![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মোকাররম হোসেন
মহাখালী বাসষ্টান্ডে দাড়িয়ে আছে ।
অত্যন্ত সতর্ক । বউ ফোনে পই পই
করে বলে দিয়েছে সতর্ক থাকতে । ঈদের
সময় বিভিন্ন পার্টির
আনাগোণা বেড়ে যায়, মোকাররম
সেটা ভালো করে জানে । কাপড়ের
ব্যাগটা সে বুকের
সাথে জড়িয়ে রেখেছে । ব্যাগে কোন
টাকা-পয়সা নাই, বেতন-বোনাসের
টাকা সে মোবাইলে পাঠিয়ে দিয়েছে ।
যা আছে সব ওর নিজের কাপড়-চোপড়, আর
বউ এর ঈদ মার্কেট । বিয়ের পর এটাই
প্রথম ঈদ । বউ এর জন্য হাত
খুলে কিনেছে মোকাররম । এর মধ্যে ও শখ
করে দুইটা জিনিস কিনে ফেলেছে, টাইট
ফিট জিন্সের প্যান্ট আর একটা টপ্স্ ।
দিনের বেলা গাঁও-গেরামে এই চিজ্ হয়ত
পরতে পারবে না ওর বউ কিন্তু রাতে শুধু
ওকে দেখানোর জন্য
পরতে তো অসুবিধা নাই । ঢাকা শহরের
মেয়েরা এই জিনিস পরে দিনের
বেলাতেই ঘুরে বেড়ায় । এখন বউ
কি বলবে সেটা নিয়ে ও সংশয়ে আছে ।
বিয়ের সাতদিনের মাথায় মোকাররম
গার্মেন্টসে চাকরি পেয়ে ঢাকায়
এসেছিল । তার তিনমাস পর আজ
বাড়ি যাচ্ছে । লজ্জা ভাবটাই
এখনো কাটে নাই ।
অল্প বয়সেই বিয়ে করেছে মোকাররম ।
বিয়ের সিরিয়ালে ওর আগে ওর দুই
বড়ভাই ছিল, ঘোড়া ডিঙ্গিয়ে ঘাস
খেয়ে ফেলেছে মোকাররম ।
বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব রাখার পর
মোকাররমের বাবা প্রথমে খুব
খেপে গেলেন (নালায়েক ছেলে !নিজের
বিয়ের কথা নিজেই বলে )
এবং একবাক্যে না করে দিলেন । এরপর
ছেলে যখন খাওয়া-দাওয়া বন্ধ
করে দিয়ে বন্ধুদের বাড়িতে রাত
কাটাতে শুরু করল, মোফাজ্জল হোসেন নরম
হতে শুরু করলেন । বাপ হয়ে ছেলের
সাথে বিয়ে বিষয়ক
কথাবার্তা বলা যায় না । তিনি বড়
জামাইকে ডেকে পাঠালেন ।
আসগড় আলী খবর শুনে হায় হায়
করতে করতে ছোট শ্যালকের
সাথে দেখা করতে ছুটে এলেন ।
শ্যালকের মাথায় বিয়ে ভুত চেপেছে ।
পৃথিবীর সব ভুতের ওঝা আছে,
বিয়ে ভুতের নাই । এই ভুত একবার মাথায়
উঠলে আর নামে না ।
-'শুনলাম তুমি নাকি বিয়ে করতে চাও ?'
-'সঠিক শুনেছেন ।'
-'লোকে বলবে কী, বড় ভাইয়ের আগে ছোট
ভাই বিয়ে করতে চায় !'
-'বড়ভাই যদি আজীবণ বিয়ে না করে,
তাহলে কি ছোটভাই কে চিরকুমার
থাকতে হবে ?'
-'কিন্তু তোমার বড় ভাইজান
তো বিয়ে করতে একপায়ে খাড়া,
আব্বাজান কিছু বলে না তাই নিজেও
শরমে কিছু বলতে পারে না ।'
-'দুলাভাই শোনেন, এক মাসের ভিতর
বিয়ে করতে না পারলে আমি পাগল
হয়ে যাব । আপনার শ্যালক দিগম্বড়
হয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরবে,
সেটা কি খুব ভাল দেখাবে ?'
আসগর আলী আর কথা বাড়ায় নাই ।
সে বেশী কথার মানুষ না, কাজের মানুষ
। এক সপ্তাহের ভিতরে আসগর
আলী পাত্রী দেখা থেকে শুরু করে বিয়ের
সব ব্যাবস্থা করে ফেলল । পাত্রীর
ছবি দেখে মোকাররম
প্রথমে আমতা আমতা করেছিল ।
মেয়ে ফর্সা না, শ্যামা । মোকাররমের
টার্গেট ছিল ফর্সা মেয়ে, যেন
গালে টোকা দিলে রক্ত জমে লাল
হয়ে যায় । আসগর আলী শ্যালক
কে বুঝালেন,
শ্যামা মেয়েরা বেশী মায়াবতী হয় আর
স্বামী সোহাগী হয় ।
মোকাররম এজন্যে দুলাভাইয়ের
প্রতি কৃতজ্ঞ । বউটা তার আসলেই
মায়াবতী, সোহাগীও !
সোহাগের কথা মনে আসতেই কাপড়ের
ব্যাগটাকে আরো জোরে বুকের
সাথে জড়িয়ে ধরে মোকাররম । সময়
কেমন যেন স্লো মোশনে চলছে,
যদি চোখের পলক ফেলতেই
নিজেকে বাড়ির সামনের মেঠো পথটায়
দেখতে পেত !
©somewhere in net ltd.