নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি জাতিস্মর। সপ্তমবার মানব জন্ম। অষ্টমবার মানব জন্ম নিয়ে আবার পৃথিবীর বুকে ফিরবো। সীতারাম নন্দী(১ম), কৃষ্ণকান্ত নন্দী(২য়),কাশিমবাজার রাজা কৃষ্ণনাথ রায়(৩য়),বিজয়কৃষ্ণদুলাল পাল(৪র্থ),হরিদাস মুখার্জী(৫ম),রমেশ সাহা(৬ষ্ঠ),প্রদীপ হালদার(৭ম)।

প্রদীপ হালদার

আমি জাতিস্মর। সপ্তমবার মানব জন্ম, অষ্টমবার মানব জন্ম নিয়ে আবার পৃথিবীর বুকে ফিরবো। সীতারাম নন্দী(১ম), কৃষ্ণকান্ত নন্দী(২য়),কাশিমবাজার রাজা কৃষ্ণনাথ রায়(৩য়),বিজয়কৃষ্ণদুলাল পাল(৪র্থ),হরিদাস মুখার্জী(৫ম),রমেশ সাহা(৬ষ্ঠ),প্রদীপ হালদার(৭ম)।

প্রদীপ হালদার › বিস্তারিত পোস্টঃ

এ কেমন বিচার।

০৫ ই নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ৯:৩০

এ কেমন বিচার
------------------
আমি রাজা কৃষ্ণনাথ রায়। আমার জন্ম ১৮২২ সালে ১২ই মার্চ। পিতা হরিনাথ রায়ের অকাল মৃত্যুতে আমি কাশিমবাজারের রাজা হলাম মাত্র দশ বছর বয়সে। আমার বোন গোবিন্দসুন্দরীর বিয়ে হলো ১৮৩৮ সালে জুলাই মাসে। তারপর ১৮৩৮ সালে ডিসেম্বর মাসে আমি বিবাহ করলাম বর্ধমান জেলার ভাটাকুল গ্রামের হতদরিদ্র পরিবারের কন্যা স্বর্ণময়ীকে। আমার মা হরসুন্দরী এই কন্যাকে কেন পছন্দ করলো আমার বিয়ের জন্য? এক হতদরিদ্র পরিবারের এক অশিক্ষিত কন্যার সহিত কেন আমার বিয়ে হলো? মা হরসুন্দরী জানতো যে তার ছেলে রাজা কৃষ্ণনাথ রায় প্রচণ্ড রাগী। মা,কেন আমার জন্যে এক ধনী ঘরের কন্যাকে বিয়ের জন্য পছন্দ করলো না? আসলে আমার মা রাজবাড়ির সম্পত্তি চেয়েছিল। আমার রাজা হওয়া সত্ত্বেও মা দত্তক নেবার জন্য কোর্টে মামলা করেছিল। আমি সেই মামলায় জয়ী হই। তাই বাধ্য হয়ে মা হরসুন্দরী এক হতদরিদ্র পরিবারের এক অশিক্ষিত কন্যার সহিত আমার বিবাহ দিল। আসলে আমার মা হরসুন্দরী আমাকে কখনো ভালোবাসে নি। ভালোবাসলে মা কখনোই এমন কাজ করতো না। আমি তো স্ত্রী স্বর্ণময়ীর ওপর রাগ করে নিজের দুই হাতে গলা টিপে আত্মহত্যা করলাম। আত্মহত্যা করার আগে সারারাত জেগে আমার শেষ উইলটি ইংরেজীতে অনুবাদ করেছিলাম। আসলে আমার যে প্রচণ্ড রাগ,তাই আমি জানতাম একদিন এই রাগে আমাকে মরতে হবে। কিন্তু এই বিশাল সম্পত্তি কোন মানুষকে দিয়ে যাবো না। আমি একটা উইল করে এই সম্পত্তি ব্রিটিশ ঈষ্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানিকে দান করে যাবো। আর তারা আমার নামে বানজেতিয়াতে একটা ইউনিভার্সিটি, মেডিকেল কলেজ এবং হাসপাতাল তৈরী করবে। আমি আসলে দেখতে চাই- "মৃত্যুর পরে কি আছে,আর আমার উইলটা আদৌ বাস্তবায়িত হয় কিনা। আমি আবার মানব জন্ম নিয়ে ফিরে এসে দেখবো।"

তাই ১৮৪৪ সালে ৩১ অক্টোবর ভোরবেলায় আমার স্ত্রী আমার সাথে ঝগড়া করে বললো- হাসপাতাল, কলেজ বানাতে হবে না। আর আমার উইলটাকে স্বর্ণময়ী মেঝেতে ছুঁড়ে ফেলে দিলো। আমার প্রচণ্ড রাগ হলো। নিজের দুই হাতে নিজের গলা টিপে ধরলাম। আমার মৃত্যু হলো। আমার স্ত্রী আমাকে বাঁচাতে এলো না। মাত্র বাইশ বছর বয়সে নিজের হাতে নিজের জীবন শেষ করে দিলাম।
আজ আমি পুনর্জন্ম নিয়ে প্রদীপ(পঞ্চমবার মানব জন্ম)। আমার উইল বাস্তবায়িত হয় নি। তাহলে ব্রিটিশরা কি ভুল বিচার করেছিল? ব্রিটিশরা আমার মৃত্যুর পরে আমার প্রতি অন্যায় অবিচার করেছিল। আমার বিশ্বাস ছিল আমার উইল বাস্তবায়িত হবে। আমার স্বপ্ন পূরণ হবে। অথচ আমার স্বপ্ন পূরণ হয় নি। তার কারণ ব্রিটিশরা আমার উইলের সঠিক বিচার করতে পারে নি।
এমনকি আমার মৃত্যুর সঠিক বিচার সেদিন হয় নি। ব্রিটিশরা বিচারের নামে আমার প্রতি অন্যায় করেছিল।
আমি আত্মহত্যা করেছিলাম কাশিমবাজার রাজবাড়িতে।
আর মৃত্যুর পরের কথা আমার তো জানার কথা নয়।
কিন্তু আমি বলছি- মৃত্যুর পরে আমার সেদিন অস্তিত্ব ছিল। মা হরসুন্দরী আমার মৃতদেহকে কলকাতায় জোড়াসাঁকোর রাজবাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। আমার মাথায় গুলি করা হয়। আমি বন্দুকের গুলিতে আত্মহত্যা করেছি বলে প্রচার করা হয়।
সেদিনের বিচারে প্রমাণিত হয় নি আমি নিজের হাতে গলা টিপে আত্মহত্যা করেছি। এ কেমন বিচার? আমার মৃতদেহের ওপর অন্যায়ভাবে কে গুলি করলো?
এই সম্পত্তি ব্রিটিশরা গ্রহণ করেছিল। কিন্তু স্বর্ণময়ী আমাকে বললো- "রাজা,তুমি এমনভাবে উইল করেছো,যে,সম্পত্তি আমি আর ফিরে পাবো না।"
আমি তখন স্বর্ণময়ীকে পরামর্শ দিলাম- "রাজা অসুস্থ অবস্থায় অর্থাৎ মদ খেয়ে উইল লিখেছিল।" এই কথা বলাতে আমার উইল কোর্টে বাতিল হলো।
আসলে ব্রিটিশরা আমার উইল বাতিল করতে পারে নি। আমার উইল আমিই বাতিল করেছিলাম। আমার স্বপ্নকে সেদিন আমি নিজের হাতে মেরেছিলাম।
এই সম্পত্তি ফিরে পেয়ে শ্বর্ণময়ী তখন আমার নামে কৃষ্ণনাথ কলেজ স্থাপন করলো। তখন স্বর্ণময়ী আমাকে বুঝলো। আমি তাকে লেখাপড়া শেখালাম। এরপরে স্বর্ণময়ীর কাছ থেকে আমার মা,আমার বোন সম্পত্তি নেবার জন্য কোর্টে মামলা করেছিল,কিন্তু তারা মামলায় হেরে গিয়েছিল।
আমার সম্পত্তি আজও সেইভাবে পড়ে রয়েছে। আমার সম্পত্তিতে মনীন্দ্র চন্দ্র নন্দী এসে তার পরিবারের পাঁচজনকে অকালে হারালো। এই পাঁচজন হলেন- কীর্ত্তি চন্দ্র নন্দী,মহিম চন্দ্র নন্দী,নীরোদ চন্দ্র পাল চৌধুরী, কিরণবালা নন্দীএবং ধর্ম্মদাস দে। ১৯০৩ সাল থেকে ১৯১০ সালের মধ্যে তাদের মৃত্যু হয়।
আর মনীন্দ্র নিজে কুঠুরিতে আবদ্ধ হলো। মণীন্দ্রর মৃত্যু হলো। তার দেহ সেই কুঠুরির মেঝেতে পুঁতে দেওয়া হলো। তার দেহের কোন সৎকার হলো না। এ কেমন বিচার? মনীন্দ্রর মৃত্যু ১৯২৯ সালে ১২ নভেম্বর নয়। মণীন্দ্র ব্রিটিশদেকে প্রতারিত করলো। ব্রিটিশরা বুঝতেই পারলো না যে,মনীন্দ্র বেঁচে আছে। আর ১৯৪৪ সালে অক্টোবর মাসে যখন মণীন্দ্রর মৃত্যু হলো তখন তার ছেলে শ্রীশ তার পিতার মৃতদেহের সৎকার করতে পারলো না। এ কেমন বিচার?
আর শ্রীশ নিজের ছেলে সোমেনের বিয়ে করাটাকে মন থেকে মেনে নিতে পারলো না। হীরার আংটি চুষে আত্মহত্যা করলো। অথচ শ্রীশের দেহের সৎকার হলো,তার আত্মহত্যার কথা জানলো না কেউ।
সোমেন চলে গেলো লণ্ডনে। আমার রাজবাড়ি পরিত্যক্ত।
রাজা কৃষ্ণনাথ রায়ের পর পুনর্জন্ম নিলাম। হলাম বিজয় কৃষ্ণ দুলাল পাল। কিন্তু পাঁচ বছর বয়সে বিজয়ের মৃত্যু হলো সোমেনের হাতে। বিজয়ের মৃতদেহ রাজবাড়ির পেয়ারাবাগানে পোঁতা আছে।
আমি সেই ব্যক্তি। ফিরে এসেছি। বিচার চাই।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.