নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ঝালমুড়িওয়ালা

অরিঅন জনি

অরিঅন জনি › বিস্তারিত পোস্টঃ

" একজন রিক্সাওয়ালার স্বপ্ন "

১৯ শে এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৩:৫৩

অনেকদিন আগের কথা।
তখন কনকনে ঠাণ্ডা, বাড়ি যাচ্ছি –
গাড়িটা সকাল না হতেই পৌঁছে গেছি আমার গন্তব্যে।
আসেপাশে কোনো ভ্যান দেখতে পাচ্ছিনা। আমাদের ওখানে রিক্সা নেই। ভ্যানই আমাদের রিক্সা।
দূর থেকে কুয়াশা ভেদ করে কোত্থেকে একটা বুড়ো চাচা আসলো ভ্যান নিয়ে।


ভ্যানে উঠে চাচাকে জিজ্ঞেস করলাম -
কি চাঁচা এত্ত সকালে এই বুড়ো বয়সে বের হয়েছেন যে ?
- কি করবো বাপ, ছাওয়ালডার সামনে নাকি পরীক্ষা ।
মেলা টাহা লাগবি, তাই এত্ত সকালে বের হয়ছি দুডে পয়সা বেশি কামানোর জন্যে।

আপনার ছেলে কোথায় থাকে , কিসে পড়ে ?
- ছাওয়ালডা ঢাহার শহরে থায়ে । মেলা বড় কিলাসে লেহাপরা করে।
আর ২ ডা বছর গেলেই পাশ কইরা ভালো চাকরী করবে কইছে।
তহন কি আর আমার ভ্যান চালাইতে হবে ?

আপনার ছেলের সাথে কি কথা হয় ঠিকমত ?
- হ, গেল বার আইসা ১৫০০০ টাহা লইয়ে গেছে,
বড় এট্টা ফোন কিনছে ।

এতো টাকা দিলেন ফোন কেনার জন্যে !!
-কি করমু কও বাবা, পোলাডা কইলো দামি ফোন না হইলে নাকি পড়াশুনাই সমেস্যা হয় ।
আমার ঘরে এট্টা মাইয়া আছে , আর ও এট্টাই পোলা । তোমার চাচী কাম করে অন্যের বাড়ি ।
পোলাডার লেহাপড়া শেষ হোক-
চাকরী পাইলে সব কষ্ট দূর হয়ে যাইবো। যত কষ্টই হোক লেহাপড়াডা শেষ করন লাগবে ।


এসব বলতে বলতে চাচা অনেক কাসতেছিলো ।
বোঝা যাচ্ছিলো ঠান্ডায় বেশ কাশী হয়েছে ।
এমনিতে শরীরের এই অবস্তা তার ওপর ছেলের পরীক্ষার জন্যে কত কষ্টই না করে আমাদের মা-বাবা ।
অথচ কনকনে ঠন্ডা বা গরমকে উপেক্ষা করে আমাদের সব রকম চাহিদা পুরন করে যাচ্ছে ।
কত আশা বুকে নিয়ে নিজের ওষুধ না কিনে ছেলের জন্যে দামী ফোন কিনে দিচ্ছে ।
আর আমরা !!
আমরা শহরের বুকে জামার কলার উল্টা করে , চোখে কালা চসমা পরে গালফ্রেণ্ড নিয়ে রিক্সায় ঘুরি ,এখানে সেখানে আড্ডা দেই । আপন মনে সিগারেট টানি ।
অথচ ওইদিকে আমাদের বাবা-মা কতটা আশা নিয়ে কনকনে ঠাণ্ডা উপেক্ষা করে ভ্যানের প্যাটেল মারছে। মা বাড়ি বাড়ি কামলা খাটছে !!


আমি জানিনা ওই চাচার ছেলেটা আসলেই ঠিক মত পড়াশুনা করছিলো কিনা !!
আসলেই চাচার সপ্নের পথে এগোচ্ছিলো কিনা !!
তবে চাচা কিন্তু আস্তে আস্তে হলেও ভ্যানের প্যটেল চালাতে থাকলো ।
বাড়ীর গেটের সামনে এসে ভ্যান দাড়ালো।
সেদিন আমি চাচাকে কিছু টাকা বেশি দিয়েছিলাম ওষুধ কিনে খাওয়ার জন্যে ।
চাচা আমাকে দোয়া করেছিলেন।
আমি খুব অবাক হয়ে উপল্ভধি করেছিলাম চাচার মুখের সেই হাসি ।
সেই সপ্ন।


আমাদের সমাজে এমন চাচা অনেক আছেন।
যারা নিজের ছেলে মেয়েকে মানুষ করার জন্যে অনেক বেশি ত্যাগ স্বীকার করছে প্রতিনিয়ত।
অনুরোধ রইলো তাদের সাথে ভাড়া নিয়ে রেষারেষি করবেন না।
আপনার ১০ টাকা বেশি নিয়ে তারা অট্টালিকা বানাবে না।
আপনার মত ছেলেকে মানুষের মত মানুষ করার জন্যেই তাঁরা শীত,গরম উপেক্ষা করে এত কষ্ট করেন।
আমারাও হয়তো এমন বাবা মায়েই সন্তান -
কেউ যেনো এমন কিছু না করি যাতে আমাদের বাবা মায়ের আশা ভরসা শেষ হয়ে যায়।

লিখাটা পড়ার মধ্যেই যেন সীমাবদ্ধ না থাকি ।
নিজের জন্যে না হোক
অন্তত বাবা মায়ের জন্যে হলেও >
কিছু করি...

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.