নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভালবাসার শেষ চিঠি কবে এসেছিল এই নগরে- ঠিক কয়টায়, নাগরিক জানালায় জাহাজের সাইরেন ঠিকই বেজে উঠে ভোর পাঁচটায়।

পথে-ঘাটে

শেষ কবে মেঘফুল দেখে হেসেছিল, নগরের পথ-শিশুটি নাগরিক রাস্তায়, নির্ঘুম রাত্রি শেষে ভোরের রোদ্দুরে রোজ ঠিকই ঢং ঢং বেজে উঠে স্কুলের ঘণ্টায়। ঝিঁঝি পোকার ডাক আর শিশুর কান্না যে দেশে মিশে একাকার; যেন জীবন্ত জাদুঘর সে দেশে আমিও হতে চেয়েছিলাম হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা; মনোমুগ্ধকর এক জাদুকর।

পথে-ঘাটে › বিস্তারিত পোস্টঃ

আংকারার যাত্রা পথে (ভ্রমণমূলক গল্প)

০৬ ই মার্চ, ২০১৭ বিকাল ৩:১৫



ঘুম ভাঙ্গতেই দেখলাম আমাদের বাসটা বুরদুরে(burdur) থেমে আছে। বুরদুর তুরস্কের একটি ছোট শহর। আমার একজন টার্কিশ বন্ধু হুসাইনের বাড়ি এই শহরে। হুসাইন কে কথা প্রসঙ্গে একবার তার শহর সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিলাম। তার কথা থেকে যতটুকু বুঝলাম, বুরদুর শহরটি রাজনৈতিক বঞ্চনার শিকার। অনেকটা কুমিল্লার মত। বর্তমান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়টি কুমিল্লায় হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তৎকালীন পাকিস্থানের রাষ্ট্রপতি আইয়ুব খানের অনুপস্থিতিতে মন্ত্রীসভার এক বৈঠকে সভাপতিত্বকালে ফজলুল কাদের চৌধুরী কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী এ.টি.এম মোস্তফাকে বিশ্ববিদ্যালয়টি কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রামে স্থাপনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন। বুরদুর থেকে দু'ঘন্টা পরেই স্পার্থা শহর। তুরস্কের এক সময়কার প্রেসিডেন্ট সুলাইমান ডেমিরেল ছিলেন স্পার্থার অধিবাসী। ধারণা করা হয় এই ভদ্রলোক লোক প্রেসিডেন্ট থাকা কালে বুরদুরে কোন উন্নয়ন হতে দেয়নি। বুরদুর উন্নয়ন প্রকল্পের সমস্ত অনুদান স্পার্থা ট্রান্সফার হয়ে গেছে। আমার কাছে মনে হল হুসাইনের চক্ষুদ্বয় প্রেসিডেন্ট সুলাইমান ডেমিরেল কে অভিসম্পাত করছে। আচ্ছা কুমিল্লা অঞ্চলের জনগণ কি সাকার বাবা ফকা চৌধুরীকে কি অভিসম্পাত করছে? করলেও ক্ষতি নাই কারণ চট্টগ্রামবাসী নিশ্চয়ই আশীর্বাদ করছে। আশীর্বাদে অভিসম্পাতে কাটাকাটি।

আমি হুসাইন কে ফোন করলাম। বললাম, আমি এখন তোমার শহরে আছি। আমি যে আংকারায় যাচ্ছি সে অবশ্য জানে না। সে বলল, তাই নাকি! বন্ধু আমার দুর্ভাগ্য যে আমি ভুরদুরে নেই। আমি বললাম, ধন্যবাদ বন্ধু। আমি আংকারায় যাচ্ছি। যাত্রী উঠা-নামার জন্য
আমাদের বাস এখন তোমার শহরে থেমে আছে। অল্প কিছুক্ষণের ভেতরেই ছেড়ে দেবে।
তুরস্কে প্রথম এবং ভাল বন্ধুদের মধ্যে একজন হচ্ছে হুসাইন। খুবই ভাল ছেলে। ওর সাথে পরিচয় পর্বটা ছিল বেশ ইন্টারেস্টিং। ওইদিন ছিল আকদেনিজ ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার শেষ দিন। কিন্তু আমি তখনও ভর্তি হয়নি। গতদিনও এসেছিলাম কিন্তু ভাষা সমস্যার কারণে ভর্তি হতে পারিনি। ভর্তি কার্যক্রমে দায়িত্বরত শিক্ষকের কেউ ইংরেজি পারে না।(নাকি ইচ্ছে করেই ইংরেজি বলে না, আল্লাহ মালুম) বাংলা পারার কোন প্রশ্নই উঠে না। পরের দিন ভার্সিটির বিদেশী ল্যাংগুয়েজ সেন্টারে গেলাম। টার্কিশ কোর্সের কো-অর্ডিনেটর ফিকরিয়া কারা (শিক্ষক) কে আমার সমস্যার কথা জানালাম। তখন আমাদের অদূরে একদল তুর্কি স্টুডেন্ট আড্ডা মারছিল। ফিকরিয়া হোযাম ওদের কে ডাক দিয়ে বলল, ভাল ইংরেজি জানা কে আছে তোমাদের মধ্যে, যে কিনা এই বাংলাদেশী বন্ধুটি কে (আমাকে দেখিয়ে) ভর্তি কার্যক্রমে সাহায্য করবে? তখন আমার সাহায্যে যে ছেলেটি এগিয়ে এসেছিল সে হচ্ছে হুসাইন। আমার সৌভাগ্যই বলতে হবে, কথা বলতে গিয়ে জানতে পাড়লাম সে আর আমি একই হলের বাসিন্দা। ওর আরেকটা পরিচয় হচ্ছে, সে একটা রাজনৈতিক দলের ছাত্র নেতা। সে সরকার বিরোধী রাজনীতি করলেও অনেকটা সহনশীল। যার করণে তুরস্কের প্রকৃত রাজনৈতিক অবস্থা জানতে ওর দৃষ্টিভঙ্গি গুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

আন্তালিয়া থেকে আংকারা, বাসে করে দীর্ঘ নয় ঘণ্টার পথ। সময় কাটানোর জন্য বা বিনোদনের জন্য বাসের পক্ষ থেকে কিছু সার্ভিস আছে। যেমন, ফ্রি ওয়াই-ফাই এবং প্রত্যেকের জন্য আলাদাভাবে টিভি দেখার সুব্যবস্থা। আমি ফ্রি ওয়াই-ফাইয়ের প্রতি তত ইন্টারেস্ট ছিলাম না। অনলাইন আসক্তি আমার একেবারেই যে নেই তা নয়। শুধু আজকের জন্য জানালা দিয়ে বাহিরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখার প্রতি অধিক আগ্রহী ছিলাম। ইন্টারনেটের ব্যাপারে রাকিব ভায়ের আগ্রহ ছিল চোখে পড়ার মত। তিনি নেট আছে কিনা জিজ্ঞেস করে নিশ্চিত হয়েই টিকিট কেটেছেন। যদিও জিজ্ঞেস করাটা ছিল নিরর্থক কারণ দূর পাল্লার সব বাসেই ওয়াই-ফাই আছে।

জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে আছি। সারি সারি পাহাড়ের মধ্যদিয়ে এগিয়ে চলছে আমাদের বাসটি। তুরস্ক আসলেই খুব সুন্দর একটি দেশ। দুবাই কিংবা আবুধাবির মত চোখ ধাঁধানো সৌন্দর্য নয়; চক্ষু শীতলকারী সৌন্দর্য। যদিও বা সৌন্দর্য বৃদ্ধি করণের ক্ষেত্রে কৃত্রিমতার ছুঁয়া থাকতে পারে। তবে সেটা অনেকটা নববধূর চোখে কাজলের প্রলেপ দেওয়ার মত, যা তার স্বাভাবিক সৌন্দর্যকে আরো প্রস্ফুটিত করে। এরদোগান যদিও প্রেসিডেন্সিয়াল পদ্ধতি নিয়ে বহির্বিশ্বে আলোচিত সমালোচিত, আভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি কিন্তু সম্পূর্ণ ভিন্ন। সেখানে এরদোগানের জনপ্রিয়তা এখন তুঙ্গে। খোদ আন্তালিয়াতে(আমার শহর) পর্যন্ত তুরস্ক প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর এই প্রথম কোন ডানপন্থী দল(একেপি) নির্বাচনে সংখ্যা গরিষ্ঠতা লাভ করেছে। (২০১৬ সালের নির্বাচনে।) এই জনপ্রিয়তার অন্যতম কারণ হচ্ছে, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন। আর এটা সম্ভব হয়েছে পর্যটন খাতের উন্নয়নের ফলে। বলা চলে তুরস্কের অর্থনীতি অনেকটা পর্যটন খাতের উপর নির্ভরশীল।

তুরস্কের অর্থনীতি সম্পর্কে বন্ধু হুসাইনের দৃষ্টিভঙ্গি ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তার মতে, পর্যটন নির্ভর অর্থনীতির একটা মন্দ দিকও আছে। সেটা হচ্ছে, বহিঃ নির্ভর হয়ে যাওয়া। এই দিকটা আরো প্রকট আকার ধারণ করে ২০১৫ সালের শেষের দিকে তুরস্ক-সিরিয়া সীমান্তে রুশ বিমানকে ভূপাতিত করার ঘটনাকে কেন্দ্র করে। তুরস্ক-রাশিয়ার মধ্যে চরম উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। ফলে দুই দেশের সম্পর্কের চরম অবনতি ঘটে। এই ঘটনার প্রতিবাদে রাশিয়া তার দেশের নাগরিকদের কে তুরস্ক ভ্রমণের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। ফলে তুরস্কের অর্থনীতিতে ধস নামা শুরু হয়। তুরস্ক ন্যাটোভুক্ত দেশ হওয়া সত্ত্বেও এরদোগান সরকার বেকায়দায় পড়ে পুতিনের নিকট চিঠি লিখে ক্ষমা চায়। ঠিক এই জায়গায় এসে জনগণ বুঝতে পারে না। তুর্কিরা ভাবে এরদোগান তাদের দেশ কে বিশ্ব নেতৃত্বের আসনে পৌঁছে দেবে। অথচ তুর্কি অর্থনীতি অনেকটা বিদেশ নির্ভর। বাহির থেকে পর্যটক আসা বন্ধ হয়ে গেলে তুরস্কের অর্থনীতির চাকা হয়ে যাবে অনেকটা শ্লথ। জনগণের উপরই বা দোষ চাপাই কি করে। কেননা সামগ্রিকভাবে তুর্কিরা ইতোপূর্বে এর চেয়ে ভাল সরকার সরকারের মুখ দেখেনি। বন্ধু হুসাইনের অভিমত তুর্কিরা এই সরকারকে মন্দের ভাল হিসেবে বেছে নিয়েছে।

বাসে ফিল্ম দেখার ব্যবস্থা ছিল। 'আমেরিকান আর্মি' নামে একটা মুভি দেখছিলাম। মুভিতে ইরাকিদের প্রচণ্ড প্রতিরোধের দৃশ্যগুলো দেখাচ্ছিল। মুভিতে একটা বিষয়ে আমি খুব কৌতুকবোধ করলাম। একজন স্থানীয় ইরাকি আমেরিকান সৈন্যদের কে সাহায্য করছে। তাকে মুভিতে হিরো হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। আর যারা প্রতিরোধ করছে তারা উপস্থাপিত হয়েছে সন্ত্রাসী হিসেবে। আমেরিকান সৈন্যদের একটি ডায়ালগ শুনে মনে হল ওরা অনেক মানবিক। একটা সংঘর্ষে অনেকগুলো নিরীহ মানুষ মারা যাওয়ার পর একজন মার্কিন সৈন্য আক্ষেপ করে বলল, "হা ঈশ্বর! আমরা তো এদের কে মারতে চাইনি"। ওর কথা শুনে আমার হাসির হেচকি উঠল। হাসির হেচকি ছাপিয়ে ঘোষণা শুনতে পেলাম, সম্মানিত যাত্রীগণ! শুভ দুপুর----------------- যা বুঝলাম অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই আমাদের বাস 'আফিয়ন-কারা-হিশার '(Afyonkarahisar, সংক্ষেপে শুধু 'আফিয়ন';) শহরে যাত্রা বিরতি করবে। দুপুরের খাবার সহ প্রয়োজনীয় কাজ সেরে ফেলতে বলা হচ্ছে।


-------------------------------------
মোবারক হোসাইন
AGD ডরমিটরি, আন্তালিয়া, তুরস্ক।

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই মার্চ, ২০১৭ বিকাল ৪:২৯

ভূমধ্য বলেছেন: আমি ব্লগে নতুন। আশা করি পাশে থেকে উৎসাহ দিবেন।

আপনার লেখা সুন্দর হইছে।

+++++

০৬ ই মার্চ, ২০১৭ বিকাল ৫:১৯

পথে-ঘাটে বলেছেন: ব্লগে আপনাকে স্বাগতম। ইনশাল্লাহ পাশে থাকব, আপনিও পাশে থাকুন।




ধন্যবাদ।।

২| ০৭ ই মার্চ, ২০১৭ দুপুর ২:৩৪

সিফটিপিন বলেছেন: আমাদের দেশেও যদি সব বাসে ফ্রি ওয়াই-ফাই থাকতো :(

০৭ ই মার্চ, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৩৩

পথে-ঘাটে বলেছেন: তাহলে আর বাহিরের প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হতে পারতেন না।


আমার ব্লগে আপনাকে স্বাগতম।

৩| ১২ ই মার্চ, ২০১৭ ভোর ৫:৫২

মিঃ আতিক বলেছেন:

হে ঈশ্বর! আমরা তো এদের কে মারতে চাইনি, এদের কথা আর কি বলবেন ভাই।

এখন তুরস্কের অবস্থা কেমন?

১২ ই মার্চ, ২০১৭ বিকাল ৪:১১

পথে-ঘাটে বলেছেন: তুরস্কের অবস্থা ভাল।



আমার ব্লগে আপনাকে স্বাগতম।
ধন্যবাদ আতিক ভাই, ভাল থাকুন নিরন্তর।

৪| ১২ ই মার্চ, ২০১৭ রাত ১০:২১

নাঈম জাহাঙ্গীর নয়ন বলেছেন: পড়লাম ভাই পুরোটাই। এরদোগান সম্পর্কে আমার নিজস্ব একটা ধারণা আপনার ভ্রমণ কাহিনী পড়ে কিছুটা মিলে গেলো। এরদোগান আসলে খারাপের মধ্যে কিছুটা ভালো।
ভালো লাগলো তুরস্ক সম্পর্কে কিছুটা জানা হলো।
তবে গ্রেফতার হওয়া মহিলা সম্পর্কে কৌতূহল থেকে গেল।

ভালো লাগলো ভাই।

১২ ই মার্চ, ২০১৭ রাত ১১:২৩

পথে-ঘাটে বলেছেন: এরদোগান সম্পর্কে আমার নিজস্ব কোন ধারণা নাই। তুর্কি বন্ধুদের কাছ থেকে পাওয়া ধরনা সম্বল করে লিখেছি। আপনার সাথে মিলে যাওয়ায় ভাল লাগল।

গ্রেফতার হওয়া মহিলা সম্পর্কে কৌতূহল আমারও রয়ে গেল।


ধন্যবাদ নয়ন ভাই। ভাল থাকা হোক নিরন্তর।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.