নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি জাতিস্মর। সপ্তমবার মানব জন্ম। অষ্টমবার মানব জন্ম নিয়ে আবার পৃথিবীর বুকে ফিরবো। সীতারাম নন্দী(১ম), কৃষ্ণকান্ত নন্দী(২য়),কাশিমবাজার রাজা কৃষ্ণনাথ রায়(৩য়),বিজয়কৃষ্ণদুলাল পাল(৪র্থ),হরিদাস মুখার্জী(৫ম),রমেশ সাহা(৬ষ্ঠ),প্রদীপ হালদার(৭ম)।

প্রদীপ হালদার

আমি জাতিস্মর। সপ্তমবার মানব জন্ম, অষ্টমবার মানব জন্ম নিয়ে আবার পৃথিবীর বুকে ফিরবো। সীতারাম নন্দী(১ম), কৃষ্ণকান্ত নন্দী(২য়),কাশিমবাজার রাজা কৃষ্ণনাথ রায়(৩য়),বিজয়কৃষ্ণদুলাল পাল(৪র্থ),হরিদাস মুখার্জী(৫ম),রমেশ সাহা(৬ষ্ঠ),প্রদীপ হালদার(৭ম)।

প্রদীপ হালদার › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমিই কৃষ্ণকান্ত নন্দী ( ৭ম খণ্ড )।

০৭ ই নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:১৯

দ্বৈত শাসন ব্যবস্থায় ব্যাপক কুফল দেখা যায়। জমির ফসল ঠিক মতো না হলেও কারো রাজস্ব মাফ করা হতো না। কোম্পানি রাজস্বের পরিমাণ উত্তরোত্তর বৃদ্ধির জন্য কর্মচারীদের ওপর চাপ দিতে থাকে। ক্লাইভ দেশে প্রত্যাবর্তন করলে এই দ্বৈত শাসন পুরোপুরি ভেঙে পড়ে। ১৭৬৮ - ৬৯ সালে অনাবৃষ্টির কারণে জমিতে ফসল না হওয়ায় ১৭৭০ সালে দেখা দেয় ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ। এই সময় বাংলার গভর্ণর ছিলেন ভেরেলস্ট (১৭৬৭ - ৬৯) এবং কার্টিয়ার ( ১৭৬৯ - ৭০)। ১৭৭০ সালে ( বাংলা ১১৭৬) দুর্ভিক্ষে প্রায় এক তৃতীয়াংশ লোকের প্রাণহানি ঘটে। এই দুর্ভিক্ষ ছিয়াত্তরের মন্বন্তর নামে পরিচিত। ফোর্ট উইলিয়ম কর্তৃপক্ষও এই দুর্ভিক্ষের জন্য দ্বৈত শাসনকে দায়ী করেছিল। ১৭৭২ সালে কোম্পানির বোর্ড অফ ডিরেক্টরস দ্বৈত শাসন ব্যবস্থা বাতিল করে দেশের প্রশাসনের দায়িত্ব সরাসরি কোম্পানির হাতে নেওয়ার জন্য ওয়ারেন হেস্টিংসকে বাংলার গভর্ণর করে পাঠান।
ক্লাইভ ১৭৬৭ সালে ফেব্রুয়ারিতে দেশে ফিরে আসেন। ভারতবর্ষে অবৈধ উপায়ে অর্জিত অর্থ দিয়ে ইংল্যাণ্ডের রাজনীতি দূষিত করার অভিযোগ আনা হয় তার বিরুদ্ধে। অভিযোগে বলা হয়,তিনি বাংলার গভর্ণর থাকাকালীন ক্ষমতার অপব্যবহার করে পাহাড়সম অর্থ বিত্ত গড়েছেন। অভিযোগ প্রমাণিত হয় নি,তা সত্ত্বেও তিনি ২২ নভেম্বর, ১৭৭৪ সালে আত্মহত্যা করেন। ভারতবর্ষে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ প্রতিষ্ঠায় ক্লাইভের অবদান অনস্বীকার্য।
দ্বৈত শাসন ব্যবস্থায় বাংলার নবাব সামান্য বৃত্তিভোগী কর্মচারীতে পরিণত হলেন। আর প্রচুর অর্থনৈতিক ক্ষমতার অধিকারী হয়ে ইংরেজ কোম্পানি এদেশের প্রকৃত প্রভু হয়ে বসলেন। নবাব ও কোম্পানির মধ্যে এই ক্ষমতা ভাগাভাগির ফলে দেশ শাসন ও প্রজাসাধারণের মঙ্গল বিধানের দায়িত্ব কেউই পালন করতো না। ফলে বাংলায় রাজনৈতিক ক্ষেত্রে চরম বিশৃঙ্খলা ও গোলযোগ দেখা দেয়। ক্ষমতাহীন নবাব সেই বিশৃঙ্খলা দমনে ব্যর্থ হন। কোম্পানি নিযুক্ত রাজস্ব বিভাগের দুই সহকারী রেজা খাঁ ও সিতাব রায়ের শোষণ ও অত্যাচারে প্রজাদের দুর্দশার অন্ত ছিল না। পরিণতিতে ১৭৭০ খ্রিস্টাব্দে বা ১১৭৬ বঙ্গাব্দে বাংলায় ব্যাপক দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। এটি ছিয়াত্তরের মন্বন্তর নামে পরিচিত।

অ্যাডমিরাল চার্লস ওয়াটসন - ওয়াটসন (১৭১৪ - ১৭৫৭) পলাশীর যুদ্ধের একজন বিজয়ী ব্যক্তি হিসেবে ব্রিটিশ ও ভারতীয় ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য হয়ে আছেন। তিনি ওয়েস্টমিনিস্টারে জন্মগ্রহণ করেন। নাবিক পরিবারের ঐতিহ্য অনুযায়ী তিনি ১৭২৮ সালে ব্রিটিশ নৌবাহিনীতে যোগ দেন। প্রধান নৌ সেনাপতির দপ্তরের প্রথম লর্ডের ভ্রাতুষ্পুত্র ছিলেন বলে অতিদ্রুত নিম্ন পদগুলি অতিক্রম করে ১৭৪৩ সালে তিনি অধিনায়কের পদ লাভ করেন। ১৭৪৭ ৪৮ সালে নিউফাউণ্ডল্যাণ্ড এবং উত্তর আমেরিকান স্টেশনের প্রধান সেনাপতি হিসেবে ওয়াটসনকে পাঠানো হয়। ১৭৫৪ সালে তিনি ইস্ট ইণ্ডিজের সর্বাধিনায়ক নিযুক্ত হন। ১৭৫৬ সালে জুন মাসে ওয়াটসন ভাইস অ্যাডমিরাল পদে পদোন্নতি লাভ করেন। একই পদমর্যাদায় তিনি ১৭৫৬ সালে ডিসেম্বর মাসে রবার্ট ক্লাইভ ও তার ছোট সৈন্য বাহিনীসহ বাংলার জলসীমায় আসেন।
ওয়াটসনের কামানের সহায়তায় রবার্ট ক্লাইভ নবাব সিরাজউদ্দৌলার নিয়ন্ত্রণ থেকে কলকাতা পুনর্দখল করেন। সিরাজউদ্দৌলা এখান থেকে ইতিপূর্বে ইংরেজদের বিতাড়িত করে দিয়েছিলেন। সম্মিলিতভাবে সেনা ও নৌবাহিনী কলকাতা ফোর্ট উইলিয়মের কর্তৃত্ব গ্রহণ করে। কিছুদিনের মধ্যেই তারা হুগলি বন্দরও করায়ত্ত করে। হুগলি দখলের পর ওয়াটসন চন্দননগরের উপর আঘাত হেনে সেখান থেকে ফরাসিদের বিতাড়িত করেন। তবে তার সবচেয়ে বড় সাফল্য ছিল সিরাজউদ্দৌলার প্রতিপক্ষ শক্তিগুলির সঙ্গে বেশ কিছু গোপন এবং প্রকাশ্য আলোচনায় অংশগ্রহণ এবং সবশেষে নবাব সিরাজউদ্দৌলার সেনাবাহিনীর প্রধান মীরজাফর আলী খানের পক্ষে নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য তাদের সঙ্গে একটি গোপন চুক্তি স্থাপন। অবশ্য সবক্ষেত্রেই ওয়াটসন তার পেশাদারিত্বকে উচ্চে স্থান দিয়েছেন। নবাব সিরাজের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত লোভী ও নীতি বিসর্জিত সওদাগর উমিচাঁদ প্রচুর অর্থ না পেলে নবাব সিরাজের কাছে ষড়যন্ত্র ফাঁস করার কথা বলে ক্লাইভকে হুমকি দিলে ক্লাইভ উমিচাঁদকে প্রতারিত করার উদ্দেশ্যে একটি জাল দলিলে স্বাক্ষর করতে ওয়াটসনকে নির্দেশ দেন। পেশাদারি নীতির বহির্ভূত হওয়ায় ওয়াটসন তা করতে অস্বীকার। করেন। যদিও ক্লাইভের কাছে এ নীতির গুরুত্ব তেমন ছিল না। তাই ক্লাইভ সেই দলিলে নিজেই স্বাক্ষর করে চক্রান্তকারীর মুখ বন্ধ করেন। পলাশীর যুদ্ধে রবার্ট ক্লাইভ মূলত নির্ভর করেছেন ওয়াটসনের নৌসেনাদের ওপর এবং এই যুদ্ধে তারা ছিল গোলন্দাজ বাহিনীর ভূমিকায়।
পলাশী জয়ের পর এই দুই বিজেতার মধ্যে বিরোধের সূত্রপাত ঘটে। তারা উভয়েই ফোর্ট উইলিয়মের গভর্ণর হওয়ার জন্য প্রবলভাবে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। পদ এবং চাকরির জ্যেষ্ঠতা উভয় দিক থেকে কনিষ্ঠ হওয়া সত্ত্বেও ক্লাইভ নিজেকে ফোর্টের গভর্ণর হিসেবে অভিষিক্ত করেন। গভর্ণর হিসেবে স্বীকৃতি না দিলে ক্লাইভ ওয়াটসনকে দ্বন্দ্বযুদ্ধে আহ্বান করেন। কিন্তু ওয়াটসন ক্লাইভের এই দ্বন্দ্বযুদ্ধ প্রত্যাখ্যান করেন। একদিকে হতাশাগ্রস্ত আর অন্যদিকে বিরূপ আবহাওয়ার ফলে ওয়াটসন অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং ১৭৫৭ সালে ১৬ আগস্ট ওয়াটসন কলকাতায় মারা যান। কলকাতায় সমাধিস্থ হলেও ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানির অর্থানুকূল্যে ওয়েস্টমিনিস্টারে তার স্মৃতির উদ্দেশ্যে একটি সৌধ নির্মিত হয়।

রেজা খান - মুগলদের হাত থেকে বাংলার শাসনক্ষমতা যখন ইংরেজ ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানির হাতে চলে যাচ্ছিল,সেই সময় বাংলার নায়েব নাজিম ও নায়েব দেওয়ান ছিলেন রেজা খান। নবাব আলীবর্দী খানের শাসনকালে পারস্যের এক ভাগ্যান্বেষী রেজা খান নবাব সিরাজউদ্দৌলার (১৭৫৬ - ১৭৫৭) মাতা আমিনা বেগমের সঙ্গে তার মায়ের সম্পর্কের সূত্র ধরে বাংলায় আসেন। রেজা খান অতিদ্রুত তৎকালীন বাংলার রাজনীতিতে স্বীয় অবস্থান করে নেন। ১৭৫৬ সালে কাটোয়ার ফৌজদার পদে নিয়োগের পর থেকেই তার রাজনৈতিক জীবন শুরু হয়। ১৭৬০ সালে প্রথম দিকে মীরজাফর তাকে ইসলামাবাদের (চট্টগ্রাম) ফৌজদার পদে নিয়োগ করেন। ১৭৬৩ সালে রেজা খান সুবাহ বাংলার পূর্বাঞ্চলীয় রাজধানী জাহাঙ্গীরনগরের (ঢাকা) নায়েব নাজিম নিযুক্ত হন। বাণিজ্যিক লেনদেন ও রাজনৈতিক যোগাযোগের মাধ্যমে তিনি রবার্ট ক্লাইভের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তোলেন। ১৭৬৫ সালে ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানি কর্তৃক বাংলা,বিহার ও উড়িষ্যার দেওয়ানী লাভের পর ক্লাইভ তাকে বাংলার নায়েব দেওয়ান নিযুক্ত করেন। নায়েব দেওয়ান হিসেবে তিনি কোম্পানির পক্ষে দেওয়ানী শাসন পরিচালনা করতেন। একই সময়ে মীরজাফরের পুত্র নাজমুদ্দৌলার নাবালকত্বের কারণে তাকে সুবাহ বাংলার নায়েব নাজিম নিযুক্ত করা হয়। ১৭৬৫ থেকে ১৭৭০ সাল পর্যন্ত রেজা খান কার্যত ছিলেন বাংলার প্রকৃত শাসক।
যেমন দ্রুত রেজা খানের ক্ষমতায় অধিষ্ঠান ঘটেছিল,তেমনি দ্রুত এসেছিল তার পতন। তার উন্নতির মূল উৎস ছিলেন তার পৃষ্ঠপোষক রবার্ট ক্লাইভ। তৎকালীন পরিস্থিতিতে ক্লাইভ এদেশে কোম্পানির সরাসরি রাজ্যজয়ের নীতিতে বিশ্বাসী ছিলেন না। বরং তিনি ছিলেন পরোক্ষভাবে দেশে রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে কোম্পানির জন্য বাণিজ্যিক সুবিধা আদায়ের পক্ষপাতী। বাংলায় ক্লাইভের এই পরোক্ষ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাকে ঐতিহাসিকগণ 'দ্বৈত শাসন' বলে আখ্যাত করেছেন। ১৭৬৭ সালে তার দেশে ফিরে যাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত মুর্শিদাবাদ ও কলকাতায় ক্লাইভ প্রবর্তিত ব্যবস্থা সকল স্বার্থগোষ্ঠীর সন্তোষমাফিক কাজ করেছে। কিন্তু তখন থেকে তিনি প্রশাসনের ওপর তার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন। স্থানীয় কোন প্রতিনিধি ছাড়াই কোম্পানির কর্মচারীরা দেওয়ানী পরিচালনায় আগ্রহ প্রকাশ করতে থাকেন। এই প্রবণতার প্রথম বহিঃপ্রকাশ লক্ষ্য করা যায় যখন রেজা খানের নিয়ন্ত্রণহীন ক্ষমতাকে রোধ করার জন্য প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে ইউরোপীয় অফিসারদের জেলা তত্ত্বাবধায়ক পদে নিয়োগ করা হয় (১৭৬৯)। পরিশেষে তিনি পদচ্যুত হন এবং ১৭৭২ সালে কারারুদ্ধ হন। তার বিরুদ্ধে বহুবিধ দুর্নীতি ও উৎপীড়নের অভিযোগ এনে বিচার করা হয়। এই বিচার চলাকালে রেজা খান সাফল্যের সঙ্গে প্রমাণ করেন যে, কিভাবে তিনি ফোর্ট উইলিয়ম সরকারের দুর্নীতিপরায়ণ ও অত্যাচারী কোম্পানি অফিসারদের অপকর্মের ভারবাহী ব্যক্তিতে পরিণত হয়েছিলেন। অবশ্য ১৭৭৫ সালে পূর্ণ মর্যাদার সঙ্গে তিনি নায়েব দেওয়ান ও নায়েব নাজিমের পদে পুনর্বহাল হন। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে বাংলার রাজনৈতিক দৃশ্যপট নাটকীয়ভাবে পরিবর্তিত হয়। ১৭৭৩ সালে রেগুলেটিং অ্যাক্টের অধীনে এবং ওয়ারেন হেস্টিংসের কঠোর শাসনে উপনিবেশিক রাষ্ট্রে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে এবং এই প্রক্রিয়ার ফলে প্রশাসন থেকে স্থানীয় লোকেরা অপসারিত হতে থাকেন অথবা তাদের অবস্থান অকিঞ্চিৎকর অবস্থায় পর্যবসিত হয়। স্বীয় পদে পুনর্বহালের পর রেজা খান অবশ্য বাংলার নামমাত্র নায়েব নাজিম হিসেবে কাজ করতে থাকেন। অবশেষে ১৭৯১ সালে লর্ড কর্ণওয়ালিস এই খেতাবসার পদটি বিলুপ্ত করেন। হতাশাগ্রস্ত রেজাখানের কিছুকাল পরেই মৃত্যু হয়।

চন্দননগর - ১৭৫৭ সালে ২৪ মার্চ ইংরেজরা ফরাসীদের কাছ থেকে চন্দননগর দখল করে নেয়। ১৭৬৫ সালে ২৫ জুন ফরাসীরা চন্দননগর পুনরুদ্ধার করে। ১৭৭৮ সালে চন্দননগর পুনরায় ইংরেজদের দখলে চলে যায়। ১৭৮৫ সালে গোড়ার দিকে ইংরেজরা অপর পাঁচটি অধীনস্থ কুঠি সমেত চন্দননগর প্রত্যর্পণ করে। ১৭৯৩ সালে ১১ জুন ইংরেজদের দ্বারা চন্দননগর অধিকৃত হলে চূড়ান্তভাবে এর কলহের অবসান ঘটে এবং বাংলায় একটি সক্রিয় বাণিজ্যিক ও রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে ফরাসীদের ভূমিকার অবসান ঘটে।
নবাব সিরাজউদ্দৌলা তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ও গোপন চুক্তির কথা জানতে পারেন। কিন্তু তিনি দৃঢ়তা ও সাহসের সঙ্গে তাদের শাস্তি দিতে ব্যর্থ হন। তিনি মীরজাফরকে প্রধান সেনাপতির পদ থেকে অপসারণ করলেও জগৎ শেঠ ও অন্য ষড়যন্ত্রকারী উপদেষ্টাদের কুপরামর্শে আবার মীরজাফরের সাহায্য প্রার্থনা করেন। মীরজাফর পবিত্র কোরাণ শরিফ স্পর্শ করে ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে অঙ্গীকারবদ্ধ হন। নবাব সিরাজউদ্দৌলা তাকে বিশ্বাস করে সেনাপতির পদে পুনর্বহাল করেন। কিন্তু মীরজাফর তার শপথ ভঙ্গ করে পলাশীর যুদ্ধে ক্লাইভের সঙ্গে যোগ দেন। ফলে ১৭৫৭ সালে ২৩ জুন পলাশীর যুদ্ধে নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরাজয় হয় এবং তার পরাজয়ের সঙ্গে সঙ্গে বাংলার স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হয়।
একজন শাসক হিসেবে নবাব সিরাজউদ্দৌলার বড় দুর্বলতা ছিল এই যে, তিনি তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র বুঝতে পেরেও ষড়যন্ত্রকারীদের শাস্তি না দিয়ে বরং বারবার ক্ষমা করেছেন এবং তাদের আস্থা অর্জনের চেষ্টা করেছেন। তবে তার বয়স বিবেচনায় এসব দুর্বলতাকে স্বাভাবিকভাবে মেনে নেওয়া যায়। মাত্র বাইশ বছর বয়সে তাকে নবাবের দায়িত্বভার নিতে হয়েছিল। তবুও তিনি শাসক হিসেবে দক্ষতা, সাহসিকতা ও স্বাধীনচেতার যথেষ্ট স্বাক্ষর রেখেছেন। তার দুর্ভাগ্য ছিল যে,তার পরিষদ, উপদেষ্টা, সেনাধ্যক্ষসহ আত্মীয়-পরিজনরাও ক্ষমতার লোভে তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছিল। তিনি অকপটে যাদের বিশ্বাস করেছেন,তাদের অধিকাংশই ছিল বিশ্বাসঘাতক। বিশ্বাসঘাতক ও ষড়যন্ত্রেকারীরা সংখ্যায় এত বেশি শক্তিশালী ছিল যে, কোন নবাবের পক্ষেই টিকে থাকা সম্ভব ছিল না। তাই পলাশীর যুদ্ধে নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরাজয় তার ব্যক্তিগত ব্যর্থতাজনিত কোন পরাজয় ছিল না,এটি ছিল একটি জাতিগত পরাজয়, যার ফল ছিল পরবর্তী দুশো বছরের পরাধীনতা।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:২১

শতদ্রু একটি নদী... বলেছেন: আপনার জন্মজন্মান্তরের কাহিনীগুলো ভালোই। বিশেষ করে এই পর্বে অনেককিছু তুলে এনেছেন। ওইসময়ে আপনার জন্ম না হলে এতোটা নির্ভুলভাবে জানা আসলেই সম্ভব ছিলোনা। আরো অনেককিছু জানতে চাই। জানতে চাই চেঙ্গিস খানকে কোথায় দাফন করা হয়েছিলো। আপনি কি ওই সময়েও বর্তমান ছিলেন? থাকলে একটূ আওয়াজ দিয়েন। ;)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.