নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ইচ্ছা মানব, দানবদের ধ্বংস করি

পলাতক মুর্গ

পলাতক মুর্গ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ঢাকা শহরের এককালের মাদক সম্রাট, লাখো মানুষের মূর্তিমান আতঙ্ক পিচ্চি হান্নান; আজ পড়ে আছেন নামফলকহীন একটি কবরে।

০৭ ই মে, ২০২০ দুপুর ২:০৭

চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ থানার প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের একটি বাড়ী। বাড়ীর প্রবেশপথে পাকা জামে মসজিদ। মসজিদ পেরোলেই কবরস্থান। কবরস্থানের এককোণে নামফলক বিহীন একটি কবর। পুরু শ্যাওলার আস্তরণ জমে সবুজ হয়ে ওঠা কবরটি আলাদা করে চেনার কোনো উপায় নেই। তবে এলাকার কাউকে জিজ্ঞেস করলেই জানা যাবে মৃত ব্যক্তিটির নাম আব্দুল হান্নান। তবে যে তথ্যটি জেনে আপনি শিউরে উঠতে বাধ্য তা হলো এই আব্দুল হান্নানের অপর নামই ‘পিচ্চি হান্নান’।

ঢাকা শহরের এককালের মাদক সম্রাট, লাখো মানুষের মূর্তিমান আতঙ্ক পিচ্চি হান্নান; আজ পড়ে আছেন নামফলকহীন একটি কবরে। ২০০৪ সালের ২৬ই জুন র্যাবের ক্রসফায়ারে নিহত হওয়ার আগ পর্যন্ত পিচ্চি হান্নান দাপিয়ে বেড়িয়েছেন ঢাকাই আন্ডারওয়ার্ল্ড । ছিনতাই, চাঁদাবাজির মাধ্যমে গড়ে তুলেছিলেন বিপুল পরিমাণ সম্পদ।

হান্নানের জন্ম ফরিদগঞ্জের চরদুখিয়া ইউনিয়নে। ষষ্ঠ শ্রেণীর পরই বন্ধ হয়ে যায় তার পড়ালেখা। এরপর পিতার কাঁচামালের ব্যবসা সূত্রে চলে আসেন ঢাকার কারওয়ান বাজার। প্রথমদিকে মূলত পিতার ব্যবসাই দেখাশোনা করতেন তিনি। কিন্তু ধীরে ধীরে ছোটখাটো চুরি, ছিনতাই থেকে শুরু করে জড়িয়ে পড়েন ডাকাতি, অপহরণের মতো ভয়ঙ্কর সব অপরাধের সাথেও। খুন-জখম তার কাছে হয়ে ওঠে নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। একসময় হান্নান জড়িয়ে পড়েন মাদক ব্যবসার সাথে। এরপরের গল্প কেবল তার অন্ধকার সাম্রাজ্য বিস্তৃত হওয়ার ।
এদিকে নব্বই দশকের মাঝামাঝি সময়ে ঢাকাই আন্ডারওয়ার্ল্ডে আসে ব্যাপক পরিবর্তন। এক প্রভাবশালী ডনের অবসরে যাওয়ার পর আন্ডারওয়ার্ল্ড বিভক্ত হয়ে যায় দুই ভাগে। একটি সুব্রত বাইনের নেতৃত্বে সেভেন স্টার গ্রুপ, অন্যটি লিয়াকতের নেতৃত্বে ফাইভ স্টার গ্রুপ। পিচ্চি হান্নান, কালা জাহাঙ্গীরসহ বিকাশ, প্রকাশ, নিটেল এরা যোগ দেন লিয়াকতের ফাইভ স্টার গ্রুপে। অন্যদিকে সুব্রত বাইনের সেভেন স্টার গ্রুপে যুক্ত হয় টোকাই সাগর, মুরগী মিলন, আসিফ, জন, সাইদুর রহমান নিউটনসহ আরও অনেকে। পরবর্তীতে লিয়াকতের সাথে দ্বন্দ্বের জের ধরে সুব্রত বাইনের সাথে হাত মেলান আন্ডারওয়ার্ল্ডের আরেক ডন সুইডেন আসলাম। এতে সুব্রত বাইনের অবস্থান আরো পোক্ত হয়।

এ সময় দুই গ্যাঙ-এর মধ্যে আধিপত্য বিস্তারের যুদ্ধ বেড়ে যায় ব্যাপক হারে। চলতে থাকে খুন, পাল্টা খুন। ‘আগামসি লেন’ এর সন্ত্রাসী আসিফ সুব্রত বাইনের গ্রুপ থেকে বেরিয়ে এসে যোগ দেন লিয়াকত গ্রুপে। এর কিছুদিন পর দুই সহযোগী টিপু ও রিপন সহ খুন হন আসিফ। এ খুনের অভিযোগ উঠে সুব্র্ত বাইন গ্রুপের ‘জন’ এর বিরুদ্ধে। এরপর চলে আরো কিছু খুন, পাল্টা খুন। ঢাকা জজ কোর্ট এলাকায় ফিল্মী কায়দায় খুন করা হয় সুব্রত বাইন গ্রুপের মুরগী মিলনকে। এ মিশনে সরাসরি অংশ নেন পিচ্চি হান্নান ও কালা জাহাঙ্গীর।

আন্ডারওয়ার্ল্ডের এমন উত্তাল সময়ে সরকার ২৩ জন শীর্ষ সন্ত্রাসীর নামের তালিকা প্রকাশ করে। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান, কালা জাহাঙ্গীর, টোকাই সাগর সহ এগার জনকে ধরিয়ে দিলে এক লাখ টাকা ও লিয়াকত ও তার ছোটভাই কামরুল হাসান ওরফে হান্নান সহ বারো জনের জন্য ঘোষণা করা হয় পঞ্চাশ হাজার টাকা করে পুরস্কার।
পিচ্চি হান্নান ও কালা জাহাঙ্গীর ঘনিষ্ঠ সহচর ছিলেন। অধিকাংশ মিশনেই তারা একসাথে অংশ নিতেন । ১৯৯৬ ও ২০০১ এর নির্বাচনেও তারা কাজ করেছিলেন একই দলের প্রার্থীর হয়ে। এভাবে কিছুদিনের মধ্যেই তাদের এই গ্রুপটি আন্ডারওয়ার্ল্ডে রীতিমতো ত্রাস হয়ে উঠে। প্রতি মাসে তাদের নামে চাঁদা উঠত কোটি টাকার উপরে। তবে এই অন্ধকার জগতে বন্ধুত্বের অস্তিত্ব ততক্ষণই যতক্ষণ স্বার্থের দ্বন্দ্ব এসে পথরোধ না করে। এর সত্যতা মেলে পিচ্চি হান্নান ও কালা জাহাঙ্গীরের ঘটনায়ও।

২০০৪ সালের দিকে স্বার্থের দ্বন্ধ বাড়তে থাকে ঢাকাই অন্ধকার জগতের এ দুই শিরোমণির মধ্যে। জানা যায় তাদের মধ্যে ঝামেলার সূত্রপাত বনানী ২০ নম্বর ওয়ার্ড ও মিরপুর এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে। কালা জাহাঙ্গীর বনানী ২০ নং ওয়ার্ডের নিয়ন্ত্রণ চাইতেন; হান্নানকে মিরপুর এলাকা নিয়ে এ ওয়ার্ড ছাড়তে বলেন তিনি। কাওরান বাজারের সাথে যোগাযোগ ব্যাবস্থা ভাল হওয়ায় হান্নানের কাছে এটি ছিল মাদক ব্যবসার জন্য আদর্শ স্পট। তাই তিনি এ এলাকার নিয়ন্ত্রণ ছাড়তে রাজী হননি। এ নিয়ে অনেকদিন ধরেই দ্বন্দ্ব চলছিলো দুই বন্ধুর মধ্যে। প্রকাশ্যে বাকবিতন্ডাও হয়েছে অনেকবার।

এরপর পিচ্চি হান্নান ২০০৪ সালের ফেব্রুয়ারীর মাঝামাঝি একদিন সমাঝোতার জন্য কালা জাহাঙ্গীরকে ডাকেন আরেক সন্ত্রাসী নিটেল এর বাসায়। নিটেল ছিল পিচ্চি হান্নানের একান্ত সহযোগী। হান্নানের পরিকল্পনা ছিল জাহাঙ্গীরকে সেখানেই শেষ করে দেয়ার। কিন্তু গুলিবিদ্ধ হয়েও কৌশলে পালাতে সক্ষম হন জাহাঙ্গীর। শোনা যায় জাহাঙ্গীর সেদিন পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন সাততলা বস্তিতে তার সহযোগী মোল্লা শামীমের ডেরায়। সেখানে চিকিৎসা করেও বাঁচানো যায়নি জাহাঙ্গীরকে। সাততলা বস্তিতেই গোপনে দাফন করা হয় তাকে।

কালা জাহাঙ্গীরের মৃত্যুর তিন মাস পরেই র্যাবের ক্রসফায়ারে নিহত হন মোল্লা শামীম। পিচ্চি হান্নান কালা জাহাঙ্গীরের খুনকে আত্মহত্যা বলে চালানোর চেষ্টা করেন। আর সঠিক তথ্য খুব কম জনেরই জানা থাকায় কালা জাহাঙ্গীর সম্পর্কে বিভিন্ন কথা ভেসে বেড়াতে শুরু করে। এমনকি বাংলাদেশ পুলিশের মোস্ট ওয়ান্টেড লিস্টে এখনো জীবিত হিসেবে অন্তর্ভুক্ত আছে তার নাম। কারো কারো মতে, আন্ডারওয়ার্ল্ড ছেড়ে জাহাঙ্গীর পাড়ি জমিয়েছেন বিদেশে। সেখানে এখনো বহাল তবিয়তেই আছেন তিনি। সব মিলিয়ে কালা জাহাঙ্গীর বাংলাদেশের অন্ধকার জগতের এক রহস্যময় নাম হয়েই আছেন এখনো।

কালা জাহাঙ্গীরকে হত্যার পর পিচ্চি হান্নানের প্রভাব-প্রতিপত্তি আরো বেড়ে যায়। বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায় সব সরকারের আমলেই কয়েকজন প্রভাবশালী নেতার সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তুলত হান্নান। তার সাথে দহরম মহরম ছিল অনেক পুলিশ কর্মকর্তারও। এমনও অনেক পুলিশ কর্মকর্তার কথা জানা যায় যারা তার ফেনসিডিল ভর্তি ট্রাক পাহারা দিয়ে খালাস করার ব্যবস্থা করতেন। এদের জন্য হান্নান জলের মতো টাকাও খরচ করতেন।

কালা জাহাঙ্গীরকে হত্যার পর পিচ্চি হান্নানের প্রভাব-প্রতিপত্তি আরো বেড়ে যায়। বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায় সব সরকারের আমলেই কয়েকজন প্রভাবশালী নেতার সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তুলত হান্নান। তার সাথে দহরম মহরম ছিল অনেক পুলিশ কর্মকর্তারও। এমনও অনেক পুলিশ কর্মকর্তার কথা জানা যায় যারা তার ফেনসিডিল ভর্তি ট্রাক পাহারা দিয়ে খালাস করার ব্যবস্থা করতেন। এদের জন্য হান্নান জলের মতো টাকাও খরচ করতেন।

উত্তরার গরীবে নেওয়াজ এভিনিউতে ২ নম্বর বাড়িটি ছিল একজন প্রবাসীর। বন্ধুবান্ধব সহ আমোদ-ফুর্তি করার জন্য সেখানে নিয়মিত যেতেন হান্নান। ২০০৪ এর ২৪ই জুন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সেখানে অভিযান চালায় র্যাব। সেদিন বাড়ীটিতে পিচ্চি হান্নানের সাথে ছিল তার সহযোগী জাকির, বাবু, নিটেল সহ আরো কয়েকজন। র্যাবের প্রায় চল্লিশজন সদস্যের চৌকস একটি দল অংশ নেয় এ অভিযানে। বাড়ীটিকে সম্পূর্ণ ঘিরে ফেলেন তারা। এ সময় আচমকা দরজা খুলে বেরিয়ে আসেন পিচ্চি হান্নান। দু’হাত দুই পকেটে ঢোকানো। কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই তার দুই হাতে বেরিয়ে আসে দুটি পয়েন্ট বাইশ বোরের পিস্তল। লাগাতার গুলি ছুঁড়তে শুরু করেন র্যাব সদস্যদের দিকে।

সামলে ওঠার আগেই লুটিয়ে পড়েন দুই র্যাব সদস্য। পাল্টা গুলি চালাতে শুরু করেন অন্যরা। শরীরের বিভিন্ন জায়গায় গুলি লাগে হান্নানের, কিন্তু গুলিবিদ্ধ অবস্থায়ই কমান্ডো স্টাইলে টপকে যান বাড়ীর পাঁচিল। দ্রুত গিয়ে উঠেন সামনে পার্ক করে রাখা মাইক্রোবাসে। র্যাব সদস্যরা এলোপাথাড়ি গুলি করতে শুরু করেন মাইক্রোবাসটিকে উদ্দেশ্য করে। কিন্তু ততক্ষণে সেটি হাওয়া। সেদিন এত কাছে পেয়েও হান্নানকে গ্রেফতার করতে পারেনি র্যাব। তবে নিহত হয়েছিল তার দুই সহযোগী।

গুলিবিদ্ধ হান্নান গিয়ে ভর্তি হন সাভারের একটি ক্লিনিকে। খবর পেয়ে দুদিন পর সেখানে হাজির হয় র্যাব। প্রথমে জিজ্ঞাসাবাদ করলে পিচ্চি হান্নান নির্বিকার জবাব দেন যে তিনি সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন। কিন্তু র্যাবের একের পর এক জেরার ফলে ভড়কে যায় হান্নান। নিজের পরিচয় স্বীকার করতে বাধ্য হয় সে। এসময় তিনি র্যাব সদস্যদের উদ্দেশ্যে বলেন “স্যার আমি এই মুহূর্তে এক কোটি টাকা দিচ্ছি। আমারে ছেড়ে দেন। মোবাইলটা দেন স্যার। টাকা আনতে বলি।”
কিন্তু তার এ প্রলোভনে কাজ হয়নি। তাকে সেখান থেকে আদালতে নেয়া হয়। সেদিনই র্যাব কার্যালয়ে আনার পর তাকে নিয়ে অস্ত্র উদ্ধার অভিযানে বের হয় র্যাব। এরপর আশুলিয়ায় তথাকথিত ‘বন্ধুকযুদ্ধে’ নিহত হয় পিচ্চি হান্নান। ভবলীলা সাঙ্গ হয় এক দুর্ধর্ষ অপরাধীর, স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে গোটা বাংলাদেশ।

তথ্যসূএঃ ইন্টারনেট/ রোয়ার বাংলা /Shahariar Islam Aongkon

মন্তব্য ৯ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৯) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই মে, ২০২০ দুপুর ২:৪৪

নেওয়াজ আলি বলেছেন: এইসব কালা ও পিচ্ছির উপর আর্শীবাদ আছে রাজনৈতিক নেতার

২| ০৭ ই মে, ২০২০ বিকাল ৩:০৬

রাজীব নুর বলেছেন: ওদের কারা তৈরি করে?

৩| ০৭ ই মে, ২০২০ বিকাল ৩:২৩

অনিক মাহফুজ বলেছেন: প্রতিটি কাজের হিসেব সবাইকেই দিতে হয়

০৭ ই মে, ২০২০ বিকাল ৪:৫০

পলাতক মুর্গ বলেছেন: দিতে হয়

৪| ০৭ ই মে, ২০২০ বিকাল ৩:২৯

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:
ওরা নিজেরাও জানে যে ওদের কোন দাম নেই। ওরা নেতাদের অস্ত্র।

৫| ০৭ ই মে, ২০২০ বিকাল ৩:৩০

আধাপাগল বলেছেন: কবরের উপরের দৃশ্য তো আপনি দেখতে পারছেন। নাম ফলক বিহিন শ্যাওলার সবুজ আস্তর। এও হতে পারতো, ২৪ ক্যারেট সোনার ফ্রেমে রেশমের কাপড়ে ঢাকা ......। যেমনটা দেখবেন বিভিন্ন মাজারের খাজা বাবাদের কবরে। মাগার, কবরের ভিতরে কি হচ্ছে তা কি জানেন?

০৭ ই মে, ২০২০ বিকাল ৪:৪৬

পলাতক মুর্গ বলেছেন: এক আল্লাহওয়ালা ব্যক্তির ব্যপারে শুনছি কাশফের মাধ্যমে কবরের ভিতরের হালত দেখতে পারতেন। উনার বর্ননা মতে অনেক মাজারের ভিতরে নাকি আসলে কোন লাশই নাই। আবার ভন্ডপীরদের লাশ নাকি চেহারা বিকৃত হয়ে কবরের মধ্যে পড়ে থাকে। আল্লাহ তায়ালা ভাল জানেন।

৬| ০৭ ই মে, ২০২০ বিকাল ৪:১৪

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: কোটি টাকার অফার পেয়েও র‍্যাব পায়ে ঠেলে দিল?

০৭ ই মে, ২০২০ বিকাল ৪:৪৭

পলাতক মুর্গ বলেছেন: মৃত্যু যখন আসবে তখন টাকায় কাজ হবে না।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.