নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

স্বপ্ন দেখি। দেখতে ভালোই লাগে... ফিকশন্ ফ্যান্টাসি ।

জীবণের অনুভূতি গুলো সব ছোটগল্পের মত । শেষ হইয়াও হয় না শেষ । পূর্ণতারও কিছু অপূর্ণতা থেকে যায় ।

তোহা ভাই

তোহা ভাই › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্লাটফর্ম ও একটি সাদা পরী

১২ ই আগস্ট, ২০১৩ বিকাল ৫:৩৪

ষ্টেশনের চায়ের দোকানের চা সাধারনত মানের দিক থেকে ভালো হয় না । কারন ষ্টেশনের চায়ের দোকানগুলোতে ভীর হয় প্রচুর । দোকানদার ব্যাস্ত হাতে চা বানাতে গিয়ে কথনো চিনি কম দেয় আবার কখনো চা'পাতার পরিমাণ হয় বেশী। নয়নডাঙ্গা ষ্টেশনের ব্যাপারটা ভিন্ন। যদিও গোটা ষ্টেশনে একটাই চায়ের দোকান । কিন্তু ছোট ষ্টেশন হওয়াতে লোকজনের তেমন ভীর নেই । কিন্তু তারপরেও রমিজ মিয়ার দোকানের চা হয় শরবতের মত । রমিজ মিয়ার মন মর্জি ভালো থাকলে হয় মিঠা শরবত, মর্জি খারাপ থাকলে তিতা শরবত । মকবুলের ধারণা রমিজ মিয়া ওর চা'তে ইচ্ছে করেই কখনো চিনি দেয় না, ওর জন্য প্রতিদিন স্পেশাল তিতা শরবত বানায় রমিজ মিয়া । কিন্তু অবাক করা বিষয় হল, আজকের চা'টা হয়েছে অসাধারণ !

-'রমিজ মিয়া, তোমার চা তো আজ ফ্যান্টাসটিক হইছে !'

-'সব আপনাদের দোয়ায় ভাইজান.... ।'



মকবুল লক্ষ করেছে ওর সাথে কথা বলার সময় রমিজ মিয়ার কন্ঠে গদগদ ভাব চলে আসে, দুই হাত সামনে এনে কচলানো শুরু করে । দৃশ্যটা মকবুলের পছন্দ না, মনে হয় সাবান দিয়ে হাত ধুচ্ছে ।

-'তোমার দোকানে কত টাকার চা খাইছি মনে আছে তো ? হিসাব করে রাখবা, টাকা পয়সা হাতে আসলেই দিয়া দিব ।'

-'গরীবেরে আর লজ্জা দেন কেন ভাই ! আপনি হইলেন আমার কুটুম, কুটুমের কাছ থেকে টাকা নেই ক্যামনে !'

-'আমি তোমার কুটুম হইতে যাবো কোন্ দুঃখে ! ফালতু আলাপ ছাড়ো আর তোমার এই হাত কচলানি বন্ধ কর ।'



মকবুলের ভেতর একধরণের ছটফটানি শুরু হয়েছে । সকাল ৯ টার পদ্মরাগ ট্রেন আসার ঘন্টা বাজানো হয়ে গেছে । যে কোন সময় ট্রেন চলে আসবে । কিন্তু মায়া এখনো আসে নি । মায়া মোহনপুর ডিগ্রি কলেজে পড়ে । মোহনপুর নয়নডাঙ্গার পরের ষ্টেশন । সে ৯ টার ট্রেনে যায় আবার বিকাল ৪ টার ট্রেনে ফিরে আসে ।

নয়নডাঙ্গায় পদ্মরাগ থামে মাত্র দুই মিনিটের জন্য । এই দুই মিনিটের ভেতর মকবুল কে দুইটা জরুরী কাজ সারতে হয় । মায়া ট্রেনের যে বগিতে উঠে, তাতে মায়ার বসার জন্য একটা সিটের ব্যাবস্থা করতে হয় । কাজটা সহজ নয় । কোন কোন দিন ট্রেনে সিট খালি থাকে না । সেদিন অনেক অনুনয়-বিনয়, হাতজোড় করে সিটের ব্যাবস্থা করতে হয় । কারো কাছে হাতজোড় করে কিছু নেয়া মকবুলের ফর্মুলাতে পড়ে না, কিন্তু মায়ার সামনে কাউকে মারধোরও করা যায় না । সমস্যা হল, মকবুলের ব্যবস্থা করে দেয়া সিটে মায়া কখনো বসে না । সে অন্য কোন সিটে বসে অথবা দাড়িয়েই থাকে । কাজেই আশেপাশের দুই-চারজন যাত্রীকে মকবুলের আরো একটা অনুরোধ করতে হয়, 'ভাইজান, এই মেয়েটার দিকে একটু লক্ষ রাখবেন, কোন সমস্যা-টমস্যা হলে একটু সাহায্য করবেন, মানুষ তো মানুষের জন্য ।' এর ফাঁকে একজনের হাতে ওর মোবাইল নাম্বার লেখা একটা চিরকুটও ধরিয়ে দেয় মকবুল । আর পুরো কাজটা করতে হয় চুপিচুপি, যেন মায়া বুঝতে না পারে ।



পদ্মরাগ ষ্টেশনে এসে গেছে । মায়া উঠে পড়েছে 'চ' নাম্বার বগিতে । মকবুলও এক দৌড়ে উঠে যায় মায়ার পিছু পিছু । কিন্তু ততক্ষণে মায়া জানালার ধারে ফাঁকা একটা সিট পেয়ে বসে গেছে । ওর পাশে এক বুড়ি মহিলা আর উল্টো দিকের সিটে মধ্যবয়স্ক দুইজন মহিলা । মকবুল মোবাইল নাম্বার দেয়ার জন্য ভদ্রগোছের একজন কে খুঁজছে । দায়িত্ব জ্ঞাণহীণ কারো কাছে নাম্বার দিয়ে লাভ নেই ।

-'শুনুন....'

বোকার মত আশে পাশে মাথা ঘুরিয়ে শেষে নিজের দিকে মাথা ঝাকিয়ে ইঙ্গিত করে মকবুল, মনে মনে জিজ্ঞেস করে 'সত্যিই আমাকে ডাকছে তো মায়া ?'

-'......আমাকে দিন ।'

-'জি ?'

-'আপনার মোবাইল নাম্বারটা দেওয়ার জন্য মানুষ খুজছেন তো, যেন আমি কোন বিপদে পড়লে আপনাকে ফোন করে জানাতে পারে ?'

-'জ্বি'

-'আমাকে দিন, কোন সমস্যা হলে আমিই আপনাকে জানাবো ।'

মকবুলের মাথা ভো ভো করে ঘুরছে, কোন কিছু মাথায় ঢুকছে না । কাঁপা হাতে মায়ার দিকে নাম্বার লেখা চিরকুটটা এগিয়ে দেয় ও ।

-'আর এখন গিয়ে মাথার চুলগুলো ছোট করিয়ে নিবেন'

-'জ্বি'

-'আর এই কটকটা লাল শার্ট টা আর গায়ে দিবেন না । আপনি কালো মানিক, সাদা শার্ট গায়ে দিবেন, ঠিকাছে ?'

-'সাদা শার্ট গায়ে দিব ।'

-'এখন নামেন, ট্রেন ছেড়ে দিচ্ছে ।'



মকবুল একধরনের ঘোরের মধ্যে ট্রেন থেকে নামল । চারপাশের সবকিছু সাদা সাদা লাগছে । ট্রেন, প্লাটফর্ম, রমিজ মিয়ার দোকান, আকাশ, গাছপালা সব যেন সাদা হয়ে গেছে হঠাত্‍ । মাথার উপর দিয়ে একঝাক সাদা বক উড়ে গেল দুরে কোথাও । পদ্মরাগ ট্রেনের জানালা দিয়ে হাত বাড়িয়ে একটা সাদা পরী ওকে ডাকছে কি ?

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই আগস্ট, ২০১৩ দুপুর ১:৫৫

তোহা ভাই বলেছেন: কারো পোষ্টে তো কমেন্ট করার অনুমতি পাই নি। তাই নিজের পোষ্টে নিজেই কমেন্ট করে দেখি কেমন লাগে !
:-P

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.