নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
চিত্ত যেথা ভয় শূন্য, উচ্চ যেথা শির, জ্ঞান যেথা মুক্ত,
'জল' তো গেছে 'পানি'র আগ্রাসনে ,
'স্নান' ও তো আর নাই ।
'নিমন্ত্রন'ও যাচ্ছে দ্রুত ,
'অথিতি'ও দেখি পালাই পালাই ।
এভাবে যদি হাতড়ে দেখি,
শত শত তার তলানিতেই ঠাই ।
মোদের গরব, মোদের আশা
ধরাশায়ী, এ দেশ কীর্তি নাশা ।
ভাষার জন্যে ভালবাসা সেটা কোন বায়বীয় কিছু নয়। কিন্তু একটা দিনেই যখন তাঁর প্রত্যয় এর সূচনা আর সমাপ্তি ঘটে তখন সংশয় থেকে যায়। যা প্রতিনিয়ত দেখি। বাংলা ভাষার একটি সর্বজন সম্মত চেহারা আছে। আমরা প্রত্যেকেই কোন না কোন অঞ্চলের । এবং জন্ম থেকে সেই আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলতে স্বছন্দ্য । কিন্তু সেটা কি আমার সর্বজনীন ভাষা ? আমার জন্ম চট্টগ্রামের দক্ষিনে। সে ভাষায় আমার স্বছন্দ্যতা প্রশ্নাতীত । আমার জন্যে তা সহজ। অন্য অঞ্চলের জন্যে তা দুরহ। এখন আমি চাটগাইয়া ভাষার সামান্যতম ব্যবহারও এখানে করি, তার কি অবস্থা দাঁড়াবে বলাই বাহুল্য । বলা যায়,দুর্বোধ্যতার দিক থেকে, আমার মনে হয় পাহাড়ি ভাষার পরে চাটগাইয়া ভাষার স্থান । ভাষার সর্বজনীন রূপ অনিবার্য । আমি যখন লিখছি তখন আমার আয়ত্বের ভাষায়, আর যখন কারো মুখের কথা কে অবিকল লিখছি তখন সেটা তার আয়ত্বের ভাষা। দুটোই সম মর্যাদার।আমি যদি আমার আঞ্চলিকতায় থেকে যেতে চাই, তা হবে অন্য অঞ্চলের মানুষের প্রতি অবিচার,যেহেতু তার সাথে নিজেকে মেলাতে চাই । সব আঞ্চলিক ভাষার সেই একই পরিনতি । তখন তাকে টেনে আনা, মানে বিড়ম্বনায় ফেলা । অনেকেই লেখাকে উদ্দীপক বা রম্য রসে সিক্ত করতে আঞ্চলিক ভাষার সাহায্য নেন। তাদের কথা আলাদা। অক্ষর জ্ঞানহীন মানুষ, রোগ কাতর আহত বেদনার্ত মানুষ কেও দেখা যায় ভাষার প্রকাশের সৌন্দর্যে চোখ তুলে তাকাতে। তার প্রকাশের এমন শুস্রষার ক্ষমতা ! ভাষা দিয়ে ভালবাসা হয়, কিন্তু সে ভাষা কি টানাপোড়নের আটপৌরে ভাষা? ভাষার সামর্থ্য তখন অর্জন করতে সাধ জাগে । সেটা আকস্মিক নয়, একটা নিরন্তর প্রয়াস । নিজের একান্ত চাওয়া বা ভালবাসা থেকেই তার সুচনা। একজন উঁচু ডিগ্রীধারী বৈষয়িক জীবনে সফল মানুষ, পরিনত সময়ে এসেও আঞ্চলিকতা থেকে মুক্ত হতে পারে না। সেটা তার ভাষার প্রতি উদাসীনতার ফসল। উদাসীনতা আমাদের রন্দ্রে রন্দ্রে, সাম্প্রদায়িকতা আমাদের রন্দ্রে রন্দ্রে। যার জন্যে ভাষা হয়ে উঠেনি আদৃত । সম ভাবের ভিন্ন শব্দের ভাষা, তৈরি করছে সাম্প্রদায়িকতার দেয়াল, তৈরি করছে মানুষের মানসিক দুরত্ব , কারো আগ্রাসন এবং কারো আত্মসমর্পণ । আমাদের পাঠ্য সুচী সেই পরিস্থিতির আগুনে ঘি ঢালছে তাদেরই প্রশ্রয়ে যাদের উপর আমরা আস্থা রেখেছি।
আমার ভাষাতেই আমি কিছু বললাম বা লিখলাম, তা পড়ে বা শুনে কেউ যদি নিমেষের জন্যে হলেও উৎকর্ণ না হয় , তাকে যদি না ভাবায়, যদি মুহূর্তের জন্যে আলোড়িত না করে - তাহলে আমার সে বলা বা লেখার পরিনতি কি । নাই বা হলাম লেখক বা শিল্পী । বাসনা না থাক তার । পাঠক শ্রোতা তো ? কিন্তু এ রকম একজন সত্তা আছে ভেতরে ,সে যতই অলস হোক - বিশেষ মুহূর্তে তার ডাক পড়ে । আমরা যখন আপন উপলব্দিকে মনের ভাষায় লিখতে চাই, তখন সেটা এক বিশেষ মুহূর্ত । আমরা যখন চাওয়া পাওয়া বা স্বপ্নের কথা জানাতে চাই কাছের কাউকে, তখন তা এক বিশেষ মুহূর্ত । সেই মুহূর্তটা যেন মনে হয়, হুইসেল বাজিয়ে কেউ গেলো প্রবল গতিতে, আর চাদ্দিকে নিথর ট্রাফিক জ্যাম। সেই মুহূর্তকে সাজাতে হলে যে অলংকার দরকার , তাকে খুঁজে নিতে হয় আপন আয়াস লব্দ ভাষা, শব্দ, ধ্বনি, উপমার চিত্রকল্প র ভান্ডার থেকে। আমাদের ভাষা কি কঠিন, নাকি কঠিন তাকে আয়ত্বে আনা? অথচ এর মধ্যে বাঁচা মরা । লেখক শিল্পীরাই শুধু ভালো লিখবে ভালো বলবে, তা কেন ? আমি যদি তাঁর নৈপুণ্য অর্জন না করি, তাঁকে মুখোমুখি বসাব কি করে, কি করে প্রশ্ন করব, কি করে তাঁকে আত্মতৃপ্তি থেকে বাঁচাবো ? কি করে আমার ভালো লাগা চরনের উপর থমকে দাঁড়াবে চোখ নিমেষে ? তার নীচে দাগ টেনে দিয়ে আপন পক্ষপাতকে জানান দেবো ? আমাদের পুরো সময়টা জুড়ে চলে তার বোধন আর আরতি। তাই সহজ কথা যাবে না বলা সহজে।
©somewhere in net ltd.