নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার বেলা যে যায় সাঁঝবেলাতে...

অপরাজিতার কথা

ফুল ভালোবাসি,গান ভালোবাসি,মেঘ ভালোবাসি,বৃষ্টি ভালোবাসি............বন্ধু ভালোবাসি......

অপরাজিতার কথা › বিস্তারিত পোস্টঃ

অবক্ষয়ের শুরুর কথা......

১৯ শে আগস্ট, ২০১৩ বিকাল ৩:৪২

আমাদের বর্তমান সমাজ ব্যাবস্থার চরম অবনতির আরেকটি উদাহরন 'ঐশী ' !!......সে কেন খুন করল,কার সাহায্যে খুন করল,এসব প্রশ্নের চেয়ে জরুরী এখন খুজে দেখা তার এই মানসিকতার জন্য দায়ী কে?শুধুই তার বাবা-মা,নাকি সমাজটাও??আমরা আমাদের বাচ্চাদের কিসের দিকে ঠেলে দিচ্ছি?একটা সন্তান কেন মাদকাসক্ত হচ্ছে??অবশ্যই হতাশা থেকে।আর সে হতাশার শুরু তো স্কুল লাইফ থেকেই!!



শিশুদের এখন জীবন বলে কিছু নেই।তারা মাঠে খেলে না,আকাশ দেখে না...তাদের পিঠের ওপর কেবল বোঝার উপর বোঝা জমে যাচ্ছে।সরকার নতুন নতুন সাবজেক্ট বাধ্যতামূলক করে তাদের জীবন বিষিয়ে দিচ্ছে।অংক এখন সৃজনশীল ।অথচ আমরা সবাই জানি যে সব শিশুর মেধা এক নয়।আমাদের সময় আমরা যখন হায়ার ম্যাথ নিয়ে পড়তাম,তখন অনেকেই বুক কিপিং নিয়ে পালাত অঙ্কের হাত থেকে। আর্টসের স্টুডেন্টদের দেখতাম অনেকটা মুখস্তই করত অঙ্ক।অনেকেই বলবেন এটা ঠিক নয়।কিন্তু আমি বলব,'তারে জামিন পার' দেখে যদি চোখে পানি আসে,তো একবার ভাবুন না কেন যে এরকম শিশুর কিন্তু অভাব নেই আমাদের আশেপাশে।সবাই সব কিছু পারবে এমন তো কথা নেই।বিশেষ করে অঙ্কে মাথা নেই কিংবা কিছুতেই সে বোঝে না,অথচ বাচ্চাটি অটিস্টিক নয়...এমন শিশুর দেখা পাওয়া দুষ্কর নয়।আমরা আমাদের শিক্ষা ব্যাবস্থায় তাদের জন্য এমন কিছু কি রেখেছি যাতে করে তারা হীনমন্যতায় না ভুগে?সেই বাচ্চাটি যখন কোনমতে অঙ্ক মুখস্ত করে নীচের লেভেলগুলি পাশ করছিল আর অপেক্ষায় ছিল কবে আরেকটু বড় হয়ে এই অঙ্কের ভুত থেকে মুক্তি পাবে,তখনই তার মাথায় চাপিয়ে দেয়া হল সৃজনশীলতার আরেক ভূত!! আরে!যে বাচ্চা অঙ্ক মুখস্ত করে কূল পায় না,সে কি করে পরীক্ষার হলে বসে বানানো অঙ্ক নিজে বুঝে করে পাস করবে?এইসব বাচ্চাদের কথা কে ভাববে?



অথচ এই বাচ্চাটাই হয়ত অন্য সাবজেক্টে অঙ্কে ভাল করা বাচ্চাটির তুলনায় অনেক বেশি ভালো।কিন্তু শুধুমাত্র হয়ত একটি সাবজেক্টের কারনেই তাকে ক্লাস থেকে হেয় হতে হচ্ছে।আর সেটা যদি নাও হয়,পড়াশনার মনোযোগটাও তো সবার এক রকম হয় না।সারাদিন মুখের উপর বই গুজে রাখতে কারই বা এত ভালো লাগে।হাজার হোক বাচ্চা তো!!বিদেশের পড়ার সিস্টেম যদি চালু করতেই হয় দেশে,তাহলে পুরোপুরিই করা উচিত।তাদের সাথে আমাদের পার্থক্য বুঝাতে একটা উদাহরনই যথেষ্ট,সেখানে তারা সামার ভ্যাকেশনই পায় পু্রো দুই মাসের।আর আমাদের বাচ্চারা?খুব ভাল স্কুল্গুলোতে সেটা এখন এসে ঠেকেছে মাত্র ১৫ দিনে!তাও অজস্র হোম ওয়ার্ক আর এসাইন্মেন্টের দৌরাত্মে সেই ছুটি পড়ার টেবিলেই কখন শেষ হয়ে যায় শিশুটি তা বলতেও পারবে না।তার পর স্কুল খুললেই শুরু হয় পড়ার বোঝা আর কোচিং।কোচিং না করলে শিক্ষকেরা আজকাল নাম্বার দেয় না।আর আমাদের দেশের স্কুল্গুলো তো আর বিদেশের মত নয় যে স্কুলেই সব পড়িয়ে দিবে।সুতরাং,আর ভাল রেসাল্ট,আর ভাল ক্যারিয়ারে আশায়,স্কুল,কোচিং ইত্যাদির দৌড়ে শিশুটির তখন নাভিশ্বাস অবস্থা!এন্টারটেইন বলতে আর কিছু নেই।আর অভিভাবকেরাও সন্তানের মঙ্গল চিন্তায় ,অর্থাৎ আমার সন্তানটি না আবার পিছিয়ে পড়ে আর সবার থেকে সেই দুশ্চিন্তায় ইঁদুর দৌড়ে সামিল হন সন্তান সহ! দৌড় , দৌড় আর দৌড় !



...তো এই শিশুদের জীবন বলতে কি আসলেই কিছু আছে?তাদের জন্মের পর থেকেই শুনতে হয় তুমি দৌড়াও ,আর ফার্স্ট হও !তানাহলে লজ্জা।অর্থাত শিশুকাল থেকেই তার লজ্জার শুরু।তাকে নিয়ে হাসাহাসি ক্লাসে,শিক্ষকদের টিটকারি আর তাতে করে অন্য বাচ্চাদের আরো বেশি নাজেহাল করাতে সেই শিশুটি ক্লাসে একেবারেই এলিয়েন হয়ে যায়।যেন সে অন্য গ্রহের মানুষ।কেন?কারন সে পড়ার চেয়ে ছবি আকায় বেশি মন দেয়,অঙ্কের চেয়ে ইতিহাস তার বেশি ভাল লাগে...শুধু সেই কারনে সে আজ হেয়!কিন্তু এই শিশুটি আসলে কতটা দোষী??আর সেই যে শুরু হয় শিশুটির হীনমন্যতার,তারপর থেকে চলতেই থাকে প্রতি ক্লাসে এই হেয় করা।শুধু ক্লাসে না,পরিবারেও ঠিক একই অবস্থা!যেখানে পরিবার তাকে সাহস দিবে,পাশে দাড়াবে,তা না করে পরিবার দেয় ধিক্কার।সাহায্য করার বদলে মুখ ফিরিয়ে নেয়।শাসন আর শাসনে জীবন অতিষ্ট! হয়ত আরও বেশি পড়ার বোঝা,আরো বেশি টিচারের চাপে শিশুটির তখন নাজেহাল অবস্থা হয়।আর হতাশ হতে থাকা শিশুটির পরিনতি এসে ঠেকে মাদকাসক্তিতে।কারন সে ছোটবেলা থেকে বন্ধুদের সাথে তুলনা করে দেখে এসেছে,সে ফেইল্যুর,তাকে দিয়ে কিছু হবে না,সে সমাজের এবং পরিবারের কলঙ্ক!!হাজার হাজার জিপি৫ এর ভিড়ে সে শুধু মাত্র পাশ!!ছি!কি লজ্জা!...অথচ হয়ত তার কোন সুপ্ত প্রতিভা ছিল,যা সুপ্তই রয়ে গেল!সে ভ্যান গগ হতে পারল না,সে নজরুল হতে পারল না...তার জীবন সীসার ধোয়ায় আচ্ছন্নই রয়ে গেল!তার জীবনটাই কেটে গেল আক্ষেপে শুধু এই ভেবে,জন্মই আমার আজন্ম পাপ!!



আর সে কারনেই হয়ত আমরা আর এখন রবীন্দ্রনাথ পাই না,শেক্সপিয়ার পাই না,...যে পীথাগোরাসের উপপাদ্য আমরা এখনো পড়াচ্ছি,আমার খুব জানার ইচ্ছে,সেই পীথাগোরাসের একাডেমিক ক্যারিয়ার কি?গ্যালিলিও,আ্যরিস্টটল প্রমুখ বিদূষিরা কয়টা জিপি৫ পেয়েছিলেন,কিংবা ক্লাসে তাদের রোল কত থাকত?তারা কি শুধু তাদের ইচ্ছানুযায়ি পড়াটাতেই জোর দিতেন,নাকি এখনকার মত সর্বেসর্বা হওয়ার চেষ্টা করতেন?কিছু থাকে গড গিফটেড এটা অনস্বীকার্য ,কিন্তু চর্চা বলেও একটা কথা আছে।আর সেই অনুশিলনটা কি এখনকার মতন ইদুড় দৌড়ের মত ছিল,নাকি নিজের মত হেটে চলে ফিরে?



বিদেশের সিস্টেম ফলো করছি ভালো,কিন্তু একবার কি ভেবে দেখি যে তারা শিশুদের একাডেমিক শিক্ষাটা কি করে দেয়?এবং শিশুদের মানসিক বিকাশের দিকটা কতটা গুরুত্ব দেয়??কারন তারা জানে,একটি শিশু একটি জাতির ভবিষ্যত।তাই একাডেমিক শিক্ষা কিংবা ক্যারিয়ার গড়ার চিন্তার আগে তাকে মানুষ করে গড়াটা বেশি জরুরি।কিন্তু আমরা শিশুদের মনের খবর রাখাটা নিতান্তই অপ্রোয়জনীয় বলেই মনে করি।আমরা ভাবি,শিশুদের আবার মন কি?দুইটা বেতের বাড়ি দিয়ে পড়তে বসাও,দ্যাটস এনাফ!!



আজ ঐশীকে যদি আমাদের কাছে রাবন বলে মনে হয় তো বলব,এই ঐশী তৈরির পেছনে যতনা তার পরিবার দায়ী,তার ঠিক সমান দায়ি আমাদের এই শিক্ষ্যা ব্যাবস্থা,সমাজ ব্যাবস্থা!আমরা তাদের নিঃশ্বাস ফেলার সময় দেই না,কিন্তু বাঁচতে বলি।হয় খুব বেশি উদাসীন, নাহয় এত বেশি চোখে চোখে রাখি যে শিশুরা হাফ ছেড়ে বাঁচতে নেশায় আসক্ত হয়ে যায়!সমাজের আরো অনেক অব্যাবস্থা আছে,যা আজ 'ঐশীর' মত একজনের সৃষ্টির জন্য দায়ী।আর সেই অনেক অব্যাবস্থার মধ্যে আমি কেবলমাত্র একটি দিক তুলে ধরলাম।আমার মনে হয়,বর্তমান প্রতিযোগিতার যুগে শিশুদের আরো ছাড় দিতে হবে।যেন এই কোমল বয়সেই তারা হীনমন্যতার শিকার না হয়।তাদের প্রতিযোগিতা থেকে দূরে রাখতে হবে।জীবনে ফার্স্ট সেকেন্ড হওয়াটাই যেন একমাত্র উদ্দেশ্য না হয়ে দাড়ায়,বরং মানুষ হওয়াটাই যেন মূল উদ্দেশ্য থাকে বেঁচে থাকার।হতাশামুক্ত জীবন হোক প্রত্যেক শিশুর,এই কামনাই করি।



(মাদকের সহজলভ্যতা,এবং অবারিত পর্ণ সাইটের দিকে দৃষ্টি দেয়ার সাথে সাথে এখনকার এই শিক্ষা ব্যাবস্থার দিকে দৃষ্টি দেয়াটাও জরুরি বলে মনে করি।বিশেষ করে শিশুদের।)

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ৩১ শে আগস্ট, ২০১৩ বিকাল ৫:৫৯

মুহাম্মদ জহিরুল ইসলাম বলেছেন: আপু, আপনার পোস্টের বক্তব্যের সাথে ১০০ ভাগ সহমত।

পড়াশোনা এখন মনে হয় বাচ্চাদের কাছে একটা আতংকের পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছি আমরা। আর এটা হয়েছে পড়াশোনাকে অতিরিক্ত বাণিজ্যিকিকরণ এর কারণে...

১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সকাল ১১:২১

অপরাজিতার কথা বলেছেন: ধন্যবাদ জহিরুল ইসলাম।সত্যি,লেখাপড়াটা এখন আতংকের পর্যায়েই নিয়ে গেছে।আর আপনি ঠিক বলেছেন,বানিজ্যিকিকরনের কারনেই আজ লেখাপড়ার এই অবস্থা!মান কতটা উন্নত হয়েছে তা ্তো দেখতেই পাচ্ছি।হাজার হাজার জিপি৫,কিন্তু এদের মধ্যে ক'জন ভালো কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারছে বলুন?এই সমস্যার সমাধান কি তাও জানি না!খুব হতাশ লাগে! :(

২| ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:২১

নিরুদ্দেশ বলেছেন: কেমন আছেন দিদি? অনেকদিন পর।

বিশ্লেষণমূলক লেখাটি ভালো লাগল।

একটা কথা ছিল। আমি কলকাতার একটি মাসিক সংবাদপত্রের সাথে জড়িত। নাম - পরিবর্তনধারা পত্রিকা। মূলত সাহিত্য বিভাগটির দায়িত্বে আছি।


আপনি যদি আপনার লেখা পাঠান খুব খুশি হব।

[email protected] এই মেইল এড্রেস এ লেখা পাঠালেই হবে। মাইক্রোসফট ওয়ার্ড এ অভ্র দিয়ে লিখে পাঠাতে পারেন।

খুব ব্যস্ত আছি। ভালো থাকবেন।

১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সকাল ১১:২৫

অপরাজিতার কথা বলেছেন: ধন্যবাদ নিরুদ্দেশ,আপনি আমাকে লেখা পাঠানোর যোগ্য মনে করেছেন সে কারনে। আরো অভিনন্দন সুন্দর একটি পত্রিকার সাথে জড়িত হওয়ার জন্য।যদি বাংলাদেশে পাওয়া যায় তো পড়ে দেখার ইচ্ছা রইল।যদিও লেখালেখির ব্যাপারে আমি খুবই অনিয়মিত,তবুও চেষ্টা করব লেখা পাঠানোর।মেইলে যোগাযোগ হবে আশা করি।

শুভ কামনা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.