নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

স্বপ্ন দেখি। দেখতে ভালোই লাগে... ফিকশন্ ফ্যান্টাসি ।

জীবণের অনুভূতি গুলো সব ছোটগল্পের মত । শেষ হইয়াও হয় না শেষ । পূর্ণতারও কিছু অপূর্ণতা থেকে যায় ।

তোহা ভাই

তোহা ভাই › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাবা-মা ও সন্তান সম্পর্ক

২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:১২

সুমনা বেগম পেছন থেকে এসে খপ্ করে মেয়ের হাত ধরে ফেলেছেন। তার ধারণা ছিল মেয়ে সামনে বই মেলে ধরে মোবাইলে কিছু একটা করছে। কিন্তু দেখা গেল পরীর হাতে মোবাইল নাই। সে সাদা কাগজে কিছু একটা লিখছিল, তার পায়ের শব্দে তড়িঘড়ি করে লুকাতে চেষ্টা করেও সফল হতে পারেনি। মনে মনে নিজের পিঠ নিজেই চাপড়ে দিলেন সুমনা বেগম। এখনকার যুগের ছেলে-মেয়েরা বুদ্ধিতে অনেক এগিয়ে, সহজে এদের অপকর্ম ধরা যায় না।

মাস তিনেক আগের ঘটনা, পরীর হাতে সদ্য মোবাইল ফোন কিনে দেয়া হয়েছে। কাজটা সুমনা বেগমের মতের বাইরেই করা হয়েছিল। এই বয়সী মেয়ের হাতে মোবাইল ফোন কিনে দেওয়ার পক্ষপাতী ছিলেন না তিনি। কিন্তু স্বামীর মুখের উপর কোন কথাও বলতে পারেন না। প্রথম দিন থেকেই তাই তক্কে তক্কে ছিলেন তিনি, ফুসুর ফাসুর করলেই মেয়েকে ধরে ফেলবেন। ফুসুর ফাসুরের শব্দও কানে গেল তার, কিন্তু ঐ পর্যন্তই। রুমের বাইরে থেকে ফিসফিস শব্দ শুনে রুমে ঢুকে দেখেন মেয়ে অত্যন্ত মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করছে!

মেয়ে যে চুল ছেড়ে 'এয়ার ফোন' কানে দিয়ে কথা বলে এইটা বুঝতে মাস খানেক লেগেছিল সুমনা বেগমের।



-এইটা কি ?



-এইটা কি সেটা তুমি দেখতে পাচ্ছো না ?



-একদম দেমাগ দেখাবি না! ফাজিল মেয়ে, পড়াশোনা বাদ দিয়ে প্রেমপত্র লেখা হচ্ছে, না ? আজ তোর বাবা আসুক, তারপর মজা দেখবি!



-বাবা না আসলেও চলবে মা। এই চিঠি তোমাকে উদ্দেশ্য করে লেখা হয়েছে, বাবাকে নয়। ভালো করে পড়।



দুমড়ানো কাগজটা খুলে পড়তে শুরু করে বেশ হোচট খেলেন সুমনা বেগম। গোটা কাগজ জুড়ে বড় একটা লাভ চিহ্ন এঁকে, তার ভেতরে লেখা হয়েছে এভাবে....



"আমার পরম আদরের সন্দেহবতী আম্মু, খুব অবাক হয়েছ তাই না? ভেবেছিলে এটা কোন প্রেমপত্র হবে। তোমার জ্ঞাতার্থে প্রথমেই জানিয়ে রাখি, আমি প্রেম করিনা। যদি কখনো কারো প্রেমে পড়ি, তোমাকেই প্রথম জানাব কথা দিলাম।

তুমি আমাকে খুব খারাপ মেয়ে ভাবো, তাই না আম্মু ? খারাপ না ভাবলে আমাকে এত সন্দেহ করতে না। তুমি না আমার 'মা'? তুমিই যদি আমাকে ভালোকরে না চিন তাহলে চিনবে কে? তুমিই যদি আমাকে প্রতি পদে পদে সন্দেহ কর, তাহলে আমাকে বিশ্বাস করবে কে?...."



আর পড়তে পারলেন না সুমনা বেগম, চোখে পানি এসে গেছে তার। মেয়ের সামনে কেঁদে ফেললে দুর্বলতা প্রকাশ করা হয়। অন্য কোন সময় মেয়েকে রসিকতা করার অপরাধে কিছু কঠিন কথা শুনিয়ে দিতেন, কিন্তু আজ পারছেন না। বুকের ভেতরটায় হাহাকার করছে সুমনা বেগমের।



-মারে, তোর এই বয়সটা খুব খারাপ। এই বয়সে মেয়েরা খুব বড় বড় ভুল করে। তুই যেন কোন ভুল না করিস্ এজন্যেই আমি তোকে চোখে চোখে রাখি। তোর ভালোর জন্যেই করি।



-কিন্তু কোনটা ভুল আর কোনটা ঠিক সেটা না শিখিয়ে শুধু ভুলগুলো ধরা কি ঠিক? আমাকে ভুল গুলো শিখিয়ে দাও, দেখবে আমি কোন ভুল করবো না।



অবাক হয়ে খেয়াল করলেন সুমনা বেগম, তার মেয়েটা আর ছোট নেই। এত সুন্দর করে গুছিয়ে কথা বলা অপরিপক্ক মেয়ের কাজ না। সেদিনের কোলথেকে নামতে না চাওয়া ছোট্ট মেয়েটা আজ কৈশোর পেরিয়ে যুবতী।

দুহাত বাড়িয়ে মেয়েকে বুকে টেনে নিলেন সুমনা বেগম।



-তোকে আজ একটা গল্প শোনাব আয়, আমার ভুলের গল্প। চুপ করে শুনবি, একদম হাসবি না কিন্তু!



-আচ্ছা হাসবো না, বলো।



মিস্ত্রীপাড়া বড় মসজিদের পাশ দিয়ে যে গলিটা দক্ষিণে গেছে, সেই গলি দিয়ে কিছুদুর এগিয়ে গেলে পথচারী কেউ হয়ত দোতালার জানালা থেকে ভেসে আসা দুটি সুখী কন্ঠের দম বন্ধ হয়ে আসা খিলখিল হাসি শুনতে পাবেন। কিন্তু, পথচারী জানবেন না ওরা বান্ধবী নয়, 'মা' ও 'মেয়ে' ।

###



উপরের অংশটি নিছক কল্পনা। তবে এর বাস্তবতা আছে। আমাদের সমাজে বাবা-মার সাথে সন্তানের সম্পর্ক অনেকটা শুধুই শাসনের। প্রশ্ন জাগে, এমনটা কবে হবে যে ছেলে বাড়ি ফিরে মাথা চুলকাতে চুলকাতে বাবাকে বলছে,

-'বাবা, বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে আজ সিগারেট টানলাম!'



-তাই নাকি ? তো কেমন লাগলো ?



-ওয়াক থু! কী বিচ্ছিরি গন্ধ! বমি আসার উপদ্রক হয়েছিল!



-তাহলে তো আমার নতুন করে বলার কিছু নাই, বুঝতেই পারছিস্ কেন এই জিনিসটা খেতে তোকে নিষেধ করেছিলাম।



অথবা, প্রথম প্রেমের প্রস্তাব পেয়ে মেয়ে এসে মাকে বলছে,

-আম্মু, জানো না আজকে কি হয়েছে, একটা ছেলে আমাকে প্রপোজ করে বসল!



-তাই! তো ছেলেটা কেমন রে? দেখতে শুনতে রাজপুত্র তো ?



-আম্মু! তুমি না!



-আচ্ছা শোন্, তোর যদি ছেলেটাকে পছন্দ হয় তো একদিন বাসায় নিয়ে আয়। আর মনে আছে তো কি বলেছিলাম, সে যদি কোন বন্ধুর বাসায় বা মেসে ডাকে তো অবশ্যই না করে দিবি। বুঝতে হবে মতলব ভালো না!



-তুমি একদম টেনশন করো নাতো আম্মু, তোমাকে না জানিয়ে আমি কিছু করি ?





বাস্তবতা হল শত শাসন, সতর্কতা, মারপিট, বকুনির থোড়াই কেয়ার করে এদেশের তরুণ-তরুণীরা বন্ধু-বান্ধবীর পাল্লায় পড়ে বিপথগামী হচ্ছে, ভুল করছে, ভুলের মাসূল দিতে গিয়ে জীবণ সম্পর্কে তীক্ত অভিজ্ঞতার স্বীকার হচ্ছে, নেশা করছে, আত্মহত্যা করছে!

তাহলে কেন নয় বাবা-মা'র সাথে সন্তানের একটি মধুর বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক?

যেখানে বাবা-মা'র ছায়ায় থেকে সন্তান জীবণ কে বুঝতে শিখবে, পথ চলতে শিখবে। এই সম্পর্ক সৃষ্টির দায়িত্ব কিন্তু বাবা-মা'র। কিন্তু আমাদের অতি রক্ষণশীল এই সমাজের বাবা-মা দের এই কথা বোঝাবে কে ?

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.