![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। মাথার পিছনেও প্রচণ্ডব্যথা সহ্য করতে পারছি না হাত পা অবশ হয়ে গেছে। মনে পড়লো আমি খুব হাসছি বাবার কোলে বসে। আমাদের ছিল একক পরিবার। ছোটবেলা থেকে আমি প্রচণ্ড রকমের দুষ্ট। মা কখনও কোনদিন আমাকে একা ঘরে রেখে যেতেন না। অবশ্য তার যথেষ্ট কারণ ছিল। কয়েকটা বলি। মাকে রান্না করতে দেখে আমার রান্নার করার একটা শখ কাজ করতো। তিনি যখন রান্না শেষ করে রেখে অন্যান্য কাজে ব্যস্ত থাকতেন তখন আমি আবার তাতে আরও কিছু উপকরণ লবণ,মরিচ, হলুদ এমনকি পানি মিশিয়ে খাদ্যকে সুস্বাদু বানিয়ে দিতাম। যা মা খাবার বের করতে গিয়ে অথবা খেতে বসার সময়ই টের পেয়ে যেতেন । আমার অনেকগুলো পুতুল ছিল।ঘরে যে কাপড়টা পছন্দ হতো সেটা যারই হোক বাবার বা মার অথবা আমার ওটা কেটে পুতুল গুলোর জন্য পোশাক বানিয়ে দিতাম। এমন ও হয়েছে মা শাড়ী পড়তে গিয়ে হয়তো আচল খুজেঁ পায় নাই অথবা শাড়ীর মাঝখান দিয়ে সারা পৃথিবী দেখা যাচ্ছে। মার গয়না, বাবার মানিব্যাগ অনেক কিছু। মনে হলে হাসি পায়। আমার মামারা আমাকে প্রচুর আদর করতো যার জন্য অনেক অপরাধ করেও সাজা থেকে মুক্তি পেয়ে যেতাম। আর গাছে উঠা, দেয়াল বেয়ে ঘরের চালে উঠা বাদ দেইনি।বারান্দার বাশেঁ বেড়ার ফাকেঁ চড়ুই পাখি ঘর বানাত সব সময়, যখন ডিম দিত তখন থেকে তাকে দেখতে থাকতাম আর যেদিন বাচ্চা ফুটতো সেদিন সেই বাচ্চা সহ পাখির বাসাটা নামিয়ে এনে আমাদের খাটের নিচে রেখে দিতাম। বাচ্চাদের কিচকিচ শব্দে মা ঠিকই বুঝেযেত। তিনি সেটাকে প্রায়ই উঠিয়ে রেখে আসতেন তাদের জায়গায়। আমাকে বকতে বকতে বলতো বাচ্চা গুলো মরে যাবে, মা পাখীটার অভিশাপ লাগবে এমন করিস না। তারপরও একটা নেশা ছিল ঐ বাসাটাকে নামিয়ো আনার। মা আবার আমাকে ভয়ও দেখাত, ওদের বাসায় সাপ বিচ্ছু থাকে, কামড়ে দিবে
আাসলে ঐ জীব গুলো মানুষকে ইচ্ছা করে কামড়ায় না। কামড়ায় মানুষরূপি সাপ, বিচ্ছু। যাদের কামড়ের বিষ এতটা ভয়াভয় যে পৃথিবীর কোন ওঝা ঐ বিষ নামাতে পারে না। মনে মনে হাসছি। আজ হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে শুয়ে মৃত্যুর অপেক্ষা শেষ হচ্ছে না আমার। মনে পরছে সব কিছু। কলেজে পরা অবস্হায় বিয়ে হলো আমার। অনেক বড় একটা পরিবার। সবাই আছে, কত আনন্দ, হাসি ঠাট্টা। ভালই চলছিল। বললাম বাবা আমি পড়াশুনাটাশেষ করতে চাই। শ্বশুর বললেন আমার ছেলের বউ কি কাজ করবে? না পড়াশুনার দরকার নাই। একটা ইচ্ছার মৃত্যু। প্রচন্ড কষ্ট পেয়েও চুপ করে রইলাম। আস্তে আস্তে নিজেকে সংসারের ডুবিয়ে দিলাম। প্রথম সন্তান আসবে প্রচণ্ড খুশি আমি। ঘরে সবাই খুশি না আর একজন বোঝা আসছে তাদের। সবাই বিরক্ত । মা বাবা এসেছিল নিয়ে যেতে তাদের কাছে, উল্টো মাথা নিচু করে ফিরে গিয়েছিল। তখন থেকে মনটাকে বলেছিলাম কখনও মা বাবার কথা মনে করবি না। তারা কেউ না। এটাই তোর বাড়ী। ছেলে আসলো। আমার স্বামী তার নাতীর খবরটাও তা নানা নানীরে দেয় নাই। তারা যখন নাতীরে দেখতে আসলো আবারও মাতা নিচু করে চোখের পানি ফেলতে ফেলতে চলে যেতে হলো। কারন হলো নাতী জন্মের সময় কেন কোনখরচ পাঠানো হয় নাই। দিন চলে যাচ্ছে। শ্বাশুড়ীর ধাক্কা, মাঝে মাঝে স্বামীর মাইড় সবই আছে। কথা শুরু হয় নিচু জাত, ফকির এইসব দিয়ে। বাবা মারা গেলো, তার শেষ দেখাও পাই নাই। মা একা জানতেও পারি নাই কেমন আছে? স্বামী ব্যবসা করবে টাকা লাগবে। আমার মাকে বলা হলো টাকার যোগাড় দিতে। কিভাবে দিবে। মোটা জমানো টাকাতো আমার বিয়েতে খরচ হয়ে গেছিল । তাহলে? তিনিও তার মেয়ে জামাইকে ডেকে বুঝিয়ে বললেন। জামাই সামনে কিছু বলে নাই। শুরু আর এক অধ্যয়।ঘরে চার দেওয়ালে মাঝে বেল্টের আঘাত শুরু হলো, প্রথম প্রথম খুব লাগতো।পরে আর লাগেনাই। শ্বাশুড়ী মা বাব তুলে গালিও হজম করে নিতাম ছেলেটার মুখের দিকে চেয়ে। সারাদুনির সন্তান ছাড়া কিছুই চিন্তা করতাম না। ছেলেকে স্কুলে দিয়ে আসতাম। হঠাৎ ওরা আমাকে বাজারের মেয়ে বলে উপাধী দিল। অসহ্য যন্ত্রণা। বন্ধকরে দিলাম ঘরের বাইরে বের হওয়া। নিষেধ করা হলো কাজের লোকগুলোর সাথেও যাতে কথা না বলি। ভাসুরের সামনে যাতে না যাই, দেবরদের সাথে যাতে কথা না বলি।এমনকিও আমার মামাত ভাইগুলোর সাথেও। হাসতে মানা, তারা যা বলবে তা ছারা কোন কথা বলতে মানা। ওফ্ অসহ্য মানসিক চাপ। মনে হলো পাগল হতে যাচ্ছি। তারপরও মনকে বললাম আমি যদি এমন করি তো আমার ছেলেটা কোথায় যাবে। শক্ত হতে হবে তোকে। কথায় বলে তুইতো কিছু দিতে পারলিনা সংসারে। তাই কোন কিছুর অধিকার নাই তোর। বাহ্ অধিকারটাও বুঝি টাকার উপর নির্ভরশীল।চেয়েছিলাম সবাইকে নিয়ে হাসি খেলা একটা পরিবার। কখন বেশী কিছু আশাকরি নাই, যা পেয়েছি তাতে খুশী থাকতে। চেয়েচিলাম স্বামীর একটু ভালবাসা, ছেলে বউ হিসেবে একটু মর্যাদা । কোনটাই আর পাওয়া হলো না। আশা করলাম ছেলেটা বুঝবে।সব ঝাপসা, কত লম্বা দিন শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে মা। তুমি কি শুনতে পাও তোমার এই মেয়ের ডাক। মা আমার ছেলে ডাকছে। কি বাবা বল? তুমি তো কিছু পারনা, কোন দিন একটাকার কিছু কিনে দিছ আমাকে। হেসে উত্তর দিয়েছিলাম তোর বাবা তো আছে। তাহলে। ছেলে বড় হয়েছে কলেজ থেকে ইউনির্ভাসিটিতেগেছে। হায়রে কপাল। এবার বাকী আশাটাও গেল। সংসারের অভাব সেটা কারন আমি, আমার সন্তান আমাকে বলে তুমি জীবনে কি করছো? টাকা তো আনতে পারলানা আমাদের পথে দাড়াকরায় দিছ। প্রতি দিন শুরু হয় নতুন করে আবার এক অধ্যায় হাজার দোষের পাহাড় আর সাথে স্বামীর জুতার আঘাত। আমার ছেলে চেয়ে চেয়ে দেখে। হয়তো এটাতেও তার শান্তি। রান্না, ঘরের কাজ সব কিছুতে আমার সন্তানের নতুন করে অধিকার, আমার আঘাত তাদের উচ্ছাস। আস্তে আস্তে আমি পাগল হতে চলেছি। কয়েকবার চেয়েছিলাম নিজেকে শেষ করে সবাইকে মুক্ত করে দিতে।কিন্তু আমার ভাগ্যও আমার সাথে পরিহাস করলো। বেচে রইলাম অজস্র কথার ঝুরি নিয়ে। আমি এখন একটা বোঝা ছাড়া আর কিছুই না। নিজেকে মানুষ ভাবতেও ভুলে গেছি। সারাসময় ভয়ে ভয়ে থাকতে হয় যদি কিছু ভুল হয়ে যায়, তারপর কি? প্রচন্ড মানসিক চাপ।ঘুমাতে পারছিলাম না। সবার অজান্তে ঘুমের ঔষুধ খাওয়া শুরু করলাম। প্রথম প্রথম একটা তারপর দুইটাবাড়তে লাগলো পরিমাণটা তবু ঘুম হয় না। সারাটা সময় কাজ নিয়ে থাকি আমি কি খেলাম কি খেলাম না তাও কেউ আজ আর দেখার নাই। আস্তে আস্তে খিদা কমে আসছে আমার। সারাদিনে একবেলা না খেলেও খেতে ইচ্ছা হয় না। ঘুমের ঔষুধ খেয়েও ঘুম হায় না আর। আমার ছেলে বিয়ে করবে। নতুন বউ আসবে। বিয়েতে তো খরচ লাগবে, তা বাবা লিস্ট বানাচ্ছে কি কি লাগবে। শুরু হলো কথা আজ ছেলে আমাকে আমার মা বাপ তুলে গালাগাল করছে। সাথে তা বাবাও আমি কিছুবুঝতে পারছি না। হঠাৎ খুব জোড়ে একটা ধাক্কা। পড়েগেলাম মাটিতে মাথায় হাত দিতে হাতটা ভিজে গেল । তাকিয়ে আছি ওদের দিকে। শুধু কানে আসল একি করলি , মরে গেলে জেলে যেতে হবে তো। ছেলে বলছে আমি তো আস্তে করেই দিলাম, কিন্তু?
চোখ খুলে দেখলাম আমি হাসপাতালে। কতগুলো অচেনা মুখ। ডাক্তার বলছে গায়ে তো রক্ত নেই, যা বের হয়ে গেছে বাচানো কষ্টকর। একবার চিৎকার করে বলতে ইচ্ছা হচ্ছিল কি হবে বেচে থেকে? কিন্তু কিছুই বলতে পারলাম না এত কিছুর মাঝেও আমি তো আমার নামটা বলতে ভুলে গেছি। আমার নাম হলো পরী। মা বাবার আদরের পরী। দুরন্ত সেই পরী। যার ইচ্ছা ছিল আকাশে উড়ে বেড়াবার। কিছু মানুষরুপী সাপের ছোবলে ধীরে ধীরে নিঃশ্বেষ হয়ে গেলো। মা তুমি কোথায় আজও আমি দেখতে পাবো না তোমায়। এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকার অধিকার তো আগেই হারিয়ে ফেলেছি।যেদিন থেকে নিজের ইচ্ছা গুলোকে মারতে শুরু করলাম বেচে থাকার ইচ্ছাটাও চলে গেলো। আমি যেতে চাই তোমাদের কাছে, মা নিয়ে যাও আমাকে। আর যে পারছিনা। বাবা এসেছো? আমি যাব তোমার সাথে নিবে না আমায়। হে বিধাতা এরপরও যদি আবার আমাকে পৃথিবীতে পাঠাও তাহলে আমাকে আমার পরিপূর্ণ শক্তি দিয়ে পাঠিও যাতে সাপ বা বিচ্ছুগুলোর পাল্টা জবাব আমি দিতে পারি। কোন অসহায় পরী রুপে না।
আধার হয়ে আসছে চারিদিক তোমাদের কোন আঘাত আর আমার কিছু করতে পারবে না। আমি এখন স্বাধীন। স্বাধীনতার অসীম স্বাদ।আসলে এবার পরীর মতো উড়তে পারছি।আর কোন বাধাঁ নাই।
©somewhere in net ltd.