নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ইচ্ছা মানব, দানবদের ধ্বংস করি

পলাতক মুর্গ

পলাতক মুর্গ › বিস্তারিত পোস্টঃ

টেকনাফে পঙ্গপাল সদৃশ পোকার আক্রমণ, ফসল ধ্বংসের আশঙ্কা

৩০ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ১১:০১

বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলীয় জেলা কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলায় সম্প্রতি ঘাসফড়িঙয়ের মতো ছোট ছোট কিছু পোকা দেখা যাচ্ছে, যেগুলো উড়তে পারে না।এরকম শত শত পোকা দলবেঁধে স্থানীয় বাসিন্দাদের বসতভিটার গাছপালায় আক্রমণ চালিয়ে উজাড় করে ফেলছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। কালো রঙের ডোরাকাটা এই পোকাগুলো দেখতে অনেকটা পঙ্গপালের মতো বলে জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পতঙ্গ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. রুহুল আমিন।

পোকার আক্রমণের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর কক্সবাজার থেকে কৃষি কর্মকর্তা এসে পোকাগুলোর নমুনা সংগ্রহ করে নিয়ে যান। তারা জানিয়েছেন এ ধরণের পোকা তারা আগে কখনও দেখেননি। পোকাগুলোর ছবি দেখে অধ্যাপক রুহুল আমিন ধারণা করছেন, এগুলো স্খিস্টোসার্কা গ্রেগারিয়া প্রজাতির পঙ্গপাল। যেগুলো বেশ বিধ্বংসী হয়ে থাকে। বাংলাদেশে লোকাস্টা মাইগ্রেটোরিয়া প্রজাতির পোকা রয়েছে। যেগুলো ঘাসফড়িঙয়ের মতো। আকারে বড় হলেও, খুব বেশি ক্ষতিকর নয়।

নতুন ছোট প্রজাতির এই পোকাগুলো যদি পঙ্গপাল হয়ে থাকে এবং সেগুলো যদি এখনই নিয়ন্ত্রণ করা না হয়, তাহলে সামনে বড় ধরণের বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন মি. আমিন। কেননা পঙ্গপাল বহুভোজী পোকা। এরা ঝাঁক বেঁধে শস্য, ফসল থেকে শুরু করে বন জঙ্গলে হামলা চালিয়ে সব উজাড় করে ফেলে। যেহেতু পোকাটি অনেক গাছপালা খেয়ে নষ্ট করে ফেলছে তাই একে ক্ষতিকর বলে মনে করছেন টেকনাফ উপজেলার কৃষি কর্মকর্তারাও। এই পোকা যাতে আর ছড়িয়ে না পড়ে সেজন্য তারা স্থানীয়দের কীটনাশক স্প্রে করার পরামর্শ দিয়েছেন।

গত বছরের শেষ দিক থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে পঙ্গপাল আফ্রিকার ইথিওপিয়া, কেনিয়া ও সোমালিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশে আক্রমণ চালিয়ে ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করে। এ বছরের শুরুতে পাকিস্তানে পঙ্গপালের আক্রমণে ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির খবর জানা যায়। যার কারণে দেশটিতে জরুরি অবস্থা জারি করতে হয়। ভারতের পাঞ্জাবে প্রদেশে এই পঙ্গপাল ঢুকে পড়লে আশেপাশের কয়েকটি রাজ্যে সতর্কতা জারি করা হয়। এছাড়া চীন এবং মিয়ানমারেও পঙ্গপালের উৎপাত দেখা দিয়েছে।

পঙ্গপালের ঝাঁক যেহেতু ভারত, মিয়ানমারে পৌঁছেছে, এগুলো বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন মি. আমিন, যা বাংলাদেশের জন্য হতে পারে একটি অশনি সংকেত। কেননা করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে বাংলাদেশে খাদ্য সংকট দেখা দিতে পারে বলে আগেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরমধ্যে দেশজুড়ে বোরো ধান পাকলেও কৃষি শ্রমিক এবং যন্ত্রপাতির অভাবে এখনও সব ফসল তোলা সম্ভব হয়নি। এমন সময়ে যদি পঙ্গপাল আঘাত হানে তাহলে বিপুল পরিমাণে ধান ধ্বংস হয়ে যাবে যার ফলে খাদ্য সংকট দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

কারণ বিশেষজ্ঞদের মতে, পঙ্গপাল সাধারণত দানাজাতীয় ফসল যেমন, ধান, গম, যব, ভুট্টা, কাউন ইত্যাদি ফসলে আক্রমণ চালায়। পঙ্গপালের একটি ঝাঁকে কয়েকশ পতঙ্গ থাকে এবং এরা খুব দ্রুত ওড়ে। যা দলবেঁধে একরের পর একর জমির ফসল নিমেষেই উজাড় করে ফেলতে পারে। জাতিসংঘের ফুড অ্যান্ড অ্যাগ্রিকালচার অর্গানাইজেশন বলছে, একটি বড় পঙ্গপাল দিনে ১২০ মাইল পর্যন্ত জমির ফসল খেয়ে ফেলতে পারে। এক বর্গকিলোমিটার আকারের পঙ্গপাল একসঙ্গে যে পরিমান খাবার খায় তা দিয়ে ৩৫ হাজার মানুষকে এক বছর খাওয়ানো সম্ভব বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।

মি. আমিন জানিয়েছেন, একটি পঙ্গপালের জীবনচক্র খুব দ্রুত প্রায় তিন থেকে চার সপ্তাহের মধ্যে সম্পন্ন হয়। এবং উষ্ণ আবহাওয়ায় তারা বেশি বেশি বংশবিস্তার করে। পঙ্গপালের জীবনচক্রের তিনটি ধাপ থাকে, ডিম, নিম্ফ এবং পূর্ণাঙ্গ। টেকনাফে যে পোকাগুলো দেখা গেছে, সেগুলোর পাখা থাকলেও কোনটা উড়তে পারে না। এরা পাতা থেকে আরেক পাতায় লাফিয়ে লাফিয়ে চলে। মি. আমিন ধারণা করছেন পঙ্গপালগুলো হয়তো নিম্ফ পর্যায়ে রয়েছে। কিছুদিনের মধ্যে এগুলোর পাখা গজাতে পারে।

সাধারণত এই পোকাগুলো সংখ্যায় বাড়ার পর যাযাবর হয়ে ঘোরাফেরা করে এবং চলতি পথের ফসল নষ্ট করে দেয়। টেকনাফে দিন দিন এই পোকার সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ারে স্থানীয়রা বেশ উদ্বেগের মধ্যে আছেন। তবে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কামাল হোসেন জানিয়েছেন, তারা এখনও নিশ্চিত নন এটি পঙ্গপাল কিনা। তাই এখনও তারা কোন ধরণের মনিটরিং শুরু করেননি। টেকনাফে যে পোকাটি পাওয়া গেছে সেটার বৈশিষ্ট্য দেখে আফ্রিকায় আঘাত হানা ভয়াবহ পঙ্গপাল বলে মনে হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নাসিরুজ্জামান। তারপরও এই পোকার বিষয়ে বিস্তারিত জানতে দুই একদিনের মধ্যে টেকনাফে একটি বিশেষজ্ঞ দল পাঠানোর কথা জানিয়েছেন তিনি।

এটি আসলেও বিধ্বংসী পঙ্গপাল কিনা সেটা বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা নিরীক্ষা ছাড়া বলা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন মি. আমিন। বর্তমানে দেশব্যাপী লকডাউন চলায় তারা পোকাটির নমুনা গাজীপুরের ল্যাবে এনে পরীক্ষা করতে পারছেন না। লকডাউন ওঠার আগ পর্যন্ত তিনি স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তাকে এই পোকাটিকে শুকিয়ে ন্যাপথালিন দিয়ে অথবা ৭০% ইথানলে চুবিয়ে রেখে না হলে ডিপ ফ্রিজে সংরক্ষণের পরামর্শ দিয়েছেন।

যদি এটি আফ্রিকার বিধ্বংসী পঙ্গপাল হয়ে থাকে। তাহলে এর উপদ্রব ঠেকানোর কোন উপায় নেই বলে জানিয়েছেন মি. নাসিরুজ্জামান। কারণ বিশ্বে এখন পর্যন্ত পঙ্গপাল দমন করার কোন কার্যকরী পদ্ধতি আবিষ্কৃত হয়নি। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরিচালক এজেডএম সাব্বির ইবনে জাহান এর আগে বিবিসি বাংলাকে বলেন, "উড়ে আসা পতঙ্গের আক্রমণ থেকে ফসলি জমি রক্ষার কোন উপায় নেই। এদের যাত্রা থামিয়ে দেবার কোন পদ্ধতিও আবিষ্কৃত হয়নি।"

পঙ্গপালের হাত থেকে বাঁচার জন্য বিভিন্ন দেশে উড়োজাহাজের মাধ্যমে কীটনাশক ছিটিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু এতে উপকারী কীটপতঙ্গও মারা যাওয়ারও আশঙ্কা থাকে। তাই বিশেষজ্ঞরা একে কার্যকরী পদ্ধতি বলতে চাইছেন না।

সূত্র বিবিস বাংলা / মানবজমিন

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ১১:১২

রাজীব নুর বলেছেন: এমনি কাধে করোনা। এর মধ্যে আবার পঙ্গপাল এলে কি যে হবে !!!

২| ৩০ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ১১:১৭

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আরো এক ভয়াবহ দুঃসংবাদ!!
সৃষ্টি কর্তা আমাদের সব ধরনের
আসমানী, জমিনী ও বায়বীয়
বালা থেকে হেফাযত করুন। আমিন

৩| ৩০ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ১১:৫৭

ভুয়া মফিজ বলেছেন: দেশে যে কোনও সমস্যাই.....সেটা বিশ্বব্যাপী যতো ভয়াবহই হোক না কেন, প্রথমে খুব সাধারনভাবে দেখা হয়। ঢিলেঢালা ভাব থাকে কর্মকর্তাদের মধ্যে। মানবজমিনের এই রিপোর্টেও সেটা পরিস্কার।

প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ ছাড়া এর কোন সমাধান সম্ভব না।

০১ লা মে, ২০২০ রাত ১২:৩৫

পলাতক মুর্গ বলেছেন: নিউজটা পড়ার সময় আমি "এখনও মনিটরিং শুরু করেননি".......পর্যন্ত পড়ার পরে রেগে গিয়েছিলাম

৪| ০১ লা মে, ২০২০ রাত ১২:০৯

নেওয়াজ আলি বলেছেন: নেতা নামের পঙ্গপাল দেশকে বাঁচাতে কার্যকর পদক্ষেপ নিবে।

৫| ০১ লা মে, ২০২০ রাত ১২:৪৩

ভুয়া মফিজ বলেছেন: লেখক বলেছেন: নিউজটা পড়ার সময় আমি "এখনও মনিটরিং শুরু করেননি".......পর্যন্ত পড়ার পরে রেগে গিয়েছিলাম

কি আর করবেন! এরা কোনও পরিস্থিতির গুরুত্বই বুঝতে পারে না। সারা দুনিয়ার হালচাল এদের অজানা। এরা আছে, নিজেদের ধান্ধায়। প্রধানমন্ত্রী বলার পর শুরু হবে দৌড়াদৌড়ি। দেখবেন, তখন হেলিকপ্টার দিয়ে স্যাম্পল ঢাকায় নিয়ে আসবে। আর মন্ত্রী বা সচীব সংবাদ সম্মেলনে এসে বলবে, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ পাওয়ার পরে আমরা হেন করেছি....তেন করেছি। এগুলি আসলে মেরুদন্ডহীন দাড়িছাড়া রাম ছাগল! X(

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.