নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

pramanik99

আমার স্কুল জীবনের স্মৃতিগুলো বার বার মনে পড়ে। ফিরে যেতে ইচ্ছে করে সেই দিনগুলোতে।

প্রামানিক

শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

প্রামানিক › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমিত রায়হানের বিয়ের জটিলতা এবং কিছু স্মৃতি

৩০ শে অক্টোবর, ২০২২ রাত ৮:১১


(তৃতীয় পর্ব)
অশিত বাবুর সাথে আলোচনার মাধ্যমে বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করা হলো। বিয়ের আয়োজন হবে আমার বাসাতেই। বিয়ের দিন তারিখ এবং বিয়ের স্থান নির্ধারণ হওয়ায় সহযোগিতায় এগিয়ে এলেন আমার অফিসেরই সেই কোর্ট ম্যারেজের স্বাক্ষী হওয়া কলিগ প্রদীপ বাবু। তিনি হিন্দু হয়েও এই বিয়েতে পুরোপুরি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিলেন। খাওয়া খরচের পুরো দায়িত্ব আমিই নিয়ে নিলাম। তবে প্রদীপ বাবুর অনুরোধে খাসী মুরগীর বাইরে কোন মাংসের আয়োজন করা নিষিদ্ধ হলো। ঢাকার কোথায় এক নং খাসির মাংস পাওয়া যায় সেটাও তিনি বলে দিলেন। এর ব্যাতিক্রম হলে তিনি বিয়েতে অংশগ্রহণ করবেন না। তার কথা মত শুক্রবার ভোরে উঠেই দৌড়ালাম পুরান ঢাকার টিপু সুলতান রোডে ১নং খাসির মাংস কিনতে। প্রদীপ বাবুর নির্দেশিত দোকান থেকে প্রায় দশ কেজি খাসির মাংস এবং ঠাটারী বাজার থেকে ১২টি মুরগী কিনে নিয়ে এলাম। রান্নার জন্য কোন বাবুর্চি ভাড়া করতে হলো না। বাড়িওয়ালী নিজেই যেচে এসে দায়িত্ব নিলেন। বাড়িওয়ালীর রান্নাও মন্দ নয়, খুব ভালো রান্না করেন। এর আগেও উনার হাতের রান্না অনেক খেয়েছি।

অশিত বাবু এবং প্রদীপ বাবুর কথামতই প্রায় ত্রিশ চল্লিশজন মানুষের পুরো বাজার করে বাসায় পৌঁছে দিয়ে বেলা ১১টার দিকে হুজুর আনতে রাজার বাগ পুলিশ কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে চলে গেলাম। সেদিন ছিল শুক্রবার ২০০০ সালের সেপ্টেম্বর মাসের ১৬ তারিখ। হুজুর রাজার বাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ মসজিদের পেশ ইমাম। জুম্মার নামাযের ইমামতি করেন। জুম্মার নামায পড়ে তার পিছনে বসে আছি। উনি জুমার নামাজ পড়ানোর পর নফল নামায শেষ করে পিছনে তাকিয়ে দেখেন আমি বসে আছি। আমাকে দেখেই তিনি তাড়াতাড়ি নামাযের মাসায়ালার ডান পাশে রাখা বিয়ে রেজিস্ট্রির বই হাতে নিয়ে দাঁড়িয়েই বললেন, চলেন।

হুজুরকে সাথে নিয়ে আর কোথাও দেরি না করে সোজা বাসার দিকে রওনা হলাম। রিক্সা করে বাসার কাছাকাছি এসে দেখি বাসার নিচে একটি প্রাইভেট কার দাঁড়ানো। আমার কলিজা কেঁপে উঠল। ভয়ে মুখ শুকিয়ে গেল, না জানি মেয়ের বাবা বা তার পক্ষের কেউ এসে হাজির হয়েছে। নিজের অজান্তেই ভয়ে কাঁপতে লাগলাম। হুজুরকে ভয় ভীতির কথা কিছু বললাম না। বললে যদি হুজুর আইন কানুনের ভয় পেয়ে বিয়ে না পড়িয়েই দৌড়ে পালিয়ে যায়। হুজুরকে কিছু বুঝতে না দিয়েই দুইজনে নিচ তলা থেকে দোতলায় উঠে এলাম। আমার বাসা দোতালায়। গিয়ে দেখি হইহুল্লোড়ের সাথে বিয়ের অনুষ্ঠান চলছে। মেয়েকে গায়ে হলুদের জন্য বসানো হয়েছে তিন তলায় বাড়িওয়ালীর ড্রইং রুমে। গায়ে হলুদ দেয়ার জন্য বাসন্তী রংয়ের শাড়ি পরা কয়েকজন মহিলাকে দেখে চোখে ধাধা লাগার মত অবস্থা হলো। যেখানে চুপে চুপে বিয়ে হওয়ার কথা সেখানা এরা আবার কারা এলো, কোথা থেকে এলো, এদেরকে তো আগে কখনও চোখে দেখি নাই। পরে জানলাম এরা মেয়ের ঘনিষ্ঠ বান্ধবী, ইউনিভার্সিটির হল থেকে এসেছে, এরাই গায়ে হলুদের সমস্ত দায়িত্ব পালন করছে। ক্যামেরাম্যান লাইটম্যান দেখে আরো আশ্চার্য হলাম। এদেরকে আবার কে নিয়ে এলো। আমার অবর্তমানে আমার বাসায় ভিডিওসহ বিয়ের পুরো অনুষ্ঠান চলছে অথচ আমি কিছুই জানি না। পড়ে শুনলাম অশিত বাবু আর অশিত বাবুর হবু স্ত্রী মিলেই এতসব প্লান করেছে। তাদের এই প্লানের ছিটে ফোটাও আমাকে জানানো হয় নাই। ওদিকে প্রদীপ বাবু এই বিয়ের স্মৃতিকে ধরে রাখার জন্য তিনি তার নিজের টাকায় ভিডিও ক্যামেরা ভাড়া করে এনেছেন। বন্ধুর প্রতি প্রদীপ বাবুর এমন অবদান কোন দিনই ভোলার মত নয়।

পুরোদমে গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান চলছে। কনের গায়ে হলুদ অনুষ্ঠানে ইউনিভার্সিটির মেয়েদের সাথে যোগ দিয়েছে বাড়িওয়ালার মেয়ে শায়লা এবং বাড়ির ভাড়াটে মহিলারাও। কনের গায়ে হলুদের পাশাপাশি ওদিকে বরকেও গায়ে হলুদ দেয়া হচ্ছে। সেখানে দায়িত্ব পালন করছে আমার গিন্নি এবং অরেকজন নতুন মহিলা যাকে এর আগে কখনও দেখি নাই, তবে মহিলাটিকে অবস্থাপন্ন ঘরের মনে হলো পোষাক পরিচ্ছদ খুবই পরিপাটি।

মহিলাটির খবর জেনে খুব খুশিই হলাম। তিনি আর কেউ নন, বাসার নিচে গাড়ি দাঁড়ানো দেখে যে ভয়টি করেছিলাম সেই গাড়ির মালিক হলেন এই মহিলা। অর্থাৎ অশীত বাবু এক জায়গায় দুইজন ছাত্রকে টিউশনি করাতেন, সেই ছাত্র দুই জনের মা হলেন এই ভদ্র মহিলা। ছাত্রের মা গাড়ি নিয়ে এসেছেন শুনে শুকনা অন্তরে পানি চলে এলো, বুকের রক্ত চলাচল বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছিল সেটা অনেকটা স্বাভাবিক হলো, ছাত্রীর মাকে দেখে মনের মাঝেও অনেকটা সাহস সঞ্চার হলো। কারণ ছাত্রের মা শান্তিনগর এলাকার একজন প্রভাবশালী ঘরের বউ, তিনি এই বিয়েতে থাকা মানেই আমাদের জন্য অনেকটা শঙ্কামুক্ত পরিবেশ।

গায়ে হলুদ চলাকালীন অবস্থায় চলে এলেন আমার অফিসের অফিস কলিগ ফোরম্যান আজাদ ভাই। তাকে আমিই আসতে বলেছিলাম। তাকে ডেকে আনার কারনও ছিল। তিনি এক সময় জন্মগতভাবেই এই এলাকারই লোক ছিলেন। বিয়েও করেছেন এই এলাকায়। তার শ^শুর গোষ্ঠী এলাকার হোমরাচোমরা। তাদের উপর দিয়ে কথা বলার কেউ নেই। এলাকার কোন উটকো ঝামেলায় যাতে না পড়তে হয় সেই জন্যই তাকে আসতে বলেছিলাম। তবে তাকে দাওয়াত দিয়েছিলাম বটে কিন্তু অশিত বাবুর বিয়ের কথাটি ঘুণাক্ষরেও বলি নাই।

গায়ে হলুদ অনুষ্ঠানের শেষের দিকে এলেন আমাদের অফিস কলিগ এই বিয়ের কোর্টের স্বাক্ষী অপু সাহেব এবং উনার স্ত্রী। উনারাও এসে বিয়ের অনুষ্ঠানে পুরাদমে কাজে লেগে গেলেন। খুব জাঁকজমক ভাবেই গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান হতে লাগল। দেখতে দেখতে পুরো বাড়ি বিয়ের লোকজনে ভরে গেল। অনুষ্ঠান এমনভাবে চলতে লাগল লোকের সমাগম এবং আয়োজনের পরিপূর্ণতা দেখে আশেপাশের লোকজন বুঝতেই পারলো না এটা গার্জিয়ান ছাড়া হিন্দু থেকে কনভার্ট হওয়া মুসলিমের একটি বিয়ের অনুষ্ঠান।

বিয়ের আগে প্রথমেই অশিত বাবুকে কালেমা পড়িয়ে মুসলমান বানানো হলো এবং এর পরে ইসলামী শরাশরীয়ত মতাবেক তাদের বিয়ে পড়াতে গিয়ে সমস্যা হলো বিয়ের উকিল নিয়ে। হল থেকে মেয়ের বান্ধবীরা এলেও ছেলের বন্ধুবান্ধব কাউকেই বলা সম্ভব হয় নাই। আমি আগেই এমন বিপদে পড়ার আসংখ্যা করেছিলাম। সেই আসংখ্যা থেকেই আমি আমার অফিস কলিগ ফোর ম্যান আজাদ ভাইকে দাওয়াত দিয়ে এনেছি। আজাদ ভাই আমার খুব বিশ^স্ত লোক। কিন্তু তাকে অশিত বাবুর বিয়ের ব্যাপারে কিছুই বলি নাই। তার কারণ হলো আজাদ ভাই থানা-পুলিশ কেস-কাবারিকে খুব ভয় পায়। এই জন্য কৌশলে তাকে আমার মেয়ের জন্মদিন উপলক্ষ্যে দাওয়াতে আসার জন্য বলেছিলাম। তবে বিয়ের সেই দিনটি আসলেই আমার মেয়ের জন্মদিন ছিল। আজাদ ভাইকে ফোনে তাড়াতাড়ি আসার জন্য বলায় তিনি তাড়াতাড়িই চলে এসেছেন। বাসায় এসে অশিত বাবুর বিয়ের আয়োজন দেখে থ হয়ে গেলেন। আমার মেয়ের জন্মদিন উপলক্ষ্যে দাওয়াত দিলেও এসে দেখেন ভিন্ন পরিবেশ। তাকে কি উদ্দেশ্যে ডেকে এনেছি একথা কোন ভাবেই তাকে বুঝতে দেই নাই কারণ; ডেকে আনার উদ্দেশ্য জানতে পারলেই সে দৌড়ে পালিয়ে যাবে।

বিয়ে পড়ানোর ঠিক পূর্বমুহুর্তে তাকে বললাম, আজাদ ভাই ঢাকা শহরে আপনার মত বিশ^স্ত লোক কাউকে পেলাম না। আমরা মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়েছি আপনাকেই বিয়ের উকিল হতে হবে।
আজাদ ভাই আমার প্রস্তাব শুনেই বেকে বসল, কোনমতেই বিয়ের উকিল হবেন না। আমার প্রস্তাবের পক্ষে অপু সাহেব এবং প্রদীপ দা অনেক রিকোয়েস্ট করতে লাগলেন। কিন্তু তিনি কিছুতেই রাজী হচ্ছিলেন না। গায়ে হলুদসহ এত আয়োজন করার পর একজন উকিলের অভাবে বিয়ে বন্ধ হওয়ার উপক্রম হলো। যখন উকিলের অভাবে বিয়ে পড়ানো যাচ্ছে না তখন ছাত্রের মা বড় ভাই সম্বোধন করে জোড় হাত করে আজাদ ভাইয়ের সামনে এসে দাঁড়ালেন। জোড় হাত করে অনুরোধ করতে লাগলেন এবং বুঝাতে লাগলেন। উনার একটি কথায় আজাদ ভাই কিছুটা কাবু হয়ে গেলেন সেটা হলো-- তিনি বললেন, একজন লোক নিজের ধর্ম ত্যাগ করল, বাবা-মা, ভাই-বোন, আত্মীয় স্বজন ত্যাগ করে মুসলমান হলো আর আপনারা মুসলমান হয়ে শুধু বিয়ের উকিল হয়ে বিয়েটা পার করবেন এটাই করতে পারছেন না। আপনিই বলেন-- এত আয়োজনের পর আজ যদি শুধু একটি উকিলের অভবে এই লোকটির বিয়ে না হয় তখন তার কি অবস্থা হবে। আপনাদের কারণে যদি তার বিয়েটা না হয় আর যদি সে এই কারণে আত্মহত্যা করে তখন কি আপনারা রেহাই পাবেন? হিন্দু থেকে মুসলিম হওয়ার পর এখন আপনারাই তার ঘনিষ্ঠজন। আপনারা যদি সহযোগিতা না করেন তাহলে তার আত্মহত্যা করা ছাড়া উপায় থাকবে না। আর যদি মহিলাদের বিয়ের উকিল হওয়ার নিয়ম থাকতো তাহলে আমি আপনাদের জোর হাত করে কখনই এভাবে রিকোয়েস্ট করতাম না। নিজেই উকিলের দায়িত্ব পালন করতাম।

আমরা তিনজনে অনুরোধ করেও যেখানে রাজি করাতে পারলাম না সেখানে ছাত্রের মায়ের কয়েকটি কথায়ই আজাদ ভাই নরম হয়ে গেলেন। অনেকটা অনিচ্ছা সত্বেই উকিল হতে রাজী হলেন।

(চলবে---)

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে অক্টোবর, ২০২২ রাত ৮:২১

সোনাগাজী বলেছেন:




আজকেও লেখা ২ বার এসেছে।
কোন নারী বিয়ে উকিল হতে পারেন না?

৩০ শে অক্টোবর, ২০২২ রাত ৮:২৮

প্রামানিক বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই, বার বার ডবল হওয়ার কারণ বুঝতেছি না।

২| ৩০ শে অক্টোবর, ২০২২ রাত ৮:২৫

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: এমন উদার মনের বাড়িওয়ালী পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। আপনার আয়োজিত বিয়েতে বরকত হয়েছিল মনে হয় তাই অনেক কিছু বাড়তি পেয়ে গিয়েছিলেন নিজের অজান্তেই। আনন্দ ভাগ করে নিলে যে বাড়ে সেটা এই বিয়ে থেকেই বোঝা গেল।

ছাত্রের মায়ের ভুমিকাটা ভালো লেগেছে। আপনার লেখাটা দুবার এসেছে। ঠিক করে নেন।

৩০ শে অক্টোবর, ২০২২ রাত ৮:৩০

প্রামানিক বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে। এই বিয়েতে এত বরকতময় আয়োজন হবে আমি কল্পনাই করতে পারি নাই। লেখা ঠিক করে দিয়েছি

৩| ৩০ শে অক্টোবর, ২০২২ রাত ৮:৪২

গেঁয়ো ভূত বলেছেন: দারুন ব্যাপার! ওই সময়ে আপনার পরিচয় থাকলে মনে হয় বিষয়টির ইনভল্ভ হয়ে যেতাম।

৩১ শে অক্টোবর, ২০২২ দুপুর ১:৩৮

প্রামানিক বলেছেন: ঘটনাটি ছিল ২০০০ সালের আর সামু ব্লগের জন্ম হলো ২০০৫-এ। যে কারণে ব্লগার ভাই বোনদের কোন সহযোগিতা নেয়ার সুযোগ তখনো তৈরী হয় নাই। ধন্যবাদ আপনার মূল্যবান মন্তব্যর জন্য।

৪| ৩০ শে অক্টোবর, ২০২২ রাত ৯:১৭

জুল ভার্ন বলেছেন: যথারীতি ভালো হয়েছে।

৩১ শে অক্টোবর, ২০২২ দুপুর ১:৩৯

প্রামানিক বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.