নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

স্বপ্ন দেখি। দেখতে ভালোই লাগে... ফিকশন্ ফ্যান্টাসি ।

জীবণের অনুভূতি গুলো সব ছোটগল্পের মত । শেষ হইয়াও হয় না শেষ । পূর্ণতারও কিছু অপূর্ণতা থেকে যায় ।

তোহা ভাই

তোহা ভাই › বিস্তারিত পোস্টঃ

॥ মীরা ও কয়েকটি গোলাপ ॥

১৪ ই আগস্ট, ২০১৩ দুপুর ২:০৩

মীরা ছটফটে টাইপের মেয়ে। কোন কাজ সে ধীরে-সুস্থে করতে পারে না। ওর সবকিছুতেই ব্যস্ততা, একধরনের অস্থিরতা কাজ করে। নয়নের আসার কথা দুইটায়, এখন দুটো দশ। কিন্তু, মীরা অপেক্ষা করছে চল্লিশ মিনিট ধরে। রান্না শেষ হওয়ার পর বাসায় আর থাকতে পারছিল না মীরা। সময় কাটছিল না। তাই আগেভাগেই চলে এসেছে। আগেভাগে এসে হয়েছে বিপদ। পার্কে একা একটা মেয়ে বসে থাকাটা বেমানান। অনেকেই লাইন মারার চেষ্টা করে। দুটো ছেলে তখন থেকে ওর বেঞ্চের পাশে এসে ফটোসেশন করছে। দুজনেই ভাব দেখানোর চেষ্টা করছে, নিজেদের স্মার্টনেস্ শো করছে। মীরার হাসি পাচ্ছে। কিছু কিছু ছেলে জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত গাধা।

-'হ্যালো, মীরা, আমি এই এসে গেছি !'

-'তোকে আর আসতে হবে না, আমি চলে যাচ্ছি।'

-'রাগ করছিস্ কেন ? আমরা দশ মিনিটের ভেতর পৌঁছে যাবো।'

-'আমরা মানে কি ? আমি তো শুধু একজনের জন্য খাবার নিয়া আসছি। তুই আমাকে আগে বলবি না যে তোর সাথে কেউ আসবে ?'

-'আরে ঐটা কোন ব্যাপার না, ভাগাভাগি করে খাবো। তুই থাক, আমরা আসছি। এখন রাখ্।'



নয়ন এরকমই। পৃথিবীর সবথেকে বড় গাধা। আগে বললে কি হত যে সাথে একজন আসবে ? ও বেশি করে খিচুড়ি নিয়ে আসতো। খিচুড়ি নয়নের প্রিয় খাবার। মাঝে মাঝেই মীরা ওকে নিজে হাতে খিচুড়ি রান্না করে খাওয়ায়। খিচুড়ি খাওয়ার সময় নয়নের চোখেমুখে একটা সুখ সুখ ভাব ফুটে ওঠে। চোখে আনন্দের ঝিলিক খেলা করে। এই দৃশ্য দেখতে পাওয়া মীরার জন্য পরম সুখের। পরম সুখে মানুষের চোখে পানি এসে যায়। নয়ন খিচুড়ি খায়, মীরা ওর খাওয়া দেখে আর চোখের কোণা মোছে।



নয়নের সাথে ওর প্রথম দেখাটা খুব মজার। মনে পড়লেই হাসি পায়। ভার্সিটি গেট দিয়ে বের হয়ে ফুটপাথ দিয়ে হাটছিল ওরা চার-পাঁচটা বান্ধবী। কী একটা বিষয়ে খুব হাসাহাসি করছিল সবাই। ফুটপাথের ধার ঘেঁসে চায়ের কাপ হাতে দাড়িয়ে ছিল নয়ন। ব্যস্, ওর সাথে ধাক্কা লেগে গেল। চা ছলকে পড়ল মীরার সাদা জামায়। মীরা ভেবেছিল ছেলেটা হয়ত স্যরি-টরি বলে অস্থির করে তুলবে। কিন্তু ঘটনা ঘটল পুরো উল্টা।

-'এই মেয়ে, চশমা খোল!'

-'জ্বি?'

-'চশমা খোল! যে জিনিষ চোখে দিলে চোখে দেখতে পারো না, সেটা চোখে দাও কেন?'

আশেপাশে উত্‍সুক লোকের ভির বাড়ছে। একটা সুন্দরী মেয়ে অপমানিত হচ্ছে এই দৃশ্য কেউ মিস্ করতে চাইবে না।

-'দেখুন ভাইয়া, আমি স্যরি! আমি লক্ষ করি নি, একটু অন্যমনস্ক ছিলাম....'

-'আরে রাখো তোমার স্যরি! চা'র বিল পাঁচ টাকা দিয়ে তারপর যাবে এখান থেকে।'

রাগে, দুঃখে, অপমানে চোখে পানি এসে গিয়েছিল মীরার। ও পাঁচ টাকার একটা কয়েন ছুড়ে দিয়ে গটগট করে হাটা ধরেছিল। এর পরের দৃশ্যটা আরো মজার। হাতে একটা ঘাম মোছা রুমাল নিয়ে পিছু পিছু ওদের বাসা পর্যন্ত এসে গেল সেই ছেলে।

-'প্লিজ, চোখের পানিটা মুছে ফেলুন, আমি স্যরি।'



দুর থেকে নয়ণকে দেখেই মেজাজটা বিগড়ে গেল মীরার। ভেবেছিল সাথে কোন ছেলেবন্ধু নিয়ে আসছে নয়ণ। এখন দেখা যাচ্ছে একটা মেয়ে, রুপবতী মেয়ে। আবার মাজা দুলিয়ে দুলিয়ে হাটছে! অতিরিক্ত মাজা দুলিয়ে হাটা মেয়েরা সুবিধার না। মনে মনে একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে মীরা, এই মেয়ের কোমর ও ভেঙ্গে দিবে।



-'এই যে মীরা, পরিচয় করিয়ে দিই, এ হচ্ছে জেনি, আমাদের মহল্লায় নতুন ভাড়াটিয়া। ভাবলাম আশপাশটা একটু ঘুরে দেখাই! আর জেনি, আমার জানের জান পেয়ারে দোস্ত মীরা।'



খপ করে নয়ণের হাতটা ধরে সাইডে নিয়ে এল মীরা।

-'কাহিনি কি ?'

-'কিসের কাহিনি?'

-'এই মেয়ে কে?'

-'বললাম তো জেনি, মহল্লার নতুন ভাড়াটিয়া!'

-'আর আমি কে?'

-'তুই আমার বন্ধু! মীরা কী! আমিতো কিছুই বুঝতে পারছি না! কি সমস্যা ?'

-'সমস্যা তুমি বুঝতে পারছ না, না ? তুমি খিচুড়ি খাবা মীরার হাতের আর অন্য মাইয়ারে নিয়া হাওয়া খাইতে বাইর হবা, এইসব চলবে না!

শোন্, আর কোনদিন যদি তোকে এই মেয়ের সাথে দেখি, তোর ঠ্যাং ভাইঙ্গা আমি ঝুলায় রাখব! আর এখন ঐ মেয়েরে গিয়ে বলবি যে, আমি তোর শুধু ফ্রেন্ড না, গার্ল ফ্রেন্ড !

আর একটা কথা, তোকে আজ রাত বারোটা পর্যন্ত সময় দিলাম, এর মধ্যে তুই আমাকে প্রপোজ করবি! না হলে, আজ রাত বারোটার পর একটা অঘটন ঘটবে।'

নয়ণ হতভম্ভ হয়ে মীরার কথা শুনছিল। যতক্ষণে ওর হুশ হলো, মীরা ততক্ষণে হাটা ধরেছে।

-'জেনি, আই য়্যাম স্যরি, তোমাকে নিয়ে আর ঘোরা হল না।'

-'মানে কি? আর তোমার ফ্রেন্ড ওভাবে চলে গেল কেন?'

-'কিঞ্চিত্‍ ভুল হয়েছে। এতক্ষণ পর্যন্ত ও শুধুই ফ্রেন্ড ছিল, এখন থেকে গার্লফ্রেন্ড হয়ে গেছে। তুমি একটা উপকার কর, এই ব্যাগটা রাখো, পরে তোমার কাছ থেকে নিয়ে নেব। এই মেয়েটা খুব জেদি আর ধৈর্য খুব কম। যদিও রাত বারোটা পর্যন্ত সময় আছে কিন্তু আমি জানি ও দশ মিনিটও অপেক্ষা করতে পারবে না। আমাকে কিছু গোলাপ কিনতে হবে।'



হতভম্ব জেনিকে রেখে দৌড় শুরু করল নয়ণ।

ফুটপাথ ধরে গটগট করে হাটছে মীরা। রাগের চোটে থপথপ করে পা ফেলছে। ওর পিছনে কয়েকটা গোলাপ হাতে ছুটছে নয়ণ। এখন বৃষ্টি হলে খুব ভালো হত। ফুটপাথ ছেড়ে লোকজন নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটত। ফাঁকা ফুটপাতে প্রপোজ করতে পারত নয়ণ। লোকজনের সামনে প্রপোজ করাটা লজ্জার ব্যাপার হবে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.