নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

pramanik99

আমার স্কুল জীবনের স্মৃতিগুলো বার বার মনে পড়ে। ফিরে যেতে ইচ্ছে করে সেই দিনগুলোতে।

প্রামানিক

শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

প্রামানিক › বিস্তারিত পোস্টঃ

অমাবস্যার ভুত (গল্প পর্ব-১)

০২ রা জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ৯:৪৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আমার দূরসম্পর্কের ভাতিজা নাদু সন্ধ্যার সময় আমার পড়ার ঘরে এসে বলল, ‘চাচা আইজ রাইতে আমরা নদীতে মাছ ধরবার যামু। আপনে আমার সাথে যাইবেন। আপনার কিছুই করা লাগবো না, শুধু খালুই ধইরা থাকলেই চলবো।’

নাদুর ভাল নাম নাদের আলী। সবাই তাকে সংক্ষেপে নাদু নামে ডাকে। বয়সে আমার চেয়ে দুই বছরের বড়। দুই বছরের বড় হওয়ায়, গ্রামের রীতি অনুযায়ী আমিও তাকে নাম ধরে না ডেকে চাচা বলে ডাকি, নাদুও তার বাবার ভাই সম্পর্ক হওয়ায় আমাকে নাম ধরে না ডেকে চাচা বলে ডাকে। যে কারণে আমরা উভয়েই উভয়কে সবসময় চাচা সম্বোধন করে থাকি।

রাত ৮টার আগেই রাতের খাওয়া শেষ করে নাদু আমার ঘরে এসে বসল। আমি তখন ক্লাসের পড়া পড়ছিলাম। পড়া বন্ধ করে বললাম, চাচা, কখন মাছ ধরতে যাবেন?
নাদু জবাব দিল, আপনের পড়া শ্যাষ হইলেই রওনা দিমু।
-- কোথায় যাবেন?
-- নদীতে।
-- কোন নদীতে?
-- বড় নদীতে।
আমাদের এলাকায় আরো নদী আছে। সেগুলি আকারে ছোট। ঐ নদীগুলির তুলনায় যমুনা নদী অনেক বড়। সেইজন্য আমরা যমুনা নদীকে বড় নদী বলে থাকি। আমি আমার ক্লাসের পড়া শেষ করে নাদুকে বললাম, চাচা চলেন যাই।
নাদু এতক্ষণ আমার ঘরেই জাল এবং খালুই নিয়ে বসে ছিল। বলা মাত্রই আমাকে বলল, চাচা হারিকেনে ত্যাল আছে তো?
টেবিলের উপর থেকে হ্যারিকেন হাতে নিয়ে ঝাঁকি দিয়ে তেলের পরিমাণ অনুমান করে বললাম, যে তেল আছে তাতে সারা রাত চলবে, কোন অসুবিধা হবে না।
নাদু বলল, তাইলে চলেন।
আমি হ্যারিকেন হাতে নিয়ে রাতের অন্ধকারে আগে আগে রওনা হলাম। নাদু এক হাতে খালুই ও অন্য হাতে জাল নিয়ে আমার পিছনে পিছনে রওনা হলো। দু’এক পা অগ্রসর হওয়ার পরেই নাদু থমকে দাঁড়িয়ে আমাকে উদ্দেশ্য করে বলল, চাচা, একটু দাঁড়ান তো-- একটা লাঠি নিয়া নেই।
-- লাঠি দিয়ে কি হবে?
-- রাইত বিরাইতে চলতে গেলে হাতে লাঠি থাকা ভাল। অনেক বিপদ-আপদ থাইকা রেহাই পাওয়া যায়। ধরেন, যদি একটা বড় মাছ পাই, তাইলে লাঠিতে বাইন্ধা দুই জনে ঘাড়ে কইরা নিয়া আসমু। আবার ধরেন, জালে যদি সাপ-টাপ উঠে, তাইলে তো সাপ মারার জন্যেও লাঠির দরকার হইবো।
নাদুর যুক্তিপূর্ণ কথা শুনে বললাম, তাহলে ঘরে থেকে বাঁশের শক্ত লাঠিটা নিয়ে আসেন।
নাদু সময় নষ্ট না করে তাড়াতাড়ি ঘর থেকে লাঠি নিয়ে এলো, আমরা দু’জন আবার রওয়ানা হলাম।

রাত তখন ১১টা হবে। কার্তিক মাস। বাইরে ঘুটঘুটে অন্ধকার। সারা গ্রাম নিরব নিস্তব্ধ। কোথাও কোন সাড়া শব্দ নেই। রাস্তার দু’ধারে ধান ক্ষেত। নিচু জমিগুলোতে বন্যার পানি থাকলেও উচু জমি থেকে পানি নেমে গেছে। দু’একটি খেঁকশিয়াল রাস্তায় চোখে পড়লেও আমাদের দেখা মাত্রই মুহুর্তেই ধান ক্ষেতের ভিতর দৌড়ে অদৃশ্য হয়ে গেল। হ্যারিকেনের আলো দেখে রাস্তার উপর বসে থাকা ব্যাঙের লাফালাফি শুরু হলো। লাফ দেয়া কিছু ব্যাঙের পেসাব ছিটকে আমাদের পায়ে পড়ল। ব্যাঙের পেসাবে পা দু’টি আধাভেজা হওয়ার অবস্থা। কিছুক্ষণ যাওয়ার পর সামনে ঢোঁড়া সাপ চোখে পড়ল। রাস্তার এপার থেকে আঁকাবাঁকা হয়ে ওপার চলে যাচ্ছে। নাদু লাঠি উপরে তুলে বাড়ি দিতে যাবে, আমি নিষেধ করে বললাম, চাচা, রাত করে সাপ মারার দরকার নাই, ও ওর মতো চলে যাক।

আমার কথা শুনে নাদু সাপ মারা থেকে বিরত থাকল। সাপ রাস্তার অপর পাড়ে নিচে নেমে গেলে আমরা আবার হাঁটা শুরু করলাম। এমনিভাবে কিছুক্ষণ হাঁটার পর পানি উন্নয়েনের উচু বাঁধে এসে উঠলাম। বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ হওয়ায় সমতল থেকে অনেক উঁচু। বাঁধ ডিঙিয়ে বাঁধের পূর্বপার্শ্বে নিচে নামতে হবে। পশ্চিম পার্শ্বের চেয়ে পূর্বপার্শ্বের বাঁধের ঢালু একটু বেশি এবং নিচের দিকে খাড়া, তাই সন্তর্পণে নামতে হচ্ছে, একটু অসাবধান হলেই নিচে গড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা। আমরা খাড়াভাবে না নেমে আড়াআড়িভাবে বাঁধের নিচে নেমে এলাম। বাঁধের নিচেই নালার মতো আছে। হাঁটুর উপরে পানি। বাঁধের নিচে সরাসরি নালায় নেমে গেলাম। নালা পার হয়ে পূর্বপার্শ্বে পাড়ে উঠেই আবার ধানক্ষেত। ধানক্ষেতের মাঝদিয়ে চওড়া আইলপথে সোজা পূর্ব দিকে রওনা হলাম।

প্রায় দেড় মাইল হাঁটার পর আরেকটি ছোট পাঁচ ছয় ফুট উঁচু রাস্তা। এই রাস্তা ধরে একটু উত্তর দিকে গিয়ে রাস্তার পূর্ব পার্শ্বে নেমে এলাম। রাস্তার পূর্ব পার্শ্বেই বালুচর। বালুচরে ঢোকার পথেই হাতের বাম পার্শ্বে শ্মশান। এক সময় এই শ্মশান নদীর তীরে ছিল। অত্র এলাকার সমস্ত হিন্দুদের মরদেহ এখানে পোড়ানো হতো। নতুন বালুচর জেগে উঠায় নদী অর্ধ মাইল পূর্বদিকে সরে গিয়েছে। শ্মশানের নিকট পানি না থাকায় এখন কেহ এখানে মরদেহ পোড়ায় না। শ্মশানটি পরিত্যক্ত অবস্থায় নানা ধরনের আগাছা গঁজিয়ে ঝোপ ঝাড়ে পরিণত হয়েছে। একেতো শ্মশান তারোপর ঘন ঝোপ-ঝাড়ে পূর্ণ। ভুতের ভয়ে এই জঙ্গলের ভিতর রাতে তো দূরের কথা দিনেও কোন মানুষ ঢোকে না। সন্ধ্যার পরে একান্ত প্রয়োজন ছাড়া এই এলাকায় কেউ যাতায়াত করেনা বললেই চলে।
শ্মশান পার হয়ে বালুচরে ঢুকতেই কি যেন ফুরুৎ করে কানের কাছ দিয়ে উড়ে গেল। হঠাৎ কানের কাছে ফুরুৎ শব্দ করায় চমকে উঠলাম। নাদু বিষয়টি আঁচ করতে পেরে সাহস দিয়ে বলল, চাচা এইটা কিছু না, রাইতচোরা পাখি। এরা দিনে লুকায়া থাকে রাইতে উইড়া উইড়া পোকা মাকড় ধইরা খায়।

চমকে উঠার কারণ ছিল, পিছনেই শ্মশান। অনেকের কাছেই শুনেছি, সন্ধ্যার পরে সাদা কাপড় পরে একটি বউ শ্মশানের পাশের রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকে। কথা বললে কোন জবাব দেয় না। ধরতে গেলে অদৃশ্য হয়ে যায়। কখনও কখনও কুকুর, বিড়াল, শুকুরের চেহারা নিয়ে সামনে এসে দাঁড়ায়। ধমক দিলে নড়াচড়া না করে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে। তাড়াতে গেলে অদৃশ্য হয়ে যায়। এদিক ওদিক তাকিয়ে আবার তাদের দিকে তাকালে মহুর্তেই চেহারা পরিবর্তন করে ভয়ঙ্কর রুপ ধারণ করে। ঐসব দৃশ্য যারা দেখেছে তাদের অনেকেই নাকি ভয় পেয়ে মরার অবস্থা হয়েছিল।

অনেক সময় রাতের অন্ধকারে শ্মশানের পাশ দিয়ে দু’তিন জন একসাথে গেলেও ঝোপের ভিতর থেকে নাম ধরে ডাকে। বিশেষ করে যে পিছনে থাকে তার নাম ধরেই নাকি বেশির ভাগ ডেকে থাকে। ডাক শুনে ফিরে তাকালে কাউকেই চোখে পড়ে না। আবার রওনা দিলে আবার নাম ধরে ডাকে। এরকম ঘটনার সম্মুখীন যারা হয়েছেন তাদের অনেকেই এখনও বেঁচে আছেন।

ভুতের এসব কাহিনী মনে পড়তেই গা ছম্ছম্ করে উঠল। এখনো শ্মশান ঘাট ছেড়ে বেশিদূর যাইনি। মাঝে মাঝে অদূরে হুড়োহুড়ি-দৌড়াদৌড়ির শব্দ। হুড়োহুড়ি দৌড়াদৌড়ি কারা করছে অন্ধকারে কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। তবে শেয়ালের একক বা দলবদ্ধভাবে হুক্কাহুয়া ডাক এবং পাখির হুট্টিটি হুট্টিটি শব্দ পরিচিত মনে হলেও, মাঝে মাঝে হুঁ----স হুঁ---স শব্দ কানে আসায় গা শিউরে উঠল। জন-মানবহীন বিরান বালুচরে রাতের অন্ধকারে বিচিত্র ধরনের শব্দ আগে কখনও শুনিনি। ভয়ে গা ছম ছম করতে লাগল। ভয় তীতির মধ্যেই নদীর দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। নদী কোন দিকে তাও বোঝা যাচ্ছে না। চলতে গিয়ে হঠাৎ অন্ধকারের ভিতর উঁচু, লম্বা, চেপ্টা নানা ধরণের ছায়ার মতো চোখে পড়ল। ভয়ে আঁৎকে উঠলাম। তাড়াতাড়ি নাদুর কাছে চলে এলাম। নাদুকে বললাম চাচা, কালো কালো ওগুলা কি জিনিস?
নাদু আমার মনের অবস্থা বুঝতে পেরে বলল, ওসব কিছু না চাচা, বানে ভাসা কলাগাছ, ঝাউ গাছ, আবার কলমি গাছও আছে।
কিন্তু নাদু যতই সাহস দিক না কেন, শ্মশান এলাকা হওয়ায় রাতের অন্ধকারে যে কোন জিনিস চোখে পড়তেই মনের মধ্যে ভুতের ভয় চলে আসে। কারণ অন্ধকারে ভুত না কলাগাছ কিছুই বোঝা যায় না। এমনি নানা ভয়ভীতির ভিতর দিয়ে প্রায় আধা মাইল পথ বালুচর হেঁটে নদীর কিনারে এসে পৌঁছলাম।

নদীর পাড় খাড়া নয় ঢালু। বালু চর আস্তে আস্তে ঢালু হয়ে পানির সাথে মিশে গেছে। নদীর গভীরতাও কিনার থেকে আস্তে আস্তে বৃদ্ধি পেয়ে মধ্য নদীতে পৌছেছে। কিনারে পানির পরিমাণ খুব বেশি নয়, হাঁটু থেকে কোমর পর্যন্ত।

নাদু ঘাড় থেকে জাল নামিয়ে গুছিয়ে নিল। নদীর কিনার থেকে আস্তে আস্তে শিকারী বিড়ালের মতো হাঁটু পানিতে নেমে “বিসমিল্লা” বলে জোরে ঝাঁকি দিয়ে জাল দূরে ছুড়ে দিল। নাদূর জাল ছুড়ে মারার কৌশলটা অনেকের চেয়ে আলাদা। অন্যেরা জাল ছুড়লে যতটা না ছড়ায় তার চেয়ে নাদূর জাল একটু বেশি ছড়ায়। ছুড়ে মারতেই ঝপাৎ করে পানিতে জাল পড়ার পর নাদু কয়েক সেকেন্ড অপেক্ষা করে আস্তে আস্তে জালের রশি টেনে টেনে হাতের ভিতর গুছিয়ে আনল। জাল কিনারে আনতেই জালের ঘাইলে মাছের লাফালাফি দেখে নিজের কাছে খুব আনন্দ লাগল। নাদু জাল নিয়ে পানি ছেড়ে ডাঙ্গায় উঠে এলো। আমি খুশিতে তাড়াতাড়ি হ্যারিকেনের আলো বাড়িয়ে দিয়ে জালের কাছে চলে এলাম। ভিজা কিন্তু একটু শক্ত ধরনের বালিতে জাল রেখে জালের উপরের অংশ দুই হাঁটুতে চেপে ধরে, দুই হাত দিয়ে নাদু জালের ঘাইল থেকে মাছ ঝেড়ে দিল। আমি মাছ গুলো ধরে ধরে খালুইর ভিতর রেখে দিলাম।

প্রথম জাল ফেলতেই যে পরিমাণ মাছ উঠেছে তা দেখে নাদু খুব খুশি হয়ে বলল, চাচা এইভাবে যদি মাছ উঠে, তাইলে আমাগো খালুই ভরতে বেশি সময় লাগবো না।
আমি বললাম, সব জায়গায় কি সমান মাছ পাওয়া যাবে? এই জায়গায় না হয় মাছ বেশি উঠেছে, অন্য জায়গায় মাছ নাও থাকতে পারে?
নাদু মাথা নিচু করে জাল হাতের মাঝে গুছিয়ে নিতে নিতে বলল, না চাচা, এখন কার্তিক মাস, এখন সব জায়গায় কম বেশি মাছ আছে। একথা বলেই সে ভিজা জাল ভাল করে হাতের মাঝে গুছিয়ে নিয়ে একটু উত্তরে সরে গিয়ে জাল ফেলল। সেখানেও ভাল মাছ উঠল। আবার মাছ ঝেড়ে আবার আরেকটু সরে গিয়ে জাল ফেলল। এভাবে বার বার জাল ফেলে নাদু উত্তর দিকে যাচ্ছে আমি তাকে অনুসরণ করে নদীর কিনার দিয়ে দিয়ে যাচ্ছি। ইতিমধ্যেই অর্ধেক খালুই মাছে ভরে গেছে। মাছের নেশায় অন্য কিছু খেয়াল নেই। খালুই ভর্তি না হওয়া পর্যন্ত আমাদের মাছ ধরার তৃপ্তি মিটবে না। আমাদের দৃষ্টি শুধু পানির দিকে আর মাছের দিকে।

জাল ফেলতে ফেলতে আমরা অনেক উত্তরে চলে গিয়েছি। এখানে মাছ কম উঠছে। জালে মাছ কম উঠায় নাদু তার জাল ফেলার ধারাবাহিকতা ভঙ্গ করে একটু বেশি উত্তরে গিয়ে জাল ফেলল। এখানে মাছের পরিমাণ মোটামুটি ভাল। এর পর মাছ ঝেড়ে জাল দুই হাতের সাথে গুছিয়ে নিয়ে আরেকটু উত্তর দিকে সরে গিয়ে জাল পানিতে ছুঁড়ে দিল। জাল সুন্দর গোল হয়ে ছড়িয়ে পড়ল। নাদু কয়েক সেকেন্ড অপেক্ষা করে জাল টানতে লাগল। আমি পানির কিনারে বালির উপর একহাতে খালুই অন্যহাতে লাঠি ও হ্যারিকেন নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। নাদু জাল টেনে তুলতে গিয়ে মুখ কাচুমাচু করে বলল, চাচা জাল উঠতেছে না, শক্ত শক্ত লাগতেছে, মনে হয় কোন কিছুর সাথে আইটকা গ্যাছে।
আমি বললাম, এই বালু চরে স্রোতের নদীতে পানির নিচে তো কিছু থাকার কথা নয়, জাল কার সাথে আটকাবে?
নাদু বলল, আমিও তো তাই জানি। কিন্তু জাল উঠে না ক্যান? এই বলে নাদু বেশ জোর দিয়ে জালের রশি ধরে টান দিল কিন্তু জাল এতোটুকুও উঠে এলো না। নাদু দুশ্চিন্তায় পড়ে গেল। রাতের অন্ধকারে পানিতে নামতেও সাহস পাচ্ছে না। পানির নিচে কি আছে না আছে পানির উপর থেকে কিছু বোঝা যায় না। যদি অন্য কিছু, মানেÑ দেও-দৈত্ত বা ভুত-প্রেত জাতীয় কিছু থেকে থাকে। তাহলে তো জালসহ টেনে নিয়ে পানিতে চুবিয়ে মারবে। ভয়ে দুজনেরই গা ছম্ছম্ করতে লাগল। ভয় পেলেও বসে থাকা ঠিক হবে না, যে কোন ভাবেই হোক জাল উঠাতে হবে।
আমি বললাম, চাচা পানিতে নেমে টানেন, তাহলে জাল উঠতে পারে।
নাদু ভয়ে ভয়ে বলল, চাচা আপনি খালুই শুকনা বালির উপর রাইখা হারিকেন ও লাঠিটা নিয়া আমার সাথে সাথে নামেন, আমি জাল টাইনা দেহি কি করা যায়।
আমি বললাম, চাচা জালের ভিতর কিছু কি নড়াচড়া করে।
নাদু বলল, না।
নাদুর হাতে লাঠি দিয়ে বললাম, চাচা এই লাঠি দিয়ে পানির নিচে জালে গুতা দিয়ে দেখেন কিছু টের পাওয়া যায় কিনা।
আমার কথা মতো নাদু তাই করল, কিন্তু কিছুই ঠাহর করতে পারল না।

আমি ভয়ে ভয়ে নাদূর সাথে সাথে পানিতে নেমে এলাম। আমি হাঁটু পানিতে নেমে দাঁড়ালাম আর নাদু আরেকটু বেশি পানিতে অর্থাৎ কোমর পানিতে নেমে জাল টানতে লাগলো। তাতেও জাল উঠল না। আমি এক হাতে হ্যারিকেন এবং অন্য হাতে জালের রশি ধরে টেনে নাদুকে সাহায্য করতে লাগলাম। দু’জনের টানে জাল কিছুটা উঠে এলো বটে তবে প্যাঁ--র-- প্যাঁ--র--- শব্দে খানিকটা ছিঁড়ে গেল।

দু’জনে মিলে জোরে টানাটানি করায় আস্তে আস্তে জাল হাঁটু পানিতে উঠে এলো। জাল টেনে পানির কিনারে আনতেই পিলে চমকে উঠল। জালের ভিতর কি যেন একটা মোটাসোটা কালো হাত-পা-মাথা কাটা মানুষের দেহের মতো মনে হলো। ভয়ে গা শিউরে উঠল। মাথার চুলসহ গায়ের লোম খাড়া হয়ে উঠল। নাদু জাল ছেড়ে দিয়ে এক লাফে উঁচায় উঠে গেল। আমিও “ও আল্লাগো” বলে তার কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম। ভয়ে আমার হাঁটু পর্যন্ত কাঁপছে। নাদুও কাঁপতেছে। জালের দিকে তাকিয়ে দেখি জালে প্রচুর মাছ লাফালাফি করছে। মাছ লাফালাফি করলেও এইমুহুর্তে আর আমাদের মাছের প্রতি আগ্রহ নেই। শুধু জাল হাতে পেলেই সোজা বাড়ীর দিকে রওনা দিব।

(চলবে)

পরের পর্ব পড়ার জন্য নিচে ক্লিক করুন
অমাবস্যার ভুত (গল্প পর্ব-২)
অমাবস্যার ভুত (গল্প পর্ব-৩)

মন্তব্য ২০ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (২০) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১০:৩৫

আজমান আন্দালিব বলেছেন: রহস্য পাকিয়ে উঠছে...ভয়ঙ্কর অবস্থা। কাটা মানুষের দেহ জালে? পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায়....

০২ রা জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১০:৪৮

প্রামানিক বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই, গল্প পড়ার জন্য শুভ্চেছা রইল।

২| ০২ রা জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১০:৪৩

দিশেহারা রাজপুত্র বলেছেন: মোটামুটি লাগল।

০২ রা জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১০:৪৯

প্রামানিক বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই দিশেহারা রাজপুত্র। অনেক অনেক শুভ্চেছা রইল।

৩| ০২ রা জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১০:৫৮

গিয়াস উদ্দিন লিটন বলেছেন: বিরাট রহস্য !
পর্ব মিস দেয়া যাবেনা দেখছি !

০২ রা জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:৫৯

প্রামানিক বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই গিয়াস উদ্দিন লিটন। অনেক অনেক শুভ্চেছা রইল।

৪| ০২ রা জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:১৬

কল্লোল পথিক বলেছেন: রহস্যময় গল্প ।অপেক্ষার পালা শুরু হল।

০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:০০

প্রামানিক বলেছেন: ধন্যবাদ কল্লোল ভাই। গল্প পড়ার জন্য অনেক অনেক শুভ্চেছা রইল।

৫| ০২ রা জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:৪২

অভ্রনীল হৃদয় বলেছেন: রহস্য জমে উঠেছে। পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।

০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:০১

প্রামানিক বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই অভ্রনীল হৃদয়। অনেক অনেক শুভ্চেছা রইল।

৬| ০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১:০৭

ফেরদৌসা রুহী বলেছেন: পরের পর্ব পড়ার পরই রহস্যের উন্মোচন হবে।

অপেক্ষায় রইলাম

০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১০:১৯

প্রামানিক বলেছেন: ধন্যবাদ বোন ফেরদৌসা রুহী। অনেক অনেক শুভ্চেছা রইল।

৭| ০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৯:৩৮

কামরুন নাহার বীথি বলেছেন: জমে উঠছে রহস্য!! দেখা যাক কি হয়!!

০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৩:০১

প্রামানিক বলেছেন: ধন্যবাদ কামরুন নাহার আপা। অনেক অনেক শুভেচ্ছা রইল।

৮| ০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১১:৩৭

পারভেজ উদ্দিন হৃদয় বলেছেন: ভয়ে ঘেমে গেলাম

০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৩:০৫

প্রামানিক বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই পারভেজ উদ্দিন হৃদয়। পড়ার জন্য খুব খুশি হলাম। শুভেচ্ছা রইল।

৯| ০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১:৩১

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: উরে বাপরে! কি ভয়ংকর!!!!!!

জলদি যাই পরের পর্বে ;)

০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৩:০৬

প্রামানিক বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই বিদ্রোহী ভৃগু। পড়ার জন্য আন্তরিক শুভ্চেছা রইল।

১০| ০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৩:৩৮

কিরমানী লিটন বলেছেন: চমৎকার ভিন্নমাত্রার গল্প- খুব ভালো লেগেছে, অনাবিল শুভকামনা প্রিয় প্রামানিক ভাইয়ের জন্য ...

০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৩:৪৬

প্রামানিক বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই কিরমানী লিটন। অনেক অনেক শুভ্চেছা রইল।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.