![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সম্প্রতি লেখক শহরের কোলাহল ছেড়ে যতটুকু পারা যায় গ্রাম আর প্রকৃতির কাছাকাছি থাকতে চান। বিকেলে মাঠে ঘুড়ি উড়িয়ে শৈশবে ফিরে যাওয়া, সন্ধ্যায় ঝিঁঝিঁপোকার দল বুকে নিয়ে এক টুকরো নীরবতা খুঁজে পাওয়া — এ যেন তার নতুন জীবনের ছোট ছোট জয়। আজকের দুনিয়ার অস্থিরতা আর যুদ্ধের গন্ধের ভেতরেও তিনি স্বপ্ন দেখেন গ্রামের শান্ত আকাশ আর মাটির ঘ্রাণে ভিজে থাকার। শহরের ব্যস্ত দালান থেকে পালিয়ে মাটির কাছে ফেরার এ চেষ্টাই তার সবচেয়ে বড় আরাধ্য।
ইতিহাসের সবচেয়ে গৌরবময় ও ঐতিহ্যবাহী সভ্যতা হিসেবে ইসলামী উম্মাহ এক সময় বিশ্বের রাজনীতি, জ্ঞান, অর্থনীতি ও সংস্কৃতির কেন্দ্রবিন্দু ছিল। কিন্তু আজ আমরা গভীর সংকটে—ভৌগোলিকভাবে বিচ্ছিন্ন, রাজনৈতিকভাবে দুর্বল, ধর্মীয়ভাবে বিভক্ত এবং মানসিকভাবে বিভ্রান্ত। শুধু বাইরের শত্রু নয়, মুসলিম বিশ্ব এখন ভেতর থেকেই ভেঙে পড়ছে—শিয়া-সুন্নি বিভাজন, মতবিরোধ, হিংসা, ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা এবং রাজনৈতিক স্বার্থপরতা আমাদের মূল শক্তিকে ধ্বংস করছে। এর ফলে মুসলিম পরিচয় আজ প্রশ্নের মুখে, আর উম্মাহর ঐক্য আজ ইতিহাসের সবচেয়ে জরুরি আলোচ্য বিষয়।
এ অবস্থায় প্রশ্ন আসে—এই বিভাজনের কারণ কী? আমরা কোথায় ভুল করছি? কিভাবে আবার ঐক্য গড়ে তোলা সম্ভব?
বিশ্বব্যাপী মুসলিম জাতির ওপর যে সাম্রাজ্যবাদী শক্তি, আগ্রাসী কূটনীতি, ও অর্থনৈতিক দাসত্ব চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে, তা মোকাবেলায় মুসলিম উম্মাহর ঐক্য এখন সময়ের দাবি।
এই প্রবন্ধে আমরা খুঁজে দেখবো—
-মুসলিমদের বিভক্তির ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট,
-আধুনিক সময়ে এই বিভাজনের পরিণতি,
-এবং কিভাবে ইরানের মতো দেশগুলো আদর্শ হয়ে দাঁড়িয়ে ঐক্যের পথে দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে।
এটি শুধুমাত্র একটি বিশ্লেষণ নয়—এটি আমাদের আত্মজিজ্ঞাসার ডাক:
“আমরা কী শুধুই নামমাত্র মুসলিম, নাকি সত্যিকারের এক উম্মাহ হতে পারি?”
বিভাজনের লুকানো ইতিহাস
হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর মৃত্যুর পর ৬৩২ খ্রি. রাজনৈতিক উত্তরাধিকার নিয়ে প্রথমবার মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভাজনের সূত্রপাত হয়। এই সংঘর্ষেই আবু বকরকে খলিফা হিসেবে গ্রহণ করে যারা, তারা পরবর্তীতে ‘সুন্নি’ নামে পরিচিত হয়, আর ঐতিহাসিকভাবে খলিফার রক্তাভিষিক্ত উত্তরাধিকার দাবি করে আলী (রা.)-এর পক্ষেররা ‘শিয়া’ নামে পরিচিতি লাভ করে । এর পর ৬৮০ খ্রিঃ-এ কারবালার ঘটনায় হুসেইন (রা.)-এর শহীদত্ব শিয়াদের মাঝে গভীর ক্ষত সৃষ্টি করে। এটি একটি ঘটনামূলক বিভাজন নয়—ব্যবস্থাগত এবং সাংগঠনিক বিভাজনের সূচনা ।
মধ্যযুগে সাহাবাদের সংঘাত-কাহিনী, ওমায়্যদ ও আব্বাসি আমলে শিয়াদের প্রান্তিকীকরণ, এবং রাজনৈতিকভাবে শিয়াদের বাৎসরিক নীরবতা—সবই বিভাজনের প্রক্রিয়ায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে । পরবর্তী ১৫০০ বছর আমলে শিয়া ও সুন্নিদের মাঝে বিভাজনের দাগ রাজনৈতিক ও ভৌগোলিকভাবে নিয়মিত পরিগ্রহ হয়।
ইসলামের ইতিহাসে খলিফাতুল রাশিদিনদের (বিশেষ করে আবু বকর, ওমর, উসমান ও আলী) নিয়ে মতবিরোধ থেকেই মুসলিম উম্মাহর মধ্যে শিয়া-সুন্নি বিভক্তির সূচনা ঘটে। আবু বকর (রা.)-কে প্রথম খলিফা হিসেবে গ্রহণ করার ক্ষেত্রে সুন্নিরা ঐক্যবদ্ধ হলেও, শিয়ারা মনে করেন, রাসূল (সা.)-এর পরপরই আলী (আ.)-ই প্রকৃত খলিফা হওয়ার অধিকারী ছিলেন। এখান থেকেই ব্যাখ্যার পার্থক্য গড়ে উঠে এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা আরও দৃঢ় হয়। পরবর্তীতে ইসলামিক আইনের চারটি মাযহাব (হানাফি, মালিকি, শাফিঈ ও হাম্বলি) সুন্নি ধারার মধ্যে বিকশিত হয়, যেখানে মৌলিক কিছু প্রশ্নে মতপার্থক্য থাকলেও মূল আকীদায় ঐক্য বজায় থাকে। শিয়া ও সুন্নি উভয় পক্ষই সাহাবাদের মর্যাদা নিয়ে ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে—সুন্নিরা সকল সাহাবার প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকলেও, শিয়ারা নির্দিষ্ট কিছু সাহাবাকে সমালোচনার চোখে দেখে। রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও ধর্মীয় কর্তৃত্ব নিয়ে সুন্নিরা সাধারণত জামা’আতের সিদ্ধান্তকে গুরুত্ব দিয়ে থাকে, যেখানে নেতৃত্ব মূলত পরামর্শভিত্তিক, আর শিয়ারা ‘ইমামত’ ধারণায় বিশ্বাস করে—যেখানে ইমামদের নিযুক্তি ও নেতৃত্ব ঐশী বিধানে নির্ধারিত বলে মনে করা হয়। এই সকল মতভেদ মূলত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে জন্ম নিলেও পরবর্তীতে তা ধর্মীয় রূপ পায় এবং মুসলিম উম্মাহর ঐক্যের প্রধান অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়।
Subcontinent এবং আধুনিক যুগে বিভাজন
ব্রিটিশ রাজার “Divide and Rule” নীতিতে সংক্ষিপ্তিত উপ-নিবিশিষ্ট অঞ্চলেও—পশ্চিম পাকিস্তান ও পূর্ব পাকিস্তান (বর্তমান বাংলাদেশের সংলগ্ন)—এ জাতীয় বিভাজনের নিদর্শন লক্ষ্য করা যায়। ধর্মীয় পরিচয় ও পার্থক্যকে তীব্র করে, পাকিস্তান নামে বিভক্ত হতে সাহায্য করে। আফমাদিয়া, বাহাই, চার তরিকা (তাবলিগি, সুন্নি, হাম্বলী, ইসমাঈলি ইত্যাদি) —এগুলোতে ধর্মীয় বিতর্ক ও ভিন্নতা তুলে ধরার নামে অনেক বিভাজন ঘটেছে, যা মুসলিম ঐক্য ভেঙে দিয়েছে।
সাম্রাজ্যবাদ ও বিভাজনের ষড়যন্ত্র
১৮ থেকে ২০ শতকের মধ্যবর্তী সময়ে পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলো—বিশেষ করে ব্রিটিশ, ফরাসি ও পরে আমেরিকানরা—ইসলামি বিশ্বে বিভাজনের বীজ বপনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তারা কৌশলে শিয়া শাসকদের “আদালতহীন” বা “বৈদেশিক” হিসেবে চিহ্নিত করে মুসলিম জনসাধারণের মাঝে বিভ্রান্তি ছড়ায়, যেন সুন্নি সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলে শিয়াদের প্রতি অবিশ্বাস ও বিরূপতা জন্মায়। এর মাধ্যমে তারা মুসলিমদের ঐক্যমতের ভিত্তি দুর্বল করে তোলে এবং নিজেদের রাজনৈতিক আধিপত্য কায়েম করে। মধ্যপ্রাচ্য, উপমহাদেশ কিংবা আফ্রিকার অনেক অংশেই তারা ধর্মীয় বিভাজনকে একটি কার্যকর রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছে—একদিকে মুসলিমদের মধ্যে মতপার্থক্যকে উসকে দিয়ে, অন্যদিকে নিজেদের সামরিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক প্রভাব বিস্তার করেছে। এই কৌশলিক বিভাজনের ফলে মুসলিম বিশ্ব ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়েছে এবং আজও সেই প্রভাব অনেকাংশে বিদ্যমান।
সৌদি ও ইরান: আধিপত্যের রাজনীতি
১৯৭৯ সালে ইরানে ইসলামি বিপ্লবের মাধ্যমে আয়াতুল্লাহ খোমেনির নেতৃত্বে একটি শিয়া-ভিত্তিক ইসলামি রাষ্ট্রব্যবস্থার সূচনা হয়, যা পুরো মুসলিম বিশ্বে এক নতুন ধারা তৈরি করে। বিপ্লবের পর ইরান শুধু আভ্যন্তরীণভাবে নয়, বরং আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক পর্যায়ে একটি রাজনৈতিক আদর্শ প্রচার করতে শুরু করে—যেখানে ইসলামি মূল্যবোধ, আত্মনির্ভরতা ও সাম্রাজ্যবাদ বিরোধিতা ছিল মূল বার্তা। এই আদর্শিক ও রাজনৈতিক উত্থান সৌদি আরবের জন্য হুমকি হিসেবে দেখা দেয়, কারণ তারা ওয়াহাবি মতাদর্শ-ভিত্তিক সুন্নি নেতৃত্বের দাবিদার। ফলে, ইরান ও সৌদি আরবের মধ্যে একপ্রকার ইসলামি নেতৃত্বের প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুরু হয়, যা ধীরে ধীরে আঞ্চলিক সংঘাত, পরোক্ষ যুদ্ধ ও কূটনৈতিক বৈরিতার রূপ নেয়। এই বিভাজন শুধু দুই রাষ্ট্রের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি, বরং গোটা মুসলিম বিশ্বকে দুই ভাগে ভাগ করে ফেলে, যেখানে মুসলিম ঐক্য ও ভ্রাতৃত্ববোধ দিন দিন দুর্বল হয়ে পড়েছে।
ইরান ও খোমেনীর মডেল: প্রতিরোধের দর্শন ও ভবিষ্যতের ভয়াবহ সমীকরণ
ইরান ও আয়াতুল্লাহ খোমেনীর মডেল শুধু একটি প্রতিরোধের কৌশল নয়, বরং গোটা মুসলিম বিশ্বের সামনে একটি ঐক্য, আদর্শ ও নেতৃত্বের বাস্তব উদাহরণ। সাম্প্রতিক ইরান–ইসরায়েল সংঘাতের পর আমেরিকার মধ্যস্থতায় সাময়িক যুদ্ধবিরতি দেখা গেলেও, সেটি স্থায়ী শান্তির কোনো লক্ষণ নয়—বরং ছায়াযুদ্ধের নতুন কৌশলের সূচনা মাত্র। ইরান স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে, শুধুমাত্র ক্ষেপণাস্ত্র বা ড্রোন হামলা নয়, বরং আঞ্চলিক নেতৃত্ব ও আদর্শিক প্রতিরোধই তাদের মূল লক্ষ্য। ইসরায়েলের বিরুদ্ধে শুধু রণকৌশলে নয়, দৃষ্টিভঙ্গিতেও ইরান আজ মুসলিম জগতের অনন্য প্রতিচ্ছবি। ভবিষ্যতের সম্ভাব্য পরিস্থিতি অত্যন্ত জটিল ও কূটনৈতিক ভারসাম্যে ভরপুর।
ইরান একদিকে আঞ্চলিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে চায়, যেখানে শিয়া–সুন্নি বিভক্তির উর্ধ্বে উঠে মুসলিম উম্মাহ এক প্ল্যাটফর্মে দাঁড়াতে পারে। অন্যদিকে, পারমাণবিক সক্ষমতা অর্জন এবং রাশিয়া-চীনের মতো শক্তিধর মিত্রদের সমর্থন নিয়ে তারা সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলোর সামনে একটি কঠিন চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিতে চায়। পশ্চিমা শক্তির আধিপত্যে ঘেরা এই বিশ্বে ইরান যেমন কৌশলে এগিয়ে যাচ্ছে, তেমনই তারা soft power বা কূটনীতির মাধ্যমেও নতুন প্রজন্মের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করছে। ইরানের এই প্রতিরোধ-দর্শনের পেছনে আছে ইতিহাসের এক দীর্ঘ সংগ্রাম, যার শিকড় ১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবে প্রোথিত। শুরু হয়েছে নেতৃত্ব, তথ্য, আদর্শ আর কৌশলের এক নতুন লড়াই—যেখানে ইরান শুধু একটি রাষ্ট্র নয়, বরং মুসলিম উম্মাহর জন্য প্রতিরোধের প্রতীক। যদি মুসলিম বিশ্ব এই মডেল থেকে শিক্ষা নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে যায়, তবে সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলোর জন্য এটি হবে এক স্থায়ী দুঃস্বপ্ন।
উপসংহার
ভবিষ্যৎ জরুরি প্রশ্ন হচ্ছে—এই বিভক্ত, দুর্বল ও কৌশলে বিভ্রান্ত মুসলিম উম্মাহ কবে বুঝবে যে, তাদের সম্মিলিত ঐক্যই একমাত্র টিকে থাকার পথ? কবে মুসলিম রাষ্ট্রগুলো বুঝবে, সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলো কখনোই তাদের বন্ধু নয়, বরং ধর্ম, ভূখণ্ড ও সম্পদ লুটের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ? শিয়া-সুন্নি, আহমদিয়া, সালাফি বা চার মাজহাব—এসব মতভেদ আল্লাহর কাছে নয়, আমাদের মধ্যে বিভাজন তৈরি করে দেয় শুধুমাত্র শত্রুর সুবিধার জন্য। ইরান ও খোমেনীর মডেল দেখিয়ে দিয়েছে—ঐক্য, আদর্শ আর আত্মত্যাগ থাকলে বিশ্বজুড়ে সবচেয়ে শক্তিশালী বলেও কাঁপিয়ে দেওয়া যায়। তাই উপসংহার ও সমাধান একটাই—সমস্ত মুসলিম জাতিকে শত্রুর ছক বুঝে নিজেদের দ্বন্দ্ব দূরে রেখে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আমাদের উচিত একে অপরকে কাফের বলার চেয়ে, সম্মিলিতভাবে অন্যায়-অবিচার ও আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা। আজ ইরান একা লড়ছে, কিন্তু কাল একে একে আমাদের সবার দরজায়ও যুদ্ধ কড়া নাড়বে—তখন ঐক্য ছাড়া কোনো রক্ষা নেই। কাজেই এখনই সময়, মুসলিম বিশ্বের রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও সাধারণ মানুষ এক কণ্ঠে বলুক—একতা, ন্যায় ও প্রতিরোধই আমাদের মুক্তির পথ।
২৬ শে জুন, ২০২৫ বিকাল ৩:৪৭
সাফায়েতুল ইসলাম বলেছেন: আপনার মন্তব্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও বাস্তবসম্মত—হ্যাঁ, শিয়া ও সুন্নি বিভাজন এবং পশ্চিমা ও রাশিয়া/চীন প্রভাবিত ব্লকের প্রতিযোগিতা মধ্যপ্রাচ্যের ঐক্যের পথে সবচেয়ে বড় বাধা। তবে যদি আমরা ইতিহাস থেকে শিখি, তাহলে বুঝি যে স্থায়ী সংঘাতের কোনো শেষ নেই—শুধু ধ্বংস, দুর্ভোগ ও মুসলিম জাতির পরিচয়ের অবমূল্যায়ন। একে ‘অসম্ভব’ হিসেবে মেনে নিলে আমরা সাম্রাজ্যবাদের নকশায় স্বেচ্ছায় জড়িয়ে পড়ি। অথচ বিকল্প পথ এখনো আছে—যদি মুসলিম রাষ্ট্রগুলো অন্তত ন্যূনতম নীতিগত ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারে: যেমন একে অপরের ধর্মীয় বিশ্বাসকে সম্মান করা, প্রক্সি যুদ্ধ বন্ধ করা, এবং একটি নিরপেক্ষ, ধর্মনিরপেক্ষ আরব-মুসলিম সংস্থা গঠন করে সেখানে শান্তি আলোচনা শুরু করা। যেমন ইউরোপ দুই বিশ্বযুদ্ধ পেরিয়ে আজ একটি ইউনিয়ন গঠন করেছে, মুসলিম বিশ্ব কেন পারবে না? যদি এই বিভাজন চলতেই থাকে, তাহলে হয়ত একদিন আমরা ইতিহাসের পাতায় খুঁজে দেখবো—‘‘মুসলিম বিশ্ব’’ নামে আর কিছু নেই। কাজেই, জটিলতা থাকলেও নতুন চেষ্টার দরজা খোলা রাখা উচিত—কারণ অস্তিত্ব রক্ষা আজ আমাদের ঈমান ও মানবতার জন্য জরুরি।
২| ২৬ শে জুন, ২০২৫ বিকাল ৩:১৬
দেশ প্রেমিক বাঙালী বলেছেন: মুসলিমদের মধ্যে ঐক্য নেই এবং কোন দিন হবে বলেও মনে করিনা। ঐক্য ছাড়া প্রতিপদে পদে মার খেতে হবে।
২৬ শে জুন, ২০২৫ বিকাল ৩:৫০
সাফায়েতুল ইসলাম বলেছেন: আপনার কথায় একটা তিক্ত বাস্তবের প্রতিফলন আছে—হ্যাঁ, মুসলিমদের মধ্যে বর্তমানে ঐক্যের অভাব ভয়ানকভাবে স্পষ্ট, এবং এটা আমাদের বারবার পরাজয়ের কারণও বটে। তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি, যেকোনো পরিবর্তনের শুরু হয় "অসম্ভব" শব্দটিকে চ্যালেঞ্জ করেই। অতীতে মুসলিম উম্মাহ যখন এক ছিল—চিন্তা-চেতনায়, ন্যায়ের পক্ষে, মানবতার পক্ষে—তখনই ইসলাম বিস্তৃত হয়েছিল শান্তি ও জ্ঞানের মাধ্যমে, সাম্রাজ্যবাদীদের মাথা নিচু হয়েছিল সেই ঐক্য ও আদর্শের সামনে।
আজ আমরা যদি বলি “কোনদিন ঐক্য হবে না,” তবে আমরা নিজেরাই আশার দরজা বন্ধ করছি, আর সাম্রাজ্যবাদী শক্তির ষড়যন্ত্র সফল করে দিচ্ছি। সত্যি, একসাথে আসা কঠিন—শিয়া-সুন্নি, আরব-আজমি, মধ্যপ্রাচ্য-দক্ষিণ এশিয়া—সব জায়গায় বিভাজন; কিন্তু প্রশ্ন হলো, এই বিভাজনেই কি আমরা চিরকাল মার খেতে রাজি? না কি ধীরে ধীরে হলেও ভাবতে পারি, অন্তত কিছু সাধারণ ভিত্তির উপর একতাবদ্ধ হওয়া যায়?
ঐক্য রাতারাতি আসে না, কিন্তু তা সম্ভব — যদি আমরা আন্তরিকভাবে তা চাই, ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিই এবং অন্তত ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য কিছু ভালো রেখে যেতে চাই।
৩| ২৬ শে জুন, ২০২৫ বিকাল ৪:০৩
দেশ প্রেমিক বাঙালী বলেছেন: চমৎকার প্রতিমন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
ভালো থাকুন নিরন্তর।
৪| ২৬ শে জুন, ২০২৫ রাত ৯:১৮
নতুন নকিব বলেছেন:
বিভেদের বেড়াজাল ছিন্ন করে মুসলিম উম্মাহর ঐক্য আজ অপরিহার্য্য হয়ে উঠেছে। এর বিকল্প কিছুই নেই।
২৭ শে জুন, ২০২৫ দুপুর ১২:০৯
সাফায়েতুল ইসলাম বলেছেন: আপনার কথাটি হৃদয় থেকে উঠে এসেছে—একদম সঠিক বলেছেন। আজ বিভেদ, বিদ্বেষ ও সাম্রাজ্যবাদের ছায়া থেকে বেরিয়ে এসে মুসলিম উম্মাহর একতাই আমাদের টিকে থাকার একমাত্র পথ। আমার লেখার মূল উদ্দেশ্যও ছিল এই ঐক্যের ডাক তুলে ধরা—যেখানে শিয়া-সুন্নি নয়, বরং এক উম্মাহ হয়ে আমরা আল্লাহর পথে ঐক্যবদ্ধ হতে পারি। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন এই চেতনা বাস্তবায়নে।
৫| ২৭ শে জুন, ২০২৫ দুপুর ১২:৩৯
রাজীব নুর বলেছেন: মধ্যপাচ্যের সংকট আসলে কোনোদিন শেষ হবার নয়।
যখন মানুষ গুহায় ছিলো- তখন মানুষ মিলেমিশে থাকতো। কিন্তু সভ্যতা এগিয়ে গেছে কিন্তু মানুষ পিছিয়ে গেছে।
২৭ শে জুন, ২০২৫ বিকাল ৩:০৭
সাফায়েতুল ইসলাম বলেছেন: আপনার মন্তব্যটি খুবই গভীর এবং হতাশাজনক হলেও বাস্তবতার এক নির্মম প্রতিচ্ছবি তুলে ধরে।
হ্যাঁ, আমরা প্রযুক্তিতে, বিজ্ঞানে, আর বুদ্ধিবৃত্তিক উন্নয়নে অনেকদূর এগিয়ে গেছি — কিন্তু নৈতিকতা, সহমর্মিতা আর মানবিক বোধে যেন ক্রমেই পশ্চাৎমুখী হচ্ছি।
গুহাবাসী মানুষদের হাতে হয়তো অস্ত্র ছিল না, কিন্তু হৃদয়ে ছিল সহাবস্থানের সহজাত প্রবৃত্তি। আর আজ, তথাকথিত সভ্যতায় আমরা যখন মহাকাশে পৌঁছাই, তখনই একে অপরকে ধ্বংসে ব্যস্ত হই — জাতি, ধর্ম, মতবাদের নামে।
আমার বিশ্বাস, সভ্যতা শুধু প্রযুক্তি বা স্থাপত্যের নাম নয়, বরং এটি একটি মনোভাব — যেখানে নম্রতা, সহনশীলতা, উদারতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধা সবচেয়ে বড় সূচক।
যে সমাজ যত বেশি ‘উন্নত’, সেই সমাজকে তত বেশি হাস্যোজ্জ্বল, অতিথিপরায়ণ ও মানবিক হওয়া উচিত।
আজ আমাদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন আত্ম উপলব্ধি ও সম্মিলিত বিবেকের জাগরণ। মুসলিম সমাজ হোক বা বৈশ্বিক মানবতা — ঐক্য, বিনয়, ও মানবিক গুণ ছাড়া টিকে থাকার আর কোনো পথ নেই।
আসুন, আমরা শুধু অন্যদের দোষ না খুঁজি — নিজেদের ভেতরেই নতুন একটি মানবিক সভ্যতার বীজ বপন করি।
©somewhere in net ltd.
১|
২৬ শে জুন, ২০২৫ বিকাল ৩:১২
সৈয়দ কুতুব বলেছেন: পশ্চিমা-সমর্থিত সুন্নি মুসলিম দেশ ও রাশিয়া-চীন-সমর্থিত শিয়া ইরানের মধ্যে ঐক্য সম্ভব?
ইরান ও সৌদি আরবের মধ্যে প্রক্সি যুদ্ধ (ইয়েমেন, সিরিয়া, লেবাননে) চলছে। সুন্নি নেতৃত্বাধীন দেশগুলি (সৌদি, UAE) ইরানকে অস্তিত্বের হুমকি মনে করে।পশ্চিমা শক্তি ইরানের পরমাণু কর্মসূচি ও প্রভাব বিস্তার রোধে সুন্নি দেশগুলিকে অস্ত্র দেয়।ইয়েমেনে যুদ্ধবিরতি টিকেনি । অস্থায়ী সমঝোতা সম্ভব, কিন্তু স্থায়ী ঐক্য অসম্ভব যতক্ষণ না শিয়া-সুন্নি দ্বন্দ্ব ও পশ্চিমা-রাশিয়া/চীন প্রতিযোগিতা থাকবে। মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতা চাইলে উভয় পক্ষকে প্রক্সি যুদ্ধ বন্ধ করতে হবে।