নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সাধারণ একজন মানুষ। বলার মতো বিশেষ কিছু নেই। মনের ভাবনাগুলো তুলে ধরতে চাই। ভালো লাগে কবিতা, লিখা-লিখি আর ছবি তোলা, এইতো! https://prokashoni.net

ইফতেখার ভূইয়া

গণতন্ত্র মুক্তি পাক, পরিবারতন্ত্র নিপাত যাক

ইফতেখার ভূইয়া › বিস্তারিত পোস্টঃ

কাজে পারফর্ম করা জরুরী

০৭ ই জুলাই, ২০২২ সকাল ৭:৪২

অফিসের কাজে আমাকে সাহায্য করার জন্য মাস দু'য়েক আগে একটা বিজ্ঞপ্তি দেয়ার সাথে সাথে বেশ কিছু রেজ্যুমি হাতে এসেছিলো। পজিশন ছিলো ডেটা এন্ট্রি পদের জন্য তবে কিছুটা টেকনিক্যাল দক্ষতা প্রয়োজন। প্রাথমিকভাবে টেম্প পজিশন হলেও এখানে ভালো করলে, পার্মানেন্ট হওয়ার সম্ভাবনা ব্যাপক। বেতন খারাপ মনে হয় নি আমার কাছে। অনেকগুলো ক্যান্ডিডেট থেকে কয়েকটা মেয়েকে (ডাইভারসিটি'র জন্য মেয়েদের প্রাধান্য দিয়ে) প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত করা হলো। তার মধ্যে থেকে একজনকে ইন্টারিভউর ডেট দেয়া হলো।

ইন্টারভিউতে আমাদের ডিপার্টমেন্টের ডিরেক্টর (সরাসরি আমার বস/সুপারভাইজার), আমি আর আমার একজন কলিগ ছিলো। আমি ছাড়া সবাই মেয়ে। বস, কলিগ সবাই কিছু কিছু প্রশ্ন করার পর আমার পালা, যেহেতু কোন সিরিয়াস টেকনিক্যাল পজিশন নয়, তই সাধারণ কিছু প্রশ্ন করা হলো। ইন্টারভিউতে মেয়েটির উত্তরে আর সবাই মোটামুটি সন্তুষ্ট হলেও আমার কিছুটা খটকা লেগেছিলো। মনে হয়েছে, মেয়েটা হয়তো তার টেকনিক্যাল অভিজ্ঞতার বিষয়টিতে কিছুটা বাড়িয়ে বলেছে। হয়তো সে আমরা যে ধরনের সিস্টেম ব্যবহার করি, তাতে সে ততটা ফ্লেক্সিবল নয়। ইন্টারভিউ শেষে আমাদের মাঝে আলোচানা হলো, আমি আমার কনসার্নের বিষয়টা তুলে ধরলাম বস এবং কলিগের সাথে। মনে হলো তারা বিষয়টাতে খুব বেশী একটা সিরিয়াস নয়।

যাইহোক, এশিয়ান বংশোদ্ভুত মেয়ে তাই মনে হলো মেয়েটাকে ট্রেইন করলে সে হয়তো আরো ইম্প্রুভ করতে পারবে। বেশ কিছুক্ষণ আলোচনা শেষে সিদ্ধান্ত হলো তাকে অফার লেটার পাঠানোর। সপ্তাহ খানেকের মধ্যে সে জয়েন করলো টিমে। প্রথম এক সপ্তাহ প্রায় প্রতিদিনই তাকে ঘন্টা খানেক ধরে আমার পিসির মনিটর শেয়ার করে, তাকে কাজ শেখানো হলো। পাশাপাশি তাকেও আমার উপস্থিতিতে কাজ করতে দেয়া হলো। দ্বিতীয় সপ্তাহে সে কিছুটা উন্নতি করতে পেরেছে বা বুঝতে পেরেছে। তবে এক মাস পরে গিয়ে বুঝতে পারলাম সে কাজ বুঝলেও কাজ করছে ভীষণ ধীর গতিতে।

বস কাজের আগ্রগতি জানতে চাইলো, খুলে বললাম পুরো বিষয়টা। এবার বস নিজেই তদারকি করতে শুরু করলো। আমাকে জিজ্ঞেস করা হলো, আমি ৮ ঘন্টার কতগুলো এন্ট্রি করতে পারি? একদিন আমি শুধু ডেটা এন্ট্রি করে দেখলাম পুরো বিষয়টা সম্পর্কে ধারনা নেয়ার জন্য। এক দিনের ৮ ঘন্টায় আমি ২৩৮ টা এন্ট্রি করতে পেরেছি। সিদ্ধান্ত নেয়া হলো মেয়েটিকে অন্তত ১০০ টা এন্ট্রি করার টার্গেট দিতে হবে। বস নিজেই কথা বললেন, আর তাকে মনিটরিং করার জন্য কিছু বিষয় যোগ করা হলো। দেখা গেলো মেয়েটা দিনে ৩০/৩৫ এন্ট্রি করতে পারছে। তার চেয়ে বড় সমস্যা দেখা দিলো কিছু রিপোর্টে। দেখা যাচ্ছে সে ৪/৫ টা এন্ট্রি করার পরই দীর্ঘক্ষণ বিরতি নিচ্ছে (এক ঘন্টা বা তারও বেশী)। বোঝা গেল সে আসলে কাজ করছে না, বরং সময় ক্ষেপণ করছে।

বস রিপোর্টে বেশ হতাশ হলেন। আমি তাকে আশ্বস্ত করলাম, বললাম আমি কথা বলে দেখি। আমি মেয়েটিকে বোঝালাম যে বস আমাদের সবার কাজ তদারকি করছেন এবং কে কখন কি করছেন সেটা তিনি জানেন। বস কিছুটা হতাশ তাই আমাদের উচিত হবে প্রোডাক্টিভিটি বাড়ানোর চেষ্টা করা। সেই সাথে তাকে বোঝানো হলো যে, ভালো পারফর্ম করতে পারলে এই প্রজেক্ট শেষে আমি আগামী প্রজেক্টেও তোমাকে আমার সহযোগী হিসেবে নেব এবং তোমাকে পার্মানেন্ট করার জন্য আমি বসের কাছে রিকোমেন্ড করবো। মেয়েটি হ্যাঁ, আমি করবো ইত্যাদি বললেও আরো একমাস পরেও তার অবস্থার উন্নতি হয় নি।

আমার মনে হচ্ছে, মেয়েটি হয়তো আমাদের কাজ করার পাশপাশি আরো কোন জব করছে, যে কারনে সে কাজে ফোকাস করতে পারছে না বা পারফর্ম ভালো করতে পারছে না। আরো একটা মেজর সমস্যা হলো, তার সাথে কথা বলার সময় তার ভাই-বোন, মা-বাবা অনেক মানুষের কথা শোনা যাচ্ছে, আমাদের সাথে কথা বলার সময় যে বার বার তাদের সাথেও কথা বলছে। আমাদেরও শুনতে সমস্যা হচ্ছে, কথা রিপিট করতে হচ্ছে। সে হাজার বার সরি বলেও সমস্যার সমাধান হচ্ছে না।

আমার মনে হয় সে যেটা বুঝতে পারছে না যে, রিমোট কাজ হলেও অফিসে যোগাযোগের জন্য তাকে একটা নির্দিষ্ট মাত্রার প্রফেশনালিজম বজার রাখতেই হবে। আমাদের সাথে কথা বলার সময় বার বার পরিবারের লোকজনদের সাথে কথা বলা, বার বার সরি বলে মাইক অফ করা ইত্যাদি প্রফেশনালিজমের আওতায় পড়ে না। পাশাপাশি কাজের পারফরম্যান্স না বাড়াতে পারলে তাকে ধরে রাখা আমি কেন, আমার বসের পক্ষেও সম্ভব হবে না। প্রতিটা প্রজেক্টের একটা টাইম-ফ্রেইম আছে। সেটা বাড়ানোর কিছুটা ক্ষমতা আমার হাতে থাকলেও এই গতিতে কাজ চললে বাড়িয়েও খুব একটা লাভ হবে না। যাইহোক, নতুন আরো একজনকে হায়ার করা হয়েছে সপ্তাহ দু'য়েক আগে। সেও জয়েন করবে আগামী সপ্তাহে। মেয়েটিকে আরো একটা মাস সময় দেয়া হবে। কাজের পারফরম্যান্স ভালো না হলে, খুব সম্ভবত বস আমার কনসার্নের বিষয়টি মনে করবে আর তাকে বিদায় জানাবে।

মন্তব্য ১১ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (১১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই জুলাই, ২০২২ সকাল ৮:৪১

বিটপি বলেছেন: আমাদের অফিস হলে প্রথম মাসের পরেই তাকে হারিকেন ধরিয়ে দেয়া হত। আমি বুঝিনা মেয়েদের কেন কম যোগ্যতা সত্ত্বেও চাকরিতে নেয়া হয়। আমার ডিপার্টমেন্টে কিছু মেয়ে আছে যারা পুরুষদের চেয়েও বেশি এফিসিয়েন্ট। তাদেরকে নিয়োগ দেবার সময়েই বলে দিয়েছিঃ
- মেয়ে বলে কোন আলাদা খাতির করা হবেনা, কেবলমাত্র মেটারনাল লিভ পলিসি ছাড়া।
- কেউ বিয়ে করতে চাইলে অন্তত দুই মাসের আগে জানাতে হবে।

এদের কাজ কর্ম মনিটর করা লাগেনা। উইকলি আউটপুট টার্গেটের চেয়ে কম হলে কিছু কথা শুনিয়ে দেয়া হয় - তাতেই কাজ হয়।

০৭ ই জুলাই, ২০২২ সকাল ৯:১৩

ইফতেখার ভূইয়া বলেছেন: আমেরিকায় বিষয়গুলো কিছুটা জটিল। আমাদের কাজ একটা বিশ্বাবিদ্যালয়ে, একটা সিস্টেমের মধ্যে থেকে কাজ করতে হয়। হায়ার বা ফায়ার দু'টোর কোনটাই সহজ নয়। তবে কাউকে ফায়ার করা জন্য উপযুক্ত কারণ থাকা জরুরী, জবাবদিহিতার জন্য। সাথে আনএমপ্লয়মেন্ট বেনিফিট এর বিষয়টাও জড়িত। সব কিছু মিলিয়ে একটা বিরক্তিকর পরিস্থিতি। তবে এভাবে চলতে থাকলে তাকে বিদায় জানাতেই হবে। বিষয়টা শুধু সময়ের।

২| ০৭ ই জুলাই, ২০২২ সকাল ৯:১৭

শূন্য সারমর্ম বলেছেন:


প্রফেশনালিজমের ঘাটতি,শুধরানো হবে না সম্ভবত।

০৭ ই জুলাই, ২০২২ সকাল ১০:০৬

ইফতেখার ভূইয়া বলেছেন: দেখা যাক কি হয় শেষ পর্যন্ত।

৩| ০৭ ই জুলাই, ২০২২ সকাল ৯:৪৩

সৈয়দ মশিউর রহমান বলেছেন: আমার ধারণা দুইদেকে কাজ করতে গিয়ে উনি হয়তো কোনটাতেই ঠিকভাবে মনসংযোগ করতে পারছেন না।

০৭ ই জুলাই, ২০২২ সকাল ১০:০৬

ইফতেখার ভূইয়া বলেছেন: এমনটা হওয়াও অসম্ভব নয়।

৪| ০৭ ই জুলাই, ২০২২ সকাল ১০:৩৭

শ্রাবণধারা বলেছেন: আপনার পোস্টটা বেশ ভাল লাগলো। আপনারা যেভাবে মেয়েটির জন্য টার্গেট সেট করলেন, তাতে আপনাদের পেশাদারীত্ব এবং বিবেচনাবোধ ভুটে উঠেছে। তবে আপনাদের হায়ারিং প্রসেসটা খুব সংক্ষিপ্ত এবং ত্রুতিপূর্ণ মনে হল। কাজটা যদি মূলত ডাটা এন্ট্রির হয় তবে আপনাদের উচিত ছিল এটা নিশ্চিত করা যে যাকে হায়ার করছেন সে এই কাজটা অবশ্যই করতে পারবে।

০৭ ই জুলাই, ২০২২ দুপুর ১২:৪৮

ইফতেখার ভূইয়া বলেছেন: আপনার যুক্তি ঠিক আছে। কিন্তু ব্যাপারটা আপনি যতটা সাদা-কালো ভাবছেন, ব্যাপারটা আসলে মোটেই তেমন না। প্রশাসনিক কিছু রিকোয়ারমেন্ট থাকে যেগুলোও পূরণ করা জরুরী। এগুলোর সাথে অনেক বিষয় জড়িত যা হয়তো অনলাইনে শেয়ার করাও ঠিক হবে না। ধন্যবাদ।

৫| ০৭ ই জুলাই, ২০২২ দুপুর ১:২৭

জ্যাকেল বলেছেন: মেয়েদের মধ্যে পেচঘুচ বুদ্ধি বেশি, মানে তারা কল্পনা করে যে তাদের বুদ্ধিটাই কার্যকরী হচ্ছে, আশেপাশের মানুষদের সে নিজের বুদ্ধির নিচের লেভেলের মনে করে।
এই অতি বুদ্ধির কারণে অফিসে বলেন সংসারে সর্বত্রই সমস্যা হয়ে থাকে কতিপয় মেয়ের। এই কারণে বুদ্ধি/সঠিক কাজ, অগ্রাধিকার না দিয়ে ছেলে মেয়ে সবার রেজুমি চেক করার সুযোগ রাখা। তাতে অবশ্যই ভাল, যোগ্য কেহ (ছেলে/মেয়ে যেই হোক) সুযোগ পাবে।
আমার মতে আপনি উনার সাথে আলাপ করে দেখেন সমস্যাটা কোথায়, সরল/স্ট্রেইট ফরোয়ার্ড উনি যদি সমস্যার কথা বলে তবে সম্ভব উনাকে দিয়ে কাজ করানর নয়ত সময় দেওয়া উল্টো আপনাদেরই ক্ষতি হইতেছে।

৬| ০৭ ই জুলাই, ২০২২ বিকাল ৩:১৫

রাজীব নুর বলেছেন: সহজ সরল কোনো অফিস নাই? এজন্যই কর্পোরেট দুনিয়া কেউ পছন্দ করে না।

সরকারী অফিসই অনেক ভালো। কোনো জবাবদিহিতা নাই।

৭| ০৭ ই জুলাই, ২০২২ বিকাল ৫:৫৩

জুল ভার্ন বলেছেন: পেশাদারিত্বের জন্য ঘটনা শিক্ষনীয়।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.