![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কবিতায় যদি মৃত্যু হয়, তবে জেনো আমি মৃত
রাত প্রায় পোনে ১২ টা, শিয়া মসজিদের সামনে দাড়িয়ে। বেশি রাত হয়ার কারনের টেম্পু নাই। তাই একটা রিক্সা ভারা করলাম বাসায় যাওয়ার জন্য। রিক্সা উঠে একটা সিগারেট ধরালাম। হালকা ঠাণ্ডা আবহাওয়া তার মধ্যে রিক্সা চলছে বেশ ভালোই লাগছে… কিছুখন পরে রিক্সার ড্রাইভার কথা সুরু করলো
ড্রাইভারঃ আইচ্ছা মামা কাইলকা কি সব বন্ধ থাকবো?
আমিঃ হ্যা মামা।
ড্রাইভারঃ কি কন মামা?
আমিঃ হ্যা… তাই তো শুনলাম। মতিঝিল থেকে গুলিস্থান, নয়া পল্টন, পুরানা পল্টন
প্রেস ক্লাব, সাহাবাগ সবজায়গায় মাইকে এলাউন্স কোরছে… কেউ তাদের
প্রতিষ্ঠান খুললে তাদের ২০ না যেন ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করবে।
ড্রাইভারঃ এইডা কোন কথা হইলো? আমরা যারা গরীব মানুষ, দিন আনি দিন খাই।
আমাগোর কি হইবো? আমাগো তো একদিন কাজ না করলে পরের দিন কাজ
কইরা ট্যাকা না পাওয়া পর্যন্ত না খাইয়া থাকতে হয়।
আমিঃ রিক্সা তো বন্ধ থাকবে না।
ড্রাইভারঃ না মামা… আপনে বুঝেন্নাই। আমি কইতাছি দিনমজুর গো কতা। রিক্সা
ছারাও এই দেশে কোটি কোটি মানুষ কল কারখানায় গনপরিবহন গুলাতে
হোটেলে মোটেলে দিনমজুর হিসাবে কাম করে। আমি হ্যাঁগো কতা কইতাছি।
আমিঃ হুম… ভাববার বিষয়। (আমি ইতিমদ্ধে একটু নরে চরে বসলাম)
ড্রাইভারঃ শোঁক দিবস ঠিক আছে। কিন্তু সারা দেশের সকল প্রতিষ্ঠান বন্ধ করার কি
দরকার? এইডা তো দ্যাশের ও ক্ষতি। হাজার হাজার কুটি ট্যাকার ব্যাবসা
বাণিজ্য পিছনে পইরা জাইবো। একটা গার্মেন্টস শ্রমিকের মাসে ৪ দিনের বেশি
ছুটি থাকলে প্রেজেন্টেশন বোনাস ৩০০ ট্যাকা পায় না। একদিন হাজিরা না
হইলে প্রায় ২০০ ট্যাকা ব্যাতন কম। আর ওভারটাইম তো হইলো না…
তাইলে সব মিলাইয়া প্রায় ৬০০ ট্যাকার ফ্যারে পরতে হইবো সামনের মাসে
অই গার্মেন্টস শ্রমিক গো।
আমিঃ হুম… ঠিক বলছেন।
ড্রাইভারঃ দেহেন তো মামা হ্যারা শোঁক দিবস পালন করবো ভালো কথা। পরিবেশ
দেইখা কি মনেহয় এইডা শোঁক দিবস? মনে হইতাসে এইডা একটা মহা
উৎসব। গরু কাইটা বিরানি রান্ধে… তারা তারাই আনন্দ ফুর্তি কইরা খায়।
তাও মনডারে মানাইতে পারতাম যদি আমাগো দিতো… আমগো দেয়
যতক্ষণ ক্যামেরা আর সাংবাদিক থাকে অতক্ষণ। তার পরে ড্যাগ জায়গা
নেতাগো বাসায়। নেতারা হ্যাগো কর্মীগো লইয়া খায়… আর গরিবের বেলায়
ধনডা। কিন্তু অইদিকে খবর প্রচার হইয়া গ্যাছে অমুক নেতা শোঁক দিবস
উপলক্ষে গরীবগোরে খাওয়াইতাছে।
আমিঃ তাই নাকি? আপনি জানলেন ক্যামনে?
ড্রাইভারঃ হ মামা… আপনের বিশ্বাস হয়না আমার কতা? বিশ্বাস না করলে কাইল ই
একটু ঘুইরা ঘুইরা দেহেন।
আমিঃ আচ্ছা ঠিক আছে দেখবো নে। তাইলে আপনে কি শোঁক দিবস মানেন না?
ড্রাইভারঃ কিয়ের শোঁক দিবস? আওয়ামীলীগ মানে শোঁক দিবস? ঝিগাতোলা থেইকা
মোহাম্মাদ পুর পর্যন্ত দেখলাম না হইলেও ১০০ গরু… না হইলেও ৩০ তা
প্যান্ডেল… সব নেতারা বইসা অনেক হাসাহাসি করতাছে… বিড়ি
টানতাছে। হ্যারা তো কাইল মাংস ভাগাভাগি করবো… বিরানি ভাগাভাগি
করবো। কারো ভাগে কম পড়লে মারামারি ও করবো। এইডা কি আপনের
কাছে শোঁক দিবস মনেহয়?
আমিঃ না… কোনভাবেই না।
ড্রাইভারঃ একদিন কামাই কম হইলে ঘরে শোঁক সুরু হইয়া যায়। পরের দিন সুরু হয়
পেডের শোঁক। খিদা নিয়া কাম করলে সুরু হয়া যায় সারা শইলের শোঁক।
আমাগো জন্মডাই একটা শোঁক। এত শোঁক পালন করার সময় আছে
নাকি? আর “শেখ সাহেব” ছারাও অনেক বড় বড় নেতারা এই দেশে খুন
হইছে। কই তাগো বেলায় তো কেউরে শোঁক পালন করতে দেহিনা। নভেম্বর
মাসের ৩ তারিকে জাতিয় ৪ নেতা জ্যালে খুন হইলো কই দেখলাম না তো
কাউরে শোঁক প্রকাশ করতে। ২ জানুয়ারি সিরাজ শিকদার খুন হইলো। কই
কেউ তো শোঁক প্রকাশ করেনা… আর আওয়ামীলীগ তো নিজেরাই “শেখ
সাহেবের” খুনিগো লগে রাজনীতি করে। মতিয়া চৌধুরী, ইউনু সহ
আওয়ামীলীগের জোটে থাকা অনেক নেতাই শেখ সাহেব খুনের লগে জরিত
আছিলো। হ্যাগো লগে আওয়ামীলীগ রাজনীতি করতাছেনা? তো এই শোঁক
দিবস করার কোন মানি ই হয়না। হুদাই ভণ্ডামি, গরিবের পেডে লাত্থি দিয়া
এরা শোঁক পালন করে।
আমিঃ আপনে কি বি এন পি করেন নাকি?
ড্রাইভারঃ হাহাহা… হুনেন মামা… বাংলাদ্যাশের ব্যাবসা সফল কোন প্রতিষ্ঠান যদি
থাকে তার মধ্যে আওয়ামী আর বি এন পি এই দুইডা সেরা… আর এগোর
প্রোডাক্ট হইতাছে মুজিব আর জিয়া। এই দল না করার চাইতে রাস্তায় গুলি
খাইয়া মরা ভালো। আর জাতীয় পার্টির কোন প্রোডাক্ট না থাকলেও ওরা
অই আওয়ামী বি এন পির মত… বাকি রইলো জামাত? অগো কতা আর
কি কমু হালারা অন্ধ।
আমিঃ ঠিক বলেছেন। তো আপনার পছন্দ কি? আর আপনি কি চান?
ড্রাইভারঃ পছন্দ অপছন্দ নাই জানলেন। আমি চাই একটা স্বাধীন রাষ্ট্র… জেইহানে
আমি রিক্সা চালাইয়া আমার পরিবার প্রতিবেশী সমাজ দ্যাশ নিয়া ভালো
থাকমু… শোঁক পালন নিয়া আমার কোন আপত্তি নাই কিন্তু গরিবের হোগা
মাইরা যেন কেউ শোঁক পালন না করে। মুক্তিযুদ্ধ, ধর্ম নিয়া কেউ যেন
ব্যাবসা না করে… রিক্সা নিয়া রাস্তায় গেলেই যেন পুলিশ আমারে ২০
ট্যাকার লেইগা আটকাইয়া না রাহে।
আমিঃ হুম… আপনার কথা শুইনা ভালো লাগলো। বেশ ভালো চিন্তা ভাবনা।
আপনার নাম কি? পড়ালেখা কতোটুকু?
ড্রাইভারঃ নাম “শহীদ” পড়ালেখা বেশি করিনাই মামা… ৬ কি ৭ পর্যন্ত পড়ছিলাম…
অভাবের কারনে আর পরতে পারিনাই।
আমিঃ এইটা তো এই দ্যাশের ৬০ পার্সেন্ট পরিবারের গল্প
(তার মধ্যে বাসার সামনে চলে এসেছি রিক্সা থেকে নেমে ভারা দিবো এমন
সময় সে আবার বলে উঠলো)
ড্রাইভারঃ মামা… আপ্নারে চিনা চিনা লাগে। কই জানি দেখছিলাম।
আমিঃ (একটা মুচকি হাসি দিয়ে) হয়তো কোথাও দেখেছেন।
( কিন্তু ইলেক্ট্রিসিটি না থাকায় বেশ অন্ধকার চারদিক আমি তাকে চিনতে
পারলাম না। ভারাটা দিয়ে ১০ থেকে ১২ কদম আগাইতেই সে আবার
ডেকে উঠলো)
ড্রাইভারঃ কমরেড… লাল সালাম।
আমিঃ লাল সালাম।
©somewhere in net ltd.