নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অমরত্বের প্রত্যাশাহীন এই শহরে থেকে যাক কিছু খুচরো কথা...

পদ্মপুকুর

একজন শভেনিস্ট ও স্মৃতিকাতর মানুষ

পদ্মপুকুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

সড়ক আইন যখন হেলমেটের উপর আছড়ে পড়লো...

০৭ ই জানুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৪:০৭



ঢাকার স্কুল শিক্ষার্থী দিয়া এবং করিম সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাইয়াছিলো গতবছরের ২৬ জুলাই। তাহারও দু’তিন মাস পূর্বে সড়কে শকটের গতি প্রতিযোগিতায় হস্ত বিসর্জন দেয়া তীতুমীর কলেজের পরিশ্রমী ছাত্র রাজীব হাসপাতালে স্বজ্ঞানে ফিরিলে হস্তবিহীন অবস্থায় নিজের এবং কনিষ্ঠ ভ্রাতার অনিশ্চিত ভবিষ্যত চিন্তা করিয়া অত্যন্ত রূঢ় প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করিয়াছিলেন। তাহার কপাল প্রসন্ন (!) বলিতে হইবে যে হস্তবিহীন অবস্থায় এই বিষাদময় পৃথিবীতে তাহাকে বাঁচিয়া থাকিতে হয় নাই।

ইহারও পূর্বে বা পরবর্তীকালে এই দেশের সড়কগুলোতে মানুষসহ প্রয়োজনীয়-অপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন প্রাণী নিজেদের হস্ত, পদ এমনকি জীবন পর্যন্ত হারাইয়াছে। কিন্তু তাহাতে এই দেশে ইতরবিশেষ কোনো প্রতিক্রিয়া হইয়াছিলো তাহা বলা যাইবে না। কিন্তু অতিশয় বিস্ময়াভিভূত হইয়া সুবে বাংলার প্রজাসাধারণ লক্ষ করিলো যে দিয়া-করিমের মৃত্যুর পরে এক বিরাট বিদ্রোহ দানা বাঁধিয়া উঠিলো......

সেই বিদ্রোহ এক ঐতিহাসিক বিদ্রোহ। ইতিহাসের কোথাও উহা লিপিবদ্ধ ছিলো না। পাঠশালার অজাতশশ্রু শিশু-কিশোরবৃন্দ এক লহমায় এই রাজ্যের সড়কের যাবতীয় অনিয়ম দূরীভূত করিয়া সমস্ত স্থানে আইন শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত করিয়া ফেলিলো। তখন এক অভূতপূর্ব দৃশ্যের অবতারণা ঘটিলো; ইহার পূর্বে যাহা কোনো চক্ষু প্রত্যক্ষ করেনি, কোনো কর্ণ শোনেনি।

এমতাবস্থায় যখন এই জনপদের রাজা বাদশাহ নামদাররা দেখিলেন যে এই গোফবিহীন বিচ্ছুবাহিনীর কাছে তাহাদের ইজ্জত ভুলুন্ঠিত হওয়ার উপক্রম হইয়াছে, তখন তাহারা রাজ্যময় ঢেড়া পিটিয়ে নব নব কানুন ফর্মানোর ঘোষণা দিলেন। তদুপরি যখন এই বিদ্রোহ দমন সম্ভব হইতেছিলো না, তখন অগত্যা তাহারা তাহাদের চৌকষ বাহিনীকে যুদ্ধে নামিয়ে দিতে প্রবৃত্ত হইলেন। এই চৌকষ বাহিনী রাত্রের কৃষ্ণপক্ষে মুখোশের আড়ালে মুখ ঢাকিয়া ক্ষুদ্রসৈনিকদিগকে বিদ্রোহ হইতে নিবৃত্ত করিতে বিপুল বিক্রমে আক্রমণ শুরু করিয়া জানমালের ক্ষতি সাধন করিতে লাগিলো।

অতপর বিদ্রোহ দমন হইলো বটে কিন্তু প্রজাসাধারণ ভাবিলো এইবার কিছু একটা না হইয়াই পারে না। সভাসদও নড়িয়া বসিলো। অতএব গণদাবীর মুখে নয়া কানুন ফর্মাইবার জন্য নয়া নয়া বিভিন্ন সভা গঠিত হইলো এবং সেই সভা মাসের পর মাস ব্যাপক শলা পরামর্শ করিয়া, রাজ কোষাগারের বিপুল অর্থ শ্রাদ্ধ শেষে একখান সড়ক আইন জারি করিলো। সুবা বাঙলার সকল সম্বাদপত্র উহাকে ফলাও করিয়া প্রচার করিলো। সে আইন লইয়া রাজপ্রতিনিধিবৃন্দ ধন্য ধন্য করিলেও কিছু বিতর্কও থাকিলো।

কিন্তু গোল বাধিল অন্যস্থানে। বাঙালা মুলুকের পাইক বরকন্দাজ বাহিনী ঘোষণা করিলো অক্ষণে নবরচিত কানুন প্রয়োগ করার যথেষ্ঠ সরঞ্জামাদি তাহাদিগের আওতায় নাই। অতএব ভবিষ্যতে কোনো এক ক্ষণে এই আইন কার্যকর করা হইবেক।

অতপর রাজ্য পূর্বের মতই চলিতে লাগিলো। বাদশাহ নামদার এবং তাদের সভাসদ-মোসাহেববৃন্দ নয়া কানুন ফর্দাইয়া উৎফুল্ল, নয়া আইনে অধিক পরিমাণে গারোয়ান-শকট ধরিতে পারার আনন্দে বরকন্দাজবাহিনী ততধিক উৎফুল্ল। আর প্রজাসাধারণের কথা আর কি কহিবো? তাহারা সব ভুলিয়া আবার পূর্বের ন্যায় চটের ব্যাগ হাতে লইয়া হাটে সওদা করিতে চলিলো।

অতপর সকল কিছুই পূর্বের ন্যায় চলিতে লাগিলো এবং তাহারা সুখে শান্তিতে বসবাস করিতে লাগিলো। কেহ জানিত চাহিলো না পূর্বোক্ত আইনের কি হাল হইলো

কিন্তু মুলুকের যান্ত্রিক দ্বিচক্রযানের চালক ও আরোহীবৃন্দ অত্যন্ত মনোযন্ত্রণায় দিন কাটাইতে লাগিলো। কারণ নয়া কানুনের প্রয়োগ কেবল উহাদের শীরোণাস্ত্র ঠিক থাকিলো কি না, তাহা লইয়াই ব্যতিব্যস্ত হইয়া পড়িলো।

দুর্মূখেরা বলে, যেহেতু ওই বিদ্রোহ দমনে এক ধরনের শীরোণাস্ত্রের ব্যাপক ব্যবহার হইয়াছিলো সেহেতু সরকার বাহাদুর উহার সুফল বুঝিতে পারিয়া তাবৎ প্রজা সাধারণের মস্তকে উহা পরাইতে তৎপর হইয়াছে।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই জানুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৫:৩৭

রাজীব নুর বলেছেন: এই সমাজ, এই দেশ নষ্ট হয়ে গেছে।
পচে গলে গেছে এটা বলা যায়।
মানুষ হয়ে পড়েছে অমানবিক। বদমাইশ।
কাজেই কিচ্ছু করার নেই।

০৮ ই জানুয়ারি, ২০২০ দুপুর ১২:১২

পদ্মপুকুর বলেছেন: মাথার উপ্রে দিয়ে গেলো

২| ০৭ ই জানুয়ারি, ২০২০ রাত ৮:২৭

ভুয়া মফিজ বলেছেন: হা হা হা......দারুন লিখেছেন।

ভাবছি, পরেরবার দেশে আসার আগে এখান থেকে একটা হেলমেট কিনে নিয়ে আসবো। প্লেন থেকে হেলমেট পরেই নামবো; যেহেতু সরকার বাহাদুর এখন তাবৎ প্রজাকুলকে হেলমেট পরতে উৎসাহ দিচ্ছেন!!

তবে, দেশে হেলমেট কেনার ব্যাপারে কোন বিশেষ ছাড় থাকলে জানায়েন। তাহলে দেশে এসেই না হয়.....!! :P

০৮ ই জানুয়ারি, ২০২০ দুপুর ১২:১৬

পদ্মপুকুর বলেছেন: কি যে বিপদে আছি মাননীয় স্পিকার,
যেখানে সেখানে বাস দাড়িয়ে প্যাসেন্জার তোলে, ট্রাক, মাইক্রোবাস, সেডান কার যেখানে সেখানে পার্ক করে দাড়িয়ে থাকে, যখন তখন যেকোনো পথচারী যেখান সেখান দিয়ে রাস্তা পার হয় ভোঁ দৌড় দিয়ে, ফুটপাথগুলো সব হকারদের দখলে, হাটা যায় না..... এগুলো নিয়ে কোনো কিছু হয় না, কিন্তু বাইকের প্যাসেঞ্জারের মাথায় যদি হেলমেট না থাকে, তাইলেই মামলা খাও, কি যন্ত্রণা!

৩| ০৭ ই জানুয়ারি, ২০২০ রাত ৯:৩০

ঢাবিয়ান বলেছেন: বাংলাদেশের মানুষ অত্যন্ত ভাগ্যবান বলে আমি মনে করি। ঢাকার সড়কেের যে অবস্থা তাতে এক্সিডেন্টের পরিমান বিস্ময়কর রকম কম।

০৮ ই জানুয়ারি, ২০২০ দুপুর ১২:১৯

পদ্মপুকুর বলেছেন: ঠিকই বলেছেন। এর সাথে ঢাকার বাস ড্রাইভারদের দক্ষতা এবং ট্রাফিক পুলিশদের ধৈর্য্যও বিশ্বসেরা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.