নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

pramanik99

আমার স্কুল জীবনের স্মৃতিগুলো বার বার মনে পড়ে। ফিরে যেতে ইচ্ছে করে সেই দিনগুলোতে।

প্রামানিক

শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

প্রামানিক › বিস্তারিত পোস্টঃ

অমাবস্যার ভুত (গল্প শেষ পর্ব)

১২ ই জানুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৪৪


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক
আগের পর্ব পড়তে নিচে ক্লিক করুন
অমাবস্যার ভুত (গল্প পর্ব-৩)
অমাবস্যার ভুত (গল্প পর্ব-২)
অমাবস্যার ভুত (গল্প পর্ব-১)

আজকের সন্ধ্যার পরে ভাত খাওয়ার সময় সবাই মাছের তরকারী দিয়ে ভাত খেয়েছে। সবার খাওয়া শেষ হলে তাকে খেতে দেয়া হয়। এক প্লেট ভাতের সাথে লবন আর শুকনা মরিচ, কোন তরকারী দেয়া হয়নি। গায়ে জ্বরজ্বর থাকায় মুখে রুচি ছিল না। লবন মরিচ দিয়ে ভাত খেতে কষ্ট হচ্ছিল। সতীনের কাছে একটু মাছের তরকারী চাইতেই সতীন নানা কথা শুনিয়ে ঝগড়া বাঁধায়। ঝগড়ার একপর্যায়ে স্বামী তার কাছে ভাল মন্দ কিছু জিজ্ঞেস না করেই বাঁশের কাঁচা কঞ্চি দিয়ে সপাসপ্ পায়ে, পিঠে, পেটে, বুকে, মুখে, মাথায় পিটাতে থাকে। অথচ যে সতীনের কারণে ঝগড়া বেঁধেছে তাকে সে ভাল-মন্দ কিছুই বলল না। মারপিটের এক পর্যায়ে কুলোতে না পেরে ডুকরে কেঁদে উঠলে পাষাণ স্বামী দু’হাত দিয়ে তার গলা টিপে ধরে। গলা টিপে ধরায় স্বাস বন্ধ হয়ে এক পর্যায়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে।

জ্ঞান যখন ফিরে পায় তখন নিজেকে বাড়ির পিছনে কলাগাছের ঝোপের মধ্যে দেখতে পায়। সারা গায়ে পিটানোর অসহ্য ব্যাথা। ক্ষত বিক্ষত ব্যাথা ভরা শরীর নিয়ে উঠে আস্তে আস্তে বাড়ির ভিতর গিয়ে দেখে সবাই ঘুমিয়েছে। তার থাকার ঘরের দরজা ভিতর থেকে বন্ধ। এখন কি করবে কিছু বুঝে উঠতে না পেরে রান্নাঘরের দরজা ঠেলে ভিতরে ঢোকে। অন্ধকারে চুলার চারপাশ হাতিয়ে দিয়াশলাই পায়। দিয়াশলাই জ্বালিয়ে দেখে চুলার পাশে একটি তেল ভর্তি পিতলের ল্যাম্প। ল্যাম্প জ্বালিয়ে অনেকক্ষণ বসে থাকে। কোন ঘর থেকেই কেউ সারা শব্দ করল না। কারো কোন সারা শব্দ না পেয়ে সৎমায়ের অত্যাচারের কথা ভেবেও বাপের বাড়ি যাওয়ার জন্য মনস্থির করে। রাত বিরাতে সে কখনও কোথাও একা যায়নি। কিন্তু আজ যেতে হবে। শ্মশান, বালুচর, নদী পার হয়ে যেতে হবে। এতোসব ভয় ভীতির কথা মনে হতেই ভয়ে তার গা কাঁটা দিয়ে উঠে। কিন্তু এ বাড়িতে বসে থাকা আরও বিপদ। যদি স্বামী আবার মারপিট করে। স্বামীর নির্যাতনে অজ্ঞান হয়েছে বটে কিন্তু মরেনি। এবার যদি মেরেই ফেলে। সেই ভয়ে স্বামীর বাড়ি থেকে পালাতে বাধ্য হয়েছে।

তার নির্যাতন ও দুঃখের বর্ণনা শুনে খুব খারাপ লাগল। কি বলে যে তাকে সান্তনা দিব সে ভাষা খুঁজে পেলাম না। নাদুর দিকে তাকিয়ে দেখি সে নিচের দিকে মুখ করে বসে আছে। মহিলা মুখে কাপড় দিয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। এমন পরিবেশেও আমার মনের মধ্যে একটা প্রশ্ন দেখা দিল। যদি সে মানুষ হয়ে থাকে তাহলে কিছুক্ষণ পরপর আলো জ্বলা এবং নিভে যাওয়ার যে ঘটনা চোখে পড়ল সেটা কে করল? এই কৌতুহলটি থেকে তার কান্নার মাঝেই ইতস্ততভাবে জিজ্ঞেস করলাম, ‘আপনি কি সারা রাস্তা আলো জ্বলিয়ে এসেছেন’?
মহিলা কান্নার মাঝেই মাথা নাড়িয়ে সায় দিলেন, হা।
আমি আবার বললাম, আপনি কি বার বার ল্যাম্প জ্বালাতেন আর নিভাতেন।
মহিলা বলল, না।

মহিলা ‘না’ বলায়, মনের মধ্যে আবারো প্রশ্ন দেখা দিল আলো তো সারাক্ষণ জ্বালানো দেখি নি। তাহলে একটু পর পর আলো জ্বলে উঠা আর নিভে যাওয়ার যে দৃশ্য আমরা অবলোকন করেছি এটি কে করল? এ দৃশ্যটি একবার দু’বার নয় বহুবার দেখেছি। এরকম আলো মহিলা না জ্বালালে তবে কি ভুতে জ্বালিয়েছে? বিষয়টি নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দে পড়ে গেলাম। পরে অবশ্য আলো জ্বালানোর এ রহস্যটি মহিলার কাছ থেকে উদঘাটন করেছিলাম। তা হলো এই--

ঝড়ের রাতে গ্রামের লোকেরা একপ্রাকার মাটির তৈরী দীপাধার ব্যবহার করে থাকে। যার একমুখ খোলা রেখে উপর নীচসহ তিনদিকে মাটির দেয়াল দিয়ে মাঝ খানে ফাঁকা রাখা হয়। এই ফাঁকার ভিতর ল্যাম্প জ্বলিয়ে রেখে ফাঁকা মুখটি বাতাসের উল্টোদিকে বসিয়ে দিলে জ্বলানো ল্যাম্পটি আর বাতাসে নিভে না। গ্রামের এই সহজ সরল নির্যাতিত অসহায় মহিলাটিও বিপদের সময় ঐ বুদ্ধিকে কাজে লাগিয়ে রাতের অন্ধকারে ভয়ভীতিকে উপেক্ষা করে স্বামীর বাড়ি থেকে বাপের বাড়ির পথ ধরে। রান্নাঘরে ছোট ছোট দু’টি ভাঙা মাটির হাঁড়ি ছিল। একটি মটির হাঁড়ির ভিতর ল্যাম্প জ্বালিয়ে বসিয়ে দিয়ে আরেকটি হাঁড়ি দিয়ে উপরের মুখ ঢেকে দেয়। হাড়ির একপার্শ্বে একটু ভাঙ্গা থাকায় ঐ ভাঙা হাঁড়ির ফাঁক দিয়ে ল্যাম্পের আলো সার্চ লাইটের মত সামনে গিয়ে পড়ে। মহিলা অন্ধকারে চলার সময় ভাঙা অংশটি কখনও সামনে আবার বাতাসে নিভে যাওয়ার ভয়ে কখনও পিছনে ঘুরিয়ে দিত। এতে যেমন ল্যাম্পের আলো নিভে যেত না আবার সামনের চলার রাস্তাও দেখা যেত। কিছুক্ষণ পরপর হাঁড়ির ভাঙ্গা অংশটি সামনে এবং পিছনে আনা নেওয়া করায় আলো কখনও সামনে আবার কখন পিছনে জ্বলতো। এই সামনে পিছনে জ্বলে উঠা আর নিভে যাওয়াকেই আমরা দূর থেকে ভুতের আলো মনে করেছি।

ভুতের আলোর বাস্তব ঘটনাসহ ভুতকে সশরীরে চোখে দেখে, ভুতের সাথে কথা বলে, ভুতের দুঃখের কাহিনী শুনে মর্মাহত হলাম। মনের ভিতর থেকে ভুতের ভয়ভীতি কেটে গেল। আমি আর নাদু এবার সাহস পেলাম। মহিলার দিকে ভাল করে তাকালাম। তার মুখের দিকে তাকিয়ে চমকে উঠলাম। তার বাম গালে তখনও পাষান্ড স্বামীর নির্যাতনের চিহ্ন ফুটে আছে। কান থেকে থোতা পর্যন্ত আঘাতের লম্বা লম্বা কালো দাগ পড়ে আছে।

আমি জিজ্ঞেস করলাম, আপনার মুখে কি কঞ্চি দিয়ে বাড়ি মেরেছিল?
মহিলা আমার কথায় ডুকরে কেঁদে উঠল। কান্না অবস্থায় গাল বেয়ে চোখের জল টপটপ করে পড়তে লাগল। কাঁদতে কাঁদতে পিঠের কাপড় উঠিয়ে যা দেখালো তাতে পিলে চমকে যাওয়ার অবস্থা। পিঠে অনেকগুলো লম্বা লম্বা কালো মারের দাগ স্পষ্ট ফুটে আছে। কোন কোনটি ফেটে রক্ত বের হয়েছে। সে কেঁদে কেঁদে বলল, এরকম সারা শরীরে মারের দাগ আছে। তার পিঠে মারের দাগ দেখে আমরা বিস্মিত হলাম। মানুষ চোর ডাকাতকেও এভাবে পিটায় না। অথচ স্বামী তাকে পিটিয়েছে। নিষ্ঠুর স্বামীর এমন অত্যাচারের কি সান্তনা দিব সে ভাষা খুঁজে পেলাম না। দু’জনই হতবাক হয়ে বসে রইলাম। কিছুক্ষণ পর নাদু বলল, আপনি এখন কোন দিকে যাবেন?
সে বলল, ভাই, আমাকে একটু দয়া কইরা বাপের বাড়ি পৌঁছায়া দিবেন?
আমি বললাম, আপনার বাপের বাড়ি কোথায়?
মহিলা অসহায়ভাবে বলল, এই তো, নদীর ওইপারে যে গ্রাম, তার পরের গ্রামে।

যদিও মহিলা বলল এই তো নদীর ওইপারে যে গ্রাম তার পরের গ্রামে, কিন্তু ঐ গ্রামে যেতে হলে পাক্কা তিন মাইল পথ হাঁটতে হবে। এই নদীর পরে আরেকটি ছোট নদী আছে সেটিও পার হতে হবে। এই রাতে এতো পথ যাবো কিনা ভাবছি। যেতেও ইচ্ছা করছে না। কারণ ভুতের ভয়ে এতক্ষণ মানসিক ও শারিরীকভাবে যে ভোগান্তি ভুগেছি তাতে শরীরের অবস্থা খুব একটা ভাল নয়। শরীর খুব দুর্বল দুর্বল লাগছে। আবার মহিলার অসহায় অবস্থা দেখে না যাওয়াটাও উচিৎ মানে হচ্ছে না। যাবো কি যাবো না এমন যখন ভাবছি সেই সময় নাদু বলল, চাচা, চলেন। রাইত তো অনেক আছে। ওনাকে ওনার বাপের বাড়ি পৌঁছায়া দিয়া আইসি।
আমি নাদুর কথায় না যাওয়ার ভাবটা প্রকাশ না করে তার কথার সাথে সাথেই বললাম, চলেন।

নাদু ঘাড়ে জাল আর হাতে খালুই নিয়ে আগে আগে রওনা হলো। আমিও এক হাতে হ্যারিকেন এবং অন্য হাতে লাঠি নিয়ে নাদুর পিছনে পিছনে রওনা হলাম। আমার পিছনে মহিলা আমাদেরকে অনুসরণ করছে। আমরা কিছুক্ষণ হাঁটার পর নদীর ধারে এসে পৌঁছলাম। নদী হেঁটে পার হওয়ার জন্য নির্দিষ্ট জায়গা আছে। যেখান দিয়ে পানির পরিমাণ কম। অন্য জায়গায় সাঁতার পানি। নাদু নদীর পানিতে নেমে পড়লে আমরাও তার সাথে নেমে পড়ি। কোথাও এক কোমর কোথাও এক পেট পরিমাণ পানি। পরনের কাপড় ভিজে গেল। তিনজন কাপড় ভিজেই নাদী পার হলাম।

ওপারে উঠে আমি আর নাদু ভেজা লুঙ্গি কিছুটা চিপে পানি ঝড়িয়ে নিলাম। কারণ বেশি ভিজা লুঙ্গি পরে হাঁটতে অসুবিধা হচ্ছিল। পানির কিনার ছেড়ে কিছুটা বালুচর পার হয়ে খাড়া পাড়ে উঠে গেলাম। নদীর পাড় ধরে উত্তর দিকে রওনা হলাম। প্রায় এক মাইল হাঁটার পর নদীর পাড় ছেড়ে পায়ে হাঁটা মেঠোপথ ধরে পূর্ব-উত্তর দিকে রওনা হয়ে গ্রামের পিছনে চলে এলাম। অনেক রাত হওয়ায় গ্রাম একদম নিরব নিস্তব্দ। কোন সাড়া শব্দ নেই। রাস্তাটি গ্রামের বাড়িগুলোর দুতিনশ’ হাত পশ্চিম দিয়ে সোজা দক্ষিণ থেকে উত্তর দিকে চলে গেছে। কাজেই আমাদের তিনজনের পায়ের আওয়াজে গ্রামের কারো কোন ঘুমের ব্যাঘাত হলো না। তারপরও একটি বাড়ির পিছন থেকে একজন বৃদ্ধ লোকের ডাক শোনা গেল।
বৃদ্ধ জিজ্ঞেস করল, আপনারা কেডা গো?
নাদু জবাব দিল, আমরাই গো।
-- এতো রাইতে কই যান?
-- উত্তরের চরে।
-- কই থিকা আইলেন?
-- নদীর ওপার থিকা।

বৃদ্ধ আর কোন কথা বাড়ালো না। কারণ আমাদের কাছে হ্যারিকেন জ্বালানো থাকায় বৃদ্ধ ধারনা করেছেন আমরা চোর-ডাকাত নই।
গ্রামের উত্তর প্রান্তে গিয়ে আরো কিছুক্ষণ যাওয়ার পর একটি ছোট খালের মত মনে হলো। আসলে এটি খাল নয় এটিও একটি নদী। বর্ষাকালে পলিমাটি পরে নদীর আকার ছোট হয়ে এসেছে। পাড়ের ঢালু বেয়ে নিচে নেমে পানিতে নামলাম। পানি খুব বেশি নয়। এক হাঁটু, আধ হাঁটু পরিমাণ। ছোট নদীটি পার হয়ে আরো কিছুক্ষণ হাঁটার পরে ফাঁকা মাঠের মাঝে পথের ধারেই একটি খড়ের ঘর চোখে পড়ল। আমি মহিলাকে জিজ্ঞেস করলাম, আর কতদূর যাওয়া লাগবে?
মহিলা হ্যারিকেনের আলোতে ঘরটি দেখে বলল, আর অল্প। আরো কিছুক্ষণ হাঁটার পর রাস্তার পশ্চিম পার্শ্বে কয়েকটি বাড়ি। এবার মহিলা বলল, ভাই আপনারা এইখানে দাঁড়ান।
আমরা দাঁড়ালাম। মহিলা বলল, আর দু’তিনটা বাড়ির পরেই আমাগো বাড়ি।
আমি বললাম, আমরা কি বাড়িতে পৌঁছে দিব?
মহিলা বলল, ভাই আপনেদের আর কষ্ট করার দরকার নাই। এটুকু আমি একলাই যাইবার পারমু।
নাদু বলল, তাইলে আমরা চইলা যাই?

মহিলা শব্দ করে না কাঁদলেও চোখের জল ধরে রাখতে পারল না। ভেজা ভেজা চোখ নিয়ে আস্তে আস্তে বলল, ভাই, আপনারা আমার জন্য অনেক কষ্ট করছেন। আপনাদের ঋণ আমি জীবনেও শোধ দিবার পারমু না। তবে আপনাগো কাছে আমার আরেকটু অনুরোধ, আমারে বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছায়া দিলেন, এ কথাটা কারো কাছে কইবেন না। আমার স্বামী যদি জানবার পারে, আপনারা আমারে রাতের অন্ধকারে বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছায়া দিছেন, তাইলে আমারে আর আস্ত রাখবো না। আমার স্বামী ভাল মানুষ না। আস্ত একটা কসাই। নানা রকম কলঙ্ক রটায়া হয় আমারে ছাইড়া দিব, নইলে মাইরা ফালাইবো। এতে আপনাগো অসুবিধ হইবো। আমারো অসুবিধা হইবো।

নাদু বলল, ঠিক আছে, আমরা কারো কাছে কমু না।
আমরা মহিলাকে বিদায় দিয়ে পিছন ফিরে বাড়ির দিকে রওনা হলাম। বাড়িতে যখন পৌছলাম তখনও রাত কিছুটা আছে। তাড়াতাড়ি হাতমুখ ধুয়ে খালুইটা রান্না ঘরের বারান্দায় রেখে শুয়ে পড়লাম। রাতে অনেক খাটুনি হওয়ায় এক ঘুমে সকাল দশটা হলো।

ঘুম থেকে উঠে দেখি মা নাদুকে মাছের জন্য তিরস্কার করছে। নাদু বলছে, ও দাদী, আমাবাস্যা রাইতে যে মাছ পাওয়া যায় না তা তো জানি না। জানলে তো আর মাছ ধরতে যাইতাম না।
মা বলছে, থাক আর মিছা কথা কওয়া লাগবো না।
মায়ের তিরস্কার শুনে নাদু পাল্টা আর কিছু না বলে হাসি হাসি মুখে তাড়াতাড়ি মা’র সামনে থেকে দূরে সরে গেল। বুঝতে পেলাম নাদু সত্য ঘটনা বলতে চাচ্ছে না।
নাদু রাতের ঘটনা বলতেছে না দেখে আমিও চেপে গেলাম। কারণ, মা যদি জানতে পারে যে রাতে আমরা ভুতের ভয় পেয়েছি, তাহলে বকাবকি তো করবেই, তার উপর ওঝা-বদ্যি-কবিরাজ ডেকে বাড়ি ভরিয়ে ফেলবে।
এছাড়াও মহিলাকে রাতের অন্ধকারে তার বাপের বাড়ি পৌছে দিয়েছি এ ঘটনা জানাজানি হলে কেলেংকারীও হতে পারে। কাজেই রাতে যত মহৎ কাজই করিনা কেন, ঘটনা চেপে যওয়াই শ্রেয়।

বিকালের দিকে আমার এক বন্ধুর সাথে আমাদের বাড়ির পূর্ব পার্শ্বে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধে গল্পসল্পে হাঁটছি। হঠাৎ পূর্ব দিকে তাকিয়ে দেখি তিন চারজন পুলিশ ও সাথে কিছু মানুষ বাঁধের দিকে আসতেছে। কৌতুহল হলো পুলিশ কাউকে ধরে নিয়ে এলো কিনা? কিছুক্ষণ পর পুলিশ কাছাকাছি আসলে অন্য ঘটনা চোখে পড়ল। পুলিশসহ লোকজন বাঁধের উপরে উঠতেই ঘটনাটি স্পষ্ট হলো। চাটাই দিয়ে মোড়ানো মানুষের লাশ একটি বাঁশের মাঝ খানে বেঁধে বাঁশের দু’পাশে দুজন ঘাড়ে নিয়ে যাচ্ছে। সামনে পুলিশ পিছনে চৌকিদার-দফাদারসহ চার পাঁচ জন মুরব্বি গোছের লোক। তাদেরকে সম্ভাবত জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বা কেস এন্ট্রি করার জন্য থানায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

পিছনের একজন মুরুব্বিকে জিজ্ঞেস করলাম, চাচা কিসের মরা?
বৃদ্ধ জবাব দিল, ফাঁসের মরা।
-- মহিলা না পুরুষ?
-- মহিলা।
-- কোন গ্রামের?
-- দক্ষিণ কালাসোনা চরের দক্ষিণ গ্রামের।
দক্ষিণ কালাসোনা চরের দক্ষিণ গ্রামের নাম বলার সাথে সাথে হৃৎপিন্ডে মোচড় দিয়ে উঠল। কালকে যে মহিলাকে বাড়ি পৌছে দিয়ে আসলাম সে নয় তো?

কিন্তু এ কথার জবাব খোঁজার জন্য মুরুব্বিকে আর প্রশ্ন করার সাহস পেলাম না। কারণ, সাথে পুলিশ আছে, যদি উল্টো কথার প্যাঁচাপ্যাঁচিতে পড়ে যাই।
গতকাল রাতের ঘটনা মনে হতেই মনের অজান্তেই একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস বেরিয়ে এলো। মনের ভিতর নানা প্রশ্ন দেখা দিল। রাতের ঘটনার সাথে মহিলার অসহায়ত্বভাবটি চোখে ভাসতে লাগল।

রাতের অন্ধকারে গ্রামের বিপদসঙ্কুল এতোখানি পথ পাড়ি দিয়ে যে মহিলা বাপের বাড়ি পৌঁছেছে, তাকে সৎমায়ে তো দূরের কথা বাপও হয়তো সহজভাবে মেনে নিতে পারেনি। বাপ মেয়েকে সাদরে গ্রহণ না করে উল্টো মারও দিতে পারে। যদি বাপ মারধোর করে থাকে, তাহলে জীবনের অসহ্য যন্ত্রনা সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করাটা তার জন্য বিচিত্র নয়।
--০-- সমাপ্ত --০--

মন্তব্য ২০ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (২০) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই জানুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:০২

মোহাম্মাদ আব্দুলহাক বলেছেন: মিঞাভাই, এখন পড়তে পারব না। পরে পড়ব।

আপনার লেখা ভূতের গল্প আমার ভালা লাগে। ডর লাগে। গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠে।

আমি মহাউপন্যাসে এখন কাজ করছি। আমার জন্য দোয়া করবেন।
আপনাকে বিরক্ত করব।

১২ ই জানুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৪৮

প্রামানিক বলেছেন: ধন্যবাদ আব্দুল হাক ভাই। আপনি মহা উপন্যাস লিখতে থাকুন আমি আপনার সাথেই আছি।

২| ১২ ই জানুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৪৬

দেবজ্যোতিকাজল বলেছেন: ভাললাগল ৷

১২ ই জানুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৪৯

প্রামানিক বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই দেবজ্যোতিকাজল। অনেক অনেক শুভেচ্ছা রইল।

৩| ১২ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ৮:২৬

শাহরিয়ার কবীর বলেছেন: ভুতের গল্প পড়তে ডর লাগে ভাই। হাজিরা দিলাম

১২ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ৯:২৩

প্রামানিক বলেছেন: হাজিরা দিলেও চলবে। ধন্যবাদ

৪| ১২ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ৯:৪৯

তৌফিক মাসুদ বলেছেন: কয়েকদিন ধরেই পড়ছি, পুরো টুকু পড়েই মন্তব্য করলাম। ভূতের গল্পের ভয়াবহতা চরম সত্য আর সামাজিক নাটকীয়তায় শেষ হল।

ধন্যবাদ দারুন লেখার জন্য।

১২ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১০:০৭

প্রামানিক বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই তৌফিক মাসুদ। ধৈর্যসহকারে সবগুলো পর্ব পড়ার জন্য অনেক অনেক শুভেচ্ছা রইল।

৫| ১২ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১০:৫৩

কল্লোল পথিক বলেছেন: ছড়া কবিতা গল্প সব দিকে হিট
আমাদের সবার প্রিয় জীবন্ত কিংবদন্তী প্রিয় প্রামানিক ভাই।
অনেক অনেক শুভ কামনা জানবেন।

১২ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:১৯

প্রামানিক বলেছেন: ধন্যবাদ কল্লোল ভাই। আপনার মন্তব্যে উৎসাহিত হলাম। অনেক অনেক শুভ্চেছা রইল।

৬| ১২ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:২০

অভ্রনীল হৃদয় বলেছেন: শেষ পর্যন্ত এসে এমন দুঃখ জনক ব্যাপার ঘটবে ভাবিনি। গল্প ভালো লাগলো।

১২ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:২৩

প্রামানিক বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই অভ্রনীল। আপনি সবগুলো পর্ব পড়েছেন জেনে খুশি হলাম। শুভেচছা রইল।

৭| ১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৯:০৫

চাঁদগাজী বলেছেন:


অশিক্ষা ও দারিদ্রতা বাংলাকে দু:খিমী করে রেখেছে শত বছর।

১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১১:৩৯

প্রামানিক বলেছেন: কথা ঠিকই বলেছেন চাঁদগাজী ভাই।

৮| ১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১:৪০

অগ্নি সারথি বলেছেন: পুরাডা পড়ন লাগব। পইড়া পড়ে মন্তব্য করুমনে ভাই।

১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৫:৫৯

প্রামানিক বলেছেন: ঠিক আছে ভাই, পুরাডা না পড়লে মজা পাইবেন না। ধন্যবাদ

৯| ১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৩:০৮

তুষার আহাসান বলেছেন: পুরোটাই পড়লাম।
গ্রামবাংলার সহজ-সরল জীবনের কথকতা,সেই সাথে কিছু অনবদ্য বিশ্লেষণ,ভাল লাগল।
+

১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:০০

প্রামানিক বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই তুষার আহাসান। পুরোটা পড়ার জন্য এবং মূল্যবান মন্তব্য করার জন্য অনেক অনেক শুভ্চেছা রইল।

১০| ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১১:২৪

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: মহিলার জন্য খুব খারাপ লাগলো! গ্রামাঞ্চলে এমন কত শত ঘটনা ঘটে, অামরা ক'টারই বা খবর রাখি!

১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ৮:১৭

প্রামানিক বলেছেন: ঠিকই বলেছেন ভাই রূপক বিধৌত সাধূ। আমাদের অজান্তেই এরকম অনেক করুণ কাহিনী ঘটে যায় যা আমরা জানি না। ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.