নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি জাতিস্মর। সপ্তমবার মানব জন্ম। অষ্টমবার মানব জন্ম নিয়ে আবার পৃথিবীর বুকে ফিরবো। সীতারাম নন্দী(১ম), কৃষ্ণকান্ত নন্দী(২য়),কাশিমবাজার রাজা কৃষ্ণনাথ রায়(৩য়),বিজয়কৃষ্ণদুলাল পাল(৪র্থ),হরিদাস মুখার্জী(৫ম),রমেশ সাহা(৬ষ্ঠ),প্রদীপ হালদার(৭ম)।

প্রদীপ হালদার

আমি জাতিস্মর। সপ্তমবার মানব জন্ম, অষ্টমবার মানব জন্ম নিয়ে আবার পৃথিবীর বুকে ফিরবো। সীতারাম নন্দী(১ম), কৃষ্ণকান্ত নন্দী(২য়),কাশিমবাজার রাজা কৃষ্ণনাথ রায়(৩য়),বিজয়কৃষ্ণদুলাল পাল(৪র্থ),হরিদাস মুখার্জী(৫ম),রমেশ সাহা(৬ষ্ঠ),প্রদীপ হালদার(৭ম)।

প্রদীপ হালদার › বিস্তারিত পোস্টঃ

রাণী ভবানী

০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:২২

রাণী ভবানী


আমি বুঝতে পারি নি, আমি আমার স্মৃতির এত গভীরে চলে যাবো। আজ দুদিন হলো, স্মৃতিতে থাকা সেই ঘটনার কথা আমাকে আবার মনে করিয়ে দিলো। ওয়ারেন হেস্টিংসের সময়ের ঘটনা। কলকাতায় আমি ওয়ারেন হেস্টিংসের অফিসে ছিলাম। সন্ধ্যাবেলায় আমি অফিসের বাইরে ছিলাম। আমার সহকর্মীরা আমাকে জানালো, "ওয়ারেন হেস্টিংস আমাকে নাকি জমিদারির দায়িত্ব দেবে।" আমি বললাম, "কোথাকার জমিদার?" একজন বললো, "কোথাকার জমিদারের দায়িত্ব তোমাকে দেবে, সেটা নিয়ে ওয়ারেন হেস্টিংস আলোচনা করছে।" একজন আমার কাছে এসে বললো, "কৃষ্ণকান্ত, তোমাকে রংপুরের জমিদারের দায়িত্ব দেবে।" আমি বললাম, "রংপুর কেন? ওখানকার জমিদার কে?" একজন বললো, "রংপুরের জমিদার একজন বিধবা ব্রাহ্মণ মহিলা।" আমি বললাম, "বিধবা ব্রাহ্মণ মহিলা? কিন্তু তার সম্পত্তি ওয়ারেন হেস্টিংস আমাকে দেবে কেন?" উত্তরে সে আমাকে জানালো, "ঐ বিধবা ব্রাহ্মণ মহিলা মাত্র পঞ্চাশ হাজার টাকা রাজকোষে জমা দেয়, অথচ ঐ জমিদার থেকে অনেক বেশী আয় হয়।" আমি বললাম, " বিধবা মহিলার সম্পত্তি আমি নিতে পারবো না, বরং ওয়ারেন হেস্টিংস ঐ সম্পত্তি অন্য কাউকে দিক অথবা ঐ মহিলা যাতে বেশী টাকা রাজকোষে জমা দেয় তার ব্যবস্থা নিক।" আমার সহকর্মী বললো, " সেজন্য কৃষ্ণকান্ত, ওয়ারেন হেস্টিংস তোমাকেই রংপুরের জমিদারের দায়িত্ব দিচ্ছে।" বললাম, "রংপুর কি এখানে? সে তো অনেকদূর। আমি কি করে ঐ জমিদার থেকে আয় বাড়াবো?" সহকর্মীটি বললো,"চিন্তা করো না, ওখানে আয় অনেক বেশী হয়। কিন্তু ঐ মহিলা আয়ের চেয়ে কম টাকা দিতো, মাত্র পঞ্চাশ হাজার টাকা দিতো।" আমি বললাম, "তবু আমি বিধবার সম্পত্তি নিতে পারবো না।" তখন অন্যান্য সহকর্মীরা বললো, "তোমার কথা কি ওয়ারেন হেস্টিংস শুনবে?" আমি জানতাম, "ওয়ারেন হেস্টিংস যেটা করবে বলেছে, সেটা সে করবেই।" তবুও আমি একবার ওয়ারেন হেস্টিংসের সামনে গেলাম। বললাম, "স্যার, আমাকে রংপুরের জমিদার দেবেন না, আমি বিধবার সম্পত্তি নিতে পারবো না।" আমার কথা শুনে হেস্টিংস বললেন, "কান্ত, আমি যখন তোমাকে দেবো বলেছি, তখন তোমাকে নিতেই হবে। আমি তোমার কোন কথাই শুনবো না।" হেস্টিংসকে আমি আর না বলতে পারলাম না। ঘরে এসে আমি সারারাত ঘুমাতে পারলাম না। আমার জন্য অন্য জমিদারের ব্যবস্থা করতে পারতো। পরের দিন আমি ওয়ারেন হেস্টিংসকে বললাম, "স্যার, রংপুরের বাহারবন্দের জমিদারের দায়িত্ব আমাকে দেবেন না, আমি নিতে পারবো না। আমার সারারাত ঘুম হয় নি।" হেস্টিংস বললেন, "কান্ত, সম্পত্তি তোমাকেই নিতে হবে। আমি যখন ঠিক করেছি, তখন তোমাকেই বাহারবন্দের সম্পত্তি নিতে হবে। তোমার কোন অজুহাত আমি শুনবো না।" আমি বললাম, "স্যার, বাহারবন্দের সম্পত্তি আমাকে না দিয়ে অন্য কাউকে দিন, আমি বিধবা ব্রাহ্মণের সম্পত্তি নিতে পারবো না।" ওয়ারেন হেস্টিংস বললেন, "কান্ত, সম্পত্তি তোমাকেই নিতে হবে। আমি তোমার কোন কথাই শুনবো না।" আমি নিরুপায় হয়ে ওয়ারেন হেস্টিংসকে বললাম, "স্যার, সম্পত্তি যখন দেবেন, তখন আমি নিজের নামে নিতে পারবো না। অন্য নামে আমাকে সম্পত্তি দিন।" বললাম, "যে কোন নামে।" হেস্টিংস বললেন, "কান্ত, যে কোন নামে নিতে পারো, কিন্তু সেই নামে কোন লোক তোমার বাড়িতে থাকতে হবে।" "তাহলে স্যার, আমার ভাই নৃসিংহের নামে দিন।" হেস্টিংস জানালেন, "তোমার ভাইয়ের নামে দিতে পারবো না। অন্য নাম বলো।" বললাম, "আমার পুত্র লোকনাথের নামে দিন।" হেস্টিংস বললেন, "তাই হবে।" আমি বললাম, "স্যার, আমার পুত্র লোকনাথের বয়স মাত্র এগারো বছর।" হেস্টিংস বললেন, "কোন অসুবিধে নেই, লোকনাথের নামেই তোমাকে সম্পত্তি দেওয়া হবে। বিধবার সম্পত্তি আমি আসলে তোমাকেই দিচ্ছি। তোমার ওপর আমার ভরসা আছে। তুমি এই সম্পত্তি রক্ষা করতে পারবে। অন্য কাউকে দিলে বিক্রী করে ফেলবে। আমি সেই কারণে বিধবার সম্পত্তি তোমাকেই দিচ্ছি। আসলে কান্ত, বাহারবন্দ তোমাকেই নিতে হবে, তাই তুমি যে নামেই নাও। লোকনাথ তোমার পুত্র। তাই তোমার পুত্রের নামে তোমাকে সম্পত্তি দিতে আমার কোন আপত্তি নেই।" আমার পুত্র লোকনাথের নামেই রংপুরের বাহারবন্দের জমিদারের দায়িত্ব নিলাম। ১৭৭৫ খ্রীস্টাব্দে ওয়ারেন হেস্টিংস রাণী ভবানীর নিকট থেকে বাহারবন্দ নিয়ে আমার পুত্র লোকনাথ নন্দীকে ইজারা দিলেন। আমি এমন সম্পত্তি নিতে চাই নি। হেস্টিংসকে বলেছিলাম, "এমন সম্পত্তি আমি চাই নে, বিধবার সম্পত্তি বিধবার কাছে থাকুক।" আমার কথা হেস্টিংস শোনেন নি। তখন আমার পুত্র লোকনাথের বয়স ছিল মাত্র এগারো বছর। হেস্টিংস আমাকে বাহারবন্দ প্রদান করলেন বটে, কিন্তু ওখানকার প্রজারা আমাকে কর প্রদান করতে স্বীকৃত হলো না। আমি হেস্টিংসকে জানালাম, "বাহারবন্দের প্রজারা আমাকে কর দিচ্ছে না।" হেস্টিংস আমার কথা শুনে রংপুরের কালেক্টর গুডল্যাডসাহেবকে চিঠি লিখে জানালেন। আমি ১৭৮৩ খ্রীস্টাব্দে বাহারবন্দ পরিদর্শনে গেলাম। আমি কাশিমবাজার থেকে ঘোড়ায় চড়ে রংপুরের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলাম। তিন দিন পরে আমি বাহারবন্দে পৌঁছালাম। আমি ঘোড়ায় চড়ে বাহারবন্দ পরিদর্শন করছিলাম। সকালবেলা। চাষীরা ক্ষেতে ছিল। চাষীরা আমাকে দেখতে পেয়ে বিদ্রোহ ঘোষণা করলো আর বললো, "আপনি বিধবার সম্পত্তি কেড়ে নিয়েছেন, রাণী ভবানীর সম্পত্তি কেড়ে নিয়েছেন, আমরা আপনাকে কোন খাজনা দেবো না, আপনি চলে যান।" আমি তাদেরকে বললাম, "ওয়ারেন হেস্টিংস, আমাকে ভবানীর সম্পত্তি দিয়েছে, আমি জোর করে নিই নি, তোমরা আমাকে বিশ্বাস করো।" প্রজারা আমার কথা শুনতেই চাইছিল না। তারা বললো, "ওয়ারেন হেস্টিংস বুঝি না, আমরা আপনাকেই চিনি, কেন নিয়েছেন বিধবার সম্পত্তি?" তারা হাতে লাঠি নিয়ে আমাকে ঘিরে ধরলো। হঠাৎ কোথা থেকে একটি লোক ঘোড়ায় চড়ে আমার কাছে এলো আর আমাকে জিজ্ঞাসা করলো, "তুমি কৃষ্ণকান্ত নন্দী না?" আমি বললাম, "হ্যাঁ, তুমি কি করে জানলে?" উত্তরে সে আমাকে বললো, "সে দেবী সিংহ। আমার কথা সে এইমাত্র, কালেক্টর গুডল্যাডসাহেবের মুখ থেকে শুনেছে, আমি বিপদে পড়েছি বলে কালেক্টর সাহেব তাকে আমার কাছে পাঠিয়েছে আমাকে উদ্ধারের জন্যে।" দেবী সিংহ প্রজাদেরকে বোঝালো। প্রজারা চুপ হলো। দেবী সিংহ সেদিন আমাকে রক্ষা করেছিল। নইলে সেই মুহূর্তে আমি প্রাণ নিয়ে ফিরে আসতে পারতাম না। কেননা সব প্রজারা লাঠি হাতে আমাকে ঘিরে ধরে রেখেছিল। দেবী সিংহ আমাকে বললো, "এখন কোথায় যাবে? গুডল্যাডসাহেবের সাথে দেখা করবে?" বললাম, "না, তুমি আমার প্রাণ রক্ষা করেছো, তোমাকে অশেষ ধন্যবাদ। আমি একবার রাণী ভবানীর সাথে দেখা করবো।" নাটোরে রাণী ভবানীর প্রাসাদে গেলাম। আমরা ঘোড়া থেকে নামলাম। দেবী সিংহ ভবানীকে ডাকলো। ভবানী ঘর থেকে বাইরে এলো। একজন বৃদ্ধা বিধবা ব্রাহ্মণ মহিলা আমার সামনে উপস্থিত হলো। দেবী সিংহ ভবানীর সাথে আমার পরিচয় করিয়ে দিলো। ভবানী আমাদের বসার জন্য একটা বেঞ্চ এনে দিলো। দেবী সিংহ আর আমি বেঞ্চটাতে বসলাম। ভবানী আমাদের দুজনকে মুড়ি খেতে দিলো। ভবানী আমাকে দুপুরে খাওয়ার জন্য বললো। দেবী সিংহ আমাকে বললো, "কৃষ্ণকান্ত, গুডল্যাডসাহেবের কাছে আমার অনেক কাজ আছে, তাই আমাকে এখনই চলে যেতে হবে।" আমি দেবী সিংহকে বললাম, "দেবী, তুমি তাহলে এসো। আমি খাওয়াদাওয়া সেরে কাশিমবাজারে চলে যাবো।" দেবী সিংহ চলে গেলো। বৃদ্ধা বিধবা ব্রাহ্মণ মহিলা আমার জন্য দুপুরবেলার খাবারের ব্যবস্থা করলো। আমি দেখলাম, মহিলা খুবই শান্ত প্রকৃতির। তাকে ছেড়ে চলে যাবার সময় বললাম, "ভবানী, তোমার সম্পত্তি আমি চাই নি। ওয়ারেন হেস্টিংসকে বুঝিয়েছিলাম। আমি জানি না, কেন হেস্টিংস তোমার সম্পত্তি আমাকে দিলো?" ভবানী আমাকে বললো, "কান্ত, তোমার কোন দোষ নেই। হেস্টিংস কেন আমাকে অপছন্দ করলো, তা তো জানি না।" আমি বললাম, "এখন তোমার কি করে চলে?" আমাকে বললো, "সামান্য যা কিছু আছে তাই দিয়ে কোন রকমে চলে যায়, একা মানুষ, আর মাঝে মধ্যে প্রজারা আমাকে দেখে।" আমি বললাম, "ভবানী, আমি কি বাহারবন্দের খাজনা দিয়ে তোমাকে সাহায্য করবো?" ভবানী বললো, "না, কৃষ্ণকান্ত, প্রজাদের খাজনা তুমি তোমার ওয়ারেন হেস্টিংসকে দিও। আমার কিছু চাই নে। আমি আর কদিন বাঁচবো বলো, শুধু প্রজাদের কথা ভাবি, তারা কি করে বাঁচবে, তবে একবার ইচ্ছা ছিল ওয়ারেন হেস্টিংসের সাথে দেখা করে বলবো, আমাকে কেন বাদ দেওয়া হলো, কি ছিল আমার অপরাধ? শুনেছি, ওয়ারেন হেস্টিংস কলকাতায় থাকে, সে তো অনেক দূর। কাছে হলে আমি এখনই গিয়ে তাকে জিজ্ঞাসা করতাম। কিন্তু সম্ভব নয়।" আমি ভবানীকে কথা দিলাম, "আমি এই ব্যাপারে হেস্টিংসকে জিজ্ঞাসা করবো।" আমি বিকালে ভবানীর বাড়ী থেকে বের হলাম। আমি ভাবলাম, "পঞ্চাশ হাজার টাকা রাজকোষে জমা দিলে বাকি টাকা নিয়ে ভবানী কি করতো? নিজের জন্যে ভবানী তো কিছু করে নি। তাহলে সেদিন আমার সহকর্মীরা মিথ্যা কথা বলেছিল?" আজ আমি ভবানীর সাথে কথা বলে বুঝলাম, "তার ঘরে দারিদ্র্যের ছাপ রয়েছে।" পরে বাহারবন্দের প্রজারা আমাকে খাজনা দেওয়া শুরু করেছিল। হেস্টিংসকে ভবানীর ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, কিন্তু কোন উত্তর পাই নি।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:১৮

চাঁদগাজী বলেছেন:

লেখা বুঝা যাচ্ছে কম।

২| ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:২৬

কল্লোল পথিক বলেছেন: বাহ! চমৎকার লিখেছেন মশাই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.