নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
চেষ্টাই আছি........
তোফায়েল টিভির দিকে দৃষ্টি রেখে বলল- "চলে যেতে বললে যে?"
মেয়েটা অবাক হল। ওকি এটাকে পজেটিভ সিগন্যাল ধরে নিয়েছে? ছেলেরা এতটা আহম্মক হয়! এরা যেকোন কিছুকেই পজেটিভ সিগন্যাল ধরে নেয়? হাসলেও পজেটিভ, চুলে হাত দিলেও পজেটিভ আর নিরবতা তো সম্মতির লক্ষণ আছেই। হাসি পেল মেয়েটার। মেয়েটা দুটো প্যাক বানিয়ে একটা তোফায়েল কে দিলো আর একটা নিজে নিলো। উঠে এলো বিছানায়। তোফায়েলের পাশে বসল। বলল-
"হ্যা, ওর সাথে গল্প করতে ভালো লাগছিলো না, তাছাড়া কথাতো আপনার সাথে হয়ে আছে।"
তোফায়েল খুশি হল মেয়েটার কথা শুনে। রাত তবে এখোনো ব্যার্থ হয়নি। এখোনো আশা আছে। তোফায়েলের মুখে খুশির চোরা স্রোত খেলে গেল।
"সত্যি?"
" হ্যা, ভেবে দেখলাম- জীবন পর্যন্ত যখন দিতে রাজী আছেন, আপনাকে আর ফেরাবো না। যা চেয়েছেন, পুরোটাই পাবেন। এমন রাত তো ভুলেরি রাত।"
তোফায়েলের চোখে মুখে খুশির ঢেউ বাধ যেন মানছে না। যেকোন মুহূর্তে দুকূল ছাপিয়ে প্লাবন হয়ে যাবে।
রাত তবে এখোনো শেষ হয়নি। গল্প এখনো অনেক বাকি, রাতের মত।
দরজায় আবার শব্দ হচ্ছে। না, কোন মতেই রাতটাকে রোমাঞ্চ হতে দেবে না এই ছয় ফুটের জিরাফটা। তোফায়েলের সমস্ত রাতের স্বপ্নে এমন বারবার বাধা দেওয়ায় বিরক্ত হচ্ছে, ধৈর্য রাখতে পারছেনা। আড়ালে কেউ একজন অলৌকিক হাসছে, রাতের রোমাঞ্চ কি তোফায়েল বুঝতে পারছে? না বোধহয়!
তোফায়েল দরজা খুলে দিতেই সাদিক হড়বড় করে বলল " মানুষ, বাইরে পড়ে আছে।" ওর চোখেমুখে আতঙ্ক স্পষ্ট।
তোফায়েল মেয়েটার দিকে তাকালো, মেয়েটা শান্ত গলায় বলল "কি যা তা বলছেন?"
সাদিক হড়বড় করেই বলল "বাহিরে একটা লোক পড়ে আছে, নড়াচড়া করছে না। "
তোফায়েল ও মেয়েটা মুখ চাওয়া-চাওয়ি করল।
তোফায়েল আতঙ্ক কন্ঠে বলল "মারা যায়নি তো?"
"জানিনা।" সাদিক বলল।
মেয়েটা বিছানা ছেড়ে উঠে পরল, বলল " চলুন তো দেখি।"
তোফায়েল বাধা দিল "না না, সেটা ঠিক হবে না। যদি মারা গিয়ে থাকে, পুলিশ কেস হবে।"
এমনিতেই এই ছয় ফুটের জিরাফটা ঝামেলা করছে, তার উপড় আরেকটা আসলে ওর রাত নিশ্চয় মাঠে মারা যাবে। সেটা তো হতে দিতে পারেনা সে।
সাদিক বলল "যদি বেঁচে থাকে!"
তোফায়েল তবু রাজি না, ওর এই সাজানো রাতটাকে কিছুতেই নষ্ট হতে দিবে না সে।
তোফায়েল বলল "কখন পরেছে কে জানে! এইরকম ঝড়ের মধ্যেও কি বেঁচে আছে? শেষে পুলিশ কেসে পড়বো।"
সাদিক বলল "যদি বেঁচে থাকে, তাহলে ওর এই মুহূর্তে আমাদেরকে প্রয়োজন। তাছাড়া এমনিতেও পুলিশের ঝামেলায় পড়ব। বাহিরে একটা লাশ পড়ে আছে আর ভেতরে আমরা তিনজন কেউ কিচ্ছু জানিনা, সেটাই বা ওরা মেনে নেবে কেন?"
" মেনে নেবে, কারণ আমরা বলব ঝড়ের মধ্যে আমরা ঘুমিয়ে পড়েছিলাম, দেখতে পাইনি।"
"মনে হয় বেঁচে আছে।"
"সিওর হচ্ছেন কিভাবে?"
" সিওর হচ্ছি না, আগে তো দেখতে হবে। আমি যখন বাহিরে ছিলাম তখনো তো ছিল না।"
" আপনি জানলেন কিভাবে, ছিলনা? "
"আমি অনেকক্ষণ বাহিরে দাড়িয়ে ছিলাম, থাকলে দেখতে পেতাম।"
" এখন দেখলেন কিভাবে?"
" শুতে যাচ্ছিলাম, হঠাৎ একটা শব্দ শুনতে পেলাম। জানালা খুলে দেখতে গেলাম, বাড়ির সামনেই পড়ে আছে, স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।"
মেয়েটা অধৈর্য হয়ে উঠলো "উফ... কথা না বলে চলেন তো দেখি।"
তোফায়েল আবারও বাধা দিল, ও কিছুতেই চায় না আর একটা উটকো ঝামেলা আসুক। ছায়ার সংখ্যা বাড়ুক। ওর সমস্ত রাতের স্বপ্ন যাক।
তোফায়েল রুঢ় স্বরে বলল "এটা আমার বাড়ি। আমি ঠিক করবো কে থাকবে, কে থাকবে না। আমি কোন পুলিশি ঝামেলায় জড়াতে চাই না।"
তোফায়েলের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে সাদিক ও মেয়েটা। ওরা কিছুতেই বুঝতে পারছে না তোফায়েল এমন করছে কেন! ও এত ইন্সেন্সিতিভ হচ্ছে কিভাবে?
সাদিক বলে "তাই বলে বাহিরেই পড়ে থাকবে? আমরা কিছুই করব না?"
শেষ কথাটা বলে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে, মেয়েটাকে উদ্দেশ্য করে।
তোফায়েল বলে "থাকুক, আমি কোন ঝামেলায় জড়াতে চাইনা।"
সাদিক বলে "যদি বেঁচেও থাকে, এভাবে থাকলে তো এমনিতেই মরে যাবে।"
মেয়েটা ধৈর্যচ্যুত হয়, সে দৃঢ়স্বর বলে "আমি যাচ্ছি, তোমার ইচ্ছে হলে আসতে পারো।"
তারপর সাদিকের দিকে তাকিয়ে বলে "আসুন তো আমার সাথে। " বলে মেয়েটা আর সাদিক বেরিয়ে যায়, পিছে পিছে তোফায়েল ও বের হয়। যদিও ওর ইচ্ছে ছিলনা, কিন্তু বাধ্য হয়। মেয়েটা জেদি, ওকে বাধা দেবার সাধ্য তোফায়েলের নেই।
©somewhere in net ltd.