| নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এই শুক্রবারেই উঠেছিলাম বাংলাদেশের এক সময়ের সর্বোচ্চ পর্বত কেওক্রাডংয়ে। যদিও এটাকে ঠিক 'পাহাড় চড়া' বলা চলে না। এটা অনেকটা 'গাড়িভ্রমণে পাহাড়ের চূড়ায় ওঠা'র মতো। আমি যখন প্রথমবারের মতো এই পাহাড়ে উঠেছিলাম, তখন কোনো দিন ভাবতেও পারিনি যে এই পাহাড়ে একদিন মানুষ গাড়ি নিয়ে উঠবে। এবং সেটাই সত্যি হয়েছে। এই মাসে কেওক্রাডং খুলে দেওয়া হয়েছে। এর আগে তিন বছরের মতো এই পাহাড়ে ওঠা বন্ধ ছিল। আর এখন এখানে মানুষ উঠছে গাড়ি নিয়েই।
আমার মনে আছে, প্রথমবার যখন এই পাহাড়ে গিয়েছিলাম, সেবার তো গাড়িতে করে এই পাহাড়ে তো দূরের কথা, রুমা বাজার পর্যন্ত যাওয়া যেত না। আমার মনে আছে, বান্দরবান নেমে আমি একটা লোকাল বাসে উঠেছিলাম। যদিও এখন আর সেই জায়গাগুলোর নাম-টাম কিছুই মনে নেই। বাসটা যে কোথায় থেমেছিল সেটাও মনে নেই। তবে সেটা ছিল একটা নদীর ঘাট। বাস থেকে নেমে আমরা একটা ট্রলারে উঠলাম। বেশ কিছুটা সময় চলার পরে আরেক জায়গাতে এলাম। এরপর সেখান থেকে উঠেছিলাম 'চাঁদের গাড়ি'তে। গাড়িটা আমাদের রুমা বাজারে নিয়ে গেল। সেখান থেকে আর্মি আর পুলিশ এন্ট্রি (এন্ট্রি/প্রবেশ) করে আমার ট্রেকিং শুরু হয়েছিল। তখন বগালেক পর্যন্ত গাড়ি নিয়ে যাওয়া যেত না। যেতে হতো হেঁটে। সেদিন বগা লেক যেতে যেতে আমাদের প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছিল। রাতটা বগা লেক পাড়ায় থেকে পরদিন সকালে আমি কেওক্রাডংয়ের উদ্দেশে রওয়ানা দিয়েছিলাম।
সেই সময়ে কেওক্রাডংয়ের চূড়াতে কিছু ছিল না। একটা দোকান মতো ছিল কেবল। আর ছিল আর্মির ক্যাম্প। আর কিছু না। আমরা সেবার চূড়ায় কিছু সময় পার করে থাকতে গিয়েছিলাম পাশিং পাড়াতে।
এরপর যখন আবার কেওক্রাডংয়ে উঠলাম তখন বান্দরবান শহর থেকেই সরাসরি 'চাঁদের গাড়ি'তে একেবারে রুমা বাজার হয়ে বগা লেক পর্যন্ত গিয়ে হাজির হলাম। কিন্তু তারপরের পথটুকু, অর্থাৎ বগা থেকে কেওক্রাডং পর্যন্ত ট্রেকিং করেই যেতে হতো। ঘণ্টা চারেক মতো সময় লাগত তখন। এরপর আরও দুইবার একই ভাবে বগা থেকে ট্রেকিং করেই কেওক্রাডংয়ে উঠেছি। ততদিনে অবশ্য কেওক্রাডংয়ের চূড়াতে অনেক বদলে গেছে। নিরাপত্তার কারণে পাশিং পাড়া পর্যন্ত যাওয়া বন্ধ সেই ২০১৬ সাল থেকে। অবশ্য তাতে খুব একটা সমস্যা ছিল না। চূড়াতে থাকার জন্য বেশ কয়েকটা কটেজ তৈরি হয়েছিল। খাওয়ার ব্যবস্থাও ছিল ভালো। কটেজ পর্যন্তও ব্যাপারটা ঠিকই ছিল।
কিন্তু এখন কেওক্রাডংয়ের চূড়া একেবারে বদলে গেছে। ঠিক চূড়াতেই একটা তিনতলা বিল্ডিং হয়েছে। ব্যাপারটা আসলে হজম হওয়ার মতো না। যেহেতু এখন পাহাড়ে উঠতে চার ঘণ্টা ট্রেকিং করতে হচ্ছে না, তাই প্রচুর মানুষ যাচ্ছে পাহাড়ে। এতোটুকু পাহাড়ে এতো মানুষ যাওয়ার ফলে পাহাড় ভ্রমণের আসল সৌন্দর্যই নষ্ট হয়ে গেছে। আগে যারা একবার পাহাড়ে যেত, আবারও ঘুরে আরেকবার যাওয়ার ইচ্ছে জাগতো। আমি এবার নিয়ে ৫ বার কেবল এই চূড়াতে গেলাম। কিন্তু এখন কেওক্রাডংয়ের অবস্থা এমন হয়েছে যে একবার যে এখানে যাবে আর দ্বিতীয়বার যাবে না।
তবে কিছু জিনিস অবশ্য এখনও সেই আগের মতো রয়েছে। একটা হচ্ছে বগা লেক। আমি যখন প্রথমবার বগা লেকে গেলাম, সেবার এর সৌন্দর্য দেখে যেমন বিমোহিত হয়েছিলাম, এবারও সেই একই ভাবে বিমোহিত হলাম। একপাশে বসে অনেকটা সময় লেকের টলটলে পানির দিকে একভাবে তাকিয়েই রইলাম। এই দৃশ্য যেন কোনো ভাবেই পুরানো হবার নয়।
আর কেওক্রাডংয়ে আমার সবথেকে পছন্দের ব্যাপার ছিল এখান থেকে দেখা আকাশটা। এই চূড়া থেকে যতটা সুন্দর আকাশ দেখা যায়, বাংলাদেশের আর কোথা থেকে এতো সুন্দর আর পরিষ্কার ভাবে আকাশটা দেখা যায় না। এবার চূড়াতে প্রচুর মানুষ ছিল বটে, তবে রাতে খাওয়ার পরে মানুষজন কমতে শুরু করে। রাত এগারটার পর যখন জেনারেটর বন্ধ হয়ে গেল, তখন অনেকেই নিজেদের কটেজে গিয়ে ঘুম দিল। তখন চূড়াটা একটু ফাঁকা হলো। তখন একটু আরাম করে বসা গেল। তারপর সেই আকাশ আর আকাশের তারা! গত রাতের আকাশটা ছিল একেবারে পরিষ্কার। একটা পর্যন্ত সেখানেই বসে রইলাম। কোনো ক্যামেরায় এই সৌন্দর্য তুলে ধরা সম্ভব না। সকালে উঠে পড়লাম সূর্য ওঠার আগেই। এই চূড়া থেকে সূর্যোদয়ও চমৎকার ভাবে দেখা যায়!
শুধু মাত্র এই আকাশ দেখার জন্য এখানে যাওয়া যায়! আর কোনো কারণ নেই এখন আর!
এখন কিছু ছবি যোগ করা যাক।
যাওয়ার রাস্তা
বগালেকের ছবি
আরেকটা বগালেক এর ছবি
কেউক্রাডং থেকে চুড়া থেকে একটা কটেজ
চুড়া থেকে ছবি আরেকটা
চূড়া থেকে সূর্য ওঠার একেবারে আগের মূহুর্ত
আরেকটা
রাতের আকাশের ছবি মোবাইল ক্যামেরায় ভাল করে ধরা পরে না তবুও একটা দিলাম
শেষের ছবিটা আমার
পাহাড়ের অনেক কিছুই আর আগের মত নেই। অনেক কিছু বদলে গেছে। সামনে হয়তো আরও অনেক কিছু বদলে যাবে।
২৭ শে অক্টোবর, ২০২৫ রাত ১০:৫২
অপু তানভীর বলেছেন: সত্যিই তাই। পৃথিবী অনেক কিছুই বদলে গেছে।
২|
২৭ শে অক্টোবর, ২০২৫ রাত ১১:০৭
হুমায়রা হারুন বলেছেন: অপূর্ব ছবিগুলো।
২৭ শে অক্টোবর, ২০২৫ রাত ১১:১১
অপু তানভীর বলেছেন: ছবির থেকে বাস্তবে দেখাটা আরও বেশি অপূর্ব!
৩|
২৮ শে অক্টোবর, ২০২৫ সকাল ৯:৫০
শ্রাবণধারা বলেছেন: কেওক্রাডং কখনো যাইনি। বগালেক দেখা হয়নি। একবার নীলগিরি গিয়েছিলাম। যাবার পথে রুমার দিকে নির্দেশ করা একটা সাইনবোর্ড দেখেছিলাম। মনে হয়েছিল, ঐ পথ দিয়েই কেওক্রাডং যেতে হয়, কত সে দূরের পথ!
বগালেক দেখে আপনার বিমোহিত হবার বর্ণনাটা ভালো লেগেছে। ছবিগুলোতে বেশ একটা নিটোল পারিপাট্য আছে। যেন আপনাতেই আপনি মগ্ন হয়ে নিজের দিকে তাকিয়ে আছে বগালেক!
৪|
২৮ শে অক্টোবর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৬
কলাবাগান১ বলেছেন: ফাগুনে আগুন লেগেছে বনে
৫|
২৮ শে অক্টোবর, ২০২৫ দুপুর ২:০৮
মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন:
- প্রথমবার গিয়েছিলাম প্রায় ২২ বছর আগে। বান্দরবান থেকে চান্দের গাড়িতে রুমা খেয়া ঘাট। সেখান থেকে ট্রলারে রুমা বাজার। রুমা বাজার থেকে পায়ে হেঁটে রুমা খাল ধরে বগামুখ পাড়া হয়ে বগালেক। রাতে বগা লেকে লারামের বাড়িতে থেকে পরদিন সকালে আবার হাঁটা শুরু কেওক্রাডং এর উদ্দেশ্যে। পথে দার্জিলিং পাড়ার পরে আর কোনো বসতি বা দোকান ছিলো না। চূড়ায় উঠতে হতো বাঁশ ঝাড়ের ভিতর দিয়ে।
- শেষবার গিয়েছি ২০২২এ। তখনও বগালেক কেথে রাস্তার কাজ চলমান ছিলো। তবে কাচা রাস্তাতেই চান্দের গাড়ি উঠে যেতো। চূড়া তখন হোটেলের কাজ চলছে। নিচেই অনেক লোকের বসতি আর আর্মি ক্যাম্প।
- বছর কয়েক পরে ওকে আবার দেখতে যাবো। আমরা সমতলের মানুষেরা ওর কতটা ক্ষতি করেছি সেটা দেখতে।
©somewhere in net ltd.
১|
২৭ শে অক্টোবর, ২০২৫ রাত ১০:৫১
শায়মা বলেছেন: পৃথিবী বদলে গেছে
যা দেখি নতুন লাগে ......