নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মানিনা বালের স্বাধীনতা মানিনা কাটা তার, আয় শালা যত বিদ্রোহী শব রাষ্ট্রকে লাথি মার...

ওমর সাঈদ

কবিতায় যদি মৃত্যু হয়, তবে জেনো আমি মৃত

ওমর সাঈদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাংলাদেশের জন্য একটা গুরুত্বপূর্ণ দিন আগামীকাল অর্থাৎ ২রা জানুয়ার।

০১ লা জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ১১:৫৪

বাংলাদেশের জন্য একটা গুরুত্বপূর্ণ দিন আগামীকাল অর্থাৎ ২রা জানুয়ারি। সুশীল সমাজ হয়তো জানেও না সেই তথ্য কিংবা ভয়ে এসব নিয়ে কথাও বলে না। স্বাধীন রাষ্ট্রে সবার আগে যে মহান মুক্তিযোদ্ধা/বিপ্লবীকে বিনাবিচারে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল তিনিই কমরেড সিরাজ সিকদার এবং তার সাথে হত্যা করা হয়েছিল আরও কিছু মুক্তিকামী নায়ককে। ৭১ এর স্বাধীনতা যুদ্ধের আগেই বাংলাদেশে কিছু অঞ্চলকে স্বাধীন করার জন্য যুদ্ধ করেছিলেন তিনি!

বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে সবার আগে, সেই ৭২/৭৩ সালে একটা ঠিকঠাক থিসিস/গবেষণা তুলে ধরে আমাদের করনীয়টা কি হবে সেটা বলেছিলেন। শুধু বলে বসে থাকেন নাই, মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন, মাঠেঘাটে কাজ করেছিলেন। হ্যাঁ তার লাইনগত নানা বিতর্কিত আলাপ আছে, কিন্তু বাংলাদেশের রাজনীতিতে তার মতো কমিউনিস্ট আর নাই।

পুরাতন একটা লেখা, এটাকে লেখা বলা যায় না। কিছু তথ্য স্রেফ। এই সামান্য আলাপে সিরাজ সিকদারের রাজনৈতিক অবস্থান পরিস্কার হবে আশা করি।

৭০' এর দশকে ভারতের নকশালপন্থীরা একটা ঐতিহাসিক শ্লোগান দিত, "ইয়ে আজাদী ঝুটা হ্যায়-লাখো ইনসান ভূখা হ্যায়"। যে দেশে শাসকদের জঘন্য নীতির কারনে এখনো সরকারি চাকরির পরীক্ষা দেয়ার আগে মেধাবী তরুণদের ঘুষের অংক শিখতে হয়। নির্দিষ্ট কিছু দলের দালালী না করলে রাষ্ট্রীয় মৌলিক অধিকার পাওয়া যায় না, কবি-কলামিস্টরা পদক/পুরুস্কার পাওয়া আসায় তাদের কবিতায়-লেখায় শাসকদের সুনামের খিস্তি করে। কিংবা ৫৭ ধারা ভয়ে মুখ খুলে কথা বলা যায়না অথবা মারা যাওয়ার আগেই খুন হতে হয়। সে রকম প্রতিটি দেশের জন্য এই শ্লোগান প্রযোজ্য। একই ভাবে আমাদের দেশের জন্যও এখন যথার্থ একটা শ্লোগান এটা।

শুধু এখনই না, তখন অর্থাৎ স্বাধীনতার পরও এমনই ছিল সব। কমরেড সিরাজ সিকদারও হয়ত একই রকম ভাবে চিন্তা করতেন তখন, তাই তো তারই নেতৃত্বে ১৯৭৩ ও ১৯৭৪ সালের ১৬ ডিসেম্বরে দেশব্যাপী হরতাল পালন করা হয়েছিল। আর মাওলানা ভাসানী বিবৃতি দিয়ে সে হরতালের সমর্থনও করেছিলেন! কেন একটা স্বাধীন দেশের বিজয় দিবসকে (অর্থাৎ ১৬ ডিসেম্বর) "কালো দিবস" হিসেবে পালন করতে হয়, সেটা বুঝতে খুব কষ্ট করতে হবে না। শুধু বর্তমান পরিস্থিতির কথা ভেবে দেখলেই হয়।

২ জানুয়ারি হত্যা করা হয়েছিল সিরাজ সিকদারকে। সে হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়নি, আশা করা যায় আর হবেও না কখনো। কারন দেশটা এখন স্বাধীন!!! তাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল ১৯৭৫ সালের ১ জানুয়ারিতে। ঠিক তার পরদিন, ২ জানুয়ারি শেরেবাংলা নগর থেকে সাভারে রক্ষীবাহিনীর ক্যাম্পে যাওয়ার পথে তাকে হত্যা করা হয়। যদিও এ হত্যা নিয়ে অনেক রকমের তথ্য আছে। তবে ধারনা করা হয়, ২ জানুয়ারি গভীর রাতে এক নির্জন রাস্তায় নিয়ে গিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়। কে বা কারা তাকে হত্যা করেছে সে নিয়েও আছে অস্পষ্টতা। তবে যতই বিতর্ক থাকুক এটা নিশ্চিত যে, 'জাতীয় রক্ষীবাহিনী' এই হত্যাকাণ্ডের মুল হোতা।

১৯৯২ সালে অর্থাৎ তার হত্যাকাণ্ডের প্রায় ১৭ বছর পর সিরাজ সিকদার গবেষণা কেন্দ্রের চেয়ারম্যান শেখ মহিউদ্দিন আহমদ হত্যাকাণ্ডের বিচার চেয়ে আদালতে মামলা করেন। শুধু যে ৭১পূর্ব পাকিস্তান শাসকরাই নর-ঘাতক ছিল সেটা ভুল প্রমানিত হয়েছে বরং ৭১ পরবর্তী শাসকরাও একই ছিল। এই হত্যাকাণ্ড সেই কথায় প্রমান করে।

যদিও আমাদের দেশের অনেক বুদ্ধিজীবী সিরাজ সিকদারকে সন্ত্রাসী হিসেবে প্রমান করতে ওস্তাদি দেখান। কিন্তু ১৯৬৮ সালে সিরাজ সিকদার পূর্ব বাংলার শ্রমিক আন্দোলনের যে খসড়া থিসিস প্রকাশ করেন, সেটা কোন সন্ত্রাসীর লিখা থিসিসে ছিল না। একটা বিপ্লবীর থিসিস ছিল।

ঐ থিসিসে বলা হয়, মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ও সোভিয়েত সামাজিক সাম্রাজ্যবাদ তৎকালীন বিশ্ব প্রক্রিয়ার কেন্দ্র। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ও সোভিয়েত সামাজিক সাম্রাজ্যবাদ দুনিয়ার জনগণের প্রধান শত্রু। আরও বলা হয়, পূর্ব বাংলা পশ্চিম পাকিস্তানের উপনিবেশ। পূর্ব বাংলার জনগণের সাথে পাকিস্তানি উপনিবেশবাদীদের জাতীয় দ্বন্দ্বকে 'প্রধান দ্বন্দ্ব' হিসেবে নির্ধারণ করেন তিনি। থিসিসে জাতীয় গণতান্ত্রিক বিপ্লবের আহ্বান জানানো হয়।

পাকিস্তানী প্রশাসন ও শ্রেণি শত্রুর বিরুদ্ধে তিনি প্রথম গেরিলা অপারেশন শুরু করেছিলেন। সকল পরিস্থিতি বিবেচনা করে ১৯৭০ সাল থেকে দেশের বিভিন্ন জেলায় গেরিলা অপারেশন শুরু করে সিরাজ সিকদারের বিপ্লবী পরিষদ। সে সময় অর্থাৎ ৭০এর ৮ জানুয়ারি তার নেতৃত্বে ঢাকা, মুন্সিগঞ্জ জেলা ও ময়মনসিংহে ওড়ানো স্বাধীন পূর্ব বাংলার পতাকা।

১৯৭১ সালের শেখ মুজিবুর রহমান ও আওয়ামী লীগের উদ্দেশে "পূর্ব বাংলার জাতীয় মুক্তিসংগ্রাম" বিষয়ে দুটি খোলা চিঠি লিখেছিলেন তিনি। কিন্তু শেখ মুজিবুর রহমান ও আওয়ামী লীগ কর্ণপাত করেনি তাতে। শুরু হয় ১৯৭১-এর মুক্তি যুদ্ধ। বাংলার সাধারন মানুষ এবং শেষ সময়ে ভারতীয় সেনাবাহিনীর অংশগ্রহনের ফলে এ বাংলার মানুষ একটি স্বাধীন রাষ্ট্র পায়।

কিন্তু স্বাধীনতা যুদ্ধে এবং স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে ভারতীয় সেনাবাহিনীর তৎপরতাকে ভালো চোখে দেখেননি তিনি। তার মত ছিল, "পাকিস্তানের উপনিবেশ থেকে দেশ এবার ভারতীয় উপনিবেশের মধ্যে গিয়ে পড়েছে"। আবারো বাংলাদেশের সরকারের প্রতি একটি খোলা চিঠি লেখা হয়।

ঐ চিঠিতে, ভারতীয় সৈন্যদের অনতিবিলম্বে সরিয়ে নেওয়া, যুদ্ধের সৈনিকদের দিয়ে নৌ, আকাশ ও স্থলবাহিনী তৈরি করা, স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তিদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা এবং তাদের বিচার নিশ্চিত করা, সব দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক সংগঠনের নেতৃত্বে জাতীয় বিপ্লবী সরকার গঠনসহ ২৭টি দাবি পেশ করা হয়। এবারো মুজিব সরকার সর্বহারা এ কথায় কর্ণপাত করেনি।

৭১ এর পর সিরাজ সিকদার পূর্ব বাংলা তথা বাংলাদেশকে ভারতের উপনিবেশ হিসেবে উল্লেখ করে "পূর্ব বাংলার বীর জনগণ, আমাদের সংগ্রাম এখনও শেষ হয় নি, পূর্ব বাংলার অসমাপ্ত জাতীয় গণতান্ত্রিক বিপ্লব সম্পন্ন করার মহান সংগ্রাম চালিয়ে যান" নামক একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজণৈতিক দলিল হাজির করেন।

ঐ দলিলে আওয়ামীলীগকে জাতীয় বিশ্বাস ঘাতক ও বেঈমান হিসেবে উল্লেখ করে তাদের কে ছয় পাহাড়ের দালাল হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। ১৬ ডিসেম্বরকে কালো দিবস হিসেবে ঘোষনা করা হয়।

১৯৭৩ ও ১৯৭৪ সালের ১৬ ডিসেম্বরে দেশব্যাপী হরতাল পালন করা হলে মাওলানা ভাসানী বিবৃতি দিয়ে তা সমর্থন করেন। দেশব্যাপী গণভিত্তি সম্পন্ন পার্টি গড়ে তোলায় মনোনিবেশ করেন। শেখ মুজিবের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী গণজোয়ার তৈরীতে সক্ষম হলে, পার্টি বিকাশ লাভ করলে সিরাজ সিকদার শেখ মুজিবের ঘুম হারামের কারণ হয়ে দাঁড়ান। মুক্তিকামী সকল মহলে সিরাজ সিকদারের জনপ্রিয়তা বেড়ে যায়।

সিরাজ সিকদারের খোলা চিঠিতে কর্ণপাত না করলেও, সিরাজ সিকদারের কর্মকাণ্ড গুরুত্ব সহকারে দেখেন শেখ মুজিবর রাহমান। তিনি আর দেরি করেননি। দক্ষিণ এশিয়ার বিশিষ্ট সাংবাদিক ও লেখক অ্যান্থনি মাসকারেনহাস বলেছিলেন, ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দে ডিসেম্বরের শেষ দিকে চট্টগ্রামের কাছাকাছি এক এলাকা থেকে (টেকনাফ) পুলিশ কর্তৃক গ্রেফতার হন, খুন হন।

যদিও তার মত সাহসী মানুষ এখন আর নেই, যে ১৬ ডিসেম্বরকে "কালো দিবস" ঘোষণা করে দেশব্যাপী হরতাল পালন করবে। আর মাওলানা ভাসানীর মতও সাহসী মানুষ নেই যে বিবৃতি দিয়ে ঐ হরতাল সমর্থন করবেন।

তবে সিরাজ সিকদার এবং মাওলানা ভাসানীর ভাগ্য খুব ভালো ছিল যে, বর্তমানের মত ঐ সময়ে এত প্রচারিত "স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি" বা "পক্ষের শুক্তি" তত্ত্ব ছিলনা। থাকলে তাদেরও "স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি"র দলে ঠেলে দেয়া হত। ১৬ ডিসেম্বরকে "কালো দিবস" বললে, সেটা কি আর মানা যায়?

রিফাত বিন সালাম রুপম
রাজশাহী/২০১৬
(উইকিপিডিয়া, কমরেড সিরাজ সিকদারের জীবন আর কিছু ছোট লিখা থেকে নেয়া)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.