![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
জামিল হায়দার প্রচন্ড রেগে আছেন । তিনি স্ত্রীর কাছে পান চেয়েছেন আধঘন্টা আগে, সে নির্বিকার ভাবে বসে থেকেছে । এই আধঘন্টায় তিনি আরো তিনবার পান দিতে বলেছেন, অত্যন্ত বিনয়ের সাথে বলেছেন । স্ত্রী তার বিনয়ের মূল্য দেয় নাই । শেষবার রীতিমত ঝাড়ি দিয়ে নিজে নিয়ে খেতে বলেছে । জামিল হায়দারের একমাত্র মেয়ের বয়স সবে আট । পিতাকে ঝাড়ি খেতে দেখে সে ফিচ্কি একটা হাসি দিয়ে ফেলেছে । পাকনামির লক্ষণ । স্ত্রীর উপর জমা হওয়া রাগ তিনি মেয়ের উপর ঝেড়েছেন । মেয়েকে অত্যন্ত কঠিন স্বরে ধমকে দিয়েছেন । এই বয়সী মেয়েরা পিতার ধমকে ভেঁউ ভেঁউ করে কাঁদার কথা, তার মেয়ে মাতার মত নির্বিকার ভঙ্গিতে বসে টিভি দেখছে ।
মাতা-কন্যা মিলে তাকে 'ইগনোর' করছে । এটা জামিল হায়দারের পছন্দ না । তার মেজাজ ১০ থেকে ১০০ তে উঠে গেছে ।
জামিল হায়দার বিয়ে করেছেন বয়সকাল পার করে । তিনি যখন পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত তখন তার বন্ধুবান্ধবের কোলে বাচ্চা টোঁয়া টোঁয়া করে । বিয়ের সময় পাত্রী পছন্দ করা নিয়ে হল আরেক ঝামেলা । তার পিতামহ আলতাফ হায়দারের পছন্দমত পাত্রী পাওয়া যাচ্ছিল না । তিনি যে মেয়েকে দেখেন তারই কোন না কোন খুঁত বের করেন । সৌন্দর্যের খুঁত না, চারিত্রিক খুঁত । এক পর্যায়ে এসে জামিল হায়দার বিয়ের আশাই ছেড়ে দিলেন । সিদ্ধান্ত নিলেন দেশে থাকবেন না। তখন ঘটক সাহেব নতুন মেয়ের খোঁজ নিয়ে এলেন। মেয়ে সাবালিকা, সুন্দরী, নম্র, ভদ্র, পরদানশীলা। আলতাফ হায়দার সোত্সাহে নাতিকে নিয়ে পাত্রী দেখতে গেলেন। পাত্রীকে যখন তাদের সামনে নিয়ে আসা হল, জামিল হায়দার অত্যন্ত লজ্জা পেলেন। পাত্রী নিতান্ত কম বয়সী। তার থেকে কম হলেও ১০ বছরের ছোট।
-'মা, তোমার নাম কি?'
পাত্রী মাথা নিচু করে নিজের হাতের আঙ্গুল গুনছে ।
-'বল, নাম বল....'
কোন উত্তর নাই। আলতাফ হায়দার বিরক্ত হচ্ছেন। কথার জাবাব না দিলে তার রাগ উঠে যায়। তিনি হুঙ্কার ছাড়লেন,
-'এই মেয়ে, মুখ ওপরে তোল.... হ্যা, এবার বল তোমার নাম কি?'
পাত্রী ফিসফিস্ করে যে নাম বলল সেটা কারো কানে পৌছল না, কিন্তু ধমকের চোটে তার চোখের পানি কারো নজর এড়ালো না । পাত্রী দেখলে পাত্রীর হাতে কিছু টাকা দেওয়ার নিয়ম। আলতাফ হায়দার দুটো একশ টাকার নোট দিলেন । মেয়ের বাবা আলহামদুলিল্লাহ পড়লেন । টাকা বেশী দিয়েছে মানে পাত্রী পছন্দ হয়েছে ।
বাড়িতে এসে আলতাফ হায়দার নাতিকে ডেকে কবুল বলার পরামর্শ দিলেন। মেয়ে বড়ই মায়াবতী। চোখ বড় বড় মেয়েরা মায়াবতী হয়, তবে শুধু চোখ বড় বড় হলে চলবে না, কান্নার সময় চোখের মনি সাদাটে হয়ে যাবে। এমন মেয় পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। লাখে একটা মেলে। সংসারে সে টু শব্দটিও করবেনা, পতিসেবায় নিয়োজিত থাকবে । জামিল হায়দার কবুল বলে দিলেন ।
কিন্তু বিয়ের পর দেখা গেল বিচক্ষণ আলতাফ হায়দারের অংক ভুল। যে মেয়ের টু শব্দ করার কথা না, সে মুখ দিয়ে ঠাশ্ ঠাশ্ করে গুলি ছোড়ে!
রাহেলা একদৃষ্টিতে টিভির দিকে তাকিয়ে থাকলেও টিভিতে কি হচ্ছে সে বলতে পারবে না। ওর মন খারাপ। ঈদের দিন থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত যখনি সুযোগ হয়েছে রাহেলা নতুন শাড়ি পরে সেজে গুঁজে স্বামীর আশেপাশে ঘুরঘুর করেছে। লোকটা বোধহয় লক্ষই করেনি। রাহেলা এমনিতেই সুন্দরী, সাজলে তাকে পরীর মত লাগে। আয়নায় নিজেকে দেখেছে রাহেলা, তিরিশ পেরোলেও এখনো সৌন্দর্যের ছিটে কমেনি তার।
ঈদ রাতে তার বান্ধবীর বাসায় দাওয়াত থেকে ফিরে রাহেলা স্বামীর মাথা টিপে দিতে দিতে বলল,
-'কই, একবারো বললে না যে নতুন শাড়িটায় আমাকে কেমন লাগছে?'
-'ভালোই তো, শাড়িটা খুব গর্জিয়াস হয়েছে। হবে না, দামটা দেখতে হবে তো!'
রাহেলা একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ঘুমুতে গেছে। সে পণ করেছিল এই শাড়ি আর পড়বে না, কিন্তু পরদিন কী আশায় আবার পড়েছে। ফলাফল আগের মতোই। আজ রাহেলা তাই স্টাইল একটু পাল্টেছে। সে হাতাকাটা ব্লাউজ পরেছে, চুল খোঁপা করে ঘাড়, পিঠ উন্মুক্ত রেখেছে। ভেবেছিল আজ হয়ত লোকটা খেয়াল করবে। খেয়াল করে লজ্জিত হয়ে বউকে ডেকে নিয়ে বুকে জড়িয়ে বলবে 'ইশ্, কতদিন আমার সোনা বউটাকে আদর করি না!' স্বামীর আদর মাখানো কন্ঠ শুনে রাহেলার এতদিনের জমে থাকা অভিমান চোখের জল হয়ে বেরিয়ে আসবে । স্বামীর বুকে মুখ গুঁজে সে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদবে।
সবার ভাগ্যে এ আদর জোটে না, তার ভাগ্যে জুটেছে পান বানানোর দায়িত্ব।
আজ অনেকদিন পর রাহেলার রাজীবের কথা মনে পড়ল। স্কুল-কলেজ জীবণে রাজীব তার পেছনে ঘুরঘুর করেছে। কিন্তু ঐ পেছেনে ঘোরা পর্যন্তই। সামনে এসে ভালোবাসি কথাটা বলার সাহস পায় নি। আজ রাজীবের গালে কষে একটা চড় দিতে ইচ্ছা করছে রাহেলার। এই ছেলেটা তখন যদি সাহস করে ওকে বলত, তাহলে আজ রাহেলার এই অবস্থা হয়?
চোখের কোণা ভিজে আসছে রাহেলার। আজকাল একা একা কাঁদতেও আর ভাল লাগে না। কাঁদার জন্যও একটা সহানুভূতিশীল কাঁধ প্রয়োজন ।
©somewhere in net ltd.