নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পথিক , এখানে শুকনো পাতায় আলো ‌‌‍‌‍‌জ্বালো

পথের বাঁকে

পথের পথিক আমি পথেই গড়েছি বাসা

পথের বাঁকে › বিস্তারিত পোস্টঃ

“এক কোটি বছর তোমাকে দেখিনা”

১৩ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৪:৩৮

এক ঘুঁষিতে তোর নাক ফাটিয়ে দেবো কিন্তু ! .... ইলার এমন কথায় অবশ্য ভয় পেল না আবীর । গত দুবছরে এই নিয়ে দুইশ পয়ত্রিশ বার ওর নাক ফাটাবে বলে হুশিয়ারী দিয়েছে মেয়েটা । এই দুইশ পয়ত্রিশ বারই আবীর আশা করেছিল সত্যি সত্যিই ইলা ওর নাক ফাটিয়ে দেবে । এরপর নাক দিয়ে গলগল করে রক্ত পড়বে । আর তারপর ইলাই আবার সেই রক্ত পড়া নাকে গজ ব্যান্ডেজ দিয়ে চেপে ধরবে । এই সুযোগে ওর নরম হাতের স্পর্শ নেবে ও । কিন্তু প্রতিবারেই ব্যর্থ হয়েছে আবীর । নানা খুনসুটি করে প্রতিবারেই রাগিয়ে তুলে ইলাকে, ঘুষি খাবার আশায় । কিন্তু ইলা আর ঘুষিও দেয় না ,ওর নরম হাতের ছোঁয়াও নেয়া হয়না আবীরের ।
অদ্ভুত মেয়ে ইলা । ডাক্তার হয়েছে ছয় মাস হলো অথচ রক্ত দেখলে ভয় পায় । আবীরের মনে পড়ছে দুবছর আগের সেই দিনটার কথা । কোরবানী ঈদের গোস্ত কাটতে গিয়ে ওর ছোট ভাই তমাল হাত কেটে ফেলে । গোস্তের লাল রঙের সাথে তমালের রক্ত একাকার হয়ে যায় ।তাড়াতাড়ি একটা কাপড় পেঁচিয়ে সোজা হাসপাতালে তমালকে নিয়ে যায় আবীর ।জরুরী বিভাগ থেকে সোজাসুজি সার্জারি ওয়ার্ডে গিয়ে ডাক্তার খুঁজতে লাগল ও । ঈদের দিন হওয়াতে খুব একটা ভিড় নেই । আবীর ডাক্তারদের রুমে গিয়ে দেখল কেউ নেই । কি করবে বুঝতে পারলো না ও । ওয়ার্ডের ভিতরে গিয়ে দেখল একটা মেয়ে প্রেসার মাপছে । কিন্তু মেয়েটাকে দেখে ডাক্তার মনে হলোনা । সাদা এপ্রোনতো নেই ।তারপরও মেয়েটার কাছে গিয়ে বলল- আপা আমার ভাইয়ের হাত কেটে গেছে .. ডাক্তার সাহেব কই ? কিছুটা বিরক্তি নিয়ে ইলা একটা স্লিপ ধরিয়ে দিয়ে বলল এগুলো নিয়ে আসেন আর আপনি আপনার ভাইকে নিয়ে আমার সাথে আসেন । ওয়ার্ডের ড্রেসিং রুমে তমালকে বেডে শুইয়ে দিল আবীর । একটু পরে ইলা সেই বেডের সামনে এসে তমালের হাত থেকে পেঁচানো কাপড়টা খুলতে লাগল । আবীরের মনোযোগ শুধু ওর ভাইয়ের দিকে ।প্যাঁচনো কাপড়টা সম্পূর্ন খুলে ফেললে ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হতে লাগল তমালের হাত থেকে । খানিকটা রক্ত ইলার গায়েও ছিটকে এলো । হঠাৎই মেঝেতে পড়ে গেল ইলা । আবীর বুঝতে পারলোনা কি করবে । ভাইয়ের হাতটা তাড়াতাড়ি কাপড় দিয়ে পেঁচিয়ে দেবার পর ইলাকে আর একটা ড্রেসিং বেডে শুইয়ে দিল ও । ইতিমধ্যে শাওন এসে পড়েছে সেখানে । ইলা আর শাওনের মর্নিং ডিউটি আজ । ইলা শাওনকে বারবার বলেছিল তাড়াতাড়ি আসতে । রক্ত দেখলে ভয় লাগে তারপর আবার সার্জারি ওয়ার্ডে প্লেসমেন্ট ওর ।……..
দুঘন্টা পর তমালকে নিয়ে বাসায় ফিরে এলো আবীর । কিন্তু রক্ত দেখে ডাক্তার মেয়েটার অজ্ঞান হয়ে যাওয়াটা অদ্ভুত লেগেছে ওর ।……………………………..
… আজ দুবছর পর সেই ঘটনার কথা বলে ইলাকে ক্ষেপিয়ে দিয়েছে ও । ভালোবাসার মানুষের সাথে খুনসুটি করতে কার না ভাল লাগে । আবীরও এর ব্যতিক্রম নয় । ক্ষেপে গেলে ইলাকে ভয়ঙ্কর সুন্দর লাগে ।টোল পড়া ফর্সা গাল দুটোও লালচে আভার সৃষ্টি হয় । সেই আভায় বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে একটা শিশির বিছানো আস্তরন তৈরী করে । আবীরের ইচ্ছে হয় ঐ আস্তরনের ঠান্ডা স্পর্শ নিতে । ওদিকে খোলা চুলের আবছা আবরনে ঢেকে থাকা কানগুলোর লাল ভাব স্পষ্ট হয় ।
আগামী কয়েক ঘন্টা ইলা আর আবীরের সাথে কথা বলবে না । এরই মধ্যে –তুমি আর আমাকে কল দেবে না বলে জোর করে আবীরের হাত থেকে মোবাইলটা নিয়ে নিজের নাম্বারটা ডিলিট করে দেয় । এরপর আবীরকে দেখিয়ে দেখিয়ে নিজের মোবাইল থেকে আবীরের নাম্বাটাও ডিলিট করে দেয় । ভালোবাসা নেই বুঝানোর জন্য অবজ্ঞার হেয়ালীপনায় আবীরকে একলা ফেলে চলে যায় ইলা । আবীরও আগুনে ঘি ঢালার মত পিছন থেকে ‘অজ্ঞান ডাক্তার’ বলে ডাক দেয় ইলাকে ।
…রাত বারটা বাজে । একটা আন সেভ নাম্বার থেকে ফোন আসে আবীরের মোবাইলে । না বুঝার ভান করে আবীর বলে
- হ্যাঁলো কে বলছেন প্লিজ
অপর প্রান্ত থেকে কোন সারা নেই । এভাবে দশ মিনিট কেটে যায় ।
মিনিট দশেকের নিরবতায় কি যে কথা হল বুঝা গেল না ।
এরপর প্রতিবারের মত আবীর তার প্রিয় কবি মহাদেব সাহার “এক কোটি বছর তোমাকে দেখিনা” আবৃতি করতে থাকে ।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.