নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ওসামা বিন

http://amrarasulersainik.blogspot.com/

ওসামা বিন › বিস্তারিত পোস্টঃ

ধর্মীয় কাজে বাধা দানের ভয়াবহ পরিণতি

২৯ শে এপ্রিল, ২০১৫ দুপুর ২:১৬


মুহাম্মদ মনজুর হোসেন খান
॥ দুই ॥
হারুন (আঃ)-এর নির্দেশ মতে সবার অলংকার গর্তে নিক্ষেপ করার সময় সামেরীও হাতের মুঠি বন্ধ করে সেখানে পৌঁছল। সে হারুন (আঃ)কে বলল, আমার মনোবাঞ্ছা পূর্ণ হৌক- এই মর্মে আপনি দোআ করলে আমি নিক্ষেপ করব অন্যথা করব না। হারুন তার কপটতা বুঝতে না পেরে সরল মনে দোআ করলেন। আসলে তার মুঠিতে ছিল জিব্রীলের ঘোড়ার পায়ের সেই অলৌকিক মাটি। ফলে উক্ত মাটির প্রতিক্রিয়ায় হোক কিংবা হারুনের দোআর ফলে হোক সামেরীর উক্ত মাটি নিক্ষেপের পরপরই গলিত অলংকারাদির অবয়বটি একটি গো-বৎসের রূপ ধারণ করে হাম্বা হাম্বা রব করতে শুরু করে। মুনাফিক সামেরী ও তার সঙ্গী-সাথীরা এতে উল্লসিত হয়ে বলে উঠল, এটাই হলো তোমাদের উপাস্য ও মূসার উপাস্য। যা সে পরে ভুলে গেছে’ (ত্বোয়াহা ২০/৮৮)।
অপরদিকে মূসা (আঃ)-এর তূর পাহাড়ে গমনকে সে অপব্যাখ্যা করে বলল, মূসা বিভ্রান্ত হয়ে আমাদের ছেড়ে কোথাও চলে গেছে। এখন তোমরা সবাই এ গো-বৎসের পূজা কর। কিছু লোক তার অনুসরণ করল। ফলে মূসা (আঃ)-এর পিছে পিছে তূর পাহাড়ে গমনের প্রক্রিয়া পথিমধ্যেই বানচাল হয়ে যায়। অতঃপর মূসা (আঃ) এসে সম্প্রদায়ের লোকদের কাছে সব কথা শুনলেন। হারুন (আঃ) তাঁর বক্তব্য পেশ করলেন। সামেরীও তার কপটতার কথা অকপটে স্বীকার করল। এরপর মূসা (আঃ) আল্লাহর হুকুম অনুযায়ী শাস্তি ঘোষণা করলেন।
মূসা (আঃ) গো-বৎস পূজায় নেতৃত্ব দানকারী হঠকারী লোকদের মৃত্যুদ- দিলেন (বাক্বারাহ ২/৫৪)। এতে তাদের কিছু লোককে হত্যা করা হয়, কিছু লোক ক্ষমাপ্রাপ্ত হয়। সম্প্রদায়ের লোকদের শাস্তি দানের পর মূসা (আঃ) এবার সামেরীকে ঘটনা জিজ্ঞেস করলেন। সামেরী আনুপূর্বিক ঘটনা বর্ণনা করল। এরপর বলল, আমার মন এটা করতে প্ররোচিত করেছিল। অর্থাৎ কারো পরামর্শে নয়; বরং নিজস্ব চিন্তায় ও শয়তানী কুমন্ত্রণায় আমি একাজ করেছি। মূসা বললেন, তোমার জন্য সারা জীবন এই শাস্তিই রইল যে, তুমি বলবে, আমাকে কেউ স্পর্শ করো না এবং তোমার জন্য আখেরাতে একটা নির্দিষ্ট ওয়াদা রয়েছে, যার ব্যতিক্রম হবে না। সেটা হ’ল জাহান্নাম। এক্ষণে তুমি তোমার সেই ইলাহের প্রতি লক্ষ্য করো, যাকে তুমি সর্বদা পূজা দিয়ে ঘিরে থাকতে। আর আমরা ঐ কৃত্রিম গো-বৎসটাকে অবশ্যই জ্বালিয়ে দেব এবং অবশ্যই ওকে বিক্ষিপ্ত করে সাগরে ছিটিয়ে দেব (ত্বোয়াহা ২০/৯৫-৯৭)। এভাবে বানী ইসরাঈল শয়তানের প্ররোচনায় আল্লাহদ্রোহী কাজে লিপ্ত হয়েছিল।
কেবল পূর্ববর্তী উম্মতের ক্ষেত্রেই নয়; বরং ইসলামের সূচনালগ্ন থেকেও শয়তানের ঐ প্ররোচনা অব্যাহত আছে। বদর যুদ্ধের সময় ইবলীস সুরাকা বিন মালেক বিন জুশুম মুদলিজীর আকৃতিতে এসে মুশরিকদের যুদ্ধে অবতীর্ণ হতে প্ররোচিত করেছিল এবং সে মুশরিকদের সাথেই ছিল।
কিন্তু যখন সে মুশরিকদের বিরুদ্ধে ফিরিশতাদের ভূমিকা প্রত্যক্ষ করল, তখন সে পিছনে ফিরে পলায়ন করতে থাকল। এ সময় হারেছ বিন হিশাম তাকে আটকিয়ে রাখার চেষ্টা করল। তখন ইবলীস তার বুকে সজোরে ঘুষি মারলে হারেছ মাটিতে পড়ে যায় এবং এই সুযোগে ইবলীস পলায়ন করে। মুশরিকরা তখন বলতে লাগল যে, সুরাকা কোথায় যাচ্ছ? তুমি কি বলনি যে, তুমি আমাদের সাহায্য করবে এবং কখনই আমাদের থেকে পৃথক হবে না? সে বলল, ‘আমি যা দেখছি, তোমরা তা দেখতে পাচ্ছ না। আমি আল্লাহ্কে ভয় করি। তিনি শাস্তি দানে কঠোর’ (আনফাল ৮/৪৮)। এরপর শয়তান পলায়ন করে সমুদ্রের ভিতরে চলে যেতে থাকে (আর-রহীকুল মাখতূম, অনুবাদ : আবদুল খালেক রহমানী ও মুয়ীনুদ্দীন আহমাদ (ঢাকা : তাওহীদ পাবলিকেশন্স, ২০০৯), পৃঃ ২৫৮)।
এভাবে শয়তানী কারসাজিতে যুগে যুগে মানুষ আল্লাহদ্রোহী কাজে লিপ্ত হয়েছে। আদ, ছামূদ, কওমে লূত্ব, আহলে মাদইয়ান প্রভৃতি গোত্র আল্লাহদ্রোহী কাজে লিপ্ত হয়েছে। ফলে আল্লাহ তাদেরকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিয়েছেন এবং বিভিন্ন গযব দিয়ে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছেন। এ পৃথিবীতে নমরূদ, ফিরাউন, কারূণ, হামান, শাদ্দাদ, আবরাহা, আবু জাহল প্রভৃতি প্রতাপশালী মুশরিক রাজা-বাদশাহ ও নেতৃবৃন্দ আল্লাহদ্রোহী কাজ করেছে, আবার মানুষকে সে কাজে উৎসাহিত-উদ্বুদ্ধ করেছে। কখনো তাদেরকে আল্লাহবিরোধী কাজে বাধ্য করেছে। কিন্তু তাদের কারো পরিণতি শুভ হয়নি। সবাইকে আল্লাহ ধ্বংস করে দিয়েছেন। আর তাদের ইতিবৃত্ত পরবর্তীদের জন্য উপদেশ হিসাবে রেখে দিয়েছেন। কিন্তু মানুষ তা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে না বলেই এ যুগেও সুনামি, ক্যাটরিনা, সিডর, নার্গিস, ভূমিকম্প, ভূমিধস প্রভৃতি প্রাকৃতিক বিপর্যয় দিয়ে আল্লাহ পৃথিবীর মানুষকে সতর্ক-সাবধান করেন। তবে মানুষ খুব কমই উপদেশ গ্রহণ করে। বিপদ-আপদ দূর হয়ে গেলেই তারা আবার অভ্যাসবশত পূর্বের কাজে ফিরে যায়।
আল্লাহ তাঁর প্রিয় সৃষ্টিকে সৎপথে, তাঁর মনোনীত দ্বীনের উপর অবিচল থাকতে মহাগ্রন্থ আল-কুরআনে বিভিন্ন উপদেশ দিয়েছেন। তদুপরি যারা আল্লাহর উপদেশ না মেনে তাঁর অবাধ্য হবে এবং তাঁর পথে বাধা হয়ে দাঁড়াবে তাদের জন্য কঠিন শাস্তির ঘোষণা রয়েছে পবিত্র কুরআনে।

Proof Daily inqilab.com

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.