেকেই আসতাম তবুও ফেরার সময় মনে হয় আরও কয়েকদিন থাকতে পারলে মনে হয় ভাল হত !
৪| ০৫ ই জানুয়ারি, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:২৬
ইসিয়াক বলেছেন: অপেক্ষার প্রহর সব সময় দীর্ঘ আর বিরক্তকর হয়। অবশেষে নিরাপদে বাসায় পৌঁছাতে পেরেছেন সেটাই ভালো খবর।
রাতের ঢাকার অন্য একটা রূপ আছে। মাঝে মাঝে বের হবেন। গল্পের অনেক উপাদান খুঁজে পাবেন। আমি একসময় প্রায় ঘুরতে বেড়াতাম। কত বিচিত্র যে মানুষের জীবন।
নতুন বছর সুন্দর কাটুক এই কামনা রইলো।
০৬ ই জানুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ১২:৫৩
অপু তানভীর বলেছেন: আমার অবশ্য অপেক্ষা করার অভ্যেস অনেক আগে থেকেই । কারো সাথে দেখা সাক্ষাত করার সময় আমি সব সময় সময়ের আগেই গিয়ে পৌছে যাই । আজ পর্যন্ত আমার জন্য কেউ অপেক্ষা করেছে বলে মনে আমার মনে নেই বরং আমিই সবার জন্য অপেক্ষা করেছি । অবশ্য শীত লাগছিলো একটু তবে এছাড়া আর খুব একটা সমস্যা হয় নি । বই ছিল সাথে, মোবাইল ছিল । সময় কেটে গিয়েছে ।
রাতে আমার বের হওয়ার হওয়ার অনেক ইচ্ছে করে কিন্তু নিরাপত্তার জন্য বের হতে পারি না । হয় পুলিশ ধরবে নয়তো ছিনতাইকারী !
৫| ০৫ ই জানুয়ারি, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:০৯
জুল ভার্ন বলেছেন: আমি মনেই করতে পারছিনা, বছরের শুরুর দিনটা আমার কিভাবে কেটেছিল!
০৬ ই জানুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ১২:৫৫
অপু তানভীর বলেছেন: প্রথমদিনের জার্নির কারণে মনে আছে দিনটা কেমন কেটেছে অথচ তার পরের দিন কিভাবে কেটেছে সেটা আমারও মনে নেই ।
৬| ০৫ ই জানুয়ারি, ২০২৩ রাত ৯:২১
অজ্ঞ বালক বলেছেন: রাতের ঢাকা অদ্ভুত রকমের রহস্যময়, যারা রাতের ঢাকা একা-উদ্দেশ্যহীনভাবে হেঁটে দেখে নাই তারা বুঝবে না।
০৬ ই জানুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ১২:৫৬
অপু তানভীর বলেছেন: আমার এই রকম ভাবে ঘুরে বেড়ানোর ইচ্ছে অনেক দিন তবে এখনও তা করা হয় নি ।
©somewhere in net ltd.
১| ০৫ ই জানুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৩:৫৯
জ্যাক স্মিথ বলেছেন: গভীর রাতে ঢাকায় ঘুরতে আমার দারুণ লাগে।
নিরাপদে যে বাসায় পোঁছিয়েছেন সেটাই বড় কথা।
নতুন বছরের শুভেচ্ছা।