নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

pramanik99

আমার স্কুল জীবনের স্মৃতিগুলো বার বার মনে পড়ে। ফিরে যেতে ইচ্ছে করে সেই দিনগুলোতে।

প্রামানিক

শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

প্রামানিক › বিস্তারিত পোস্টঃ

ডাকাত করিম সর্দার বি.এ.বি.টি (ছোট গল্প)

১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:০২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

রাত দুইটার দিকে ট্রেন ময়মনসিংহ স্টেশনে পৌঁছিলে হকারদের সুরে বেসুরে চিল্লাচিল্লিতে সবার তন্দ্রা ছুটে গেল। সাবাই আড়মোড়া দিয়ে সোজা হয়ে বসল। দুই তিনজন প্যাসেঞ্জার হাতে ব্যাগ এবং পোটলা-পুটলি নিয়ে নেমে গেল। আবার চার পাঁচজন নতুন প্যাসেঞ্জার কামরায় উঠল। কিন্তু সিট ফাঁকা না থাকায় বসার জয়গা পেল না। আগে থেকেই চার পাঁচজন প্যাসেঞ্জার সিট না পেয়ে ট্রেনের মেঝেতে বসেছিল। নতুন প্যাসেঞ্জারগুলোও কামরার দরজার কাছে দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে রইল। দু’মিনিট পরেই ট্রেন ছেড়ে দিল।

শীতের রাত। সবার দেহেই শীতের পোষাক। কেউ কেউ মাথাসহ পুরো শরীর চাদর দিয়ে ঢেকে রেখেছে। ময়মনসিংহ স্টেশন ছাড়ার পর ঘুমের ভাব থাকলেও কেউ ঘুমের চেষ্টা করছে না। কারণ, সামনে গফরগাঁও স্টেশন। ডাকাতি হওয়ার ভয় আছে। সবাই সজাগ। রাতের অন্ধকারে বাইরে কিছুই চোখে পরছে না। চলন্ত ট্রেনের চাকা রেল লাইনের জোড়ার ফাঁকগুলোতে ধাক্কা খেয়ে তালমিলানো খটাখট্ খট্খট্ খটাখট্ খট্খট্ আওয়াজ আর বাতাসের হুঁ-উ-উ হুঁ-উ-উ শব্দ শোনা যাচ্ছে। রাতের অন্ধকার ভেদ করে ছুটে চলা ট্রেন আরো আধ ঘন্টা চলার পরে গফরগাঁও স্টেশনে এসে পৌঁছল।

গফরগাঁও ট্রেন থামার পর কামরা থেকে কেউ নামল না। তবে চাদর গায়ে একজন ভদ্রলোক উঠলেন। বসার কোনো জয়গা না পেয়ে অন্যান্য প্যাসেঞ্জারের সাথে সেও দাঁড়িয়ে রইলেন। প্যাসেঞ্জারটি ছয়ফুটের কাছাকাছি লম্বা, স্বাস্থ্য মাঝারি ধরনের তবে শক্তিশালী দেহ। মুখে খোঁচা খোঁচা গোফ-দাড়ি। মাথার চুলগুলো লম্বা লম্বা কিন্তু পরিপাটি করে আঁচড়ানো। গায়ে খদ্দরের মোটা শীতের চাদর। হাতে কাপড়ের একটি ব্যাগ।

হুইসেল দিয়ে গাড়ি গফরগাঁও স্টেশন থেকে ছেড়ে দিল। সবাই ভয়ে তটস্থ। গফরগাঁও ভয়ঙ্কর এলাকা। প্রায়ই গাড়িতে ভয়াবহ ডাকাতি হয়। সবার চোখে মুখে ভীতিভাব। গাড়ির গতি আস্তে আস্তে বাড়ছে। আউট সিগনাল পার হওয়া পর্যন্ত কেউ কোন কথা বলল না। আউট সিগনাল পার হওয়ার পরই গফরগাঁও থেকে যে ভদ্রলোক উঠেছেন তিনি গলা খাঁকারী দিলেন। ডান হাত নাড়িয়ে স্বাভাবিকের চেয়ে একটু জোরে বলে উঠলেন, "উপস্থিত সম্মানিত যাত্রী ভাই ও বোনেরা! আপনাদের চলার পথে আমি আপনাদের একটু বিরক্ত করবো। আপনারা কে কোথায় যাবেন জানিনা। তবে আপনাদের যাত্রা শুভ হোক এই কামনা করি। যা হোক, উপস্থিত যাত্রী ভাইয়েরা---"। এটুকু বলার পরেই সিটে বসে থাকা একজন যাত্রী বিরুক্তির স্বরে বলে উঠলেন, "আপনাদের হকারের জ্বালায় দিনেও গাড়িতে যায়া শান্তি পাই না, আবার রাইতে রওয়ানা দিছি, রাইতেও আপনারা প্যাচাল শুরু কইরা দিছেন। এহন মানুষ একটু চুপ কইরা ঘুমাইবো না আপনার প্যাচাল হুনবো?"

যাত্রীর কথা শেষ হতেই হকার জোড়হাত করে অনুরোধের সুরে বললেন, "প্লিজ বড় ভাই, একটু বলতে দেন। আমার পেটে লাত্থি মারবেন না। প্লিজ দয়া করে আমার দু’টি কথা শোনেন।"
কামরার কোনার সিটে বসে থাকা মাঝ বয়েসি এক ভদ্রলোক বলে উঠলেন, "এ্যাতো রাইতে আপনার কি কথা হুনবো? এসব কথা আমরা বহুত হুনছি। আপনাগো একই প্যাচাল আর ভাল লাগে না। এহন আপনি চুপ কইরা বইয়া থাকেন। রাইত কইরা কেউ দাঁতের মাজন-টাজন কিনবো না।"

হকার ডান হাতটি অর্দ্ধ মুষ্ঠি করে হাতের মধ্যমা আঙুলের উপরের কড়ায় বুড়ো আঙুলের মাথা ছুঁয়ে আঙুলটি একটু উপরের দিকে উঠিয়ে লোকটির দিকে আঙুল তাক করে অতি বিনীতভাবে বললেন, "বড় ভাই, আপনি আমার মুরুব্বি, দয়া করে আমার একটু কথা শুনুন। শুনলেই বুঝতে পারবেন। অন্য হকারদের কাছে যা শুনেছেন আমি তা বলবো না।"
অন্য একটি প্যাসেঞ্জার বলে উঠলেন, "আপনে আবার নতুন কইরা কি হুনাইবেন, হুনান"।
হকার মাঝ বয়েসি লোকটিকে জিজ্ঞেস করলেন, "আপনি নিশ্চয় মাসে দু’একবার এই পথে যাতায়াত করেন"?
মাঝ বয়েসি প্যাসেঞ্জার উত্তর দিলেন, "মাসে কিসের, সপ্তাহে দু’একবার যাতায়াত করতে হয়"।
হকার বললেন, "তাহলেতো বড় ভাই আপনার এ রাস্তা সম্বন্ধে ভাল অভিজ্ঞতা আছে। আপনি নিশ্চয় ব্যবসা করেন"?
মাঝ বয়েসি প্যাসেঞ্জার উত্তর দিলেন, "এই ছোট খাটো ব্যবসা করি আরকি"।

হকার আবার দুই হাত একত্র করে জোড় হাতে সবার কাছে অনুরোধ করে বললেন, "সম্মানীত যাত্রী ভাইয়েরা! প্লিজ! দয়া করে আমার বলার মাঝখানে আর কেউ কথা বলবেন না। একটু মনোযোগসহকারে আমার কথাগুলো শুনুন। প্রথমেই আমি আপনাদেরকে সতর্ক করে দিচ্ছি। বর্তমানে ট্রেনটি গফরগাঁও ছেড়ে এসেছে। সামনে মশাখালী স্টেশন। আপনারা সবাই সাবধানে থাকবেন। আপনাদের টাকা পয়সা এবং মূল্যবান জিনিসপত্র নিরাপদে রাখবেন। গফরগাঁও এলাকাটি খুব ভাল নয়। প্রায়ই এখানে ডাকাতি হয়। আমার শ্রদ্ধেয় মা-বোনেরা যারা এই কামরায় বসে আছেন, আপনাদের হাতে, কানে বা গলায় কোন স্বর্ণের মূল্যবান অলঙ্কার থাকলে কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখুন। যাতে আপনাদের মূল্যবান স্বর্ণের অলঙ্কার সহজেই খোয়া না যায়"।

হকারের কথা শুনে অনেকেই তাদের জিনিষ-পত্র, টাকা-পয়সা নিরাপদ রাখার চেষ্টা করতে লাগল। কিছু লোক আবার কিছুই করল না। মনে হলো তাদের কাছে টাকা পয়সা তেমন নাই বা থাকলেও পরিমাণে খুবই কম। ডাকাতের হাতে খোয়া গেলেও তেমন আফসোস থাকবে না। দু’তিনটি মহিলা তাদের গলার ও কানের গহনা শাড়ির আঁচল ও গায়ের চাদর দিয়ে ভাল করে ঢেকে নিল।
হকারের সুন্দর উচ্চারণ করে গুছিয়ে কথা বলার ধরণ দেখে আর কেউই কোন প্রতিবাদ করল না। হকার একটু দম নিয়ে আবার তার বক্তব্য শুরু করলেন, “উপস্থিত, সম্মনীত যাত্রী ভাইয়েরা, আমাকে হকার ভেবে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য বা আমার সাথে যাচ্ছেতাই ব্যবহার করবেন না। আমি হকার হলেও একজন শিক্ষিত বেকার যুবক। দেশ স্বাধীনের পরে বি.এ পাশ করেছি। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় আমার ভাগ্যে কোন চাকরী জোটেনি। আমি শুধু বি.এ পাশ করিনি, আমি বর্তমানে বি.এ.বি.টি। তাই ডিগ্রি অনুযায়ী আমার নাম করিম সর্দার বি.এ.বি.টি.। দীর্ঘদিন চাকুরীর জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরেছি এবং এখনও ঘুরছি। চাকরীর ক্ষেত্রে আমার চাচা, মামা, খালু বা টাকা-পয়সার জোর না থাকায় কারো কাছ থেকে কোন সহযোগীতা পাচ্ছি না। জানিনা আমার এ পোড়া কপালে ভবিষ্যতে চাকরী জুটবে কিনা? তবু আশা ছাড়িনি, চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমি পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে বাবা মায়ের বড় সন্তান। ডিগ্রি পাশ করার পরেও কোন কর্ম না থাকায় বাবা মায়ের ঘাড়ে বোঝাস্বরুপ হয়েছি। আয়-রোজগার বা টাকা-পয়সার অভাবে বাবা-মায়ের কাছেও যেমন দাম পাচ্ছি না, তেমনি লোক সমাজে সবসময় হেয় প্রতিপন্ন হচ্ছি। লেখা পড়া করার কারণে আমার পক্ষে দিন মুজুরের কাজ করাও সম্ভব নয়। রিক্সা চালানও সম্ভব নয়। তাই আমার এই অসহায় অবস্থা দেখে আমার এক বড় ভাই আমার হাতে একটি জিনিস দিয়ে বলল, "করিম, যতদিন তোর বেকার জীবন থাকবে, ততদিন কারো কাছে হাত পেতে মাথা নত করতে হবে না। এই জিনিসটি ব্যবহার করে সাহসের সাথে কিছু আয়-রোজগার করে খেতে পারবি"। এই জন্য ভাই, আজ আমি আপনাদের কাছে সেই জিনিসটি নিয়ে এসেছি। আপনারা ধৈর্য ধরে বসে থাকুন। আমি সবাইকে জিনিসটি দেখাবো। তবে ভাই, আমার জিনিসটি দেখার পরে কেউ নড়াচড়া করবেন না। যার কাছে যা সামর্থ আছে আমাকে দিয়ে কৃতার্থ হবেন। আমি আপনাদের কাছে সাহয্যও চাইনা, আবার জোর করেও নিতে চাই না। জিনিসটি দেখার পরে আপনারা আপনাদের সাধ্য অনুযায়ী স্বেচ্ছায় আপনাদের অর্থ-কড়ি যে যা পারেন দিয়ে দিবেন, এইটাই আমি আপনাদের কাছে আশা করি।

হকারের কথা শুনে অনেকেই বক্তব্যের মাথা-মুন্ড না বুঝেই জিনিসটি দেখার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করলে, হকার মাথা ঝাঁকিয়ে হাত নাড়িয়ে বললেন, "থ্যাঙ্ক ইউ ব্রাদার, থ্যাঙ্ক ইউ, আপনারা যখন দেখতে চেয়েছেন, অবশ্যই আমি আপনাদের দেখাবো"।
দরজার কাছে বসে থাকা দু’তিনজন গরীব লোককে হকার খুব নরম সুরে বললেন, "বাবাজি, আপনারা একটু ঐদিকে সরে বসুন"। একজন বৃদ্ধলোক নিচে বসা ছিল, তাকে খুব সম্মানের সাথে বললেন, "চাচাজান, আপনিও একটু ঐদিকে সরে বসেন। এইদিকে এই দরজাটা একটু ফাঁকা করেন। এইখানে খোলামেলা জায়গায় দাঁড়িয়ে থেকে আমি আপনাদের জিনিসটি দেখাবো।"
গরীব লোকগুলো বিরক্তভরে বলে উঠল, "কি জিনিস দেখাইবেন ভাই, পুরা জায়গা ফাঁকা কইরা দিতে হইবো"।
হকার বললেন, "দেখলেই বুঝতে পারবেন ভাই, কেন জায়গা ফাঁকা করছি"?

সিটে বসে থাকা অনেকেই বলল, "ও ভাই, আপনারা একটু সরে বসেন না, দেখি উনি কি জিনিস দেখায়"।
গরীব লোকগুলো ভিতর দিকে সরে যাওয়ায় দরজার কাছে অনেকখানি জায়গা ফাঁকা হলো। ফাঁকা জায়গায় দাঁড়িয়ে হকার বললেন, "সম্মানিত যাত্রী ভায়েরা, আমি এখন আপনাদের কাঙ্খিত জিনিসটি দেখাবো। জিনিসটি দেখার পরে কেউ নড়াচড়া করবেন না। কারণ, নড়াচড়া করলে আমার অসুবিধা হবে। আমার অসুবিধা হলে আপনাদেরও অসুবিধা হতে পারে"।
কোনায় বসে থাকা মাঝ বয়েসি প্যাসেঞ্জারটি বলে উঠল, "আরে ভাই, এ্যাতো প্যাচাল না পাইরা যা দেখাইবেন দেখান তো"।
হকার বললেন, "ঠিক আছে ভাই, দেখাচ্ছি। সবাই হাতগুলো নিচে নামান এবং আমার দিকে তাকান"।
সবাই হকারের দিকে তাকাল। হকার গায়ের চাদর খুলে যে জিনিসটি বের করল তা দেখে সবাই হতবাক। জিনিসটির নলের মাথা প্যাসেঞ্জারদের দিকে তাক্ করে ধরতেই সবার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেল। কারো মুখে কোন কথা নেই। হকার কর্কস কন্ঠে বলে উঠল, "যার কাছে যা আছে তাড়াতাড়ি দিয়ে দেন, কার কার কাছে স্বর্ণের অলঙ্কার আছে এবং কার কার কাছে টাকা পয়সা আছে আমি সব লক্ষ্য করেছি, আমার চোখকে ফাঁকি দিয়ে কেউ কিছু লুকানোর চেষ্টা করবেন না, লুকানোর চেষ্টা করবেন তো গুলি করে মাথার খুলি উড়িয়ে দিব"।

হকারের কাছাকাছি সিটে বসে থাকা এক প্যাসেঞ্জার কি যেন বলতে যাচ্ছিল, অমনি স্টেনগানের নলের মাথা দিয়ে ঠাস করে মাথায় বাড়ি দেয়ার সাথে সাথে সবাই একদম চুপ হয়ে গেল।
আবার সে হুঙ্কার দিয়ে বলে উঠল, "আমাকে এতক্ষণ আপনারা হকার হিসাবে মনে করেছেন, আমি আসলে হকার নই। আমি গফরগাঁওয়ের কুখ্যাত ডাকাত। আমার নাম ডাকাত করিম সর্দার বি.এ.বি.টি। ডাকাত করিম সর্দারের সামনে কেউ চালাকি করার চেষ্টা করবেন না। খবরদার! যে যেখানে বসে আছেন সেখানেই বসে থাকবেন"। এরপর ডাকাত করিম সর্দার মাথা দিয়ে ইশারা করতেই ময়মনসিংহ থেকে যে প্যাসেঞ্জারগুলো উঠেছিল তাদের তিনজন মহুর্তেই ধারালো চাকু বের করে অন্য প্যাসেঞ্জারদের গলায় চেপে ধরলো। জীবনের ভয়ে তারা টাকা-পয়সা বের করে দিল। অস্ত্রের ভয়ে অনেকেই তাড়াতাড়ি নিজের থেকেই টাকা পয়সা দিয়ে দিল। দু’একজন দিতে গড়িমসি করলে চর-থাপ্পর দিয়ে তাদের পকেট থেকে জোর করে টাকা-পয়সা ছিনিয়ে নিয়ে নিল।
কোনায় বসে থাকা সেই মাঝ বয়েসি প্যাসেঞ্জার টাকা বের করতে দেরি করায় তার মাথায় চাকু দিয়ে খোঁচা দিতেই ওরে --- বাবারে --- ওরে--- বাবারে --- বলে সব টাকা দিয়ে দিল। মহিলারাও তাদের হাতে, কানে, গলার গহনা খুলে তাদের হাতে তুলে দিতে বাধ্য হলো। সবার কাছ থেকে টাকা-পয়সা জিনিসপত্র ছিনিয়ে নিয়ে তিন ডাকাত করিম সর্দারের কাছে চলে এলে ডাকাত করিম সর্দার আবারো সবাইকে হুঁশিয়ারী দিয়ে বলে উঠল, "খবরদার! কেউ নড়াচড়া করবেন না। নড়াচড়া করবেন তো মাথার খুলি উড়িয়ে দিব। আমরা নেমে না যাওয়া পর্যন্ত একদম স্টিল বসে থাকবেন"।

সবাই নিরব নিস্তব্ধ হয়ে বসে রইল। কেউ নড়াচড়া তো দূরে থাক, কথা বলার সাহসও পেল না। একটু পরেই মশাখালি স্টেশনের আউট সিগনালে ট্রেন পোঁ----পোঁ---- হুইসেল দিয়ে থেমে গেল। ট্রেন থামার পূর্বেই তারা চলন্ত গাড়ি থেকে লাফিয়ে নেমে গেল। কেউ তাদের নেমে যাওয়ার পথে বাধা দেয়ার চেষ্টা করল না। কেউ জানালা বা দরজা দিয়ে কামরার বাইরে নিচের দিকেও তাকালো না।
ডাকাত করিম সর্দার দলবল নিয়ে ট্রেন থেকে নেমে রেল সড়কের পাশের ঝোপঝাড়ের ভিতর অন্ধকারে অদৃশ্য হয়ে গেল। ডাকাত নেমে যাওয়ার পরেও কেউ কথা বলল না। স্টেন গানের নলের আঘাতে যার মাথা ফেটেছে সে মাথা হাতিয়ে নাকি সুরে কাঁদছে। চাকুর খোঁচায় মাঝ বয়েসি প্যাসেঞ্জারের মাথা দিয়ে রক্ত ঝরছে। সেও বসে বসে কাঁদছে। গহনা-গাটি হারিয়ে মহিলাদের চোখের পানি গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়লেও, তাদের কন্ঠ থেকে কোন কান্নার শব্দ বের হলো না। পুরো কামরা নিরব নিস্তব্ধ। কয়েক মিনিট এভাবেই নিরবে কেটে গেল। আউট সিগনাল থেকে ট্রেন আবার পোঁ----- পোঁ----- হুইসেল দিয়ে ছেড়ে দিল। ট্রেন ছাড়ার কিছুক্ষণ পরে মেঝেতে বসে থাকা কাঁথা গায়ে একজন গরীব দিন মুজুর নিরবতা ভঙ্গ করে বলে উঠল, "এদেশে কিবায় চলবো মানুষ, হকার সাইজা ডাহাতি কইরা গেল। কুন মানুষটা ভালা, আর কুন মানুষটা মুন্দ, বুজন মুশকিল"।

এরপরেও কেউ একটি কথাও বলল না। সবাই যেন অনাকাংখিত এরকম ডাকাতের হাতে সর্বস্ব খুইয়ে বাকশক্তি হারিয়ে বসে আছে। ট্রেন দ্রুত গতিতে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছুটছে। বাইরে শুধু অন্ধকার আর অন্ধকার। বাড়ি-ঘর, গাছ-গাছালি কিছুই চোখে পড়ছে না। শুধু রেল লাইনের জোড়াগুলোতে ট্রেনের চাকা ঘর্ষণের খটাখট্ খট্খট্, খটাখট্ খট্খট্ শব্দ এবং ট্রেনের দ্রুত গতির কারণে বাতাসের হুঁ-উ-উ হুঁ-উ-উ আওয়াজ ছাড়া আর কোন শব্দ কারো কানে আসছে না।

== সমাপ্ত =
ছবি নেট

মন্তব্য ৩২ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (৩২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:১৪

গেম চেঞ্জার বলেছেন: পড়ে ফেলছি। :) মজাও পাইলাম। ঐখানে সাহসী কোন লোকই ছিল না। হায়! কপাল?

১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:৩৬

প্রামানিক বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই গেম চেঞ্জার। গল্পটি পড়ার জন্য অনেক অনেক শুভ্চেছা রইল।

২| ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:২৫

খেয়া ঘাট বলেছেন: গল্পটি খুব ভালো হয়েছে। দুবার পোস্ট হয়েছে।
গল্পের নাম দেখেই হকারই যে ডাকাত করিম সেটা বুঝতে পেরেছিলাম।

১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:৩৭

প্রামানিক বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই খেয়া ঘাট। ঠিক করে দিয়েছি। গল্পটি পড়ার জন্য অনেক অনেক শুভেচ্ছা।

৩| ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:৩৬

লাইলী আরজুমান খানম লায়লা বলেছেন: সুপার !! এত সুন্দর করে লিখেন কি করে !!!!!!!!! প্রথম হতে শেষ -- সুন্দরে ভরা

১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:৩৯

প্রামানিক বলেছেন: ধন্যবাদ বোন লাইলী আরজুমান খানম লায়লা। গল্প পড়ার জন্য অনেক অনেক শুভ্চেছা রইল।

৪| ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:৪৩

গোধুলী রঙ বলেছেন: বাঙাল নলের আগায় যা সাহস দেখানোর তা ৭১ আর তার আগেই দেখিয়ে ফেলেছে, আর পারে নাহ।

১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:৪৬

প্রামানিক বলেছেন: ৭১-এর বাস্তব অভিজ্ঞতার পরে আর কি সাহস থাকে?

৫| ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:৪৮

উচ্ছল বলেছেন: ভালো লেগেছে।

১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:৫২

প্রামানিক বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই উচ্ছল। অনেক অনেক শুভ্চেছা রইল।

৬| ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:৫২

সুমন কর বলেছেন: "এদেশে কিবায় চলবো মানুষ, হকার সাইজা ডাহাতি কইরা গেল। কুন মানুষটা ভালা, আর কুন মানুষটা মুন্দ, বুজন মুশকিল"। -- আসলেই কিছু বোঝা যায় না !!

বর্ণনা ভালো হয়েছে।

১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:১৬

প্রামানিক বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই সুমন কর। আপনার মূল্যবান মন্তব্যর জন্য শুভ্চেছা রইল।

৭| ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:১৪

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: প্রামানিক ভাই এর মমিসিং এর গল্প ভাল্লাগলো ।

১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:১৮

প্রামানিক বলেছেন: আমার দেহেও কিন্তু বৃহত্তর মমিসিং-এর রক্ত। মূল্যবান মন্তব্যর জন্য ধন্যবাদ।

৮| ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:১৮

আজমান আন্দালিব বলেছেন: গল্পটি ভালো হয়েছে। বর্ণনা সুন্দর। একজন বেকার যুবকের মুখ দিয়ে বাস্তব কিছু কথা বের হয়ে এসেছে। সামাজিক অসঙ্গতির কথা। হকারের বেশে ডাকাত চরিত্রটির চিত্রায়ন সুন্দর হয়েছে।

১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:১৯

প্রামানিক বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই আজমান আন্দালিব। আপনার মূল্যবান মন্তব্য পড়ে অনুপ্রাণিত হলাম। শুভেচ্ছা রইল।

৯| ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:৩৮

ফেরদৌসা রুহী বলেছেন: আহারে।

গফরগাঁওয়ের ডাকাত তো দেশ বিখ্যাত।

১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:৪৩

প্রামানিক বলেছেন: ঠিকই বলেছেন বোন ফেরদৌসা রুহী। এক সময় এদের জ্বালায় রাতের ট্রেনে ভ্রমণ করা খুব বিপদজনক ছিল।

১০| ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:৪৪

হাসান কালবৈশাখী বলেছেন:
শেষটায় কিছু আসা করেছিলাম। জমলনা .......

১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:০৬

প্রামানিক বলেছেন: কি আশা করেছিলেন ভাই?

১১| ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:১৩

দেবজ্যোতিকাজল বলেছেন: ভাল লিখেছ:D:D

১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:৩৪

প্রামানিক বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই দেবজ্যোতি কাজল। অনেক অনেক শুভেচছা রইল।

১২| ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:৪৬

সচেতনহ্যাপী বলেছেন: সাবধান!! উৎসাহ দেবার বা গৌরবজ্জল গল্প তুলে ধরার কেসে ফেঁসে যেতে পারেন!!
তবে ৭০ দশকের মাঝামাঝি থেকে শেষদিকে অনেকবারই যেতে হয়েছে,ময়মনশিংহ,জামালপুর।। সেই ফুলপুর,হালুয়াঘাট পর্যন্ত।। সবই বোধহয় ঐ "কু্খ্যাত" গফরগাওকে ছাড়িয়েই।। সৌভাগ্য না দূর্ভাগ্য,এমন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয় নি।।

১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১:০৬

প্রামানিক বলেছেন: দেশ স্বাধীনের পরে গফরগাঁওয়ের ডাকাতদের হাতে প্রায়ই ট্রেন ডাকাতি হতো। পুলিশ দিয়েও ঠেকানো সরকারের পক্ষে কষ্ট হয়েছিল। ধন্যবাদ ভাই সচেতন হ্যাপী। মন্তব্য করার জন্য শুভ্চেছা রইল।

১৩| ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:৩১

কিরমানী লিটন বলেছেন: "এদেশে কিবায় চলবো মানুষ, হকার সাইজা ডাহাতি কইরা গেল। কুন মানুষটা ভালা, আর কুন মানুষটা মুন্দ, বুজন মুশকিল"।
ঠিক বলেছেন-হাজারো মুখোসে-মুখই আড়াল পরে গেছে। অনবদ্য ভালোলাগার গল্প, চমৎকার সুখপাঠ্য। অনেক শুভকামনা প্রিয় প্রামানিক ভাইয়ের জন্য ...

১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:০১

প্রামানিক বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই কিরমানী লিটন। গল্পটি পড়ার জন্য অনেক অনেক শুভ্চেছা রইল।

১৪| ২০ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:২৫

হাসান মাহবুব বলেছেন: খাইছে, এইডা আশা করি নাই। চরম লিখসেন! ঐ লাইনে কি আপনার যাতায়াত ছিলো প্রামানিক ভাই?

২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৩৪

প্রামানিক বলেছেন: যমুনা সেতু হওয়ার আগে ঐ লাইনেই যাতায়াত করতে হতো। ধন্যবাদ

১৫| ২০ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৪:৪৯

রানা আমান বলেছেন: দারুন গল্প তো ! ভালো লিখেছেন প্রামানিক ভাই ।

২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৩৪

প্রামানিক বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই রানা আমান। অনেক অনেক শুভ্চেছা রইল।

১৬| ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ২:৪৫

এস এম পাশা বলেছেন: বুঝা মুশকিল

২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ২:৫৫

প্রামানিক বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই পাশা। পড়ার জন্য শুভ্চেছা রইল।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.