নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

www.oputanvir.com

অপু তানভীর

আমার চোখে ঠোঁটে মুখে তুমি লেগে আছো

অপু তানভীর › বিস্তারিত পোস্টঃ

অনুবাদ গল্পঃ দ্যা নাইটিঙ্গেল এন্ড দ্যা রোজ

০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ সকাল ১১:২৩



গোটা দশেক ইংরেজি গল্প অনুবাদ করার কাজ পেয়েছি । তবে নিয়োগকর্তার শর্ত হচ্ছে অনুবাদ হতে হবে ঝরঝরে । আক্ষরিক নয়, ভাবানুবাদ । আগে একবার শখের কারণে অনুবাদ করার চেষ্টা করেছিলাম তবে সেটা শেষ করতে পারি নি । এবার যেহেতু টাকা পয়সা পাওয়া যাবে তাই চেষ্টা করা যেতে পারে। টেস্ট অনুবাদ হিসাবে এই গল্পটা অনুবাদ করে তাকে দিলাম । সে জানালো যে এতে চলবে তবে এর থেকে ভাল হওয়া চাই। পাঠকদের জন্য অনুবাদটা এখানে দিলাম । বাকি গুলো অবশ্য এখানে দেওয়ার অনুমতি পাওয়া যাবে না। গল্পের মুল লেখক অস্কার ওয়াইল্ড । তার ছোট গল্প আশা করি আপনারা পড়েছেন।


তরুন ছাত্রটি কান্না বিজরিত কন্ঠে বলল, সে বলেছিলো তাকে একটি লাল গোলাপ এনে দিলে সে আমার সাথে সারা রাত নাচবে । কিন্তু পোড়া কপাল আমার আমার পুরো বাগানে একটাও লাল গোলাপ নেই ।

কাছের ওক গাছের ডালে বসে থাকা নাইটিঙ্গেল পাখিটি তরুন ছাত্রের এই বিলাশ শুনছিলো । যখন পাখিটি তরুনের দিকে তাকালো তখন সে অবাক হয়ে গেল ।

ছেলেটি কান্না মিশ্রিত কন্ঠে বলল, আমার পুরো বাগানে একটাও লাল গোলাপ নেই । মানুষের জীবনের সুখ কত ছোট জিনিসের উপরেই না নির্ভর করে । আমি কত জ্ঞানের বই পড়েছি, কত গোপন দর্শনের কথাই না আমি জানি কিন্তু তবুও একটা ছোট লাল গোপালের অভাবে আমার জীবন নষ্ট হতে চলেছে ।

নাইটিঙ্গলের পাখিটি বলল, যাক অবশেষে একটা সত্যিকারের প্রেমিকের দেখা পাওয়া গেল । যদিও আমি তাকে চিনতাম না কিন্তু আমি তারাদের কাছে তার কথাই গল্প করেছি, রাতের পর রাত তার জন্যই গান করেছি। এবং এখন আমি তাকে দেখতে পেলাম । তার কালো চুপ গোপালের মত তার লাল ঠোঁট কিন্তু তীব্র আবেগ তার চেহারাকে বিবর্ণ করে তার চেহারাকে বিবর্ণ করে তুলেছে।

তরুন ছাত্রটি আবারও বলল, কাল রাতে রাজ্যের প্রিন্স একটা নাচের পার্টির আয়োজন করেছে। আমার প্রেমিকা সেখানে গিয়ে উপস্থিত হবে । আমি যদি তাকে একটা লাল গোলাপ দিতে পারি তাহলে সে বলেছে সে আমার সাথে সারা রাত নাচবে। যদি তাকে একটা লাল গোলাপ দিতে পারি তাহলে আমার বাহুর ভেতরে আমি তাকে জড়িয়ে ধরতে পারবো । সে আমার কাধে মাথা রাখবে আর আমাকে জড়িয়ে ধরবে তার হাত দিয়ে । কিন্তু হায় আমার বাগানে কোন লাল গোলাপ নেই । তাই পার্টিতে আমি একাই একাই বসে থাকবো । সে আমার পাশ দিয়ে আমার মন ভেঙ্গে দিয়ে চলে যাবে আমাকে অগ্রায্য করেই ।

এসব শুনে নাইটিঙ্গেল পাখিটি ভাবলো, এ হচ্ছে আসল প্রেমিক । সে যে কষ্ট এখন পাচ্ছে, আমি তো সেই কষ্টের গানই গাই। আমার জন্য যা আনন্দের এই তরুনের জন্য তা কষ্টের। ভালোবাসা সত্যিই চমৎকার একটা ব্যাপার । ভালোবাসা এমারল্ড পাথরের চেয়ে দামি, ওপ্যাল পাথরের চেয়েও প্রিয় । মনি মুক্তো দিয়ে এই জিনিস কেনা যায় না, দোকানে কিংবা বাজারেও কিনতে পাওয়া যায় না। এমন কি সোনার ওজনেও এটাকে মাপা যায় না ।

তরুন ছাত্র আবারও বলল, চারিদিকে মিউজিক বাজবে, মজলিস বসবে । এবং আমার প্রেমিকা আসরের সেই বাজনার তালে তালে নাচবে । সে এমন ভাবে নাচবে যেন তার পা মেঝেতে স্পর্শই করবে না এবং তার উজ্জল ঝকঝমকে পোশাক তার চারিদিকে ঘুরে বেড়াবে । কিন্তু আমার সাথে কে নাচবে না । কারণ আমার কাছে তাকে দেওয়ার জন্য কোন লাল গোলাপ নেই । এই বলে ছাত্রটি ঘাসে মুখ লুকিয়ে কাঁদতে শুরু করলো ।

একটি সবুজ গিরগিটি লেজ উঠিয়ে পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় বলল, এই যুবক কাঁদছে কেন?
একটা উড়তে থাকা প্রজাপ্রতি বলল, তাই তো কাঁদছে কেন?
একটা ডেইজি ফুল তার প্রতিবেশীকে জিজ্ঞেস করলো, সে কাঁদছে কেন?

তখন নাইটিঙ্গলে বলল, সে একটা লাল গোলাপের জন্য কাঁদছে ।

তারা সবাই চিৎকার করে বলল, এ্যা ! একটা লাল গোপালের জন্য । এ কেমন বেকুবি !
এই কথা শুনে সবুজ গিরগিটিটি উচ্চ স্বরে হো হো করে হেসে উঠলো ।

কিন্তু কেবল নাইটিঙ্গেল পাখিটিই কেবল তরুন ছাত্রের দুঃখের কথা জানতো । সে ওক গাচের ডালে চুপ করে বসে রইলো । এবং ভালোবাসার গোপন রহস্যের কথা চিন্তা করতে লাগলো ।

তারপর হঠাৎ নাইটিঙ্গলে পাখিটি শুন্যে ডানা মেলে উড়ে চলল । এবং ছায়ার মত করে পুরো বাগানে সে ভেসে বেড়াতে লাগলো ।
ঘাসের মাঝে একটা সুন্দর গোলাপ গাছ দেখেই সে তার পাশে গিয়ে দাড়ালো । তারপর বলল, আমাকে একটা লাল গোলাপ দাও এবং বিনিময়ে আমি তোমাকে সারা রাত গান শোনাবো ।
কিন্তু গোলাপ গাছ টি মাথা নেড়ে বলল, আমার সব ফুলই সাদা । সমুদ্রের ফেনার মত সাদা । পাহাড়ের তুষারের থেকেও সাদা । তুমি বরং পুরানো সূর্য ঘড়ির কাছে থাকা আমার ভাইয়ের কাছে যাও । সে তোমাকে একটা লাল গোলাপ দিলেও দিতে পারবে ।

নাইটিঙ্গেল পাখিটি তাই পুরানো সুর্য ঘড়ির কাছের গোপালের কাছে গেল । এবং একই ভাবে কাতর কন্ঠে বলল, আমাকে একটা লাল গোলাপ দাও এবং আমি তোমাকে সারা রাত গান শোনাবো ।
কিন্তু এই গাছটিও মাথা ঝাকিয়ে বলল, আমার সব গোপালই হলুদ, জলপরীদের চুলের মতই হলুদ, ঘাসের ভেতরে ফুটে থাকা ডেফোডিল ফুলের থেকেও বেশি হলুদ । কিন্তু তুমি জানালার নিচে জন্মনো আমার ভাইয়ের কাছে যাও । তুমি যা চাও হয়তো সে তোমাকে সেটা দিতে পারবে ।

সুতরাং নাইটিঙ্গেল পাখিটি জানালার নিচে জন্মে থাকা গোলাপ গাছটির কাছে গিয়ে হাজির হল এবং বলল, আমাকে একটা লাল গোলাপ দাও এবং আমি তোমাকে সারারাত গান শোনাবো ।

এবারও গাছটি মাথা ঝাকিয়ে বলল, আমার সকল ফুল লাল, ঘুঘু পাখির পায়ের মত লাল, সমুদ্রের প্রবালের থেকেও লাল । কিন্তু শীত আমার শিরাকে জমিয়ে দিয়েছে । আর ফুল ফোটার আগেই কুয়াশার কারনে আমার কুড়ি গুলো নষ্ট হয়ে গেছে । তাই এই বছরে আমার কোন লাল গোলাপ জন্মাবে না ।

নাইটিঙ্গেল তখন কাঁদতে কাঁদতে বলল, একটা, মাত্র একটা লাল গোলাপ আমি চেয়েছি । এটা পাওয়ার কি কোন উপায় নেই ?
গোলাপ গাছ তখন বলল, আছে । তবে সেটা এতোই বিপদজনক যে আমি তোমাকে সেটা বলতে ভয় পাচ্ছি ।
নাইটিঙ্গেল বলল, আমাকে বল । আমি কোন কিছুতেই ভয় পাই না ।
গাছটি বলল, যদি তুমি গোলাপ চাও তাহলে চাঁদের আলোয় গানের সুরে তোমাকে সেই গোলাপটি জন্মাতে হবে । এবং তোমার বুকের রক্ত দিয়ে সেটাকে রাঙ্গিয়ে তুলতে হবে । আমার কাটার বুক ঠেঁকিয়ে তোমাকে গান শোনাতে হবে সারা রাত । সেই কাটা তোমার বুকের গভীরে প্রবেশ করবে এবং তোমার বুকের রক্ত সেই কাটা দিয়ে আমার ভেতরে প্রবেশ করবে এবং আমার নিজের রক্ত হয়ে উঠবে ।


নাইটিঙ্গেল বলল, মৃত্যুর বিনিময়ে একটি লাল গোলাপ ! জীবন সবার সবার কাছে প্রিয় । সবুজ ঘাসে বসে সুর্যের সোনালি রোদ দেখা, চাঁদের জোঁছনা দেখা সবার কাছেই বড় মধুর লাগে । তবুও প্রেম জীবন থেকে বেশি মধুর । পাখির হৃদয়ের থেকে মানুষের হৃদয়ের দামই বা কতটুকু !

নাইটিঙ্গেল পাখিটি উড়ে চলল । সবুজ ঘাসের উপর তরুন ছাত্রটি তখনই কাঁদছিলো । তার সুন্দর চোখের অশ্রু তখনও শুকিয়ে যায় নি ।
পাখিটি তার কাছে গিয়ে বলল, আর কেঁদো না । আজকে তুমি তোমার লাল গোলাপ পেয়ে যাবে । আমি আমার বুকের রক্ত দিয়ে সেই লাল গোলাপ তোমার জন্য ফোটাবো । বিনিময়ে আমি কেবল চাই যে তুমি একজন সত্যিকারের প্রেমিক হবে । কারণ প্রেম দর্শনের চেয়েও জ্ঞানী, ক্ষমতার চেয়েও শক্তিশালী।

তরুন ছাত্র মুখ তুলে তাকালো । সে নাইটিঙ্গেলের কথা শুনলো বটে কিন্তু সে কিছুই বুঝলো না যে পাখিটি তাকে কী বলছে ।বইয়ে লেখা কথা গুলোই কেবল তার জানা ছিল ।
কিন্তু ওক গাছটি বুঝতে পেরেছিলো এবং সে বিষন্ন হয়েছিলো । সে ছোট নাইটিঙ্গেলকে খুব পছন্দ করতো । সে নিজের ডালে তার জন্য বাসা বানিয়েছিলো ।
ওক গাছটি বলল, আমার জন্য শেষ বারের মত একটা গান গাও । তুমি যখন চলে যাবে আমি তখন বড় একাকী বোধ করবো ।
নাইটিঙ্গেল পাখিটি শেষ বারের মত ওক গাছের জন্য গাইলো । এবং তার কন্ঠস্বর ছিল রূপার জার থেকে পানির বুদবুদের মত ।

যখন নাইটিঙ্গেল পাখিটি তার গান শেষ করলো তরুন উঠে বসলো । তারপর নিজের পকেট থেকে নোট বুক আর পেনসিল বের করলো । সে নিজে নিজেই বলল, পাখির নিশ্চিত ভাবেই দক্ষতা রয়েছে যা কোন ভাবেই অস্বীকার করা যায় না । কিন্তু তার কি অনুভূতি আছে ? মনে হয় না । আমার তো মনে হয় সে অন্যান্য শিল্পীদের মতই । তার নিজেস্ব ছন্দ আছে নিজেস্ব ধরণ রয়েছে । সে নিশ্চিত ভাবেই অনয়ের জন্য ত্যাগ স্বীকার করবে না । কিন্তু এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে কন্ঠে সুর আছে । কিন্তু কী পরিতাপের একটা ব্যাপার যে এই সুরের কোন অর্থ নেই ।
তরুণ ছাত্রটি তার ঘরের ভেতরে চলে গেল এবং নিজের বিছানায় শুয়ে পড়লো । শুয়ে শুয়ে সে নিজের ভালোবাসার কথা চিন্তা করতে লাগলো এবং এক সময়ে ঘুমিয়ে পড়লো ।

এবং যখন আকাশে চাঁদ দেখা গেল তখন নাইটিঙ্গলে লাল গোলাপ গাছের কাছে উড়ে এল । সে গাছের কাঁটায় নিজের বুক বিধিয়ে দিল । সারা রাত ধরে সে কাঁটায় বুক বিধিয়ে গান গেয়ে চলল । এবং নাইটিঙ্গেলের বুকের আরও গভীরে কাটাটি বিধে গেল । তার জীবনী শক্তি ধীরে ধীরে তার থেকে দুরে যেতে শুরু করলো ।

নাইটিঙ্গেল প্রথমে গাইলো ভালোবাসার গান । যেমন করে একটার পরে একটা গান চলতে থাকলো, একটি চমৎকার গোলাপ ফুটতে শুরু করলো । গান তো এগিয়ে যেতে শুরু করলো গোলাপটি তত জীবন্ত হয়ে উঠতে শুরু করলো । এক সময়ে গোপাল গাছটি চিৎকার করে বলল, আর কাছে এসো প্রিয় নাইটিঙ্গেল । আরও কাছে নয়তো গোলাপটি পুরোপুরি শেষ হওয়ার আগেই সকাল হয়ে যাবে । নাইটিঙ্গলে আরও কাছে এগিয়ে এল, তার বুকের ভেতরে কাটা আরও একটু বেশি ঢুকে গেল । নাইটিঙ্গলে আরও জোরে গান গাইতে শুরু করলো এবং গোলাপ আরও জীবন্ত হয়ে উঠতে শুরু করলো । গোপাল ফুলটি আরও লাল হয়ে উঠতে শুরু করলো ।

যতই গোলাপটি লাল হয়ে উঠলো নাইটিঙ্গেল পাখির কন্ঠ ততই নির্জীব হতে শুরু করলো । সে তার ডানা ঝাপটাতে শুরু করলো । চোখের সামনে অন্ধকার নেমে এল দ্রুত । তার মনে হল যে সমস্ত জগতটাই তার কাছ থেকে দুরে সরে যাচ্ছে, ধূসর আর বিবর্ণ হয়ে উঠছে । শেষ একটা বারের মত নাইটিঙ্গলে আরও গান গেয়ে উঠহলো । সাদা চাঁদ সেই গান শুনলো । ভোরের কথা সে ভুলে গেল । আকাশের বুকে আরও দীর্ঘ সময় ধরে সে বেসে রইলো । লাল গোলাপ সেই গান শুনলো। তার বুকে লাল আনন্দের ছোঁয়া । সে শীতে নির্জীবতার ভেতরেও পাপড়ি মেলে ফুটে উঠলো ।

গোলাপ গাছ টি চিৎকার করে উঠে বলল, দেখো দেখো ! গোলাপ ফোটা শেষ হয়েছে ।
কিন্তু নাইটিঙ্গলে কোন জবাব দিল না । সে ততক্ষনে মারা গেছে। তার বুকে বিধে আছে গোপালের কাঁটা ।

দুপুরে ছাত্রটি তার জানালা খুলে বাইরে তাকালো । আর লাল গোলাপটি জানালার পাশে ফুটে থাকতে দেখতে পেল । ছাত্রটি চিৎকার করে বলল, কী ভাগ্য আমার । কী চমৎকার একটা লাল গোলাপ । এতো সুন্দর গোলাপ আমি আগে কখনো দেখি নি । নিশ্চিত এই গোলাপের একটা ল্যাটিন নামও আছে ।
ছাত্রটি তখন লাল গোপাল ফুলটি ছিড়ে নিল । তারপর মাথায় একটি হ্যাট পরে সে প্রফেসরের বাড়ির দিকে হাটা দিল ।

প্রফেসরের কন্যা তখন তার ঘরের দরজার সামনে বসে নীল রংয়ের সিল্কের সুতা কাটছিলো । তার পায়ের কাছে একটা ছোট কুকুরের বাচ্চা শুয়েছিল ।

ছাত্রটি তখন প্রফেসরের মেয়েকে বলল, তুমি বলেছিলে যে আমি যদি তোমাকে একটা লাল গোলাপ এনে দিই তাহলে তুমি আমার সাথে নাচবে । এই দেখো সেই লাল গোলাপ । এটা পৃথিবীর সব থেকে সুন্দর লাল গোলাপ । এর থেকে সুন্দর লাল গোলাপ আর তুমি কোথাও পাবে না । তুমি এই গোপালটি ঠিক তোমার বুকের পাশেই পরবে এবং আমরা যখন একসাথে নাচবো তখন আমি তোমাকে বলবো যে তোমাকে আমি কতটুকু ভালোবাসি।

মেয়েটি কিছু সময় ভুরুকুঁচতে তাকিয়ে রইলো । তারপর বলল, আমার মনে হয় এই গোলাপটি আমার পোশাকের সাথে ঠিক মানাবে না । আর তাছাড়া চেম্বারলেইনের ভাতিজা আমাকে কিছু সুন্দর আসল গহনা পাঠিয়েছে । আর তুমি তো জানোই যে ফুলের চেয়ে গহনার দাম অনেক বেশি ।

তরুণ ছাত্রটি একথা শুনে রেগে গেল । রাগত স্বরেই বলল, বড় অকৃতজ্ঞ তুমি ।
তারপর সে গোলাপ ফুলটি রাস্তায় ফেলে দিল । ঘোড়ার গাড়ির চাকার নিচে পড়ে ফুলটি মাটির সাথে মিশে গেল সাথে সাথেই ।
মেয়েটি তখন বলল, অকৃতজ্ঞ ! তুমি তো দেখি খুব অভদ্র ! আর তুমি কে? কী আছে তোমার ! তুমি সামান্য একজন ছাত্র কেবল ! আর চেম্বালেইনের ভাতিজার জুতায় যতটুকু মুক্তো আছে তোমার মনে হয় সেইটুকুও নেই ।

এই কথা বলে মেয়েটি ঘরের ভেতরে চলে গেল ।

ভালোবাসা একটা বেকুবগিরি ছাড়া আর কিছু নয় । এটা যুক্তির অর্ধেকের মত দরকারিও নয় । এটা দিয়ে আসলে কোন কিছুই প্রমান হয় না । এটা এমন সব কথা বলে যা কোন দিন বাস্তবে ঘটে না । এটা মানুষকে এমন জিনিস বিশ্বাস করতে বলে যার কোন অস্তিত্ব নেই । এছাড়া এটা আসলে বাস্তব সম্মত নয় । আর এই যুগে যা বাস্তব সম্মত না তা আসলে কোন কাজের না । আমি বরং এর থেকে দর্শন আর অধিবিদ্যা পড়ি।

তরুণ ছাত্রটি তার ঘরে ফিরে গেল এবং মধুলোভরা একটা বই টেনে বের করলো । তারপর সেটা পড়তে শুরু করলো ।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ সকাল ১১:৩০

জুল ভার্ন বলেছেন: গল্প হলেও গল্পের বক্তব্য উপলব্ধি করার মতো। প্রেম প্রীতি নিয়ে যাদের অনেক আবেগ তাদের উপলব্ধি করতে হবে.....

০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ সকাল ১১:৩৩

অপু তানভীর বলেছেন: এই গল্পটা পড়ে নাইটিঙ্গেল পাখির জন্য আমার মন খারাপ হল । বেচারী আসল ভালোবাসা মনে করে নিজের জীবন দিয়ে লাল গোলাপ জন্মালো অথচ দেখেন দিন শেষে সেই গোলাপের কীই না অবস্থা হল ! বাস্তবে আসলে প্রায় সব ভালোবাসার অবস্থা এমনই হয় !

২| ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ রাত ৯:২৫

ডঃ এম এ আলী বলেছেন:



নাইটিংগেল সত্যিকারের প্রেমে বিশ্বাস করে, কিন্তু গল্পটির কাহিনী মতে দেখা যায় একটি অর্থহীন করুন
আঙ্গিক কষ্ট সয়ে সে তার জীবনটি দিয়েছে , কারণ তার ত্যাগ থেকে জন্ম নেয়া লাল গোলাপটি নাইটিঙ্গেলের
কাঙ্খিত ইচ্ছা অর্জন করেনি। অধ্যাপকের কন্যা লাল গোলাপটিকে প্রত্যাখ্যান করার পরে তরুন ছাত্রটিউ
সেটিকে ছুড়ে ফেলে দেয়। নাইটিংগেলটি তার আত্ম ত্যাগের মাধ্যমে সত্যিকার ভালবাসার মুর্ত প্রতিক হিসাবে
সকলের মন জয় করে নিয়েছে । তার জন্য কষ্ট ও মায়া জাগার পাশাপাশি শ্রদ্ধাবোধও জাগে ।

যাহোক 'দ্য নাইটিঙ্গেল' প্রকৃতি এবং শিল্প সম্পর্কে অস্কার ওয়াইল্ডের একটি অসাধারণ গল্প । অসময়ে গোলাপ
গাছে ফুল ফুটানোর প্রানান্তকর প্রচেষ্টা , এক অর্থে শিল্পের একটি সুন্দর কাজ, কেননা লাল গোলাপটি গাছটি থেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে জন্ম নেয়নি বরং এটি অবশ্যই নাইটিঙ্গেলের গান (শিল্প), প্রকৃতির শক্তি (চাঁদনী রাতের আলো) এবং
শিল্পীর মনের আবেগ সংমিশ্রণে নিজেকে উৎসর্গ করার ইচ্ছা (পাখির হৃদয় ভেদ করা) থেকে জন্ম নিয়েছে ।
সুতরাং, এভাবে দেখলে, নাইটিঙ্গেলের আত্মত্যাগ এতটা অর্থহীন নয়, কারণ এটি শিল্পের একটি কাজ তৈরি করেছিল।
শিল্পীরা প্রায়ই তাদের শিল্পে 'নিজেদের অনেক কিছু দেওয়ার বা তাদের হৃদয় ঢেলে দেওয়া বা তাদের শিল্পে
নিজেদেরকে এমনিভাবেই আত্মনিয়োগ করে ।

অবশ্য দ্য নাইটিংগেল অ্যান্ড দ্য রোজ এ এমন অনেক বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা সাধারণতই অনেক রূপকথার সাথে
যুক্ত করা হয়ে থাকে , এ গল্পে যেমন : একজন নায়ক (শিক্ষার্থী), একজন প্রেমের আগ্রহ (অধ্যাপকের কন্যা),
একজন সাহায্যকারী (নাইটিংগেল)। অস্কার ওয়াইল্ড এই সাধারণ চরিত্রের কতকের ধরনগুলিকে বিভিন্ন ভাবে
চিত্রিত করেছেন , যা ছাত্রকে অরোমান্টিক এবং রূঢ় করে তোলে এবং প্রেমের আগ্রহকে চঞ্চল এবং বস্তুবাদী করে
তোলেছে। যাহোক সবদিক মিলিয়ে অস্কার ওয়াইল্ড গল্পটিতে প্রকৃত ভালবাসা ও বস্তুবাদী ভালবাসার স্বরূপ
সুন্দরভাবে তুলে ধরে একটি অসাধারণ কালজয়ী গল্পের জন্ম দিয়েছেন । কালজয়ী এই গল্প লেখকের প্রতি
রইল শ্রদ্ধাঞ্জলী্ ।

অনুবাদ সুন্দর ও প্রাঞ্জল হয়েছে, প্রচ্ছদের ছবি নির্বাচনও সুন্দর এবং প্রাসঙ্গিক হয়েছে ।

শুভেচ্ছা রইল

০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ১:৫৮

অপু তানভীর বলেছেন: গল্পটি পড়ে শেষ করার পরে আমার মনে এক মনে এক অদ্ভুত মনভাব এসে ভর করেছিলো । বারবার মনে হল নাইটিঙ্গেল পাখিটির আত্মত্যাগ কী চরম ভাবেই না বৃথা গেল । যে প্রাণটি ভালোবাসার জন্য (তাও আবার অন্য মানুষের ভালোবাসা, নিজের নয়) নিজের জীবন দিল অথচ শেষে গিয়ে দেখা গেল সেটা একেবারে ব্যর্থ হয়ে গেল । এমন যদি হত যে ছাত্রটি অন্তত প্রেমে প্রত্যাখ্যান হয়ে কষ্ট পাচ্ছে লাল গোলাপটির কদর করছে তবুও খানিকটা মেনে নেওয়া যেত । কিন্তু এখানে দেখা গেল এমন কিছুই আসলে হয় নি । দিন শেষে কেবল পাখি টিই প্রাণ হারালো।

আর হ্যা আপনি ঠিক বলেছেন । গল্পটি রূপকথা হলেও এই গল্পে আসলে প্রকৃত ভালোবাসার বাস্তববাদী ভালোবাসা কে একেবারে যথাযত ভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে ।

আপনার চমৎকার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ ।

ভালো থাকুন সব সময় !

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.