![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমাদের মত যাদের জন্ম আশির দশকের শেষে এবং নব্বইয়ের দশকের শুরুর দিকে তারা অন্য সব জেনারেশন থেকে আলাদা। আমরা এমন একটা জেনারেশন যারা সব কিছু সঠিক সময়ে পেয়ে এসেছে। এখন মানুষ যে স্বপ্নের শৈশবের কথা বলে স্মৃতিরোমন্থন করে আমরা সেই চমৎকার শৈশবটা পেয়েছি। আমাদের শৈশব এবং কৈশোরগুলো পরিপূর্ণ ভাবে ইন্টারনেট এবং স্মার্টফোন মুক্ত ছিল। ঘুম থেকে উঠে প্রথমে আমরা কোনদিন ফোন কিংবা ট্যাবের খোজ করি নি কিংবা টিভিও চালাই নি। আমাদের কারো রাত জাগার অভ্যাস ছিল না। সন্ধ্যা হলেই আমরা হ্যারিক্যান কিংবা চার্জারলাইট নিয়ে পড়তে বসতাম। আমাদের সময়ে কোন দিন সন্ধ্যার পরে বিদ্যুৎ থাকত না। এমন কি শীতকালেও না। মাগরিবের আযানের সাথে সাথে বিদ্যুৎ চলে যাওয়া ছিল আমাদের ঐতিহ্যের অংশ। রাত আটটার সংবাদের পরে আমরা বিটিভির সামনে বসতাম। এটাই ছিল আমাদের এন্টারটেইনমেন্টের মূল উৎস। টেলিভিশন। আরও ভাল করে বললে বিটিভি। সংবাদের পরে প্রতিদিন কোনো না কোনো নাটক হত প্রতিদিন। সপ্তাহে দুই দিন সম্ভব প্যাকেজ নাটক হত বাকি দিনগুলো হল ধারাবাহিক নাটক। শুক্রবারে বিশেষ কোন অনুষ্ঠান। এছাড়া বাংলা ভাষার ডাবকৃত বিদেশী সিরিজ হত সপ্তাহে দুই তিন দিন। আমাদের ছোটদের বিকেল একটু আগে কার্টুন দেখানো হত প্রায় প্রতিদিনই। এই কার্টুন দেখেই আমরা খেলতে যেতাম মাঠে। কেউ কেউ আরও আগেই মাঠে গিয়ে হাজির হত।
আমাদের জীবনের আরেকটা বিনোদন ছিল বাংলদেশ রেডিও। সবার বাসাতে টিভি না থাকলেও একটা রেডিও থাকতো ঠিকই। সেখানে সবার অন্যতম পছন্দের অনুষ্টান ছিল অনুরোধের গানের অনুষ্ঠান। তখন এফ এম রেডিও ছিল না। আমরা কেবল বাংলাদেশ বেতারই শুনতাম। আমাদের মত যাদের বাসা সীমান্তবর্তী অঞ্চলে তারা ভারতীয় অনুষ্ঠান, গানও শুনতে পেতাম।
আমাদের বন্ধুদের সাথে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম ছিল এই খেলার মাঠ এবং স্কুল। এখানে আমাদের যাবতীয় আড্ডা হত। কোনো বন্ধুর সাথে দেখা করতে হলে আমরা সরাসরি তার বাসায় গিয়ে হাজির হতাম। আমরা জানতামও না সে তখন বাসায় থাকবে কিনা ! এখন যেমন আমরা না বলে কোন বন্ধুর বাসায় গিয়ে হাজির হওয়ার কথা ভাবতেও পারি না তখন এই ব্যাপারটাই ছিল স্বাভাবিক। এক সাথে বনে বাদারে ঘুরে বেড়ানো, মাঠে খেলা, কিংবা পুকুর নদীতে সাঁতার কাঁটা ছিল আমাদের শৈশবের পাসটাইম। ভিডিও গেম বলতে আমরা বুঝতাম মোড়ের দোকানের ৫ টাকা দিয়ে খেলা মোস্তফা ফাইটিং গেম। তবে এই খেলাকে আমরা ভাল চোখে দেখতাম না। ভাল ছেলেরা ঐখানে গিয়ে খেলে না। তবে আমাদের হাতে আরেকটা ভিডিও গেমের খেলনা ছিল। অল্প কয়েকটা সুইচ থাকত সেখানে, ব্যাটারি চালিত এই খেলনা আমাদের কাছে ভিডিও গেম ছিল।
আমাদের কাছে কোন ইন্টারনেট ছিল না। দুনিয়ার কোথায় কী ঘটছে সেটা জানার খুব একটা উপায় ছিল না। যাদের বাসায় পেপার রাখা হত সেই পেপার থেকে যা যেত তাই সই। আর বিটিভিতে যা দেখানো হয় সেটাই। এর বাইরে খুব বেশি কিছু জানার কোন উপায় ছিল না বেশির ভাগ মানুষেরই। একটা সময়ে এসে ডিস সংযোগ একটু সহজলভ্য হল। তখন বাসায় ডিসের সংযোগ এসে হাজির হল। তখন আমরা বহিরবিশ্বের খবরাখবর জানতে পারতাম। যদিও আমাদের সেই সময়ে আগ্রহ ছিল কেবল মুভির স্পোর্টসের দিকেই।
আমি যখন হাইস্কুলে উঠলাম তখন ভিসিডি প্লেয়ার নামের এক সস্তা ভিডিও দেখার যন্ত্র এসে হাজির হল। যদিও ভিসিআর, ভিসিডি/ডিভিডি প্লেয়ার আগেও ছিল কিন্তু তখন এই জিনিসের দাম ছিল অনেক অনেক বেশি। উচ্চবিত্ত ছাড়া আর কেউ এই যন্ত্রগুলো কেউ কিনতে পারত না। তবে ঐ সম্যে এই যন্ত্রের দাম একেবারে কমে যায়। তিন চার হাজার টাকায় পাওয়া যেত এসব। তখন সবার বাড়িবাড়ি এই জিনিস এসে হাজির হল। আমরা সেই সময়ে আসল মুভি দেখার স্বাদ পেলাম।
আমরা যখন কলেজে উঠেছি তখন মোবাইল ফোন মানুষের হাতে হাতে আসা শুরু করেছে। সেই সময়েও ফোন শুধু মাত্র অন্যের সাথে যোগাযোগের মাধ্যমই ছিল। আমরা আমাদের কলেজের বন্ধুদের সাথে ফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ করতাম। ফোনে কথা হত কম তবে মেসেজিং হত বেশি। কল রেট তখন ছিল সাত টাকা । এক মিনিট কথা বললেই সাত টাকা শেষ। আর তখন সাত টাকার দামও ছিল। তাই মেসেজ বান্ডেল কেনা যেত। তবে সেই সময়ে মোবাইল কোম্পানিগুলো নানান অফার দিত। গ্রামীনফোনের ডিজুস নামের একটা সীম ছিল। সেই সীমে প্রথম মিনিট কথা বলার পরেই পরের মিনিট থেকে ফ্রি ছিল। যাদের ভালোবাসার মানুষ ছিল তারা এই প্যাকেজে কথা বলতো খুব। সিটিসেলও বেশ সাশ্রয়ী ছিল।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ওঠার পরে আমরা ঢুকলাম ইন্টারনেটের যুগে। তখনো যদিও মোবাইল ইন্টারনেট এতোটা ফ্রেন্ডলি ছিল না। আমরা ঘন্টা ইন্টারনেট চালানো শিখেছি মূলত সাইবার ক্যাফে থেকে। এই জিনিসটা এখন একেবারেই নেই। অথচ সেই সময়ে একটা এলাকাতে চার পাঁচটা করে সাইবার ক্যাফে থাকত। ঘন্টা হিসাবে আমরা কম্পিউটারের সামনে বসে থাকতাম।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পরে আমরা স্মার্টফোনের যুগে প্রবেশ করলাম যদিও তখনও সবার হাতে হাতে স্মার্টফোন এসে পৌছাই নি। ছোটদের হাতে তো প্রশ্নই আসে না। তখন বাড়ির কর্তার হাতে কেবল থাকত এই স্মার্টফোন। সে যখন অফিস থেকে বাসায় ফিরতো তখন সেই ফোন তার ছেলে মেয়েরা চালানোর সুযোগ পেত।
আমাদের জেনারেশন থেকে প্রযুক্তি পারদর্শীতা শুরু হয়েছে। আমাদের আগের জেনারেশন বলতে গেলে একেবারে প্রযুক্তি গর্ভব ছিল, এখনও অনেকেই আছে। আমাদের সামনে প্রতিটা প্রযুক্তি এসে হাজির হয়েছে, ছড়িয়ে পড়েছে আমরা সেগুলো নিজে নিজে হাতে কলমে শিখেছি।
আমাদের জেনারেশনটা সব কিছুর একেবারে সঠিক সময়ে পেয়েছি। যখন যে জিনিসটা আমাদের দরকার ছিল তখন যেন সেটাই এসে হাজির হয়েছে। আমাদের শৈশব কৈশোর ছিল একেবারে প্রাকৃতিক। আমরা মাঠে ঘাটে প্রকৃতির মাঝে আমাদের পার করেছি। স্কুল কলেজে থাকতেই আমরা প্রযুক্তির ছোঁয়া পেয়েছি তবে এমন ভাবেও নয় যে আমাদের পুরো জীবন প্রযুক্তি নির্ভয় হয়ে যায়। যেটা এখনকার স্কুল কলেজের বাচ্চাদের দেখা যায়। স্মার্টফোন আর পিসির বাইরেও যে একটা জগত আছে এটা অনেকেই যেন জানে না। তারপর যখন আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে উঠেছি তখন পরিপূর্ণভাবে এই ডিজিটাল জগতে প্রবেশ করেছি। কিন্তু সেই প্রবেশেরো একটা গন্ডি ছিল আমাদের কাছে। তখনও আমরা অনলাইনের মানুষ থেকে বাস্তবের মানুষগুলোকেই বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। আমরা ঘুরতে গিয়েছি রেস্টুরেন্টে খেতে গিয়েছি তারপর কোন এক সময়ে মনে হয়েছে যে এক সাথে ছবি তোলা দরকার কিন্তু এখন মানুষ ঘুরতে যায় যাতে করে ফেসবুক ইনস্টাগ্রামে ভাল ছবি দিতে পারে।
আপনি আমাদের জেনারেশনে জন্মালে একেবারে ছোট থেকে এই পর্যন্ত সময়টা একবার কল্পনা করে দেখুন। তারপর আমাদের আগের জেনারেশন কিংবা আমাদের পরের জেনারেশনের সাথে তুলনা করে দেখেন। দেখবেন যে আমাদের আগের এবং পরের জেনারেশন অনেক কিছু মিস করেছে কিন্তু আমরা পেয়েছি সব কিছুই।
pic source
২| ২৯ শে জুলাই, ২০২৫ বিকাল ৩:২৪
সৈয়দ মশিউর রহমান বলেছেন: সেই সময়ের আলাদা একটা স্বাদ ছিল এখন এর ছিটে ফোটাও নেই।
৩| ৩০ শে জুলাই, ২০২৫ রাত ১২:৪৩
গোবিন্দলগোবেচারা বলেছেন: প্রতি মিনিট ৭ টাকা?
এটাও সম্ভব?
এখনকার চেয়ে দশ গুনেরও বেশি।
মিনিট কার্ড জাতীয় কিছু ছিল না?
©somewhere in net ltd.
১|
২৯ শে জুলাই, ২০২৫ বিকাল ৩:০২
সৈয়দ কুতুব বলেছেন: আপনি ১৯৮৮-১৯৯২ সালের মাঝে জনমে ছিলেন ।
। প্রিয় ব্যান্ড ও রক সংগীত ?