| নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ক্লাস সিক্সে যখন উঠলাম, তখন একা একা শহরে যাওয়ার মতো সাহস হয়ে উঠল। স্কুলের কাছেই রেলস্টেশন ছিল। সেই স্টেশনে একটা ছোট বইয়ের দোকান ছিল। সেখান থেকেই প্রতি মাসে রহস্য পত্রিকা কিনে পড়তাম। সেখানে মাঝে মাঝে পুরানো রহস্য পত্রিকার চালান আসত। সেগুলোও কিনে পড়তে পারতাম। সেই পত্রিকার ভেতরেই তিন গোয়েন্দা, মাসুদ রানা সহ নানান রকম কিশোর ক্লাসিক বইয়ের বিজ্ঞাপন থাকত। সেগুলো দেখতাম আর ভাবতাম যে এই বইগুলো কোথায় পাওয়া যায়! তখন আমাদের জেলার লাইব্রেরিগুলোতে বই পাওয়া যেত না। সেখানে কাসেম বিন আবু বকরের বই পাওয়া যেত আর পাওয়া যেত ভারতীয় লেখকদের বই। বাংলাদেশি লেখকদের মধ্যে হুমায়ূন বা ইমদাদুল হক মিলনের বই। আমার সেসবের দিকে তখন কোনো আগ্রহ ছিল না। আর পকেটে টাকাও ছিল না খুব একটা।
তারপর যখন ক্লাস সেভেনে উঠলাম, তখন হঠাৎ করেই আবিষ্কার করলাম যে আমাদের জেলায় একটা পাবলিক লাইব্রেরি আছে। ভর্তি হতে একশো টাকা লাগবে আর মাসিক দশ টাকা বেতন। সেই সময়ে একশো টাকার দাম ছিল বেশ। তবুও মাকে পটিয়ে ভর্তি হয়ে গেলাম। তারপরই যেন আমি হাতে পেলাম স্বর্গ। প্রথম কয়েকদিন আমি নিজেই বই নেওয়ার চেষ্টা করতাম। তবে সেখানে বুকশেলফ থেকে পছন্দ করে বই নেওয়ার উপায় ছিল না। বেশ কয়েকটা বড় বড় খাতা ছিল। সেখানে বইয়ের নাম আর লেখকের নাম থাকত। সেই নাম দেখে বললে লাইব্রেরিয়ান বই এনে দিত। প্রথম কয়েকদিন খুব একটা সুবিধা করতে পারলাম না। কারণ তখন কোনো লেখককে চিনতাম না, কার বই পড়ব তাও জানতাম না। তবে একদিন লাইব্রেরিয়ান নিজেই আমাকে বই পছন্দ করে দিলেন! সেটাই ছিল তিন গোয়েন্দার বই। সেই থেকে শুরু। আমি লাইব্রেরিতে গিয়ে হাজির হতাম আর লাইব্রেরিয়ান আমাকে একটা একটা তিন গোয়েন্দার বই এনে দিত। আমি সেটা বাসায় নিয়ে যেতাম। একদিনের মধ্যে পড়ে শেষ করে পরদিন আবার হাজির। মাসে কম করে হলেও ২০/২৫টার মতো বই পড়ে শেষ করে ফেলতাম।
কিশোর পাশা, রবিন মিলফোর্ড আর মুসা আমান। সঙ্গে থাকত জর্জিনা পার্কার। আরও কত চরিত্র। এখন অবশ্য সেসব কাহিনী ঠিক মনেও নেই। রকিবীচের কথা মনে আছে। লস অ্যাঞ্জেলেসের কাছে সান্তা মনিকা পর্বতমালার পাশে অবস্থিত সেই রকিবিচ! তিন গোয়েন্দার হেডকোয়ার্টার। বইয়ের জগতে প্রবেশ আমার তিন গোয়েন্দা দিয়ে, রকিব হাসানের হাত ধরেই। তিন গোয়েন্দার পরে তার লেখা আর নানান ধরনের বইও আমি পড়ে ফেলতাম, যা পেতাম। একসময়ে তিন গোয়েন্দা লেখা শুরু করেন অন্য একজন লেখক। সেই বইয়ের কিছু পড়েছি, তবে রকিব হাসানের মতো স্বাদ সেখানে ছিল না। তাই সেদিকে আগ্রহ আস্তে আস্তে অন্য দিকে চলে যায়।
আজকে রকিব হাসান মারা গেলেন। আমার মতো যারা বাংলাদেশি কিশোর ক্লাসিকের ভক্ত ছিল, তাদের সবার প্রথম পছন্দই ছিল তিন গোয়েন্দার বই। আমাদের কিশোর বেলাটা চমৎকার কেটেছে রকিব হাসানের কারণে। তাকে আমি সরাসরি কোনোদিন দেখিনি, দেখার ইচ্ছেও অবশ্য হয়নি। তাকে চিনি তার লেখা দিয়ে, তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা হিসেবে। কিশোর, রবিন আর মুসা! বইয়ের প্রতি ভালোবাসা যতদিন থাকবে, রকিব হাসানের কথা ততদিন মনে থাকবে। মনে থাকবে তার লেখা বই নিয়ে কত রাত নির্ঘুম কেটেছে। টানটান উত্তেজনার সেই বইগুলো শেষ করে কোনোভাবেই ঘুমানো যেত না।
প্রিয় লেখক, যেখানেই থাকুন, ভালো থাকুন। আপনাকে এদেশের পাঠকেরা কোনোদিন ভুলবে না।
ছবিঃ কবির হোসেন
১৭ ই অক্টোবর, ২০২৫ রাত ১২:২৭
অপু তানভীর বলেছেন: সেই সময়ে রকিব হাসানের লেখার খোজ যদি আমি পেতাম তাহলে আজকে হয়তো আমার পড়ার অভ্যাস গড়ে উঠতো না। তিন গোয়েন্দার বইগুলো আমার পড়তে খুব বেশি সময় লাগতো না। এক বসা কি দুই বসাতেই পড়ে শেষ করে ফেলতে পারতাম। কাহিনীগুলোতে বেশ গতি ছিল তাই আগ্রহ থাকতো প্রচুর। সেই যে পড়ার অভ্যাস গড়ে উঠল আজও গেল না।
আমরা যারা ছোট বেলাতে তার বই পড়ে বড় হয়েছি তারা আসলে এই অনুভূতিটা ধরতে পারবে। যারা পড়ে নি তারা আসলে জানেও না জীবনে কী মিস করেছে তারা!
২|
১৫ ই অক্টোবর, ২০২৫ রাত ১১:২৯
সৈয়দ কুতুব বলেছেন: চমৎকার এই লেখকের মৃত্যুতে যেন একটা যুগের পরিসমাপ্তি ঘটল। তাঁর প্রতি রইল গভীর শোক ও শ্রদ্ধা।
১৭ ই অক্টোবর, ২০২৫ রাত ১২:২৮
অপু তানভীর বলেছেন: ঠিক তাই। যারা তার বই পড়ে বড় হয়েছে তারা এই ব্যাপারটা ভাল করে উপলব্ধি করতে পারবে।
৩|
১৬ ই অক্টোবর, ২০২৫ দুপুর ২:৩৪
জুল ভার্ন বলেছেন: তিনি শুধু লেখকই নন, আমার শৈশবের হিরো!
১৭ ই অক্টোবর, ২০২৫ রাত ১২:২৯
অপু তানভীর বলেছেন: সত্যিই তাই । তিনি তাই ছিলেন আমাদের কাছে।
৪|
১৭ ই অক্টোবর, ২০২৫ ভোর ৪:০৩
রবিন_২০২০ বলেছেন: আমার শৈশব / কৈশোর ও জড়িয়ে আছে এই শক্তিশালী লেখকের লেখার সাথে। শুধু তিন গোয়েন্দাই নয়, সেবা থেকে প্রকাশিত তার অন্যান্য বইগুলোও অসাধারণ লাগতো।
তাঁর জন্য রইল গভীর শোক ও শ্রদ্ধা।
২০ শে অক্টোবর, ২০২৫ সকাল ১১:০৮
অপু তানভীর বলেছেন: সেই সময়ে লাইব্রেরিতে থাকা তার লেখা অন্য বইগুলো আমার পড়া আছে। সেই ক্লাস সেভেন আর এইটে মোটামুটি আমি কেবল রকিব হাসানই পড়েছি শুধু। প্রতিটা লেখাই যেন মন ছুঁয়ে যাওয়ার মত। একটু বড় হয়ে যাওয়ার পরে তার লেখা পড়া কমে যায় তখন অন্যান্য বইও যুক্ত হয়। মাসুদ রানা তারপর জাফর ইকবাল হুমায়ূন আহমেদ।
©somewhere in net ltd.
১|
১৫ ই অক্টোবর, ২০২৫ রাত ১১:২৭
শ্রাবণধারা বলেছেন: রকিব হাসানের মৃত্যুতে তাঁকে নিয়ে লেখার জন্য অনেক ধন্যবাদ। কিছুদিন আগে খবর পেয়েছিলাম, তিনি বেশ অসুস্থ। এভাবে চলে যাবেন, ভাবিনি।
শুধু তিন গোয়েন্দা নয়, তাঁর যেকোনো বইয়ে তাঁর নাম দেখলেই কিনতাম। আমাদের শৈশব ও কৈশোরকে তিনি মাতিয়ে রেখেছিলেন কত দূরের সেই সান ফ্রান্সিসকোর এক বাড়ির গ্যারেজের তিন কিশোর গোয়েন্দার গল্প দিয়ে। কী তাদের বুদ্ধি, কী তাদের সাহস! রোলস-রয়েস গাড়ির নাম প্রথম শুনেছিলাম সেই বইয়ে। ভূত থেকে ভূতে - কী দারুণ সব আইডিয়া! থানার হেড পুলিশ অফিসারও তাদের স্নেহ করতো, আর তাদের বুদ্ধির প্রশংসা করতো।
চমৎকার এই লেখকের মৃত্যুতে যেন একটা যুগের পরিসমাপ্তি ঘটল। তাঁর প্রতি রইল গভীর শোক ও শ্রদ্ধা।