নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

www.oputanvir.com

অপু তানভীর

আমার চোখে ঠোঁটে মুখে তুমি লেগে আছো

অপু তানভীর › বিস্তারিত পোস্টঃ

তার সাথে হয়তো শেষ দেখা হয়ে গেছে ....

২৬ শে আগস্ট, ২০২৫ দুপুর ১:১০



আমি যে হাউজিংয়ে থাকি, সেখানে আছি ২০১০ সাল থেকে। তবে একই বাড়িতে নয়, তিনবার বাসা বদলানো হয়েছে। প্রথম বাড়িতে ছিলাম ২০১৬ সাল পর্যন্ত। এখন আছি দুই গলি পরে। বাসা বদল করলেও সেই আগের বাড়ির দারোয়ানের সঙ্গে নিয়মিতই দেখা হতো। সেই গলির পথ দিয়ে যাওয়া-আসার সময় দেখা হলেই কুশল বিনিময় হতো। যখন সেই বাড়িতে ছিলাম, তখনই দারোয়ান বেশ বয়স্ক ছিল। এই কয়েক বছরে তার বৃদ্ধ হওয়াটা যেন আরও একটু বেড়ে গেছে। আমি আসলে চোখের সামনেই তাকে বৃদ্ধ থেকে আরও বৃদ্ধ হতে দেখছিলাম। তারপর একদিন আর তাকে দেখলাম না। অনেক দিন ধরে সেই বৃদ্ধ দারোয়ানকে আমি দেখতে পেলাম না। ওই রাস্তায় যাওয়ার সময় তাকে আর চোখে পড়ল না। গত রমজানে সন্ধ্যার আগে ইফতার কিনতে যাচ্ছিলাম সেই বাড়ির সামনে দিয়ে। তখন দেখতে পেলাম বাড়ির সামনে টুল পেতে একজন বসে আছে। আমার কেন জানি তাকে বাড়ির দারোয়ানই মনে হলো। আমি একটু কৌতূহলী হয়ে তার সামনে গিয়ে বৃদ্ধের কথা জানতে চাইলাম। মনে মনে একটা প্রস্তুতি ছিল এই কথা শোনার জন্য যে আগের বৃদ্ধ দারোয়ান মারা গেছে। তবে নতুন দারোয়ান জানাল যে বৃদ্ধ মারা যাননি। তবে তার শরীর খারাপ। সে এখন গ্রামে থাকে। এই বাড়ির নতুন দারোয়ান সে।
আমি আর কিছু জানতে না চেয়ে নিজের পথে পা বাড়ালাম। তবে মনের ভেতরে বৃদ্ধ দারোয়ানের চেহারা ভাসছিল। মুখ ভর্তি ফর্সা দাড়ি ছিল। মুখে হাসি লেগেই থাকত। আমাকে দেখে সব সময় হাসত। আমি জানি যে এই বৃদ্ধের সঙ্গে আমার শেষ দেখা হয়ে গেছে। তার সঙ্গে আর কোনো দিনই আমার দেখা হবে না। দীর্ঘ বারো-তেরো বছর ধরে এই মানুষটাকে আমি নিয়মিত দেখে আসছিলাম। শেষ যেদিন তাকে দেখেছিলাম, সেদিন আমি জানতাম না যে সেদিনই আমার তার সঙ্গে শেষ দেখা!

২. আমি ঢাকায় এখন নিয়মিত সাইকেল চালাই। কাজে যাওয়ার জন্যও এই সাইকেলই আমি ব্যবহার করি। এছাড়া সময়-সুযোগ পেলেই আমি এদিক-ওদিক সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়ি। বিশেষ করে ছুটির দিনে আমার উত্তরা যাওয়ার একটা শখ জাগে। মেট্রোর নিচ দিয়ে দিয়ে আমি একেবারে মেট্রোর শেষ মাথা পর্যন্ত গিয়ে হাজির হই। এছাড়া আরও একটা কারণ হচ্ছে, এখানে আমার পরিচিত একজন থাকে। ব্লগে আগে ডিমুন নামে একজন ছিল। আমরা মোটামুটি একসঙ্গেই ব্লগে এসেছিলাম, আমাদের বয়সও কাছাকাছি। ব্লগে যে অল্প কয়েকজন মানুষের সঙ্গে আমার নিয়মিত যোগাযোগ হয়, তার ভেতরে এই ডিমুন ভাই একজন।
আমি যাওয়ার আগে কখনোই তাকে ফোন করতাম না। একেবারে তার হাউজিংয়ের সামনে গিয়ে তাকে বলতাম যে এসেছি। সে নিচে নেমে আসত। কোনো দিন আমাকে জোর করে তার বাসায় নিয়ে যেত, দুপুরের খাবার খেয়ে, তার বাসায় থাকা বেড়ালগুলো আদর করে, তারপর আসতাম বিকেলবেলা। আবার কোনো দিন শুধু বাইরে থেকেই দেখা করে আসতাম। তার সঙ্গে এদিক-ওদিক ঘুরতেও গিয়েছি। ঢাকায় বর্তমানে যে অল্প কয়েকজন বন্ধু মানুষ ছিল, তার ভেতরে ডিমুন ভাই একজন। এই মাসের ১৯ তারিখে সে এমবিএ করার জন্য ইংল্যান্ড চলে গেল। তার যাওয়ার আগে এই মাসেই আমি দুইবার উত্তরা গিয়েছিলাম। তবে শেষ আরেকবার যাওয়ার ইচ্ছে ছিল যে তার ফ্লাইটের আগে আরেকবার যাব। তবে সময়-সুযোগের কারণে আর যাওয়া হলো না। আজ যাব, কাল যাব করেই একেবারে শেষ দিন মনে হলো আজকে যাব, কিন্তু সেদিনও যাওয়া হলো না। মনের ভেতরে একটা আফসোস কেন জানি রয়ে গেল। বারবার মনে হলো যে যদি যাওয়া হতো, ভালো লাগত। এখন প্রায়ই মনে হয় যে তার সঙ্গে হয়তো সরাসরি আর দেখা হবে না। ইংল্যান্ড বা ইউরোপের কোনো দেশে তার সেটেলড হওয়ার একটা সম্ভাবনা রয়েছে। সেই হিসাবে দেশে আর ফিরবে না। এই সম্ভাবনাটা ফেলে দেওয়ার মতো নয়।

৩. আমি যখন ঢাকায় প্রথমবার এসেছিলাম, তখন যে বাসায় উঠেছিলাম, সেখানে আমার সঙ্গে একজন ছেলে থাকত। আমাদের এলাকারই ছেলে। আমার সমান বয়স। তবে সে পড়ত পলিটেকনিকে। খুব চমৎকার ক্রিকেট খেলত। ক্লাবের ফার্স্ট ক্লাস/ডিভিশন ক্রিকেট লিগ খেলত। একসঙ্গে থাকার দরুণ আমাদের মধ্যে বেশ চমৎকার সম্পর্ক সৃষ্টি হয়। আমি তার মেসবাড়ি ছেড়ে চলে আসার পরেও মাঝে মাঝে আমাদের দেখা হতো। এছাড়া ঈদে বাসায় গেলে তো দেখা হতোই। আমাদের নিজেদের বাসায় যাতায়াতই ছিল। একসময় খেলাধুলা ছেড়ে সে এলাকায় ফিরে আসে। আমার তখনো পড়াশোনা শেষ হয়নি। ফিরে গিয়ে সে বাবার ব্যবসার হাল ধরল। বিয়েও করে ফেলল। তার বিয়ের দাওয়াত আমার কাছেও এসেছিল। তারপর একদিন বাসায় গিয়ে শুনি যে সে মারা গেছে! এতো কম বয়সে হার্টের কী এক সমস্যার কারণে আকস্মিক মৃত্যু হয়েছে তার! তার স্ত্রী তখন সন্তানসম্ভবা। আমাকে সে এই কথা জানিয়েছিল ফোনে, গ্রামে এসে যেন আমি বাড়িতে যাই, সেটাও বলেছিল। আমার আর যাওয়া হলো না তার বাড়িতে, তার সঙ্গে আর দেখাও হলো না। আমি যদি জানতাম যে এই ফোনের কয়েক দিন পরেই সে মারা যাবে, তাহলে কী করতাম? তখনই গিয়ে একবার দেখা করে আসতাম? শেষ কিছু কথা বলে আসতাম?

৪. মনের ভেতরে একটা কথা প্রায়ই খচখচানি জাগায়। এখন এমন অনেক পরিচিত মানুষই আমার রয়েছে, যার সঙ্গে আমার শেষ দেখা হয়ে গেছে। আমি কিংবা সে, দুজনের কেউই জানি না, কিন্তু আমাদের মধ্যে আর দেখা হবে না। হয় আমি মারা যাব, নয়তো সে! যদি এমন হতো যে আমরা টের পেতাম যে কার সঙ্গে আমাদের শেষ দেখা হলো, তাহলে আমরা তাকে কী বলতাম?


ছবি সুত্র লেখাটির বানান শুদ্ধ করতে এআই এর সাহায্য নেওয়া হয়েছে

মন্তব্য ২ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে আগস্ট, ২০২৫ দুপুর ১:৫৫

মহাজাগতিক চিন্তা বলেছেন: ঝরঝরে লেখা।

২| ২৬ শে আগস্ট, ২০২৫ দুপুর ২:৪১

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: ভালো থেকো ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.