নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

স্বপ্ন দেখি। দেখতে ভালোই লাগে... ফিকশন্ ফ্যান্টাসি ।

জীবণের অনুভূতি গুলো সব ছোটগল্পের মত । শেষ হইয়াও হয় না শেষ । পূর্ণতারও কিছু অপূর্ণতা থেকে যায় ।

তোহা ভাই

তোহা ভাই › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছোটগল্প : "নীলার জন্য"

১৬ ই আগস্ট, ২০১৩ দুপুর ২:১৮

-'আচ্ছা তুই একটা ছেলে, না কি! সময় জ্ঞান বলতে কিচ্ছু নেই তোর। আমি মেয়েটা একা একা একঘন্টা ধরে কাউন্টারে অপেক্ষা করছি। বিশ মিনিটের রাস্তা না, তোর আসতে লাগল একঘন্টা!'

-'আসলে হয়েছে কি নীলা....'

-'চুপ! আমাকে কোন অযুহাত দেখাবি না। আসতে পারবি না বললেই হত, আমি অন্য কাউকে বলতাম। ভাবিস্ না যে তোকে ছাড়া নীলা অচল!'



মুহিত বেশ বিব্রত বোধ করছে। নীলা রেগে গেলে খুব উচু গলায় কথা বলে, কাউন্টারের লোকজন সব হা করে মুহিতের ঝাড়ি খাওয়া দেখছে। বাঙ্গালি নিজেরা ঝগড়া-ফ্যাসাদ এড়িয়ে চলে কিন্তু অন্যের ঝগড়ার দৃশ্য খুব আগ্রহ নিয়ে দেখে। অনেকেই দু'চারটা উপদেশ বাণী শুনিয়ে দেয়। মুহিত মোটামুটি শিওর, নীলা আর কিছুক্ষণ ওকে ঝাড়তে থাকলে মুরুব্বী গোছের কেউ এগিয়ে এসে গম্ভীর কন্ঠে বলবে,"এই যে ছোট ভাই, রাস্তায় ঝগড়াঝাটি না করে বাসায় যান। বাসায় গিয়ে ইচ্ছামতো ঝগড়া করেন।" যদিও চেচামেচি করছে নীলা, বলবে কিন্তু ওকে; যেন সব দোষ ওর। পুরুষ মানুষ যতই মুখে মুখে নারী বিদ্বেষ দেখাক না কেন, ভেতরে ভেতরে ঠিকই নারী জাতির প্রতি সবার একটা 'সিমপ্যাথি' কাজ করে! তাই দ্রুত পরিস্থিতি সামাল দিতে হবে। আজ প্রথম না, মুহিত কে মাঝে মাঝেই এরকম বেকায়দা অবস্থায় পড়তে হয়। এ পরিস্থিতি থেকে বাঁচার উপায় ওর জানা আছে। নীলার রাগ আরো বাড়িয়ে দিতে হবে।

-' নীলা শোন্, তুই তো জানিস্ রেগে গেলে তোর নাকের পাটা দুটো ফুলে ফুলে ওঠে, ফোঁসফোঁস শব্দ হয়। একটা রুপবতী মেয়ে সাপের মত ফোঁসফোঁস করছে, এটা কি ভালো দেখায় ? আর তাছাড়া তুই যখন চিল্লিয়ে চিল্লিয়ে কথা বলিস, তোর মুখ থেকে থুথু ছিটকে বের হয়। অনেকটা 'ম্যায় হু না' সিনেমার মত।'

-'ইঁইহ্ .. মিথ্যা কথা, কখ্খনো না !'

কথাটা নীলা এত চট করে আর আহত স্বরে বলল যে, মুহিত না হেসে পারল না।

-'শয়তান! আবার আমার সাথে রসিকতা করা হচ্ছে, তোর মাথা আমি ফাটিয়ে দেব! বদের হাড্ডি, নে ব্যাগ নে!'



মুহিত বেশ জড়োসড়ো হয়ে সিএনজি তে বসেছে। এমন না যে, নীলার গায়ের সাথে ওর গা লেগে গেলে নীলা কিছু বলবে, কিন্তু তারপরও মুহিত সবসময় একটা দূরত্ব রেখে বসে। নীলার ছোঁয়া লাগলেই মুহিতের সাড়া শরীর কেঁপে ওঠে, মাথা ঝিমঝিম করে, বুক দুরু দুরু করে, তাই এই দূরত্ব। নীলা অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে আছে, তারমানে এখনো ওর রাগ কমেনি।

মুহিতের আসলে কোন দোষ ছিল না। গতকাল সন্ধা থেকে ওর প্রচন্ড জ্বর। ওষুধ খেয়ে দশটার দিকেই ও ঘুমিয়ে পড়েছিল। ঘুম ভাঙ্গল মোবাইল ফোনের ভাইব্রেশনে, ঘড়িতে তখন ১২ টা। এত রাতে নীলার ফোন পেয়ে ও একটু অবাক হয়েছিল, নীলার জানার কথা নয় যে ও অসুস্থ।

- 'হ্যালো, নীলা...'

-'হ্যা মুহিত, শোন্ না, আমি একটু বিপদের মধ্যে পড়েছি...'

নীলার বিপদের কথা শুনে ধরমড় করে বিছানায় উঠে বসে মুহিত,

-'কি হয়েছে ? কোথায় তুই ?'

-'আমি শ্যামলীতে, বাসা থেকে আসলাম। কথা ছিল আবির আমাকে রিসিভ করে হোষ্টেলে পৌছে দিবে, এখন এসে ফোন দিলাম, ও বলছে ওর নাকি খুব জ্বর, আসতে পারবে না, আমাকে একা যেতে বলছে। তুই বল, এত রাতে আমি একা যাই কি করে ?'

-'না, না, আমি থাকতে তুই একা যাওয়ার কথা চিন্তা করিস্ কি করে? তুই কিছুক্ষণ কাউন্টারে বসে অপেক্ষা কর, আমি বিদ্যুতের বেগে আসছি।'



বিদ্যুতের বেগে আসতে পারেনি মুহিত। জ্বর শরীরে কিছুতেই ওকে এত রাতে বাসা থেকে বের হতে দেবে না মা। অনেক বুঝিয়ে আধঘন্টার মধ্যে বাসায় ফিরবে কথা দিয়ে তারপর বের হতে পেরেছে। তার উপর এত রাতে সিএনজি পেতে দেরী হয়ে গেল। নীলা কে ওর দেরী হওয়ার কারণটা জানানো উচিত্‍, তাহলে হয়ত ওর রাগ কমে যাবে। কিন্তু সমস্যা হল ইদানিং নীলাকে কিছু বলতে গেলেই সবকিছু কেমন যেন গুবলেট হয়ে যায়, একটা বলতে গিয়ে আরেকটা বলে ফেলে। তার উপর সারাক্ষণ ভয় কাজ করে, কিছু বলতে গিয়ে হয়ত মনের কথাটা বলে ফেলবে। তখন নীলা 'মাইন্ড' করে বসলে বন্ধুত্বটাও যাবে। আম-ছালা দুটোই যাওয়ার থেকে ছালা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকাই ভাল।



নীলার হোস্টেল এসে গেছে। সিএনজি থেকে ব্যাগ নামিয়ে ভাড়া মিটিয়ে দিল মুহিত।

-'কিরে, তুই ওরকম অপরাধী অপরাধী মুখ করে আছিস্ কেন ?'

-'নীলা আমি ইচ্ছে করে দেরী করি নি রে, আসলে হয়েছে কি...'

-' তুই এত ভালো কেন রে মুহিত ? আমার এখন কান্না পাচ্ছে, তোকে এত রাতে ঘুম থেকে ডেকে তুলে এনে কত্তগুলো বকাবকি করলাম, তারপরও তুই এমন ভাবে কথা বলছিস্ যেন অনেক বড় অন্যায় করে ফেলেছিস্! স্যরি বলার কথা আমার, কারণ আমি আবিরের উপর রাগ করে সেই রাগ তোর উপর ঝেড়েছি, কিন্তু আমি স্যরি বলছি না কারণ তুই আমার বন্ধু। বন্ধুকে স্যরি বলতে নেই।'

-সত্যি বলছিস্ তো ?

-সত্যি, সত্যি, সত্যি! এবার তোর ট্রেড মার্ক হাসিটা দে তো, হাসলে তোকে অনেক কিউট লাগে।'

মুহিত হাসির বদলে লজ্জায় চোখমুখ লাল করে ফেলল। নীলা এই কথাটা প্রায়ই বলে। আর প্রতিবার ও মেয়েদের মত লজ্জায় লাল হয়ে যায়, ছেলেমানুষ লজ্জা পেয়ে মেয়েদের মত গাল লাল করবে, এইটা আরো লজ্জার বিষয়। মুহিতের তখন মাটির সাথে মিশে যেতে ইচ্ছা করে। ও জানে না, নীলা এটা ইচ্ছা করেই করে। কারণ লজ্জা পেলেই মুহিতকে সবচেয়ে বেশি সুন্দর লাগে।

-আচ্ছা তোর কি মনে হয় ? আবির অসুস্থ ছিল ?

- না থাকলে তোকে শুধুশুধু মিথ্যা কথা বলবে কেন ?

-বলবে, আবির প্রচুর মিথ্যা কথা বলে, ও ঘুমাচ্ছিল। ওর কাছে আমার চেয়ে ঘুমটাই বড়। তোর কি মনে হয়, আবির আমাকে সত্যি সত্যি ভালোবাসে ?

-হ্যা বাসে তো, অনেক ভালোবাসে।

-তুই কি করে বুঝলি ?

-কারণ, তোর মত মেয়ে কে কেউ ভালোবাসবে না, এটা সম্ভব না।

-তাই ? তাহলে তুইও কি আমাকে ভালোবাসিস্ ?



মুহিতের হৃত্‍-পিন্ড কিছুক্ষণের জন্য বন্ধ হয়ে গেল। নীলার চোখের দিকে তাকালো ও। ওর চোখের দিকে নিঃষ্পলক চোখে তাকিয়ে আছে নীলা। নীলার চোখের ভাষা পড়ার চেষ্টা করছে মুহিত, কিন্তু সেটা কি এতই সোজা ?

হঠাত্‍ খিলখিল করে হেসে উঠল নীলা।

-আরে, তুই এত সিরিয়াস হয়ে গেলি কেন ? এমনি 'ফান' করছিলাম। যা, বাড়ি যা, অনেক রাত হয়েছে, খালাম্মা চিন্তা করবেন।'

বলেই গেটের দিকে হাটা ধরল নীলা। মুহিতের জন্য ওর কষ্ট হয়, প্রচন্ড কষ্ট।



ল্যম্পপোষ্টের আলোয় ফাঁকা রাস্তা ধরে হাটছে মুহিত। জ্বর আরো বেড়েছে, বাড়ুক। প্রচন্ড জ্বরে মানুষ প্রিয়জনের নাম ডাকে। আজ মুহিত ঢাকার ফাঁকা রাস্তায় শুয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে চিত্‍কার করে ডাকবে, নীলা! নীলা! নীলা!

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.