![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমাদের অস্তিত্ব আমাদের পরিবেশ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত এবং সঙ্গায়িত।আমাদের অভিজ্ঞতা আমাদের গঠন করে।রূপ দেয়।এ রুপ পরিবর্তনশীল।আমি বিশ্বাস করি যে, পরিবর্তন ই একমাত্র অপরিবর্তনশীল ঘটনা।তাই পরিবর্তন ই সামনে চলার পথ।আর বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজন ভালোবাসার ক্ষমতা আর স্বাধীনতার আনন্দ।এ দুটো ছাড়া আমরা অস্তিত্বের সংকটে পড়ি।পানিপোকারা পানির উপরে ভেসে বেড়ায়।বিদীর্ণ করেনা।পানি কি জানে না।নিজেকে জীবনের উপর ভেসে বেড়ানো পানিপোকার মতো মনে হয়।জীবনকে যাপন করতে ভালবাসি।প্রাণ,প্রকৃতি ও জীবনকে জানতে ভালোবাসি।
রাতে বৃষ্টি ছিল ।বৃষ্টি এবং ঝড়।শেষ রাতে।ভীষণ বাজপড়ার শব্দে ঘুম ভেঙে গেল ।ঘর অন্ধকার।জানালার পর্দার ফাঁক দিয়ে বিদুত্ চমকানো আলো আসছে ।আলো চমকানো যত তীব্র হয়, আমি তত আতঙ্কে দু'কান চেপে ধরি।বাজ পড়ার শব্দে কেমন যেন লাগে।ঠিক আতঙ্ক নয়।ভয়হীন আতঙ্ক।ছোটবেলায় ঈদ পূজায় কত পটকা ফুটাতাম ।কই,কোন শব্দকে তো এমন লাগে নি ।ইদানীং কোন শব্দই সহ্য করতে পারি না ।কেউ কথা বললেও বিরক্ত লাগে ।একটা দু:সপ্ন দেখছিলাম ।সপ্নভঙ্গে বাজের প্রতি কৃতজ্ঞতা অনুভব করি ।আমি সাধারঢ়ত সপ্ন খুব কম দেখি ।কিন্তু আজকাল ঘনঘন দু:সপ্ন দেখি ।সকালে উঠে ফ্রযেড, ইয়ুং এর ঘাড়ে সব চাপিয়ে ভার্সিটি যাই ।লাভ হয় না ।মাথা মানলেও মনে মানে না।কেমন খচখচ করতে থাকে ।বেশিক্ষণ হয় নি ঘুমিয়েছি ।ফুটবলের নেশাটা ছাড়তে পারি নি ।মধ্যরাতে খেলা দেখা পুরানো অভ্যাস ।বাবা মাঝে মাঝে রাত জাগতে দেখে শুয়ে পড়তে বলেন ।বাবার কন্ঠে শাসনের সুর থাকে না ।রাত জাগলে শরীর খারাপ হবে-এই কথাটা শাসনের গলায় বলতে না পারার আক্ষেপ এবং সন্তানের স্বাস্থহানির আশঙ্কা এই দুয়ের মিশেল থাকে ।আমি সাধারণত উত্তর দেই না ।বাবাও আর তেমন কিছু বলেন না । ঘুমুতে দেরি হয়েছিল ।বৃষ্টির বেগ বেড়ে চলেছে ।তার সাথে অন্ধকার ঘরের ফ্যানের শব্দ যোগ হয়ে কেমন শরীর এলিয়ে দেয়ার মত পরিবেশ তৈরি হয়েছে ।চোখ ঢুলে আসে ।বাজ পড়া থেমে গেছে । ও ঘর থেকে গোঙানির আওয়াজ আসছে ।বাবার শরীর ভালো না ।কয়েকদিন আগে স্ট্রোক করেছিলেন।মাথায় কিছুটা সমস্যা হয়েছে।রাতে ঘুম হয় না ।মাথা ধরে বসে থাকেন ।আর অস্ফুট শব্দ করেন ।মা পাশে বসে গায়ে হাত বুলিয়ে দেন ।আগে আমিও পাশে বসে নির্ঘুম রাত পার করতাম ।আর করি না ।দু'কান চেপে ঘুমানোর সাধনা করি ।একসময় স্থুল মাংসের শরীরে আদিম ঘুম চেপে আসে।আমি এখনো তাই করলাম ।এক কান বালিশে আর অপর কান বাহুতে চেপে শুন্য নীরবতা তেরি করি ।বাবা খুবই সৌখিন মানুষ ।গল্প করতে ভালো বাসেন ।ঘুরতে ভালোবাসেন ।আমি কত রাতে বারান্দায় বসে যুদ্ধের গল্প শুনতাম।তারপর বাবার যুদ্ধের গল্প আরেকটু রঙ চড়িয়ে স্কুলের বন্ধুদের শুনাতাম ।এ কথাগুলো তার জন্য আর প্রযোজ্য নয় ।এখন তিনি ভালোমত কথা বলতে পারেন না ।হাঁপিয়ে যান ।তার ঘোরার জায়গা এখন কলেজ গেটে সোওরাওয়ার্দী আর ঢাকা মেডিকেল।কিছুদিন প্রাইভেটে চেষ্টা করেছি ।টাকায় কুলোয় নি । কঠিন অসুখ ।টাকা দরকার ।জোগাড় হয় নি ।কিছুদিন মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট নিয়ে দৌড়ালাম মন্ত্রণালয়ে।আমায় এক টেবিল থেকে আরেক টেবিলে ছুটতে হলো ।এক অফিস থেকে আরেক অফিস ।গ্রীস্মের তাপ তখন গায়ে লাগতো না ।মাসখানেক সে তাপ গায়ে মাখানোর পর সরকারী অফিসার পাঁচ হাজার টাকার একটা খাম ধরিয়ে দিলেন ।কিছু বিনা পয়সার পরামর্শ দিলেন ।সেদিনই আসার সময় মনে হল এবার বড় বেশি গরম পড়েছে।বাবা মন খারাপ করেন না।হয়তো করেন,বুঝতে দেন না।জমানো টাকা আর টিউশনির টাকায় সংসার চলে ।আর সরকারী ডাক্তারের ফ্রী ঔষধে শেষ মুহুর্তের অপেক্ষা করতে থাকেন ।মা নামাজ পড়েন ।সময়ে অসময়ে কোরান পড়েন ।কাল সোওয়াওয়ার্দীতে একবার যাওয়ার কথা ।ঘুমানো দরকার ।দুহাতে আরো জোরে কান চেপে ধরি ।সকাল সকাল উঠতে হবে ।নিজে থেকে না উঠলে কখনো ডাকবেন না আমার ঘুমের অসুবিধা হবে বলে ।তারপর অসুস্থ শরীরে কাওকে না নিয়ে একাই চলে যাবেন ।সারাজীবনের অভ্যাস।সবকিছু একা করতে ভালোবাসেন ।আমার বৃষ্টির শব্দে ঘোর লাগে ।তন্দ্রা আসে ।
মায়ের ডাকে ঘুম ভাঙে ।ঘড়ি দেখি।অনেক দেরিতে হয়ে গিয়েছে ।বাবা নিশ্চয় একা চলে গিয়েছেন ।আমাকে ডাকেন নি ।মাকে ও নিশ্চয় ডাকতে দেন নি ।আমি তড়িঘড়ি করে ফোন দেই ।বাবা ফোন ধরে বলেন তিনি ঠিক আছেন ।সমস্যা নেই ।আমি তাড়াহুড়া করে কলেজ গেট রওনা দেই ।
আধাঘন্টা পর ।আমি কলেজগেটে দাঁড়িয়ে ছিলাম ।আমার চারপাশে অনেক মানুষ ।সামনে রক্তে ভাসা বাবার লাশ।গাড়ির চাকায় তার শরীর থেঁতলে গিয়েছে ।আমি বাকরুদ্ধ হয়ে তার পাশে বসে ছিলাম ।অনেক্ক্ষণ ।অনেকক্ষণ ।
২| ০২ রা এপ্রিল, ২০১৩ রাত ৩:৩৬
ধূসর পানিপোকা বলেছেন: পৃথিবীর সমস্ত বাবাদের জন্য শুভকামনা ।
৩| ০২ রা এপ্রিল, ২০১৩ দুপুর ২:৪৯
রঙ তুলি ক্যানভাস বলেছেন: অনেকদিন পর ব্লগে এলাম,লিখা পড়লাম,
না পড়লেই হয়ত ভাল হত।
মনখারাপের অনুভূতিগুলোকে এড়িয়ে চলি ইদানিং,লিখাটা কিছু স্মৃতি মনে করিয়ে দিল.।.।
কিছু দৃশ্য সারাজীবনই স্মৃতি থেকে উঠে এসে কিছু সময়ের জন্য বাকরুদ্ধ করে দেয়,ঐ সময়ে নিয়ে যায়.।
আপনার ক্ষেত্রেও হয়ত তেমন.।.।
জীবনের কিছু গল্প অনেক রুঢ় হয়,মর্মান্তিক হয়,এমন গল্পগুলো যেন আর কারো জীবনে সত্যি না হয়..।
মা-বাবারা ভালো থাকুক,পৃথিবীর এপাড়ে কিং বা ওপাড়ের অসীম শূন্যতায়.।।
৪| ০২ রা এপ্রিল, ২০১৩ বিকাল ৩:৪০
ধূসর পানিপোকা বলেছেন: এটা আসলে আমার জীবনের ঘটনা নয়।
আমার কাছের বন্ধুর ।খুব কাছ থেকে দেখা ।বৃষ্টির রাত হলে আমার মনে হয় সেই ঘটনা ।ভাবি আমাদের বাবা মা হারানো জীবনের কত কঠিন সত্য।নিজেকে সেই জায়গায় কল্পনা করে লেখা।আমার মা বাবা বেঁচে আছেন।বয়স হয়ে গিয়েছে ।সেই ভবিষ্যত মুহুর্তের কথা ভাবলে দম আটকে আসে । সেই ভয়াবহতার কথা মনে করেই এই লেখা ।যেখানেই থাকুক,আমাদের মা বাবারা ভালো থাকুক ।
৫| ০২ রা এপ্রিল, ২০১৩ বিকাল ৩:৪৭
রঙ তুলি ক্যানভাস বলেছেন: হুম,ভুল হয়েছে বুঝায়,ভেবেছি লেখকের জীবনের গল্প।
আপনার না হলেও কারো না কারোতো জীবনের গল্প।
৬| ০২ রা এপ্রিল, ২০১৩ বিকাল ৪:১১
ধূসর পানিপোকা বলেছেন: আমরা যা কল্পনা করি তা কোন না কোন সময়ে অথবা কারো না কারো জন্য সত্য ।আমার মনে হয় আমরা যা করি তার চেয়ে যা ভাবি তা বেশি সত্য।আমরা কত কি ভাবি কিন্তু কঠিন বাস্তবতায় ইচ্ছের বিরুদ্ধে অনেক কিছু করতে হয় ।ইচ্ছের বিরুদ্ধে কোন কিছু করাকে আমার মিথ্যা মনে হয় ।
©somewhere in net ltd.
১|
০২ রা এপ্রিল, ২০১৩ রাত ৩:২৩
বাঘ মামা বলেছেন:
উফফফফ!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!
বাবা ভালো থাকুক নয়,ভালো থাকবেঈঈঈঈঈঈঈঈঈঈঈই যেখানেই থাকুক,পৃথিবীতে সব চেয়ে কঠিন কাজ হলো বাবা হওয়া।সব চেয়ে কঠিন।
কিছু বলতে ইচ্ছে করছেনা এখানে ভেবেছিলাম পড়ে চুপ করে চলে যাবো,কারণ এই এক যায়গায় আমি প্রকাশে একদম এলেমেলো সে হলো -বাবা।
আমার বাবাটাকে আমার মনে হয় আস্ত একটা ভালোবাসার মাংস পিন্ড,যার কোন মুখ নেই ভাষা নেই/বাবার বুকে যাওয়া হয়না ভয়ে।মনে হয় সারা জীবনের জন্য লেগে যাবো তার বুকে।
শুভ কামনা আপনার জন্য সব সময়