নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভালবাসার শেষ চিঠি কবে এসেছিল এই নগরে- ঠিক কয়টায়, নাগরিক জানালায় জাহাজের সাইরেন ঠিকই বেজে উঠে ভোর পাঁচটায়।

পথে-ঘাটে

শেষ কবে মেঘফুল দেখে হেসেছিল, নগরের পথ-শিশুটি নাগরিক রাস্তায়, নির্ঘুম রাত্রি শেষে ভোরের রোদ্দুরে রোজ ঠিকই ঢং ঢং বেজে উঠে স্কুলের ঘণ্টায়। ঝিঁঝি পোকার ডাক আর শিশুর কান্না যে দেশে মিশে একাকার; যেন জীবন্ত জাদুঘর সে দেশে আমিও হতে চেয়েছিলাম হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা; মনোমুগ্ধকর এক জাদুকর।

পথে-ঘাটে › বিস্তারিত পোস্টঃ

গ্রানাডার শেষ বীর মূসার বিদ্রোহী তারুণ্য

০২ রা জানুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৫:১৯

আজ ২রা জানুয়ারি গ্রানাডা(স্পেন) ট্র্যাজেডি দিবসঃ

গ্রানাডা থেকে দু’মাইল দূরে ‘মুরের শেষ দীর্ঘশ্বাস’ পাহাড়, স্প্যানিশ ভাষায় ‘Eultimo suspiro del Moro’। স্প্যানিশরা একে এই নামেই ডেকে থাকে স্পেনের শেষ মুসলিম সুলতান আবু আব্দুল্লাহর শেষ বিলাপকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য। পরাজিত ও আত্ম – সমর্পিত সুলতান আবু আব্দুল্লাহ গ্রানাডা নগরীর চাবি বিজয়ী ফার্ডিন্যান্ডের হাতে তুলে দেয়ার পর নিঃস্ব হয়ে নগরী ত্যাগ করে চলে আসেন। এই পাহাড়ে এসে ফিরে দাঁড়ান তিনি অতি সাধের গ্রানাডা কে শেষ বারের মত এক নজর দেখার জন্য। যে কান্না, যে অশ্রুকে সুলতান এই পর্যন্ত রোধ করে রেখেছিলেন, গ্রানাডার উপর শেষ নজরটি পড়ার পর তা আর কোন বাধ মানল না। শিশুর মত অঝোর ধারায় অশ্রু বর্ষণ করতে লাগলেন তিনি। আর তিনি বলতে লাগলেন, ‘আল্লাহু আকবর, আমার মত দুর্ভাগ্য কার! , তখন সুলতানের মা বীর নারী আয়েশাতুল হুররা বলেছিলেন, ‘যে রাজ্য পুরুষের মত তুমি রক্ষা করতে পারনি, তার জন্যে নারীর মত অশ্রু বিসর্জন তোমারই শোভা পায়।’
এই ঘটনা থেকে মুসলিমরা এই পাহাড়ের নাম দেয়, ‘ফেজ আল্লাহু আকবর।’ আর স্পেনীয় খ্রিষ্টানরা বলেন, ‘মুরের শেষ দীর্ঘশ্বাস।(মুসলমানদের কে মুর বা মরিস বা মরিস্কু বলা হয়)।

মুরের দীর্ঘশ্বাস পাহাড়ের শীর্ষদেশের নিচেই প্রশস্ত একটা চত্বর আছে এখানে দাঁড়িয়েই স্পেনের শেষ মুসলিম সুলতান আবু আবদুল্লাহ, তার পরিবার এবং তার সাথীরা গ্রানাডাকে শেষবারের মত দেখেছিল। এই জায়গাটা স্প্যানিশ খ্রিস্টানদের জন্যে গৌরবের জায়গা। প্রতিবছর ২রা জানুয়ারী যখন খ্রিস্টানরা গ্রানাডা বিজয়ের উৎসব করে, তখন এখানে তারা আবু আবদুল্লাহর দু’শ পুত্তলিকা দাঁড় করিয়ে তার চোখে একটা পানির নল লাগিয়ে দেয় যেখান থেকে অঝোর ধারায় ঝরতে থাকে পানি। এই জায়গাটা মুসলিমদের জন্য কাঁদার জায়গা।

১৪৯১ সালের ২রা জানুয়ারী। সূর্য উঠতে তখন ও অনেক দেরী। আত্মসমর্পিত গ্রানাডার মুসলিম অধিবাসীরা তখনও ঘুম থেকে জাগেনি। আত্মসমর্পণ এর শর্ত অনুসারে গ্রানাডা ত্যাগের জন্য সুলতান আবু আবদুল্লাহ তার পরিজন ও সাথী সহ আল-হামরা প্রাসাদের পশ্চাতের এক দুয়ার দিয়ে বের হলেন এবং নগরীর সবচেয়ে জনহীন অংশ দিয়ে গ্রানাডা ত্যাগ করলেন।
ঠিক এই সময় আল-হামরার দূর্গ শীর্ষ থেকে মুসলিম শাসনের অর্ধচন্দ্র পতাকা ভূ-লুণ্ঠিত হল, আর তার স্থানে সকালের সোনালি সূর্য কিরণে রৌপ্য নির্মিত প্রকাণ্ড ক্রস ঝলমল করে উঠল। ক্রসটি এখানে স্থাপন করলেন একজন বিশপ।

তখন গ্রানাডার আরেক সিংহ–দিল তরুণ সেনাধ্যক্ষ অশ্বারোহী কমান্ডার মুসা বিন আবী-গাসসান। সুলতান আবু আব্দুল্লাহর আত্ন-সমর্পণের বিষয় নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল, যখন দরবারে আমির-উমরাহ ও উপস্থিত বিশিষ্ট নাগরিক আত্নসমর্পণের পক্ষে মত দিচ্ছিল, তখন প্রতিবাদের জন্যে উঠে দাঁড়িয়ে এই তরুন সেনাধ্যক্ষ বলল, ‘শেষ পর্যন্ত শত্রুর সঙ্গে লড়াই করা হোক। দরকার হয়, তাদের বর্ষার মুখে গিয়ে আমরা আত্মহত্যা করব। যেখানে শত্রু সবচেয়ে প্রবল, সৈনিকদের সেখানে নিয়ে যেতে আমি প্রস্তুত। যারা বেঁচে থেকে গ্রানাডা নগরীকে শত্রু হস্তে অর্পণ করবে, তাদের মধ্যে গণ্য হওয়ার চেয়ে যারা শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াই করে জীবন-পাত করবে, তাদের মধ্যে গন্য হওয়াকে আমি গৌরবের মনে করি।’ কিন্তু এই তরুণের প্রতিবাদ কোন কাজে আসেনি। সুলতান এবং দরবার আত্নসমর্পণেরই সিদ্ধান্ত নেয়। সিদ্ধান্ত নেয়ার পর গোটা দরবার শিশুর মত কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। শুধু কান্না ছিল না ওই তরুণ সেনাধ্যক্ষের চোখে। সে কান্নার রোলের মধ্যে উঠে দাঁড়াল সেই তরুণ আবার। উচ্চ কন্ঠে বলল, ‘জাতির প্রবীণ সর্দারবৃন্দ, অর্থহীন রোদন আর বিলাপ ছেলেদের ও অবলা নারীদের জন্যে রেখে দিন। আমরা পুরুষ। আমাদের অন্তর অশ্রু বর্ষণের জন্যে সৃষ্টি হয়নি, রক্ত বর্ষণের জন্যে সৃষ্টি হয়েছে। আসুন আমরা স্বাধীনতার জন্যে যুদ্ধ করতে করতে বীরের মত আত্নবিসর্জন করি। গ্রানাডার উপর যে অন্যায় অনুষ্ঠিত হয়েছে, তার প্রতিকারার্থে মৃত্যুকে বরণ করি। আমাদের মৃত দেহকে আচ্ছাদিত করার জন্যে যদি এক মুঠো মাটিও না জোটে, উদার অন্তহীন আকাশের কখনও অভাব হবে না।’ তরুণ সেনাধ্যক্ষ কথা শেষ করে থামল। সমগ্র দরবার নিরব, নিস্পন্দ। সুলতান আবু আবদুল্লাহ আগ্রহ ভরে দরবারের মুখগুলোর দিকে দৃষ্টিপাত করলেন। সাহস, শৌর্য ও আগ্রহের একটি কথাও বিশাল দরবারে একটি কন্ঠ থেকেও উচ্চারিত হল না। দূর্বল চিত্ত সুলতান আবু আবদুল্লাহ কাতর কন্ঠে চিৎকার করে উঠলেন, ‘আল্লাহু আকবর, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ। আল্লাহর ইচ্ছার বিরুদ্ধে, তকদীরের বিধানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে লাভ নেই। তকদীরের ফলকে অতিস্পষ্টভাবেই লেখা আছে, আমার জীবন হতভাগ্যের জীবনেই পর্যবসিত হবে। সাম্রাজ্য আমার শাসনকালেই বিলুপ্ত হবে।’ অবশেষে আত্নসমর্পণের সিদ্ধান্ত যখন দরবারে চুড়ান্ত হয়ে গেল, আত্নসমর্পণ পত্রে স্বাক্ষরের জন্যে সুলতানের কলম উত্তোলিত হলো, তখন তরুণ সেনাধ্যক্ষ মুসা ক্রোধ-কম্পিত কন্ঠে শেষবারের মত চিৎকার করে উঠল, ‘আপনারা নিজেদের প্রতারিত করবেন না। মনে ভাববেন না যে, খৃষ্টানেরা তাদের অঙ্গীকার পালন করবে। যে লাঞ্ছনা এবং বিপদ আমি দিব্য চোখে দেখতে পাচ্ছি, তার তুলনায় মৃত্যু তুচ্ছ ব্যাপার। আমাদেরই চোখের সামনে আমাদের এই প্রিয় নগরী লুন্ঠিত হবে, আমাদের মসজিদ, এবাদতগৃহ নিগৃহীত, অপমানিত হবে, আমাদের গৃহ-সংসার বিধ্বস্ত হবে, আমাদের স্ত্রী-কন্যারা উৎপীড়িত-ধর্ষিতা হবে। নিষ্ঠুর অত্যাচার, হৃদয়হীন অসহিষ্ণুতা, চাবুক এবং শৃঙ্খল, অন্ধকার কারাগৃহ, মৃত্যুর অগ্নিকুন্ড, ফাঁসির কাষ্ট, এ সবই আমাদের ভাগ্যে জুটবে, মৃত্যুর অগ্নিকুন্ড, ফাঁসির কাষ্ট, এ সবই আমাদের ভাগ্যে জুটবে, এ সবই আমাদের দেখতে হবে, এ সবই আমাদের সহ্য করতে হবে। অন্ততঃ এই সব হতভাগ্য কাপুরুষেরা এসব দেখবে- এখন যারা সম্মানজনক মৃত্যুকে বরণ করতে কুন্ঠিত। আমি নিজের কথা বলতে পারি, ইনশাআল্লাহ, আমার চোখ দিয়ে এসব কখনও দেখবে না।’ তরুণ সেনাধ্যক্ষ মুসা কথা শেষ করে বেরিয় এল দরবার থেকে। সে নেমে এল রাজপথে। কারও সাথে কথা বলল না, কারও দিকে তাকালোও না সে। ঘরে গিয়ে অস্ত্রে-শস্ত্রে নিজেকে সজ্জিত করল, আরোহন করল নিজের প্রিয় অশ্বে। তারপর গ্রানাডা নগরীর ‘এলভিরা’ নামক সিংহদ্বার অতিক্রম করে দৃঢ় পদক্ষেপে যুদ্ধ ক্ষেত্রের দিকে এগিয়ে চলল।’
‘তারপরের ঘটনা খুবই সংক্ষিপ্ত। ঘোড় সওয়ার মুসা ফার্ডিন্যান্ডের একটি সেনাদলের মধ্যে ঢুকে পড়েছিল। আমৃত্যু লড়েছিল সে। আঘাতে আঘাতে জর্জরিত হয়েছিল তার দেহ। ভারি বর্ম আচ্ছাদিত মুমূর্ষ দেহ তার ডুবে গিয়েছিল সেনিলের পানিতে। ইতিহাসে আমরা দেখতে পাই মুসার কথা গুলো অক্ষরে অক্ষরে সত্য হয়েছিল। আহা সেদিন গ্রানাডাবাসী আত্মসমর্পণ না করে মুসার মত আজাদি ও জিহাদের পথ অনুসরণ করত, তাহলে হয়ত স্পেনের ইতিহাস ভিন্নভাবে লেখা হত।

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা জানুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৫:৫৪

মাকার মাহিতা বলেছেন: সেই রেশ আজও অব্যাহত রয়েছে...হায়রে মুসলমান...জাগবি কবে...?

০২ রা জানুয়ারি, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:২৭

পথে-ঘাটে বলেছেন: আমারও একই প্রশ্ন, জাগবি কবে?

২| ০২ রা জানুয়ারি, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:০৫

পথিক৬৫ বলেছেন: বুনু সেন মিসিন কারদেশ

০২ রা জানুয়ারি, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৩৭

পথে-ঘাটে বলেছেন: এভেত বেনিম

৩| ০২ রা জানুয়ারি, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৩০

দেলোয়ার সুমন বলেছেন: স্যালুট হে বীর

০২ রা জানুয়ারি, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৩৯

পথে-ঘাটে বলেছেন: আজাদি-দ্রোহের তারুণ্য আজ বড় প্রয়োজন

৪| ০২ রা জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ১০:২৬

প্রশ্নবোধক (?) বলেছেন: বল বীর বল চির উন্নত মম শির।

০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৫:৪১

পথে-ঘাটে বলেছেন: আবু আবদুল্লাহ কে ইতিহাস বুজদিল গাদ্দার হিসেবে চিনে নেবে। অপর দিকে বীর মুসার উন্নত শির আজাদি পাগল মানব জাতিকে যুগ যুগ ধরে প্রেরণা দিয়ে যাবে।

৫| ০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৭ সকাল ৭:২৩

সামিউল ইসলাম বাবু বলেছেন: so sad

০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৫:৪২

পথে-ঘাটে বলেছেন: শোককে শক্তিতে পরিণত করাই তারুণ্যের কাজ।

৬| ০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ১২:৩৬

চিন্তক মাস্টারদা বলেছেন: ধন্যবাদ, গুরুত্বপূর্ণ কিছু ইতিহাস তুলে ধরার জন্য।




আজকের মুসলিম ইতিহাস পড়তে জানে না! পড়তে চায় না! পড়ে না! যাও কতেক জন পড়ে তাদের মধ্যেও আবার অধিকাংশই পড়ে জানার জন্য :'(
কিইবা করার আছে বলেন?

০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ১:২০

পথে-ঘাটে বলেছেন: সাহিত্যে এবং ইতিহাস রচনায় আন্দালুসিয়ার(স্পেন) মুসলমানরা চরম উৎকর্ষতা দেখিয়েছিল। ইতিহাস লেখা হত খুবই পুঙ্খানুপুঙ্খরুপে। স্পেনের ইতিহাস নিয়ে ৭০ খন্ডে রচিত বিশাল গ্রন্থ আজো মাদ্রিদ মিউজিয়ামে সংরক্ষিত।


আমারা যে আমাদের পূর্বসূরিদের পথ থেকে বিচ্ছিন্ন অর্থাৎ ইতিহাস চর্চা এবং এ থেকে শিক্ষা নেয় না - এই বিষয়টা আমরা অনেকেই বুঝতে পারছি। কিন্তু আমাদের চিন্তা গুলো বিচ্ছিন্ন। যারা অনুধাবন করতে পারছি তাদের কে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসা উচিত। তাদের মেধা এবং যোগ্যতাকে কাজে লাগানো উচিত।

ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্যের জন্য। শুভরাত্রি।।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.